Ajker Patrika

মিলনের চানাচুর যেমন সুস্বাদু, গানের সুরও মনমাতানো

জুয়েল আহমদ, জগন্নাথপুর (সুনামগঞ্জ) 
আপডেট : ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১৫: ২৪
মিলনের চানাচুর যেমন সুস্বাদু, গানের সুরও মনমাতানো

শরীরে বাহারি রঙের পোশাক আর পায়ে ঘুঙুর পরে আপন মনে গান গাইছেন ষাটোর্ধ্ব এক লোক। তিনি পেশায় শিল্পী নন, তবে গান গেয়েই বিক্রি করেন চানাচুর। সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার হাট-বাজারে গেলেই দেখা মেলে তাঁর।

এই চানাচুর বিক্রেতার নাম মিলন মিয়া। তিনি যে চানাচুর বিক্রি করেন, তার নাম মৌসুমী। এটি তাঁর দেওয়া নাম। ঘুঙুরের শব্দে ও গানের তালে নেচে-গেয়ে পথচারীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে তাদের মন জয় করে ঘটি গরম চানাচুর বিক্রি করেন মিলন মিয়া। গান শুনতে এসে অনেকেই কেনেন চানাচুর। চানাচুর বিক্রি করে যা আয় হয়, তা দিয়েই চলে তাঁর সংসার।

জগন্নাথপুর শহরের আনাচে-কানাচে মিলন মিয়াকে দেখা যায়। গলায় কাপড় দিয়ে একটি বাক্স ঝুলিয়ে তিনি এই চানাচুর বিক্রি করেন। বাক্সের মাঝখানের ঢাকনা তুললেই মজাদার মসলা ও সুস্বাদু চানাচুরের লোভনীয় ঘ্রাণ পাওয়া যায়।

মিলন মিয়ার পৈতৃক বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার গনিপুর গ্রামে। ১৯৯২ সালে সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরে পাড়ি জমান তিনি। বর্তমানে উপজেলার মিরপুর ইউনিয়নের শ্রীরামসী এলাকার একটি ভাড়া বাড়িতে পরিবার নিয়ে বসবাস করছেন মিলন মিয়া।

প্রথমে একটি রাইস মিলে কাজ করলেও গত ১৯ বছর যাবৎ চানাচুর বিক্রি করেই সংসার চালাচ্ছেন তিনি। তাঁর সংসারে স্ত্রী, দুই মেয়ে ও তিন ছেলে রয়েছে। মেয়েদের বিয়ে দিয়ে এখন চানাচুর বিক্রি করে ছেলেদের পড়ালেখা আর কোনোমতে সংসার চালাচ্ছেন তিনি।

প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত উপজেলা সদরসহ প্রত্যন্ত অঞ্চলে মোহনীয় সুরে গান গেয়ে চানাচুর বিক্রির জন্য ঘুরে বেড়ান এই মানুষটি। গান শুনে মুগ্ধ হয়ে অনেকেই উপহার হিসেবে টাকা দিতে চান, কিন্তু তিনি কারও দয়া গ্রহণ করেন না। চানাচুর কিনলেই বরং তিনি খুশি। গানের সুর ও ঘুঙুরের শব্দে তাঁর চানাচুর বিক্রি হয়।

জগন্নাথপুর বাজারের কাওছার মিয়া নামের এক ব্যবসায়ী বলেন, মিলনের চানাচুর যেমন সুস্বাদু, গানের সুরও মনমাতানো। তাঁর গান শোনার জন্যই মানুষ চানাচুর কেনে।

মিলন মিয়া আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘জীবিকার তাগিদে গান গেয়ে মানুষকে আনন্দ দিই। গান শুনে অনেকে চানাচুর কেনে। দৈনিক ৪০০-৫০০ টাকা বিক্রি হয়। এতে কোনোমতে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে বেঁচে আছি এবং ছেলেদের পড়ার খরচ চালাচ্ছি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত