চেনা মাঠে বাংলাদেশের এখন আটে ওঠার মিশন

রানা আব্বাস,সেন্ট ভিনসেন্ট থেকে
প্রকাশ : ১৩ জুন ২০২৪, ১১: ২৮
আপডেট : ১৩ জুন ২০২৪, ১২: ০০

নিউইয়র্কের কোলাহল আর যান্ত্রিক জীবন থেকে শান্ত-নিরিবিলি সেন্ট ভিনসেন্টে পা রাখতেই কেমন এক আলস্য জাপটে ধরে। ক্যারিবীয় দ্বীপে পশ্চিমা পর্যটকেরা আসেন গুচ্ছের ডলার-পাউন্ড খরচ করে অবকাশ কাটাতে। আর সেখানেই বাংলাদেশের মহাগুরুত্বপূর্ণ অভিযান। আলস্যে ডুবে যাওয়ার সুযোগ কই!

সেন্ট ভিনসেন্টের এই মাঠ বাংলাদেশকে স্মৃতিকাতর করে তুলতে বাধ্য। ২০০৪ সালে এখানে প্রথম ম্যাচ খেলতে নেমে জয়ের দেখা প্রায় পেয়েই গিয়েছিল হাবিবুল বাশারের বাংলাদেশ। বাংলাদেশের দেওয়া ১৪৫ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে ৯ উইকেট খুইয়ে কোনোভাবে ১ উইকেটের জয় নিয়ে ফিরেছিল ক্যারিবীয়রা। ২০ বছর পর স্বাভাবিকভাবেই হাবিবুল বাশারের ওই দলের কেউ বর্তমান দলে নেই। তবে এই মাঠটা বিশেষভাবে স্মরণীয় মাহমুদউল্লাহর কাছে। ২০০৯ সালের জুলাইয়ে এ মাঠেই তো তাঁর টেস্ট অভিষেক। ও হো, আসল তথ্যটাই দেওয়া হয়নি। বাংলাদেশ ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাঠে প্রথম টেস্ট জিতেছিল এ মাঠেই। আর সেই টেস্টে ম্যান অব দ্য ম্যাচ পুরস্কার জিতেছিলেন কে? তামিম ইকবাল। তামিম এই দলে না থাকলেও ১৫ বছর আগে তাঁর সতীর্থ তরুণ সাকিব আল হাসানের কাছেও সেন্ট ভিনসেন্ট টেস্ট বিশেষ স্মরণীয় হয়ে থাকবে, এমনকি সুদূর বাংলাদেশ থেকেও স্মৃতির পাতা উল্টে দেখতে পারেন মাশরাফি বিন মর্তুজা। ২০০৯ সালের সেন্ট ভিনসেন্টে টেস্ট খেলতে গিয়েই হাঁটুতে চোট পেয়ে যে ছিটকে গেলেন, সাদা পোশাকে আর ফেরা হয়নি তাঁর। আর সেই ম্যাচে নিভৃতে নেতৃত্বের ব্যাটনটা উঠেছিল সাকিবের হাতে। মাঠের ছবি মেসেঞ্জারে পাঠাতেই চট করে চিনে ফেললেন মাশরাফি, ‘এই সেই মাঠ, যেখানে আমার টেস্ট ক্যাপ্টেন্সি শুরু, ম্যাচটা জিতেছিলাম আর আমার সেই ইনজুরি।’

স্মৃতিমেদুর সেন্ট ভিনসেন্টে বাংলাদেশ সবশেষ এসেছিল ১০ বছর আগে। এক দশক পরে সেই মাঠে বাংলাদেশ পা রেখেছে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সুপার এইটের রাস্তা পরিষ্কার করতে। আজ তাদের প্রতিপক্ষ নেদারল্যান্ডস। ডাচরাই গত নভেম্বরে কলকাতার ইডেন গার্ডেনসে বাংলাদেশকে ৫০ ওভারের বিশ্বকাপে হারিয়ে দিয়েছিল। সেন্ট ভিনসেন্টে তাই একসঙ্গে দুটি লক্ষ্যে নামতে হচ্ছে নাজমুল হোসেন শান্তদের—ডাচদের হারিয়ে ‘প্রতিশোধ’ নেওয়ার সঙ্গে শেষ আটে যাওয়ার কাজ অনেকটা সেরে ফেলা। তবে ডাচদের খুব একটা পিছিয়ে রাখার সুযোগ নেই।

রানরেটে বাংলাদেশ কিছুটা এগিয়ে থাকলেও দুই দলের পয়েন্ট সমান। আজ যারা জিতবে, তাদেরই সুপার এইটে যাওয়ার পথ মসৃণ হবে। ভুলে গেলে চলবে না, ডাচদের বিপক্ষে ‘মনের বাঘে’ তাড়া করে বাংলাদেশকে। ওয়ানডে সংস্করণে তিন দেখায় দুবারই নেদারল্যান্ডসের কাছে হেরেছে তারা। টি-টোয়েন্টিতে ছবিটা অবশ্য ভিন্ন—চারবারের সাক্ষাতে তিনটিতেই জিতেছে বাংলাদেশ, একটি ম্যাচ হেরেছে ২০১২ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে। সবশেষ ২০২২ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে হোবার্টে মুখোমুখি লড়াইয়ে জিতলেও বাংলাদেশের ঘাম ছুটে গিয়েছিল।

কাল ঝকঝকে সকালে মাঝ উইকেটের পাশে অনুশীলন শুরুর আগে একটা ‘ভালো’ সংবাদ পেয়েছে বাংলাদেশ। যুক্তরাষ্ট্রের লডারহিলে শ্রীলঙ্কা-নেপালের ম্যাচটা বজ্রসহ বৃষ্টির কারণে পরিত্যক্ত হয়েছে। তারা পয়েন্ট ভাগাভাগি করায় টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সুপার এইটে যাওয়ার সম্ভাবনা জোরালো হয়েছে বাংলাদেশেরই।

দুই দলের কাছে চ্যালেঞ্জ হতে পারে সেন্ট ভিনসেন্টের আর্নস ভেলের ‘অচেনা’ কন্ডিশন। এখানে যে দুটি আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি হয়েছে, কোনোটিতেই হাই স্কোরিং রান দেখা যায়নি, সর্বোচ্চ রান হয়েছে ১৫৮। গত ১০ বছরে কোনো আন্তর্জাতিক ম্যাচ না হওয়া সেন্ট ভিনসেন্টে ক্রিকেটের বড় উৎসব ফিরছে বাংলাদেশ-নেদারল্যান্ডস ম্যাচ দিয়েই। এ মাঠে ডাচদের কখনো খেলার অভিজ্ঞতা না থাকলেও বাংলাদেশের যে অসংখ্য স্মৃতি, সে গল্প তো শুনলেনই। আজ স্মৃতির সরণি আরও ঝলমলে করে রাখার সুযোগ কেন ছাড়বে বাংলাদেশ!

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত