৩-২ করার সুযোগ বাংলাদেশের

রানা আব্বাস, ধর্মশালা থেকে
প্রকাশ : ১০ অক্টোবর ২০২৩, ০৯: ১৭
আপডেট : ১০ অক্টোবর ২০২৩, ০৯: ৪৫

দুপুরে সাকিব আল হাসান আর চণ্ডিকা হাথুরুসিংহে অনুশীলন শুরুর আগে একবার দেখে গেলেন উইকেট। তখনো উইকেট ছিল বেশ সবুজাভ। দুই ঘণ্টার মধ্যে আরও পরিবর্তন। মাঠ ছাড়ার আগে বিকেল ৪টার দিকে সাকিব-হাথুরু আরেকবার সতেজ উইকেটটা দেখতে এলেন। 

ততক্ষণে ঘাস কিছুটা কমিয়ে ফেলা হয়েছে। সাকিব-হাথুরু গভীর মনোযোগে উইকেট দেখতে থাকলেন। ধর্মশালার কিউরেটরের উদ্দেশে আগের ম্যাচের উইকেটের সঙ্গে তুলনা করে কিছু একটা বলতে দেখা গেলেন বাংলাদেশ অধিনায়ককে। উইকেটের পাশে দাঁড়িয়ে সাকিব-হাথুরু নিজেদের মধ্যে কিছু পরামর্শও সেরে নিলেন। গতকাল মাঠে উপস্থিত ২০১৯ বিশ্বকাপজয়ী সাবেক ইংলিশ অধিনায়ক এউইন মরগান জানালেন, আফগানদের বিপক্ষে বাংলাদেশের স্পিনাররা যতই ভালো করুন, আজ ধর্মশালার সতেজ উইকেটে বাড়তি বাউন্স থাকতে পারে, যেটি ইংল্যান্ডের পেসারদের সহায়তা করবে। প্রেসবক্সে আসা বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ক মোহাম্মদ আশরাফুল মনে করেন, উইকেটে একটু ঘাস থাকলে বল ভালো ব্যাটে আসবে। তিনি মনে করেন, ভালো উইকেটেই খেলা হবে আজ। বাংলাদেশের একাদশে ৬ নম্বর বোলার হিসেবে বাড়তি একজন স্পিনার থাকতেও পারেন। 

উইকেট নিয়ে যতটা ভাবছে দুই দল, তার চেয়ে বেশি চিন্তিত ধর্মশালার আউটফিল্ড নিয়ে। চোখজুড়ানো এই মাঠের কলঙ্ক যেন এটির বাজে আউটফিল্ড। বাংলাদেশ-আফগানিস্তান ম্যাচের পর থেকেই আলোচনায় ধর্মশালার আউটফিল্ড। কাদা-বালু উঠে আসা আউটফিল্ডকে আইসিসি এরই মধ্যে ‘গড়পড়তা’ বলেছে। আফগানিস্তান দলের কোচ জোনাথন ট্রট, গতকাল ইংলিশ অধিনায়ক জস বাটলার

পর্যন্ত আউটফিল্ড নিয়ে নিজেদের চিন্তার কথা জানিয়ে গেছেন। টুর্নামেন্টের শুরুর দিকে বাজে আউটফিল্ডে খেলে চোটে পড়লে পরে ভুগতে হতে পারে বলেই সবার এত চিন্তা। তবে বাংলাদেশ দলের খুব একটা অভিযোগ-অনুযোগ নেই বিতর্কিত আউটফিল্ড নিয়ে। যে মাঠেই খেলা হোক, তাদের ভালো করাই একমাত্র লক্ষ্য। 

mathc samariআউটফিল্ড নিয়ে বাংলাদেশ প্রকাশ্যে কিছু না বললেও আফগানদের বিপক্ষে খেলা বাংলাদেশ দলের তিন পেসার তাসকিন আহমেদ, মোস্তাফিজুর রহমান আর শরীফুল ইসলাম গতকালও ছিলেন বিশ্রামে। তাঁদের নিয়ে কোনো দুঃসংবাদ গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত শোনা যায়নি। লিটন দাসও বিশ্রামে ছিলেন ৷ সাকিব আল হাসান মাঠে থাকলেও আড্ডা দিয়ে সময় কাটিয়েছেন। 

আউটফিল্ড যেমনই হোক, ধর্মশালায় ইংল্যান্ড চায় জয়ের ধারায় ফিরতে। টুর্নামেন্টে নিজেদের প্রথম ম্যাচে হার দিয়ে শুরু করলেও বাটলার জানালেন, এতে তাঁদের আত্মবিশ্বাসে বিন্দুমাত্র চিড় ধরেনি। 

বিশ্বকাপ ইতিহাসে বাংলাদেশ-ইংল্যান্ডের লড়াইটা কখনোই অসম ছিল না। ২০০৭ বিশ্বকাপে দারুণ লড়ে বাংলাদেশ না জিততে পারলেও ২০১১ ও ২০১৫ বিশ্বকাপে ইংলিশদের হারিয়েছে। ২০১৯ বিশ্বকাপে অবশ্য কার্ডিফে বাংলাদেশ পারেনি। বিশ্বকাপে ৪ সাক্ষাতে স্কোরলাইন তাই ২-২ সমতায়। বাটলার সেটা জেনেই বললেন, ‘ (অতীত পরিসংখ্যান দেখে বিশ্বকাপে বাংলাদেশকে বড় হুমকি) না, না, কিছুতেই তা মনে করি না। বাংলাদেশের বিপক্ষে আমাদের দারুণ কিছু ম্যাচ আছে। তারা দারুণ এক দল। আমরা যাদের বিপক্ষে খেলি, সবাইকে সমীহ করি। আর বিশ্বকাপে কঠিন প্রতিপক্ষই আশা করতে হবে।’ 

বাংলাদেশের বিপক্ষেও ইংল্যান্ডের বড় তুরুপের তাস বেন স্টোকসের খেলার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। বাটলারের কথায় অন্তত তাই মনে হলো। স্টোকস ছাড়াও এই ইংল্যান্ড যথেষ্ট ভয়ংকর। বর্তমান চ্যাম্পিয়নদের হারাতে বাংলাদেশ চায় নিজেদের ব্র্যান্ডের ক্রিকেট খেলতে। দলের প্রতিনিধি হয়ে সংবাদ সম্মেলনে আসা বাংলাদেশের স্পিন বোলিং কোচ রঙ্গনা হেরাথ বললেন, ‘আমাদের নিজেদের ব্র্যান্ডের ক্রিকেট খেলাটাই জরুরি। আমাদের একই মনোভাব, একই শরীরী ভাষা থাকবে। যদি নিজেদের ব্র্যান্ডের ক্রিকেট খেলতে পারি, তাহলে জয়ের সম্ভাবনা থাকবে।’ 

ইংল্যান্ডের বিপক্ষে কি বাড়তি স্পিনার হিসেবে নাসুম আহমেদ কিংবা শেখ মেহেদীকে খেলাবে বাংলাদেশ—এ প্রশ্নটা এসেছে। একাদশ যেমনই হোক, ধর্মশালার উইকেটে ভালো স্কোর পেতে লিটন দাস-তানজিদ হাসান তামিমের ওপেনিং জুটির কাছে বড় ইনিংস পাওনা হয়ে গেছে। 

 ২০১৫ বিশ্বকাপে বাংলাদেশের বিপক্ষে অ্যাডিলেডের সেই হার এখনো ইংলিশদের তাড়া করে ফেরে। যদিও ওই হারের পর তাদের ক্রিকেটের ‘ব্র্যান্ডই’ বদলে দিয়েছে। ধর্মশালায় আত্মবিশ্বাসী বাংলাদেশ এবার ইংলিশদের বিপক্ষে কী চমক উপহার দেয়, সেই অপেক্ষায় সবাই।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত