Ajker Patrika

আইপিএলে কি আর ডাক পাবেন সাকিব-লিটনরা 

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ০৪ এপ্রিল ২০২৩, ১৯: ৩২
Thumbnail image

সব ঠিক থাকলে এবারের ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে (আইপিএল) সম্ভবত সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশি ক্রিকেটার খেলতে দেখা যেত। গত বছর থেকে দিল্লি ক্যাপিটালসে মোস্তাফিজুর রহমান তো আছেনই। এবার কলকাতা নাইট রাইডার্স নিয়েছিল সাকিব আল হাসান ও লিটন দাসকে। টুর্নামেন্টের আগে তাসকিন আহমেদের প্রস্তাব পাওয়ার খবরও শোনা গিয়েছিল। 

বিপাকে কলকাতা
এখনো পর্যন্ত শুধু মোস্তাফিজই যেতে পেরেছেন আইপিএল খেলতে। সাকিব তো না-ই করে দিয়েছেন। আর লিটন যাবেন কি না, সেটি নিশ্চিত হতে অপেক্ষা করতে হবে আরও কদিন। আর এ নিয়ে কলকাতা যে বেশ বিপাকে, গতকাল ফ্র্যাঞ্চাইজির মিডিয়া ম্যানেজার হিমানিশ ভট্টাচার্যের কথাতেই বোঝা গেল। আজকের পত্রিকাকে গতকাল তিনি বলছিলেন, ‘আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের ব্যস্ততা ও ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে সাকিব নাম প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। আমরা পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে বিসিসিআইয়ের দিকে তাকিয়ে আছি।’ 

অনড় বিসিবি
আন্তর্জাতিক ব্যস্ততা থাকার সময় ক্রিকেটারদের অনাপত্তিপত্র (এনওসি) দিতে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) এবার একেবারেই অনড়। নিলামে নাম তোলার সময়ই বিসিবি ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডকে (বিসিসিআই) জানিয়ে দিয়েছিল, পুরোটা সময় বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটারদের পাওয়া যাবে না। সাকিব-লিটনকে পাওয়া যাবে ৮ এপ্রিল থেকে ১ মে পর্যন্ত। অর্থাৎ সাকল্যে ২০-২২ দিন। গত বছর একই কারণে তাসকিনকে ছাড়েনি বিসিবি। ক্রিকেটারদের মনে ‘সবার আগে দেশ’ থাকলেও এটি নিয়ে যথেষ্ট চিন্তিতই তাঁরা।  

যে বার্তা পাচ্ছে ফ্র্যাঞ্চাইজিরা 
আইপিএলের এনওসি দিতে টানা দুই বছর বিসিবির অনড় অবস্থানে আইপিএলের ফ্র্যাঞ্চাইজিদের কাছে একটি পরিষ্কার বার্তা গিয়েছে, বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের নিলে পুরো মৌসুমে পাওয়া যাবে না। এই বার্তা পাওয়ার পর আগামী নিলামে বাংলাদেশের কোনো ক্রিকেটারকে নেওয়ার আগে নিশ্চিতভাবেই আইপিএলের ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলো ভাববে। আইপিএল সাধারণত যে সময়ে হয়ে থাকে—মার্চের শেষ সপ্তাহে থেকে মে মাসের শেষ সপ্তাহে, আগামী বছর এ সময়েও সাকিবদের ব্যস্ত থাকতে হবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট নিয়ে। ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি-মার্চে ২ টেস্ট, ৩ ওয়ানডে, ৩ টি-টোয়েন্টি খেলতে বাংলাদেশে আসবে শ্রীলঙ্কা। এপ্রিলে ২ টেস্ট ও ৫ টি-টোয়েন্টি খেলতে আসবে জিম্বাবুয়ে।

আগামীবারও যদি বিসিবি এনওসির ব্যাপারে অনড় থাকে, বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের দলে ভেড়াতে ফ্র্যাঞ্চাইজি ভাবতে বাধ্য। যদি পুরো মৌসুমে নির্দিষ্ট কোনো ক্রিকেটারকে তারা না-ই পায়, বড় অঙ্কের টাকা তবে খরচের কেন ঝুঁকি নেবে তারা? হয়তো এসব ভেবেই মাশরাফি বিন মর্তুজা কদিন আগে বলেছিলেন, ‘যে তিনজন ক্রিকেটারকে নিয়ে কথা হচ্ছে, তারা যদি যেতে চায়, অবশ্যই যেতে দেওয়া উচিত। সারা বিশ্বের ক্রিকেটাররাই তো যাচ্ছে। শুধু শুধু আমাদের (সাকিব-লিটনদের) আটকে রেখে লাভ কী?’ 

শুধু মোস্তাফিজুর রহমানই এখনো পর্যন্ত এবারের আইপিএলে খেলতে গেছেনতবু কেন নিয়েছিল কলকাতা
২০২২ আইপিএলে সাকিবের দল না পাওয়ার পেছনে বড় কারণ ছিল এনওসি। বাংলাদেশ দলের সিরিজ থাকায় বিসিবি আগেই জানিয়ে দিয়েছিল, পুরোটা সময় পাওয়া যাবে না বাঁহাতি অলরাউন্ডারকে। বিসিবি আসলে এনওসি নিয়ে কঠোর হয়েছে ২০২১ সাল থেকে, যখন সাকিব শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ না খেলে আইপিএল খেলতে গিয়েছিলেন। কখন বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের পাওয়া যাবে, কখন পাওয়া যাবে না—সেটি জানার পরও কলকাতা সাকিবদের নিয়েছিল নিলাম থেকে? নিলামে প্রতিপক্ষ ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোর তুলনায় কলকাতার অবস্থা খুব একটা ভালো ছিল না। প্রথম ধাপে সাকিব অবিক্রীত থাকায় দ্বিতীয় ধাপে তুলনামূলক কম দামে (ভিত্তিমূল্য দেড় কোটি রুপি) একজন ভালো অলরাউন্ডারকে নেওয়ার সুযোগ তারা হাতছাড়া করতে চায়নি। প্রথম ধাপে অবিক্রীত লিটনকেও তারা দলে ভিড়িয়ে ফেলে খুবই কম দামে (৫০ লাখ রুপি)। কলকাতা হয়তো ভেবেছিল, সাকিব এনওসির ব্যাপারটা ‘ম্যানেজ’ করে ফেলবে। কিংবা জটিলতা হলেও সাকিব-লিটনের দুজনের একজনকে অন্তত বিসিবি ছেড়ে দেবে মে মাসের আয়ারল্যান্ড সিরিজে।

সাকিবকে নিয়মিত না খেলালেও ড্রেসিংরুমে একজন অভিজ্ঞ অলরাউন্ডার থাকার গুরুত্ব আলাদা—দলে নিতে এটাও কলকাতার ভাবনায় কাজ করেছে। যদ্দূর জানা গেছে, লিটনকে নিয়মিত খেলানোরই পরিকল্পনা ছিল কলকাতার। বাংলাদেশ উইকেট ব্যাটারকে নিয়মিত পাওয়া যাবে না বলেই ওপেনিংয়ে এ মুহূর্তে রহমানউল্লাহ গুরবাজকে খেলাচ্ছে তারা। সাকিব-লিটনকে যদি ধরে না রাখে, আগামীবার আবারও নিলামে উঠতে হবে তাঁদের। কিন্তু দল কি তারা পাবে, সেটি নিয়ে সংশয় বেড়েছে এবারের ঘটনার পর। এখন সাকিব যদি মনে করেন আরও তিন-চার বছর আইপিএল খেলার সামর্থ্য তাঁর আছে, সে ক্ষেত্রে এ বছর ওয়ানডে বিশ্বকাপের পর ৩৫ বছর বয়সী অলরাউন্ডারের একটি ফরম্যাট ছেড়ে দিলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। 

কপাল খুলছে আফগানদের
এনওসি জটিলতায় ভবিষ্যতে বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের আইপিএলের দরজা কতটা খোলা থাকবে, সেটি নিয়ে সংশয় থাকলেও এতে কপাল খুলছে আফগান ক্রিকেটারদের। একটা সময় শুধু রশিদ খান আর মোহাম্মদ নবী নিয়মিত খেললেও এ বছর আইপিএলে খেলছেন পাঁচ আফগান ক্রিকেটার। রশিদ (গুজরাট টাইটানস), রহমানুল্লাহ গুরবাজ (কলকাতা নাইট রাইডার্স), নাভিন উল হক (লক্ষ্ণৌ সুপার জায়ান্টস), নুর আহমাদ (গুজরাট টাইটানস), ফজলহক ফারুকি (সানরাইজার্স হায়দরাবাদ)—আইপিএলে আফগানদের সংখ্যা কিন্তু ক্রমেই বাড়ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত