ফোরজির দাপটে কমছে টুজি ফোনের উৎপাদন

অর্চি হক, ঢাকা 
প্রকাশ : ০৭ নভেম্বর ২০২৪, ১০: ০৫
আপডেট : ০৭ নভেম্বর ২০২৪, ১০: ৩২

ইন্টারনেটের সহজলভ্যতা দেশে মোবাইল ফোনের বাজারে বড় পরিবর্তন নিয়ে এসেছে। তরুণদের হাতে হাতে এখন স্মার্টফোন। এত বছর ধরে টুজিতে অভ্যস্ত বয়স্করাও ঝুঁকছেন ফোরজির দিকে। ভিডিও কলে কথা বলা, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ব্যবহারসহ নানা প্রয়োজনে বাড়ছে ফোরজি সেটের ব্যবহার। ফোরজির দাপটে ক্রমে সংকুচিত হচ্ছে টুজি ফোনের বাজার, ফলে কমছে এই প্রযুক্তির ফোনের উৎপাদনও।

টুজি ফোনের উৎপাদন কমার চিত্র উঠে এসেছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) এক পরিসংখ্যানেও। বিটিআরসির তথ্য অনুযায়ী, গত মে মাসে দেশে ২২ লাখ ৪৩ হাজার টুজি সেট তৈরি হয়। এরপর জুনে তৈরি হয় ২০ লাখ ৪১ হাজার। জুলাইয়ে তৈরি হয় ২০ লাখ ৩৮ হাজার। আগস্টে ১৬ লাখ ৪৪ হাজার। আর সেপ্টেম্বরে তা আরও কমে ১৬ লাখ ৬ হাজারে নেমে আসে। কেবল এই পাঁচ মাস নয়, সাম্প্রতিক বছরগুলোর সঙ্গে তুলনা করলেও দেখা যাচ্ছে, এ বছর ফিচার ফোনের উৎপাদন কমেছে। ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে দেশে ফিচার ফোন তৈরির পরিমাণ ছিল ১৬ লাখ ৪০ হাজার। আর ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে ছিল ১৬ লাখ ৮৭ হাজার। অর্থাৎ গত তিন বছরের সেপ্টেম্বরের মধ্যে এ বছরই টুজি ফোনের উৎপাদন সবচেয়ে কম।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশীয় মোবাইল ফোনের বাজার এখনো টুজিকেন্দ্রিক। তবে সাম্প্রতিক সময়ে কিছুটা হলেও বাড়ছে স্মার্টফোনের উৎপাদন। এ বিষয়ে মোবাইল ফোন ইন্ডাস্ট্রি ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি জাকারিয়া শহীদ বলেন, ‘চাহিদা কমার কারণে টুজি হ্যান্ডসেটের উৎপাদন কমছে, এমন নয়। দেশে সব সময়ই ফিচার ফোনের চাহিদা বেশি। এখনো তা-ই। এখানে গ্রে মার্কেটের একটা প্রভাব রয়েছে। আগে গ্রে মার্কেটের দৌরাত্ম্য শুধু স্মার্টফোনকেন্দ্রিক ছিল। তবে এখন ফিচার ফোনও গ্রে মার্কেটের কবলে পড়ছে। কপি এবং রিসার্ভিসেস প্রোডাক্ট বিক্রি হচ্ছে। ফলে চাহিদা ও সক্ষমতা থাকলেও দেশে ফিচার ফোনের উৎপাদন কিছুটা কমেছে।’

বিটিআরসির তথ্য অনুযায়ী, গত সেপ্টেম্বরে দেশে প্রায় ২৫ লাখ ১৭ হাজার ইউনিট মোবাইল হ্যান্ডসেট তৈরি হয়। এর মধ্যে টুজি সেট ছিল প্রায় ১৬ লাখ ৬ হাজার। ফোরজি ছিল ৯ লাখ ৯ হাজার। আর ফাইভজি ছিল প্রায় ৩ হাজার। মাসটিতে দেশে তৈরি মোবাইল ফোনের ৬৩ দশমিক ৭৯ শতাংশই ছিল ফিচার ফোন। আর স্মার্টফোন ছিল ৩৬ দশমিক ২১ শতাংশ।

সরকারের পরিকল্পনা হলো দেশে স্মার্টফোনের উৎপাদন বাড়ানো। সে জন্য গত এপ্রিলে টুজি তথা ফিচার ফোনের উৎপাদন, সংযোজন ও বাজারজাতকরণ কমিয়ে স্মার্টফোন বা ফোরজি ফিচার মোবাইল হ্যান্ডসেটের সংযোজন, উৎপাদন ও বাজারজাতকরণ বৃদ্ধির নির্দেশ দিয়ে প্রতিষ্ঠানগুলোকে চিঠিও পাঠায় বিটিআরসি। ফোরজি ফোনের উৎপাদন সামান্য বৃদ্ধির পেছনে এর কিছুটা প্রভাব থাকতে পারে বলে জানান সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, দেশে ১৭টি প্রতিষ্ঠান মোবাইল উৎপাদন করে। উৎপাদনে যাওয়ার আগে তাদের শর্ত ছিল যে তারা ফিচার ফোন অর্থাৎ টুজি সাপোর্টযুক্ত হ্যান্ডসেট উৎপাদন কমিয়ে আনবে। কিন্তু তারা দীর্ঘদিন যাবৎ ফিচার ফোন উৎপাদন করেছে প্রায় ৬৫ শতাংশ। বর্তমানে বাজারে কম মূল্যে গ্রে মার্কেটের স্মার্টফোন পাওয়া যাচ্ছে। ডেটা চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। ভয়েস কলে খরচ বেশি পাশাপাশি নিরাপত্তার ঝুঁকি মনে করে গ্রাহক। যে কারণে গ্রাহক হোয়াটসঅ্যাপ অথবা অন্যান্য অ্যাপের মাধ্যমে ভয়েস অথবা মেসেজ পাঠাতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। এতে খরচও কম এবং সুবিধা বেশি। পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগের পাশাপাশি অফিস-আদালত, ব্যবসা-বাণিজ্য—সবকিছু ইন্টারনেটভিত্তিক হওয়ায় গ্রাহকের দৃষ্টি স্মার্টফোনের দিকে। তবে সরকারের উচিত আমাদের নিজস্ব উৎপাদনের বাজারমূল্য যাতে কোনোভাবেই গ্রাহকের সাধ্য এবং সামর্থ্যের বাইরে না যায়। এবং গুণগতমান যাতে অবশ্যই অক্ষুণ্ন থাকে।

বিষয়টি নিয়ে জাকারিয়া শহীদ বলেন, ‘সরকারের প্ল্যান আছে ফোরজি কীভাবে বাড়ানো যায়, কীভাবে রিজনাবল প্রাইস করা যায়, এটার একটা কর্মপরিকল্পনা আছে৷ সেই হিসাবে আমরা ফোরজি ফিচার ফোন মার্কেটে লঞ্চ করেছি। কিন্তু ফোরজি ফিচার ফোনের প্রাইস যেহেতু একটু বেশি পড়ে, তাই এটার রেসপন্স তেমন ভালো না, পজিটিভ না। ফোরজি স্মার্টফোনের দাম তো আরও বেশি। যে ভয়েস কলের ওপর ডিপেনডেন্ট, সে ফোরজি ফিচার ফোন কখনোই কিনবে না। ৮০০ টাকায় এখন টুজি সেট পাওয়া যায়। ৮০০ থেকে ১ হাজার টাকায় যে সেট কেনে, সে কখনো ৭ হাজার সেগমেন্টের ফোরজি সেট কিনবে না৷ একজন মানুষ টাকা বেশি দিয়ে কখন সেট কিনবে, যখন তার ভয়েস কল কমবে।’

বাড়ছে বৈধভাবে মোবাইল হ্যান্ডসেটের আমদানি

দেশে বৈধভাবে মোবাইল হ্যান্ডসেটের উৎপাদন বাড়ছে বলে বিটিআরসির পরিসংখানে উঠে এসেছে। পরিসংখ্যান বলছে, গত জুনে দেশে মোবাইল আমদানি হয়েছিল ৪ হাজার ৪৫০টি। জুলাইয়ে এর পরিমাণ ছিল ৩ হাজার ৬৪০টি৷ আগস্টে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১০ হাজার ২২০টিতে। আর সেপ্টেম্বরে তা ১৯ হাজার ৫১৫টিতে পৌঁছায়।

তবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বৈধপথে মোবাইল আমদানির সংখ্যা বাড়লেও অবৈধভাবে অর্থাৎ গ্রে মার্কেটে মোবাইল আসা কমেনি। বিটিআরসির কাছে গ্রে মার্কেটের তথ্য না থাকায় মোবাইল হ্যান্ডসেট বাজারের পূর্ণাঙ্গ চিত্র পাওয়া যায় না বলে জানান সংস্থাটির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত