দাক্স পানওয়ার
ঢাকা: অনেক দিন আগের কথা, নির্দিষ্ট করে বললে ছয়টা জুন আগের কথা, যখন আমার প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ ভ্রমণের সৌভাগ্য হয়েছিল। একদল ভারতীয় সাংবাদিকের সঙ্গে ভারতীয় দলের এক টেস্ট ও তিন ওয়ানডে ম্যাচের সংক্ষিপ্ত সফর কাভার করতে গিয়েছিলাম। ব্যস্ত সেই তিন সপ্তাহের সফরে অনিন্দ্যসুন্দর দেশটিকে দারুণভাবে জানতে পেরেছিলাম। একই প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে আমি আমার নিজের দেশ ভারতের কিছু বিষয়ও বেশ ভালোভাবে বুঝতে পেরেছিলাম।
দেশটিতে পা রাখার আগেই মানচিত্রে দেশটি দেখে আমি বেশ মুগ্ধ হয়েছিলাম। সেখানে দেখে দেশটিকে ভারতের একটি ক্ষুদ্র সংস্করণ বলেই মনে হচ্ছিল। সেই একই আকার: একটি মাথা ও পাশাপাশি বেরিয়ে যাওয়া দুটি প্রসারিত অংশ। আর পায়ে জড়িয়ে আছে সমুদ্র। এরপর যখন আমি প্রথম হজরত শাহজালাল বিমানবন্দরে পা রাখি, দেখলাম দুটি দেশের মধ্যে মানচিত্রের মতো বাস্তব জীবনেও মিল আছে।
আমি দেশটির অসাধারণ প্রাণশক্তি অনুভব করতে পেরেছিলাম। কিন্তু আমলাতান্ত্রিক জটিলতাও কম নয়। ফলে যে অস্থিরতা তৈরি হয় তা প্রাণশক্তি নষ্টও করে। নব্বই দশকে ভারতেও এর ব্যতিক্রম ছিল না, যখন প্রবৃদ্ধি বাড়তে শুরু করেছিল। সে সময় মানুষের আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়ন হচ্ছিল। মধ্যবিত্তের সংখ্যাও বাড়তে শুরু করেছিল। দেশের ভেতর এমন একটা বিশ্বাস ছড়িয়ে পড়েছিল যে শক্তির কেন্দ্রে তার নিজের আসনটি খুঁজে নিতে হবে। কিন্তু ভারতের স্বপ্ন ফিকে হয়ে আসে ২০১৬ সালের পর থেকে। সেই সময় একসঙ্গে অনেকগুলো ভুল সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সেটা অবশ্য অন্য বিষয়। কিন্তু সাম্প্রতিক প্রবৃদ্ধি নির্দেশক বলছে, বাংলাদেশ এখনো সম্ভাবনাময়।
আপনি হয়তো ক্রিকেট কলামে অর্থনীতি নিয়ে কেন কথা বলছি সেটা ভেবে অবাক হচ্ছেন! এগুলো পরিপূরক বিষয়। ভারতের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি দেশটির ক্রিকেটকে প্রভাবিত করেছে। উত্তর–উদারনৈতিক সময়ে করপোরেট ভারতের লাভের পরিমাণও বেড়েছে। সেই উদ্বৃত্তের একটা অংশ বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে এসেছে ক্রিকেটে। যা বিসিসিআইকে টেকসই অবকাঠামো নির্মাণের সুযোগ করে দিয়েছে। যার ভেতর দিয়ে বেরিয়ে এসেছে অনেক ক্রিকেটার। এখনকার শক্তিশালী ভারত যে সবাইকে হারাতে পারে, তাঁর কারণ মূলত এটাই।
দুটি উপায়ে ক্রিকেটে দাপট দেখানো যেতে পারে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ–পাকিস্তানি উপায় এবং অস্ট্রেলিয়া–ভারত উপায়। প্রথমটিতে দল নির্ভর করে প্রতিভা ও আবেগের ওপর। এখানে কোনো ধরনের সিস্টেম ছাড়াই দল সফল হতে পারে। এই ক্রিকেট অনেকটা রোমান্টিক ক্রিকেট। তবে সমসাময়িক ক্রিকেটে এই দাপট মোটেই স্থায়ী না। দ্বিতীয় পদ্ধতিতেও প্রতিভা প্রয়োজন। পাশাপাশি সঠিক পদ্ধতি ও দেখভাল একে ভালোভাবে রক্ষা করতে পারে। এটা দীর্ঘমেয়াদি দাপটের নিশ্চয়তাও দেয়। এভাবেই আসলে রাজত্ব নিশ্চিত করতে হয়।
বাংলাদেশ ভ্রমণের সময় আমার মনে হয়েছে এই দেশের ক্রিকেটও ভারতের পদচিহ্ন অনুসরণ করছে। সেখানকারই ক্রিকেটেও অর্থের প্রবাহ অব্যাহত আছে এবং বাংলাদেশ নিজেদের উন্নতির একটা পথ তৈরি করেছে। পাশাপাশি দীর্ঘ অপেক্ষার পর দারুণ কিছু ফলও পেতে শুরু করেছে দলটি। এর মাঝে তারা ২০১৫ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে খেলেছে। বাংলাদেশ বিশ্বাস করে, সেদিন আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত তাদের বঞ্চিত করেছে। এরপর চার মাসের মধ্যে ওয়ানডেতে বাংলাদেশ পাকিস্তানকে হোয়াইটওয়াশ করেছ, ভারতকে মাটিতে নামিয়েছে ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে জিতেছে। এই ফলগুলো দুর্দান্ত। তবে আসল কাজটা হচ্ছিল মূলত এক স্তর নিচে, জুনিয়র ক্রিকেটে। ছয় মাস পর দ্বিতীয়বার ভ্রমণে আমি সেটার সাক্ষীও হয়েছি।
জানুয়ারি ২০১৬ সালে আমি বাংলাদেশ গিয়েছিলাম আইসিসি অনূর্ধ্ব–১৯ বিশ্বকাপ কাভার করতে। আগের দুই বছর ধরে বাংলাদেশ এই টুর্নামেন্টটির প্রস্তুতি নিচ্ছিল। একদল প্রতিভাবান তরুণ বৈশ্বিক শিরোপা জেতার লক্ষ্যে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রস্তুত হচ্ছিল। উজ্জীবিত ওয়েস্ট ইন্ডিজ যদি জিততে না পারত তবে বাংলাদেশই শেষ পর্যন্ত জয়ের আনন্দে মাততে পারত। কিন্তু ২০১৬ সালে অল্পের জন্য না পারলেও এটা বোঝা যাচ্ছিল যে সাফল্য খুব কাছে অপেক্ষা করছিল। এরপর ২০২০ সালের অনূর্ধ্ব–১৯ বিশ্বকাপে বাংলাদেশ ঠিকই শিরোপা জিতে নিয়েছে। যেখানে ফাইনালে তারা ভারতকে হারিয়েছে। তাদের উদ্যাপনও ছিল আবেগময় ও বাঁধভাঙা। সেদিন পচেফস্ট্রুমে বাংলাদেশি তরুণ খেলোয়াড়দের বাঁধনহারা উচ্ছ্বাস ভারতসহ গোটা বিশ্বকে বলে দিচ্ছিল, তোমরা এবার আমাদের গুরুত্বের সঙ্গে নাও।
বাংলাদেশের ক্রিকেটকে ভারতের ক্রিকেট বিশেষজ্ঞ এবং সমর্থকেরা কীভাবে দেখছেন? আরও বৃহৎ অর্থে বললে, গড়পড়তা ভারতীয়রা বাংলাদেশকে কীভাবে দেখে? ইতিবাচক উত্তরটি হচ্ছে, উৎসাহীভাবে এবং নেতিবাচক উত্তরটি হচ্ছে, অশ্রদ্ধার সঙ্গে দেখা হয়। তবে বেশির ভাগেরই বাংলাদেশ নিয়ে তেমন আগ্রহ নেই। এটা এমন যে তারা বাংলাদেশকে যেন চেনেই না! হ্যাঁ, এটা ঠিক যে ভারতে বাংলাদেশ–বিরোধী প্রচারণা রয়েছে। কিন্তু সময়টাও আমাদের মাথায় রাখতে হবে। মূলত পশ্চিমবঙ্গ ও আসামের নির্বাচনের সময় এ বিষয়টি মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে।
এটা ধ্রুব সত্য, ভারত যখন বাংলাদেশকে তাদের স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় সহযোগিতা করে, তখন এটা পাকিস্তানের (কখনো চীন) মতো আমাদের অবদমনের বিষয় ছিল না। এর কারণ পাকিস্তানকে দেখা হয় অস্তিত্বের হুমকি হিসেবে। অন্যদিকে বাংলাদেশের সঙ্গে যখন উত্তেজনাপূর্ণ সম্পর্কও অব্যাহত থাকে তখন একধরনের সৌহার্দ্য দেখা যায়।
এটা ক্রিকেটের দিক থেকেও একইভাবে সত্য। যেটির উদাহরণ হিসেবে বীরেন্দর শেবাগের বাংলাদেশ খারিজ করে দেয়, বাংলাদেশের বিপক্ষে ভারতের কম ম্যাচ খেলা এবং স্টার স্পোর্টসের ২০১৫ সালের সফরের আগে ‘বাচ্চা বাড়া হো গায়া (বাচ্চা বড় হয়ে গেছে) ’ বিজ্ঞাপনের কথা বলা যায়।
কিন্তু ভূ–রাজনৈতিক পরিস্থিতির মতো ক্রিকেট মাঠেও ভারতের উচিত বাংলাদেশকে তার প্রাপ্য সম্মান দেওয়া ও সমতামূলক আচরণ করা। ভারত বাংলাদেশের সঙ্গে চার হাজার কিলোমিটারের সীমানা ভাগাভাগি করে। যা বিশ্বের পঞ্চম দীর্ঘতম ভূ–সীমানা। এমনকি ভারত–পাকিস্তান ও ভারত–চীনের চেয়েও অনেক বড়। জনসংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সীমিত প্রাকৃতিক সম্পদ নিয়ে লড়াইটাও বাড়ে। বাংলাদেশ যতই উন্নতি করেছে ও মধ্য শক্তির দেশে পরিণত হয়েছে, কিন্তু এর মাঝে দুই দেশেই মৌলবাদ বেড়েছে। যা দুই দেশের ১৯৭১ সালের বন্ধুত্বকেও ম্লান করেছে। দুই দেশের উচিত বিষয়গুলো আরও পরিপক্বতার সঙ্গে বিবেচনা করা। পাশাপাশি যেকোনো সমস্যা সম্মান ও পারস্পরিক সমঝোতার সঙ্গে সমাধান করা।
ক্রিকেটে ভারত বাংলাদেশের উন্নতিকে মূল্যায়ন করতে পারে দেশে ও দেশের বাইরে আরও বেশি দ্বিপক্ষীয় ম্যাচ খেলার মাধ্যমে। আমার দেখছি, সামনের দিনগুলোতে ভারত–পাকিস্তান দ্বৈরথকে এটি প্রতিস্থাপন করতে না পারলেও, সমমানের মর্যাদা পেতে যাচ্ছে। ভারত তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বীর সঙ্গে খেলতে পারছে না। শ্রীলঙ্কা তাদের গৌরবোজ্জ্বল অতীত হারিয়ে ফেলেছে। একটি নতুন ও স্বাস্থ্যকর উপমহাদেশীয় দ্বৈরথ দুই পক্ষকেই সহায়তা করবে। এটা সময়ের দাবিও বটে।
লেখক: কানাডাপ্রবাসী ভারতীয় সাংবাদিক
ঢাকা: অনেক দিন আগের কথা, নির্দিষ্ট করে বললে ছয়টা জুন আগের কথা, যখন আমার প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ ভ্রমণের সৌভাগ্য হয়েছিল। একদল ভারতীয় সাংবাদিকের সঙ্গে ভারতীয় দলের এক টেস্ট ও তিন ওয়ানডে ম্যাচের সংক্ষিপ্ত সফর কাভার করতে গিয়েছিলাম। ব্যস্ত সেই তিন সপ্তাহের সফরে অনিন্দ্যসুন্দর দেশটিকে দারুণভাবে জানতে পেরেছিলাম। একই প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে আমি আমার নিজের দেশ ভারতের কিছু বিষয়ও বেশ ভালোভাবে বুঝতে পেরেছিলাম।
দেশটিতে পা রাখার আগেই মানচিত্রে দেশটি দেখে আমি বেশ মুগ্ধ হয়েছিলাম। সেখানে দেখে দেশটিকে ভারতের একটি ক্ষুদ্র সংস্করণ বলেই মনে হচ্ছিল। সেই একই আকার: একটি মাথা ও পাশাপাশি বেরিয়ে যাওয়া দুটি প্রসারিত অংশ। আর পায়ে জড়িয়ে আছে সমুদ্র। এরপর যখন আমি প্রথম হজরত শাহজালাল বিমানবন্দরে পা রাখি, দেখলাম দুটি দেশের মধ্যে মানচিত্রের মতো বাস্তব জীবনেও মিল আছে।
আমি দেশটির অসাধারণ প্রাণশক্তি অনুভব করতে পেরেছিলাম। কিন্তু আমলাতান্ত্রিক জটিলতাও কম নয়। ফলে যে অস্থিরতা তৈরি হয় তা প্রাণশক্তি নষ্টও করে। নব্বই দশকে ভারতেও এর ব্যতিক্রম ছিল না, যখন প্রবৃদ্ধি বাড়তে শুরু করেছিল। সে সময় মানুষের আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়ন হচ্ছিল। মধ্যবিত্তের সংখ্যাও বাড়তে শুরু করেছিল। দেশের ভেতর এমন একটা বিশ্বাস ছড়িয়ে পড়েছিল যে শক্তির কেন্দ্রে তার নিজের আসনটি খুঁজে নিতে হবে। কিন্তু ভারতের স্বপ্ন ফিকে হয়ে আসে ২০১৬ সালের পর থেকে। সেই সময় একসঙ্গে অনেকগুলো ভুল সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সেটা অবশ্য অন্য বিষয়। কিন্তু সাম্প্রতিক প্রবৃদ্ধি নির্দেশক বলছে, বাংলাদেশ এখনো সম্ভাবনাময়।
আপনি হয়তো ক্রিকেট কলামে অর্থনীতি নিয়ে কেন কথা বলছি সেটা ভেবে অবাক হচ্ছেন! এগুলো পরিপূরক বিষয়। ভারতের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি দেশটির ক্রিকেটকে প্রভাবিত করেছে। উত্তর–উদারনৈতিক সময়ে করপোরেট ভারতের লাভের পরিমাণও বেড়েছে। সেই উদ্বৃত্তের একটা অংশ বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে এসেছে ক্রিকেটে। যা বিসিসিআইকে টেকসই অবকাঠামো নির্মাণের সুযোগ করে দিয়েছে। যার ভেতর দিয়ে বেরিয়ে এসেছে অনেক ক্রিকেটার। এখনকার শক্তিশালী ভারত যে সবাইকে হারাতে পারে, তাঁর কারণ মূলত এটাই।
দুটি উপায়ে ক্রিকেটে দাপট দেখানো যেতে পারে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ–পাকিস্তানি উপায় এবং অস্ট্রেলিয়া–ভারত উপায়। প্রথমটিতে দল নির্ভর করে প্রতিভা ও আবেগের ওপর। এখানে কোনো ধরনের সিস্টেম ছাড়াই দল সফল হতে পারে। এই ক্রিকেট অনেকটা রোমান্টিক ক্রিকেট। তবে সমসাময়িক ক্রিকেটে এই দাপট মোটেই স্থায়ী না। দ্বিতীয় পদ্ধতিতেও প্রতিভা প্রয়োজন। পাশাপাশি সঠিক পদ্ধতি ও দেখভাল একে ভালোভাবে রক্ষা করতে পারে। এটা দীর্ঘমেয়াদি দাপটের নিশ্চয়তাও দেয়। এভাবেই আসলে রাজত্ব নিশ্চিত করতে হয়।
বাংলাদেশ ভ্রমণের সময় আমার মনে হয়েছে এই দেশের ক্রিকেটও ভারতের পদচিহ্ন অনুসরণ করছে। সেখানকারই ক্রিকেটেও অর্থের প্রবাহ অব্যাহত আছে এবং বাংলাদেশ নিজেদের উন্নতির একটা পথ তৈরি করেছে। পাশাপাশি দীর্ঘ অপেক্ষার পর দারুণ কিছু ফলও পেতে শুরু করেছে দলটি। এর মাঝে তারা ২০১৫ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে খেলেছে। বাংলাদেশ বিশ্বাস করে, সেদিন আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত তাদের বঞ্চিত করেছে। এরপর চার মাসের মধ্যে ওয়ানডেতে বাংলাদেশ পাকিস্তানকে হোয়াইটওয়াশ করেছ, ভারতকে মাটিতে নামিয়েছে ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে জিতেছে। এই ফলগুলো দুর্দান্ত। তবে আসল কাজটা হচ্ছিল মূলত এক স্তর নিচে, জুনিয়র ক্রিকেটে। ছয় মাস পর দ্বিতীয়বার ভ্রমণে আমি সেটার সাক্ষীও হয়েছি।
জানুয়ারি ২০১৬ সালে আমি বাংলাদেশ গিয়েছিলাম আইসিসি অনূর্ধ্ব–১৯ বিশ্বকাপ কাভার করতে। আগের দুই বছর ধরে বাংলাদেশ এই টুর্নামেন্টটির প্রস্তুতি নিচ্ছিল। একদল প্রতিভাবান তরুণ বৈশ্বিক শিরোপা জেতার লক্ষ্যে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রস্তুত হচ্ছিল। উজ্জীবিত ওয়েস্ট ইন্ডিজ যদি জিততে না পারত তবে বাংলাদেশই শেষ পর্যন্ত জয়ের আনন্দে মাততে পারত। কিন্তু ২০১৬ সালে অল্পের জন্য না পারলেও এটা বোঝা যাচ্ছিল যে সাফল্য খুব কাছে অপেক্ষা করছিল। এরপর ২০২০ সালের অনূর্ধ্ব–১৯ বিশ্বকাপে বাংলাদেশ ঠিকই শিরোপা জিতে নিয়েছে। যেখানে ফাইনালে তারা ভারতকে হারিয়েছে। তাদের উদ্যাপনও ছিল আবেগময় ও বাঁধভাঙা। সেদিন পচেফস্ট্রুমে বাংলাদেশি তরুণ খেলোয়াড়দের বাঁধনহারা উচ্ছ্বাস ভারতসহ গোটা বিশ্বকে বলে দিচ্ছিল, তোমরা এবার আমাদের গুরুত্বের সঙ্গে নাও।
বাংলাদেশের ক্রিকেটকে ভারতের ক্রিকেট বিশেষজ্ঞ এবং সমর্থকেরা কীভাবে দেখছেন? আরও বৃহৎ অর্থে বললে, গড়পড়তা ভারতীয়রা বাংলাদেশকে কীভাবে দেখে? ইতিবাচক উত্তরটি হচ্ছে, উৎসাহীভাবে এবং নেতিবাচক উত্তরটি হচ্ছে, অশ্রদ্ধার সঙ্গে দেখা হয়। তবে বেশির ভাগেরই বাংলাদেশ নিয়ে তেমন আগ্রহ নেই। এটা এমন যে তারা বাংলাদেশকে যেন চেনেই না! হ্যাঁ, এটা ঠিক যে ভারতে বাংলাদেশ–বিরোধী প্রচারণা রয়েছে। কিন্তু সময়টাও আমাদের মাথায় রাখতে হবে। মূলত পশ্চিমবঙ্গ ও আসামের নির্বাচনের সময় এ বিষয়টি মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে।
এটা ধ্রুব সত্য, ভারত যখন বাংলাদেশকে তাদের স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় সহযোগিতা করে, তখন এটা পাকিস্তানের (কখনো চীন) মতো আমাদের অবদমনের বিষয় ছিল না। এর কারণ পাকিস্তানকে দেখা হয় অস্তিত্বের হুমকি হিসেবে। অন্যদিকে বাংলাদেশের সঙ্গে যখন উত্তেজনাপূর্ণ সম্পর্কও অব্যাহত থাকে তখন একধরনের সৌহার্দ্য দেখা যায়।
এটা ক্রিকেটের দিক থেকেও একইভাবে সত্য। যেটির উদাহরণ হিসেবে বীরেন্দর শেবাগের বাংলাদেশ খারিজ করে দেয়, বাংলাদেশের বিপক্ষে ভারতের কম ম্যাচ খেলা এবং স্টার স্পোর্টসের ২০১৫ সালের সফরের আগে ‘বাচ্চা বাড়া হো গায়া (বাচ্চা বড় হয়ে গেছে) ’ বিজ্ঞাপনের কথা বলা যায়।
কিন্তু ভূ–রাজনৈতিক পরিস্থিতির মতো ক্রিকেট মাঠেও ভারতের উচিত বাংলাদেশকে তার প্রাপ্য সম্মান দেওয়া ও সমতামূলক আচরণ করা। ভারত বাংলাদেশের সঙ্গে চার হাজার কিলোমিটারের সীমানা ভাগাভাগি করে। যা বিশ্বের পঞ্চম দীর্ঘতম ভূ–সীমানা। এমনকি ভারত–পাকিস্তান ও ভারত–চীনের চেয়েও অনেক বড়। জনসংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সীমিত প্রাকৃতিক সম্পদ নিয়ে লড়াইটাও বাড়ে। বাংলাদেশ যতই উন্নতি করেছে ও মধ্য শক্তির দেশে পরিণত হয়েছে, কিন্তু এর মাঝে দুই দেশেই মৌলবাদ বেড়েছে। যা দুই দেশের ১৯৭১ সালের বন্ধুত্বকেও ম্লান করেছে। দুই দেশের উচিত বিষয়গুলো আরও পরিপক্বতার সঙ্গে বিবেচনা করা। পাশাপাশি যেকোনো সমস্যা সম্মান ও পারস্পরিক সমঝোতার সঙ্গে সমাধান করা।
ক্রিকেটে ভারত বাংলাদেশের উন্নতিকে মূল্যায়ন করতে পারে দেশে ও দেশের বাইরে আরও বেশি দ্বিপক্ষীয় ম্যাচ খেলার মাধ্যমে। আমার দেখছি, সামনের দিনগুলোতে ভারত–পাকিস্তান দ্বৈরথকে এটি প্রতিস্থাপন করতে না পারলেও, সমমানের মর্যাদা পেতে যাচ্ছে। ভারত তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বীর সঙ্গে খেলতে পারছে না। শ্রীলঙ্কা তাদের গৌরবোজ্জ্বল অতীত হারিয়ে ফেলেছে। একটি নতুন ও স্বাস্থ্যকর উপমহাদেশীয় দ্বৈরথ দুই পক্ষকেই সহায়তা করবে। এটা সময়ের দাবিও বটে।
লেখক: কানাডাপ্রবাসী ভারতীয় সাংবাদিক
প্রথম সেশন বেশ ভালো কাটল বাংলাদেশের। মধ্যাহ্নভোজের আগে নিয়েছে ২ উইকেট। দুটি উইকেটই নিয়েছেন পেসার তাসকিন আহমেদ।
২ ঘণ্টা আগেপেপ গার্দিওলাকে প্রধান কোচের দায়িত্ব দিতে চেয়েছিল ইংল্যান্ড। কদিন আগে রোনালদো নাজারিও জানিয়েছিলেন, ব্রাজিল ফুটবল ফেডারেশনের আগামী নির্বাচনে সভাপতি হলে সেলেসাওদের জন্য নিয়ে আসবেন স্প্যানিশ কোচকে। তবে আপাতত কোথাও যাচ্ছেন না গার্দিওলা। থাকছেন ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগেই।
৩ ঘণ্টা আগেউয়েফা নেশনস লিগের কোয়ার্টার ফাইনালে নেদারল্যান্ডসকে পেল গতবারের চ্যাম্পিয়ন স্পেন। মুখোমুখি হবে চারবারের দুই বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইতালি-জার্মানি।
৩ ঘণ্টা আগে২০২৪ থেকে ২০৩১ সাল পর্যন্ত এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলের (এসিসি) সকল টুর্নামেন্টের একক মিডিয়া স্বত্ব কিনে নিয়েছে ভারতীয় টেলিভিশন মিডিয়া সনি পিকচার্স নেটওয়ার্কস ইন্ডিয়া (এসপিএনআই)। আজ এক বিজ্ঞপ্তিতে সংস্থাটি এ ঘোষণা দিয়েছে।
৩ ঘণ্টা আগে