আশিকুর রিমেল
বাল্যবিবাহ হয়েছিল কুমিল্লার দেবীদ্বারের রেহানা বেগমের। ওই বয়সেই একে একে তিন সন্তানের জন্ম দিয়েছেন তিনি। একমাত্র মেয়ের বিয়েও দিয়েছেন নিজের বয়সেই। এর মধ্যে স্বামী পক্ষাঘাতে আক্রান্ত হলে আকাশ ভেঙে পড়ার মতো করে পুরো সংসার ও স্বামীর চিকিৎসার ভার ওঠে তাঁর কাঁধে। তাতে দমে যাননি ৩৬ বছর বয়সী রেহানা, জীবনের লড়াইয়ে নেমে পাঁচ বছর ধরে শাক-সবজি বিক্রি করছেন রাজধানীতে।
রেহানা থাকেন ঢাকার বনশ্রী আবাসিক এলাকার পাশে ভূঁইয়াপাড়ায় ৩ হাজার টাকা ভাড়ার একটি ঘরে। মাদ্রাসাপড়ুয়া ছোট ছেলে তাঁর সঙ্গে থাকে। আরেক ছেলে এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে, থাকে গ্রামের বাড়িতেই। প্রতিদিন তিন-সাড়ে তিন হাজার টাকা বিনিয়োগ করে হাজার-বারো শ টাকা আয় হয়, তা দিয়েই চারজনের দুই সংসারের ব্যয় নির্বাহ করেন তিনি।
বনশ্রীর সি ব্লকের ২ নম্বর সড়কের এক কোনায় চার-পাঁচটা টুকরিতে শাক-সবজি নিয়ে বসেন রেহানা। তাঁর এখানে বসা খুব বেশি দিন নয়। এর আগে বসতেন ডি ব্লকের ৬ নম্বর সড়কে। একে তো ছোট্ট দোকান, সেখানেই আরও দুজন বসতে শুরু করেন। দিন গড়িয়ে সন্ধ্যা, এরপর রাতের প্রথম ভাগ কাটলেও তাঁর জিনিসই বিক্রি হতো না। বেছে বেছে আনা তাজা শাক-সবজিগুলোর পরদিন সকাল পর্যন্ত ক্রেতাদের নজর কারার মতো তেজও থাকত না। তাই চলতি মাসের শুরু থেকেই এই জায়গায় বসতে শুরু করেছেন।
রেহানা বেগম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ওইহানে আরও দুইজন বইতে শুরু করছে। আমিই আগে বইতাম, পরে ওরা আইছে। এহন একজনের বিক্রি তিনজনের মধ্যে ভাগ হইয়া যায় গা। কারোরই ঠিকমতো মাল বিক্রি হয় না।’
প্রতিদিন বেঁচে যাওয়া মালপত্র নিয়ে বিকেল থেকে রাত অবধি বসতেন ভুঁইয়াপাড়ার কাঁচাবাজারে। এখন যেখানে বসছেন, সেখান থেকেও তিনি শেষ দিকে ওই বাজারেই যান। এরপর সময় গড়াতে থাকলে নামমাত্র লাভে, বেশির ভাগ সময় কেনা দামে বিক্রি করে দেন।
ভোরের আলো ফোটার বেশ আগে ঘুম থেকে উঠে পড়েন রেহানা বেগম। তিনি যেখানে থাকেন, সেখান থেকে বনশ্রীর ওই জায়গাটার দূরত্ব বেশি না হলেও তাঁকে উঠতে হয় তখনই। উঠেই কোনো রকম চোখে-মুখে পানি ছিটিয়ে রওনা দেন কারওয়ান বাজার, যাত্রাবাড়ী, রায়পুরা বাজার, শ্যামবাজারের দিকে। যেদিন যেখানে দামে পরতা পরে। যতটা সম্ভব তাজা শাক ও সবজি কিনে তাঁকে আবার ফিরতে হয়। রেহানা বলেন, ‘দূরের বাজারে গ্যালে জিনিসপত্র কম দামে পাওন যায়।’
এই আবাসিক এলাকার কিছু মধ্যবয়সী ও বৃদ্ধ প্রতিদিন ভোরে হাঁটতে বের হন। তাঁরাই ফেরার সময় রেহানার কাছ থেকে কিছু কেনাকাটা করেন। তাঁদের লক্ষ্য করেই রেহানা এখানে বসেন। তিন-সাড়ে তিন হাজার টাকার শাক-সবজি নিয়ে এখানে বসেন তিনি, সব বিক্রি করলে হাজার থেকে বারো শ টাকা আসে তাঁর।
সবুজ শাক, লালশাক, ফুলকপি, শিম, পেঁপে, ধনেপাতা, জলপাই, পাতাপেঁয়াজে সাজানো দোকান রেহানা বেগমের। এসব কিনে আনতে যা খরচ হয়, তাতে লাভের অঙ্কটা বেশ নিচে নেমে যায়। এদিকে তার ব্যয়ের খাতগুলো নিতান্তই মৌলিক। অসুস্থ স্বামী ও এসএসসি পরীক্ষার্থী ছেলের জন্য টাকা পাঠান বাড়িতে। মাদ্রাসা পড়ুয়া ছেলের মাদ্রাসার খরচ দিতে হয় তিন হাজার টাকা। এভাবে কাজের ফাঁকে একটু একটু করে কথোপকথনের মধ্য দিয়ে এসব কথা হলো। রেহানা বললেন, ‘খায়া-পইরা বাইচ্যা রইছি এইডাই জীবন।’
পাঁচ বছর আগে সংসারের হাল ধরেছেন রেহানা বেগম। টাকা জমানোর সুযোগ হয় না তাঁর, তবু মনে এ নিয়ে কোনো দুঃখ নেই। পুথিগত শিক্ষা না থাকলেও এই জীবন তাঁকে যে শিক্ষা দিয়েছে, তাতে নিজেকে স্বাবলম্বী হিসেবে দাঁড় করিয়েছেন তিনি। এখন সন্তানদের ভবিষ্যৎ গড়াই তাঁর একমাত্র স্বপ্ন।
বাল্যবিবাহ হয়েছিল কুমিল্লার দেবীদ্বারের রেহানা বেগমের। ওই বয়সেই একে একে তিন সন্তানের জন্ম দিয়েছেন তিনি। একমাত্র মেয়ের বিয়েও দিয়েছেন নিজের বয়সেই। এর মধ্যে স্বামী পক্ষাঘাতে আক্রান্ত হলে আকাশ ভেঙে পড়ার মতো করে পুরো সংসার ও স্বামীর চিকিৎসার ভার ওঠে তাঁর কাঁধে। তাতে দমে যাননি ৩৬ বছর বয়সী রেহানা, জীবনের লড়াইয়ে নেমে পাঁচ বছর ধরে শাক-সবজি বিক্রি করছেন রাজধানীতে।
রেহানা থাকেন ঢাকার বনশ্রী আবাসিক এলাকার পাশে ভূঁইয়াপাড়ায় ৩ হাজার টাকা ভাড়ার একটি ঘরে। মাদ্রাসাপড়ুয়া ছোট ছেলে তাঁর সঙ্গে থাকে। আরেক ছেলে এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে, থাকে গ্রামের বাড়িতেই। প্রতিদিন তিন-সাড়ে তিন হাজার টাকা বিনিয়োগ করে হাজার-বারো শ টাকা আয় হয়, তা দিয়েই চারজনের দুই সংসারের ব্যয় নির্বাহ করেন তিনি।
বনশ্রীর সি ব্লকের ২ নম্বর সড়কের এক কোনায় চার-পাঁচটা টুকরিতে শাক-সবজি নিয়ে বসেন রেহানা। তাঁর এখানে বসা খুব বেশি দিন নয়। এর আগে বসতেন ডি ব্লকের ৬ নম্বর সড়কে। একে তো ছোট্ট দোকান, সেখানেই আরও দুজন বসতে শুরু করেন। দিন গড়িয়ে সন্ধ্যা, এরপর রাতের প্রথম ভাগ কাটলেও তাঁর জিনিসই বিক্রি হতো না। বেছে বেছে আনা তাজা শাক-সবজিগুলোর পরদিন সকাল পর্যন্ত ক্রেতাদের নজর কারার মতো তেজও থাকত না। তাই চলতি মাসের শুরু থেকেই এই জায়গায় বসতে শুরু করেছেন।
রেহানা বেগম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ওইহানে আরও দুইজন বইতে শুরু করছে। আমিই আগে বইতাম, পরে ওরা আইছে। এহন একজনের বিক্রি তিনজনের মধ্যে ভাগ হইয়া যায় গা। কারোরই ঠিকমতো মাল বিক্রি হয় না।’
প্রতিদিন বেঁচে যাওয়া মালপত্র নিয়ে বিকেল থেকে রাত অবধি বসতেন ভুঁইয়াপাড়ার কাঁচাবাজারে। এখন যেখানে বসছেন, সেখান থেকেও তিনি শেষ দিকে ওই বাজারেই যান। এরপর সময় গড়াতে থাকলে নামমাত্র লাভে, বেশির ভাগ সময় কেনা দামে বিক্রি করে দেন।
ভোরের আলো ফোটার বেশ আগে ঘুম থেকে উঠে পড়েন রেহানা বেগম। তিনি যেখানে থাকেন, সেখান থেকে বনশ্রীর ওই জায়গাটার দূরত্ব বেশি না হলেও তাঁকে উঠতে হয় তখনই। উঠেই কোনো রকম চোখে-মুখে পানি ছিটিয়ে রওনা দেন কারওয়ান বাজার, যাত্রাবাড়ী, রায়পুরা বাজার, শ্যামবাজারের দিকে। যেদিন যেখানে দামে পরতা পরে। যতটা সম্ভব তাজা শাক ও সবজি কিনে তাঁকে আবার ফিরতে হয়। রেহানা বলেন, ‘দূরের বাজারে গ্যালে জিনিসপত্র কম দামে পাওন যায়।’
এই আবাসিক এলাকার কিছু মধ্যবয়সী ও বৃদ্ধ প্রতিদিন ভোরে হাঁটতে বের হন। তাঁরাই ফেরার সময় রেহানার কাছ থেকে কিছু কেনাকাটা করেন। তাঁদের লক্ষ্য করেই রেহানা এখানে বসেন। তিন-সাড়ে তিন হাজার টাকার শাক-সবজি নিয়ে এখানে বসেন তিনি, সব বিক্রি করলে হাজার থেকে বারো শ টাকা আসে তাঁর।
সবুজ শাক, লালশাক, ফুলকপি, শিম, পেঁপে, ধনেপাতা, জলপাই, পাতাপেঁয়াজে সাজানো দোকান রেহানা বেগমের। এসব কিনে আনতে যা খরচ হয়, তাতে লাভের অঙ্কটা বেশ নিচে নেমে যায়। এদিকে তার ব্যয়ের খাতগুলো নিতান্তই মৌলিক। অসুস্থ স্বামী ও এসএসসি পরীক্ষার্থী ছেলের জন্য টাকা পাঠান বাড়িতে। মাদ্রাসা পড়ুয়া ছেলের মাদ্রাসার খরচ দিতে হয় তিন হাজার টাকা। এভাবে কাজের ফাঁকে একটু একটু করে কথোপকথনের মধ্য দিয়ে এসব কথা হলো। রেহানা বললেন, ‘খায়া-পইরা বাইচ্যা রইছি এইডাই জীবন।’
পাঁচ বছর আগে সংসারের হাল ধরেছেন রেহানা বেগম। টাকা জমানোর সুযোগ হয় না তাঁর, তবু মনে এ নিয়ে কোনো দুঃখ নেই। পুথিগত শিক্ষা না থাকলেও এই জীবন তাঁকে যে শিক্ষা দিয়েছে, তাতে নিজেকে স্বাবলম্বী হিসেবে দাঁড় করিয়েছেন তিনি। এখন সন্তানদের ভবিষ্যৎ গড়াই তাঁর একমাত্র স্বপ্ন।
ভোরের আলো ফোটার আগেই রাজধানীর আজিমপুর বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন শ্রমজীবীদের হাটে জড়ো হন শত শত শ্রমজীবী মানুষ। বিভিন্ন বয়সের পুরুষ ও নারী শ্রমিকেরা এই হাটে প্রতিদিন ভিড় করেন একটু কাজ পাওয়ার আশায়। তবে দিন যত যাচ্ছে, তাঁদের জীবনের লড়াই ততই কঠিন হয়ে উঠছে। দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতি তাঁদের জীবনকে দুর্বিষ
২৬ অক্টোবর ২০২৪ফেলুদার দার্জিলিং জমজমাট বইয়ে প্রথম পরিচয় দার্জিলিংয়ের সঙ্গে। তারপর অঞ্জন দত্তের গানসহ আরও নানাভাবে হিল স্টেশনটির প্রতি এক ভালোবাসা তৈরি হয়। তাই প্রথমবার ভারত সফরে ওটি, শিমলা, মসুরির মতো লোভনীয় হিল স্টেশনগুলোকে বাদ দিয়ে দার্জিলিংকেই বেছে নেই। অবশ্য আজকের গল্প পুরো দার্জিলিং ভ্রমণের নয়, বরং তখন পরিচয়
২৩ অক্টোবর ২০২৪কথায় আছে না—‘ঘরপোড়া গরু, সিঁদুরেমেঘ দেখলেই ডরায়’! আমার হইছে এই অবস্থা। বাড়িতে এখন বাড়িআলী, বয়স্ক বাপ-মা আর ছোট মেয়ে। সকাল থেকে চার-পাঁচবার কতা বলিচি। সংসার গোচাচ্ছে। আইজকা সন্ধ্যার দিকে ঝড় আসপি শুনতিছি। চিন্তায় রাতে ভালো ঘুমাতে পারিনি...
২৬ মে ২০২৪প্রতিদিন ভোরে ট্রেনের হুইসেলে ঘুম ভাঙে রাকিব হাসানের। একটু একটু করে গড়ে ওঠা রেলপথ নির্মাণকাজ তাঁর চোখে দেখা। এরপর রেলপথে ট্রেন ছুটে চলা, ট্রেন ছুঁয়ে দেখা—সবই হলো; কিন্তু এখনো হয়নি চড়া। রাকিবের মুখে তাই ভারতীয় সংগীতশিল্পী হৈমন্তী শুক্লার বিখ্যাত গান। ‘আমার বলার কিছু ছিল না, চেয়ে চেয়ে দেখলাম, তুমি চলে
১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪