পুলিশের ৩০ বছর, এআইয়ের ৩০ মিনিট

মইনুল হাসান, ফ্রান্স
প্রকাশ : ১৯ মার্চ ২০২৪, ০৮: ৪৪

২৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৯০। আজ থেকে ৩৪ বছর আগে, জার্মানির এসবর্ন নগরীর ডয়চে ব্যাংকে বোমা ছুড়ে হামলা চালায় কয়েকজন অস্ত্রধারী। ভাগ্য ভালো, সেই বোমা বিস্ফোরিত হয়নি। ফলে অনেক প্রাণ রক্ষা পায়। পরের বছর ১৩ ফেব্রুয়ারি বনে অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসে দুর্ধর্ষ হামলার ঘটনা ঘটে। দুটি হামলার সঙ্গে জড়িত রেড আর্মি, সাম্রাজ্যবাদবিরোধী একটি সশস্ত্র গেরিলা গ্রুপ। পুরো দেশে তখন ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। আবারও আরেকটি বিপর্যয়, অঘটন ঘটার আগেই হামলাকারীদের ঠেকাতে হবে।

কিন্তু হঠাৎ ঘটে যাওয়া এসব হামলা ঠেকানো সম্ভব হচ্ছে না। ইউরোপের সব সংবাদমাধ্যমে বেশ গুরুত্ব দিয়ে হামলাগুলোর কথা প্রচারিত হতে থাকে। পুলিশের অসহায়ত্বের কথাও বলা হয়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সংসদে প্রশ্নের মুখে বিব্রত হন। গোয়েন্দাদের নাভিশ্বাস উঠে যায়। পুলিশ প্রতিবারই ঘটনাস্থল থেকে মাত্র কয়েক গাছি চুল খুঁজে পায়। চুল থেকে পুলিশ একজন নারীকে শনাক্ত করতে সক্ষম হয়।

নাম ড্যানিয়েলা ক্লেট। বয়স ৩১। সুদর্শনা, লম্বা এবং চোখের রং কালো। তিনি সন্ত্রাসী সংগঠন রেড আর্মির সক্রিয় সদস্য। জীবন বাজি রেখেই বোমাবাজি করে চলেছেন। তাঁকে মোটেই থামানো যাচ্ছিল না। বেশ কয়েকটি দুর্ধর্ষ হামলা চালিয়ে বহুবার সংবাদ শিরোনাম হয়েছেন। ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ বা ‘ধরিয়ে দিন’ শিরোনামে খবরের কাগজগুলোতে বিজ্ঞাপন দিয়েও কোনো কাজ হয়নি। সেই চুল থেকে নির্ভুলভাবে তাঁর পরিচয় পাওয়া গেলেও কেউ তাঁর কেশাগ্র স্পর্শ করতে পারেনি; বরং এই চরমপন্থী নারীর কারণে নির্ঘুম থেকে জাঁদরেল গোয়েন্দাদের চুল সাদা হতে শুরু করে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীদের ঘুম কেড়ে নিয়েছেন ড্যানিয়েলা ক্লেট নামের এই সুদর্শনা নারী। 

গত ২৬ ফেব্রুয়ারি ড্যানিয়েলা ক্লেটকে তাঁর বার্লিনের বাসভবন থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। ছবি সূত্র: আইকন স্পোর্টসএকে একে তিন দশক চলে গেলেও কেউ তাঁর হদিস করতে পারছিল না। পুলিশ তো ভেবেই নিয়েছিল যে পৃথিবীর দেনা-পাওনা না মিটিয়েই তিনি পরলোকে পাড়ি জমিয়েছেন। কিংবা বহু দূরের দেশে ছদ্মবেশে জীবন কাটাচ্ছেন।

অবশেষে কানাডার একজন সাংবাদিক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ‘চেহারা দিয়ে যায় চেনা’ পদ্ধতি কাজে লাগিয়ে ড্যানিয়েলার খোঁজ পেয়ে যান। হত্যার চেষ্টা ও ডাকাতি মামলার আসামি ‘ক্লডিয়া ইভোন’ নামের আড়ালে একটি সমিতির সঙ্গে যুক্ত আছেন। সেই সমিতির একজন সদস্য হিসেবে ফেসবুকে তাঁর ছবি দেওয়া আছে। বর্তমান বয়স ৬৫ বছর। ড্যানিয়েলার তরুণ বয়সের কমনীয় চেহারার সঙ্গে বর্তমান ছবির অনেক পার্থক্য থাকলেও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার চোখ ভুল করেনি। ‘পিএমআই’ সফটওয়্যার নির্ভুলভাবে ৩০ বছর ধরে পলাতক ড্যানিয়েলাকে শনাক্ত করতে সক্ষম হয়েছে। তিনি পুলিশের একেবারে নাকের ডগায়, খোদ রাজধানী বার্লিনে নির্বিঘ্নে, শান্তিতে বাস করছিলেন। এ বছর ২৬ ফেব্রুয়ারি বার্লিনের নিজের বাসভবন থেকে ড্যানিয়েলা ক্লেটকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ ঘটনায় উৎফুল্ল জার্মান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পুলিশকে অভিনন্দন জানিয়েছেন।

ছবি সূত্র: আইকন স্পোর্টসএমন উষ্ণ অভিনন্দনেও পুলিশ খুশি হতে পারছে না। তাদের দুশ্চিন্তা বেড়েছে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার কাছে চাকরি হারাতে হতে পারে ভেবে! ৩০ বছর চেষ্টা করেও যে আসামিকে তারা গ্রেপ্তার করতে পারেনি, এআই মাত্র ৩০ মিনিটে সেই আসামির খোঁজ দিয়েছে। এ ঘটনায় পুলিশের কপালে ভাঁজ পড়া অস্বাভাবিক নয়।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত