নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে যে রশ্মি

অনিন্দ্য চৌধুরী অর্ণব
প্রকাশ : ০৮ আগস্ট ২০২৩, ০৭: ৪৬

১৮৯৫ সালের ৮ নভেম্বর। সে সময় পদার্থবিজ্ঞানের অনেক মৌলিক বিষয় আবিষ্কৃত হয়নি। কিন্তু কে জানত, অজানা এক রশ্মি আবিষ্কার চিকিৎসাবিজ্ঞানের সঙ্গে পদার্থবিজ্ঞানেও খুলে দেবে নতুন দিগন্ত। অজানা সেই রশ্মির হাত ধরে ১৮৯৬ সালে ফরাসি পদার্থবিজ্ঞানী হেনরি বেকরেল আবিষ্কার করলেন রেডিও-অ্যাকটিভিটি বা তেজস্ক্রিয়তা। ১৮৯৭ সালে স্যার জোসেফ জন টমসন আবিষ্কার করলেন পদার্থের মৌলিক কণা ইলেকট্রন। বলছিলাম এক্স-রে আবিষ্কারের কথা।

জার্মান বিজ্ঞানী উইলহেম রন্টজেন একটি বায়ুশূন্য টিউব নিয়ে গবেষণা করছিলেন। টিউবটিকে তিনি কালো কার্ডবোর্ড দিয়ে চারদিক থেকে ঢেকে দেন। একটি বেরিয়াম প্লাটিনো-সায়ানাইড পেপার রাখা ছিল বেঞ্চের ওপর। ক্রুকস টিউবের ভেতর দিয়ে বিদ্যুৎপ্রবাহ চালানোর সময় তিনি দেখলেন, বেরিয়াম প্লাটিনো-সায়ানাইড পেপারে অদ্ভুত একটি কালো দাগ পড়েছে। তিনি ভেবে দেখলেন, এ রকম দাগ বেরিয়াম প্লাটিনো-সায়ানাইড পেপারে শুধু সরাসরি আলো প্রবেশ করলে পড়তে পারে। কিন্তু টিউব থেকে আলো আসার কোনো উপায় ছিল না। রন্টজেন বুঝতে পারলেন, সম্পূর্ণ নতুন একটি ঘটনার সাক্ষী হয়েছেন তিনি। কিন্তু তখনই এ নিয়ে শোরগোল না ফেলে তিনি এ ধাঁধার সমাধানে সচেষ্ট হলেন।

রাত-দিন এক করে তিনি পড়ে রইলেন এই অজানা রশ্মি নিয়ে। একের পর এক পরীক্ষা চালিয়ে তিনি এর আচরণ পর্যবেক্ষণ করতে লাগলেন। অবশেষে ১৮৯৫ সালের ক্রিসমাস ইভের দিন মোটামুটি প্রস্তুত হলেন তিনি। তাঁর স্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানালেন গবেষণাগারে।

যন্ত্রাদি চালু করে স্ত্রীর হাতটি রাখলেন একটি নতুন ফটোগ্রাফিক প্লেটের ওপর। প্রায় ১৪ মিনিট ধরে এক্স-রে ফেলা হলো তাঁর হাতে। ফিল্মটি যখন ডেভেলপ করা হলো, দেখা গেল একটি হাতের ছবি এসেছে। তাতে ধরা পড়েছে আঙুলে থাকা আংটির ছবিও। তবে ছবিটি সাধারণ কোনো হাতের ছবির মতো ছিল না। হাতের প্রতিটি হাড় দেখা যাচ্ছিল সেই ছবিতে। তাতে দেখা যাচ্ছে, আঙুলের আংটি যেন ঝুলে আছে একটি হাড়ের চারধারে। আবিষ্কারের কথা প্রকাশিত হওয়ার পর রন্টজেনের স্ত্রীর হাতের সেই ছবি পৃথিবীব্যাপী ব্যাপক সাড়া ফেলেছিল।

প্রফেসর রন্টজেন সেদিন জানতেন না, তিনি কী আবিষ্কার করেছেন। জানতেন না বলেই যেহেতু এক্স বীজগণিতে অজানা মান নির্দেশ করে, তাই অজানা এই রশ্মির নামকরণ করা হয় এক্স-রে। কেউ কেউ তাঁর নামে রন্টজেন-রে রাখতে চেয়েছিলেন এই রশ্মির নাম। কিন্তু তা টেকেনি। এক্স-রে নামই রয়ে গেছে। তবে তিনি বেশ বুঝতে পেরেছিলেন যে তাঁর এ আবিষ্কার চিকিৎসাবিজ্ঞানে বেশ উপযোগী হয়ে উঠতে পারে। এটি জেনেও একজন আদর্শ বিজ্ঞানীর মতো তিনি কোনো পেটেন্টের আবেদন করেননি। সবার জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছিলেন তাঁর এই আবিষ্কারকে। 

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত