বিরল প্রজাতির মৌমাছি আটকে দিল মেটার ব্যয়বহুল ডেটা সেন্টার প্রকল্প

অনলাইন ডেস্ক    
প্রকাশ : ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ১৪: ৪১
আপডেট : ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ১৪: ৫৫
জাকারবার্গ একটি বিদ্যমান পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র অপারেটরের সঙ্গে চুক্তি করার পরিকল্পনা করেছিলেন। ছবি: লিংকডইন

মার্ক জাকারবার্গের মেটা কোম্পানির এআই ডেটা সেন্টার তৈরি করার পরিকল্পনা কিছুটা ব্যাহত হয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রকল্পের জন্য নির্ধারিত জমিতে বিরল প্রজাতির মৌমাছি পাওয়ায় প্রকল্পটির কাজ আপতত থামানো হয়েছে।

জাকারবার্গ একটি বিদ্যমান পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র অপারেটরের সঙ্গে চুক্তির পরিকল্পনা করেছিলেন। এর মাধ্যমে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তির জন্য নতুন ডেটা সেন্টারে কার্বন নিঃসারণ ছাড়াই বিদ্যুৎ সরবরাহ করা যাবে।

বিষয়টির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, সম্ভাব্য চুক্তিটি বেশ কিছু জটিলতার সম্মুখীন হয়েছিল, যার মধ্যে পরিবেশগত এবং নিয়ন্ত্রক চ্যালেঞ্জ ছিল।

গত সপ্তাহে মেটার এক মিটিংয়ে জাকারবার্গ জানান, ডেটা সেন্টারটি যেখানে নির্মিত হতো, তার পাশের অঞ্চলে বিরল মৌমাছির প্রজাতির উপস্থিতি প্রকল্পটিকে জটিল করে তুলত।

এটি এমন এক সময়ে হয়েছে, যখন প্রতিদ্বন্দ্বী কোম্পানিগুলো—আমাজন, গুগল ও মাইক্রোসফট পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র অপারেটরের সঙ্গে চুক্তি করেছে। ডেটা সেন্টারে সংখ্যা বাড়ায় বিদ্যুৎ-শক্তির চাহিদা পূরণে পারমাণবিক শক্তির দিকে ঝুঁকছে প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) মডেল তৈরি ও প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে তীব্র প্রতিযোগিতা করছে এসব কোম্পানি। কারণ এআই ব্যবহার করে কোনো কিছু জানতে হলে তা গুগল সার্চের চেয়ে ১০ গুণ বেশি শক্তি ব্যবহার করতে পারে।

কার্বন নির্গমনমুক্ত অন্যান্য শক্তির দিকে নজর দিচ্ছে মেটা।

বর্তমানে বড় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে স্থিতিশীল এবং ২৪ ঘণ্টা অবিচ্ছিন্ন শক্তির একটি উৎস হিসেবে পারমাণবিক শক্তি বেশ গ্রহণযোগ্যতা পাচ্ছে।

তবে এর খরচ অনেক বেশি এবং নির্মাণে দীর্ঘ সময় লাগে। পশ্চিমা দেশের পারমাণবিক শিল্প পারমাণবিক জ্বালানির জন্য ঐতিহ্যগতভাবে রাশিয়ার ওপর নির্ভরশীল ছিল।

এ ছাড়া বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন যে, পারমাণবিক শক্তি কেন্দ্র নির্মাণের ফলে বিষাক্ত তেজস্ক্রিয় বর্জ্য জমে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। বর্জ্যগুলো নিরাপদে সংরক্ষণ না করা হলে তা মানুষ ও পরিবেশের গুরুতর ক্ষতি করতে পারে।

পেনসিলভানিয়ার থ্রি মাইল আইল্যান্ড পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি সক্রিয় করবে বলে গত সেপ্টেম্বরে ঘোষণা দেয় মাইক্রোসফট।

আর গত মার্চে পেনসিলভানিয়ার সুস্কেহান্না স্টিম ইলেকট্রিক পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের পাশে একটি ডেটা সেন্টার স্থাপন করতে ৬৫ কোটি ডলার বিনিয়োগ করে আমাজন।

এদিকে গত মাসে গুগল জানিয়েছে, মার্কিন স্টার্টআপ কাইরোস পাওয়ার থেকে ছয়-সাতটি ছোট মডুলার পারমাণবিক রিয়্যাক্টর অর্ডার করেছে। এর মাধ্যমে প্রথম প্রযুক্তি কোম্পানি হিসেবে নতুন পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের কাজ শুরু করেছে গুগল।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় বিনিয়োগ সুফল বয়ে আনবে তা বিনিয়োগকারীদের কাছে মার্ক জাকারবার্গকে প্রমাণ করতে হবে। এ জন্য তিনি বেশ চাপে রয়েছেন। কারণ সার্ভার ও ডেটা সেন্টার পরিচালনায় বিনিয়োগের ফলে কোম্পানির মূলধন কমে যাচ্ছে। তবে আধুনিক যুগের জন্য এসব প্রযুক্তির উন্নতি প্রয়োজন।

তবে চুক্তিটি সফল হলে মেটা প্রথম কোম্পানি হতো, যেটি এআই পরিচালনায় পারমাণবিক বিদ্যুৎ ব্যবহার করত।

সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পারমাণবিক শক্তির অপশনগুলোর অভাব নিয়ে হতাশ জাকারবার্গ। বিশেষ করে যখন চীন পারমাণবিক শক্তি ব্যাপকভাবে ব্যবহার করছে। চীন দ্রুত গতিতে পারমাণবিক কেন্দ্র নির্মাণ করছে, অথচ গত দুই দশকে যুক্তরাষ্ট্রে কেবল কয়েকটি কেন্দ্র চালু করেছে।

মেটা বলছে, ২০২০ সাল থেকে কোম্পানির কার্যক্রমের জন্য ‘নেট শূন্য’ কার্বন নিঃসারণ অর্জন করেছে।

তথ্যসূত্র: আরস টেকনিকা

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত