মুশফিক দেখিয়েছেন, পরিশ্রম কীভাবে করতে হয়

রিফাত আনজুম
প্রকাশ : ০৯ মে ২০২১, ১৬: ৩৯
আপডেট : ২৪ জুন ২০২১, ১১: ০৫

ঢাকা: ১৬ বছর আগে লর্ডসে টেস্ট অভিষেক ১৭ বছর বয়সী এক তরুণের। হঠাৎ কারও চোখে পড়লে মনে হবে বয়সটা আরও কম। কে জানত, বিস্ময়বালক হিসেবে অভিষিক্ত সেই মুশফিকুর রহিম একদিন বাংলাদেশ ক্রিকেটের অন্যতম স্তম্ভে পরিণত হবেন!

মুশফিকের যখন অভিষেক, দলে আছেন অভিজ্ঞ উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান খালেদ মাসুদ। তবু নিজেকে চেনাতে সময় নেননি মুশফিক। ক্রমেই বাংলাদেশ ক্রিকেটের সঙ্গে অবিচ্ছেদ্যভাবে জড়িয়ে যায় তাঁর নাম। বাংলাদেশ ক্রিকেটের অনেক সাফল্যগাথার নায়কও তিনি।

মাঠের মুশফিককে সবাই চিনি, যিনি কখনোই হারতে রাজি নন। দলের চরম বিপর্যয়েও লড়ে যান বুক চিতিয়ে। কিন্তু ব্যাট হাতে দৃঢ় সেই মুশফিক আবেগ প্রকাশেও বাঁধভাঙা। ব্যর্থতার সঙ্গে যাঁর আজন্ম শত্রুতা! দলের ব্যর্থতা কিংবা নিজের ব্যর্থতা, কোনোটাই মেনে নিতে পারেন না সহজে। সমালোচনায় ভেঙে পড়েন কখনো কখনো। ব্যর্থতাকে গা ঘেঁষতে না দিতে মাঠে ও মাঠের বাইরে সব সময় পরিশ্রমী সবার প্রিয় ‘মুশি’। তাঁর সতীর্থরাও বিনা বাক্যব্যয়ে রায় দেন, পরিশ্রমে মুশফিকই সবচেয়ে এগিয়ে।

ক্যারিয়ারের শুরুতে নিজেকে চেনাতে মুশফিক বেছে নেন ২০০৭ সালের বিশ্বকাপের মঞ্চটা। পোর্ট অব স্পেনে ভারতের বিপক্ষে মুনাফ প্যাটেলের ফুল লেংথের ডেলিভারিতে কাভার ড্রাইভে চার মেরে দুই হাত ওপরে তুলে মুশফিকের সেই জয় উল্লাসের দৃশ্যটি আজও চোখে লেগে আছে। শেবাগ–টেন্ডুলকার–সৌরভদের ভারতকে হারানো তো চাট্টিখানি কথা না। তাও আবার বিশ্বকাপের মতো বড় মঞ্চে। অপরাজিত ৫৬ রানের সেই ইনিংস দিয়েই আগমনী বার্তা দেন মুশফিক।

খুব একটা পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি মুশফিককে। তবে তাঁকে অনেক বদলে দিয়েছে ২০০৮ সালে অস্ট্রেলিয়া সফর থেকে বাদ পড়াটা। মুশফিক নিজেই এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ওই বাদ পড়াটা তাঁকে দলে টিকে থাকার জেদটা বাড়িয়ে দিয়েছিল। পারফরম্যান্সের কারণে তাঁকে পরে আর বাদ পড়তে হয়নি। সময়ের ডানায় চড়ে নিজেকে আরও পরিণত করেছেন। দলে নিজেকে অপরিহার্য হিসেবে প্রমাণ করেছেন।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে মুশফিক পার করে দিয়েছেন ১৬টি বছর। বাংলাদেশ দলের সবচেয়ে পরিশ্রমী ক্রিকেটার বললে সবার আগে আসে তাঁর নাম। পরিশ্রম করে নিজের কীভাবে উন্নতি করা যায়, সেটার সবচেয়ে বড় উদাহরণ তিনি। দেখিয়েছেন কীভাবে পরিশ্রম করে সব বাধা উতরে যাওয়া যায়, কীভাবে পেশাটা ভালোবাসা যায়।

অনুশীলনে মুশফিক সব সময়ই আলাদা। অনুশীলনে আসবেন সবার আগে আর যাবেন সবার পরে। অনুশীলন না থাকলেও মাঠে তাঁর উপস্থিতি থাকবেই। অবসর বা বিশ্রাম বলে কোনো শব্দ যেন তাঁর অভিধানে নেই। কখনো নিজের কাজ নিয়ে সন্তুষ্ট হতে পারেন না। সব সময় তাঁর মনে আরও উন্নতি করার তাড়া। পরিশ্রমী মুশফিককে ক্রিকেটও দিয়েছে দুই হাত উজাড় করে।

নিজেকে মুশফিক প্রতিষ্ঠা করেছেন দলের অন্যতম ভরসা হিসেবে। ফাইল ছবিমাঠের পারফরম্যান্স দিয়েই নিজেকে প্রমাণ করেছেন বারবার। হয়েছেন অনেক রেকর্ডের মালিকও। টেস্টে বাংলাদেশের একমাত্র উইকেটরক্ষক হিসেবে ২০০০ রান আর ১০০ ডিসমিসালের রেকর্ড তাঁর। টেস্টে উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান হিসেবে চতুর্থ সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত রানের (২১৯*) রেকর্ড মুশফিকের নামের পাশে। ১৪ রান করলেই এই তালিকার শীর্ষে উঠে যেতে পারতেন মুশি। উইকেটরক্ষক হিসেবে অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন এমন ক্রিকেটারের মধ্যে মহেন্দ্র সিং ধোনির (৬০) পরই মুশফিকের নাম (২৮)। টেস্ট ক্রিকেটে একমাত্র উইকেটরক্ষক হিসেবে দুটি ডাবল সেঞ্চুরির মালিকও তিনি। টেস্টের মতো ওয়ানডেতেও একমাত্র বাংলাদেশি উইকেটরক্ষক হিসেবে ২০০০ রান আর ১০০ ডিসমিসালের মালিক তিনি।

উইকেটকিপিংয়ের প্রতি তাঁর অন্য রকম এক ভালো লাগা আছে। সেই কিপিং নিয়ে সহ্য করতে হয়েছে অনেক সমালোচনাও। টেস্টে উইকেটকিপিং ছাড়তে অনেকটাই বাধ্য হয়েছেন বলা যায়। কিন্তু ব্যাট হাতে এখনো বাংলাদেশ দলের অন্যতম ভরসার নাম মুশফিক। খারাপ সময় গেছে। প্রতিবারই ফিরে এসেছেন আরও শক্তিশালী হয়ে।

ধীরে ধীরে ক্যারিয়ারের পড়ন্ত বেলার দিকে এগোচ্ছেন মুশফিক। প্রকৃতির নিয়ম মেনে একদিন হয়তো বিদায়ও জানাবেন ক্রিকেটকে। কিন্তু বাংলাদেশ ক্রিকেটের ‘মিস্টার ডিপেনডেবল’ হিসেবে সব সময় থেকে যাবেন আজ ৩৪–এ পা দেওয়া মুশফিক।

শুভ জন্মদিন মুশফিকুর রহিম!

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত