Ajker Patrika
সাক্ষাৎকার

পারফর্ম করতে পারলে দুনিয়ার সব ট্যাগই লেগে যাবে

তাসকিনের কাছে পারফর্মই সব। ছবি: এএফপি

এ বছর বিসিবির কেন্দ্রীয় চুক্তিতে একমাত্র খেলোয়াড় হিসেবে এ প্লাস গ্রেডে আছেন তাসকিন আহমেদ। পারফরম্যান্সের বিচারে বিসিবির নতুন গ্রেডিং ব্যবস্থায় বাংলাদেশের একজন ফাস্ট বোলারের সর্বোচ্চ শ্রেণিতে থাকাটা দেশের পেস বোলিং আক্রমণের উন্নতিই তুলে ধরে। গত চার বছরে তাসকিন নিজেকে দেশের পেস বোলিং আক্রমণের নেতা হিসেবেই প্রতিষ্ঠা করেছেন। কাল সন্ধ্যায় তাসকিনের লালমাটিয়ার বাসায় আজকের পত্রিকাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে নিজের ক্যারিয়ারসহ কথা বললেন প্রাসঙ্গিক নানা বিষয়ে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন রানা আব্বাস

প্রশ্ন: এ প্লাস গ্রেডে থাকা নিশ্চয়ই আপনার একটা বড় ব্যক্তিগত অর্জন। এই অর্জনটা কীভাবে দেখেন?

তাসকিন আহমেদ: সত্যি বলতে প্রক্রিয়া, উন্নতির জায়গা, নিজের ইচ্ছা—এসব থেকেই উন্নতি হয়। দিনের পর দিন উন্নতির লক্ষ্যে ঘুরেছি। ফাস্ট বোলার হিসেবে এটা সহজ নয়। গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে রক্ষা করাটা। এই এ‍ প্লাস গ্রেডে আসাটা ফ্যাক্ট না। হাই নোটে আরও ভালো করে শেষ করতে চাই।

প্রশ্ন: বাংলাদেশের ফাস্ট বোলিং আক্রমণ নিয়ে প্রশংসা হচ্ছে কয়েক বছর ধরে। এই বদলে যাওয়ার গল্পে কাকে বেশি কৃতিত্ব দেবেন?

তাসকিন: আমরা এখন এই মুহূর্তে যে দলে খেলছি, তাদের সবাই শৈশব থেকে বাংলাদেশ দলে মাশরাফি ভাইকে ভিন্নভাবে দেখে এসেছে। অনেকেরই তিনি আদর্শ। তাঁকে আমরা দেখে বড় হয়েছি যে বাংলাদেশ দলের পেসারদের মধ্যে আগ্রাসন, পেস, সুইং—সবকিছু মাশরাফি ভাইয়ের ছিল। ম্যাশ যাওয়ার পরে বা ম্যাশ যখন শেষের দিকে, তখন তো আমি দল থেকেই বাদ পড়েছিলাম। যখন বাদ পড়লাম এবং কোভিডের ওই সময়ে সত্যি কথা বলতে একটা প্রশ্নবোধক চিহ্ন পড়ে গিয়েছিল আমার পাশে। সে সময় সিদ্ধান্ত নিই, নিজের জন্য হলেও একটা ম্যাচ খেলব লাল-সবুজ জার্সিতে। এই ফাস্ট বোলিং বিভাগ বদলে যাওয়ার পেছনে আমি মনে করি আমার ওই ফিরে আসা—কী প্রক্রিয়াতে আমি এসেছি, কীভাবে উন্নতি করেছি, এই প্রক্রিয়াটা দৃশ্যমান হওয়ার পর এক ধাপ ওপরে উঠতে বাকিদের সহায়তা করেছে। এটাতে আমিই হয়তো বড় উদাহরণ ছিলাম। খুব বাজে জায়গা থেকে এসে বাংলাদেশ দলে ভালো করা সম্ভব, সেটা দেখিয়েছি।

প্রশ্ন: নাহিদ রানা, যিনি ঘণ্টায় ১৪৯-১৫০ কিমি গতিতে বোলিং করছেন। তাঁর কাছ থেকে ১০০ মাইল গতিতে বোলিং দেখতে আপনি কতটা আশাবাদী?

তাসকিন: কোনো কিছুই অসম্ভব নয়। কারণ, সে অনেক তরুণ। তার ক্ষুধা আছে। কঠোর পরিশ্রমী ছেলে। সে (নাহিদ রানা) চায় উন্নতি করতে। শুধু গতি না, ধীরে ধীরে সুইং, ভেরিয়েশন নিয়েও কাজ করছে। যার মধ্যে আত্মনিবেদন ও ক্ষুধা আছে, সে উন্নতি করবে। আল্লাহ তাকে সামর্থ্য দিয়েছেন ১৫০ কিমিতে বোলিং করার। সে উন্নতি করে ১৫০ থেকে বাড়াতেও পারবে ইনশা আল্লাহ; যদি ফিট থাকে, ছন্দে থাকে। গতি নির্ভর করে ছন্দ ও ফিটনেসের ওপর। সে আমাদের বড় ভরসা। সে যদি ভালো করতে পারে, সুস্থ থাকে আর উন্নতি করে, বাংলাদেশ ক্রিকেটেরই ভালো।

প্রশ্ন: এখন আপনাদের ওয়ার্ক লোড ম্যানেজমেন্ট কেমন হওয়া দরকার? বিসিবির কি উচিত রোটেশন নীতির দিকে যাওয়া?

তাসকিন: খেয়াল করে দেখবেন, আগের চেয়ে কিন্তু উন্নতি হয়েছে এ জায়গায়। সম্প্রতি যে যতই ভালো করুক, বিশ্রাম দেওয়া হয় তাকে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজের আগে আফগানিস্তানের বিপক্ষে যখন সিরিজ খেললাম, দুই ম্যাচ শেষে ১-১ সমতা থাকার পরও তৃতীয় ম্যাচে কিন্তু আমাকে বিশ্রাম দেওয়া হয়েছিল। অনেক গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ ছিল (আফগানিস্তানের বিপক্ষে)। কিন্তু ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজের চাপের কথা চিন্তা করে আমাকে বিশ্রাম দিয়েছিল। পরে দুটি টেস্ট খেললাম। একটা জিতলাম, একটা হারলাম। ক্যারিবীয় সফরে প্রথম ওয়ানডে খেলে হারার পরও কিন্তু দ্বিতীয় ম্যাচে বিশ্রাম নিয়েছি। রোটেশন পলিসি তাই ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে। কিন্তু এটাও বুঝতে হবে, আমাদের ৫-৬ জনের বেশি সে রকম ফাস্ট বোলার নেই। তাই চাইলেও অত বড় আকারে রোটেশন করতে পারছে না। তবে সবাইকে টিকিয়ে রাখতে এটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ।

অন্তত ৫০০ আন্তর্জাতিক উইকেট নিয়ে ক্যারিয়ার শেষ করতে চান তাসকিন। ছবি: এএফপি
অন্তত ৫০০ আন্তর্জাতিক উইকেট নিয়ে ক্যারিয়ার শেষ করতে চান তাসকিন। ছবি: এএফপি

প্রশ্ন: পাঁচ সিনিয়র ক্রিকেটার একে একে বিদায় নিচ্ছেন। তাঁদের কাছ থেকে আপনার মূল শিক্ষা কী?

তাসকিন: তাঁরা আসলে দেশের জন্য অনেক করেছেন, এতে কোনো সন্দেহ নেই। অনেক দিন খেলেছেন, বাংলাদেশ দলকে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় নিয়ে এসেছেন। তাঁদের অবদান অনেক বেশি। তাঁদের দেখে ব্যক্তিগতভাবে যেটা শিখেছি, চাপের মধ্যে কীভাবে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। কিছু কিছু কঠিন পরিস্থিতি থেকে দলকে কীভাবে বের করে নিয়ে আসা যায়। চাপের মধ্যে শান্ত থেকে পারফর্ম করা; বিশেষ মুহূর্তে পরিস্থিতি দ্রুত বুঝতে পারা। তাঁদের মধ্যে এ বিষয়গুলো দেখে বুঝেছি অভিজ্ঞতার মূল্য আসলে কী।

প্রশ্ন: সেদিন সৌম্য সরকার বলছিলেন, ১০-১২ বছর খেলেও আপনারা সিনিয়র ট্যাগ পাননি, পাঁচ সিনিয়র ক্রিকেটারের ছায়াতেই থেকে গেছেন। আপনি কীভাবে দেখেন এই পর্যবেক্ষণ?

তাসকিন: ট্যাগ লাগানো চিন্তা না করে পারফর্ম করতে পারলে দুনিয়ার সব ট্যাগই লেগে যাবে। খুবই সহজ কথা—পারফরম্যান্স খারাপ হলে কোনো ট্যাগই লাগবে না। পারফর্ম করলে এক রকম, না করলে আরেক রকম। আমিই এর সবচেয়ে বড় উদাহরণ। এগুলো নিয়ে আসলে চিন্তা করি না। তাঁরা ভালো করেছেন বলেই তো এত দিন খেলেছেন। হ্যাঁ, কখনো কখনো অফ ফর্মেও ছিলেন, কিন্তু পারফরম্যান্স না করলে তো এত দিন খেলতে পারতেন না। তাঁরা বাদে বাকি যারা আছে, তাদের ধারাবাহিকতা দেখলে বোঝা যাবে কেন ট্যাগ লেগেছে, কেন লাগেনি। তো আমাদের সেভাবে ধারাবাহিক থাকলে সিনিয়র কেন, এর চেয়ে আরও বড় ট্যাগও লেগে যেত। দিন শেষে পারফরম্যান্সই আসল কথা।

সুযোগ এলে আইপিএলে খেলতে চান তাসকিন। ছবি: এএফপি
সুযোগ এলে আইপিএলে খেলতে চান তাসকিন। ছবি: এএফপি

প্রশ্ন: ক্যারিয়ার শেষে নিজেকে কোথায় দেখতে চান?

তাসকিন: ভালোর তো কোনো শেষ নেই। প্রেক্ষাপট অনুযায়ী আন্তর্জাতিক ক্রিকেট যেভাবে চ্যালেঞ্জিং হয়ে যাচ্ছে ধীরে ধীরে, আমি যদি সব ফরম্যাট খেলতে পারি, নিজেকে কিংবদন্তি পর্যায়ে নিয়ে যেতে চাই। অন্তত ৫০০ আন্তর্জাতিক উইকেট নিয়ে ক্যারিয়ার শেষ করতে চাই।

প্রশ্ন: নির্দিষ্ট কোনো সংস্করণে বাংলাদেশের অধিনায়ক হওয়াটা কি ক্যারিয়ারের এ পর্যায়ে পাওনা মনে হয়?

তাসকিন: আসলে এটা বোর্ডের ব্যাপার। যাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, তারা সর্বোচ্চটা দিয়ে চেষ্টা করছে। আমি অধিনায়ক হলেই যে রকেট সায়েন্সের মতো সবকিছু উল্টে যাবে, তা তো না। আমাকে দায়িত্ব দিলে হয়তো সর্বোচ্চটা দিয়ে চেষ্টা করব। বড় বিষয় হলো, আমি ক্রিকেট উপভোগ করতে চাই। আল্লাহ আমাকে ফিট রাখুন। বোর্ড যদি কখনো মনে করে আমি যোগ্য, তাহলে করব। না দিলে আমার খেলায় কোনো প্রভাব ফেলবে না।

প্রশ্ন: আইপিএল আপনার কাছে আফসোসের এক নাম। সুযোগ পেয়েও খেলা হয়নি। যদি সামনে সুযোগ আসে, পুরো মৌসুম খেলতে চান?

তাসকিন: সুযোগ এলে কেন নয়? অবশ্যই খেলতে চাই। কিন্তু বিষয়টা হচ্ছে, সুযোগ পাব কি না। তিনবার সুযোগ কাজে লাগাতে পারিনি। এবার সুযোগ আসতে পারে যদি কারও (লক্ষ্ণৌর সঙ্গে কথা হচ্ছে) বিকল্প প্রয়োজন হয়। এভাবেই কথা হয়েছিল। আমি চাই বাংলাদেশের হয়ে তিন সংস্করণে নিয়মিত খেলতে। তেমন গুরুত্বপূর্ণ খেলা না থাকলে আমাদের বেশ কিছু লিগে যেতে দেওয়া হবে, এমনই কথা হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ সিরিজ থাকলে সেটা ভিন্ন কথা। এখন সবাইকে অনাপত্তিপত্র দেবে বলে মনে করি।

প্রশ্ন: বিশ্বমঞ্চে ব্যাটারদের ব্যর্থতার কারণে বোলারদের সাফল্য ম্লান হয়ে যায়। এদিক থেকে নিজেকে কি দুর্ভাগা মনে হয়?

তাসকিন: দিন শেষে এটি দলীয় খেলা। ব্যক্তিগত পারফরম্যান্স ভালো হোক বা খারাপ হোক, দল ভালো না করতে না পারলে কোনো লাভ নেই। আমরা সবাই চাই ম্যাচ যেন জিততে পারি। এমনও হতে পারে, আমি ভালো করলাম আরেকজন খারাপ করল, কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ সময়ে সে একটা ওভার ভালো করে ম্যাচ জিতিয়ে দিল, এটাই আসলে অবদান। প্রতিদিন সবাই বড় পারফরমার হবে না। একটি ওভার বা কারও পরিস্থিতি বুঝে ২০ রান—এসব ছোট ছোট অবদানেই আমরা ম্যাচ জিততে পারি। হ্যাঁ, এটা ঠিক, গত কয়েক বছরে ব্যাটিংয়ের তুলনায় বোলিং একটু উন্নতি করেছে। আশা করছি, ব্যাটিংয়েও দ্রুত উন্নতি হবে। হয়তো সময় লাগছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা র-এর ওপর নিষেধাজ্ঞার সুপারিশ মার্কিন ফেডারেল সংস্থার

‘মদের বোতল’ হাতে বৈষম্যবিরোধী নেতা-নেত্রীর ভিডিও, সদস্যপদ স্থগিত

ভারত নিয়ে পশ্চিমবঙ্গে রিকশাচালকের সঙ্গে তর্ক, বাংলাদেশিকে ফেরত

আকরামদের প্রথম খবর দেওয়া হয়েছিল, তামিম আর নেই

১৫ লাখ টাকায় বিক্রি হলো এক পরিবারের সেই উমানাথপুর গ্রাম

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত