চট্টগ্রামে যে বিদ্যালয়ের ৮০০ শিক্ষার্থী খোলা আকাশের নিচে টয়লেট করে 

এমরান হোসাইন, যুক্তরাষ্ট্র থেকে
প্রকাশ : ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১৫: ৫২
আপডেট : ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১৬: ২৬

অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, চট্টগ্রাম শহরের বুকে এখনো প্রতিদিন একটি মাধ্যমিক স্কুলের প্রায় ৮০০ শিক্ষার্থী খোলা আকাশের নিচে টয়লেট করছে। দীর্ঘদিন পর আমেরিকা থেকে প্রিয় শহর চট্টগ্রামে গিয়ে কংক্রিটের উন্নয়নের ফাঁকে এই নির্মম বাস্তবতা দেখে কিছুটা থমকে দাঁড়ালাম। 

স্বজনদের অনেকে বললেন—তোর চোখটা ভোঁতা হয়ে গেছে। আঙুল উঁচিয়ে দেখালেন মেরিন ড্রাইভ সড়ক, বহদ্দারহাট থেকে অনিন্দ্য সুন্দর টাইগারপাস পাহাড় ধ্বংস করে নগরীর একমাত্র মূল সড়ক ধরে  চট্টগ্রাম বিমানবন্দর পর্যন্ত উড়ালসড়কের কাজ চলছে। যে মানুষ ১০ বছর পর দ্বিতীয়বারের মতো চট্টগ্রাম শহরে ঢুকবে, তার কাছে মনে হতে পারে, প্রকৃতির মায়াবী এই শহরকে নিয়ে কেন এত খেলা? 

প্রকৌশলী না হয়েও সাদা চোখে যে কেউ বলে দিতে পারেন, ‘এবার একটু থামুন।’ পাহাড়-নদী সাগরের ঐকতানে গড়ে ওঠা চট্টগ্রাম শহরের মাঝে ইতালির রোম নগরীর মিল খুঁজে পাওয়া যায়। অথচ এই শহরের মাটি-মানুষের আগামী প্রজন্মের দিকে দৃষ্টি দেওয়ার যেন কেউ নেই। নগরীতে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়লেও নতুন কোনো সরকারি স্কুল-কলেজ গড়ে ওঠেনি। নগরীতে শিক্ষার উন্নয়নে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন অবদান রাখলেও চসিক ওয়েবসাইটে শিক্ষাসংক্রান্ত কোনো বিভাগের উল্লেখ নেই। ফলে চসিক পরিচালিত শতাধিক স্কুল-কলেজ কীভাবে চলছে, তার দেখভাল করার কেউ নেই বললেই চলে। 

চসিক পরিচালিত ৪৮টি বিদ্যালয়ের মধ্যে ফলাফলের দিক থেকে দ্বিতীয় স্থান পাওয়া পোস্তারপাড় মাধ্যমিক স্কুলের প্রায় ৮০০ শিক্ষার্থী প্রতিদিন খোলা আকাশের নিচে টয়লেট করছে বলে স্কুলের প্রধান শিক্ষক নিজেই জানিয়েছেন। জরাজীর্ণ  বাঁশের চালার এই টয়লেটে যেকোনো সময় দুর্ঘটনার কবলে পড়তে পারে শিক্ষার্থীরা। 

এবার দেশে গিয়ে আমার ছেলেবেলার স্কুলটি দেখতে যাই। ‘এল’ আকৃতির এই স্কুল ছিল আমার ছেলেবেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়। সামনে ছিল বিশাল মাঠ ও বিল। বর্ষায় স্কুল শেষে বিলে মাছ ধরতাম। পাশে চট্টগ্রামের নারী শিক্ষার অগ্রদূত আছমা খাতুনের স্মৃতিবিজড়িত চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন আছমা খাতুন স্কুল অ্যান্ড কলেজ। টিনশেডের প্রাইমারি স্কুলটি আজও পড়ে আছে। ক্লাসগুলো ফাঁকা। ঘুরে দেখলাম। পরিত্যক্ত স্কুলটির সামনে মাঠের পশ্চিম পাশে দোতলা মাধ্যমিক স্কুলটি সাবেক মেয়র মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরীর আমলে তৈরি করা হয়েছিল। বর্তমানে শিক্ষার্থীর স্থান সংকুলান হচ্ছে না। প্রায় ৮০০ শিক্ষার্থীর জন্য মূল ভবনে কোনো টয়লেট নেই। তাই পুরোনো টিনশেডের প্রাথমিক স্কুল ভবনের এক কোণে ভাঙা চালের নিচে শিক্ষার্থীরা প্রাকৃতিক কাজ সারে। 

শিক্ষার্থীরা জানায়, দীর্ঘদিনের পুরোনো ভবনে তাদের ক্লাস করতে কষ্ট হয়। মাঝে মাঝে নিচে নেমে বারান্দায় ক্লাস করতে হয়। স্কুলের প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘সিটি করপোরেশন অফিসে যেতে যেতে আমি ক্লান্ত। এখন লজ্জা হয়। স্টুডেন্টদের কষ্ট আর আমাদের চাওয়ার আবেদন ফাইলটি লাল ফিতায় আটকানো করপোরেশন অফিসে।’

আমিও এই স্কুলের একজন প্রাক্তন ছাত্র হিসেবে মাননীয় মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরীর কাছে দাবি করতে পারি, পরিত্যক্ত টিনশেডের স্কুলটিতে ছাত্রদের জন্য শ্রেণিকক্ষ ও টয়লেটের ব্যবস্থা করে স্বাভাবিকভাবে শিক্ষা অধিকার নিয়ে বেড়ে ওঠার সুযোগ দিন।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত