মন্টি বৈষ্ণব, ঢাকা
এ দেশের সমাজ বাস্তবতায় ধর্ষণ শব্দটি বহুল প্রচারিত একটি শব্দ। এ দেশের বেশির ভাগ নারী প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ধর্ষণের শিকার হচ্ছেন। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ধর্ষণ বা যৌন নিপীড়নের অনেক পর ঘটনাটি সম্পর্কে জানা যাচ্ছে। অপরাধের বিষয়ে থানায় মামলা করা বা অন্য যেকোনো প্রশাসনিক পদক্ষেপ তো অনেক পরের বিষয়। এ দিয়ে তো আর অপরাধ সংঘটন থামানো যাচ্ছে না। এ ক্ষেত্রে এ ধরনের অপরাধের হাত থেকে ভুক্তভোগীকে বাঁচাতে আশা দেখাচ্ছে ‘বাঁচাও’ অ্যাপস, যা গত মাসে যাত্রা করেছে।
জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯-এর কারণে অনেক সময় এ ধরনের অপরাধ রোধ হচ্ছে ঠিক। কিন্তু তার হার এখনো কম। বিশেষত, এই জাতীয় জরুরি সেবা নম্বরের মাধ্যমে নাগরিকদের নানা ধরনের সেবা দেওয়া হয়। রয়েছে সরকারি আরও নানা উদ্যোগ। কিন্তু এর প্রতিটিরই কর্মপরিসর এত বড় যে, তা শুধু ধর্ষণ বা যৌন নিপীড়নের মতো অপরাধ থেকে নারীদের রক্ষায় তেমন বড় ভূমিকা রাখতে পারছে না। এ অবস্থায় বেসরকারি উদ্যোগে তৈরি করা ‘বাঁচাও’ অ্যাপস আশা দেখাচ্ছে নারী অধিকারকর্মীদের।
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, ২০২১ সালে অক্টোবর মাসে মোট ৩৫৪ জন নারী ও মেয়ে শিশু নির্যাতনের শিকার হয়েছে। এর মধ্যে ধর্ষণের শিকার ১০১ জন। তার মধ্যে রয়েছে ৪১ শিশু, যার মধ্যে তিনটি শিশু দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার এবং চার শিশুকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে। এ ছাড়া এই সময়ের মধ্যে ২ শিশুসহ ৭ জনকে ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে। এ অবস্থায় কিছু একটা করার উদ্যোগ নেন জালাল মির্জা।
জালাল মির্জা একজন কম্পিউটার প্রকৌশলী। ২০০১ সালে নিজের পরিবারেই ঘটে যায় ভয়াবহ এক ঘটনা। তাঁর অতি আপনজন ধর্ষণের শিকার হন। তাও একদিন নয়। স্বামী তাঁর বন্ধুদের দিয়ে দিনের পর দিন এই ধর্ষণ চালিয়ে গিয়েছিল। তাঁর সেই আপনজন এখন মানসিকভাবে অসুস্থ। এই অপরাধে ধর্ষকেরা শাস্তি পেলেও পরে জেল থেকে ছাড়া পেয়ে যায়। আর সেই ভুক্তভোগী এখন জীবন্মৃত হয়ে বেঁচে আছেন। কথা বলতে পারেন না, তেমন কাউকে চিনতেও পারেন না। এই ঘটনা জালাল মির্জার পরিবারকে রীতিমতো নাড়িয়ে দিয়ে যায়। ২০১৮ সালে মৃত্যুর আগের রাতে মা জালাল মির্জাকে কাছে ডেকে বলেছিলেন, ‘তুমি বাবা এত বড় কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার, পারলে কিছু করো, পারলে একটা মেয়েকে বাঁচাও।’
মায়ের সেই কথা রাখার চেষ্টা করেছেন জালাল মির্জা। এ দেশের নারীদের জন্য কিছু করার প্রত্যয় নিয়ে কাজ শুরু করেন। নিজের সেই আপনজনের মতো আর কেউ যেন ধর্ষণের শিকার না হয়, সে জন্য একটি অ্যাপ তৈরি করেন; নাম দেন—‘বাঁচাও’। গড়ে তোলেন বাঁচাও ডট লাইফ ফাউন্ডেশন। ফাউন্ডেশনের মোটো হিসেবে ঠিক করেন—‘আর একটাও ধর্ষণ হতে দেব না।’ নিজের ব্যক্তিগত ক্ষতই তাঁকে এ উদ্যোগে অনুপ্রেরণা দিয়েছে।
বাঁচাও ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) জালাল মির্জা বলেন, ‘এ দেশের মানুষের সচেতনতার আর সামাজিক প্রতিরোধের মাধ্যমে ধর্ষণ বন্ধ করা সম্ভব। আমরা এই অ্যাপস তৈরি করতে গিয়ে এক গবেষণায় দেখেছি, এ দেশের ৮০ শতাংশ নারী ধর্ষণের শিকার হন তাঁর আশপাশের ও কাছের মানুষদের মাধ্যমে। বিষয়টি মাথায় রেখে আমি এমন অ্যাপস তৈরি করেছি, যার মাধ্যমে একজন নারী বিপদের আশঙ্কা করলে “বাঁচাও অ্যাপস”-এর মাধ্যমে সাহায্য চাইতে পারবেন, যা তাঁকে বিপদ থেকে রক্ষা করতে পারবে। এ ছাড়া আমাদের দেশে পোশাক, খাবারের, যাতায়াতের জন্য অ্যাপস থাকলেও ব্যক্তি নিরাপত্তার জন্য তেমন কোনো অ্যাপস নেই। নিজের ব্যক্তিগত ক্ষত এবং নারীদের এই সমাজে নিরাপদ রাখতে ২০১৮ সালেই শুরু করি আমার এই অ্যাপ তৈরির কাজ।’
এই ‘বাঁচাও’ অ্যাপ জিপিএস প্রযুক্তি ব্যবহার করে কাজ করে। এ বিষয়ে জালাল মির্জা বলেন, ‘জিপিএস প্রযুক্তির এ অ্যাপে পিপল টু পিপল (পিটুপি) মডেল ব্যবহার করা হয়েছে। এতে “রেপ অ্যালার্ট” বাটন রয়েছে, যেখানে কিক্ল করলে এটি জিপিএসের মাধ্যমে বিপদে পড়া নারীর অবস্থান নির্দেশ করবে। এতে পরিবার, বন্ধু, স্বেচ্ছাসেবক ও পুলিশের কাছে ওই নারীর বিপদগ্রস্ত হওয়ার বার্তা চলে যাবে। তবে এ ক্ষেত্রে আরেকটা বিষয় জানিয়ে রাখা ভালো। সেটা হলো বাঁচাও অ্যাপ এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে, যেখানে বিপদে সাহায্য চাওয়া নারী চাইলে নিজের ফোন নম্বর গোপন রেখে যোগাযোগ করতে পারবেন।’
তথ্যপ্রযুক্তির উন্নতির যুগে শহরের নারীদের হাতে অ্যান্ড্রয়েড ফোন থাকলেও এ দেশের নিম্নবিত্ত ও গ্রামের নারীদের হাতে এখনো এ প্রযুক্তির মোবাইল সেট পৌঁছায়নি। আবার পরিসংখ্যান বলছে, শহরের তুলনায় গ্রামের নারীরা বেশি ধর্ষণের শিকার হচ্ছেন। গ্রামের নারীরা এই অ্যাপে কীভাবে অন্তর্ভুক্ত হবেন—সে বিষয়টি জানতে চাইলে জালাল মির্জা বলেন, ‘আমাদের দেশে অনেকের হাতে অ্যান্ড্রয়েড ফোন নেই। বিষয়টি আমাদের মাথায় আছে। যাদের স্মার্টফোন নেই, তাদের কথা চিন্তা করে আমরা বিটিআরসির কাছে বিকাশ ও নগদের মতো শর্টকোডের আবেদন করছি।’
অক্টোবরে যাত্রা করা এই অ্যাপ এরই মধ্যে অনেকের কাছে পৌঁছেছে বলে দাবি করেন জালাল মির্জা। তিনি বলেন, ‘অক্টোবর থেকে শুরু হয়ে এ পর্যন্ত এই অ্যাপ ৬০ লাখ মানুষের কাছে পৌঁছেছে। আর ১ লাখ মানুষ এই অ্যাপ ডাউনলোড করেছে। দেড় মাসে এই সংখ্যা আমাকে আশাবাদী করে তুলেছে। বিভাগীয় শহরের মধ্যে ঢাকাতে ডাউনলোডের সংখ্যা বেশি। এ পর্যন্ত বিপদের পড়ে সহযোগিতা চেয়ে ধর্ষণ থেকে রক্ষা পাওয়ার ঘটনা ১৬৫ টি।’
তবে সাফল্যের গল্প যেমন আছে, তেমনি আছে ব্যর্থতার গল্পও, যা ব্যথিত করেছে জালাল মির্জাকেও। তিনি বলেন, ‘সহযোগিতা চাওয়ার পর পাঁচটি ঘটনায় আমরা তেমন কিছু করতে পারিনি। কারণ, সহযোগিতা পাওয়ার পর সেই ফোন নেটওয়ার্কের বাইরে চলে যায়। আমাদের ধারণা, বিপদগ্রস্ত নারীদের থেকে সে সময় ফোন কেড়ে নেওয়া হয়েছে।’
জালাল মির্জা স্বপ্ন দেখেন এই অ্যাপ সারা দেশে ছড়িয়ে পড়বে। মানুষ এর সঙ্গে যুক্ত হবে এবং বিপদগ্রস্ত নারীদের সহায়তায় এগিয়ে আসবে। তিনি বলেন, “আমরা সারা দেশে এই অ্যাপ নিয়ে কাজ করছি। এরই মধ্যে আমরা পুলিশ প্রশাসনের কাছে সহযোগিতা চেয়েছি, যেন দেশের সাড়ে ৬ হাজার থানা আমাদের সঙ্গে কাজ করে। পুলিশ প্রশাসন আশ্বাস দিয়েছে। এটা ভালো সংবাদ। কারণ, কোনো নারী বিপদে পড়লে, পুলিশ প্রশাসনই সবচেয়ে কার্যকরী ভূমিকা পালন করতে পারবে। এ ছাড়া সরকারি, বেসরকারি, এনজিও মিলে মোট ২২টি প্রতিষ্ঠানকে আমাদের কাজের সঙ্গে যুক্ত করেছি।’
ধর্ষণের হাত থেকে নারীদের রক্ষার বিষয়ে জালাল মির্জা বলেন, ‘আমরা হয়তো ধর্ষণকে পুরোপুরি বন্ধ করতে পারব না; তবে সকলের ঐক্যবদ্ধ চেষ্টায় তো ধর্ষণের সংখ্যা কমাতে পারব।’
ভবিষ্যতে আরও বড় পরিসরে এই অ্যাপের কাজ চালিয়ে যেতে চান জালাল মির্জা। তিনি বলেন, ‘আইন ও সালিস কেন্দ্রের (আসক) এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, ধর্ষণের সঙ্গে জড়িতদের মাত্র দশমিক ৪ শতাংশ প্রকৃতপক্ষে সাজা ভোগ করে। সামাজিকতার ভয়ে অনেকে মুখ খুলতে চায় না। আসকের এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, এ দেশে প্রতিদিন ১৭ থেকে ১৮ জন নারী ধর্ষণের শিকার হন। এর মধ্যে তিনটি শিশুও থাকে। আমরা ধর্ষণের এই সংখ্যা অর্ধেকে নামিয়ে আনার চেষ্টা করব। এটা আমরা করবই।’
যেভাবে 'বাঁচাও অ্যাপস' কাজ করবে
গুগল প্লে স্টোর থেকে এই অ্যাপ ইনস্টল করতে হবে। এর পর জরুরি যোগাযোগের জন্য নিজের পরিবার, বন্ধুদের মধ্যে তিনজনের ফোন নম্বর নির্বাচন করতে হয়। এই অ্যাপ স্মার্টফোনে ইনস্টল করা নারী যদি বিপদের আশঙ্কা করেন, তাহলে এই অ্যাপের ‘রেপ অ্যালার্ট’ লেখা অপশন ক্লিক করলে কাছাকাছি থাকা পরিবারের সদস্য, বন্ধু ও স্বেচ্ছাসেবকেরা সেই সতর্কবার্তা পেয়ে যাবেন। এর পর তাঁরা সহযোগিতা করার জন্য যুক্ত হতে পারবেন। এ ছাড়া সেই নারী নিজেকে নিরাপদ মনে করলে ‘সেইফ নাও’ লেখা সবুজ অপশনে ক্লিক করে সংশ্লিষ্টদের জানাতেও পারবেন।
এ দেশের সমাজ বাস্তবতায় ধর্ষণ শব্দটি বহুল প্রচারিত একটি শব্দ। এ দেশের বেশির ভাগ নারী প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ধর্ষণের শিকার হচ্ছেন। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ধর্ষণ বা যৌন নিপীড়নের অনেক পর ঘটনাটি সম্পর্কে জানা যাচ্ছে। অপরাধের বিষয়ে থানায় মামলা করা বা অন্য যেকোনো প্রশাসনিক পদক্ষেপ তো অনেক পরের বিষয়। এ দিয়ে তো আর অপরাধ সংঘটন থামানো যাচ্ছে না। এ ক্ষেত্রে এ ধরনের অপরাধের হাত থেকে ভুক্তভোগীকে বাঁচাতে আশা দেখাচ্ছে ‘বাঁচাও’ অ্যাপস, যা গত মাসে যাত্রা করেছে।
জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯-এর কারণে অনেক সময় এ ধরনের অপরাধ রোধ হচ্ছে ঠিক। কিন্তু তার হার এখনো কম। বিশেষত, এই জাতীয় জরুরি সেবা নম্বরের মাধ্যমে নাগরিকদের নানা ধরনের সেবা দেওয়া হয়। রয়েছে সরকারি আরও নানা উদ্যোগ। কিন্তু এর প্রতিটিরই কর্মপরিসর এত বড় যে, তা শুধু ধর্ষণ বা যৌন নিপীড়নের মতো অপরাধ থেকে নারীদের রক্ষায় তেমন বড় ভূমিকা রাখতে পারছে না। এ অবস্থায় বেসরকারি উদ্যোগে তৈরি করা ‘বাঁচাও’ অ্যাপস আশা দেখাচ্ছে নারী অধিকারকর্মীদের।
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, ২০২১ সালে অক্টোবর মাসে মোট ৩৫৪ জন নারী ও মেয়ে শিশু নির্যাতনের শিকার হয়েছে। এর মধ্যে ধর্ষণের শিকার ১০১ জন। তার মধ্যে রয়েছে ৪১ শিশু, যার মধ্যে তিনটি শিশু দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার এবং চার শিশুকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে। এ ছাড়া এই সময়ের মধ্যে ২ শিশুসহ ৭ জনকে ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে। এ অবস্থায় কিছু একটা করার উদ্যোগ নেন জালাল মির্জা।
জালাল মির্জা একজন কম্পিউটার প্রকৌশলী। ২০০১ সালে নিজের পরিবারেই ঘটে যায় ভয়াবহ এক ঘটনা। তাঁর অতি আপনজন ধর্ষণের শিকার হন। তাও একদিন নয়। স্বামী তাঁর বন্ধুদের দিয়ে দিনের পর দিন এই ধর্ষণ চালিয়ে গিয়েছিল। তাঁর সেই আপনজন এখন মানসিকভাবে অসুস্থ। এই অপরাধে ধর্ষকেরা শাস্তি পেলেও পরে জেল থেকে ছাড়া পেয়ে যায়। আর সেই ভুক্তভোগী এখন জীবন্মৃত হয়ে বেঁচে আছেন। কথা বলতে পারেন না, তেমন কাউকে চিনতেও পারেন না। এই ঘটনা জালাল মির্জার পরিবারকে রীতিমতো নাড়িয়ে দিয়ে যায়। ২০১৮ সালে মৃত্যুর আগের রাতে মা জালাল মির্জাকে কাছে ডেকে বলেছিলেন, ‘তুমি বাবা এত বড় কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার, পারলে কিছু করো, পারলে একটা মেয়েকে বাঁচাও।’
মায়ের সেই কথা রাখার চেষ্টা করেছেন জালাল মির্জা। এ দেশের নারীদের জন্য কিছু করার প্রত্যয় নিয়ে কাজ শুরু করেন। নিজের সেই আপনজনের মতো আর কেউ যেন ধর্ষণের শিকার না হয়, সে জন্য একটি অ্যাপ তৈরি করেন; নাম দেন—‘বাঁচাও’। গড়ে তোলেন বাঁচাও ডট লাইফ ফাউন্ডেশন। ফাউন্ডেশনের মোটো হিসেবে ঠিক করেন—‘আর একটাও ধর্ষণ হতে দেব না।’ নিজের ব্যক্তিগত ক্ষতই তাঁকে এ উদ্যোগে অনুপ্রেরণা দিয়েছে।
বাঁচাও ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) জালাল মির্জা বলেন, ‘এ দেশের মানুষের সচেতনতার আর সামাজিক প্রতিরোধের মাধ্যমে ধর্ষণ বন্ধ করা সম্ভব। আমরা এই অ্যাপস তৈরি করতে গিয়ে এক গবেষণায় দেখেছি, এ দেশের ৮০ শতাংশ নারী ধর্ষণের শিকার হন তাঁর আশপাশের ও কাছের মানুষদের মাধ্যমে। বিষয়টি মাথায় রেখে আমি এমন অ্যাপস তৈরি করেছি, যার মাধ্যমে একজন নারী বিপদের আশঙ্কা করলে “বাঁচাও অ্যাপস”-এর মাধ্যমে সাহায্য চাইতে পারবেন, যা তাঁকে বিপদ থেকে রক্ষা করতে পারবে। এ ছাড়া আমাদের দেশে পোশাক, খাবারের, যাতায়াতের জন্য অ্যাপস থাকলেও ব্যক্তি নিরাপত্তার জন্য তেমন কোনো অ্যাপস নেই। নিজের ব্যক্তিগত ক্ষত এবং নারীদের এই সমাজে নিরাপদ রাখতে ২০১৮ সালেই শুরু করি আমার এই অ্যাপ তৈরির কাজ।’
এই ‘বাঁচাও’ অ্যাপ জিপিএস প্রযুক্তি ব্যবহার করে কাজ করে। এ বিষয়ে জালাল মির্জা বলেন, ‘জিপিএস প্রযুক্তির এ অ্যাপে পিপল টু পিপল (পিটুপি) মডেল ব্যবহার করা হয়েছে। এতে “রেপ অ্যালার্ট” বাটন রয়েছে, যেখানে কিক্ল করলে এটি জিপিএসের মাধ্যমে বিপদে পড়া নারীর অবস্থান নির্দেশ করবে। এতে পরিবার, বন্ধু, স্বেচ্ছাসেবক ও পুলিশের কাছে ওই নারীর বিপদগ্রস্ত হওয়ার বার্তা চলে যাবে। তবে এ ক্ষেত্রে আরেকটা বিষয় জানিয়ে রাখা ভালো। সেটা হলো বাঁচাও অ্যাপ এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে, যেখানে বিপদে সাহায্য চাওয়া নারী চাইলে নিজের ফোন নম্বর গোপন রেখে যোগাযোগ করতে পারবেন।’
তথ্যপ্রযুক্তির উন্নতির যুগে শহরের নারীদের হাতে অ্যান্ড্রয়েড ফোন থাকলেও এ দেশের নিম্নবিত্ত ও গ্রামের নারীদের হাতে এখনো এ প্রযুক্তির মোবাইল সেট পৌঁছায়নি। আবার পরিসংখ্যান বলছে, শহরের তুলনায় গ্রামের নারীরা বেশি ধর্ষণের শিকার হচ্ছেন। গ্রামের নারীরা এই অ্যাপে কীভাবে অন্তর্ভুক্ত হবেন—সে বিষয়টি জানতে চাইলে জালাল মির্জা বলেন, ‘আমাদের দেশে অনেকের হাতে অ্যান্ড্রয়েড ফোন নেই। বিষয়টি আমাদের মাথায় আছে। যাদের স্মার্টফোন নেই, তাদের কথা চিন্তা করে আমরা বিটিআরসির কাছে বিকাশ ও নগদের মতো শর্টকোডের আবেদন করছি।’
অক্টোবরে যাত্রা করা এই অ্যাপ এরই মধ্যে অনেকের কাছে পৌঁছেছে বলে দাবি করেন জালাল মির্জা। তিনি বলেন, ‘অক্টোবর থেকে শুরু হয়ে এ পর্যন্ত এই অ্যাপ ৬০ লাখ মানুষের কাছে পৌঁছেছে। আর ১ লাখ মানুষ এই অ্যাপ ডাউনলোড করেছে। দেড় মাসে এই সংখ্যা আমাকে আশাবাদী করে তুলেছে। বিভাগীয় শহরের মধ্যে ঢাকাতে ডাউনলোডের সংখ্যা বেশি। এ পর্যন্ত বিপদের পড়ে সহযোগিতা চেয়ে ধর্ষণ থেকে রক্ষা পাওয়ার ঘটনা ১৬৫ টি।’
তবে সাফল্যের গল্প যেমন আছে, তেমনি আছে ব্যর্থতার গল্পও, যা ব্যথিত করেছে জালাল মির্জাকেও। তিনি বলেন, ‘সহযোগিতা চাওয়ার পর পাঁচটি ঘটনায় আমরা তেমন কিছু করতে পারিনি। কারণ, সহযোগিতা পাওয়ার পর সেই ফোন নেটওয়ার্কের বাইরে চলে যায়। আমাদের ধারণা, বিপদগ্রস্ত নারীদের থেকে সে সময় ফোন কেড়ে নেওয়া হয়েছে।’
জালাল মির্জা স্বপ্ন দেখেন এই অ্যাপ সারা দেশে ছড়িয়ে পড়বে। মানুষ এর সঙ্গে যুক্ত হবে এবং বিপদগ্রস্ত নারীদের সহায়তায় এগিয়ে আসবে। তিনি বলেন, “আমরা সারা দেশে এই অ্যাপ নিয়ে কাজ করছি। এরই মধ্যে আমরা পুলিশ প্রশাসনের কাছে সহযোগিতা চেয়েছি, যেন দেশের সাড়ে ৬ হাজার থানা আমাদের সঙ্গে কাজ করে। পুলিশ প্রশাসন আশ্বাস দিয়েছে। এটা ভালো সংবাদ। কারণ, কোনো নারী বিপদে পড়লে, পুলিশ প্রশাসনই সবচেয়ে কার্যকরী ভূমিকা পালন করতে পারবে। এ ছাড়া সরকারি, বেসরকারি, এনজিও মিলে মোট ২২টি প্রতিষ্ঠানকে আমাদের কাজের সঙ্গে যুক্ত করেছি।’
ধর্ষণের হাত থেকে নারীদের রক্ষার বিষয়ে জালাল মির্জা বলেন, ‘আমরা হয়তো ধর্ষণকে পুরোপুরি বন্ধ করতে পারব না; তবে সকলের ঐক্যবদ্ধ চেষ্টায় তো ধর্ষণের সংখ্যা কমাতে পারব।’
ভবিষ্যতে আরও বড় পরিসরে এই অ্যাপের কাজ চালিয়ে যেতে চান জালাল মির্জা। তিনি বলেন, ‘আইন ও সালিস কেন্দ্রের (আসক) এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, ধর্ষণের সঙ্গে জড়িতদের মাত্র দশমিক ৪ শতাংশ প্রকৃতপক্ষে সাজা ভোগ করে। সামাজিকতার ভয়ে অনেকে মুখ খুলতে চায় না। আসকের এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, এ দেশে প্রতিদিন ১৭ থেকে ১৮ জন নারী ধর্ষণের শিকার হন। এর মধ্যে তিনটি শিশুও থাকে। আমরা ধর্ষণের এই সংখ্যা অর্ধেকে নামিয়ে আনার চেষ্টা করব। এটা আমরা করবই।’
যেভাবে 'বাঁচাও অ্যাপস' কাজ করবে
গুগল প্লে স্টোর থেকে এই অ্যাপ ইনস্টল করতে হবে। এর পর জরুরি যোগাযোগের জন্য নিজের পরিবার, বন্ধুদের মধ্যে তিনজনের ফোন নম্বর নির্বাচন করতে হয়। এই অ্যাপ স্মার্টফোনে ইনস্টল করা নারী যদি বিপদের আশঙ্কা করেন, তাহলে এই অ্যাপের ‘রেপ অ্যালার্ট’ লেখা অপশন ক্লিক করলে কাছাকাছি থাকা পরিবারের সদস্য, বন্ধু ও স্বেচ্ছাসেবকেরা সেই সতর্কবার্তা পেয়ে যাবেন। এর পর তাঁরা সহযোগিতা করার জন্য যুক্ত হতে পারবেন। এ ছাড়া সেই নারী নিজেকে নিরাপদ মনে করলে ‘সেইফ নাও’ লেখা সবুজ অপশনে ক্লিক করে সংশ্লিষ্টদের জানাতেও পারবেন।
মার্কেট ইন্টেলিজেন্স ফার্ম সিমিলার ওয়েবের মতে, প্রতিদিনের সক্রিয় ব্যবহারকারীদের দিক থেকে থ্রেডসের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করছে ব্লুস্কাই। বর্তমানে ব্লুস্কাইয়ের অ্যাপটি যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের অ্যাপল অ্যাপ স্টোরে সবচেয়ে বেশি ডাউনলোড করা অ্যাপ। এরপরেই রয়েছে থ্রেডস।
১৬ ঘণ্টা আগেযুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার সানি ভ্যালে শহরে অত্যাধুনিক ও পরিবেশবান্ধব পাঁচতলা অফিস ভবন তৈরি করেছে টেক জায়ান্ট গুগল। এই ভবনের বিশেষত্ব হলো—এটি তৈরিতে প্রথমবারের মতো ‘মাস টিম্বার’ ব্যবহার করেছে কোম্পানিটি। কাঠ বিভিন্নভাবে প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে মাস টিম্বার তৈরি করা হয়। তাই ভবনটি...
২ দিন আগেপাশ্চাত্যে উৎসবের মৌসুমে বা নতুন বছর আসার আগে প্রায় সবাই ছুটি উপভোগ করেন। এই সময়টিতে পরিবার এবং বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটানো, বিশ্রাম নেওয়া এবং গত বছরের কঠিন কাজের চাপ থেকে মুক্তি পাওয়া একটি সাধারণ বিষয়। অনেক কোম্পানি এসময় কর্মীদের ছুটি দেয়, যাতে তারা শারীরিক এবং মানসিকভাবে পুনরুজ্জীবিত হতে পারে। তবে এ
২ দিন আগেদৈনন্দিন জীবনে ব্যবহারে জন্য টেকসই স্মার্টফোনের চাহিদা অনেক বেশি। এজন্য মিড রেঞ্জের টেকসই স্মার্টফোন ‘অনার এক্স ৯ সি’ উন্মোচন করেছে অনার। এই মডেল গত অক্টোবর মাসে লঞ্চ হওয়া এক্স ৯ বি–এর উত্তরসূরি। ফোনটি হাত থেকে পড়ে গেলেও অক্ষত থাকবে বলে কোম্পানিটি দাবি করছে। ফোনটির ব্যাটারি চার্জ ২ শতাংশে নেমে আসে ত
২ দিন আগে