‘গাছ কেটে হোটেল—হাস্যকর না!’

ইমরান খান
প্রকাশ : ১১ মে ২০২১, ১৭: ৪৯
আপডেট : ১৬ মে ২০২১, ১৮: ৩১

ভাই, ছবি এঁকে কি গাছ কাটা বন্ধ করা যাবে?
শান্ত: এটা তো একটা ভাষা। আমি জাস্ট আমার ভাষায় বলে যাচ্ছি, অনবরতই বলে যাচ্ছি। কোনো কিছুতেই তো কিছু হয় না। অনিয়ম সবসময় ছিল, অনিয়মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদও সবসময় ছিল। আমি আমার জায়গা থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছি।

দেশে এত মানুষ। অনেকেই তো চুপ, আপনি কেন প্রতিবাদে এলেন?
শান্ত: আমি আমার কথাটা সবসময় বলে যেতে চাই, তাই আসছি। দেশের ১৮ কোটি মানুষ কখনোই কোনো প্রতিবাদে (একসঙ্গে) আসবে না। তাই বলে কি সংগ্রাম, প্রতিবাদ থেমে থাকবে? ১০০ জন ভুল, আর একজন সঠিক কথা বললে ওই একজনের কথাই তো ঠিক, তাই না?

বিষয়টা নিজের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানোর মতো মনে হয় না?
শান্ত: বনের মোষ তাড়ানোর মানুষও দরকার আসলে। তা ছাড়া যারা নিজের খাবে, ওই খাবারটাও পাবে না আসলে। একটা জায়গায় গিয়ে তাদের খাবারটাও আটকে যাবে। এই জন্য বনের মোষ তাড়ানোর জন্য কিছু মানুষ থাকে, এটা থাকবেই।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় তো বেশ দূরে, এত দূরে এলেন!
শান্ত: এটা যদি এখন মানিকগঞ্জে হইত, তাও হয়তো যাইতাম। কারণ আমার ক্ষুধাটা আছে; ক্ষুধাটা কাজ করে। অনিয়মটা আসলে সহ্য করতে পারি না কেন জানি। আমার এসএসসি সায়েন্সে, ইন্টার কমার্সে, আর অনার্সে স্বেচ্ছায় আর্টসে আসছি। যাতে চিন্তাধারাটা আমি আমার মতো করে প্রকাশ করতে পারি। খুব সম্পদের দরকার নেই, খেয়েপরে চলতে যতটুকু লাগে, তা হয়ে যাবে। বাকিটা আমি আমার মতো। যেটা মনে করব সঠিক, সেই রাস্তায় আমি যাব। সেটা যত কঠিনই হোক।

আপনার পরিবারে কে কে আছেন? আপনার এই প্রতিবাদের বিষয়ে আপনার পরিবার জানে?
শান্ত: পরিবারে আমার ভাই, বাবা-মা আছেন। বাবা–মা বগুড়ায় থাকেন। আমার পরিবারও আর পাঁচটা টিপিক্যাল বাঙালি মুসলমান পরিবারের মতোই। যখন আমি চারুকলায় পড়তে চাইলাম, তখনই তাঁরা ভেটো দিলেন। পরে অবশ্য তাঁরা মেনে নিয়েছে। মন থেকে মেনে না নিলেও—আচ্ছা ঠিক আছে, ওর যা ইচ্ছা করুক; এ পর্যন্ত আসছে। খুব বেশি চাওয়া–পাওয়া থাকে না আসলে।

আপনার ক্যাম্পাসেও তো অনেক আন্দোলন হয়, তাই না?
শান্ত: হ্যাঁ, আমি ভর্তি হওয়ার পর থেকে ক্যাম্পাসে যতগুলো আন্দোলন–সংগ্রাম হয়েছে, থাকার চেষ্টা করেছি। করোনা আসার আগে সর্বশেষ ভিসির দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলনেও ছিলাম। করোনার কারণে তো সবই বন্ধ হয়ে গেল। ভিসিও এখন তাঁর মনমতো সবকিছু চালিয়ে যাচ্ছেন।

এখানে হাঁটার পথ, হোটেল হলে সমস্যা কী?
শান্ত: গাছ কেটে হোটেল! এটা কি হাস্যকর না আসলে? আপনার কাছে হাস্যকর মনে হয় না? কি এমন জরুরাত পড়েছে যে, গাছ কেটে এখানে হোটেল বানাতে হবে?

সিদ্ধান্তগুলো তো অভিজ্ঞ, বিশেষজ্ঞ লোকেরাই নিয়েছে, নাকি?
শান্ত: তারা পড়াশোনা করে ইঞ্জিনিয়ার হইছে, ঠিক আছে। কিন্তু, এখন যদি আপনি পারসোনালি গিয়ে বন্ধুর মতো মিশে তাদের মতামত নেন, দেখবেন তারাও বলবে, ‘আমি নিজেও আসলে এর পক্ষে না। কিন্তু, ইটস টোট্যালি ডিপেন্ডস অন সিস্টেম। আমি সরকারি চাকরি করি। আমাকে এটা অনুমোদন দিতে বলা হইছে। এখন আমি যদি এটা না করি চাকরি চলে যাবে।’ টিএসসির ভবন ভাঙার সিদ্ধান্ত, রাজু ভাস্কর্যের উপর দিয়ে মেট্রো-রেলের লাইন, গাছ কেটে হাঁটার রাস্তা-পার্ক তৈরি—সবসময় এমনই কেন হয়? সমস্যাটা আসলে কোন জায়গায়—এইটা আমার একটা প্রশ্ন। আসার সময় দেখলাম সংসদ ভবনের সামনে দিয়ে মেট্রো-রেলের লাইন গেছে। এই যে সংসদ ভবন, এটা তো শুধু আমাদের সম্পদ না। এর ডিজাইন তো পুরো বিশ্বের জন্যই একটি অন্যতম সুন্দর বিষয়। সেটাও রক্ষা পেল না।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত