সিলেটের হয়ে দুর্দান্ত খেলে আলোচনায় নারায়ণগঞ্জের অমিত

আহমেদ রিয়াদ, ঢাকা
প্রকাশ : ২০ নভেম্বর ২০২৪, ১০: ২১
এবারের এনসিএলে দ্বিশতকও পেয়েছেন অমিত। ছবি: বিসিবি

এবারের জাতীয় ক্রিকেট লিগে (এনসিএল) ধারাবাহিক আলো ছড়িয়ে বিশেষ নজর কাড়ছেন অমিত হাসান। দুর্দান্ত ফর্মে থাকা এই উইকেটকিপার-ব্যাটার পঞ্চম রাউন্ড শেষেই ৮১.০০ গড়ে ৫৬৭ রান করে লিগের শীর্ষ রানসংগ্রাহক। নারায়ণগঞ্জের ক্রিকেটার অমিত এনসিএলে খেলছেন সিলেট বিভাগের হয়ে। ২৩ বছর বয়সী ওপেনার যেভাবে নিজের টেস্ট মেজাজ প্রমাণ করে চলেছেন, তাঁকে নিয়ে আশাবাদী হওয়া যেতেই পারে।

ক্রিকেটে অমিতের যাত্রা শুরু ১০ বছর আগে। নবম শ্রেণিতে থাকতে বড় ভাইয়ের অনুপ্রেরণায় ব্যাট হাতে তুলে নেন। ভাইয়ের মাধ্যমে পুরান ঢাকার কোচ মাহির কাছে তাঁর হাতেখড়ি। সেখান থেকে পথচলা শুরু। এরপর একে একে সুযোগ মেলে ঢাকা মেট্রোর অনূর্ধ্ব-১৬ এবং অনূর্ধ্ব-১৯ দলে। ২০১৯ সালে প্রথমবার সিলেট বিভাগের হয়ে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে অভিষেক। সেই থেকে সিলেট হয়ে উঠেছে নারায়ণগঞ্জের অমিতের দ্বিতীয় ‘ঘর’। ‘সিলেট আমার দ্বিতীয় পরিবার। এখানকার মানুষ, সংস্কৃতি আর ভাষা আমাকে এত আপন করেছে যে কখনো মনে হয়নি, আমি অন্য জেলার কেউ’—কাল ফোনে বলছিলেন অমিত।

২০১৯ সালে অনূর্ধ্ব-১৯ দলে থাকার সময় বিসিবির নির্বাচক হান্নান সরকার অমিতকে প্রথম সিলেটের হয়ে খেলার সুযোগ দেন। এনসিএলের চলতি মৌসুমে দুর্দান্ত ফর্মে আছেন। নিজের সাফল্যের গল্প শুনিয়েছেন এভাবে, ‘জাতীয় লিগে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক হওয়া আমার জন্য বিশাল এক অর্জন। তবে মৌসুম এখনো শেষ হয়নি। বাকি ম্যাচগুলোতে ভালো করতে পারলে এই মৌসুমটা আমার ক্যারিয়ারসেরা হয়ে উঠবে।’ জাতীয় লিগে এবার প্রতিটি দল খেলছে একে অন্যের বিপক্ষে। এটি দক্ষতা বাড়াতে বেশ সহায়তা করছে বলেই দাবি অমিতের, ‘প্রতিটি ম্যাচে ভিন্ন ভিন্ন প্রতিপক্ষের মুখোমুখি হতে হয়, নতুন পরিকল্পনা তৈরি করতে হয়। এটা আমার ক্রিকেটীয় দক্ষতা বাড়াতে সহায়তা করেছে।’

কক্সবাজারের মাঠে ৬৩৮ মিনিট ব্যাটিং করে অমিতের ৪৫৫ বলে ২১৩ রানের ইনিংস বেশ আলোচিত হয়েছে। ইনিংসটা কতটা চ্যালেঞ্জিং ছিল, সেটি অমিতের কাছ থেকেই শোনা যাক, ‘উইকেটটা ছিল বোলারদের জন্য চ্যালেঞ্জিং। আমার পরিকল্পনা ছিল ধৈর্যসহকারে সেশন ধরে ধরে খেলা। (আসাদউল্লাহ) গালিব ভাইয়ের সঙ্গে জুটি গড়ে সেই পরিকল্পনাই সফল করি। ডাবল সেঞ্চুরি করতে পারাটা আমার জন্য বিশেষ এক মুহূর্ত ছিল।’

মাঝে রান না পাওয়ায় হতাশা আচ্ছন্ন করে ফেলে অমিতকে। পরিবারের সমর্থন আর কোচদের দিকনির্দেশনাই তাঁকে ঘুরে দাঁড়াতে সহায়তা করেছে। বললেন, ‘আমার কোচ আর পরিবারের কথা না বললেই নয়। কঠিন সময়গুলোতে তাঁরা আমাকে অনেক সমর্থন দিয়েছেন। আমার ব্যাটিং টেকনিক, মানসিকতা—সবকিছুর ওপর তাঁরা নিরলসভাবে কাজ করেছেন। তার ফল এখন পাচ্ছি।’

এবারই প্রথম জাতীয় লিগে অধিনায়কত্বের সুযোগ পেয়েছেন অমিত। অনূর্ধ্ব-১৯ দলের হয়ে অধিনায়কত্বের অভিজ্ঞতা ছিল তাঁর। পুরো দলকে এক সুতায় বেঁধে রাখা এবং সবার কাছ থেকে সেরাটা বের করে আনার কাজ দারুণ উপভোগ করছেন। এবার দলকে শিরোপা এনে দিতে পারলে অধিনায়ক হিসেবে মৌসুমটা স্মরণীয় হয়ে থাকবে অমিতের, ‘গত বছর আমরা রানার্সআপ হয়েছিলাম। ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারলে আমরা এবার অবশ্যই চ্যাম্পিয়ন হতে পারব।’

উইকেটকিপার-ব্যাটার হিসেবে মুশফিকুর রহিম তাঁর আদর্শ। অমিত চান, একদিন তিনিও হবেন মুশফিকের মতো বড় ক্রিকেটার, ‘মুশফিক ভাই যেভাবে দায়িত্ব নিয়ে খেলেন, আমি তাঁর মতো হতে চাই। তাঁর কাজের প্রতি নিষ্ঠা, ব্যাটিং টেকনিক এবং মানসিকতা আমাকে ভীষণ অনুপ্রাণিত করে।’

অমিত জানেন, একজন মুশফিক হতে কিংবা জাতীয় দলে জায়গা করে নিতে হলে তাঁকে আরও বড় মঞ্চে প্রমাণ করতে হবে। কঠিন এই পথ পাড়ি দিতে তরুণ ওপেনার প্রত্যয়ী, ‘শুধু জাতীয় লিগে রান করলেই হবে না। “এ” দল, এইচপি কিংবা সব বড় ম্যাচে রান করতে হবে। জানি, পারফর্ম করলে সুযোগ আসবেই। এটা সময়ের ব্যাপার। আমি শুধু নিজের খেলায় মনোযোগ দিচ্ছি।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত