
বাংলাদেশ ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় বিজ্ঞাপন সাকিব আল হাসান। এই মুহূর্তে বাঁহাতি অলরাউন্ডার ছুটি কাটাতে আছেন যুক্তরাষ্ট্রে। যুক্তরাষ্ট্রে পরিবারের কাছে যাওয়ার আগে সাকিব সময় দিলেন আজকের পত্রিকাকে। দুই দিন আগে রানা আব্বাসকে দেওয়া দীর্ঘ সাক্ষাৎকারে বাঁহাতি অলরাউন্ডার বললেন খেলা ও খেলার বাইরের অনেক কিছুই।
রানা আব্বাস

প্রশ্ন: পারিবারিক কারণে ছুটি নেওয়ায় বোর্ডের অনেকে বলেছেন, আপনার জীবনটা একটু কঠিন হয়ে গেছে। বাংলাদেশও এখন আপনার কাছে বিদেশ! দূরে থাকা পরিবার আর খেলার মধ্যে ভারসাম্যটা কীভাবে রাখছেন?
সাকিব আল হাসান: এখনো পর্যন্ত (ভারসাম্য) রাখছি। যেহেতু বছরটা শেষ হয়ে যাচ্ছে, আগামী বছরে বেশ কিছু বড় পরিকল্পনা আছে। সেগুলো যদি ঠিকঠাক বাস্তবায়ন করতে পারি, তাহলে সময়টা হয়তো ঠিকঠাক ম্যানেজ করা সম্ভব হবে।
প্রশ্ন: এটার কারণে কি এখন বেছে বেছে খেলার ভাবনা কাজ করছে?
সাকিব: আমি যে অবস্থায় আছি, বেশি দিন টেস্ট ক্রিকেট ধরে রাখা আমার জন্য কঠিন হবে। এখন আমাকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে কোন সংস্করণ আমি খেলতে চাই, কোন সংস্করণ খেলতে চাই না। আর টেস্ট ক্রিকেটে যেহেতু সময়টা বেশি যায়, এটাই এক সংস্করণ, যেটা নিয়ে আমাকে খুব ভালোভাবে চিন্তা করতে হবে। বোর্ডের সঙ্গে আলোচনা করে যদি সব ঠিকঠাক থাকে, তাহলে টেস্ট থেকে আপাতত নিজেকে সরিয়ে রাখতে হবে। আর ওয়ানডেতে যদি দেখি পয়েন্টের কোনো ব্যাপার নেই (আইসিসি ওয়ানডে সুপার লিগ), সেই সিরিজ যদি না খেলা লাগে, খেললাম না। আর যেগুলো পয়েন্টের বিষয় আছে, সেগুলো খেললাম। পরিকল্পনাগুলো নিয়ে বোর্ডের সঙ্গে কথা বলতে হবে।
প্রশ্ন: ক্যারিয়ারকে দীর্ঘ করতেই নিশ্চয়ই এই পরিকল্পনা?
সাকিব: ধরুন, ২০২২ বিশ্বকাপের পরের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ২০২৪ সালে। সেটা খেলতে পারব কি পারব না, তা জানি না। তখন যদি মনে হয় আরেকটা ফরম্যাট পরিবর্তন করে টেস্ট খেলব, সেটাও করতে পারি। এখন বেছে বেছে খেলতে হবে, এটাই আমার বাস্তবতা।
প্রশ্ন: সামনে নিউজিল্যান্ড সিরিজ। রেকর্ড-পরিসংখ্যানে চোখ রাখলে বলতে হয়, এই দলটা আপনার প্রিয় প্রতিপক্ষ! যে দলের বিপক্ষে টেস্টে আপনার ব্যাটিং গড় ৭৩.৮৫। সেই প্রিয় প্রতিপক্ষের সঙ্গে সিরিজ হাতছাড়া হলে কতটা আফসোস হয়?
সাকিব: আফসোস তো হয়ই। নিউজিল্যান্ড আর ওয়েস্ট ইন্ডিজ—দুটি জায়গা, যেখানে আমি সব সময়ই খেলতে চাই। এ দিয়ে তিনবার (নিউজিল্যান্ড সফর) হাতছাড়া করলাম। একবার বাচ্চা হওয়ার বিষয় ছিল (মার্চ, ২০২১)। একবার বিপিএল (২০১৯) ফাইনালে চোটে পড়েছিলাম। এবার তো ছুটি নিলাম। এটা আমার জন্য অবশ্যই একটু দুঃখজনক, যেখানে আমি সব সময়ই খেলতে যেতে চাই (নিউজিল্যান্ডে)। আমার পাঁচটা টেস্ট সেঞ্চুরির দুটিই ওখানে। আমি ওখানে ব্যাটিং খুব উপভোগ করি। পৃথিবীর যে কয়েকটি জায়গায় ভালো ব্যাটিংয়ের উইকেট মেলে, নিউজিল্যান্ড তার একটা। সেদিক দিয়ে অবশ্যই আমি খুব মিস করি। আর জায়গাটাও আমি অসম্ভব পছন্দ করি ঘুরতে। সব দিক দিয়েই মিস করি। কিন্তু এখন এটাই বাস্তবতা।
প্রশ্ন: কদিন আগে টেস্টে দ্রুততম ২০০ উইকেট আর ৪০০০ রানের রেকর্ড হলো আপনার। ৫৯ টেস্টেই পরিসংখ্যানটা এমন জায়গায় চলে গেছে, যদি আরও বেশি টেস্ট খেলতে পারতেন, কোনো সংশয় ছাড়াই আপনাকে সর্বকালের সেরা অলরাউন্ডার বলা যেত! রেকর্ড-পরিসংখ্যান নিয়ে আপনার ভাবনটা কী? এসব কতটা ভাবায় আপনাকে?
সাকিব: যেটা বললেন, হ্যাঁ, আরও যদি খেলতে পারতাম, এমন পারফরম্যান্স রাখতে পারতাম, আরও অনেক কিছু করার সুযোগ হতো। ক্যারিয়ারটা আরও সুন্দর দেখাত। সেটা চিন্তা করলে আফসোস করতেই পারি। কিন্তু এগুলো নিয়ে কখনো ভাবিনি যে ক্যারিয়ার শেষে আমার রান কত, উইকেট কত হবে। এখন কত আছে, কোথায় যাব—এসব আসলে কখনো আমার চিন্তার ভেতরে ছিল না। এমনকি ওয়ানডে, টি-টোয়েন্টিতে কত উইকেট পাব, এসব কোনো দিন টার্গেটে ছিল না যে ব্যক্তিগতভাবে এটা, ওটা করতে চাই। এখনো জানি না আমার টেস্ট, ওয়ানডেতে রান বা উইকেট কত।
প্রশ্ন: এটা নতুন করে মনে করিয়ে দেওয়ার কিছু নেই যে একজন খেলোয়াড় কতটা গ্রেট, সেটি বিচার করা হয় টেস্ট দিয়ে। অথচ সেই সংস্করণ থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখার ভাবনা কাজ করছে আপনার মনে।
সাকিব: সত্যি কথা, আমি তিন সংস্করণই খেলতে চাই। কিন্তু এখন যে পরিস্থিতি দাঁড়িয়েছে, আমাকে কিছু সময় বের করতে হবে। আর এই বয়সে একজন খেলোয়াড়ের পক্ষে তিন সংস্করণ সমান তালে খেলাটাও কঠিন। বিশ্বে এখন যারা খেলছে, তারাও অনেক বিশ্রাম নিয়ে খেলছে। রোটেশন পলিসিতে যাচ্ছে। আমাকেও ওদিকেই যেতে হবে। আমার আর কোনো অপশন নেই। এটা নিয়ে চিন্তা করারও জায়গাটা নেই।
প্রশ্ন: বিশ্বের সব দলেই সিনিয়র ক্রিকেটারদের আলাদা প্রভাব বা গুরুত্ব থাকে। কিন্তু বাংলাদেশ দলে একটু বেশিই সিনিয়রকেন্দ্রিক দল মনে হয়। যখন কোনো সিরিজে সিনিয়রদের বেশির ভাগ থাকেন না, দলকে অনেক এলোমেলো দেখায়। এটা কি পাইপলাইন সমৃদ্ধ না থাকার কারণে নাকি তরুণ খেলোয়াড়দের সামর্থ্যেই ঘাটতি?
সাকিব: আমার কাছে মনে হয়, আমরা ওদের (তরুণ ক্রিকেটার) সেভাবে প্রমোটই করিনি যে ওরা নিজেদের বড় হিসেবে চিন্তা করবে। আমরা কখনোই ওদের সেই দামটাই দিতে পারিনি, যেখানে ওরা নিজেদের নিয়ে ভাববে যে না আমরাও অনেক কিছু করতে পারব। আমাদের পাঁচজনের দিকে এত বেশি মনোযোগ দিয়েছে সবাই—সেটা সংবাদমাধ্যম বলুন, বোর্ড বলুন কিংবা দর্শক; ওরা (সিনিয়রদের বাইরে) সেভাবে চোখেই পড়েনি। ওরা সেভাবে ফিলই করেনি যে আমিও একজন এই দলের অংশ। হ্যাঁ, দু-এক সময় হয়েছে। কিন্তু যদি সামগ্রিকভাবে দেখেন, সব সময়ই এই কথা। এখনো চলছে। এটা কি সারা জীবন চলতে পারে? শচীন, গাঙ্গুলী, লক্ষ্মণ, দ্রাবিড়, কুম্বলে—এঁরা ভারতীয় দলে একসঙ্গে খেলেছে না? এঁরা যখন বিদায় নিয়েছে, তখন কি ওরা বলেছে, হায়! হায়! আমরা এখন কোথায়? এই পাঁচজন নেই, আমরা তো শেষ! ওরা পরিকল্পনা করেছে, নতুন খেলোয়াড়দের তুলে এনেছে। শূন্যস্থান পূরণ করেছে। হ্যাঁ, বলতে পারেন, নতুন যারা এসেছে তারা তো সেভাবে ভালো করতে পারছে না। আমরা তো তাদের ভালো করার সুযোগই করে দিই না। যখন তারা ওই সুযোগটা পাবে, অবশ্যই তারা ভালো করবে। কথার কথা, আমরা যখন জিম্বাবুয়ে বা শক্তিমত্তায় কিছুটা পিছিয়ে থাকা দলের সঙ্গে খেলি—ভারত এমন অনেক সিরিজ আছে ওদের দ্বিতীয় সারির দল পাঠিয়ে দিয়েছে। ওরা ওই ভয় করেনি যে হারলে সব শেষ হয়ে যাবে। কারণ, ওরা জানে যে প্রক্রিয়াটা কী। শুধুই শিখিয়েছে আর শিখিয়েছে। এমন ১৫ জনের দল পাঠিয়ে দিন, ওরা যখন নেতৃত্ব দেওয়া শিখবে, ওদের ভালো করার সুযোগ থাকবে। কারণ, ওরা তো লিডারশিপ নিতেই পারে না যখন আমরা (সিনিয়ররা) থাকি। আমাদের যেমন ভুল, আমাদের সিস্টেমেরও গলদ। সব সময়ই একটা ছায়ার ভেতর থাকে ওরা।
প্রশ্ন: লিটন-সৌম্য-সাব্বিরদের মতো প্রতিভাবান ক্রিকেটার বাংলাদেশ দল পেয়েছে, তাঁদের যথেষ্ট সুযোগও দেওয়া হয়েছে। তবু তাঁরা এখনো আস্থার পুরো প্রতিদান দিতে পারেনি। এটার ব্যাখ্যা কী হতে পারে?
সাকিব: হ্যাঁ, তা (প্রতিভাবান ক্রিকেটার) পেয়েছি। ওরা তো কখনো কখনো করে দেখিয়েছে। দেখালেও হয়েছে কী, মনোযোগটা শুধু ওই সময়টাতেই তাদের দিকে দিয়েছি। আমরা (সিনিয়ররা) ভালো-খারাপ খেলি, সব মনোযোগ আমাদের পাঁচজনের ওপরই থেকেছে। আমরা ওই সুযোগটাই ওদের করে দিইনি। বলব না, ওদের কোনো দোষ নেই। ওদেরও অনেক কিছু করার সুযোগ ছিল, দায়িত্ব নেওয়ার জায়গায় আসতে পারত। এমনকি দেখেন প্রিমিয়ার লিগের দলগুলোতেও এই পাঁচজনই পাঁচ দলের অধিনায়ক হবে। যদি এখানে ওই পাঁচজনের পর নতুন পাঁচজন অধিনায়ক হতো, তাদের সঙ্গে নতুন পাঁচ সহ-অধিনায়ক—তাহলে দলটা তৈরি হওয়ার সুযোগ পেত। কোনো সিস্টেমেই যদি তারা না আসতে পারে…। এই যে বিপিএল আসছে, এখানেও ওই পাঁচজনকে (সিনিয়র) নিয়েই সব প্রমোশন। গত কিছুদিনে ধারাবাহিক ভালো খেলছে তাকে ‘এ’ ক্যাটাগরিতে দেওয়া যেত না? দুটো খেলোয়াড়কে যদি দিতেন, তাহলে তারা চিন্তা করত, নাহ, আমিও তাদের মতো একজন। এই চিন্তাগুলো ওদের ভেতর যতক্ষণ প্রবাহিত না করতে পারি, ওরা কীভাবে বড় চিন্তা করবে?
প্রশ্ন: গত কদিনে সিনিয়র ক্রিকেটারদের সঙ্গে টিম ম্যানেজমেন্টের একধরনের দূরত্বের খবর বেশ এসেছে। এটার কারণ কী মনে হয়?
সাকিব: হয়তো সবার জায়গা থেকে যার যার মতো কথা বলছে। কিংবা খবর আসছে। কেন, ঠিক বলতে পারব না। তবে আমার কাছে আসলে কখনো সমস্যা মনে হয়নি। শুধু এই ম্যানেজমেন্টের সঙ্গেই নয়, কোনো ম্যানেজমেন্টের সঙ্গেই নয়। কেউ বলতে পারবে না আমার সঙ্গে কোনো সমস্যা হয়েছে। এখনো পর্যন্ত কোনো কোচিং স্টাফের সঙ্গে নয়।
প্রশ্ন: যখন এই দূরত্বের খবর আসে, তখন বিসিবির কর্মকর্তারা কিংবা বোর্ডের বাইরেও অনেকে মনে করেন, বাংলাদেশ দলে আসলে কড়া কোচ দরকার। এটার সঙ্গে আপনি কি একমত?
সাকিব: (অট্ট হাসি) না, সম্পূর্ণ দ্বিমত পোষণ করি। যদি দেখেন স্টিভ রোডসের চেয়ে ভালো রেকর্ড কোনো কোচের নেই বাংলাদেশ ক্রিকেটে। তিনি কি কড়া হেডমাস্টার ছিলেন? তিনি তো আদর করেও খেলোয়াড়দের কাছ থেকে সেরাটা বের করে নিয়েছেন। ওঁর সময়ে বাংলাদেশ ভালো ফল করেছে। রেকর্ড দেখলে ওর চেয়ে ভালো রেকর্ড আর কোনো কোচের নেই। তাঁর জয়ের শতাংশ মনে হয় ৫৩ বা ৫৫; যেখানে হাথুরুসিংহের ৪০-৪১, রাসেল ডমিঙ্গোর ৪৩ বা এমন কিছু। অথচ সে (স্টিভ রোডস) একদিন জোরেও কথা বলেনি। খেলোয়াড়েরা তাঁর ওর ওপর রেগে আছে, তবু তিনি খেলোয়াড়কে আদর করছেন। কীভাবে এটার সঙ্গে একমত হই?
প্রশ্ন: অনেক সময় এমন শোনা যায়, খেলোয়াড়েরা কথা শুনছেন না…
সাকিব: কে কথা শোনে না, এটা বলুন তো?
প্রশ্ন: বিসিবির কেন্দ্রীয় চুক্তিতে থাকায় শোনার একটা বাধ্যবাধকতা আছে নিশ্চয়ই
সাকিব: শুনতে বাধ্য ঠিক নয়। ধরুন, খেলোয়াড় ও কোচের কথা হচ্ছে। দুজনের দুই মত থাকতে পারে। অনেক সময় দুজনের দ্বিমত থাকে। এটার মানে এই নয় যে তাদের মধ্যে ঝগড়া হচ্ছে। দ্বিমত হওয়ার পরও যখন একটা সিদ্ধান্ত হয়, তখন সবাই সেটা মানে। তার মানে এই নয় যে সব সময়ই কোচের কথা শোনে, সব সময়ই খেলোয়াড়ের কথা শোনে। দুটির মিশ্রণও হয়। বিষয়টা হচ্ছে এটাই। এটার মানে এই নয় যে ঝগড়া হচ্ছে। সাধারণত খারাপ কিছু পেলে আমাদের কেউ না কেউ ভিকটিম হয়। হতে পারে এসব সেটারই অংশ। আর বাস্তবতাও অনেক সময় আমরা ফেস করতে চাই না। তখন ব্লেম গেম হয়। দোষ আপনি তখনই দেবেন, যখন আপনার স্বার্থে আঘাত লাগে। যারাই ব্লেম দিচ্ছে, তাদের স্বার্থে কোথাও কখনো আঘাত লেগেছে।
প্রশ্ন: বাংলাদেশ দলে চারজন সিনিয়র ক্রিকেটার আছেন, যাঁরা ১৫–১৬ বছর একসঙ্গে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলছেন, সে অনুযায়ী জাতীয় দলের বড় কোনো সাফল্য নেই বড় মঞ্চে।
সাকিব: ঠিক, তেমন বড় কোনো সাফল্য নেই। ব্যক্তিগত কিছু বড় অর্জন অবশ্য আছে।
প্রশ্ন: তিনটা এশিয়া কাপের ফাইনাল খেলেছেন। তবু একটি জায়গায় গিয়ে বাংলাদেশ আটকে গেছে। কারণ কী?
সাকিব: এটা বলা আসলে কঠিন। আমরা দ্বিপক্ষীয় সিরিজ ভালো খেলি, অনেক পরিকল্পনা করি। কিন্তু যখন বড় টুর্নামেন্ট বা ইভেন্টে খেলতে যাই, কখনো প্রত্যাশা অনুযায়ী ভালো করতে পারিনি। চাপ একটা কারণ হতে পারে। মেন্টাল ব্লক আছে যে কখনো পারিনি। এটাও একটা কারণ হতে পারে। তবে প্রকৃত কারণ বের করা আমার পক্ষে কঠিন।
প্রশ্ন: খেলার বাইরের প্রসঙ্গ, কদিন আগে একটা প্রতিবেদনে পড়ছিলাম, খেলা ছাড়ার ১৩ বছর পরও সৌরভ গাঙ্গুলী ৩৩টা পণ্যের দূত। আপনার ক্ষেত্রে সংখ্যাটা কত? সৌরভকে টপকে যাওয়া সম্ভব?
সাকিব: (হাসি) বাংলাদেশের বাজার অতটা বড় হয়নি। আমাদের ১৮ কোটি মানুষের বাজার। আর ভারতের ১৫০ কোটি মানুষের বাজার। বুঝতেই পারছেন, ওদের বাজার আমাদের তুলনায় কত বড়। একেক রাজ্যেই বিভিন্ন ধরনের পণ্য আছে। কলকাতায় কত ব্র্যান্ড। মুম্বাইভিত্তিক কত ব্র্যান্ড। আর পুরো ভারতে তো আছেই। আসলে ভারতের কোনো কিছুর সঙ্গে তুলনা করা বোকামি।
প্রশ্ন: কিন্তু বাংলাদেশে পণ্যের দূতিয়ালি বা বিজ্ঞাপনের বাজারে তো আপনার দাপুটে বিচরণ।
সাকিব: আলহামদুলিল্লাহ। এটা মানুষের ভালোবাসা। আমাকে আলাদাভাবে দেখা, সেটা একটা কারণ হতে পারে।
প্রশ্ন: ইদানীং আপনার ব্যবসায়ী পরিচয়টা বেশ সামনে আছে। ক্রিকেট আর ব্যবসা, দুটিতে সমান মনোযোগ ধরে রাখা কঠিন হয় না?
সাকিব: নিজেকে ব্যবসায়ী হিসেবে ভাবি না। ক্রিকেট ঠিক রেখে একটা ভালো জিনিস যদি করা যায়, সেটা করতে পারলে আমার ভালো লাগবে। আরেকটা জিনিস হচ্ছে, আমার একটা লক্ষ্য আছে। আমি মনে করি সেটা আমার পূরণ করা উচিত। কিংবা মনে হচ্ছে, আমি কখনো না কখনো করতে পারব। সে কারণেই কিছু ব্যবসা শুরু করা। যখন খেলোয়াড়ি জীবন শেষ হয়ে যাবে, এসব আরও বড় আকারে সুন্দর করে করতে পারব। যেখানে অনেক মানুষের কর্মসংস্থান হবে। এটা আমি ফিল করি যে এই কাজটা আমার পক্ষে করা সম্ভব। পাঁচ-দশ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান তৈরি করব। সেই কারণেই আসলে এসব শুরু করা। কথার কথা, যদি কোনোভাবে পাঁচ-দশ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান করতে পারি তার মানে আপনি পাঁচ-দশ হাজার মানুষের পরিবারের দেখাশোনা করছেন। ওটা অনেক বড় ব্যাপার। দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা, সমাজে বেকারত্ব দূর করা, ওই সব পরিবারের সদস্যদের ব্যক্তিগত জীবনযাপনে উন্নত করার সুযোগ থাকে। এটা যদি করতে পারি, এর চেয়ে ভালো কাজ মনে হয় না আর আছে। এই উদ্দেশ্যেই ব্যবসাগুলো শুরু করা। জানি না কতটা সফল হব। এগুলো যদি নাও পারি ব্যক্তিগতভাবে নিজে ভালোভাবে চলতে-ফিরতে পারব। তবে আমার মনে হয়, সমাজকে কিছু দেওয়ার মতো অবস্থানে আমি আছি। বাংলাদেশকে কিছু দেওয়ার মতো অবস্থানে আমি আছি। সেটা শুধু ক্রিকেটের মাঠে নয়। যদি সুযোগ থাকে কেন আমি দেব না? যেহেতু আছে, চেষ্টা করছি। দেখা যাক কতটা সফল হতে পারি।
প্রশ্ন: খেলা ছাড়ার পর পুরোপুরি ব্যবসাতেই চলে যাবেন?
সাকিব: জানি না ভবিষ্যতে কী করব বা কী হবে। জীবন নিয়ে অত চিন্তা করি না। তবে এসব করতে পারি, খুব ভালো। না করতে পারলে খারাপ লাগবে এই ভেবে যে ইচ্ছেটা ছিল পূরণ করতে পারিনি। তবে করতে পারলে খুব ভালো লাগবে যে ভালো কাজের সঙ্গে আমি থাকতে পারছি।
প্রশ্ন: ভারত ও পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের প্রধান হয়েছেন দুজন ক্রিকেট কিংবদন্তি। আগামী এক দশকে বিসিবিতে এমনটা কি দেখার সুযোগ আছে?
সাকিব: হতেই পারে। অসম্ভব কিছুই নয়। তবে যে প্রক্রিয়ায় আমাদের (ক্রিকেট প্রশাসক) হয়, একজন খেলোয়াড়ের (যিনি এখনো খেলছেন) পক্ষে এটা কঠিন। ধরুন, আমাদের বোর্ডে ১০০-২০০ কাউন্সিলর আছে। একজন খেলোয়াড়ের পক্ষে এই কাউন্সিলরদের রাজি করানো, ওদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে ভোট আদায় করা কঠিন। এত সহজ না। যে খেলছে না, সংগঠক বা রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত; তাদের জন্য হয়তো একজন খেলোয়াড়ের তুলনায় একটু সহজ। আরেকটা হয়, যদি খেলোয়াড় রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে যায় বা সাংগঠনিকভাবে কোনোভাবে জড়িয়ে থাকে। তখন তার পক্ষে এসব জানা-বোঝা একটু সহজ হয়।
প্রশ্ন: পারিবারিক কারণে ছুটি নেওয়ায় বোর্ডের অনেকে বলেছেন, আপনার জীবনটা একটু কঠিন হয়ে গেছে। বাংলাদেশও এখন আপনার কাছে বিদেশ! দূরে থাকা পরিবার আর খেলার মধ্যে ভারসাম্যটা কীভাবে রাখছেন?
সাকিব আল হাসান: এখনো পর্যন্ত (ভারসাম্য) রাখছি। যেহেতু বছরটা শেষ হয়ে যাচ্ছে, আগামী বছরে বেশ কিছু বড় পরিকল্পনা আছে। সেগুলো যদি ঠিকঠাক বাস্তবায়ন করতে পারি, তাহলে সময়টা হয়তো ঠিকঠাক ম্যানেজ করা সম্ভব হবে।
প্রশ্ন: এটার কারণে কি এখন বেছে বেছে খেলার ভাবনা কাজ করছে?
সাকিব: আমি যে অবস্থায় আছি, বেশি দিন টেস্ট ক্রিকেট ধরে রাখা আমার জন্য কঠিন হবে। এখন আমাকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে কোন সংস্করণ আমি খেলতে চাই, কোন সংস্করণ খেলতে চাই না। আর টেস্ট ক্রিকেটে যেহেতু সময়টা বেশি যায়, এটাই এক সংস্করণ, যেটা নিয়ে আমাকে খুব ভালোভাবে চিন্তা করতে হবে। বোর্ডের সঙ্গে আলোচনা করে যদি সব ঠিকঠাক থাকে, তাহলে টেস্ট থেকে আপাতত নিজেকে সরিয়ে রাখতে হবে। আর ওয়ানডেতে যদি দেখি পয়েন্টের কোনো ব্যাপার নেই (আইসিসি ওয়ানডে সুপার লিগ), সেই সিরিজ যদি না খেলা লাগে, খেললাম না। আর যেগুলো পয়েন্টের বিষয় আছে, সেগুলো খেললাম। পরিকল্পনাগুলো নিয়ে বোর্ডের সঙ্গে কথা বলতে হবে।
প্রশ্ন: ক্যারিয়ারকে দীর্ঘ করতেই নিশ্চয়ই এই পরিকল্পনা?
সাকিব: ধরুন, ২০২২ বিশ্বকাপের পরের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ২০২৪ সালে। সেটা খেলতে পারব কি পারব না, তা জানি না। তখন যদি মনে হয় আরেকটা ফরম্যাট পরিবর্তন করে টেস্ট খেলব, সেটাও করতে পারি। এখন বেছে বেছে খেলতে হবে, এটাই আমার বাস্তবতা।
প্রশ্ন: সামনে নিউজিল্যান্ড সিরিজ। রেকর্ড-পরিসংখ্যানে চোখ রাখলে বলতে হয়, এই দলটা আপনার প্রিয় প্রতিপক্ষ! যে দলের বিপক্ষে টেস্টে আপনার ব্যাটিং গড় ৭৩.৮৫। সেই প্রিয় প্রতিপক্ষের সঙ্গে সিরিজ হাতছাড়া হলে কতটা আফসোস হয়?
সাকিব: আফসোস তো হয়ই। নিউজিল্যান্ড আর ওয়েস্ট ইন্ডিজ—দুটি জায়গা, যেখানে আমি সব সময়ই খেলতে চাই। এ দিয়ে তিনবার (নিউজিল্যান্ড সফর) হাতছাড়া করলাম। একবার বাচ্চা হওয়ার বিষয় ছিল (মার্চ, ২০২১)। একবার বিপিএল (২০১৯) ফাইনালে চোটে পড়েছিলাম। এবার তো ছুটি নিলাম। এটা আমার জন্য অবশ্যই একটু দুঃখজনক, যেখানে আমি সব সময়ই খেলতে যেতে চাই (নিউজিল্যান্ডে)। আমার পাঁচটা টেস্ট সেঞ্চুরির দুটিই ওখানে। আমি ওখানে ব্যাটিং খুব উপভোগ করি। পৃথিবীর যে কয়েকটি জায়গায় ভালো ব্যাটিংয়ের উইকেট মেলে, নিউজিল্যান্ড তার একটা। সেদিক দিয়ে অবশ্যই আমি খুব মিস করি। আর জায়গাটাও আমি অসম্ভব পছন্দ করি ঘুরতে। সব দিক দিয়েই মিস করি। কিন্তু এখন এটাই বাস্তবতা।
প্রশ্ন: কদিন আগে টেস্টে দ্রুততম ২০০ উইকেট আর ৪০০০ রানের রেকর্ড হলো আপনার। ৫৯ টেস্টেই পরিসংখ্যানটা এমন জায়গায় চলে গেছে, যদি আরও বেশি টেস্ট খেলতে পারতেন, কোনো সংশয় ছাড়াই আপনাকে সর্বকালের সেরা অলরাউন্ডার বলা যেত! রেকর্ড-পরিসংখ্যান নিয়ে আপনার ভাবনটা কী? এসব কতটা ভাবায় আপনাকে?
সাকিব: যেটা বললেন, হ্যাঁ, আরও যদি খেলতে পারতাম, এমন পারফরম্যান্স রাখতে পারতাম, আরও অনেক কিছু করার সুযোগ হতো। ক্যারিয়ারটা আরও সুন্দর দেখাত। সেটা চিন্তা করলে আফসোস করতেই পারি। কিন্তু এগুলো নিয়ে কখনো ভাবিনি যে ক্যারিয়ার শেষে আমার রান কত, উইকেট কত হবে। এখন কত আছে, কোথায় যাব—এসব আসলে কখনো আমার চিন্তার ভেতরে ছিল না। এমনকি ওয়ানডে, টি-টোয়েন্টিতে কত উইকেট পাব, এসব কোনো দিন টার্গেটে ছিল না যে ব্যক্তিগতভাবে এটা, ওটা করতে চাই। এখনো জানি না আমার টেস্ট, ওয়ানডেতে রান বা উইকেট কত।
প্রশ্ন: এটা নতুন করে মনে করিয়ে দেওয়ার কিছু নেই যে একজন খেলোয়াড় কতটা গ্রেট, সেটি বিচার করা হয় টেস্ট দিয়ে। অথচ সেই সংস্করণ থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখার ভাবনা কাজ করছে আপনার মনে।
সাকিব: সত্যি কথা, আমি তিন সংস্করণই খেলতে চাই। কিন্তু এখন যে পরিস্থিতি দাঁড়িয়েছে, আমাকে কিছু সময় বের করতে হবে। আর এই বয়সে একজন খেলোয়াড়ের পক্ষে তিন সংস্করণ সমান তালে খেলাটাও কঠিন। বিশ্বে এখন যারা খেলছে, তারাও অনেক বিশ্রাম নিয়ে খেলছে। রোটেশন পলিসিতে যাচ্ছে। আমাকেও ওদিকেই যেতে হবে। আমার আর কোনো অপশন নেই। এটা নিয়ে চিন্তা করারও জায়গাটা নেই।
প্রশ্ন: বিশ্বের সব দলেই সিনিয়র ক্রিকেটারদের আলাদা প্রভাব বা গুরুত্ব থাকে। কিন্তু বাংলাদেশ দলে একটু বেশিই সিনিয়রকেন্দ্রিক দল মনে হয়। যখন কোনো সিরিজে সিনিয়রদের বেশির ভাগ থাকেন না, দলকে অনেক এলোমেলো দেখায়। এটা কি পাইপলাইন সমৃদ্ধ না থাকার কারণে নাকি তরুণ খেলোয়াড়দের সামর্থ্যেই ঘাটতি?
সাকিব: আমার কাছে মনে হয়, আমরা ওদের (তরুণ ক্রিকেটার) সেভাবে প্রমোটই করিনি যে ওরা নিজেদের বড় হিসেবে চিন্তা করবে। আমরা কখনোই ওদের সেই দামটাই দিতে পারিনি, যেখানে ওরা নিজেদের নিয়ে ভাববে যে না আমরাও অনেক কিছু করতে পারব। আমাদের পাঁচজনের দিকে এত বেশি মনোযোগ দিয়েছে সবাই—সেটা সংবাদমাধ্যম বলুন, বোর্ড বলুন কিংবা দর্শক; ওরা (সিনিয়রদের বাইরে) সেভাবে চোখেই পড়েনি। ওরা সেভাবে ফিলই করেনি যে আমিও একজন এই দলের অংশ। হ্যাঁ, দু-এক সময় হয়েছে। কিন্তু যদি সামগ্রিকভাবে দেখেন, সব সময়ই এই কথা। এখনো চলছে। এটা কি সারা জীবন চলতে পারে? শচীন, গাঙ্গুলী, লক্ষ্মণ, দ্রাবিড়, কুম্বলে—এঁরা ভারতীয় দলে একসঙ্গে খেলেছে না? এঁরা যখন বিদায় নিয়েছে, তখন কি ওরা বলেছে, হায়! হায়! আমরা এখন কোথায়? এই পাঁচজন নেই, আমরা তো শেষ! ওরা পরিকল্পনা করেছে, নতুন খেলোয়াড়দের তুলে এনেছে। শূন্যস্থান পূরণ করেছে। হ্যাঁ, বলতে পারেন, নতুন যারা এসেছে তারা তো সেভাবে ভালো করতে পারছে না। আমরা তো তাদের ভালো করার সুযোগই করে দিই না। যখন তারা ওই সুযোগটা পাবে, অবশ্যই তারা ভালো করবে। কথার কথা, আমরা যখন জিম্বাবুয়ে বা শক্তিমত্তায় কিছুটা পিছিয়ে থাকা দলের সঙ্গে খেলি—ভারত এমন অনেক সিরিজ আছে ওদের দ্বিতীয় সারির দল পাঠিয়ে দিয়েছে। ওরা ওই ভয় করেনি যে হারলে সব শেষ হয়ে যাবে। কারণ, ওরা জানে যে প্রক্রিয়াটা কী। শুধুই শিখিয়েছে আর শিখিয়েছে। এমন ১৫ জনের দল পাঠিয়ে দিন, ওরা যখন নেতৃত্ব দেওয়া শিখবে, ওদের ভালো করার সুযোগ থাকবে। কারণ, ওরা তো লিডারশিপ নিতেই পারে না যখন আমরা (সিনিয়ররা) থাকি। আমাদের যেমন ভুল, আমাদের সিস্টেমেরও গলদ। সব সময়ই একটা ছায়ার ভেতর থাকে ওরা।
প্রশ্ন: লিটন-সৌম্য-সাব্বিরদের মতো প্রতিভাবান ক্রিকেটার বাংলাদেশ দল পেয়েছে, তাঁদের যথেষ্ট সুযোগও দেওয়া হয়েছে। তবু তাঁরা এখনো আস্থার পুরো প্রতিদান দিতে পারেনি। এটার ব্যাখ্যা কী হতে পারে?
সাকিব: হ্যাঁ, তা (প্রতিভাবান ক্রিকেটার) পেয়েছি। ওরা তো কখনো কখনো করে দেখিয়েছে। দেখালেও হয়েছে কী, মনোযোগটা শুধু ওই সময়টাতেই তাদের দিকে দিয়েছি। আমরা (সিনিয়ররা) ভালো-খারাপ খেলি, সব মনোযোগ আমাদের পাঁচজনের ওপরই থেকেছে। আমরা ওই সুযোগটাই ওদের করে দিইনি। বলব না, ওদের কোনো দোষ নেই। ওদেরও অনেক কিছু করার সুযোগ ছিল, দায়িত্ব নেওয়ার জায়গায় আসতে পারত। এমনকি দেখেন প্রিমিয়ার লিগের দলগুলোতেও এই পাঁচজনই পাঁচ দলের অধিনায়ক হবে। যদি এখানে ওই পাঁচজনের পর নতুন পাঁচজন অধিনায়ক হতো, তাদের সঙ্গে নতুন পাঁচ সহ-অধিনায়ক—তাহলে দলটা তৈরি হওয়ার সুযোগ পেত। কোনো সিস্টেমেই যদি তারা না আসতে পারে…। এই যে বিপিএল আসছে, এখানেও ওই পাঁচজনকে (সিনিয়র) নিয়েই সব প্রমোশন। গত কিছুদিনে ধারাবাহিক ভালো খেলছে তাকে ‘এ’ ক্যাটাগরিতে দেওয়া যেত না? দুটো খেলোয়াড়কে যদি দিতেন, তাহলে তারা চিন্তা করত, নাহ, আমিও তাদের মতো একজন। এই চিন্তাগুলো ওদের ভেতর যতক্ষণ প্রবাহিত না করতে পারি, ওরা কীভাবে বড় চিন্তা করবে?
প্রশ্ন: গত কদিনে সিনিয়র ক্রিকেটারদের সঙ্গে টিম ম্যানেজমেন্টের একধরনের দূরত্বের খবর বেশ এসেছে। এটার কারণ কী মনে হয়?
সাকিব: হয়তো সবার জায়গা থেকে যার যার মতো কথা বলছে। কিংবা খবর আসছে। কেন, ঠিক বলতে পারব না। তবে আমার কাছে আসলে কখনো সমস্যা মনে হয়নি। শুধু এই ম্যানেজমেন্টের সঙ্গেই নয়, কোনো ম্যানেজমেন্টের সঙ্গেই নয়। কেউ বলতে পারবে না আমার সঙ্গে কোনো সমস্যা হয়েছে। এখনো পর্যন্ত কোনো কোচিং স্টাফের সঙ্গে নয়।
প্রশ্ন: যখন এই দূরত্বের খবর আসে, তখন বিসিবির কর্মকর্তারা কিংবা বোর্ডের বাইরেও অনেকে মনে করেন, বাংলাদেশ দলে আসলে কড়া কোচ দরকার। এটার সঙ্গে আপনি কি একমত?
সাকিব: (অট্ট হাসি) না, সম্পূর্ণ দ্বিমত পোষণ করি। যদি দেখেন স্টিভ রোডসের চেয়ে ভালো রেকর্ড কোনো কোচের নেই বাংলাদেশ ক্রিকেটে। তিনি কি কড়া হেডমাস্টার ছিলেন? তিনি তো আদর করেও খেলোয়াড়দের কাছ থেকে সেরাটা বের করে নিয়েছেন। ওঁর সময়ে বাংলাদেশ ভালো ফল করেছে। রেকর্ড দেখলে ওর চেয়ে ভালো রেকর্ড আর কোনো কোচের নেই। তাঁর জয়ের শতাংশ মনে হয় ৫৩ বা ৫৫; যেখানে হাথুরুসিংহের ৪০-৪১, রাসেল ডমিঙ্গোর ৪৩ বা এমন কিছু। অথচ সে (স্টিভ রোডস) একদিন জোরেও কথা বলেনি। খেলোয়াড়েরা তাঁর ওর ওপর রেগে আছে, তবু তিনি খেলোয়াড়কে আদর করছেন। কীভাবে এটার সঙ্গে একমত হই?
প্রশ্ন: অনেক সময় এমন শোনা যায়, খেলোয়াড়েরা কথা শুনছেন না…
সাকিব: কে কথা শোনে না, এটা বলুন তো?
প্রশ্ন: বিসিবির কেন্দ্রীয় চুক্তিতে থাকায় শোনার একটা বাধ্যবাধকতা আছে নিশ্চয়ই
সাকিব: শুনতে বাধ্য ঠিক নয়। ধরুন, খেলোয়াড় ও কোচের কথা হচ্ছে। দুজনের দুই মত থাকতে পারে। অনেক সময় দুজনের দ্বিমত থাকে। এটার মানে এই নয় যে তাদের মধ্যে ঝগড়া হচ্ছে। দ্বিমত হওয়ার পরও যখন একটা সিদ্ধান্ত হয়, তখন সবাই সেটা মানে। তার মানে এই নয় যে সব সময়ই কোচের কথা শোনে, সব সময়ই খেলোয়াড়ের কথা শোনে। দুটির মিশ্রণও হয়। বিষয়টা হচ্ছে এটাই। এটার মানে এই নয় যে ঝগড়া হচ্ছে। সাধারণত খারাপ কিছু পেলে আমাদের কেউ না কেউ ভিকটিম হয়। হতে পারে এসব সেটারই অংশ। আর বাস্তবতাও অনেক সময় আমরা ফেস করতে চাই না। তখন ব্লেম গেম হয়। দোষ আপনি তখনই দেবেন, যখন আপনার স্বার্থে আঘাত লাগে। যারাই ব্লেম দিচ্ছে, তাদের স্বার্থে কোথাও কখনো আঘাত লেগেছে।
প্রশ্ন: বাংলাদেশ দলে চারজন সিনিয়র ক্রিকেটার আছেন, যাঁরা ১৫–১৬ বছর একসঙ্গে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলছেন, সে অনুযায়ী জাতীয় দলের বড় কোনো সাফল্য নেই বড় মঞ্চে।
সাকিব: ঠিক, তেমন বড় কোনো সাফল্য নেই। ব্যক্তিগত কিছু বড় অর্জন অবশ্য আছে।
প্রশ্ন: তিনটা এশিয়া কাপের ফাইনাল খেলেছেন। তবু একটি জায়গায় গিয়ে বাংলাদেশ আটকে গেছে। কারণ কী?
সাকিব: এটা বলা আসলে কঠিন। আমরা দ্বিপক্ষীয় সিরিজ ভালো খেলি, অনেক পরিকল্পনা করি। কিন্তু যখন বড় টুর্নামেন্ট বা ইভেন্টে খেলতে যাই, কখনো প্রত্যাশা অনুযায়ী ভালো করতে পারিনি। চাপ একটা কারণ হতে পারে। মেন্টাল ব্লক আছে যে কখনো পারিনি। এটাও একটা কারণ হতে পারে। তবে প্রকৃত কারণ বের করা আমার পক্ষে কঠিন।
প্রশ্ন: খেলার বাইরের প্রসঙ্গ, কদিন আগে একটা প্রতিবেদনে পড়ছিলাম, খেলা ছাড়ার ১৩ বছর পরও সৌরভ গাঙ্গুলী ৩৩টা পণ্যের দূত। আপনার ক্ষেত্রে সংখ্যাটা কত? সৌরভকে টপকে যাওয়া সম্ভব?
সাকিব: (হাসি) বাংলাদেশের বাজার অতটা বড় হয়নি। আমাদের ১৮ কোটি মানুষের বাজার। আর ভারতের ১৫০ কোটি মানুষের বাজার। বুঝতেই পারছেন, ওদের বাজার আমাদের তুলনায় কত বড়। একেক রাজ্যেই বিভিন্ন ধরনের পণ্য আছে। কলকাতায় কত ব্র্যান্ড। মুম্বাইভিত্তিক কত ব্র্যান্ড। আর পুরো ভারতে তো আছেই। আসলে ভারতের কোনো কিছুর সঙ্গে তুলনা করা বোকামি।
প্রশ্ন: কিন্তু বাংলাদেশে পণ্যের দূতিয়ালি বা বিজ্ঞাপনের বাজারে তো আপনার দাপুটে বিচরণ।
সাকিব: আলহামদুলিল্লাহ। এটা মানুষের ভালোবাসা। আমাকে আলাদাভাবে দেখা, সেটা একটা কারণ হতে পারে।
প্রশ্ন: ইদানীং আপনার ব্যবসায়ী পরিচয়টা বেশ সামনে আছে। ক্রিকেট আর ব্যবসা, দুটিতে সমান মনোযোগ ধরে রাখা কঠিন হয় না?
সাকিব: নিজেকে ব্যবসায়ী হিসেবে ভাবি না। ক্রিকেট ঠিক রেখে একটা ভালো জিনিস যদি করা যায়, সেটা করতে পারলে আমার ভালো লাগবে। আরেকটা জিনিস হচ্ছে, আমার একটা লক্ষ্য আছে। আমি মনে করি সেটা আমার পূরণ করা উচিত। কিংবা মনে হচ্ছে, আমি কখনো না কখনো করতে পারব। সে কারণেই কিছু ব্যবসা শুরু করা। যখন খেলোয়াড়ি জীবন শেষ হয়ে যাবে, এসব আরও বড় আকারে সুন্দর করে করতে পারব। যেখানে অনেক মানুষের কর্মসংস্থান হবে। এটা আমি ফিল করি যে এই কাজটা আমার পক্ষে করা সম্ভব। পাঁচ-দশ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান তৈরি করব। সেই কারণেই আসলে এসব শুরু করা। কথার কথা, যদি কোনোভাবে পাঁচ-দশ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান করতে পারি তার মানে আপনি পাঁচ-দশ হাজার মানুষের পরিবারের দেখাশোনা করছেন। ওটা অনেক বড় ব্যাপার। দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা, সমাজে বেকারত্ব দূর করা, ওই সব পরিবারের সদস্যদের ব্যক্তিগত জীবনযাপনে উন্নত করার সুযোগ থাকে। এটা যদি করতে পারি, এর চেয়ে ভালো কাজ মনে হয় না আর আছে। এই উদ্দেশ্যেই ব্যবসাগুলো শুরু করা। জানি না কতটা সফল হব। এগুলো যদি নাও পারি ব্যক্তিগতভাবে নিজে ভালোভাবে চলতে-ফিরতে পারব। তবে আমার মনে হয়, সমাজকে কিছু দেওয়ার মতো অবস্থানে আমি আছি। বাংলাদেশকে কিছু দেওয়ার মতো অবস্থানে আমি আছি। সেটা শুধু ক্রিকেটের মাঠে নয়। যদি সুযোগ থাকে কেন আমি দেব না? যেহেতু আছে, চেষ্টা করছি। দেখা যাক কতটা সফল হতে পারি।
প্রশ্ন: খেলা ছাড়ার পর পুরোপুরি ব্যবসাতেই চলে যাবেন?
সাকিব: জানি না ভবিষ্যতে কী করব বা কী হবে। জীবন নিয়ে অত চিন্তা করি না। তবে এসব করতে পারি, খুব ভালো। না করতে পারলে খারাপ লাগবে এই ভেবে যে ইচ্ছেটা ছিল পূরণ করতে পারিনি। তবে করতে পারলে খুব ভালো লাগবে যে ভালো কাজের সঙ্গে আমি থাকতে পারছি।
প্রশ্ন: ভারত ও পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের প্রধান হয়েছেন দুজন ক্রিকেট কিংবদন্তি। আগামী এক দশকে বিসিবিতে এমনটা কি দেখার সুযোগ আছে?
সাকিব: হতেই পারে। অসম্ভব কিছুই নয়। তবে যে প্রক্রিয়ায় আমাদের (ক্রিকেট প্রশাসক) হয়, একজন খেলোয়াড়ের (যিনি এখনো খেলছেন) পক্ষে এটা কঠিন। ধরুন, আমাদের বোর্ডে ১০০-২০০ কাউন্সিলর আছে। একজন খেলোয়াড়ের পক্ষে এই কাউন্সিলরদের রাজি করানো, ওদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে ভোট আদায় করা কঠিন। এত সহজ না। যে খেলছে না, সংগঠক বা রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত; তাদের জন্য হয়তো একজন খেলোয়াড়ের তুলনায় একটু সহজ। আরেকটা হয়, যদি খেলোয়াড় রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে যায় বা সাংগঠনিকভাবে কোনোভাবে জড়িয়ে থাকে। তখন তার পক্ষে এসব জানা-বোঝা একটু সহজ হয়।

বাংলাদেশ ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় বিজ্ঞাপন সাকিব আল হাসান। এই মুহূর্তে বাঁহাতি অলরাউন্ডার ছুটি কাটাতে আছেন যুক্তরাষ্ট্রে। যুক্তরাষ্ট্রে পরিবারের কাছে যাওয়ার আগে সাকিব সময় দিলেন আজকের পত্রিকাকে। দুই দিন আগে রানা আব্বাসকে দেওয়া দীর্ঘ সাক্ষাৎকারে বাঁহাতি অলরাউন্ডার বললেন খেলা ও খেলার বাইরের অনেক কিছুই।
রানা আব্বাস

প্রশ্ন: পারিবারিক কারণে ছুটি নেওয়ায় বোর্ডের অনেকে বলেছেন, আপনার জীবনটা একটু কঠিন হয়ে গেছে। বাংলাদেশও এখন আপনার কাছে বিদেশ! দূরে থাকা পরিবার আর খেলার মধ্যে ভারসাম্যটা কীভাবে রাখছেন?
সাকিব আল হাসান: এখনো পর্যন্ত (ভারসাম্য) রাখছি। যেহেতু বছরটা শেষ হয়ে যাচ্ছে, আগামী বছরে বেশ কিছু বড় পরিকল্পনা আছে। সেগুলো যদি ঠিকঠাক বাস্তবায়ন করতে পারি, তাহলে সময়টা হয়তো ঠিকঠাক ম্যানেজ করা সম্ভব হবে।
প্রশ্ন: এটার কারণে কি এখন বেছে বেছে খেলার ভাবনা কাজ করছে?
সাকিব: আমি যে অবস্থায় আছি, বেশি দিন টেস্ট ক্রিকেট ধরে রাখা আমার জন্য কঠিন হবে। এখন আমাকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে কোন সংস্করণ আমি খেলতে চাই, কোন সংস্করণ খেলতে চাই না। আর টেস্ট ক্রিকেটে যেহেতু সময়টা বেশি যায়, এটাই এক সংস্করণ, যেটা নিয়ে আমাকে খুব ভালোভাবে চিন্তা করতে হবে। বোর্ডের সঙ্গে আলোচনা করে যদি সব ঠিকঠাক থাকে, তাহলে টেস্ট থেকে আপাতত নিজেকে সরিয়ে রাখতে হবে। আর ওয়ানডেতে যদি দেখি পয়েন্টের কোনো ব্যাপার নেই (আইসিসি ওয়ানডে সুপার লিগ), সেই সিরিজ যদি না খেলা লাগে, খেললাম না। আর যেগুলো পয়েন্টের বিষয় আছে, সেগুলো খেললাম। পরিকল্পনাগুলো নিয়ে বোর্ডের সঙ্গে কথা বলতে হবে।
প্রশ্ন: ক্যারিয়ারকে দীর্ঘ করতেই নিশ্চয়ই এই পরিকল্পনা?
সাকিব: ধরুন, ২০২২ বিশ্বকাপের পরের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ২০২৪ সালে। সেটা খেলতে পারব কি পারব না, তা জানি না। তখন যদি মনে হয় আরেকটা ফরম্যাট পরিবর্তন করে টেস্ট খেলব, সেটাও করতে পারি। এখন বেছে বেছে খেলতে হবে, এটাই আমার বাস্তবতা।
প্রশ্ন: সামনে নিউজিল্যান্ড সিরিজ। রেকর্ড-পরিসংখ্যানে চোখ রাখলে বলতে হয়, এই দলটা আপনার প্রিয় প্রতিপক্ষ! যে দলের বিপক্ষে টেস্টে আপনার ব্যাটিং গড় ৭৩.৮৫। সেই প্রিয় প্রতিপক্ষের সঙ্গে সিরিজ হাতছাড়া হলে কতটা আফসোস হয়?
সাকিব: আফসোস তো হয়ই। নিউজিল্যান্ড আর ওয়েস্ট ইন্ডিজ—দুটি জায়গা, যেখানে আমি সব সময়ই খেলতে চাই। এ দিয়ে তিনবার (নিউজিল্যান্ড সফর) হাতছাড়া করলাম। একবার বাচ্চা হওয়ার বিষয় ছিল (মার্চ, ২০২১)। একবার বিপিএল (২০১৯) ফাইনালে চোটে পড়েছিলাম। এবার তো ছুটি নিলাম। এটা আমার জন্য অবশ্যই একটু দুঃখজনক, যেখানে আমি সব সময়ই খেলতে যেতে চাই (নিউজিল্যান্ডে)। আমার পাঁচটা টেস্ট সেঞ্চুরির দুটিই ওখানে। আমি ওখানে ব্যাটিং খুব উপভোগ করি। পৃথিবীর যে কয়েকটি জায়গায় ভালো ব্যাটিংয়ের উইকেট মেলে, নিউজিল্যান্ড তার একটা। সেদিক দিয়ে অবশ্যই আমি খুব মিস করি। আর জায়গাটাও আমি অসম্ভব পছন্দ করি ঘুরতে। সব দিক দিয়েই মিস করি। কিন্তু এখন এটাই বাস্তবতা।
প্রশ্ন: কদিন আগে টেস্টে দ্রুততম ২০০ উইকেট আর ৪০০০ রানের রেকর্ড হলো আপনার। ৫৯ টেস্টেই পরিসংখ্যানটা এমন জায়গায় চলে গেছে, যদি আরও বেশি টেস্ট খেলতে পারতেন, কোনো সংশয় ছাড়াই আপনাকে সর্বকালের সেরা অলরাউন্ডার বলা যেত! রেকর্ড-পরিসংখ্যান নিয়ে আপনার ভাবনটা কী? এসব কতটা ভাবায় আপনাকে?
সাকিব: যেটা বললেন, হ্যাঁ, আরও যদি খেলতে পারতাম, এমন পারফরম্যান্স রাখতে পারতাম, আরও অনেক কিছু করার সুযোগ হতো। ক্যারিয়ারটা আরও সুন্দর দেখাত। সেটা চিন্তা করলে আফসোস করতেই পারি। কিন্তু এগুলো নিয়ে কখনো ভাবিনি যে ক্যারিয়ার শেষে আমার রান কত, উইকেট কত হবে। এখন কত আছে, কোথায় যাব—এসব আসলে কখনো আমার চিন্তার ভেতরে ছিল না। এমনকি ওয়ানডে, টি-টোয়েন্টিতে কত উইকেট পাব, এসব কোনো দিন টার্গেটে ছিল না যে ব্যক্তিগতভাবে এটা, ওটা করতে চাই। এখনো জানি না আমার টেস্ট, ওয়ানডেতে রান বা উইকেট কত।
প্রশ্ন: এটা নতুন করে মনে করিয়ে দেওয়ার কিছু নেই যে একজন খেলোয়াড় কতটা গ্রেট, সেটি বিচার করা হয় টেস্ট দিয়ে। অথচ সেই সংস্করণ থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখার ভাবনা কাজ করছে আপনার মনে।
সাকিব: সত্যি কথা, আমি তিন সংস্করণই খেলতে চাই। কিন্তু এখন যে পরিস্থিতি দাঁড়িয়েছে, আমাকে কিছু সময় বের করতে হবে। আর এই বয়সে একজন খেলোয়াড়ের পক্ষে তিন সংস্করণ সমান তালে খেলাটাও কঠিন। বিশ্বে এখন যারা খেলছে, তারাও অনেক বিশ্রাম নিয়ে খেলছে। রোটেশন পলিসিতে যাচ্ছে। আমাকেও ওদিকেই যেতে হবে। আমার আর কোনো অপশন নেই। এটা নিয়ে চিন্তা করারও জায়গাটা নেই।
প্রশ্ন: বিশ্বের সব দলেই সিনিয়র ক্রিকেটারদের আলাদা প্রভাব বা গুরুত্ব থাকে। কিন্তু বাংলাদেশ দলে একটু বেশিই সিনিয়রকেন্দ্রিক দল মনে হয়। যখন কোনো সিরিজে সিনিয়রদের বেশির ভাগ থাকেন না, দলকে অনেক এলোমেলো দেখায়। এটা কি পাইপলাইন সমৃদ্ধ না থাকার কারণে নাকি তরুণ খেলোয়াড়দের সামর্থ্যেই ঘাটতি?
সাকিব: আমার কাছে মনে হয়, আমরা ওদের (তরুণ ক্রিকেটার) সেভাবে প্রমোটই করিনি যে ওরা নিজেদের বড় হিসেবে চিন্তা করবে। আমরা কখনোই ওদের সেই দামটাই দিতে পারিনি, যেখানে ওরা নিজেদের নিয়ে ভাববে যে না আমরাও অনেক কিছু করতে পারব। আমাদের পাঁচজনের দিকে এত বেশি মনোযোগ দিয়েছে সবাই—সেটা সংবাদমাধ্যম বলুন, বোর্ড বলুন কিংবা দর্শক; ওরা (সিনিয়রদের বাইরে) সেভাবে চোখেই পড়েনি। ওরা সেভাবে ফিলই করেনি যে আমিও একজন এই দলের অংশ। হ্যাঁ, দু-এক সময় হয়েছে। কিন্তু যদি সামগ্রিকভাবে দেখেন, সব সময়ই এই কথা। এখনো চলছে। এটা কি সারা জীবন চলতে পারে? শচীন, গাঙ্গুলী, লক্ষ্মণ, দ্রাবিড়, কুম্বলে—এঁরা ভারতীয় দলে একসঙ্গে খেলেছে না? এঁরা যখন বিদায় নিয়েছে, তখন কি ওরা বলেছে, হায়! হায়! আমরা এখন কোথায়? এই পাঁচজন নেই, আমরা তো শেষ! ওরা পরিকল্পনা করেছে, নতুন খেলোয়াড়দের তুলে এনেছে। শূন্যস্থান পূরণ করেছে। হ্যাঁ, বলতে পারেন, নতুন যারা এসেছে তারা তো সেভাবে ভালো করতে পারছে না। আমরা তো তাদের ভালো করার সুযোগই করে দিই না। যখন তারা ওই সুযোগটা পাবে, অবশ্যই তারা ভালো করবে। কথার কথা, আমরা যখন জিম্বাবুয়ে বা শক্তিমত্তায় কিছুটা পিছিয়ে থাকা দলের সঙ্গে খেলি—ভারত এমন অনেক সিরিজ আছে ওদের দ্বিতীয় সারির দল পাঠিয়ে দিয়েছে। ওরা ওই ভয় করেনি যে হারলে সব শেষ হয়ে যাবে। কারণ, ওরা জানে যে প্রক্রিয়াটা কী। শুধুই শিখিয়েছে আর শিখিয়েছে। এমন ১৫ জনের দল পাঠিয়ে দিন, ওরা যখন নেতৃত্ব দেওয়া শিখবে, ওদের ভালো করার সুযোগ থাকবে। কারণ, ওরা তো লিডারশিপ নিতেই পারে না যখন আমরা (সিনিয়ররা) থাকি। আমাদের যেমন ভুল, আমাদের সিস্টেমেরও গলদ। সব সময়ই একটা ছায়ার ভেতর থাকে ওরা।
প্রশ্ন: লিটন-সৌম্য-সাব্বিরদের মতো প্রতিভাবান ক্রিকেটার বাংলাদেশ দল পেয়েছে, তাঁদের যথেষ্ট সুযোগও দেওয়া হয়েছে। তবু তাঁরা এখনো আস্থার পুরো প্রতিদান দিতে পারেনি। এটার ব্যাখ্যা কী হতে পারে?
সাকিব: হ্যাঁ, তা (প্রতিভাবান ক্রিকেটার) পেয়েছি। ওরা তো কখনো কখনো করে দেখিয়েছে। দেখালেও হয়েছে কী, মনোযোগটা শুধু ওই সময়টাতেই তাদের দিকে দিয়েছি। আমরা (সিনিয়ররা) ভালো-খারাপ খেলি, সব মনোযোগ আমাদের পাঁচজনের ওপরই থেকেছে। আমরা ওই সুযোগটাই ওদের করে দিইনি। বলব না, ওদের কোনো দোষ নেই। ওদেরও অনেক কিছু করার সুযোগ ছিল, দায়িত্ব নেওয়ার জায়গায় আসতে পারত। এমনকি দেখেন প্রিমিয়ার লিগের দলগুলোতেও এই পাঁচজনই পাঁচ দলের অধিনায়ক হবে। যদি এখানে ওই পাঁচজনের পর নতুন পাঁচজন অধিনায়ক হতো, তাদের সঙ্গে নতুন পাঁচ সহ-অধিনায়ক—তাহলে দলটা তৈরি হওয়ার সুযোগ পেত। কোনো সিস্টেমেই যদি তারা না আসতে পারে…। এই যে বিপিএল আসছে, এখানেও ওই পাঁচজনকে (সিনিয়র) নিয়েই সব প্রমোশন। গত কিছুদিনে ধারাবাহিক ভালো খেলছে তাকে ‘এ’ ক্যাটাগরিতে দেওয়া যেত না? দুটো খেলোয়াড়কে যদি দিতেন, তাহলে তারা চিন্তা করত, নাহ, আমিও তাদের মতো একজন। এই চিন্তাগুলো ওদের ভেতর যতক্ষণ প্রবাহিত না করতে পারি, ওরা কীভাবে বড় চিন্তা করবে?
প্রশ্ন: গত কদিনে সিনিয়র ক্রিকেটারদের সঙ্গে টিম ম্যানেজমেন্টের একধরনের দূরত্বের খবর বেশ এসেছে। এটার কারণ কী মনে হয়?
সাকিব: হয়তো সবার জায়গা থেকে যার যার মতো কথা বলছে। কিংবা খবর আসছে। কেন, ঠিক বলতে পারব না। তবে আমার কাছে আসলে কখনো সমস্যা মনে হয়নি। শুধু এই ম্যানেজমেন্টের সঙ্গেই নয়, কোনো ম্যানেজমেন্টের সঙ্গেই নয়। কেউ বলতে পারবে না আমার সঙ্গে কোনো সমস্যা হয়েছে। এখনো পর্যন্ত কোনো কোচিং স্টাফের সঙ্গে নয়।
প্রশ্ন: যখন এই দূরত্বের খবর আসে, তখন বিসিবির কর্মকর্তারা কিংবা বোর্ডের বাইরেও অনেকে মনে করেন, বাংলাদেশ দলে আসলে কড়া কোচ দরকার। এটার সঙ্গে আপনি কি একমত?
সাকিব: (অট্ট হাসি) না, সম্পূর্ণ দ্বিমত পোষণ করি। যদি দেখেন স্টিভ রোডসের চেয়ে ভালো রেকর্ড কোনো কোচের নেই বাংলাদেশ ক্রিকেটে। তিনি কি কড়া হেডমাস্টার ছিলেন? তিনি তো আদর করেও খেলোয়াড়দের কাছ থেকে সেরাটা বের করে নিয়েছেন। ওঁর সময়ে বাংলাদেশ ভালো ফল করেছে। রেকর্ড দেখলে ওর চেয়ে ভালো রেকর্ড আর কোনো কোচের নেই। তাঁর জয়ের শতাংশ মনে হয় ৫৩ বা ৫৫; যেখানে হাথুরুসিংহের ৪০-৪১, রাসেল ডমিঙ্গোর ৪৩ বা এমন কিছু। অথচ সে (স্টিভ রোডস) একদিন জোরেও কথা বলেনি। খেলোয়াড়েরা তাঁর ওর ওপর রেগে আছে, তবু তিনি খেলোয়াড়কে আদর করছেন। কীভাবে এটার সঙ্গে একমত হই?
প্রশ্ন: অনেক সময় এমন শোনা যায়, খেলোয়াড়েরা কথা শুনছেন না…
সাকিব: কে কথা শোনে না, এটা বলুন তো?
প্রশ্ন: বিসিবির কেন্দ্রীয় চুক্তিতে থাকায় শোনার একটা বাধ্যবাধকতা আছে নিশ্চয়ই
সাকিব: শুনতে বাধ্য ঠিক নয়। ধরুন, খেলোয়াড় ও কোচের কথা হচ্ছে। দুজনের দুই মত থাকতে পারে। অনেক সময় দুজনের দ্বিমত থাকে। এটার মানে এই নয় যে তাদের মধ্যে ঝগড়া হচ্ছে। দ্বিমত হওয়ার পরও যখন একটা সিদ্ধান্ত হয়, তখন সবাই সেটা মানে। তার মানে এই নয় যে সব সময়ই কোচের কথা শোনে, সব সময়ই খেলোয়াড়ের কথা শোনে। দুটির মিশ্রণও হয়। বিষয়টা হচ্ছে এটাই। এটার মানে এই নয় যে ঝগড়া হচ্ছে। সাধারণত খারাপ কিছু পেলে আমাদের কেউ না কেউ ভিকটিম হয়। হতে পারে এসব সেটারই অংশ। আর বাস্তবতাও অনেক সময় আমরা ফেস করতে চাই না। তখন ব্লেম গেম হয়। দোষ আপনি তখনই দেবেন, যখন আপনার স্বার্থে আঘাত লাগে। যারাই ব্লেম দিচ্ছে, তাদের স্বার্থে কোথাও কখনো আঘাত লেগেছে।
প্রশ্ন: বাংলাদেশ দলে চারজন সিনিয়র ক্রিকেটার আছেন, যাঁরা ১৫–১৬ বছর একসঙ্গে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলছেন, সে অনুযায়ী জাতীয় দলের বড় কোনো সাফল্য নেই বড় মঞ্চে।
সাকিব: ঠিক, তেমন বড় কোনো সাফল্য নেই। ব্যক্তিগত কিছু বড় অর্জন অবশ্য আছে।
প্রশ্ন: তিনটা এশিয়া কাপের ফাইনাল খেলেছেন। তবু একটি জায়গায় গিয়ে বাংলাদেশ আটকে গেছে। কারণ কী?
সাকিব: এটা বলা আসলে কঠিন। আমরা দ্বিপক্ষীয় সিরিজ ভালো খেলি, অনেক পরিকল্পনা করি। কিন্তু যখন বড় টুর্নামেন্ট বা ইভেন্টে খেলতে যাই, কখনো প্রত্যাশা অনুযায়ী ভালো করতে পারিনি। চাপ একটা কারণ হতে পারে। মেন্টাল ব্লক আছে যে কখনো পারিনি। এটাও একটা কারণ হতে পারে। তবে প্রকৃত কারণ বের করা আমার পক্ষে কঠিন।
প্রশ্ন: খেলার বাইরের প্রসঙ্গ, কদিন আগে একটা প্রতিবেদনে পড়ছিলাম, খেলা ছাড়ার ১৩ বছর পরও সৌরভ গাঙ্গুলী ৩৩টা পণ্যের দূত। আপনার ক্ষেত্রে সংখ্যাটা কত? সৌরভকে টপকে যাওয়া সম্ভব?
সাকিব: (হাসি) বাংলাদেশের বাজার অতটা বড় হয়নি। আমাদের ১৮ কোটি মানুষের বাজার। আর ভারতের ১৫০ কোটি মানুষের বাজার। বুঝতেই পারছেন, ওদের বাজার আমাদের তুলনায় কত বড়। একেক রাজ্যেই বিভিন্ন ধরনের পণ্য আছে। কলকাতায় কত ব্র্যান্ড। মুম্বাইভিত্তিক কত ব্র্যান্ড। আর পুরো ভারতে তো আছেই। আসলে ভারতের কোনো কিছুর সঙ্গে তুলনা করা বোকামি।
প্রশ্ন: কিন্তু বাংলাদেশে পণ্যের দূতিয়ালি বা বিজ্ঞাপনের বাজারে তো আপনার দাপুটে বিচরণ।
সাকিব: আলহামদুলিল্লাহ। এটা মানুষের ভালোবাসা। আমাকে আলাদাভাবে দেখা, সেটা একটা কারণ হতে পারে।
প্রশ্ন: ইদানীং আপনার ব্যবসায়ী পরিচয়টা বেশ সামনে আছে। ক্রিকেট আর ব্যবসা, দুটিতে সমান মনোযোগ ধরে রাখা কঠিন হয় না?
সাকিব: নিজেকে ব্যবসায়ী হিসেবে ভাবি না। ক্রিকেট ঠিক রেখে একটা ভালো জিনিস যদি করা যায়, সেটা করতে পারলে আমার ভালো লাগবে। আরেকটা জিনিস হচ্ছে, আমার একটা লক্ষ্য আছে। আমি মনে করি সেটা আমার পূরণ করা উচিত। কিংবা মনে হচ্ছে, আমি কখনো না কখনো করতে পারব। সে কারণেই কিছু ব্যবসা শুরু করা। যখন খেলোয়াড়ি জীবন শেষ হয়ে যাবে, এসব আরও বড় আকারে সুন্দর করে করতে পারব। যেখানে অনেক মানুষের কর্মসংস্থান হবে। এটা আমি ফিল করি যে এই কাজটা আমার পক্ষে করা সম্ভব। পাঁচ-দশ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান তৈরি করব। সেই কারণেই আসলে এসব শুরু করা। কথার কথা, যদি কোনোভাবে পাঁচ-দশ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান করতে পারি তার মানে আপনি পাঁচ-দশ হাজার মানুষের পরিবারের দেখাশোনা করছেন। ওটা অনেক বড় ব্যাপার। দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা, সমাজে বেকারত্ব দূর করা, ওই সব পরিবারের সদস্যদের ব্যক্তিগত জীবনযাপনে উন্নত করার সুযোগ থাকে। এটা যদি করতে পারি, এর চেয়ে ভালো কাজ মনে হয় না আর আছে। এই উদ্দেশ্যেই ব্যবসাগুলো শুরু করা। জানি না কতটা সফল হব। এগুলো যদি নাও পারি ব্যক্তিগতভাবে নিজে ভালোভাবে চলতে-ফিরতে পারব। তবে আমার মনে হয়, সমাজকে কিছু দেওয়ার মতো অবস্থানে আমি আছি। বাংলাদেশকে কিছু দেওয়ার মতো অবস্থানে আমি আছি। সেটা শুধু ক্রিকেটের মাঠে নয়। যদি সুযোগ থাকে কেন আমি দেব না? যেহেতু আছে, চেষ্টা করছি। দেখা যাক কতটা সফল হতে পারি।
প্রশ্ন: খেলা ছাড়ার পর পুরোপুরি ব্যবসাতেই চলে যাবেন?
সাকিব: জানি না ভবিষ্যতে কী করব বা কী হবে। জীবন নিয়ে অত চিন্তা করি না। তবে এসব করতে পারি, খুব ভালো। না করতে পারলে খারাপ লাগবে এই ভেবে যে ইচ্ছেটা ছিল পূরণ করতে পারিনি। তবে করতে পারলে খুব ভালো লাগবে যে ভালো কাজের সঙ্গে আমি থাকতে পারছি।
প্রশ্ন: ভারত ও পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের প্রধান হয়েছেন দুজন ক্রিকেট কিংবদন্তি। আগামী এক দশকে বিসিবিতে এমনটা কি দেখার সুযোগ আছে?
সাকিব: হতেই পারে। অসম্ভব কিছুই নয়। তবে যে প্রক্রিয়ায় আমাদের (ক্রিকেট প্রশাসক) হয়, একজন খেলোয়াড়ের (যিনি এখনো খেলছেন) পক্ষে এটা কঠিন। ধরুন, আমাদের বোর্ডে ১০০-২০০ কাউন্সিলর আছে। একজন খেলোয়াড়ের পক্ষে এই কাউন্সিলরদের রাজি করানো, ওদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে ভোট আদায় করা কঠিন। এত সহজ না। যে খেলছে না, সংগঠক বা রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত; তাদের জন্য হয়তো একজন খেলোয়াড়ের তুলনায় একটু সহজ। আরেকটা হয়, যদি খেলোয়াড় রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে যায় বা সাংগঠনিকভাবে কোনোভাবে জড়িয়ে থাকে। তখন তার পক্ষে এসব জানা-বোঝা একটু সহজ হয়।
প্রশ্ন: পারিবারিক কারণে ছুটি নেওয়ায় বোর্ডের অনেকে বলেছেন, আপনার জীবনটা একটু কঠিন হয়ে গেছে। বাংলাদেশও এখন আপনার কাছে বিদেশ! দূরে থাকা পরিবার আর খেলার মধ্যে ভারসাম্যটা কীভাবে রাখছেন?
সাকিব আল হাসান: এখনো পর্যন্ত (ভারসাম্য) রাখছি। যেহেতু বছরটা শেষ হয়ে যাচ্ছে, আগামী বছরে বেশ কিছু বড় পরিকল্পনা আছে। সেগুলো যদি ঠিকঠাক বাস্তবায়ন করতে পারি, তাহলে সময়টা হয়তো ঠিকঠাক ম্যানেজ করা সম্ভব হবে।
প্রশ্ন: এটার কারণে কি এখন বেছে বেছে খেলার ভাবনা কাজ করছে?
সাকিব: আমি যে অবস্থায় আছি, বেশি দিন টেস্ট ক্রিকেট ধরে রাখা আমার জন্য কঠিন হবে। এখন আমাকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে কোন সংস্করণ আমি খেলতে চাই, কোন সংস্করণ খেলতে চাই না। আর টেস্ট ক্রিকেটে যেহেতু সময়টা বেশি যায়, এটাই এক সংস্করণ, যেটা নিয়ে আমাকে খুব ভালোভাবে চিন্তা করতে হবে। বোর্ডের সঙ্গে আলোচনা করে যদি সব ঠিকঠাক থাকে, তাহলে টেস্ট থেকে আপাতত নিজেকে সরিয়ে রাখতে হবে। আর ওয়ানডেতে যদি দেখি পয়েন্টের কোনো ব্যাপার নেই (আইসিসি ওয়ানডে সুপার লিগ), সেই সিরিজ যদি না খেলা লাগে, খেললাম না। আর যেগুলো পয়েন্টের বিষয় আছে, সেগুলো খেললাম। পরিকল্পনাগুলো নিয়ে বোর্ডের সঙ্গে কথা বলতে হবে।
প্রশ্ন: ক্যারিয়ারকে দীর্ঘ করতেই নিশ্চয়ই এই পরিকল্পনা?
সাকিব: ধরুন, ২০২২ বিশ্বকাপের পরের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ২০২৪ সালে। সেটা খেলতে পারব কি পারব না, তা জানি না। তখন যদি মনে হয় আরেকটা ফরম্যাট পরিবর্তন করে টেস্ট খেলব, সেটাও করতে পারি। এখন বেছে বেছে খেলতে হবে, এটাই আমার বাস্তবতা।
প্রশ্ন: সামনে নিউজিল্যান্ড সিরিজ। রেকর্ড-পরিসংখ্যানে চোখ রাখলে বলতে হয়, এই দলটা আপনার প্রিয় প্রতিপক্ষ! যে দলের বিপক্ষে টেস্টে আপনার ব্যাটিং গড় ৭৩.৮৫। সেই প্রিয় প্রতিপক্ষের সঙ্গে সিরিজ হাতছাড়া হলে কতটা আফসোস হয়?
সাকিব: আফসোস তো হয়ই। নিউজিল্যান্ড আর ওয়েস্ট ইন্ডিজ—দুটি জায়গা, যেখানে আমি সব সময়ই খেলতে চাই। এ দিয়ে তিনবার (নিউজিল্যান্ড সফর) হাতছাড়া করলাম। একবার বাচ্চা হওয়ার বিষয় ছিল (মার্চ, ২০২১)। একবার বিপিএল (২০১৯) ফাইনালে চোটে পড়েছিলাম। এবার তো ছুটি নিলাম। এটা আমার জন্য অবশ্যই একটু দুঃখজনক, যেখানে আমি সব সময়ই খেলতে যেতে চাই (নিউজিল্যান্ডে)। আমার পাঁচটা টেস্ট সেঞ্চুরির দুটিই ওখানে। আমি ওখানে ব্যাটিং খুব উপভোগ করি। পৃথিবীর যে কয়েকটি জায়গায় ভালো ব্যাটিংয়ের উইকেট মেলে, নিউজিল্যান্ড তার একটা। সেদিক দিয়ে অবশ্যই আমি খুব মিস করি। আর জায়গাটাও আমি অসম্ভব পছন্দ করি ঘুরতে। সব দিক দিয়েই মিস করি। কিন্তু এখন এটাই বাস্তবতা।
প্রশ্ন: কদিন আগে টেস্টে দ্রুততম ২০০ উইকেট আর ৪০০০ রানের রেকর্ড হলো আপনার। ৫৯ টেস্টেই পরিসংখ্যানটা এমন জায়গায় চলে গেছে, যদি আরও বেশি টেস্ট খেলতে পারতেন, কোনো সংশয় ছাড়াই আপনাকে সর্বকালের সেরা অলরাউন্ডার বলা যেত! রেকর্ড-পরিসংখ্যান নিয়ে আপনার ভাবনটা কী? এসব কতটা ভাবায় আপনাকে?
সাকিব: যেটা বললেন, হ্যাঁ, আরও যদি খেলতে পারতাম, এমন পারফরম্যান্স রাখতে পারতাম, আরও অনেক কিছু করার সুযোগ হতো। ক্যারিয়ারটা আরও সুন্দর দেখাত। সেটা চিন্তা করলে আফসোস করতেই পারি। কিন্তু এগুলো নিয়ে কখনো ভাবিনি যে ক্যারিয়ার শেষে আমার রান কত, উইকেট কত হবে। এখন কত আছে, কোথায় যাব—এসব আসলে কখনো আমার চিন্তার ভেতরে ছিল না। এমনকি ওয়ানডে, টি-টোয়েন্টিতে কত উইকেট পাব, এসব কোনো দিন টার্গেটে ছিল না যে ব্যক্তিগতভাবে এটা, ওটা করতে চাই। এখনো জানি না আমার টেস্ট, ওয়ানডেতে রান বা উইকেট কত।
প্রশ্ন: এটা নতুন করে মনে করিয়ে দেওয়ার কিছু নেই যে একজন খেলোয়াড় কতটা গ্রেট, সেটি বিচার করা হয় টেস্ট দিয়ে। অথচ সেই সংস্করণ থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখার ভাবনা কাজ করছে আপনার মনে।
সাকিব: সত্যি কথা, আমি তিন সংস্করণই খেলতে চাই। কিন্তু এখন যে পরিস্থিতি দাঁড়িয়েছে, আমাকে কিছু সময় বের করতে হবে। আর এই বয়সে একজন খেলোয়াড়ের পক্ষে তিন সংস্করণ সমান তালে খেলাটাও কঠিন। বিশ্বে এখন যারা খেলছে, তারাও অনেক বিশ্রাম নিয়ে খেলছে। রোটেশন পলিসিতে যাচ্ছে। আমাকেও ওদিকেই যেতে হবে। আমার আর কোনো অপশন নেই। এটা নিয়ে চিন্তা করারও জায়গাটা নেই।
প্রশ্ন: বিশ্বের সব দলেই সিনিয়র ক্রিকেটারদের আলাদা প্রভাব বা গুরুত্ব থাকে। কিন্তু বাংলাদেশ দলে একটু বেশিই সিনিয়রকেন্দ্রিক দল মনে হয়। যখন কোনো সিরিজে সিনিয়রদের বেশির ভাগ থাকেন না, দলকে অনেক এলোমেলো দেখায়। এটা কি পাইপলাইন সমৃদ্ধ না থাকার কারণে নাকি তরুণ খেলোয়াড়দের সামর্থ্যেই ঘাটতি?
সাকিব: আমার কাছে মনে হয়, আমরা ওদের (তরুণ ক্রিকেটার) সেভাবে প্রমোটই করিনি যে ওরা নিজেদের বড় হিসেবে চিন্তা করবে। আমরা কখনোই ওদের সেই দামটাই দিতে পারিনি, যেখানে ওরা নিজেদের নিয়ে ভাববে যে না আমরাও অনেক কিছু করতে পারব। আমাদের পাঁচজনের দিকে এত বেশি মনোযোগ দিয়েছে সবাই—সেটা সংবাদমাধ্যম বলুন, বোর্ড বলুন কিংবা দর্শক; ওরা (সিনিয়রদের বাইরে) সেভাবে চোখেই পড়েনি। ওরা সেভাবে ফিলই করেনি যে আমিও একজন এই দলের অংশ। হ্যাঁ, দু-এক সময় হয়েছে। কিন্তু যদি সামগ্রিকভাবে দেখেন, সব সময়ই এই কথা। এখনো চলছে। এটা কি সারা জীবন চলতে পারে? শচীন, গাঙ্গুলী, লক্ষ্মণ, দ্রাবিড়, কুম্বলে—এঁরা ভারতীয় দলে একসঙ্গে খেলেছে না? এঁরা যখন বিদায় নিয়েছে, তখন কি ওরা বলেছে, হায়! হায়! আমরা এখন কোথায়? এই পাঁচজন নেই, আমরা তো শেষ! ওরা পরিকল্পনা করেছে, নতুন খেলোয়াড়দের তুলে এনেছে। শূন্যস্থান পূরণ করেছে। হ্যাঁ, বলতে পারেন, নতুন যারা এসেছে তারা তো সেভাবে ভালো করতে পারছে না। আমরা তো তাদের ভালো করার সুযোগই করে দিই না। যখন তারা ওই সুযোগটা পাবে, অবশ্যই তারা ভালো করবে। কথার কথা, আমরা যখন জিম্বাবুয়ে বা শক্তিমত্তায় কিছুটা পিছিয়ে থাকা দলের সঙ্গে খেলি—ভারত এমন অনেক সিরিজ আছে ওদের দ্বিতীয় সারির দল পাঠিয়ে দিয়েছে। ওরা ওই ভয় করেনি যে হারলে সব শেষ হয়ে যাবে। কারণ, ওরা জানে যে প্রক্রিয়াটা কী। শুধুই শিখিয়েছে আর শিখিয়েছে। এমন ১৫ জনের দল পাঠিয়ে দিন, ওরা যখন নেতৃত্ব দেওয়া শিখবে, ওদের ভালো করার সুযোগ থাকবে। কারণ, ওরা তো লিডারশিপ নিতেই পারে না যখন আমরা (সিনিয়ররা) থাকি। আমাদের যেমন ভুল, আমাদের সিস্টেমেরও গলদ। সব সময়ই একটা ছায়ার ভেতর থাকে ওরা।
প্রশ্ন: লিটন-সৌম্য-সাব্বিরদের মতো প্রতিভাবান ক্রিকেটার বাংলাদেশ দল পেয়েছে, তাঁদের যথেষ্ট সুযোগও দেওয়া হয়েছে। তবু তাঁরা এখনো আস্থার পুরো প্রতিদান দিতে পারেনি। এটার ব্যাখ্যা কী হতে পারে?
সাকিব: হ্যাঁ, তা (প্রতিভাবান ক্রিকেটার) পেয়েছি। ওরা তো কখনো কখনো করে দেখিয়েছে। দেখালেও হয়েছে কী, মনোযোগটা শুধু ওই সময়টাতেই তাদের দিকে দিয়েছি। আমরা (সিনিয়ররা) ভালো-খারাপ খেলি, সব মনোযোগ আমাদের পাঁচজনের ওপরই থেকেছে। আমরা ওই সুযোগটাই ওদের করে দিইনি। বলব না, ওদের কোনো দোষ নেই। ওদেরও অনেক কিছু করার সুযোগ ছিল, দায়িত্ব নেওয়ার জায়গায় আসতে পারত। এমনকি দেখেন প্রিমিয়ার লিগের দলগুলোতেও এই পাঁচজনই পাঁচ দলের অধিনায়ক হবে। যদি এখানে ওই পাঁচজনের পর নতুন পাঁচজন অধিনায়ক হতো, তাদের সঙ্গে নতুন পাঁচ সহ-অধিনায়ক—তাহলে দলটা তৈরি হওয়ার সুযোগ পেত। কোনো সিস্টেমেই যদি তারা না আসতে পারে…। এই যে বিপিএল আসছে, এখানেও ওই পাঁচজনকে (সিনিয়র) নিয়েই সব প্রমোশন। গত কিছুদিনে ধারাবাহিক ভালো খেলছে তাকে ‘এ’ ক্যাটাগরিতে দেওয়া যেত না? দুটো খেলোয়াড়কে যদি দিতেন, তাহলে তারা চিন্তা করত, নাহ, আমিও তাদের মতো একজন। এই চিন্তাগুলো ওদের ভেতর যতক্ষণ প্রবাহিত না করতে পারি, ওরা কীভাবে বড় চিন্তা করবে?
প্রশ্ন: গত কদিনে সিনিয়র ক্রিকেটারদের সঙ্গে টিম ম্যানেজমেন্টের একধরনের দূরত্বের খবর বেশ এসেছে। এটার কারণ কী মনে হয়?
সাকিব: হয়তো সবার জায়গা থেকে যার যার মতো কথা বলছে। কিংবা খবর আসছে। কেন, ঠিক বলতে পারব না। তবে আমার কাছে আসলে কখনো সমস্যা মনে হয়নি। শুধু এই ম্যানেজমেন্টের সঙ্গেই নয়, কোনো ম্যানেজমেন্টের সঙ্গেই নয়। কেউ বলতে পারবে না আমার সঙ্গে কোনো সমস্যা হয়েছে। এখনো পর্যন্ত কোনো কোচিং স্টাফের সঙ্গে নয়।
প্রশ্ন: যখন এই দূরত্বের খবর আসে, তখন বিসিবির কর্মকর্তারা কিংবা বোর্ডের বাইরেও অনেকে মনে করেন, বাংলাদেশ দলে আসলে কড়া কোচ দরকার। এটার সঙ্গে আপনি কি একমত?
সাকিব: (অট্ট হাসি) না, সম্পূর্ণ দ্বিমত পোষণ করি। যদি দেখেন স্টিভ রোডসের চেয়ে ভালো রেকর্ড কোনো কোচের নেই বাংলাদেশ ক্রিকেটে। তিনি কি কড়া হেডমাস্টার ছিলেন? তিনি তো আদর করেও খেলোয়াড়দের কাছ থেকে সেরাটা বের করে নিয়েছেন। ওঁর সময়ে বাংলাদেশ ভালো ফল করেছে। রেকর্ড দেখলে ওর চেয়ে ভালো রেকর্ড আর কোনো কোচের নেই। তাঁর জয়ের শতাংশ মনে হয় ৫৩ বা ৫৫; যেখানে হাথুরুসিংহের ৪০-৪১, রাসেল ডমিঙ্গোর ৪৩ বা এমন কিছু। অথচ সে (স্টিভ রোডস) একদিন জোরেও কথা বলেনি। খেলোয়াড়েরা তাঁর ওর ওপর রেগে আছে, তবু তিনি খেলোয়াড়কে আদর করছেন। কীভাবে এটার সঙ্গে একমত হই?
প্রশ্ন: অনেক সময় এমন শোনা যায়, খেলোয়াড়েরা কথা শুনছেন না…
সাকিব: কে কথা শোনে না, এটা বলুন তো?
প্রশ্ন: বিসিবির কেন্দ্রীয় চুক্তিতে থাকায় শোনার একটা বাধ্যবাধকতা আছে নিশ্চয়ই
সাকিব: শুনতে বাধ্য ঠিক নয়। ধরুন, খেলোয়াড় ও কোচের কথা হচ্ছে। দুজনের দুই মত থাকতে পারে। অনেক সময় দুজনের দ্বিমত থাকে। এটার মানে এই নয় যে তাদের মধ্যে ঝগড়া হচ্ছে। দ্বিমত হওয়ার পরও যখন একটা সিদ্ধান্ত হয়, তখন সবাই সেটা মানে। তার মানে এই নয় যে সব সময়ই কোচের কথা শোনে, সব সময়ই খেলোয়াড়ের কথা শোনে। দুটির মিশ্রণও হয়। বিষয়টা হচ্ছে এটাই। এটার মানে এই নয় যে ঝগড়া হচ্ছে। সাধারণত খারাপ কিছু পেলে আমাদের কেউ না কেউ ভিকটিম হয়। হতে পারে এসব সেটারই অংশ। আর বাস্তবতাও অনেক সময় আমরা ফেস করতে চাই না। তখন ব্লেম গেম হয়। দোষ আপনি তখনই দেবেন, যখন আপনার স্বার্থে আঘাত লাগে। যারাই ব্লেম দিচ্ছে, তাদের স্বার্থে কোথাও কখনো আঘাত লেগেছে।
প্রশ্ন: বাংলাদেশ দলে চারজন সিনিয়র ক্রিকেটার আছেন, যাঁরা ১৫–১৬ বছর একসঙ্গে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলছেন, সে অনুযায়ী জাতীয় দলের বড় কোনো সাফল্য নেই বড় মঞ্চে।
সাকিব: ঠিক, তেমন বড় কোনো সাফল্য নেই। ব্যক্তিগত কিছু বড় অর্জন অবশ্য আছে।
প্রশ্ন: তিনটা এশিয়া কাপের ফাইনাল খেলেছেন। তবু একটি জায়গায় গিয়ে বাংলাদেশ আটকে গেছে। কারণ কী?
সাকিব: এটা বলা আসলে কঠিন। আমরা দ্বিপক্ষীয় সিরিজ ভালো খেলি, অনেক পরিকল্পনা করি। কিন্তু যখন বড় টুর্নামেন্ট বা ইভেন্টে খেলতে যাই, কখনো প্রত্যাশা অনুযায়ী ভালো করতে পারিনি। চাপ একটা কারণ হতে পারে। মেন্টাল ব্লক আছে যে কখনো পারিনি। এটাও একটা কারণ হতে পারে। তবে প্রকৃত কারণ বের করা আমার পক্ষে কঠিন।
প্রশ্ন: খেলার বাইরের প্রসঙ্গ, কদিন আগে একটা প্রতিবেদনে পড়ছিলাম, খেলা ছাড়ার ১৩ বছর পরও সৌরভ গাঙ্গুলী ৩৩টা পণ্যের দূত। আপনার ক্ষেত্রে সংখ্যাটা কত? সৌরভকে টপকে যাওয়া সম্ভব?
সাকিব: (হাসি) বাংলাদেশের বাজার অতটা বড় হয়নি। আমাদের ১৮ কোটি মানুষের বাজার। আর ভারতের ১৫০ কোটি মানুষের বাজার। বুঝতেই পারছেন, ওদের বাজার আমাদের তুলনায় কত বড়। একেক রাজ্যেই বিভিন্ন ধরনের পণ্য আছে। কলকাতায় কত ব্র্যান্ড। মুম্বাইভিত্তিক কত ব্র্যান্ড। আর পুরো ভারতে তো আছেই। আসলে ভারতের কোনো কিছুর সঙ্গে তুলনা করা বোকামি।
প্রশ্ন: কিন্তু বাংলাদেশে পণ্যের দূতিয়ালি বা বিজ্ঞাপনের বাজারে তো আপনার দাপুটে বিচরণ।
সাকিব: আলহামদুলিল্লাহ। এটা মানুষের ভালোবাসা। আমাকে আলাদাভাবে দেখা, সেটা একটা কারণ হতে পারে।
প্রশ্ন: ইদানীং আপনার ব্যবসায়ী পরিচয়টা বেশ সামনে আছে। ক্রিকেট আর ব্যবসা, দুটিতে সমান মনোযোগ ধরে রাখা কঠিন হয় না?
সাকিব: নিজেকে ব্যবসায়ী হিসেবে ভাবি না। ক্রিকেট ঠিক রেখে একটা ভালো জিনিস যদি করা যায়, সেটা করতে পারলে আমার ভালো লাগবে। আরেকটা জিনিস হচ্ছে, আমার একটা লক্ষ্য আছে। আমি মনে করি সেটা আমার পূরণ করা উচিত। কিংবা মনে হচ্ছে, আমি কখনো না কখনো করতে পারব। সে কারণেই কিছু ব্যবসা শুরু করা। যখন খেলোয়াড়ি জীবন শেষ হয়ে যাবে, এসব আরও বড় আকারে সুন্দর করে করতে পারব। যেখানে অনেক মানুষের কর্মসংস্থান হবে। এটা আমি ফিল করি যে এই কাজটা আমার পক্ষে করা সম্ভব। পাঁচ-দশ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান তৈরি করব। সেই কারণেই আসলে এসব শুরু করা। কথার কথা, যদি কোনোভাবে পাঁচ-দশ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান করতে পারি তার মানে আপনি পাঁচ-দশ হাজার মানুষের পরিবারের দেখাশোনা করছেন। ওটা অনেক বড় ব্যাপার। দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা, সমাজে বেকারত্ব দূর করা, ওই সব পরিবারের সদস্যদের ব্যক্তিগত জীবনযাপনে উন্নত করার সুযোগ থাকে। এটা যদি করতে পারি, এর চেয়ে ভালো কাজ মনে হয় না আর আছে। এই উদ্দেশ্যেই ব্যবসাগুলো শুরু করা। জানি না কতটা সফল হব। এগুলো যদি নাও পারি ব্যক্তিগতভাবে নিজে ভালোভাবে চলতে-ফিরতে পারব। তবে আমার মনে হয়, সমাজকে কিছু দেওয়ার মতো অবস্থানে আমি আছি। বাংলাদেশকে কিছু দেওয়ার মতো অবস্থানে আমি আছি। সেটা শুধু ক্রিকেটের মাঠে নয়। যদি সুযোগ থাকে কেন আমি দেব না? যেহেতু আছে, চেষ্টা করছি। দেখা যাক কতটা সফল হতে পারি।
প্রশ্ন: খেলা ছাড়ার পর পুরোপুরি ব্যবসাতেই চলে যাবেন?
সাকিব: জানি না ভবিষ্যতে কী করব বা কী হবে। জীবন নিয়ে অত চিন্তা করি না। তবে এসব করতে পারি, খুব ভালো। না করতে পারলে খারাপ লাগবে এই ভেবে যে ইচ্ছেটা ছিল পূরণ করতে পারিনি। তবে করতে পারলে খুব ভালো লাগবে যে ভালো কাজের সঙ্গে আমি থাকতে পারছি।
প্রশ্ন: ভারত ও পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের প্রধান হয়েছেন দুজন ক্রিকেট কিংবদন্তি। আগামী এক দশকে বিসিবিতে এমনটা কি দেখার সুযোগ আছে?
সাকিব: হতেই পারে। অসম্ভব কিছুই নয়। তবে যে প্রক্রিয়ায় আমাদের (ক্রিকেট প্রশাসক) হয়, একজন খেলোয়াড়ের (যিনি এখনো খেলছেন) পক্ষে এটা কঠিন। ধরুন, আমাদের বোর্ডে ১০০-২০০ কাউন্সিলর আছে। একজন খেলোয়াড়ের পক্ষে এই কাউন্সিলরদের রাজি করানো, ওদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে ভোট আদায় করা কঠিন। এত সহজ না। যে খেলছে না, সংগঠক বা রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত; তাদের জন্য হয়তো একজন খেলোয়াড়ের তুলনায় একটু সহজ। আরেকটা হয়, যদি খেলোয়াড় রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে যায় বা সাংগঠনিকভাবে কোনোভাবে জড়িয়ে থাকে। তখন তার পক্ষে এসব জানা-বোঝা একটু সহজ হয়।

এশিয়ান কাপ বাছাইয়ের ম্যাচ আয়োজন করে আরও একবার জরিমানার মুখে পড়ল বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে)। বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচের দ্বিতীয়ার্ধের খেলা ১ মিনিট ৪৩ সেকেন্ড দেরিতে শুরু হওয়ায় বাফুফেকে ১২৫০ ডলার জরিমানা করেছে এশিয়ান ফুটবল কনফেডারেশন (এএফসি)।
৮ ঘণ্টা আগে
সংযুক্ত আরব আমিরাতের আন্তর্জাতিক লিগ টি-টোয়েন্টি যেন বাংলাদেশ ক্রিকেটারদের মিলনমেলা। সাকিব আল হাসান, মোস্তাফিজুর রহমান, তাসকিন আহমেদ—বাংলাদেশের তিন তারকা ক্রিকেটার খেলছেন এখন আমিরাতের এই লিগে। কদিন আগে সাকিব-মোস্তাফিজের একটি ছবি ‘দ্য বাংলা’ ক্যাপশনে পোস্ট করেছিল সাকিবের দল এমআই এমিরেটস।
৯ ঘণ্টা আগে
লাতিন আমেরিকার ফুটবলে সহিংসতা নতুন কিছু নয়। মহাদেশীয় শ্রেষ্ঠত্বের টুর্নামেন্ট কোপা আমেরিকাতেই ঘটে মারামারির ঘটনা। স্থানীয় টুর্নামেন্টে সহিংসতার কারণে তো প্রায়ই খবরের শিরোনামে আসে লাতিন আমেরিকার ফুটবল। কলম্বিয়ায় এক ফুটবল টুর্নামেন্টের ফাইনালে ভয়াবহ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।
১০ ঘণ্টা আগে
ইউনেক্স-সানরাইজ বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল চ্যালেঞ্জ টুর্নামেন্টে মিশ্র দ্বৈত বিভাগে ফাইনালে উঠেছেন বাংলাদেশের আল আমিন জুমার ও ঊর্মি আক্তার। আজ সেমিফাইনালে থাইল্যান্ডের কুনলাপাথ লোথোং ও সারিসা জানপেং জুটিকে হারিয়েছেন ২১-১১ ও ২১-১৪ গেমে।
১০ ঘণ্টা আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

এশিয়ান কাপ বাছাইয়ের ম্যাচ আয়োজন করে আরও একবার জরিমানার মুখে পড়ল বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে)। বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচের দ্বিতীয়ার্ধের খেলা ১ মিনিট ৪৩ সেকেন্ড দেরিতে শুরু হওয়ায় বাফুফেকে ১২৫০ ডলার জরিমানা করেছে এশিয়ান ফুটবল কনফেডারেশন (এএফসি)। বাংলাদেশি মুদ্রায় যা প্রায় ১ লাখ ৫৩ হাজার টাকা। গত ১৭ ডিসেম্বর এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে এএফসির শৃঙ্খলা ও নীতি কমিটি।
গত ১৮ নভেম্বর জাতীয় স্টেডিয়ামে ভারতকে ১-০ গোলে হারিয়েছে বাংলাদেশ। এশিয়ান কাপ বাছাইয়ের ম্যাচটি নিয়মরক্ষার হলেও উন্মাদনার কমতি ছিল না। ২২ বছর পর ভারতকে হারানোর স্বাদ পেয়েছে বাংলাদেশ৷ একমাত্র জয়সূচক গোলটি আসে ম্যাচের প্রথমার্ধে শেখ মোরসালিনের পা থেকে। কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধে সময়মতো খেলা মাঠে গড়াতে পারেননি রেফারি।
একই কারণে সর্বভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনকেও এক হাজার ডলার জরিমানা করা হয়েছে। নির্দিষ্ট সময়ের ভেতর এই অপরাধ দুবার করায় বাংলাদেশের জরিমানার অঙ্ক বেশি ধরা হয়েছে। এর আগে গত জুনে ঘরের মাঠে সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে ম্যাচের দ্বিতীয়ার্ধের খেলা শুরু হতে দুই মিনিট বিলম্ব হওয়ায় দেড় হাজার ডলার জরিমানা করা হয়।
এএফসির শৃঙ্খলা নীতিমালার ১১.৩ ধারা অনুযায়ী, ৩০ দিনের মধ্যে জরিমানার টাকা পরিশোধ করতে হবে দুই ফেডারেশনের। এশিয়ান কাপ বাছাইয়ে বাংলাদেশের শেষ ম্যাচ ৩১ মার্চ সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে। সিঙ্গাপুর ইতোমধ্যে ১১ পয়েন্ট নিয়ে এশিয়ান কাপে খেলা নিশ্চিত করেছে। ৫ পয়েন্ট নিয়ে চার দলের মধ্যে ‘সি’ গ্রুপে বাংলাদেশের অবস্থান তিনে।

এশিয়ান কাপ বাছাইয়ের ম্যাচ আয়োজন করে আরও একবার জরিমানার মুখে পড়ল বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে)। বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচের দ্বিতীয়ার্ধের খেলা ১ মিনিট ৪৩ সেকেন্ড দেরিতে শুরু হওয়ায় বাফুফেকে ১২৫০ ডলার জরিমানা করেছে এশিয়ান ফুটবল কনফেডারেশন (এএফসি)। বাংলাদেশি মুদ্রায় যা প্রায় ১ লাখ ৫৩ হাজার টাকা। গত ১৭ ডিসেম্বর এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে এএফসির শৃঙ্খলা ও নীতি কমিটি।
গত ১৮ নভেম্বর জাতীয় স্টেডিয়ামে ভারতকে ১-০ গোলে হারিয়েছে বাংলাদেশ। এশিয়ান কাপ বাছাইয়ের ম্যাচটি নিয়মরক্ষার হলেও উন্মাদনার কমতি ছিল না। ২২ বছর পর ভারতকে হারানোর স্বাদ পেয়েছে বাংলাদেশ৷ একমাত্র জয়সূচক গোলটি আসে ম্যাচের প্রথমার্ধে শেখ মোরসালিনের পা থেকে। কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধে সময়মতো খেলা মাঠে গড়াতে পারেননি রেফারি।
একই কারণে সর্বভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনকেও এক হাজার ডলার জরিমানা করা হয়েছে। নির্দিষ্ট সময়ের ভেতর এই অপরাধ দুবার করায় বাংলাদেশের জরিমানার অঙ্ক বেশি ধরা হয়েছে। এর আগে গত জুনে ঘরের মাঠে সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে ম্যাচের দ্বিতীয়ার্ধের খেলা শুরু হতে দুই মিনিট বিলম্ব হওয়ায় দেড় হাজার ডলার জরিমানা করা হয়।
এএফসির শৃঙ্খলা নীতিমালার ১১.৩ ধারা অনুযায়ী, ৩০ দিনের মধ্যে জরিমানার টাকা পরিশোধ করতে হবে দুই ফেডারেশনের। এশিয়ান কাপ বাছাইয়ে বাংলাদেশের শেষ ম্যাচ ৩১ মার্চ সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে। সিঙ্গাপুর ইতোমধ্যে ১১ পয়েন্ট নিয়ে এশিয়ান কাপে খেলা নিশ্চিত করেছে। ৫ পয়েন্ট নিয়ে চার দলের মধ্যে ‘সি’ গ্রুপে বাংলাদেশের অবস্থান তিনে।

বাংলাদেশ ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় বিজ্ঞাপন সাকিব আল হাসান। এই মুহূর্তে বাঁহাতি অলরাউন্ডার ছুটি কাটাতে আছেন যুক্তরাষ্ট্রে। যুক্তরাষ্ট্রে পরিবারের কাছে যাওয়ার আগে সাকিব সময় দিলেন আজকের পত্রিকাকে। দুই দিন আগে রানা আব্বাসকে দেওয়া দীর্ঘ সাক্ষাৎকারে বাঁহাতি অলরাউন্ডার বললেন খেলা ও খেলার বাইরের অনেক কিছুই
২৪ ডিসেম্বর ২০২১
সংযুক্ত আরব আমিরাতের আন্তর্জাতিক লিগ টি-টোয়েন্টি যেন বাংলাদেশ ক্রিকেটারদের মিলনমেলা। সাকিব আল হাসান, মোস্তাফিজুর রহমান, তাসকিন আহমেদ—বাংলাদেশের তিন তারকা ক্রিকেটার খেলছেন এখন আমিরাতের এই লিগে। কদিন আগে সাকিব-মোস্তাফিজের একটি ছবি ‘দ্য বাংলা’ ক্যাপশনে পোস্ট করেছিল সাকিবের দল এমআই এমিরেটস।
৯ ঘণ্টা আগে
লাতিন আমেরিকার ফুটবলে সহিংসতা নতুন কিছু নয়। মহাদেশীয় শ্রেষ্ঠত্বের টুর্নামেন্ট কোপা আমেরিকাতেই ঘটে মারামারির ঘটনা। স্থানীয় টুর্নামেন্টে সহিংসতার কারণে তো প্রায়ই খবরের শিরোনামে আসে লাতিন আমেরিকার ফুটবল। কলম্বিয়ায় এক ফুটবল টুর্নামেন্টের ফাইনালে ভয়াবহ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।
১০ ঘণ্টা আগে
ইউনেক্স-সানরাইজ বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল চ্যালেঞ্জ টুর্নামেন্টে মিশ্র দ্বৈত বিভাগে ফাইনালে উঠেছেন বাংলাদেশের আল আমিন জুমার ও ঊর্মি আক্তার। আজ সেমিফাইনালে থাইল্যান্ডের কুনলাপাথ লোথোং ও সারিসা জানপেং জুটিকে হারিয়েছেন ২১-১১ ও ২১-১৪ গেমে।
১০ ঘণ্টা আগেক্রীড়া ডেস্ক

সংযুক্ত আরব আমিরাতের আন্তর্জাতিক লিগ টি-টোয়েন্টি যেন বাংলাদেশ ক্রিকেটারদের মিলনমেলা। সাকিব আল হাসান, মোস্তাফিজুর রহমান, তাসকিন আহমেদ—বাংলাদেশের তিন তারকা ক্রিকেটার খেলছেন এখন আমিরাতের এই লিগে। কদিন আগে সাকিব-মোস্তাফিজের একটি ছবি ‘দ্য বাংলা’ ক্যাপশনে পোস্ট করেছিল সাকিবের দল এমআই এমিরেটস। আজ দুবাই আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে মুখোমুখি হয়েছেন তাসকিন-মোস্তাফিজ।
বাংলাদেশের তিন তারকা সাকিব, তাসকিন, মোস্তাফিজ এবারই প্রথমবারের মতো আইএল টি-টোয়েন্টিতে খেলছেন। এই তিন বাংলাদেশির মধ্যে মোস্তাফিজ নিয়মিত বিরতিতে উইকেট নিচ্ছেন। এদিকে তাসকিন উইকেট তেমন পাচ্ছেন না। উপরন্তু মুক্ত হস্তে রান বিলিয়ে দিচ্ছেন। দুবাইয়ে আজ মোস্তাফিজের দুবাই ক্যাপিটালসের বিপক্ষে তাসকিন ৩ উইকেট হলেও ১০ ইকোনমিতে বোলিং করেছেন।
দুবাই ক্যাপিটালসের বিপক্ষে টস জিতে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন শারজা ওয়ারিয়র্সের অধিনায়ক সিকান্দার রাজা। দলীয় ৩ রানে ভেঙে যায় দুবাই ক্যাপিটালসের উদ্বোধনী জুটি। ইনিংসের পঞ্চম বলে দুবাইয়ের ওপেনার শায়ান জাহাঙ্গীরকে (১) এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলেন রাজা। দ্বিতীয় উইকেটে এরপর ৩১ বলে ৪৭ রানের জুটি গড়েন জর্ডান কক্স ও সেদিকউল্লাহ আতাল। ষষ্ঠ ওভারের শেষ বলে কক্সকে (২৮) ফিরিয়ে জুটি ভাঙেন তাসকিন।
দুবাই ক্যাপিটালসের ইনিংস সর্বোচ্চ ৪৭ রানের জুটি গড়েছেন কক্স ও আতাল। আরেকটি চল্লিশোর্ধ্ব রানের জুটিতেও অবদান রয়েছে আতালের। চতুর্থ উইকেটে আফগানিস্তান দলের সতীর্থ মোহাম্মদ নবির সঙ্গে ২৬ বলে ৪২ রানের জুটি গড়তে অবদান রেখেছেন আতাল। ওপেনিংয়ে নামা আতাল আউট হয়েছেন পঞ্চম ব্যাটার হিসেবে। ১৮তম ওভারের দ্বিতীয় বলে আতালের উইকেট নিয়েছেন তাসকিন। ৪৪ বলে ২ চার ও ৩ ছক্কায় ৬৬ রানের ইনিংস খেলেছেন আফগান এই ব্যাটার। নির্ধারিত ২০ ওভারে ৬ উইকেটে ১৮০ রান করে দুবাই ক্যাপিটালস। দুবাইয়ের ইনিংস সর্বোচ্চ ৬৬ রান এসেছে আতালের ব্যাট থেকে।
শারজা ওয়ারিয়র্সের তাসকিন ৪ ওভারে ৪০ রানে নিয়েছেন ৪ উইকেট। যার মধ্যে ইনিংসের শেষ ওভারে ১২ রান খরচ করে পেয়েছেন ১ উইকেট। একটি করে উইকেট পেয়েছেন রাজা, মাথিসা পাতিরানা ও আদিল রশিদ।

সংযুক্ত আরব আমিরাতের আন্তর্জাতিক লিগ টি-টোয়েন্টি যেন বাংলাদেশ ক্রিকেটারদের মিলনমেলা। সাকিব আল হাসান, মোস্তাফিজুর রহমান, তাসকিন আহমেদ—বাংলাদেশের তিন তারকা ক্রিকেটার খেলছেন এখন আমিরাতের এই লিগে। কদিন আগে সাকিব-মোস্তাফিজের একটি ছবি ‘দ্য বাংলা’ ক্যাপশনে পোস্ট করেছিল সাকিবের দল এমআই এমিরেটস। আজ দুবাই আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে মুখোমুখি হয়েছেন তাসকিন-মোস্তাফিজ।
বাংলাদেশের তিন তারকা সাকিব, তাসকিন, মোস্তাফিজ এবারই প্রথমবারের মতো আইএল টি-টোয়েন্টিতে খেলছেন। এই তিন বাংলাদেশির মধ্যে মোস্তাফিজ নিয়মিত বিরতিতে উইকেট নিচ্ছেন। এদিকে তাসকিন উইকেট তেমন পাচ্ছেন না। উপরন্তু মুক্ত হস্তে রান বিলিয়ে দিচ্ছেন। দুবাইয়ে আজ মোস্তাফিজের দুবাই ক্যাপিটালসের বিপক্ষে তাসকিন ৩ উইকেট হলেও ১০ ইকোনমিতে বোলিং করেছেন।
দুবাই ক্যাপিটালসের বিপক্ষে টস জিতে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন শারজা ওয়ারিয়র্সের অধিনায়ক সিকান্দার রাজা। দলীয় ৩ রানে ভেঙে যায় দুবাই ক্যাপিটালসের উদ্বোধনী জুটি। ইনিংসের পঞ্চম বলে দুবাইয়ের ওপেনার শায়ান জাহাঙ্গীরকে (১) এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলেন রাজা। দ্বিতীয় উইকেটে এরপর ৩১ বলে ৪৭ রানের জুটি গড়েন জর্ডান কক্স ও সেদিকউল্লাহ আতাল। ষষ্ঠ ওভারের শেষ বলে কক্সকে (২৮) ফিরিয়ে জুটি ভাঙেন তাসকিন।
দুবাই ক্যাপিটালসের ইনিংস সর্বোচ্চ ৪৭ রানের জুটি গড়েছেন কক্স ও আতাল। আরেকটি চল্লিশোর্ধ্ব রানের জুটিতেও অবদান রয়েছে আতালের। চতুর্থ উইকেটে আফগানিস্তান দলের সতীর্থ মোহাম্মদ নবির সঙ্গে ২৬ বলে ৪২ রানের জুটি গড়তে অবদান রেখেছেন আতাল। ওপেনিংয়ে নামা আতাল আউট হয়েছেন পঞ্চম ব্যাটার হিসেবে। ১৮তম ওভারের দ্বিতীয় বলে আতালের উইকেট নিয়েছেন তাসকিন। ৪৪ বলে ২ চার ও ৩ ছক্কায় ৬৬ রানের ইনিংস খেলেছেন আফগান এই ব্যাটার। নির্ধারিত ২০ ওভারে ৬ উইকেটে ১৮০ রান করে দুবাই ক্যাপিটালস। দুবাইয়ের ইনিংস সর্বোচ্চ ৬৬ রান এসেছে আতালের ব্যাট থেকে।
শারজা ওয়ারিয়র্সের তাসকিন ৪ ওভারে ৪০ রানে নিয়েছেন ৪ উইকেট। যার মধ্যে ইনিংসের শেষ ওভারে ১২ রান খরচ করে পেয়েছেন ১ উইকেট। একটি করে উইকেট পেয়েছেন রাজা, মাথিসা পাতিরানা ও আদিল রশিদ।

বাংলাদেশ ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় বিজ্ঞাপন সাকিব আল হাসান। এই মুহূর্তে বাঁহাতি অলরাউন্ডার ছুটি কাটাতে আছেন যুক্তরাষ্ট্রে। যুক্তরাষ্ট্রে পরিবারের কাছে যাওয়ার আগে সাকিব সময় দিলেন আজকের পত্রিকাকে। দুই দিন আগে রানা আব্বাসকে দেওয়া দীর্ঘ সাক্ষাৎকারে বাঁহাতি অলরাউন্ডার বললেন খেলা ও খেলার বাইরের অনেক কিছুই
২৪ ডিসেম্বর ২০২১
এশিয়ান কাপ বাছাইয়ের ম্যাচ আয়োজন করে আরও একবার জরিমানার মুখে পড়ল বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে)। বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচের দ্বিতীয়ার্ধের খেলা ১ মিনিট ৪৩ সেকেন্ড দেরিতে শুরু হওয়ায় বাফুফেকে ১২৫০ ডলার জরিমানা করেছে এশিয়ান ফুটবল কনফেডারেশন (এএফসি)।
৮ ঘণ্টা আগে
লাতিন আমেরিকার ফুটবলে সহিংসতা নতুন কিছু নয়। মহাদেশীয় শ্রেষ্ঠত্বের টুর্নামেন্ট কোপা আমেরিকাতেই ঘটে মারামারির ঘটনা। স্থানীয় টুর্নামেন্টে সহিংসতার কারণে তো প্রায়ই খবরের শিরোনামে আসে লাতিন আমেরিকার ফুটবল। কলম্বিয়ায় এক ফুটবল টুর্নামেন্টের ফাইনালে ভয়াবহ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।
১০ ঘণ্টা আগে
ইউনেক্স-সানরাইজ বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল চ্যালেঞ্জ টুর্নামেন্টে মিশ্র দ্বৈত বিভাগে ফাইনালে উঠেছেন বাংলাদেশের আল আমিন জুমার ও ঊর্মি আক্তার। আজ সেমিফাইনালে থাইল্যান্ডের কুনলাপাথ লোথোং ও সারিসা জানপেং জুটিকে হারিয়েছেন ২১-১১ ও ২১-১৪ গেমে।
১০ ঘণ্টা আগেক্রীড়া ডেস্ক

লাতিন আমেরিকার ফুটবলে সহিংসতা নতুন কিছু নয়। মহাদেশীয় শ্রেষ্ঠত্বের টুর্নামেন্ট কোপা আমেরিকাতেই ঘটে মারামারির ঘটনা। স্থানীয় টুর্নামেন্টে সহিংসতার কারণে তো প্রায়ই খবরের শিরোনামে আসে লাতিন আমেরিকার ফুটবল। কলম্বিয়ায় এক ফুটবল টুর্নামেন্টের ফাইনালে ভয়াবহ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।
কলম্বিয়ার মেডেলিন শহরের আতানাসিও জিরারদোত স্টেডিয়ামে পরশু রাতে কোপা কলম্বিয়ার ফাইনালের দ্বিতীয় লেগে মুখোমুখি হয়েছিল দেপোর্তিভো ইন্দিপেন্দিয়েন্তে-আতলেতিকো ন্যাশনাল। ১-০ গোলে আতলেতিকো ন্যাশনালের জয়ের পরই ভক্ত-সমর্থকেরা মাঠে ঢুকে তাণ্ডব শুরু করেন। আতশবাজি-আগুন নিয়ে এমনভাবে হামলা চালিয়েছিলেন ভক্তরা, যেটা সামাল দিতে দাঙ্গা পুলিশ মোতায়েন করতে হয়েছে। সাত পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। কলম্বিয়ার স্থানীয় পত্রিকা এল কলোম্বিয়ানোর এক প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, মাঠের কিছু অংশে আগুন ধরানো হয়েছে। উপড়ে ফেলা হয়েছে অনেক আসন। গ্যালারিতে আতশবাজির ধোঁয়ার কারণে ম্যাচ শুরু হতেও দেরি হয় ১৪ মিনিট।
মেডেলিনের মেয়র ফেদেরিকো গুতিয়েরেস কোপা কলম্বিয়ার ফাইনালে সহিংস ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। গুতিয়েরেস বলেন, ‘যারা স্টেডিয়ামে হামলা, ধ্বংসযজ্ঞ বা ভীতি ছড়ানোর চেষ্টা করেছে, তাদের প্রত্যেককেই আইনের আওতায় আনা হবে। সবাই মাঠে বসে খেলা উপভোগ করতে পারবেন। হাতে গোনা কয়েকজনের জন্য পরিবেশ নষ্ট হবে, এমনটা তো হতে দেওয়া যাবে না। বছরের পর বছর ধরে আমরা পুরো লাতিন আমেরিকায় শান্তিপূর্ণ ফুটবলের মডেল হিসেবে পরিচিতি পেয়েছি।’ পুলিশ কমান্ডার উইলিয়াম কাস্তানো বলেন, স্টেডিয়ামে দর্শকদের কাছ থেকে অস্ত্র ও আতশবাজি জব্দ করা হয়েছে। ১২০ কেজির বেশি পাইরোটেকনিক (বিস্ফোরণের প্রভাব তৈরির মতো রাসায়নিক বস্তু) ছিল সেখানে।
দেপোর্তিভো ইন্দিপেন্দিয়েন্তে-আতলেতিকো ন্যাশনাল কলম্বিয়া কাপ ফাইনালের প্রথম লেগ গোলশূন্য ড্র হয়েছে। পরশু রাতে দ্বিতীয় লেগটা হয়ে যায় শিরোপা নির্ধারণী। দুই লেগ মিলিয়ে ১-০ গোলে শিরোপা জিতেছে আতলেতিকো ন্যাশনাল। কিন্তু মেডেলিন শহরের আতানাসিও জিরারদোত স্টেডিয়ামে ভয়াবহ সংঘর্ষের ঘটনায় আতলেতিকো ন্যাশনালের ম্যাচপরবর্তী পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান, শিরোপা নিয়ে উদ্যাপন—কিছুই করা সম্ভব হয়নি।

লাতিন আমেরিকার ফুটবলে সহিংসতা নতুন কিছু নয়। মহাদেশীয় শ্রেষ্ঠত্বের টুর্নামেন্ট কোপা আমেরিকাতেই ঘটে মারামারির ঘটনা। স্থানীয় টুর্নামেন্টে সহিংসতার কারণে তো প্রায়ই খবরের শিরোনামে আসে লাতিন আমেরিকার ফুটবল। কলম্বিয়ায় এক ফুটবল টুর্নামেন্টের ফাইনালে ভয়াবহ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।
কলম্বিয়ার মেডেলিন শহরের আতানাসিও জিরারদোত স্টেডিয়ামে পরশু রাতে কোপা কলম্বিয়ার ফাইনালের দ্বিতীয় লেগে মুখোমুখি হয়েছিল দেপোর্তিভো ইন্দিপেন্দিয়েন্তে-আতলেতিকো ন্যাশনাল। ১-০ গোলে আতলেতিকো ন্যাশনালের জয়ের পরই ভক্ত-সমর্থকেরা মাঠে ঢুকে তাণ্ডব শুরু করেন। আতশবাজি-আগুন নিয়ে এমনভাবে হামলা চালিয়েছিলেন ভক্তরা, যেটা সামাল দিতে দাঙ্গা পুলিশ মোতায়েন করতে হয়েছে। সাত পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। কলম্বিয়ার স্থানীয় পত্রিকা এল কলোম্বিয়ানোর এক প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, মাঠের কিছু অংশে আগুন ধরানো হয়েছে। উপড়ে ফেলা হয়েছে অনেক আসন। গ্যালারিতে আতশবাজির ধোঁয়ার কারণে ম্যাচ শুরু হতেও দেরি হয় ১৪ মিনিট।
মেডেলিনের মেয়র ফেদেরিকো গুতিয়েরেস কোপা কলম্বিয়ার ফাইনালে সহিংস ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। গুতিয়েরেস বলেন, ‘যারা স্টেডিয়ামে হামলা, ধ্বংসযজ্ঞ বা ভীতি ছড়ানোর চেষ্টা করেছে, তাদের প্রত্যেককেই আইনের আওতায় আনা হবে। সবাই মাঠে বসে খেলা উপভোগ করতে পারবেন। হাতে গোনা কয়েকজনের জন্য পরিবেশ নষ্ট হবে, এমনটা তো হতে দেওয়া যাবে না। বছরের পর বছর ধরে আমরা পুরো লাতিন আমেরিকায় শান্তিপূর্ণ ফুটবলের মডেল হিসেবে পরিচিতি পেয়েছি।’ পুলিশ কমান্ডার উইলিয়াম কাস্তানো বলেন, স্টেডিয়ামে দর্শকদের কাছ থেকে অস্ত্র ও আতশবাজি জব্দ করা হয়েছে। ১২০ কেজির বেশি পাইরোটেকনিক (বিস্ফোরণের প্রভাব তৈরির মতো রাসায়নিক বস্তু) ছিল সেখানে।
দেপোর্তিভো ইন্দিপেন্দিয়েন্তে-আতলেতিকো ন্যাশনাল কলম্বিয়া কাপ ফাইনালের প্রথম লেগ গোলশূন্য ড্র হয়েছে। পরশু রাতে দ্বিতীয় লেগটা হয়ে যায় শিরোপা নির্ধারণী। দুই লেগ মিলিয়ে ১-০ গোলে শিরোপা জিতেছে আতলেতিকো ন্যাশনাল। কিন্তু মেডেলিন শহরের আতানাসিও জিরারদোত স্টেডিয়ামে ভয়াবহ সংঘর্ষের ঘটনায় আতলেতিকো ন্যাশনালের ম্যাচপরবর্তী পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান, শিরোপা নিয়ে উদ্যাপন—কিছুই করা সম্ভব হয়নি।

বাংলাদেশ ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় বিজ্ঞাপন সাকিব আল হাসান। এই মুহূর্তে বাঁহাতি অলরাউন্ডার ছুটি কাটাতে আছেন যুক্তরাষ্ট্রে। যুক্তরাষ্ট্রে পরিবারের কাছে যাওয়ার আগে সাকিব সময় দিলেন আজকের পত্রিকাকে। দুই দিন আগে রানা আব্বাসকে দেওয়া দীর্ঘ সাক্ষাৎকারে বাঁহাতি অলরাউন্ডার বললেন খেলা ও খেলার বাইরের অনেক কিছুই
২৪ ডিসেম্বর ২০২১
এশিয়ান কাপ বাছাইয়ের ম্যাচ আয়োজন করে আরও একবার জরিমানার মুখে পড়ল বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে)। বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচের দ্বিতীয়ার্ধের খেলা ১ মিনিট ৪৩ সেকেন্ড দেরিতে শুরু হওয়ায় বাফুফেকে ১২৫০ ডলার জরিমানা করেছে এশিয়ান ফুটবল কনফেডারেশন (এএফসি)।
৮ ঘণ্টা আগে
সংযুক্ত আরব আমিরাতের আন্তর্জাতিক লিগ টি-টোয়েন্টি যেন বাংলাদেশ ক্রিকেটারদের মিলনমেলা। সাকিব আল হাসান, মোস্তাফিজুর রহমান, তাসকিন আহমেদ—বাংলাদেশের তিন তারকা ক্রিকেটার খেলছেন এখন আমিরাতের এই লিগে। কদিন আগে সাকিব-মোস্তাফিজের একটি ছবি ‘দ্য বাংলা’ ক্যাপশনে পোস্ট করেছিল সাকিবের দল এমআই এমিরেটস।
৯ ঘণ্টা আগে
ইউনেক্স-সানরাইজ বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল চ্যালেঞ্জ টুর্নামেন্টে মিশ্র দ্বৈত বিভাগে ফাইনালে উঠেছেন বাংলাদেশের আল আমিন জুমার ও ঊর্মি আক্তার। আজ সেমিফাইনালে থাইল্যান্ডের কুনলাপাথ লোথোং ও সারিসা জানপেং জুটিকে হারিয়েছেন ২১-১১ ও ২১-১৪ গেমে।
১০ ঘণ্টা আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

ইউনেক্স-সানরাইজ বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল চ্যালেঞ্জ টুর্নামেন্টে মিশ্র দ্বৈত বিভাগে ফাইনালে উঠেছেন বাংলাদেশের আল আমিন জুমার ও ঊর্মি আক্তার। আজ সেমিফাইনালে থাইল্যান্ডের কুনলাপাথ লোথোং ও সারিসা জানপেং জুটিকে হারিয়েছেন ২১-১১ ও ২১-১৪ গেমে। পদক তো নিশ্চিত হয়েছে আগে, জুমার-ঊর্মি এবার দেখাচ্ছেন সোনা জয়ের ঝিলিকও। ফাইনালে কাল মালয়েশিয়ার দাতু আনিফ ইসাক দাতু আসরা ও ক্লারিসা সানের মুখোমুখি হবেন তারা।
পল্টনের শহীদ তাজউদ্দিন ইনডোর স্টেডিয়ামে সকালটাও অন্যরকম ছিল জুমার-ঊর্মির। কোয়ার্টার ফাইনালে ভারতের স্বস্তিক মাথারাসান-কীর্তি মাঞ্চালাকে তিন সেটের লড়াইয়ে হারিয়েছেন ২১-১৬, ১৯-২১ ও ২১-১৮ গেমে। প্রথম সেট খানিকটা সহজে জিতলেও দ্বিতীয় সেটে হারতে হয়। তৃতীয় সেটে দারুণ প্রতিদ্বন্দ্বিতা শেষে নিশ্চিত করেন ব্রোঞ্জ পদক।
রাতে সেমিফাইনালে থাইল্যান্ডের জুটিকে পাত্তাই দিলেন না জুমার-ঊর্মি। প্রথম সেটে একটা সময় অবশ্য পিছিয়ে ছিলেন ৫-৩ পয়েন্টে। সেখান থেকে অনবরত পয়েন্ট তুলতে থাকেন জুমার। শেষ দিকে ঊর্মিও দেখান তাঁর দাপট। দ্বিতীয় সেটে শুরুতেই আধিপত্য দেখাতে থাকে বাংলাদেশের জুটি। নিয়ে নেন বড় ব্যবধানের লিড। যা পরে আর ছোট করতে পারেননি থাইল্যান্ডের শাটলাররা।
ফাইনালে উঠে জুমার বলেন, ‘ফাইনাল নিয়ে প্রত্যাশা অবশ্যই ভালো খেলার চেষ্টা করব। বাকিটা আল্লাহ ভরসা, জানিনা কি হবে। দেখা যাক। আগে যে রেজাল্টগুলো আমরা আশাও করতে পারতাম না, এখন বাংলাদেশ অন্যান্য বারের মতো হচ্ছে না যে মানে বাংলাদেশ আসছে আর হেরে যাচ্ছে—এরকম হচ্ছে না। প্রত্যেকটা টিমই আমাদের লড়াই করে হেরেছে।’
জুমারের সঙ্গে বোঝাপড়া নিয়ে ঊর্মি বলেন, ‘সকালেই আমি বলেছিলাম, আমরা চ্যাম্পিয়ন হতে চাই। সেই লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। ফাইনাল নিশ্চিত করেছি। এবার সোনা জিততে চাই। জুমারের সঙ্গে ছয়-সাত বছর ধরে জুটি বেঁধে খেলছি। যেহেতু অনেকদিন ধরে খেলছি, সেহেতু আমাদের মধ্যে বোঝাপড়াটা ভালো। আমরা এর আগেও আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে পদক জিতেছি।’
এর আগে একক ইভেন্টে কেবল হতাশাই উপহার দিয়েছেন বাংলাদেশের শাটলাররা। দ্বৈতে গতকাল কোয়ার্টার ফাইনালে কেউই জয়ের হাসি হাসতে পারেননি। মিশ্র দ্বৈতে জুমার-ঊর্মি ফুটলেন আশার আলো হয়ে। রুপা নিশ্চিত করে লক্ষ্য এবার সোনার পদক গলায় ঝুলানো।

ইউনেক্স-সানরাইজ বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল চ্যালেঞ্জ টুর্নামেন্টে মিশ্র দ্বৈত বিভাগে ফাইনালে উঠেছেন বাংলাদেশের আল আমিন জুমার ও ঊর্মি আক্তার। আজ সেমিফাইনালে থাইল্যান্ডের কুনলাপাথ লোথোং ও সারিসা জানপেং জুটিকে হারিয়েছেন ২১-১১ ও ২১-১৪ গেমে। পদক তো নিশ্চিত হয়েছে আগে, জুমার-ঊর্মি এবার দেখাচ্ছেন সোনা জয়ের ঝিলিকও। ফাইনালে কাল মালয়েশিয়ার দাতু আনিফ ইসাক দাতু আসরা ও ক্লারিসা সানের মুখোমুখি হবেন তারা।
পল্টনের শহীদ তাজউদ্দিন ইনডোর স্টেডিয়ামে সকালটাও অন্যরকম ছিল জুমার-ঊর্মির। কোয়ার্টার ফাইনালে ভারতের স্বস্তিক মাথারাসান-কীর্তি মাঞ্চালাকে তিন সেটের লড়াইয়ে হারিয়েছেন ২১-১৬, ১৯-২১ ও ২১-১৮ গেমে। প্রথম সেট খানিকটা সহজে জিতলেও দ্বিতীয় সেটে হারতে হয়। তৃতীয় সেটে দারুণ প্রতিদ্বন্দ্বিতা শেষে নিশ্চিত করেন ব্রোঞ্জ পদক।
রাতে সেমিফাইনালে থাইল্যান্ডের জুটিকে পাত্তাই দিলেন না জুমার-ঊর্মি। প্রথম সেটে একটা সময় অবশ্য পিছিয়ে ছিলেন ৫-৩ পয়েন্টে। সেখান থেকে অনবরত পয়েন্ট তুলতে থাকেন জুমার। শেষ দিকে ঊর্মিও দেখান তাঁর দাপট। দ্বিতীয় সেটে শুরুতেই আধিপত্য দেখাতে থাকে বাংলাদেশের জুটি। নিয়ে নেন বড় ব্যবধানের লিড। যা পরে আর ছোট করতে পারেননি থাইল্যান্ডের শাটলাররা।
ফাইনালে উঠে জুমার বলেন, ‘ফাইনাল নিয়ে প্রত্যাশা অবশ্যই ভালো খেলার চেষ্টা করব। বাকিটা আল্লাহ ভরসা, জানিনা কি হবে। দেখা যাক। আগে যে রেজাল্টগুলো আমরা আশাও করতে পারতাম না, এখন বাংলাদেশ অন্যান্য বারের মতো হচ্ছে না যে মানে বাংলাদেশ আসছে আর হেরে যাচ্ছে—এরকম হচ্ছে না। প্রত্যেকটা টিমই আমাদের লড়াই করে হেরেছে।’
জুমারের সঙ্গে বোঝাপড়া নিয়ে ঊর্মি বলেন, ‘সকালেই আমি বলেছিলাম, আমরা চ্যাম্পিয়ন হতে চাই। সেই লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। ফাইনাল নিশ্চিত করেছি। এবার সোনা জিততে চাই। জুমারের সঙ্গে ছয়-সাত বছর ধরে জুটি বেঁধে খেলছি। যেহেতু অনেকদিন ধরে খেলছি, সেহেতু আমাদের মধ্যে বোঝাপড়াটা ভালো। আমরা এর আগেও আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে পদক জিতেছি।’
এর আগে একক ইভেন্টে কেবল হতাশাই উপহার দিয়েছেন বাংলাদেশের শাটলাররা। দ্বৈতে গতকাল কোয়ার্টার ফাইনালে কেউই জয়ের হাসি হাসতে পারেননি। মিশ্র দ্বৈতে জুমার-ঊর্মি ফুটলেন আশার আলো হয়ে। রুপা নিশ্চিত করে লক্ষ্য এবার সোনার পদক গলায় ঝুলানো।

বাংলাদেশ ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় বিজ্ঞাপন সাকিব আল হাসান। এই মুহূর্তে বাঁহাতি অলরাউন্ডার ছুটি কাটাতে আছেন যুক্তরাষ্ট্রে। যুক্তরাষ্ট্রে পরিবারের কাছে যাওয়ার আগে সাকিব সময় দিলেন আজকের পত্রিকাকে। দুই দিন আগে রানা আব্বাসকে দেওয়া দীর্ঘ সাক্ষাৎকারে বাঁহাতি অলরাউন্ডার বললেন খেলা ও খেলার বাইরের অনেক কিছুই
২৪ ডিসেম্বর ২০২১
এশিয়ান কাপ বাছাইয়ের ম্যাচ আয়োজন করে আরও একবার জরিমানার মুখে পড়ল বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে)। বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচের দ্বিতীয়ার্ধের খেলা ১ মিনিট ৪৩ সেকেন্ড দেরিতে শুরু হওয়ায় বাফুফেকে ১২৫০ ডলার জরিমানা করেছে এশিয়ান ফুটবল কনফেডারেশন (এএফসি)।
৮ ঘণ্টা আগে
সংযুক্ত আরব আমিরাতের আন্তর্জাতিক লিগ টি-টোয়েন্টি যেন বাংলাদেশ ক্রিকেটারদের মিলনমেলা। সাকিব আল হাসান, মোস্তাফিজুর রহমান, তাসকিন আহমেদ—বাংলাদেশের তিন তারকা ক্রিকেটার খেলছেন এখন আমিরাতের এই লিগে। কদিন আগে সাকিব-মোস্তাফিজের একটি ছবি ‘দ্য বাংলা’ ক্যাপশনে পোস্ট করেছিল সাকিবের দল এমআই এমিরেটস।
৯ ঘণ্টা আগে
লাতিন আমেরিকার ফুটবলে সহিংসতা নতুন কিছু নয়। মহাদেশীয় শ্রেষ্ঠত্বের টুর্নামেন্ট কোপা আমেরিকাতেই ঘটে মারামারির ঘটনা। স্থানীয় টুর্নামেন্টে সহিংসতার কারণে তো প্রায়ই খবরের শিরোনামে আসে লাতিন আমেরিকার ফুটবল। কলম্বিয়ায় এক ফুটবল টুর্নামেন্টের ফাইনালে ভয়াবহ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।
১০ ঘণ্টা আগে