Ajker Patrika

স্বপ্ন দেখিয়ে হামজা গেলেন, তবু উঁকি দিচ্ছে যেসব প্রশ্ন

আনোয়ার সোহাগ, ঢাকা
আপডেট : ২৮ মার্চ ২০২৫, ১১: ৫১
বাংলাদেশ দলের মিডফিল্ডার হামজা চৌধুরী। ছবি: বাফুফে
বাংলাদেশ দলের মিডফিল্ডার হামজা চৌধুরী। ছবি: বাফুফে

ইংলিশ ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপ লিগে আজ কভেন্ট্রি সিটির বিপক্ষে মাঠে নামবে শেফিল্ড ইউনাইটেড। হামজা চৌধুরীর এই ম্যাচে খেলা নিয়ে আছে অনিশ্চয়তা। গতকালই ঢাকা থেকে দীর্ঘ ভ্রমণ শেষে ম্যানচেস্টারে পৌঁছেছেন তিনি। তবে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দেশের ফুটবলের জন্য যেন কিছু প্রশ্নও রেখে গেলেন এই মিডফিল্ডার।

বাংলাদেশে যেকোনো বিষয় নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে মত থাকেই। কিন্তু ভারতের বিপক্ষে এএফসি এশিয়ান কাপ বাছাইয়ের ম্যাচে হামজার পারফরম্যান্স নিয়ে দ্বিমত পোষণ করার মতো লোক হয়তো খুঁজেও পাওয়া যাবে না। শিলংয়ের জওহরলাল নেহরু স্টেডিয়ামে ৯০ মিনিট জুড়েই বিচরণ ছিল হামজার। কখনো আক্রমণের সুর বেঁধে দেওয়া, আবার কখনো রক্ষণে এসে বিপদ সামলানো; কোথায় ছিলেন না তিনি! মাত্র চার দিনের অনুশীলনকে সঙ্গী করেই আন্তর্জাতিক ফুটবলে নিজের অভিষেকে আলো ছড়ালেন এই মিডফিল্ডার। কিন্তু যদি বলা হয়, হামজা বাদে বাংলাদেশের পারফরম্যান্স কেমন ছিল? তখন একরাশ হতাশাই ফুটে উঠবে।

ভারতের কোচ মানোলো মারকেস যেখানে নিজের ফুটবলারদের ভুল নিয়ে কচুকাটা করেছেন সংবাদ সম্মেলনে, সেখানে বাংলাদেশের ফুটবলাররা যেন বেঁচে গেলেন অল্পতেই। গোলের অন্তত পাঁচটি পরিষ্কার সুযোগ থাকলেও জালে ফেলতে পারেননি একটি বলও। ম্যাচের প্রথম মিনিটে ফাঁকা পোস্ট পেয়েও মজিবর রহমান জনির সেই মিস এখনো পোড়ায় ভক্তদের; একইভাবে ডি-বক্সের ভেতর মোহাম্মদ হৃদয়ের সেই দুর্বল শটও।

বাংলাদেশ ফুটবলে এ আর নতুন কী! ফিনিশিং দুর্বলতার দিকটি বারবার তুলে ধরা হলেও প্রতিকার যেন মেলে না। কোচ হাভিয়ের কাবরেরাও হতাশা প্রকাশ করেন এতে, ‘আমরা অনেকগুলো সুযোগ তৈরি করেছি। আমি ঠিক জানি না কতগুলো,৪-৫টার মতো। কিন্তু দুর্ভাগ্য আমরা কোনোটাই কাজে লাগাতে পারিনি।’

কাবরেরা যেমন হতাশ, তেমনি ভক্তদের কাছ থেকে প্রশ্নবিদ্ধও হচ্ছেন। প্রিমিয়ার লিগে চলতি মৌসুমের সর্বোচ্চ গোলদাতা আল-আমিনকে ১ মিনিটের জন্যেও মাঠে নামাননি তিনি। নম্বর নাইন হিসেবে শাহরিয়ার ইমনই ছিলেন তাঁর পছন্দ। কিন্তু গোল মিসের খাতায় নাম ছিল তাঁর।

প্রাথমিক দল থেকে ফাহামিদুল ইসলামের বাদ পড়া নিয়ে কম সমালোচনা পোহাতে হয়নি কাবরেরাকে। দিন শেষে নিজের সিদ্ধান্তে অটল থাকেন তিনি। তবে এমন সব সুযোগ নষ্টের পর ইতালির চতুর্থ স্তরের লিগে খেলা ফাহামিদুল আক্ষেপ হয়েই ধরা দেন সমর্থকদের মনে।

হামজার খেলার ধরনের সঙ্গে বাকিরা কীভাবে তাল মেলাবেন, এ নিয়ে সংশয় ছিল শুরু থেকেই। সেই সংশয়টা আর দূর হলো কই! এক ম্যাচেই যেন স্পষ্ট হয়ে গেল, হামজার সঙ্গে বাকিদের ব্যবধান কতটুকু। তাই তো নিজের পজিশনের বাইরে গিয়েও খেলতে হয় হামজাকে। এভাবে না হয় ভারত ম্যাচ সামাল দিলেন তিনি। কিন্তু ফুটবল যে দলীয় খেলা, দল হিসেবে খেলায় পেশাদারত্ব আনাটাই জরুরি। হামজা হয়তো নির্ভরতার জায়গায় থাকবেন বরাবরই, কিন্তু জ্বলে উঠতে হবে বাকিদেরও।

গত ১০ দিনে দেশের ফুটবলে যে জোয়ার দেখা গেল, সেটি ধরে রাখতে পেশাদারি জায়গায় আরও পরিবর্তন আনতে হবে বাফুফেকে। এবার ভারত সফরের আগেই ফাহমিদুল-বিতর্ক, ভারতে গিয়ে অনুশীলন মাঠ নিয়ে ভজকট পাকানো, দলের ভেতরে নানা অব্যবস্থাপনা, খেলোয়াড়দের মধ্যে শৃঙ্খলার ঘাটতিসহ নানা বিষয় ভালোভাবে সামলাতে হবে। ভবিষ্যতে প্রবাসী ফুটবলারদের অন্তর্ভুক্তি নিয়ে বাফুফের অবস্থান আরও ভালোভাবে পরিষ্কার করতে হবে। কোচ কাবরেরার পারফরম্যান্স পুনর্মূল্যায়ন, জামাল ভূঁইয়ার ভবিষ্যৎসহ প্রাসঙ্গিক আরও কিছু বিষয়ও এবার এসেছে সামনে।

দেশের ফুটবলে হামজা যে উন্মাদনা এনে দিয়েছেন, তাতে এখনো ডুবে আছেন ভক্ত-সমর্থকেরা। তাঁকে ঘিরেই স্বপ্নের পালে লেগেছে হাওয়া। যাওয়ার আগে দেশের ফুটবলপ্রেমীদের উদ্দেশে হামজা বলে গেছেন, ‘ইনশা আল্লাহ, আমি জুনে ফিরব। আমার সুস্বাস্থ্য এবং ফিরে আসার জন্য দোয়া করবেন। ইনশা আল্লাহ, জুনে আরও দুটি বড় ম্যাচে আপনাদের সবার সঙ্গে দেখা হবে।’ ফিরে এসে বাকিদের মধ্যেও নিশ্চয়ই পরিবর্তন দেখতে চাইবেন হামজা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত