Ajker Patrika

চুরির অপবাদে ছাত্রলীগ নেতাকে নির্যাতন ছাত্রদল নেতার, টাকা দিয়ে মুক্তি

শ্রীপুর (গাজীপুর) প্রতিনিধি  
নির্যাতনের শিকার ছাত্রলীগ নেতা মেহেদী হাসান। ছবি: সংগৃহীত
নির্যাতনের শিকার ছাত্রলীগ নেতা মেহেদী হাসান। ছবি: সংগৃহীত

গাজীপুরের শ্রীপুরে মোবাইল চুরির অপবাদে এক ছাত্রলীগ নেতাকে রাতভর নির্যাতন চালানো হয়েছে। এক ছাত্রদল নেতার নেতৃত্বে এ নির্যাতন চালানো হয় বলে ভুক্তভোগীর অভিযোগ। ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ছে।

এ ঘটনায় আজ শনিবার অভিযুক্ত ছাত্রদল নেতার বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগী ছাত্রলীগ নেতার মা। এর আগে ২ এপ্রিল রাতে উপজেলার শৈলাট বাজারে ওই নির্যাতনের ঘটনা ঘটে।

ভুক্তভোগী ছাত্রলীগ নেতা মেহেদী হাসান (১৮) উপজেলার গাজীপুর ইউনিয়নের ধনুয়া গ্রামের মো. কবির হোসেনের ছেলে। তিনি গাজীপুর ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক।

অভিযুক্ত ছাত্রদল নেতার নাম মো. জাফর আহমেদ (২৯)। তিনি উপজেলার গাজীপুর ইউনিয়নের শৈলাট গ্রামের নাজিম উদ্দীন নাজির ছেলে। তিনি গাজীপুর ইউনিয়ন ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। অপর অভিযুক্তরা হলেন মো. মোস্তফা (২৮), রুবেল (৩৫), রবিন (২৭), ইলিয়াসসহ (২৯) অজ্ঞাত ১২ জন।

ভুক্তভোগী ছাত্রলীগ নেতার মা শিল্পী আক্তার বলেন, ‘গত ২ এপ্রিল একই ইউনিয়নের গাজীপুর গ্রামে নানাবাড়ি বেড়াতে যায় আমার ছেলে-মেয়ে। রাত সাড়ে ৯টার দিকে আমার সঙ্গে তার কথা হয়। আজ নানাবাড়ি থেকে যাবে বলে জানায়। এরপর রাত ২টার দিকে কোনো একটি নম্বর থেকে ফোন করে জানায় আমার ছেলে নাকি কার মোবাইল ফোন চুরি করছে। খবর পেয়ে দ্রুত সময়ের মধ্যে আমি ঘটনাস্থলে চলে যাই। গিয়ে দেখি আমার ছেলেকে মাটিতে বসিয়ে রাখছে। তার মুখ দিয়ে ফেনা বের হচ্ছে। এ সময় আমাকে জড়িয়ে ধরে বলে আমাকে বাঁচাও। এরপর অভিযুক্তরা আমার সামনে লাথিগুঁতা মারতে থাকে। বলে ছেলেকে জীবিত নিতে চাইলে ৫০ হাজার টাকা লাগবে।’

শিল্পী আরও বলেন, ‘পরে ছেলের বন্ধু জুয়েল রানাকে ফোন করলে সেও ঘটনাস্থলে আসে। এ সময় ছাত্রদল নেতা জাফর আমার সঙ্গে অনেক খারাপ ব্যবহার করে। পরে ছেলের বন্ধু ১০ হাজার টাকা দিলে ছেলেকে ছেড়ে দেয়।’ তিনি বলেন, ‘স্থানীয়দের মাধ্যমে জানতে পারি ঘটনার দুই ঘণ্টা পর পুলিশ আসলেও পুলিশ আমার ছেলেকে উদ্ধার করেনি। বর্তমানে আমার ছেলে ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েছে। তার অস্বাভাবিক আচার-আচরণের মাত্রা বেড়েই যাচ্ছে।’

ভুক্তভোগী ছাত্রলীগ নেতার বাবা কবির হোসেন ফোনে বলেন, ‘আমি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত, তাই আত্মগোপনে থাকি। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আমার স্ত্রীসহ আত্মীয়স্বজনকে পাঠাই। বর্তমানে আমার ছেলে পাগল। সে অস্বাভাবিক আচার-আচরণ করছে। আমরা আওয়ামী লীগ করি বলে বিচার চাইতে ভয় পাচ্ছি। প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের আশ্বাসে আজ থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।’

কবির হোসেন আরও বলেন, ‘একটি কোম্পানিতে চাকরি করে আমার ছেলে। আমার ছেলের বিষয়ে কোনো একটি খারাপ রিপোর্ট কেউ বলতে পারবে না। অথচ রাতে মোটরসাইকেলে বাসায় ফেরার পথে একটি বাটন ফোন চুরির অপবাদে ছেলেকে নির্যাতন করে। আল্লাহর কাছে বিচার দিলাম, আমার নিষ্পাপ ছেলেকে যারা এমন করছে তাদের বিচার যেন তিনি করেন।’

ভুক্তভোগী ছাত্রলীগ নেতার বন্ধু জুয়েল রানা বলেন, ‘রাত সাড়ে ৯টার দিকে রাতের খাবার খেয়ে বাসা থেকে বের হয় বন্ধু মেহেদী হাসান। রাত ১টার দিকে ছাত্রদল নেতা জাফর আহমেদ আমাকে ফোন করে পাশের শৈলাট বাজারে যেতে বলে। ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখি বন্ধু মেহেদীকে আটকে রাখছে অনেক মানুষ। তাকে দিয়ে গান গাওয়ানো হচ্ছে। পরে বন্ধুকে ছাড়িয়ে নিতে তারা প্রথমে ৫০ হাজার টাকা দাবি করে। তবে ১০ হাজার টাকা দিই। যার কথোপকথনের অডিও রেকর্ড আমার কাছে সংরক্ষিত রয়েছে। ঘটনাস্থলে পুলিশ থাকলেও তাদের কোনো ভূমিকা ছিল না।’

তবে ছাত্রদল নেতা জাফর আহমেদ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘রাত ১২টার দিকে হইচই শুনে আমি বাজারে যাই। গিয়ে দেখি মোবাইল চুরি হয়েছে—এমন কথা হচ্ছে। এরপর বিষয়টি সমাধান করে তাদের স্বজনদের হাতে তুলে দিয়েছি। আমি তাকে মারধর করিনি। কোনো টাকাও নেই নাই। আমার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ আমার বিরুদ্ধে যড়যন্ত্র করছে।’ পরে টাকা নেওয়ার অডিও থাকার কথা বললে তিনি এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি।

মাওনা পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক হাসমতউল্লাহ বাবুল বলেন, রাতে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছিল। ঘটনাস্থলে পুলিশ পৌঁছে জানতে পারে কোনো চুরির ঘটনা ঘটেনি। পরে তার স্বজনদের মুচলেকা রেখে মায়ের হাতে তুলে দেওয়া হয়। পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছার পর কোনো নির্যাতন হয়নি বলে তিনি দাবি করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত