বাফুফের সভাপতি হতে চান কে এই মিজান

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ১০ অক্টোবর ২০২৪, ২১: ০৩
Thumbnail image

পুরো নাম এ এস এম মিজানুর রহমান চৌধুরী। এককালে খেলতেন ফুটবল। কিন্তু সেই অঙ্গনে নিজেকে সেভাবে পরিচিত করতে পারেননি। এর মধ্যে সরকারি চাকরিতে যোগ দেন। কিন্তু ফুটবলের ভূত তাঁর মাথা থেকে নামেনি। চাকরির পাশাপাশি পাড়ার ছেলেদের জড়ো করে ফুটবল শিক্ষা দিতেন। রাতারাতি ফুটবলের কোচ বনে যাওয়া। 

তত দিনেও মিজানুরকে সেভাবে চেনেননি ফুটবলের মানুষজন। তবে নীরবে তিনি কাজ করে গেছেন। মিজানুরের দাবি নিজ জেলা দিনাজপুরে প্রায় এক শর মতো ফুটবলারকে তৈরি করেছেন। যাঁদের অনেকে জাতীয় পর্যায়ে আছেন। সেই মিজানুরই এবার ভিন্ন ভূমিকায় হাজির। ২৬ অক্টোবরের বাফুফে নির্বাচনে সভাপতি প্রার্থী হয়েছেন। 

আজ প্রতিনিধির মাধ্যমে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন মিজানুর। যখন তাবিথ আউয়ালের পক্ষ থেকে সভাপতি পদের জন্য মনোনয়ন তুলতে যান নোফেল স্পোর্টিং ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সাখাওয়াত ভুঁইয়া শাহীন। তিনিও সভাপতি প্রার্থী মিজানুরের নামটা শুনে অবাক। 

সংবাদকর্মীদের কানে আসতেই বাফুফে ভবনে হইচই পড়ে যায়। কে এই মিজানুর? শুরু হয় তাঁর জীবনবৃত্তান্ত খোঁজা। শেষ পর্যন্ত আজকের পত্রিকার এই প্রতিবেদক কথা বলেন বাফুফে নির্বাচনের চিত্রনাট্যে চমক হয়ে আসা মিজানুরের সঙ্গে। ‘আপনাকে তো খুঁজছে সবাই?’ এমনটা শুনতেই পাল্টা প্রশ্ন ৬৮ বছর বয়সী এই প্রার্থীর, ‘সবাই অবাক নাকি? অবাক হওয়ারই কথা।’ 

মিজানুর এরপর শোনালেন ফুটবলের সঙ্গে তাঁর বন্ধন কতটা গভীর, ‘আমি ৫০ বছর ধরে দিনাজপুরে ফুটবলের সঙ্গে জড়িত। অগ্রণী ব্যাংকের কর্মকর্তা ছিলাম। ৩১ বছর চাকরি করেছি। আমার অবসর নেওয়ার সময় ছিল ২০১৮ সালে। কিন্তু আমি চাকরি ছেড়ে দিই ২০১২ সালে। শুধু ফুটবলের জন্য, এটা আমার নেশা, এটাই পেশা। ১৯৮৬ থেকে ফুটবলের কোচিংয়ের সঙ্গে আছি। দিনাজপুরের ৯৬ জন খেলোয়াড় আমার হাতে তৈরি। জাতীয় দলে ছিল যে হেমন্ত (ভিনসেন্ট বিশ্বাস), ও আমার হাতে তৈরি। এখন বসুন্ধরা কিংসে খেলে মজিবুর রহমান জনি—ও আমার গড়া। আমার প্রায় ৩০ লাখ টাকা খরচ হলো এই ফুটবলের পেছনে। আমার পরিবারও এ জন্য ক্ষিপ্ত। এখানে সবাই আমাকে ফুটবলপাগল মিজান নামে ডাকে। আর আমি নিজেও ফুটবলার ছিলাম।’ 

যদিও গুঞ্জন আছে মিজানুরকে কেউ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে বলেছেন। অবশ্য তিনি সেটা অস্বীকার করে জানিয়েছেন, এটা তাঁর দীর্ঘদিনের স্বপ্ন, ‘না, আমি কারও ওপর নির্ভরশীল না। আমি কারোটা খাইও না, কারও ধারও ধারি না। একেবারে পরিষ্কার কথা আমি নিজে থেকেই মনোনয়ন নিয়েছি। আর এটা আমার স্বপ্ন ছিল। আমি এককভাবে লড়ব। যদি কেউ আমার সঙ্গে আসতে চায়, আমি তাদের স্বাগত জানাব।’ 

এ বিষয়ে আরেকটু জানতে আজকের পত্রিকার সঙ্গে কথা হয় দিনাজপুর জেলা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের কাউন্সিলর গোলাম নবী দুলালের। তিনিও বুঝতে পারছেন না বিষয়টি, ‘আসলে তিনি কেন (ফর্ম) কিনলেন—এটা জানি না। শুনলাম তিনি সভাপতি পদের জন্য মনোনয়ন নিয়েছেন। আমিও কথা বলেছি। কিন্তু তিনি কোনো কারণ বলেননি। বুঝতে পারছি না, হঠাৎ তার এমন ইচ্ছে হলো কেন। যত দূর জানি তিনি ফুটবল খেলতেন। আর এখন খানিকটা অসুস্থ। কথাবার্তাও অগোছালো মনে হয়েছে আমার।’ 

এদিকে ফুটবলপাড়ায় কানাঘুষা, তরফদার রুহুল আমিন শেষ পর্যন্ত সভাপতি প্রার্থী না হলে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতে যাবেন তাবিথ। যাতে পরবর্তীকালে কেউ বলতে না পারেন, তাবিথ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সভাপতি, সে জন্য তাঁদের পক্ষ থেকে নাকি মিজানুরকে ভোটের মাঠে নামানো হলো। কিন্তু এমন গুঞ্জন উড়িয়ে দেন তাবিথের প্রতিনিধি হয়ে মনোনয়ন তুলতে আসা শাহীন, ‘ভোট এলে তো এমন কত কিছু শোনা যায়। আসলে মিজান নামে আমরা কাউকে চিনি না। তিনি কেন দাঁড়ালেন, বলতে পারব না। তা ছাড়া আমার সভাপতি (তাবিথ আউয়াল) কেন এমন কাউকে দাঁড় করাবেন! তিনি তো নিজেই সভাপতি প্রার্থী।’ 

বাফুফে নির্বাচনে এমন চমক নতুন নয়। এর আগে ২০১৬ সালের নির্বাচনে টঙ্গী ক্রীড়া চক্রের নুরুল ইসলাম নুরু মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করে চমকে দিয়েছিলেন। যদিও মূল লড়াইটা হয় কাজী সালাহউদ্দিন আর কামরুল আশরাফের মধ্যে। প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় শেষ পর্যন্ত কামরুল আশরাফ খানকে (৫০ ভোট) হারিয়ে বাফুফেতে নিজের সিংহাসন ধরে রাখেন সালাহউদ্দিন (৮৩ ভোট)।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত