জাহাঙ্গীর আলম
প্রকৃতির পরিভাষা দখল করে ফেলছে প্রযুক্তি। ওয়াল-ই সিনেমার সেই অন্য গ্যালাাক্সিতে এক মহাকাশযানে বাস করা শিশুসদৃশ মানুষগুলোর চুরি যাওয়া বাস্তবতার মতো। যারা বসবাস করেন এক অনন্ত ভার্চ্যুয়াল জগতের ভেতর। তাঁরা খান, পরেন, দেখেন, সমুদ্র সৈকতে রৌদ্রস্নান করেন; কিন্তু প্রকৃতি তাদের স্পর্শ করে না। এ কালে যেমন চিনিযুক্ত পানিতে কৃত্রিম রং, আর গন্ধ মিশিয়ে বাজারে বিক্রি হয় ফলের জুস। এমন এক মিথ্যার জগতে তাঁদের বাস।
ওয়াল-ই-তে মৃতপ্রায় পৃথিবী থেকে উপযুক্ত মানুষদের উদ্ধার করে এক্সিওম নামে এক মাদারশিপে পুনর্বাসন করে অতিকায় করপোরেট বাই-এন-লার্জ। এই আশ্রিত মানুষগুলোর দেহ-মন সর্বাংশে করপোরেটের দখলে। তেমনি দখল হয়ে যাচ্ছে প্রকৃতির ভাষা। প্রযুক্তি জায়ান্টদের বিপণন কৌশলের কাছে হার মেনে ছিন্নমূল হয়ে পড়ছে বহু শব্দ। কোম্পানির আশ্রয়ে নতুন ভৌতরূপের সঙ্গে সেঁটে যাচ্ছে প্রকৃতির প্রাণময় শব্দগুলো। প্রযুক্তির উদ্ভাবন, উন্নয়ন ও বিপণন যেহেতু ইংরেজি ভাষাভাষী ইউরোপ ও আমেরিকায়, সে কারণে এই অর্থ বিপর্যয়টিও ঘটছে মূলত ইংরেজি শব্দে। আর ইংরেজি কসমোপলিটন ভাষা হয়ে ওঠায় এই আত্মঘাতী প্রবণতা জেঁকে বসছে বাংলা ভাষাভাষী তরুণ-কিশোর সমাজেও।
যেমন, কীটনাশকের যথেচ্ছ ব্যবহার বা বন উজাড় করা নগরে পাখির কিচিরমিচিরের চেয়ে মাইক্রোব্লগিং সাইট টুইটার এখন অনেক বেশি পরিচিত এবং অর্থবোধক। দখলে দূষণে ভরাট স্রোতস্বিনী আর নেই। ঘরে ঘরে এখন স্ট্রিমিং প্লাটফর্ম নেটফ্লিক্স, আমাজন প্রাইম ইত্যাদি। লাইভ স্ট্রিমের ব্যবসাও জমজমাট। আধমরা নদীতে স্রোত না থাকলেও ভার্চুয়াল জগতে টরেন্ট কিন্তু জনপ্রিয়। বিশেষ করে ফ্রি সফটওয়্যার বা পাইরেটেড সফটওয়্যার এবং সিনেমা পেতে এর বিকল্প নেই।
শত প্রজাতির ক্ষুদ্র পতঙ্গ এখন নাগরিকদের স্মৃতি থেকে প্রায় বিলুপ্ত। কিন্তু প্রযুক্তিতে বাগ-এর উপদ্রব বাড়ছেই। বিশেষ করে সফটওয়্যার ডেভেলপারদের কাছে সবচেয়ে পরিচিত ও অনাকাঙ্ক্ষিত একটি শব্দ এটি। ঠিক একইভাবে ফাটল নয়, বরং ‘ক্র্যাক’ হচ্ছে ফ্রিতে মূল্যবান সফটওয়্যার পাওয়ার কৌশল।
জীবাণু ভাইরাসের সঙ্গে পরিচয় না থাকলেও কম্পিউটার ভাইরাস এখন ছেলে–বুড়ো সবাই পরিচিত। ঘরে মাকড়সার জাল বোনার সুযোগ নেই। কিন্তু ঘরে মাঠে ঘাটে সারা দুনিয়ার মানুষ এখন এক অনন্ত জালে আবদ্ধ। ট্রি বলতে এখন আর মূল, শিকড়, কান্ড, ডালপালা যুক্ত গাছ নয়, কম্পিউটারের ফাইল সিস্টেম দেখানোর একটি ব্যবস্থাকে বোঝায়।
‘সিডিং’ মানে বীজ ছড়ানো নয়। এটি পিয়ার টু পিয়ার শেয়ারিংয়ে ডাউনলোড করা ফাইল ফের আপলোড করা, যাতে আরেকজন সেটি ডাউনলোড করতে পারেন। শেয়ার করা কম্পিউটার তখন সিড বা বীজ। আর ‘লিচ’ মানে কিন্তু রক্তচোষক প্রাণি বা জোঁক নয়। ‘সিড’ থেকে যিনি ফাইল ডাউনলোড করেন তিনিই ‘লিচ’। আর এ প্রক্রিয়া হলো লিচিং। অবশ্য গ্রাহককে রক্ত না হলেও ডেটা–চোষক বলা যেতেই পারে!
‘ক্লাউড’ তো মেঘ নয়, দুনিয়াজুড়ে ছড়িয়ে থাকা ডেটা সেন্টার। চিপ বা চিপস কিন্তু মুড়মুড়ে আলু বা কলার পাঁপড় নয়। আবার পাতলা করে কাটা কাঠও নয়। এটি আসলে লাখ লাখ ট্রানজিস্টরের সমন্বয়ে তৈরি সিলিকনের পাতলা টুকরো। কম্পিউটিং থেকে কম্পিউটার। আদিতে হিসাব–নিকাশ বলতে কম্পিউটিং বোঝাত। গণনাকারী যন্ত্রই কম্পিউটার। কিন্তু আজ সেই কম্পিউটার কোথায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে সেটি বলাই বাহুল্য।
‘অ্যাপল’ মান আপেল নয় আর। এটি এক লিজেন্ডারি প্রযুক্তি কোম্পানি। ‘উইন্ডো’ কিন্তু জানালা নয়, এটি প্রযুক্তি ও অন্তর্জালের জগতে প্রবেশের হাতিয়ার, জনপ্রিয়তম অপারেটিং সিস্টেম, উইন্ডোজ। ‘রুট’ আক্ষরিক অর্থে একটি সিস্টেমের মূলকেই বোঝায়। সেটি ডিরেক্টরি হায়ারার্কি হোক বা ইউজার প্রিভিলেজই হোক।
আপনি জানেন কি, সবুজের চেয়ে বেশি খোঁজা হয় গুগলের গ্রিন কালার কোড? ‘ফিশিং’ মানে মাছ ধরা নয়, আসলে অন্তর্জালে টোপ ফেলে শিকার ধরার কৌশল। এমন লোভনীয় ই-মেইলে ফেঁসে গিয়ে লাখ লাখ ডলার হারানোর ঘটনা প্রচুর।
প্রাণি কিংবা বীজের শরীরের শক্ত আবরণ (শেল), এখন কম্পিউটার অপারেটিং সিস্টেমের মূল কোডের বাইরের এক নিরাপত্তা বেষ্টনি। যেটি একই সঙ্গে ব্যবহারকারীর সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করে। একইভাবে টার্মিনাল হলো ব্যবহারকারীর সাধারণ নির্দেশনা অপারেটিং সিস্টেমের কাছে বোধগম্য করে পৌঁছে দেওয়ার সফটওয়্যার। ‘রাইস’ কিন্তু চাল নয়। লিনাক্স ব্যবহারকারীদের কাছে অতি জনপ্রিয় একটি শব্দ এটি। মূলত গ্রাফিক্যাল ইউজার ইন্টারফেসের কাস্টমাইজেশন।
‘সিলিকন’ যে একটি মৌল, সেটি হয়তো বেশির ভাগ মানুষ জানেই না। কিন্তু এর মানে যে ডিভাইসে ব্যবহৃত বিভিন্ন চিপ—এটা সবাই বোঝেন। ‘ইকোসিস্টেম’ কিন্তু পরিবেশের বাস্তুতন্ত্র বলে আর পরিচিত নয়। এটি একটি সিস্টেমের মধ্যে বাঁচা। যেমন: আমরা এখন গুগলের অ্যান্ড্রয়েড ইকোসিস্টেমে বন্দী। ‘স্পাইডার’ আসলে অন্তর্জালে ঘুরে বেড়ানো এক সফটওয়্যার রোবট। সার্ফ/সার্ফিং সমুদ্রের উত্তাল ঢেউয়ে বাচারি খেলা নয়, এটি অন্তর্জালে ঘুরে বেড়ানো। ‘মাউস’ কি ইঁদুর? নাকি কাজের টেবিলে হাতের নিচে চুপটি করে বসে থাকা কালো বস্তু। ‘ব্ল্যাকবেরি’ ফলের চেয়ে ব্র্যান্ডটির খ্যাতিই বেশি। আজকাল সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশনে (এসইও) অর্গানিক রিচ শব্দটি প্রায়ই ব্যবহৃত হয়।
এ রকম আরও আছে—ব্রাউজিং, মাইনিং, আমাজন, কিউ, ইন্টেলিজেন্স, মর্ফ, মাইগ্রেট, সাবজেক্ট/ অবজার্ভার, ফার্মস, ল্যান্ডস্ক্যাপ, ফ্যাকেড, ক্লোন, প্যান্ডোরা, ওরাকল, সাফারি, ভিস্তা, অ্যাডোবি, থান্ডারবোল্ট ইত্যাদি। কোনোটি হার্ডওয়্যার, কোনোটি সফটওয়্যার; আবার কোনোটি বিখ্যাত কোম্পানি।
ব্র্যান্ডগুলোর প্রকৃতি থেকে নাম গ্রহণ করার পেছনে একটা অভিসন্ধী রয়েছে। যেমন, অ্যাপল, আমাজন ইত্যাদি। এদের সবার ক্ষেত্রে একটা বিষয় কমন সেটি হলো—তারা এমন নাম গ্রহণ করতে চায় বা তাদের পণ্যগুলোকে এমন বিষয় বা বস্তুর সঙ্গে সম্পর্কিত করতে চায়, যা সর্বসাধারণের কাছে খুব পরিচিত এবং আপন মনে হবে। বিশ্ব ভোক্তাকুলের কাছে পৌঁছানোর একটি চমৎকার কৌশল এটি। এতে কোনো ধরনের ভাষান্তর বা তর্জমা ছাড়াই সব ভাষা ও সংস্কৃতির সঙ্গে একটা সহজ–সচ্ছন্দ্য যোগাযোগ তৈরি করা যায়।
অবশ্য একক অর্থবোধক শব্দগুলোর ব্যবহারও দিন দিন কমে যাচ্ছে। বিশেষ করে ইংরেজিতে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে লন, টুইগ, ব্ল্যাকবার্ড, ফিশিং, প্যাডল, স্যান্ড, পো ও শেলের মতো শব্দগুলোর ব্যবহার অনেক কমে গেছে। পাশাপাশি বাম্বলবি শব্দটির ব্যবহার প্রায় উঠেই গেছে।
যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল ট্রাস্ট সম্প্রতি দারুণ একটি গবেষণা করেছে। তারা বিশ শতকের নব্বইয়ের দশক এবং একুশ শতকের প্রথম দশকের কিছু আলাপ-আলোচনার শ্রুতলিখন তুলনা করে দেখেছেন। ৫০ লাখ শব্দবিশিষ্ট নব্বইয়ের দশকের আলোচনা বা খোশগল্প এবং ১ কোটি ২০ লাখ শব্দবিশিষ্ট একুশ শতকের প্রথম দশকের আলাপের মধ্যে এ তুলনা করা হয়।
এতে দেখা গেছে, মানুষের আলাপের মধ্যে পাখির গান বোঝাতে টুইটার শব্দটির ব্যবহার মাত্র ১ শতাংশে নেমে গেছে। একইভাবে বিশ শতকের নব্বইয়ের দশকে যেখানে ‘স্ট্রিম’ বলতে শতভাগ ক্ষেত্রেই বোঝানো হতো ছোট নদী বা স্রোতস্বিনী। আর এখন মাত্র ৩৬ শতাংশ ক্ষেত্রে এটি দিয়ে নদী বোঝানো হয়। বাকি ৬৪ শতাংশ ক্ষেত্রে ভিডিও বা মিউজিক স্ট্রিম বুঝায়। অপরদিকে ক্লাউডের মূল অর্থের ব্যবহার নেমেছে এক চতুর্থাংশে। ১০ বছর বয়স থেকেই শিশুদের মনে এই শব্দার্থ বিচ্যুতি ঘটছে। শিশুদের মধ্যে শব্দের এই প্রকৃতি ঘনিষ্ঠ স্বাভাবিক অর্থ বিচ্যুতি নিয়ে বাবা-মা এবং দাদা-দাদিরাও উদ্বিগ্ন।
শব্দের মূল থেকে অর্থের এই বিচ্ছিন্নতাকে প্রকৃতি থেকেই বিচ্ছন্ন হয়ে যাওয়ার সামিল বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁরা বলছেন, আমরা ক্রমেই প্রকৃতির সঙ্গে যোগাযোগ হারাচ্ছি। শব্দের সঙ্গে প্রকৃতির উপাদানগুলোর যে অবয়ব, স্বাদ, গন্ধ, আবেগীয় অনুভূতি জড়িত, সেটি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে এখনকার প্রজন্ম। মানবপ্রজাতির সার্বিক মঙ্গলের জন্য এটি মোটেও ইতিবাচক নয় বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
প্রকৃতির পরিভাষা দখল করে ফেলছে প্রযুক্তি। ওয়াল-ই সিনেমার সেই অন্য গ্যালাাক্সিতে এক মহাকাশযানে বাস করা শিশুসদৃশ মানুষগুলোর চুরি যাওয়া বাস্তবতার মতো। যারা বসবাস করেন এক অনন্ত ভার্চ্যুয়াল জগতের ভেতর। তাঁরা খান, পরেন, দেখেন, সমুদ্র সৈকতে রৌদ্রস্নান করেন; কিন্তু প্রকৃতি তাদের স্পর্শ করে না। এ কালে যেমন চিনিযুক্ত পানিতে কৃত্রিম রং, আর গন্ধ মিশিয়ে বাজারে বিক্রি হয় ফলের জুস। এমন এক মিথ্যার জগতে তাঁদের বাস।
ওয়াল-ই-তে মৃতপ্রায় পৃথিবী থেকে উপযুক্ত মানুষদের উদ্ধার করে এক্সিওম নামে এক মাদারশিপে পুনর্বাসন করে অতিকায় করপোরেট বাই-এন-লার্জ। এই আশ্রিত মানুষগুলোর দেহ-মন সর্বাংশে করপোরেটের দখলে। তেমনি দখল হয়ে যাচ্ছে প্রকৃতির ভাষা। প্রযুক্তি জায়ান্টদের বিপণন কৌশলের কাছে হার মেনে ছিন্নমূল হয়ে পড়ছে বহু শব্দ। কোম্পানির আশ্রয়ে নতুন ভৌতরূপের সঙ্গে সেঁটে যাচ্ছে প্রকৃতির প্রাণময় শব্দগুলো। প্রযুক্তির উদ্ভাবন, উন্নয়ন ও বিপণন যেহেতু ইংরেজি ভাষাভাষী ইউরোপ ও আমেরিকায়, সে কারণে এই অর্থ বিপর্যয়টিও ঘটছে মূলত ইংরেজি শব্দে। আর ইংরেজি কসমোপলিটন ভাষা হয়ে ওঠায় এই আত্মঘাতী প্রবণতা জেঁকে বসছে বাংলা ভাষাভাষী তরুণ-কিশোর সমাজেও।
যেমন, কীটনাশকের যথেচ্ছ ব্যবহার বা বন উজাড় করা নগরে পাখির কিচিরমিচিরের চেয়ে মাইক্রোব্লগিং সাইট টুইটার এখন অনেক বেশি পরিচিত এবং অর্থবোধক। দখলে দূষণে ভরাট স্রোতস্বিনী আর নেই। ঘরে ঘরে এখন স্ট্রিমিং প্লাটফর্ম নেটফ্লিক্স, আমাজন প্রাইম ইত্যাদি। লাইভ স্ট্রিমের ব্যবসাও জমজমাট। আধমরা নদীতে স্রোত না থাকলেও ভার্চুয়াল জগতে টরেন্ট কিন্তু জনপ্রিয়। বিশেষ করে ফ্রি সফটওয়্যার বা পাইরেটেড সফটওয়্যার এবং সিনেমা পেতে এর বিকল্প নেই।
শত প্রজাতির ক্ষুদ্র পতঙ্গ এখন নাগরিকদের স্মৃতি থেকে প্রায় বিলুপ্ত। কিন্তু প্রযুক্তিতে বাগ-এর উপদ্রব বাড়ছেই। বিশেষ করে সফটওয়্যার ডেভেলপারদের কাছে সবচেয়ে পরিচিত ও অনাকাঙ্ক্ষিত একটি শব্দ এটি। ঠিক একইভাবে ফাটল নয়, বরং ‘ক্র্যাক’ হচ্ছে ফ্রিতে মূল্যবান সফটওয়্যার পাওয়ার কৌশল।
জীবাণু ভাইরাসের সঙ্গে পরিচয় না থাকলেও কম্পিউটার ভাইরাস এখন ছেলে–বুড়ো সবাই পরিচিত। ঘরে মাকড়সার জাল বোনার সুযোগ নেই। কিন্তু ঘরে মাঠে ঘাটে সারা দুনিয়ার মানুষ এখন এক অনন্ত জালে আবদ্ধ। ট্রি বলতে এখন আর মূল, শিকড়, কান্ড, ডালপালা যুক্ত গাছ নয়, কম্পিউটারের ফাইল সিস্টেম দেখানোর একটি ব্যবস্থাকে বোঝায়।
‘সিডিং’ মানে বীজ ছড়ানো নয়। এটি পিয়ার টু পিয়ার শেয়ারিংয়ে ডাউনলোড করা ফাইল ফের আপলোড করা, যাতে আরেকজন সেটি ডাউনলোড করতে পারেন। শেয়ার করা কম্পিউটার তখন সিড বা বীজ। আর ‘লিচ’ মানে কিন্তু রক্তচোষক প্রাণি বা জোঁক নয়। ‘সিড’ থেকে যিনি ফাইল ডাউনলোড করেন তিনিই ‘লিচ’। আর এ প্রক্রিয়া হলো লিচিং। অবশ্য গ্রাহককে রক্ত না হলেও ডেটা–চোষক বলা যেতেই পারে!
‘ক্লাউড’ তো মেঘ নয়, দুনিয়াজুড়ে ছড়িয়ে থাকা ডেটা সেন্টার। চিপ বা চিপস কিন্তু মুড়মুড়ে আলু বা কলার পাঁপড় নয়। আবার পাতলা করে কাটা কাঠও নয়। এটি আসলে লাখ লাখ ট্রানজিস্টরের সমন্বয়ে তৈরি সিলিকনের পাতলা টুকরো। কম্পিউটিং থেকে কম্পিউটার। আদিতে হিসাব–নিকাশ বলতে কম্পিউটিং বোঝাত। গণনাকারী যন্ত্রই কম্পিউটার। কিন্তু আজ সেই কম্পিউটার কোথায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে সেটি বলাই বাহুল্য।
‘অ্যাপল’ মান আপেল নয় আর। এটি এক লিজেন্ডারি প্রযুক্তি কোম্পানি। ‘উইন্ডো’ কিন্তু জানালা নয়, এটি প্রযুক্তি ও অন্তর্জালের জগতে প্রবেশের হাতিয়ার, জনপ্রিয়তম অপারেটিং সিস্টেম, উইন্ডোজ। ‘রুট’ আক্ষরিক অর্থে একটি সিস্টেমের মূলকেই বোঝায়। সেটি ডিরেক্টরি হায়ারার্কি হোক বা ইউজার প্রিভিলেজই হোক।
আপনি জানেন কি, সবুজের চেয়ে বেশি খোঁজা হয় গুগলের গ্রিন কালার কোড? ‘ফিশিং’ মানে মাছ ধরা নয়, আসলে অন্তর্জালে টোপ ফেলে শিকার ধরার কৌশল। এমন লোভনীয় ই-মেইলে ফেঁসে গিয়ে লাখ লাখ ডলার হারানোর ঘটনা প্রচুর।
প্রাণি কিংবা বীজের শরীরের শক্ত আবরণ (শেল), এখন কম্পিউটার অপারেটিং সিস্টেমের মূল কোডের বাইরের এক নিরাপত্তা বেষ্টনি। যেটি একই সঙ্গে ব্যবহারকারীর সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করে। একইভাবে টার্মিনাল হলো ব্যবহারকারীর সাধারণ নির্দেশনা অপারেটিং সিস্টেমের কাছে বোধগম্য করে পৌঁছে দেওয়ার সফটওয়্যার। ‘রাইস’ কিন্তু চাল নয়। লিনাক্স ব্যবহারকারীদের কাছে অতি জনপ্রিয় একটি শব্দ এটি। মূলত গ্রাফিক্যাল ইউজার ইন্টারফেসের কাস্টমাইজেশন।
‘সিলিকন’ যে একটি মৌল, সেটি হয়তো বেশির ভাগ মানুষ জানেই না। কিন্তু এর মানে যে ডিভাইসে ব্যবহৃত বিভিন্ন চিপ—এটা সবাই বোঝেন। ‘ইকোসিস্টেম’ কিন্তু পরিবেশের বাস্তুতন্ত্র বলে আর পরিচিত নয়। এটি একটি সিস্টেমের মধ্যে বাঁচা। যেমন: আমরা এখন গুগলের অ্যান্ড্রয়েড ইকোসিস্টেমে বন্দী। ‘স্পাইডার’ আসলে অন্তর্জালে ঘুরে বেড়ানো এক সফটওয়্যার রোবট। সার্ফ/সার্ফিং সমুদ্রের উত্তাল ঢেউয়ে বাচারি খেলা নয়, এটি অন্তর্জালে ঘুরে বেড়ানো। ‘মাউস’ কি ইঁদুর? নাকি কাজের টেবিলে হাতের নিচে চুপটি করে বসে থাকা কালো বস্তু। ‘ব্ল্যাকবেরি’ ফলের চেয়ে ব্র্যান্ডটির খ্যাতিই বেশি। আজকাল সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশনে (এসইও) অর্গানিক রিচ শব্দটি প্রায়ই ব্যবহৃত হয়।
এ রকম আরও আছে—ব্রাউজিং, মাইনিং, আমাজন, কিউ, ইন্টেলিজেন্স, মর্ফ, মাইগ্রেট, সাবজেক্ট/ অবজার্ভার, ফার্মস, ল্যান্ডস্ক্যাপ, ফ্যাকেড, ক্লোন, প্যান্ডোরা, ওরাকল, সাফারি, ভিস্তা, অ্যাডোবি, থান্ডারবোল্ট ইত্যাদি। কোনোটি হার্ডওয়্যার, কোনোটি সফটওয়্যার; আবার কোনোটি বিখ্যাত কোম্পানি।
ব্র্যান্ডগুলোর প্রকৃতি থেকে নাম গ্রহণ করার পেছনে একটা অভিসন্ধী রয়েছে। যেমন, অ্যাপল, আমাজন ইত্যাদি। এদের সবার ক্ষেত্রে একটা বিষয় কমন সেটি হলো—তারা এমন নাম গ্রহণ করতে চায় বা তাদের পণ্যগুলোকে এমন বিষয় বা বস্তুর সঙ্গে সম্পর্কিত করতে চায়, যা সর্বসাধারণের কাছে খুব পরিচিত এবং আপন মনে হবে। বিশ্ব ভোক্তাকুলের কাছে পৌঁছানোর একটি চমৎকার কৌশল এটি। এতে কোনো ধরনের ভাষান্তর বা তর্জমা ছাড়াই সব ভাষা ও সংস্কৃতির সঙ্গে একটা সহজ–সচ্ছন্দ্য যোগাযোগ তৈরি করা যায়।
অবশ্য একক অর্থবোধক শব্দগুলোর ব্যবহারও দিন দিন কমে যাচ্ছে। বিশেষ করে ইংরেজিতে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে লন, টুইগ, ব্ল্যাকবার্ড, ফিশিং, প্যাডল, স্যান্ড, পো ও শেলের মতো শব্দগুলোর ব্যবহার অনেক কমে গেছে। পাশাপাশি বাম্বলবি শব্দটির ব্যবহার প্রায় উঠেই গেছে।
যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল ট্রাস্ট সম্প্রতি দারুণ একটি গবেষণা করেছে। তারা বিশ শতকের নব্বইয়ের দশক এবং একুশ শতকের প্রথম দশকের কিছু আলাপ-আলোচনার শ্রুতলিখন তুলনা করে দেখেছেন। ৫০ লাখ শব্দবিশিষ্ট নব্বইয়ের দশকের আলোচনা বা খোশগল্প এবং ১ কোটি ২০ লাখ শব্দবিশিষ্ট একুশ শতকের প্রথম দশকের আলাপের মধ্যে এ তুলনা করা হয়।
এতে দেখা গেছে, মানুষের আলাপের মধ্যে পাখির গান বোঝাতে টুইটার শব্দটির ব্যবহার মাত্র ১ শতাংশে নেমে গেছে। একইভাবে বিশ শতকের নব্বইয়ের দশকে যেখানে ‘স্ট্রিম’ বলতে শতভাগ ক্ষেত্রেই বোঝানো হতো ছোট নদী বা স্রোতস্বিনী। আর এখন মাত্র ৩৬ শতাংশ ক্ষেত্রে এটি দিয়ে নদী বোঝানো হয়। বাকি ৬৪ শতাংশ ক্ষেত্রে ভিডিও বা মিউজিক স্ট্রিম বুঝায়। অপরদিকে ক্লাউডের মূল অর্থের ব্যবহার নেমেছে এক চতুর্থাংশে। ১০ বছর বয়স থেকেই শিশুদের মনে এই শব্দার্থ বিচ্যুতি ঘটছে। শিশুদের মধ্যে শব্দের এই প্রকৃতি ঘনিষ্ঠ স্বাভাবিক অর্থ বিচ্যুতি নিয়ে বাবা-মা এবং দাদা-দাদিরাও উদ্বিগ্ন।
শব্দের মূল থেকে অর্থের এই বিচ্ছিন্নতাকে প্রকৃতি থেকেই বিচ্ছন্ন হয়ে যাওয়ার সামিল বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁরা বলছেন, আমরা ক্রমেই প্রকৃতির সঙ্গে যোগাযোগ হারাচ্ছি। শব্দের সঙ্গে প্রকৃতির উপাদানগুলোর যে অবয়ব, স্বাদ, গন্ধ, আবেগীয় অনুভূতি জড়িত, সেটি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে এখনকার প্রজন্ম। মানবপ্রজাতির সার্বিক মঙ্গলের জন্য এটি মোটেও ইতিবাচক নয় বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
বৈদ্যুতিক গাড়ি বা ইভি চার্জিংয়ের জন্য নতুন ধরনের সোলার পেইন্ট (সূর্যশক্তি শোষণকারী রং) তৈরি করছে জার্মানির গাড়ি প্রস্তুতকারক কোম্পানি মার্সিডিজ-বেঞ্চ। এই বিশেষ রঙটিতে ফোটোভোলটাইক সেল (সোলার প্যানেল) রয়েছে, যা সূর্যালোক শোষণ করে
৯ ঘণ্টা আগেইন্টেল ও এএমডি এর মতো মহাকাশে চিপ পাঠিয়েছে চীনের চিপ প্রস্তুতকারক কোম্পানিটি লুনসন। এটি মহাকাশে পাঠানো ক্লাউড কম্পিউটিং প্ল্যাটফর্মগুলোর জন্য কাজ করবে। গত শুক্রবার কোম্পানিটির পক্ষ থেকে এসব তথ্য জানানো হয়।
১০ ঘণ্টা আগেভুলক্রমে বয়ফ্রেন্ডের ৫৬৯ মিলিয়ন বা ৫৬ কোটি ৯০ লাখ পাউন্ডের মূল্যের বিটকয়েন ‘কী’ ভাগাড়ে ফেলে দিয়েছিলেন এক নারী। এখন বয়ফ্রেন্ড বিটকয়েনগুলো ফিরে পাওয়ার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করছেন। এমনকি বিষয়টি আদালত পর্যন্ত টেনে নেওয়া হচ্ছে।
১১ ঘণ্টা আগেপ্রযুক্তির জগতের অন্যতম পরিচিত নাম চিপ নির্মাতা কোম্পানি এনভিডিয়া এর প্রতিষ্ঠাতা এবং সিইও জেনসেন হুয়াং। তবে শুধু এনভিডিয়ার সাফল্যই তাঁর পুরো জীবনের গল্প নয়, বরং কলেজজীবনের একটি রোমান্টিক ও মজাদার অধ্যায়ও হুয়াংয়ের রয়েছে। যখন ১৭ বছর বয়সী কলেজ ছাত্র হুয়াং তাঁর ১৯ বছরের হবু স্ত্রী লরি হুয়াংয়ের মন জয়...
১২ ঘণ্টা আগে