বিভুরঞ্জন সরকার, ঢাকা
তাঁর সঙ্গে আমার প্রথম দেখা এবং কথা হয়েছিল বছর তিনেক আগে। তিন বছর পর আবার দেখা, দেখেই মনে হলো, আরে! কোথায় দেখেছি তারে!
বেশিক্ষণ স্মৃতি হাতড়াতে হলো না। গলায় জড়ানো গামছা দেখেই মনে পড়ল প্রথম দেখার কথা। পুরোনো কথা মনে করতে কখনো আমার বেশি বেগ পেতে হয় না।
যাঁর কথা বলছি, তিনি একজন রিকশাচালক। ঢাকা শহরে গত প্রায় ৪৮ বছরে কম রিকশায় কি চড়তে হয়েছে! সেই হিসেবে অবশ্য একজন রিকশাচালকের কথা আলাদাভাবে মনে থাকার কথা নয়। সবার কথা মনে রাখা যায় না, কোনো দরকারও হয় না।
তবে সবকিছুরই তো ব্যতিক্রম আছে। এই রিকশাচালক তেমনি একজন। নাম তাঁর আবুল হোসেন মৃধা। বয়স হয়তো আমার কাছাকাছিই হবে। পোশাক-আশাকে, কথাবার্তায়ও অন্য রিকশাচালকদের থেকে আলাদা। পরিচ্ছন্ন কাপড়, গলায় একটি সুন্দর গামছা ঝোলানো। যেন নেতা নেতা ভাব। কথায় কোনো আঞ্চলিকতার টান নেই। বুঝতে কষ্ট হয় না যে তিনি লেখাপড়া জানা মানুষ।
বছর তিনেক আগে এক বিকেলে মালিবাগ মোড় থেকে পুরানা পল্টনে আসার জন্য ভাড়া জানতে চাইলে বললেন, ‘ন্যায্য যা ভাড়া তাই দেবেন।’
আমি বললাম, ‘আমার ন্যায্য যদি আপনার কাছে অন্যায্য মনে হয়?’
তিনি বললেন, ‘হবে না। আপনি এক টাকা দিলেও আমি কিছু মনে করব না।’
আমি একটু অবাক হয়েই তার রিকশায় উঠে বসলাম। কিছু কথাও হলো। প্রথমেই জানতে চাইলাম, ‘আপনার বাড়ি কি টাঙ্গাইল? আপনি কি কাদের সিদ্দিকীর সমর্থক বা তাঁর দল করেন?’
তিনি বলেন, ‘কেন এমন মনে হলো?’
বললাম, ‘আপনার গলার গামছা দেখে মনে হলো, এমন গামছা কাদের সিদ্দিকীর গলায় দেখি।’
তিনি আমার দিকে তাকিয়ে হাসলেন এবং প্যাডেলে চাপ দিয়ে বললেন, ‘না, আমার গামছা স্টাইলের জন্য নয়, ঘাম মোছার জন্য। আমার গায়ের গন্ধে যাতে যাত্রীদের অস্বস্তি না হয় সেজন্য সব সময় সাবধান থাকি, পরিষ্কার থাকার চেষ্টা করি।’
জানালেন তাঁর বাড়ি টাঙ্গাইলে নয়, পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জে। তিন সন্তানের জনক। দুই মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। এক মেয়ের জামাই স্কুল শিক্ষক, আরেকজন ব্যবসায়ী। মেয়েরা এসএসসি পাস। ছোট ছেলে নবম শ্রেণিতে পড়ছে।
একটু অবাক হয়ে জানতে চাই, ‘রিকশা চালান, মেয়ে, মেয়ের জামাই, ছেলে কিছু বলে না?’
তিনি হাসতে হাসতে জবাব দেন, ‘রিকশা চালাই শখে এবং সুখে। শখ, কারণ রিকশা না চালালেও না খেয়ে থাকতে হবে না। সুখ, কারণ পরিশ্রম করতে ভালো লাগে।’
এটাও বললেন, রিকশা তিনি সব সময় চালান না। নানা ধরনের চাকরি করেছেন। আনসারেও চাকরি করেছেন। চাকরি না থাকলে বসে থাকতে ভালো লাগে না। তখনই রিকশা চালান।
গন্তব্যে পৌঁছে ভাড়া যা দিলাম তিনি খুশি মনে গ্রহণ করে বললেন, ‘দুদিনের দুনিয়া দু-এক টাকার জন্য ঝামেলা করে কী লাভ!’
ভালো লেগেছিল তার এই উদার মানসিকতা। রিকশা ভাড়া নিয়ে যাত্রী আর চালকদের বিবাদ একটি নিয়মিত ঘটনা হলেও ব্যতিক্রমী দু-একজন পাওয়া যায় বৈ কি!
এবার দেখা হলো মৌচাক মার্কেটের সামনে। সেই আগের মতোই আছেন। আছে গামছা। ভাড়া নিয়েও কোনো বাড়তি চাপ নেই। আগের বারের কথা বলায় ভালো করে দেখলেন আমাকে। মনে করতে পারলেন কি না বোঝা গেল না। বললেন, ‘কত যাত্রীর সঙ্গে কত কথা হয়। সব কথা মনে থাকে না। সব কথা মনে রাখতেও নেই।’
‘কেন?’
‘সব মনে রাখার মতো অত জায়গা নেই।’
ছেলে এখন কী পড়ছে জানতে চাই। নিষ্প্রভ গলায় বললেন, ‘ছেলেটি কলেজে পড়ছে। কিন্তু গত দেড় বছর কলেজ বন্ধ। ছেলেটি কেমন যেন হয়ে যাচ্ছে।’
তারপর আমার কাছে জানতে চান, ‘সরকার সবকিছু খুলে দিয়ে স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যায়গুলো কেন বন্ধ করে রেখেছে? করোনাভাইরাস কি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বেশি ছড়ায়?’
আমি কোনো জবাব দিতে পারি না। সরকারের হিসাব-নিকাশ কি সবাই বুঝতে পারে?
তাঁর সঙ্গে আমার প্রথম দেখা এবং কথা হয়েছিল বছর তিনেক আগে। তিন বছর পর আবার দেখা, দেখেই মনে হলো, আরে! কোথায় দেখেছি তারে!
বেশিক্ষণ স্মৃতি হাতড়াতে হলো না। গলায় জড়ানো গামছা দেখেই মনে পড়ল প্রথম দেখার কথা। পুরোনো কথা মনে করতে কখনো আমার বেশি বেগ পেতে হয় না।
যাঁর কথা বলছি, তিনি একজন রিকশাচালক। ঢাকা শহরে গত প্রায় ৪৮ বছরে কম রিকশায় কি চড়তে হয়েছে! সেই হিসেবে অবশ্য একজন রিকশাচালকের কথা আলাদাভাবে মনে থাকার কথা নয়। সবার কথা মনে রাখা যায় না, কোনো দরকারও হয় না।
তবে সবকিছুরই তো ব্যতিক্রম আছে। এই রিকশাচালক তেমনি একজন। নাম তাঁর আবুল হোসেন মৃধা। বয়স হয়তো আমার কাছাকাছিই হবে। পোশাক-আশাকে, কথাবার্তায়ও অন্য রিকশাচালকদের থেকে আলাদা। পরিচ্ছন্ন কাপড়, গলায় একটি সুন্দর গামছা ঝোলানো। যেন নেতা নেতা ভাব। কথায় কোনো আঞ্চলিকতার টান নেই। বুঝতে কষ্ট হয় না যে তিনি লেখাপড়া জানা মানুষ।
বছর তিনেক আগে এক বিকেলে মালিবাগ মোড় থেকে পুরানা পল্টনে আসার জন্য ভাড়া জানতে চাইলে বললেন, ‘ন্যায্য যা ভাড়া তাই দেবেন।’
আমি বললাম, ‘আমার ন্যায্য যদি আপনার কাছে অন্যায্য মনে হয়?’
তিনি বললেন, ‘হবে না। আপনি এক টাকা দিলেও আমি কিছু মনে করব না।’
আমি একটু অবাক হয়েই তার রিকশায় উঠে বসলাম। কিছু কথাও হলো। প্রথমেই জানতে চাইলাম, ‘আপনার বাড়ি কি টাঙ্গাইল? আপনি কি কাদের সিদ্দিকীর সমর্থক বা তাঁর দল করেন?’
তিনি বলেন, ‘কেন এমন মনে হলো?’
বললাম, ‘আপনার গলার গামছা দেখে মনে হলো, এমন গামছা কাদের সিদ্দিকীর গলায় দেখি।’
তিনি আমার দিকে তাকিয়ে হাসলেন এবং প্যাডেলে চাপ দিয়ে বললেন, ‘না, আমার গামছা স্টাইলের জন্য নয়, ঘাম মোছার জন্য। আমার গায়ের গন্ধে যাতে যাত্রীদের অস্বস্তি না হয় সেজন্য সব সময় সাবধান থাকি, পরিষ্কার থাকার চেষ্টা করি।’
জানালেন তাঁর বাড়ি টাঙ্গাইলে নয়, পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জে। তিন সন্তানের জনক। দুই মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। এক মেয়ের জামাই স্কুল শিক্ষক, আরেকজন ব্যবসায়ী। মেয়েরা এসএসসি পাস। ছোট ছেলে নবম শ্রেণিতে পড়ছে।
একটু অবাক হয়ে জানতে চাই, ‘রিকশা চালান, মেয়ে, মেয়ের জামাই, ছেলে কিছু বলে না?’
তিনি হাসতে হাসতে জবাব দেন, ‘রিকশা চালাই শখে এবং সুখে। শখ, কারণ রিকশা না চালালেও না খেয়ে থাকতে হবে না। সুখ, কারণ পরিশ্রম করতে ভালো লাগে।’
এটাও বললেন, রিকশা তিনি সব সময় চালান না। নানা ধরনের চাকরি করেছেন। আনসারেও চাকরি করেছেন। চাকরি না থাকলে বসে থাকতে ভালো লাগে না। তখনই রিকশা চালান।
গন্তব্যে পৌঁছে ভাড়া যা দিলাম তিনি খুশি মনে গ্রহণ করে বললেন, ‘দুদিনের দুনিয়া দু-এক টাকার জন্য ঝামেলা করে কী লাভ!’
ভালো লেগেছিল তার এই উদার মানসিকতা। রিকশা ভাড়া নিয়ে যাত্রী আর চালকদের বিবাদ একটি নিয়মিত ঘটনা হলেও ব্যতিক্রমী দু-একজন পাওয়া যায় বৈ কি!
এবার দেখা হলো মৌচাক মার্কেটের সামনে। সেই আগের মতোই আছেন। আছে গামছা। ভাড়া নিয়েও কোনো বাড়তি চাপ নেই। আগের বারের কথা বলায় ভালো করে দেখলেন আমাকে। মনে করতে পারলেন কি না বোঝা গেল না। বললেন, ‘কত যাত্রীর সঙ্গে কত কথা হয়। সব কথা মনে থাকে না। সব কথা মনে রাখতেও নেই।’
‘কেন?’
‘সব মনে রাখার মতো অত জায়গা নেই।’
ছেলে এখন কী পড়ছে জানতে চাই। নিষ্প্রভ গলায় বললেন, ‘ছেলেটি কলেজে পড়ছে। কিন্তু গত দেড় বছর কলেজ বন্ধ। ছেলেটি কেমন যেন হয়ে যাচ্ছে।’
তারপর আমার কাছে জানতে চান, ‘সরকার সবকিছু খুলে দিয়ে স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যায়গুলো কেন বন্ধ করে রেখেছে? করোনাভাইরাস কি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বেশি ছড়ায়?’
আমি কোনো জবাব দিতে পারি না। সরকারের হিসাব-নিকাশ কি সবাই বুঝতে পারে?
ভোরের আলো ফোটার আগেই রাজধানীর আজিমপুর বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন শ্রমজীবীদের হাটে জড়ো হন শত শত শ্রমজীবী মানুষ। বিভিন্ন বয়সের পুরুষ ও নারী শ্রমিকেরা এই হাটে প্রতিদিন ভিড় করেন একটু কাজ পাওয়ার আশায়। তবে দিন যত যাচ্ছে, তাঁদের জীবনের লড়াই ততই কঠিন হয়ে উঠছে। দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতি তাঁদের জীবনকে দুর্বিষ
২৬ অক্টোবর ২০২৪ফেলুদার দার্জিলিং জমজমাট বইয়ে প্রথম পরিচয় দার্জিলিংয়ের সঙ্গে। তারপর অঞ্জন দত্তের গানসহ আরও নানাভাবে হিল স্টেশনটির প্রতি এক ভালোবাসা তৈরি হয়। তাই প্রথমবার ভারত সফরে ওটি, শিমলা, মসুরির মতো লোভনীয় হিল স্টেশনগুলোকে বাদ দিয়ে দার্জিলিংকেই বেছে নেই। অবশ্য আজকের গল্প পুরো দার্জিলিং ভ্রমণের নয়, বরং তখন পরিচয়
২৩ অক্টোবর ২০২৪কথায় আছে না—‘ঘরপোড়া গরু, সিঁদুরেমেঘ দেখলেই ডরায়’! আমার হইছে এই অবস্থা। বাড়িতে এখন বাড়িআলী, বয়স্ক বাপ-মা আর ছোট মেয়ে। সকাল থেকে চার-পাঁচবার কতা বলিচি। সংসার গোচাচ্ছে। আইজকা সন্ধ্যার দিকে ঝড় আসপি শুনতিছি। চিন্তায় রাতে ভালো ঘুমাতে পারিনি...
২৬ মে ২০২৪প্রতিদিন ভোরে ট্রেনের হুইসেলে ঘুম ভাঙে রাকিব হাসানের। একটু একটু করে গড়ে ওঠা রেলপথ নির্মাণকাজ তাঁর চোখে দেখা। এরপর রেলপথে ট্রেন ছুটে চলা, ট্রেন ছুঁয়ে দেখা—সবই হলো; কিন্তু এখনো হয়নি চড়া। রাকিবের মুখে তাই ভারতীয় সংগীতশিল্পী হৈমন্তী শুক্লার বিখ্যাত গান। ‘আমার বলার কিছু ছিল না, চেয়ে চেয়ে দেখলাম, তুমি চলে
১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪