Ajker Patrika
সাক্ষাৎকার

পারফর্ম করতে পারলে দুনিয়ার সব ট্যাগই লেগে যাবে

তাসকিনের কাছে পারফর্মই সব। ছবি: এএফপি

এ বছর বিসিবির কেন্দ্রীয় চুক্তিতে একমাত্র খেলোয়াড় হিসেবে এ প্লাস গ্রেডে আছেন তাসকিন আহমেদ। পারফরম্যান্সের বিচারে বিসিবির নতুন গ্রেডিং ব্যবস্থায় বাংলাদেশের একজন ফাস্ট বোলারের সর্বোচ্চ শ্রেণিতে থাকাটা দেশের পেস বোলিং আক্রমণের উন্নতিই তুলে ধরে। গত চার বছরে তাসকিন নিজেকে দেশের পেস বোলিং আক্রমণের নেতা হিসেবেই প্রতিষ্ঠা করেছেন। কাল সন্ধ্যায় তাসকিনের লালমাটিয়ার বাসায় আজকের পত্রিকাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে নিজের ক্যারিয়ারসহ কথা বললেন প্রাসঙ্গিক নানা বিষয়ে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন রানা আব্বাস

রানা আব্বাস
আপডেট : ২৪ মার্চ ২০২৫, ১১: ৩৫

প্রশ্ন: এ প্লাস গ্রেডে থাকা নিশ্চয়ই আপনার একটা বড় ব্যক্তিগত অর্জন। এই অর্জনটা কীভাবে দেখেন?

তাসকিন আহমেদ: সত্যি বলতে প্রক্রিয়া, উন্নতির জায়গা, নিজের ইচ্ছা—এসব থেকেই উন্নতি হয়। দিনের পর দিন উন্নতির লক্ষ্যে ঘুরেছি। ফাস্ট বোলার হিসেবে এটা সহজ নয়। গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে রক্ষা করাটা। এই এ‍ প্লাস গ্রেডে আসাটা ফ্যাক্ট না। হাই নোটে আরও ভালো করে শেষ করতে চাই।

প্রশ্ন: বাংলাদেশের ফাস্ট বোলিং আক্রমণ নিয়ে প্রশংসা হচ্ছে কয়েক বছর ধরে। এই বদলে যাওয়ার গল্পে কাকে বেশি কৃতিত্ব দেবেন?

তাসকিন: আমরা এখন এই মুহূর্তে যে দলে খেলছি, তাদের সবাই শৈশব থেকে বাংলাদেশ দলে মাশরাফি ভাইকে ভিন্নভাবে দেখে এসেছে। অনেকেরই তিনি আদর্শ। তাঁকে আমরা দেখে বড় হয়েছি যে বাংলাদেশ দলের পেসারদের মধ্যে আগ্রাসন, পেস, সুইং—সবকিছু মাশরাফি ভাইয়ের ছিল। ম্যাশ যাওয়ার পরে বা ম্যাশ যখন শেষের দিকে, তখন তো আমি দল থেকেই বাদ পড়েছিলাম। যখন বাদ পড়লাম এবং কোভিডের ওই সময়ে সত্যি কথা বলতে একটা প্রশ্নবোধক চিহ্ন পড়ে গিয়েছিল আমার পাশে। সে সময় সিদ্ধান্ত নিই, নিজের জন্য হলেও একটা ম্যাচ খেলব লাল-সবুজ জার্সিতে। এই ফাস্ট বোলিং বিভাগ বদলে যাওয়ার পেছনে আমি মনে করি আমার ওই ফিরে আসা—কী প্রক্রিয়াতে আমি এসেছি, কীভাবে উন্নতি করেছি, এই প্রক্রিয়াটা দৃশ্যমান হওয়ার পর এক ধাপ ওপরে উঠতে বাকিদের সহায়তা করেছে। এটাতে আমিই হয়তো বড় উদাহরণ ছিলাম। খুব বাজে জায়গা থেকে এসে বাংলাদেশ দলে ভালো করা সম্ভব, সেটা দেখিয়েছি।

প্রশ্ন: নাহিদ রানা, যিনি ঘণ্টায় ১৪৯-১৫০ কিমি গতিতে বোলিং করছেন। তাঁর কাছ থেকে ১০০ মাইল গতিতে বোলিং দেখতে আপনি কতটা আশাবাদী?

তাসকিন: কোনো কিছুই অসম্ভব নয়। কারণ, সে অনেক তরুণ। তার ক্ষুধা আছে। কঠোর পরিশ্রমী ছেলে। সে (নাহিদ রানা) চায় উন্নতি করতে। শুধু গতি না, ধীরে ধীরে সুইং, ভেরিয়েশন নিয়েও কাজ করছে। যার মধ্যে আত্মনিবেদন ও ক্ষুধা আছে, সে উন্নতি করবে। আল্লাহ তাকে সামর্থ্য দিয়েছেন ১৫০ কিমিতে বোলিং করার। সে উন্নতি করে ১৫০ থেকে বাড়াতেও পারবে ইনশা আল্লাহ; যদি ফিট থাকে, ছন্দে থাকে। গতি নির্ভর করে ছন্দ ও ফিটনেসের ওপর। সে আমাদের বড় ভরসা। সে যদি ভালো করতে পারে, সুস্থ থাকে আর উন্নতি করে, বাংলাদেশ ক্রিকেটেরই ভালো।

প্রশ্ন: এখন আপনাদের ওয়ার্ক লোড ম্যানেজমেন্ট কেমন হওয়া দরকার? বিসিবির কি উচিত রোটেশন নীতির দিকে যাওয়া?

তাসকিন: খেয়াল করে দেখবেন, আগের চেয়ে কিন্তু উন্নতি হয়েছে এ জায়গায়। সম্প্রতি যে যতই ভালো করুক, বিশ্রাম দেওয়া হয় তাকে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজের আগে আফগানিস্তানের বিপক্ষে যখন সিরিজ খেললাম, দুই ম্যাচ শেষে ১-১ সমতা থাকার পরও তৃতীয় ম্যাচে কিন্তু আমাকে বিশ্রাম দেওয়া হয়েছিল। অনেক গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ ছিল (আফগানিস্তানের বিপক্ষে)। কিন্তু ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজের চাপের কথা চিন্তা করে আমাকে বিশ্রাম দিয়েছিল। পরে দুটি টেস্ট খেললাম। একটা জিতলাম, একটা হারলাম। ক্যারিবীয় সফরে প্রথম ওয়ানডে খেলে হারার পরও কিন্তু দ্বিতীয় ম্যাচে বিশ্রাম নিয়েছি। রোটেশন পলিসি তাই ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে। কিন্তু এটাও বুঝতে হবে, আমাদের ৫-৬ জনের বেশি সে রকম ফাস্ট বোলার নেই। তাই চাইলেও অত বড় আকারে রোটেশন করতে পারছে না। তবে সবাইকে টিকিয়ে রাখতে এটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ।

অন্তত ৫০০ আন্তর্জাতিক উইকেট নিয়ে ক্যারিয়ার শেষ করতে চান তাসকিন। ছবি: এএফপি
অন্তত ৫০০ আন্তর্জাতিক উইকেট নিয়ে ক্যারিয়ার শেষ করতে চান তাসকিন। ছবি: এএফপি

প্রশ্ন: পাঁচ সিনিয়র ক্রিকেটার একে একে বিদায় নিচ্ছেন। তাঁদের কাছ থেকে আপনার মূল শিক্ষা কী?

তাসকিন: তাঁরা আসলে দেশের জন্য অনেক করেছেন, এতে কোনো সন্দেহ নেই। অনেক দিন খেলেছেন, বাংলাদেশ দলকে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় নিয়ে এসেছেন। তাঁদের অবদান অনেক বেশি। তাঁদের দেখে ব্যক্তিগতভাবে যেটা শিখেছি, চাপের মধ্যে কীভাবে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। কিছু কিছু কঠিন পরিস্থিতি থেকে দলকে কীভাবে বের করে নিয়ে আসা যায়। চাপের মধ্যে শান্ত থেকে পারফর্ম করা; বিশেষ মুহূর্তে পরিস্থিতি দ্রুত বুঝতে পারা। তাঁদের মধ্যে এ বিষয়গুলো দেখে বুঝেছি অভিজ্ঞতার মূল্য আসলে কী।

প্রশ্ন: সেদিন সৌম্য সরকার বলছিলেন, ১০-১২ বছর খেলেও আপনারা সিনিয়র ট্যাগ পাননি, পাঁচ সিনিয়র ক্রিকেটারের ছায়াতেই থেকে গেছেন। আপনি কীভাবে দেখেন এই পর্যবেক্ষণ?

তাসকিন: ট্যাগ লাগানো চিন্তা না করে পারফর্ম করতে পারলে দুনিয়ার সব ট্যাগই লেগে যাবে। খুবই সহজ কথা—পারফরম্যান্স খারাপ হলে কোনো ট্যাগই লাগবে না। পারফর্ম করলে এক রকম, না করলে আরেক রকম। আমিই এর সবচেয়ে বড় উদাহরণ। এগুলো নিয়ে আসলে চিন্তা করি না। তাঁরা ভালো করেছেন বলেই তো এত দিন খেলেছেন। হ্যাঁ, কখনো কখনো অফ ফর্মেও ছিলেন, কিন্তু পারফরম্যান্স না করলে তো এত দিন খেলতে পারতেন না। তাঁরা বাদে বাকি যারা আছে, তাদের ধারাবাহিকতা দেখলে বোঝা যাবে কেন ট্যাগ লেগেছে, কেন লাগেনি। তো আমাদের সেভাবে ধারাবাহিক থাকলে সিনিয়র কেন, এর চেয়ে আরও বড় ট্যাগও লেগে যেত। দিন শেষে পারফরম্যান্সই আসল কথা।

সুযোগ এলে আইপিএলে খেলতে চান তাসকিন। ছবি: এএফপি
সুযোগ এলে আইপিএলে খেলতে চান তাসকিন। ছবি: এএফপি

প্রশ্ন: ক্যারিয়ার শেষে নিজেকে কোথায় দেখতে চান?

তাসকিন: ভালোর তো কোনো শেষ নেই। প্রেক্ষাপট অনুযায়ী আন্তর্জাতিক ক্রিকেট যেভাবে চ্যালেঞ্জিং হয়ে যাচ্ছে ধীরে ধীরে, আমি যদি সব ফরম্যাট খেলতে পারি, নিজেকে কিংবদন্তি পর্যায়ে নিয়ে যেতে চাই। অন্তত ৫০০ আন্তর্জাতিক উইকেট নিয়ে ক্যারিয়ার শেষ করতে চাই।

প্রশ্ন: নির্দিষ্ট কোনো সংস্করণে বাংলাদেশের অধিনায়ক হওয়াটা কি ক্যারিয়ারের এ পর্যায়ে পাওনা মনে হয়?

তাসকিন: আসলে এটা বোর্ডের ব্যাপার। যাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, তারা সর্বোচ্চটা দিয়ে চেষ্টা করছে। আমি অধিনায়ক হলেই যে রকেট সায়েন্সের মতো সবকিছু উল্টে যাবে, তা তো না। আমাকে দায়িত্ব দিলে হয়তো সর্বোচ্চটা দিয়ে চেষ্টা করব। বড় বিষয় হলো, আমি ক্রিকেট উপভোগ করতে চাই। আল্লাহ আমাকে ফিট রাখুন। বোর্ড যদি কখনো মনে করে আমি যোগ্য, তাহলে করব। না দিলে আমার খেলায় কোনো প্রভাব ফেলবে না।

প্রশ্ন: আইপিএল আপনার কাছে আফসোসের এক নাম। সুযোগ পেয়েও খেলা হয়নি। যদি সামনে সুযোগ আসে, পুরো মৌসুম খেলতে চান?

তাসকিন: সুযোগ এলে কেন নয়? অবশ্যই খেলতে চাই। কিন্তু বিষয়টা হচ্ছে, সুযোগ পাব কি না। তিনবার সুযোগ কাজে লাগাতে পারিনি। এবার সুযোগ আসতে পারে যদি কারও (লক্ষ্ণৌর সঙ্গে কথা হচ্ছে) বিকল্প প্রয়োজন হয়। এভাবেই কথা হয়েছিল। আমি চাই বাংলাদেশের হয়ে তিন সংস্করণে নিয়মিত খেলতে। তেমন গুরুত্বপূর্ণ খেলা না থাকলে আমাদের বেশ কিছু লিগে যেতে দেওয়া হবে, এমনই কথা হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ সিরিজ থাকলে সেটা ভিন্ন কথা। এখন সবাইকে অনাপত্তিপত্র দেবে বলে মনে করি।

প্রশ্ন: বিশ্বমঞ্চে ব্যাটারদের ব্যর্থতার কারণে বোলারদের সাফল্য ম্লান হয়ে যায়। এদিক থেকে নিজেকে কি দুর্ভাগা মনে হয়?

তাসকিন: দিন শেষে এটি দলীয় খেলা। ব্যক্তিগত পারফরম্যান্স ভালো হোক বা খারাপ হোক, দল ভালো না করতে না পারলে কোনো লাভ নেই। আমরা সবাই চাই ম্যাচ যেন জিততে পারি। এমনও হতে পারে, আমি ভালো করলাম আরেকজন খারাপ করল, কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ সময়ে সে একটা ওভার ভালো করে ম্যাচ জিতিয়ে দিল, এটাই আসলে অবদান। প্রতিদিন সবাই বড় পারফরমার হবে না। একটি ওভার বা কারও পরিস্থিতি বুঝে ২০ রান—এসব ছোট ছোট অবদানেই আমরা ম্যাচ জিততে পারি। হ্যাঁ, এটা ঠিক, গত কয়েক বছরে ব্যাটিংয়ের তুলনায় বোলিং একটু উন্নতি করেছে। আশা করছি, ব্যাটিংয়েও দ্রুত উন্নতি হবে। হয়তো সময় লাগছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভারত ম্যাচে দেরি করায় বাফুফেকে দেড় লাখ টাকা জরিমানা

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
মোরসালিনের গোলে ২২ বছর পর ভারতকে হারায় বাংলাদেশ। ছবি: আজকের পত্রিকা
মোরসালিনের গোলে ২২ বছর পর ভারতকে হারায় বাংলাদেশ। ছবি: আজকের পত্রিকা

এশিয়ান কাপ বাছাইয়ের ম্যাচ আয়োজন করে আরও একবার জরিমানার মুখে পড়ল বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে)। বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচের দ্বিতীয়ার্ধের খেলা ১ মিনিট ৪৩ সেকেন্ড দেরিতে শুরু হওয়ায় বাফুফেকে ১২৫০ ডলার জরিমানা করেছে এশিয়ান ফুটবল কনফেডারেশন (এএফসি)। বাংলাদেশি মুদ্রায় যা প্রায় ১ লাখ ৫৩ হাজার টাকা। গত ১৭ ডিসেম্বর এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে এএফসির শৃঙ্খলা ও নীতি কমিটি।

গত ১৮ নভেম্বর জাতীয় স্টেডিয়ামে ভারতকে ১-০ গোলে হারিয়েছে বাংলাদেশ। এশিয়ান কাপ বাছাইয়ের ম্যাচটি নিয়মরক্ষার হলেও উন্মাদনার কমতি ছিল না। ২২ বছর পর ভারতকে হারানোর স্বাদ পেয়েছে বাংলাদেশ৷ একমাত্র জয়সূচক গোলটি আসে ম্যাচের প্রথমার্ধে শেখ মোরসালিনের পা থেকে। কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধে সময়মতো খেলা মাঠে গড়াতে পারেননি রেফারি।

একই কারণে সর্বভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনকেও এক হাজার ডলার জরিমানা করা হয়েছে। নির্দিষ্ট সময়ের ভেতর এই অপরাধ দুবার করায় বাংলাদেশের জরিমানার অঙ্ক বেশি ধরা হয়েছে। এর আগে গত জুনে ঘরের মাঠে সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে ম্যাচের দ্বিতীয়ার্ধের খেলা শুরু হতে দুই মিনিট বিলম্ব হওয়ায় দেড় হাজার ডলার জরিমানা করা হয়।

এএফসির শৃঙ্খলা নীতিমালার ১১.৩ ধারা অনুযায়ী, ৩০ দিনের মধ্যে জরিমানার টাকা পরিশোধ করতে হবে দুই ফেডারেশনের। এশিয়ান কাপ বাছাইয়ে বাংলাদেশের শেষ ম্যাচ ৩১ মার্চ সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে। সিঙ্গাপুর ইতোমধ্যে ১১ পয়েন্ট নিয়ে এশিয়ান কাপে খেলা নিশ্চিত করেছে। ৫ পয়েন্ট নিয়ে চার দলের মধ্যে ‘সি’ গ্রুপে বাংলাদেশের অবস্থান তিনে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

মোস্তাফিজদের বিপক্ষে খরুচে বোলিংয়ে তাসকিনের ৩ উইকেট

ক্রীড়া ডেস্ক    
মোস্তাফিজুর রহমানের দু্বাই ক্যাপিটালসের বিপক্ষে তাসকিন আহমেদ ৪ ওভারে ৪০ রানে নিয়েছেন ৩ উইকেট। ছবি: ফেসবুক
মোস্তাফিজুর রহমানের দু্বাই ক্যাপিটালসের বিপক্ষে তাসকিন আহমেদ ৪ ওভারে ৪০ রানে নিয়েছেন ৩ উইকেট। ছবি: ফেসবুক

সংযুক্ত আরব আমিরাতের আন্তর্জাতিক লিগ টি-টোয়েন্টি যেন বাংলাদেশ ক্রিকেটারদের মিলনমেলা। সাকিব আল হাসান, মোস্তাফিজুর রহমান, তাসকিন আহমেদ—বাংলাদেশের তিন তারকা ক্রিকেটার খেলছেন এখন আমিরাতের এই লিগে। কদিন আগে সাকিব-মোস্তাফিজের একটি ছবি ‘দ্য বাংলা’ ক্যাপশনে পোস্ট করেছিল সাকিবের দল এমআই এমিরেটস। আজ দুবাই আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে মুখোমুখি হয়েছেন তাসকিন-মোস্তাফিজ।

বাংলাদেশের তিন তারকা সাকিব, তাসকিন, মোস্তাফিজ এবারই প্রথমবারের মতো আইএল টি-টোয়েন্টিতে খেলছেন। এই তিন বাংলাদেশির মধ্যে মোস্তাফিজ নিয়মিত বিরতিতে উইকেট নিচ্ছেন। এদিকে তাসকিন উইকেট তেমন পাচ্ছেন না। উপরন্তু মুক্ত হস্তে রান বিলিয়ে দিচ্ছেন। দুবাইয়ে আজ মোস্তাফিজের দুবাই ক্যাপিটালসের বিপক্ষে তাসকিন ৩ উইকেট হলেও ১০ ইকোনমিতে বোলিং করেছেন।

দুবাই ক্যাপিটালসের বিপক্ষে টস জিতে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন শারজা ওয়ারিয়র্সের অধিনায়ক সিকান্দার রাজা। দলীয় ৩ রানে ভেঙে যায় দুবাই ক্যাপিটালসের উদ্বোধনী জুটি। ইনিংসের পঞ্চম বলে দুবাইয়ের ওপেনার শায়ান জাহাঙ্গীরকে (১) এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলেন রাজা। দ্বিতীয় উইকেটে এরপর ৩১ বলে ৪৭ রানের জুটি গড়েন জর্ডান কক্স ও সেদিকউল্লাহ আতাল। ষষ্ঠ ওভারের শেষ বলে কক্সকে (২৮) ফিরিয়ে জুটি ভাঙেন তাসকিন।

দুবাই ক্যাপিটালসের ইনিংস সর্বোচ্চ ৪৭ রানের জুটি গড়েছেন কক্স ও আতাল। আরেকটি চল্লিশোর্ধ্ব রানের জুটিতেও অবদান রয়েছে আতালের। চতুর্থ উইকেটে আফগানিস্তান দলের সতীর্থ মোহাম্মদ নবির সঙ্গে ২৬ বলে ৪২ রানের জুটি গড়তে অবদান রেখেছেন আতাল। ওপেনিংয়ে নামা আতাল আউট হয়েছেন পঞ্চম ব্যাটার হিসেবে। ১৮তম ওভারের দ্বিতীয় বলে আতালের উইকেট নিয়েছেন তাসকিন। ৪৪ বলে ২ চার ও ৩ ছক্কায় ৬৬ রানের ইনিংস খেলেছেন আফগান এই ব্যাটার। নির্ধারিত ২০ ওভারে ৬ উইকেটে ১৮০ রান করে দুবাই ক্যাপিটালস। দুবাইয়ের ইনিংস সর্বোচ্চ ৬৬ রান এসেছে আতালের ব্যাট থেকে।

শারজা ওয়ারিয়র্সের তাসকিন ৪ ওভারে ৪০ রানে নিয়েছেন ৪ উইকেট। যার মধ্যে ইনিংসের শেষ ওভারে ১২ রান খরচ করে পেয়েছেন ১ উইকেট। একটি করে উইকেট পেয়েছেন রাজা, মাথিসা পাতিরানা ও আদিল রশিদ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

কলম্বিয়ায় ফুটবল ম্যাচে সহিংসতায় আহত ৫৯

ক্রীড়া ডেস্ক    
আপডেট : ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ২২: ৩৭
কোপা কলম্বিয়ার ফাইনালের দ্বিতীয় লেগে সংঘর্ষের ঘটনায় ৫৯ জন আহত হয়েছেন। ছবি: এএফপি
কোপা কলম্বিয়ার ফাইনালের দ্বিতীয় লেগে সংঘর্ষের ঘটনায় ৫৯ জন আহত হয়েছেন। ছবি: এএফপি

লাতিন আমেরিকার ফুটবলে সহিংসতা নতুন কিছু নয়। মহাদেশীয় শ্রেষ্ঠত্বের টুর্নামেন্ট কোপা আমেরিকাতেই ঘটে মারামারির ঘটনা। স্থানীয় টুর্নামেন্টে সহিংসতার কারণে তো প্রায়ই খবরের শিরোনামে আসে লাতিন আমেরিকার ফুটবল। কলম্বিয়ায় এক ফুটবল টুর্নামেন্টের ফাইনালে ভয়াবহ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।

কলম্বিয়ার মেডেলিন শহরের আতানাসিও জিরারদোত স্টেডিয়ামে পরশু রাতে কোপা কলম্বিয়ার ফাইনালের দ্বিতীয় লেগে মুখোমুখি হয়েছিল দেপোর্তিভো ইন্দিপেন্দিয়েন্তে-আতলেতিকো ন্যাশনাল। ১-০ গোলে আতলেতিকো ন্যাশনালের জয়ের পরই ভক্ত-সমর্থকেরা মাঠে ঢুকে তাণ্ডব শুরু করেন। আতশবাজি-আগুন নিয়ে এমনভাবে হামলা চালিয়েছিলেন ভক্তরা, যেটা সামাল দিতে দাঙ্গা পুলিশ মোতায়েন করতে হয়েছে। সাত পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। কলম্বিয়ার স্থানীয় পত্রিকা এল কলোম্বিয়ানোর এক প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, মাঠের কিছু অংশে আগুন ধরানো হয়েছে। উপড়ে ফেলা হয়েছে অনেক আসন। গ্যালারিতে আতশবাজির ধোঁয়ার কারণে ম্যাচ শুরু হতেও দেরি হয় ১৪ মিনিট।

মেডেলিনের মেয়র ফেদেরিকো গুতিয়েরেস কোপা কলম্বিয়ার ফাইনালে সহিংস ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। গুতিয়েরেস বলেন, ‘যারা স্টেডিয়ামে হামলা, ধ্বংসযজ্ঞ বা ভীতি ছড়ানোর চেষ্টা করেছে, তাদের প্রত্যেককেই আইনের আওতায় আনা হবে। সবাই মাঠে বসে খেলা উপভোগ করতে পারবেন। হাতে গোনা কয়েকজনের জন্য পরিবেশ নষ্ট হবে, এমনটা তো হতে দেওয়া যাবে না। বছরের পর বছর ধরে আমরা পুরো লাতিন আমেরিকায় শান্তিপূর্ণ ফুটবলের মডেল হিসেবে পরিচিতি পেয়েছি।’ পুলিশ কমান্ডার উইলিয়াম কাস্তানো বলেন, স্টেডিয়ামে দর্শকদের কাছ থেকে অস্ত্র ও আতশবাজি জব্দ করা হয়েছে। ১২০ কেজির বেশি পাইরোটেকনিক (বিস্ফোরণের প্রভাব তৈরির মতো রাসায়নিক বস্তু) ছিল সেখানে।

দেপোর্তিভো ইন্দিপেন্দিয়েন্তে-আতলেতিকো ন্যাশনাল কলম্বিয়া কাপ ফাইনালের প্রথম লেগ গোলশূন্য ড্র হয়েছে। পরশু রাতে দ্বিতীয় লেগটা হয়ে যায় শিরোপা নির্ধারণী। দুই লেগ মিলিয়ে ১-০ গোলে শিরোপা জিতেছে আতলেতিকো ন্যাশনাল। কিন্তু মেডেলিন শহরের আতানাসিও জিরারদোত স্টেডিয়ামে ভয়াবহ সংঘর্ষের ঘটনায় আতলেতিকো ন্যাশনালের ম্যাচপরবর্তী পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান, শিরোপা নিয়ে উদ্‌যাপন—কিছুই করা সম্ভব হয়নি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

আন্তর্জাতিক ব্যাডমিন্টনে সোনার লড়াইয়ে বাংলাদেশের জুমার-ঊর্মি

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
মিশ্র দ্বৈতে ফাইনালে উঠেছেন জুমার-ঊর্মি। ছবি: ব্যাডমিন্টন ফেডারেশন
মিশ্র দ্বৈতে ফাইনালে উঠেছেন জুমার-ঊর্মি। ছবি: ব্যাডমিন্টন ফেডারেশন

ইউনেক্স-সানরাইজ বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল চ্যালেঞ্জ টুর্নামেন্টে মিশ্র দ্বৈত বিভাগে ফাইনালে উঠেছেন বাংলাদেশের আল আমিন জুমার ও ঊর্মি আক্তার। আজ সেমিফাইনালে থাইল্যান্ডের কুনলাপাথ লোথোং ও সারিসা জানপেং জুটিকে হারিয়েছেন ২১-১১ ও ২১-১৪ গেমে। পদক তো নিশ্চিত হয়েছে আগে, জুমার-ঊর্মি এবার দেখাচ্ছেন সোনা জয়ের ঝিলিকও। ফাইনালে কাল মালয়েশিয়ার দাতু আনিফ ইসাক দাতু আসরা ও ক্লারিসা সানের মুখোমুখি হবেন তারা।

পল্টনের শহীদ তাজউদ্দিন ইনডোর স্টেডিয়ামে সকালটাও অন্যরকম ছিল জুমার-ঊর্মির। কোয়ার্টার ফাইনালে ভারতের স্বস্তিক মাথারাসান-কীর্তি মাঞ্চালাকে তিন সেটের লড়াইয়ে হারিয়েছেন ২১-১৬, ১৯-২১ ও ২১-১৮ গেমে। প্রথম সেট খানিকটা সহজে জিতলেও দ্বিতীয় সেটে হারতে হয়। তৃতীয় সেটে দারুণ প্রতিদ্বন্দ্বিতা শেষে নিশ্চিত করেন ব্রোঞ্জ পদক।

রাতে সেমিফাইনালে থাইল্যান্ডের জুটিকে পাত্তাই দিলেন না জুমার-ঊর্মি। প্রথম সেটে একটা সময় অবশ্য পিছিয়ে ছিলেন ৫-৩ পয়েন্টে। সেখান থেকে অনবরত পয়েন্ট তুলতে থাকেন জুমার। শেষ দিকে ঊর্মিও দেখান তাঁর দাপট। দ্বিতীয় সেটে শুরুতেই আধিপত্য দেখাতে থাকে বাংলাদেশের জুটি। নিয়ে নেন বড় ব্যবধানের লিড। যা পরে আর ছোট করতে পারেননি থাইল্যান্ডের শাটলাররা।

ফাইনালে উঠে জুমার বলেন, ‘ফাইনাল নিয়ে প্রত্যাশা অবশ্যই ভালো খেলার চেষ্টা করব। বাকিটা আল্লাহ ভরসা, জানিনা কি হবে। দেখা যাক। আগে যে রেজাল্টগুলো আমরা আশাও করতে পারতাম না, এখন বাংলাদেশ অন্যান্য বারের মতো হচ্ছে না যে মানে বাংলাদেশ আসছে আর হেরে যাচ্ছে—এরকম হচ্ছে না। প্রত্যেকটা টিমই আমাদের লড়াই করে হেরেছে।’

জুমারের সঙ্গে বোঝাপড়া নিয়ে ঊর্মি বলেন, ‘সকালেই আমি বলেছিলাম, আমরা চ্যাম্পিয়ন হতে চাই। সেই লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। ফাইনাল নিশ্চিত করেছি। এবার সোনা জিততে চাই। জুমারের সঙ্গে ছয়-সাত বছর ধরে জুটি বেঁধে খেলছি। যেহেতু অনেকদিন ধরে খেলছি, সেহেতু আমাদের মধ্যে বোঝাপড়াটা ভালো। আমরা এর আগেও আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে পদক জিতেছি।’

এর আগে একক ইভেন্টে কেবল হতাশাই উপহার দিয়েছেন বাংলাদেশের শাটলাররা। দ্বৈতে গতকাল কোয়ার্টার ফাইনালে কেউই জয়ের হাসি হাসতে পারেননি। মিশ্র দ্বৈতে জুমার-ঊর্মি ফুটলেন আশার আলো হয়ে। রুপা নিশ্চিত করে লক্ষ্য এবার সোনার পদক গলায় ঝুলানো।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত