মেসির বিদায়ে বার্তেমেউই কি তবে খলনায়ক

ক্রীড়া ডেস্ক
প্রকাশ : ০৬ আগস্ট ২০২১, ১৮: ৩০

২০১৭ সালের আগস্টে ২২২ মিলিয়ন ইউরোতে বার্সেলোনা থেকে পিএসজিতে পাড়ি জমান ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড নেইমার। তাঁর শূন্যস্থান পূরণ করতে গিয়ে সেই মৌসুমেই ১৪.৫ কোটি ইউরোতে উসমান ডেম্বেলেকে আনলেন তখনকার বার্সেলোনা প্রেসিডেন্ট জোসেপ মারিয়া বার্তেমেউ। ছয় মাস পর লিভারপুলের সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ করে ১৬.৭ কোটি ইউরো খরচ করে আনলেন ফিলিপে কুতিনহোকেও। ছয় বছরের মেয়াদে বার্সার প্রেসিডেন্টের পদে বসে একের পর অপরিকল্পিত দলবদল আর বিতর্কে ক্লাবকে দুরবস্থার প্রান্তে নিয়ে গিয়েছেন বার্তেমেউ। যার করুণ পরিণতিতে লিওনেল মেসিকে বার্সা আর ধরে রাখতে পারল না। 

১৭ বছরের সম্পর্ক শেষ করে ক্লাব ইতিহাসের সেরা খেলোয়াড় লিওনেল মেসিকে কাল বিদায় বলেছে বার্সেলোনা। ২০২০-২১ মৌসুম শেষে ফ্রি-এজেন্ট হয়ে যাওয়া আর্জেন্টাইন সুপারস্টারকে নতুন চুক্তিতে বসাতে চেয়েও বার্সার ব্যর্থতার মূল কারণ ক্লাবগুলোর জন্য লা লিগার নির্ধারিত বেতন কাঠামো। মেসির সঙ্গে চুক্তি সারলেই ভঙ্গ হতো লা লিগার নিয়ম। তাই বাধ্য হয়ে বর্তমান প্রেসিডেন্ট হুয়ান লাপোর্তাকে বলতে হয়েছে, ‘সবকিছু এবং সবার ওপরে ক্লাব। এমনকি সর্বকালের সেরা খেলোয়াড়ের ওপরেও।’ 

আগের চুক্তির চেয়ে অর্ধেক কম বেতন নিতে রাজি থাকা সত্ত্বেও কেন মেসি বার্সায় থাকতে পারলেন না? পেছনের খলনায়ক হিসেবে বারবার উঠে আসছে একটি নাম-জোসেপ মারিয়া বার্তেমেউ। আজ সংবাদ সম্মেলনেও নিজের উত্তরসূরি আর সভাসদকে সরাসরি দায়ী করেছেন লাপোর্তা, ‘আজকের এই বিপর্যয়ের পেছনে সম্পূর্ণ দায় আগের বোর্ডের। তারা এমন একটা বেতন কাঠামো তৈরি করেছিলেন যা আজ ক্লাবকে কঠিন অবস্থায় নিয়ে ফেলেছে।’ 

করোনা মহামারির আগের মৌসুমে খেলোয়াড়দের ৬০ কোটি ইউরো বেতন দিয়ে রেকর্ড করেছিল বার্সা। তখন থেকেই বার্সাকে বলা হয় বিশ্বের সবচেয়ে খরুচে ক্লাব। মহামারিতে পরিমাণটা ৩৫ কোটিতে নেমে এলেও এই বেতন দিতে গিয়েই হিমশিম খেতে হয়েছে বা হচ্ছে বার্সাকে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে লা লিগার ‘ফিন্যান্সিয়াল ফেয়ার প্লে’-এর নিয়ম। মেসি যদি আগের আগের বেতন কমিয়েও চুক্তি সারতেন তবুও লঙ্ঘন হতো বেতন কাঠামো। সংবাদ সম্মেলনে সেটাই বলেছেন লাপোর্তা, ‘অর্থনৈতিক দিক থেকে ক্লাবের অবস্থা প্রত্যাশার চেয়েও খারাপ। ফিন্যান্সিয়াল ফেয়ার প্লেও আমাদের বাধাগ্রস্ত করেছে। আমি এমন সিদ্ধান্ত নিতে পারতাম না যা ক্লাবকে বড় ক্ষতির দিকে ঠেলে দেবে। ক্লাবই হচ্ছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। মেসির চুক্তি নবায়ন করা ক্লাবকে ঝুঁকিতে ঠেলে দিত। আমরা প্রতিষ্ঠানকে ঝুঁকির মুখে ঠেলে দিতে পারি না।’ 

দায়িত্বে থাকাকালীন সময়ে বিশ্বের নানা ক্লাব থেকে আকাশচুম্বী বেতনে খেলোয়াড়দের এনেছিলেন বার্তেমেউ। তাঁর সময়ে আসা কুতিনহো, ডেম্বেলে, উমতিতি, পিয়ানিচরা এখনো বার্সার একাদশে নিয়মিত নন। এসব খেলোয়াড়দের বিক্রি করে বেতনের বোঝা কমাতে চেয়েছিল বার্সা। কিন্তু, অন্য ক্লাবে বার্সার সমান পারিশ্রমিক পাওয়া সম্ভব নয় বলে এই খেলোয়াড়রাও ছাড়তে রাজি নন। বার্সাও খুঁজে পায়নি সঠিক কোনো ক্রেতা। খেলোয়াড়দের বেতন পরিশোধ করতে গিয়ে দেউলিয়া হওয়ার ঝুঁকিতে আছে কাতালান ক্লাবটি। শিরোপা জেতার মতোও কোন খেলোয়াড় এখন ক্লাবের হাতে নেই। 

শুধু আর্থিক কাঠামোই নয়, প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন সময়ে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ভাড়া করে মেসিসহ ক্লাবের তারকা ফুটবলারদের নামে কুৎসা রটানোরও অভিযোগ ছিল বার্তেমেউয়ের নামে। সাবেক প্রেসিডেন্টের একের পর এক বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে বিরক্ত হয়ে মেসি গত মৌসুমেই বার্সার ছাড়তে চেয়েছিলেন। সেরা খেলোয়াড়কে যেভাবেই হোক ধরে রাখা হবে-এই প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছিলেন লাপোর্তা। মেসির সঙ্গে তাঁর বোঝাপড়াটাও ছিল দারুণ। দুজনে মিলে চুক্তির দ্বারপ্রান্তে এলেও বার্তেমেউয়ের বিশৃঙ্খল বেতন কাঠামোই শেষ পর্যন্ত মেসিকে বাধ্য করল প্রিয় ক্লাব ছাড়তে। 

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত