Ajker Patrika

৪৪ ও ৬০ বছরে হঠাৎ বেড়ে যায় মানুষের জৈবিক বয়স: গবেষণা

অনলাইন ডেস্ক
৪৪ ও ৬০ বছরে হঠাৎ বেড়ে যায় মানুষের জৈবিক বয়স: গবেষণা

জীবনচক্রে মানবদেহের বয়স সব সময় একক হারে বাড়ে না। এ বিষয়ে চমকপ্রদ তথ্য উঠে এসেছে সাম্প্রতিক এক গবেষণায়। বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, ৪৪ ও ৬০ বছর বয়সে মানুষের জৈবিক বয়স হঠাৎ বেড়ে যায়।

গত ১৪ আগস্ট ‘নেচার এজিং’ জার্নালে এই গবেষণা প্রকাশিত হয়। এই গবেষণায় বয়স্ক মানবদেহের ১১ হাজার অণুর উপর বেশ কয়েক বছর ধরে পর্যবেক্ষণ করা হয়। এতে ৪৪ ও ৬০ বছর বয়সে অণুগুলোর ৮১ শতাংশের আকস্মিক পরিবর্তন ধরা পড়ে।

বয়স বৃদ্ধি নিয়ে এই ধরনের গবেষণায় ‘জৈবিক বয়স’ গুরুত্ব দিয়ে পর্যবেক্ষণ করা হয়। জীবন পরিক্রমায় দেহের ভেতরে নানা সময়ে ঘটে যাওয়া পরিবর্তনগুলোকে বুঝতে সাহায্য করে জৈবিক বয়স। এটি মানুষের ‘কালানুক্রমিক বয়স’ নয়, যার ভিত্তিতে আমরা বছর জন্মদিন পালন করি।

এই দুটি বছরে জৈবিক বয়স ত্বরান্বিত হওয়ার মাধ্যমে এসব বয়সে কিছু রোগের প্রকোপ কেন হঠাৎ বেড়ে যায়, তা বুঝা যায়। উদাহরণস্বরূপ, ৪০ থেকে ৫৯ বছরের বয়সীদের মধ্যে প্রায় ৬ দশমিক ৫ শতাংশ মানুষের করোনারি আর্টারি বা ধমনি সংক্রান্ত রোগ হয়। আর ৬০ থেকে ৭৯ বছরের মধ্যে এর প্রকোপ বেড়ে ১৯ দশমিক ৮ শতাংশ পৌঁছায়।

এই গবেষণার জন্য স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা ২৫ থেকে ৭৫ বছর বয়সী ১০৮ জন ব্যক্তিকে বেছে নিয়েছিলেন, যারা বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। এই গবেষণা ৭ বছরেরও বেশি সময় ধরে চলছিল এবং প্রতি ৩ থেকে ৬ মাসে রক্তের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। এতে দেখা যায়, বয়স ৪৪ ও ৬০ বছর হলে জিনের কার্যক্রম ও রক্তে শর্করার পরিমাণসহ দেহের নানা বিষয়ে পরিবর্তন ঘটে।

এসব বয়সে ঘটা পরিবর্তনগুলোর বেশিরভাগই হৃদরোগের সঙ্গে সম্পর্কিত। উদাহরণস্বরূপ, অংশগ্রহণকারীদের ৪০ ও ৬০-এর দশকে রক্তে এক ধরনের প্রোটিনের পরিমাণ বেড়ে যেতে দেখা যায়, যা এথেরোস্কলেরোসিস বা আর্টারির মধ্যে প্লাক জমে যাওয়ার সঙ্গে সম্পর্কিত। এছাড়া এসব বয়সে ক্যাফেইন ও অ্যালকোহলের বিপাকের ক্ষমতা কমে যেতে দেখা যায়।

যদিও এই গবেষণার ফলাফলগুলো আপেক্ষিক, তবুও এটি হৃদরোগের বর্ধিত ঝুঁকি বুঝতে সাহায্য করতে পারে। তাছাড়া এসব বয়সে শরীরের রাসায়নিক কেন পরিবর্তন ঘটে তা গবেষকেরা এখনো জানেন না। এই গবেষণায় খাদ্যাভ্যাস বা ব্যায়ামের মতো জীবনধারার উপাদানগুলো ভূমিকা বিবেচনায় নেওয়া হয়নি।

অংশগ্রহণকারীদের ৪০ও ৬০ এর দশকে সবচেয়ে বেশি হৃদরোগ ও রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়তে দেখা যায়, যা বয়সজনিত টাইপ ২ ডায়াবেটিসের সঙ্গে সম্পর্কিত।

মেক্সিকোর জাতীয় জেরিয়াট্রিক ইনস্টিটিউটের গবেষক হুয়ান কার্লোস ভারজান বলেন, ৬০ বছর বয়সের পরিবর্তনটি সম্ভবত সংক্রমণের কারণে হতে পারে। গবেষণায় দেখা যায়, ৬০ বছরের বেশি বয়সী অংশগ্রহণকারীদের রক্তে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এনজাইমের পরিমাণ বেড়ে গেছে। এটি সংক্রমণের জন্য দায়ী রাসায়নিকগুলোকে প্রতিরোধ করে। ফলে বোঝা যায় যে, এই বয়সে রোগ সংক্রমণ বেড়ে যায়।

গবেষণার প্রধান লেখক জিয়াওতাও শেন বলেন, অনেক নারীরা ৪৪ বছর বয়সে প্রিমেনোপজের মধ্য দিয়ে যায়। তবে গবেষণায় দেখা গেছে, এই পরিবর্তন নারী এবং পুরুষ উভয়ের ক্ষেত্রেই একই সময় ঘটে। তাই হরমোনের পরিবর্তনের জন্য দায়ী নয়।

তবে এই গবেষণার কিছু সীমাবদ্ধতা আছে। অংশগ্রহণকারীদের বয়স ২৫ থেকে ৭৫ বছরের মধ্যে থাকায় বয়ঃসন্ধিকালসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বয়সের পরিবর্তন মূল্যায়ন করা সম্ভব হয়নি। তারচেয়ে বড় কথা, এতে অংশগ্রহণকারী ছিলেন মাত্র ১০৮ জন। এই সংখ্যা বিশ্বব্যাপী মানুষের প্রতিনিধিত্ব করতে পারে না।

ভারজান আরও বলেন, ক্যালিফোর্নিয়ার মানুষেরা দীর্ঘকাল স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করেন। তাই গড় আয়ু কম— এমন স্থানের মানুষদের ওপর গবেষণাটি করা উচিত।

গবেষণাটি রক্তের অণু পরিবর্তনের ওপর ভিত্তি করে ফলাফল নির্ধারণ করে, যা সব অঙ্গের বয়স বাড়ার সঙ্গে সম্পর্কিত নাও হতে পারে। অনেক গবেষণায় বলা হয়, বয়স টিস্যুর সঙ্গে সম্পর্কিত। আবার অনেক গবেষণায় বলা হয়, কিছু মানুষের ক্ষেত্রে হৃৎপিণ্ডের বয়স সবচেয়ে বেশি বৃদ্ধি পায় আর কারও ক্ষেত্রে কিডনি।

ভারজান মনে করেন, এই নাটকীয় পরিবর্তনগুলোর জন্য এপিজেনেটিক দায়ী, যা জেনেটিক কোডের পরিবর্তন না করে জিনের কার্যকারিতা পরিবর্তন করে।

তথ্যসূত্র: সায়েন্স অ্যালার্ট

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত