ব্রাজিলে এসে বিশ্বকাপের ইতিহাস কি বদলাতে পারবেন আনচেলত্তি

ক্রীড়া ডেস্ক
প্রকাশ : ০৬ জুলাই ২০২৩, ১৩: ৪২
আপডেট : ০৬ জুলাই ২০২৩, ১৪: ৪৯

ক্লাব ফুটবলে হরহামেশাই দেখা যায়, এক দেশের কোচ আরেক দেশের লিগে গিয়ে ‘দাদাগিরি’ দেখাচ্ছেন। কিন্তু জাতীয় দলের ক্ষেত্রে চিত্রটি ভিন্ন। বিদেশি কোচ হিসেবে দলগুলোকে ম্যাচ জেতালেও শিরোপার বিচারের সাফল্যের হার খুবই কম। 

কোনো নির্দিষ্ট টুর্নামেন্টের হিসাবে বিচার করলে কোচদের নামের পাশে নম্বর বসে শূন্য। এতে কোচরা প্রশ্ন তুলতে পারেন, এক টুর্নামেন্ট দিয়ে আমাদের বিচার করা ঠিক হবে না। প্রশ্নটা যৌক্তিক। এক টুর্নামেন্ট দিয়ে আসলে তাঁদের অবদান বোঝানো অসম্ভব। 

তবে বিশ্বকাপ প্রসঙ্গে চিত্রটা ভিন্ন। বিষয়টাকে আরেকটু খোলাসা করা যাক। ১৯৩০ সালে শুরু হয়ে এখন পর্যন্ত ২২তম সংস্করণ হয়েছে টুর্নামেন্টটির। কিন্তু এখন পর্যন্ত নিজ দেশের কোচ ছাড়া বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন হয়নি কোনো দল। প্রতিবারই কোনো না কোনো স্বদেশি কোচ দেশকে চ্যাম্পিয়ন করেছেন। এখন পর্যন্ত ব্রাজিল সর্বোচ্চ পাঁচবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে নিজেদের কোচ দিয়েই। একই চিত্র বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হওয়া অন্য দলগুলোরও। সর্বশেষ আর্জেন্টিনাও চ্যাম্পিয়ন হয়েছে দেশি কোচ লিওনেল স্কালোনির অধীনে। 

বিশ্বকাপজয়ী কোচদের মধ্যে একজন অবশ্য আলাদা। দুবার দলকে চ্যাম্পিয়ন করার কৃতিত্ব রয়েছে তাঁর। তিনি ভিত্তরিও পোজ্জো। ইতালিকে পরপর দুবার (১৯৩৪ ও ১৯৩৮) বিশ্বকাপ জিতিয়েছেন ৮২ বছর বয়সে প্রয়াত হওয়া ইতালিয়ান কোচ। আর কারও এমন নজির নেই। 

সময়ের হিসেবে ৯৩ বছর ধরে ফুটবল বিশ্বকাপ হচ্ছে। এই সময়ের মধ্যে ২১ জন কোচের বিশ্বকাপ জয়ের অভিজ্ঞতা থাকলেও তাঁদের কেউ বিদেশি নন। এই ইতিহাস বদলানোর সুযোগ অন্তত চার বছর পর পর কোচরা পান। কিন্তু কোনো বিদেশি কোচই সফল হতে পারেননি।

আগামী বিশ্বকাপেও সেই সুযোগ থাকছে। উত্তর আমেরিকার তিন দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, মেক্সিকো ও কানাডায় হবে ২০২৬ বিশ্বকাপ। টুর্নামেন্টের ২৩তম সংস্করণ সামনে রেখে বিদেশি কোচ নিয়োগ দিয়েছে ব্রাজিল—ক্লাব ফুটবলে কোচদের ‘ডন’ খ্যাত কার্লো আনচেলত্তিকে। সেলেসাওদের ইতিহাস বলছে, বিদেশি কোচে ভরসা পায় না তারা। সেই তারাই এবার ইতালিয়ান কোচকে নিয়োগ দিচ্ছে। 

ক্লাব ও জাতীয় দল মিলিয়ে আনচেলত্তির সাফল্য ঈর্ষণীয়। তাই এখন থেকে আলোচনা চলছে, বিশ্বকাপ ইতিহাস কি বদলাতে পারবেন ৬৪ বছর বয়সী কোচ? নাকি পূর্বসূরিদের মতো তাঁকেও খালি হাতে ফিরতে হবে? সেটা অবশ্য সময়ই বলে দেবে। তিনি কি পারবেন প্রথম বিশ্বকাপজয়ী বিদেশি কোচ হতে? আর যদি সত্যি সত্যি হয়েই যান, তাহলে ব্রাজিলেরও ‘হেক্সা’ জয়ের অপেক্ষা ফুরাবে। 

 ব্রাজিল সবশেষ বিশ্বকাপ জিতেছে ২০০২ সালে। এরপর পেরিয়ে গেছে ২১ বছর। ফাইনাল তো নয়ই, দীর্ঘ এই সময়ে পেন্টা চ্যাম্পিয়নরা সেমিফাইনালই খেলেছে মাত্র একবার (২০১৪)। এই সাফল্যের খরা চূড়ান্ত এক নতুন সিদ্ধান্ত নিতেই প্ররোচিত করেছে ব্রাজিলিয়ান ফুটবল কনফেডারেশনকে (সিবিএফ)। 

বিদেশি কোনো কোচের অধীনে কোনো দল কখনো বিশ্বকাপ জেতেনি—এটা জেনেও নেইমার-ভিনিসিয়ুস-রদ্রিগোদের দায়িত্ব আনচেলত্তির হাতে দিচ্ছে। রিয়াল মাদ্রিদের বর্তমান কোচই আগামী বছরের জুন থেকে থাকবেন ব্রাজিল জাতীয় দলের ডাগআউটে।

কাতার বিশ্বকাপের পর থেকেই তিতের উত্তরসূরি হিসেবে যে কয়েকজনের নাম শোনা যাচ্ছিল, আনচেলত্তিও ছিলেন তাঁদের মধ্যে। ব্রাজিলের কোচ হওয়ার সম্ভাবনা কখনো নাকচ করে না দিলেও ৬৪ বছর বয়সী ইতালিয়ান বরাবরই বলে এসেছেন, যত দিন চুক্তি আছে, তত দিন তাঁর ভাবনায় শুধুই রিয়াল। তারপরও তাঁর পেছনে লেগে ছিল সিবিএফ। কোচ হিসেবে আনচেলত্তিকে পেতে ব্রাজিলের সাবেক ও বর্তমান খেলোয়াড়েরা শুরু থেকেই আগ্রহের কথা বলে এসেছেন। সিবিএফ সভাপতি এডনালদো রদ্রিগেজও মাস কয়েক আগে জানিয়েছিলেন, প্রয়োজনে তাঁরা আনচেলত্তির জন্য বছরখানেক অপেক্ষাও করবেন। অপেক্ষার সে সময়টা হাতে রেখেই রদ্রিগেজ পরশু তিতের উত্তরসূরি হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করলেন আনচেলত্তির নাম।

৬০ বছরের মধ্যে ব্রাজিলের প্রথম বিদেশি কোচ হবেন আনচেলত্তি। সবশেষ ১৯৬৫ সালে বিদেশি হিসেবে ব্রাজিল জাতীয় দলের ডাগআউটে দাঁড়িয়েছিলেন আর্জেন্টিনার ফিলপো নুনেজ। আর সব মিলিয়ে ব্রাজিলের বিদেশি কোচ ছিলেন মোটে ৩ জন। নুনেজ ছাড়া বাকি দুজন হচ্ছেন—জোরেকা ও র‍্যামন প্লাতেরো। তিনজনে মোটে ৭ ম্যাচ দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৯২৫ সালে প্রথমবারের মতো ব্রাজিলের বিদেশি কোচের দায়িত্ব পাওয়া উরুগুয়ের প্লাতেরো সর্বোচ্চ ৪ ম্যাচ ডাগআউটে দাঁড়িয়েছিলেন। আর পর্তুগালের জোরেকা ছিলেন দুই ম্যাচের জন্য। 

রিয়ালের বর্তমান চুক্তি শেষ করেই ব্রাজিলের জাতীয় দলে যোগ দেবেন আনচেলত্তি। আগামী বছরের জুন-জুলাইয়ে শুরু হবে কোপা আমেরিকা। ওই টুর্নামেন্ট দিয়েই সেলেসাওদের সঙ্গে যাত্রা শুরু করবেন তিনি। আর তাঁর দায়িত্ব বুঝে না নেওয়ার আগপর্যন্ত নেইমারদের কোচ হিসেবে কাজ করবেন ফ্লুমিনেন্সের কোচ ফার্নান্দো দিয়াজ। 

ক্লাব ফুটবলে সফলতম কোচদের একজন আনচেলত্তি। এসি মিলান ও রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে দুবার করে মোট চারবার চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতেছেন। আর বিভিন্ন ক্লাবের হয়ে লিগ জিতছেন তো ভূরি ভূরি। তবে শুধু সাফল্য দেখেই নয়, তাঁর স্পষ্টবাদিতা এবং খেলোয়াড়দের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়তে পারার গুণেও আনচেলত্তিকে কোচ করার সিদ্ধান্ত সিবিএফের। এতসব গুণের অধিকারী ইতালিয়ান কোচ বিশ্বকাপের ইতিহাস বদলাতে পারবেন কি না, তা দেখার অপেক্ষায় থাকতে হবে আমাদের। 

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত