Ajker Patrika

মেটার মাথাব্যথার কারণ হয়ে উঠেছে সাবেক কর্মীর লেখা বই

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ২২ মার্চ ২০২৫, ১৫: ১৮
তাঁর বইয়ে কোম্পানিতে কাজ করার বিভিন্ন অভিজ্ঞতার তুলে ধরেন। ছবি: সংগৃহীত
তাঁর বইয়ে কোম্পানিতে কাজ করার বিভিন্ন অভিজ্ঞতার তুলে ধরেন। ছবি: সংগৃহীত

সাবেক কর্মী সারাহ ওয়েন-উইলিয়ামসের বিতর্কিত স্মৃতিকথামূলক গ্রন্থ ‘কেয়ারলেস পিপল’ বইটি ঠেকাতে একাধিক কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে ফেসবুকের মূল কোম্পানি মেটা। তবে, এসব প্রচেষ্টার পরও বইটি এখন যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের নজরে এসেছে, যা মেটার জন্য নতুন মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

মেটায় নীতি পরিচালক হিসেবে কাজ করতেন সারাহ ওয়েন-উইলিয়ামস। তাঁর বইয়ে কোম্পানিতে কাজ করার বিভিন্ন অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন। সেই সঙ্গে অভিযোগ তোলেন , চীনা কর্তৃপক্ষ যাতে ফেসবুকে কনটেন্ট সেন্সর ও নিয়ন্ত্রণ করতে পারে, সেই লক্ষ্যে তাদের সঙ্গে ‘হাতে হাত মিলিয়ে’ কাজ করেছে মেটা। এ জন্য তাঁকে আগ্রাসীভাবে অসম্মানিত করার এবং নীরব করার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে জাকারবার্গের কোম্পানিটি। তবে ওয়েন-উইলিয়ামস এবার প্রতিরোধ গড়ে তুলছেন। তাঁর আইনজীবীরা গত সপ্তাহে একটি জরুরি আবেদন দায়ের করেছেন। সেখানে তারা দাবি করেছেন, মেটার মাধ্যমে আরোপিত গ্যাগ অর্ডারটি অবৈধ এবং প্রয়োগযোগ্য নয়।

ওয়েন-উইলিয়ামসের এই আবেদনে বলা হয়, চাকরি ছাড়ার সময় মেটার সঙ্গে স্বাক্ষরিত নন-ডিসপারেজমেন্ট চুক্তিটি তাকে বইটি সম্পর্কে কথা বলার ক্ষেত্রে বাধা দিতে পারে না।

উল্লেখ্য, গ্যাগ অর্ডার হলো একটি আদালতের আদেশ, যা কোনো ব্যক্তি বা সংস্থাকে একটি নির্দিষ্ট বিষয়ে প্রকাশ্যে কথা বলতে বা তথ্য প্রকাশ করতে নিষেধ করে।

তবে বইটি এখন নিউ ইয়র্ক টাইমসে বেস্ট সেলার তালিকায় শীর্ষস্থান অধিকার করেছে এবং যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের পার্লামেন্টের সদস্যদের মনোযোগ আকর্ষণ করেছে।

গ্যাগ অর্ডার তুলে নেওয়ার আবেদনপত্রে বলা হয়েছে, ‘মার্কিন কংগ্রেস, যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্ট ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের পার্লামেন্টের সদস্যরা তার স্মৃতিকথায় উত্থাপিত জনসাধারণের উদ্বেগের বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করার জন্য ওয়েন-উইলিয়ামসের সঙ্গে কথা বলার অনুরোধ করেছেন। এগুলোর মধ্যে রয়েছে—মেটার চীনা কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে সমন্বয়, মানসিকভাবে দুর্বল কিশোরীদের শোষণ এবং এই বিচার প্রক্রিয়ায় মেটার আচরণ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।’

মেটার চীনে ব্যবসা করার দশকব্যাপী প্রচেষ্টা একসময় ব্যাপকভাবে আলোচিত ছিল। মার্ক জাকারবার্গ একসময় চীনা ভাষা ম্যান্ডারিন শিখছিলেন এবং তিয়ানআনমেন স্কয়ারে জগিং করতেন। ওয়েন-উইলিয়ামস তার বইতে সেই সময়ের ঘটনাগুলো আবার তুলে ধরেছেন, যা একাধিক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

বর্তমানে ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে রাজনৈতিক সম্পর্ক পুনর্গঠন করছে কোম্পানিটি এবং নিয়মিত হোয়াইট হাউসে গিয়ে ‘আমেরিকান প্রযুক্তির নেতৃত্ব’ নিয়ে আলোচনা করছেন।

কোম্পানির ভেতর থেকে ইতিবাচক পরিবর্তন আনার চেষ্টা করেছিলেন ওয়েন উইলিয়ামস। এ ক্ষেত্রে ফ্রান্সেস হাউগেনের সঙ্গে অনেক সাদৃশ্য রয়েছে তাঁর।

উভয়েই মেটার সাবেক কর্মী এবং তাঁরা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে (এসইসি) অনিয়ম বা অবৈধ কার্যক্রমের অভিযোগে গোপন তথ্য প্রদান করেছেন। এরপর তাঁরা তাঁদের অভিজ্ঞতা মিডিয়ায় শেয়ার করেন।

তবে হাউগেনের মতো ওয়েন-উইলিয়ামস কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেননি। কেয়ারলেস পিপল বইটির বেশির ভাগ সমালোচনা মেটার অভ্যন্তরীণ কর্মচারীদের পক্ষ থেকে এসেছে, যাঁরা দাবি করেছেন যে, বইয়ের কিছু বিস্তারিত তথ্য বিকৃত বা সম্পূর্ণরূপে কাল্পনিক।

বইটির সমালোচনা করার জন্য মেটার বেশ কয়েকজন প্রাক্তন কর্মচারী মাঠে নেমেছেন। তাঁরা দাবি করছেন, ওয়েন-উইলিয়ামসের লেখায় অনেক তথ্য ভুল বা অতিরঞ্জিত, যা কোম্পানির নীতি ও কর্মকাণ্ডের ওপর ভুল ধারণা তৈরি করতে পারে। এর মধ্যে রয়েছেন কেটি হারব্যাথ। তিনি ফেসবুকের পলিসি লিডার ছিলেন। তাঁর মতে, বইটির অনেক জায়গায় তথ্য সঠিকভাবে উপস্থাপন করা হয়নি এবং বাস্তব ঘটনা বিকৃত করা হয়েছে।

তবে, কিছু কর্মী বইটি সমর্থন করেছেন, যেমন: ফেসবুকের সহপ্রতিষ্ঠাতা ডাস্টিন মস্কোভিটজ। তিনি জানিয়েছেন যে, বইটির কিছু ঘটনা সঠিক এবং এটির মধ্যে বর্ণিত ‘ভাইব’ বাস্তবতার কাছাকাছি।

সর্বশেষে, কেয়ারলেস পিপল মেটার সমালোচকদের জন্য একটি পরীক্ষার মতো। এটি কিছু মানুষের কাছে মেটার নীতির বিপক্ষে এক শক্তিশালী আঘাত হিসেবে প্রতিপন্ন হচ্ছে, আবার অন্যদের কাছে এটি অতিরঞ্জিত এবং বিভ্রান্তিকর গল্প মনে হচ্ছে।

তথ্যসূত্র: দ্য ভার্জ

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত