Ajker Patrika
সাক্ষাৎকার

অস্ট্রেলিয়াতেই সম্ভব! পডকাস্ট রেকর্ডিংয়ের সময় হঠাৎ ঘরের আড়ায় হাজির অজগর

অস্ট্রেলিয়াতেই সম্ভব! পডকাস্ট রেকর্ডিংয়ের সময় হঠাৎ ঘরের আড়ায় হাজির অজগর
আপডেট : ১২ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৬: ৪১

ধরুন আপনি একটি সাক্ষাৎকার দিচ্ছেন। এ সময় হঠাৎই আপনার পেছনের আড়া থেকে নেমে আসতে দেখা গেল একটি অজগরকে। অবস্থাটা কেমন হবে ভাবুন তো? সত্যি এমন এক পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয় অ্যান্ড্রু ওয়ার্ড নামের অস্ট্রেলিয়ার এক ব্যক্তিকে। 

সাপটি যখন হাজির হয় রিগেন ফারমারস মিউচুয়াল নামের এক প্রতিষ্ঠানের সদস্য অ্যান্ড্রু ওয়ার্ড ভিডিও লিংকের মাধ্যমে একটি সাক্ষাৎকার দিচ্ছিলেন। সিডনিভিত্তিক প্রতিষ্ঠান দ্য স্ট্র্যাটেজি গ্রুপের প্রযোজিত পডকাস্ট ‘ফ্রেশ পারসপেকটিভসে’র জন্য ক্যামেরার সামনে হাজির হয়েছিলেন তিনি। এসব তথ্য জানা যায় ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির এক প্রতিবেদনে।

ওয়ার্ড উপস্থাপকদের সঙ্গে যখন কথা বলছিলেন তখনই হঠাৎ তাঁর পেছনে অবস্থিত আড়া থেকে সাপটি বেরিয়ে আসে। অপ্রত্যাশিত অনুপ্রবেশে কথোপকথন একটি নাটকীয় মোড় নেয়। দুই উপস্থাপক এবং আলোচকের মনোযোগ চলে যায় ওটার দিকে। অবশ্য ওয়ার্ড প্রথমে অজগরটির উপস্থিতি টের পাননি। 

একই সঙ্গে উভয় উপস্থাপক ঝুলে থাকা কালো সাপটির দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করে চিৎকার করে বলে ওঠেন, ‘আপনার পেছনে একটি সাপ।’ 

অবশ্য ওয়ার্ড সাপটিকে পর্যবেক্ষণ করলেও শান্ত থাকেন। তিনি বলেন, ‘এটি কেবল একটি কার্পেট অজগর।’ তারপর মজা করে যোগ করেন, ‘ সে আমাদের ইঁদুর নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা।’

তবে কার্পেট অজগর বেশ নির্দোষ ধরনের সাপ। অস্ট্রেলিয়ায় বাড়ির আঙিনায় এদের প্রায়ই দেখা মেলে। গাছে চড়ায় এরা খুব দক্ষ। দৈর্ঘ্যে সাধারণত নয় ফুট ছাড়িয়ে গেলেও নির্বিষ সাপটি পোষা প্রাণী হিসেবে বেশ জনপ্রিয়।

অস্ট্রেলিয়ার সরকারি ওয়েবসাইট অনুসারে এই সাপ নিশাচর এবং ওজনে পাঁচ কেজি পর্যন্ত হয়। শক্তিশালী এই সাপটি কখনো কখনো তাঁর এলাকায় প্রধান শিকারি প্রাণী হিসেবে কাজ করে। এদের চামড়া কালো থেকে শুরু করে গাঢ় বাদামি ফোঁটাযুক্ত এমনকি সোনালি হয়।

গায়ের রঙের কারণে নিজস্ব পরিবেশে সহজেই লুকিয়ে থাকতে পারে এই সরীসৃপেরা। অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন আদিবাসী গোষ্ঠীর লোককাহিনিতে কার্পেট পাইথন বা অজগরের উপস্থিতি দেখা যায়। এরা চাপ দিয়ে শ্বাসরোধ করে তাদের শিকারকে হত্যা করে। এই অজগরদের খাবার মেনুতে থাকে ছোট স্তন্যপায়ী প্রাণী, বাদুড়, পাখি, ছোট সরীসৃপ প্রভৃতি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

অফিসে ঘন ঘন টয়লেটে যাওয়ায় চাকরি হারালেন প্রকৌশলী

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৬: ৪৯
প্রতীকী ছবি। ছবি: পিক্সাবে
প্রতীকী ছবি। ছবি: পিক্সাবে

কাজের মধ্যে ঘন ঘন টয়লেটে যাওয়ার জন্য বিরতি নিয়ে চাকরি খুইয়েছেন এক চীনা প্রকৌশলী। চীনের পূর্বাঞ্চলের জিয়াংসু প্রদেশের ওই প্রকৌশলী ঘন ঘন এবং প্রতিবার এক ঘণ্টার বেশি সময় টয়লেটে কাটাচ্ছিলেন। যদিও তাঁর দাবি ছিল, তিনি অর্শ বা পাইলসের সমস্যায় ভুগছেন।

হংকং থেকে প্রকাশিত ইংরেজি ভাষার দৈনিক সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টের খবরে বলা হয়েছে জিয়াংসু প্রদেশের লি নামক ওই ব্যক্তি গত বছর এপ্রিল থেকে মে মাসের মধ্যে এক মাসে ১৪ বার টয়লেটে যাওয়ার জন্য বিরতি নেন। এর মধ্যে একবার তিনি চার ঘণ্টা টয়লেটে কাটান। এর জেরে তাঁকে চাকরি হারাতে হয়।

এই খবর সম্প্রতি সাংহাই ফেডারেশন অব ট্রেড ইউনিয়নসের মাধ্যমে প্রকাশিত হয়।

ওই ব্যক্তি বেআইনিভাবে চুক্তি বাতিলের জন্য কোম্পানির বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করলে বিষয়টি সামনে আসে। লি প্রমাণ হিসেবে গত বছর মে ও জুন মাসে তাঁর সঙ্গীর কেনা অর্শের ওষুধ এবং চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে তাঁর হাসপাতালে ভর্তি ও অস্ত্রোপচারের নথিও পেশ করেন।

এরপর লি ওই কোম্পানির বিরুদ্ধে মামলা করে বেআইনিভাবে চুক্তি বাতিলের দায়ে ৩ লাখ ২০ হাজার ইউয়ান ক্ষতিপূরণ দাবি করেন। অন্যদিকে কোম্পানি লি-এর ঘন ঘন এবং দীর্ঘ সময় ধরে বিরতিতে থাকার প্রমাণস্বরূপ সিসিটিভি ফুটেজ আদালতে জমা দেয়।

আদালতের বিশ্বাস, লি টয়লেটে যে সময় ব্যয় করেছেন, তা তাঁর ‘শারীরিক প্রয়োজনের চেয়ে অনেক বেশি’ ছিল। এ ছাড়া লি যে ডাক্তারি নথি জমা দিয়েছেন, তা তাঁর বহুবার দীর্ঘ পানির বিরতি নেওয়ার পরের সময়ের। চুক্তিতে প্রয়োজন থাকা সত্ত্বেও লি তাঁর অসুস্থতার কথা কোম্পানিকে আগে জানাননি বা অসুস্থতাজনিত ছুটির জন্য আবেদনও করেননি।

কোম্পানি লি-কে তাঁর অনুপস্থিতি লক্ষ্য করে প্রথমে একটি চ্যাট অ্যাপের মাধ্যমে যোগাযোগ করে, কিন্তু কোনো উত্তর পায়নি। লি-এর পদে কাজ করার জন্য তাঁকে সব সময় কাজের অনুরোধে সাড়া দিতে হয়। সিসিটিভি ফুটেজ পরীক্ষা করার পর কোম্পানি তাঁকে বরখাস্ত করে।

লি ২০১০ সালে কোম্পানিতে যোগ দেন এবং ২০১৪ সালে একটি উন্মুক্ত-মেয়াদি চুক্তি নবায়ন করেন। চুক্তি অনুযায়ী, অনুমতি ছাড়া নির্দিষ্ট সময়ের জন্য নিজের কর্মস্থল ত্যাগ করাকে অনুপস্থিতি বলে গণ্য করা হবে এবং ১৮০ দিনের মধ্যে মোট তিন কার্যদিবস অনুপস্থিত থাকলে চুক্তি সঙ্গে সঙ্গে বাতিল হয়ে যাবে।

বরখাস্ত করার আগে কোম্পানি ট্রেড ইউনিয়নের অনুমতিও নিয়েছিল। দুই দফা বিচার পর্বের পর আদালত অবশেষে দুই পক্ষের মধ্যে মধ্যস্থতা করেন এবং লি-এর কোম্পানিতে অবদানের কথা এবং বেকারত্বের পর তাঁর অসুবিধার কথা বিবেচনা করে কোম্পানিকে ৩০ হাজার ইউয়ান ভাতা দিয়ে মামলাটি মিটিয়ে নিতে রাজি করান।

চীনে এ ধরনের বিরতি নিয়ে বিতর্ক এই প্রথম নয়। এর আগে ২০২৩ সালেও জিয়াংসু প্রদেশের আরেক ব্যক্তিকে একই অভিযোগে বরখাস্ত করা হয়েছিল। তাঁর দীর্ঘতম বিরতি ছিল এক দিনে ছয় ঘণ্টা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ব্যর্থ ব্যবসায়ী ফুড ডেলিভারি করে লাখপতি

ফিচার ডেস্ক, ঢাকা 
আপডেট : ১২ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৩: ১১
প্রতীকী ছবিটি এআই দিয়ে তৈরি
প্রতীকী ছবিটি এআই দিয়ে তৈরি

সাধারণত অস্থায়ী পেশা হিসেবে ফুড ডেলিভারির চাকরি অনেকেই করেন। কেউ আবার মূল চাকরির ফাঁকে ফুড ডেলিভারি দেন অতিরিক্ত আয়ের জন্য। কিন্তু এ কাজ করেও যে লাখ টাকার মালিক হওয়া যায়, তা দেখিয়ে দিলেন চীনের সাংহাই শহরের ঝাং শুয়েচিয়াং নামের এক তরুণ।

ফুড ডেলিভারি করতে করতে মাত্র পাঁচ বছরে ১১ লাখ ২০ হাজার ইউয়ান সঞ্চয় করেছেন তিনি, যা বাংলাদেশের মুদ্রায় প্রায় ১ কোটি ৯৩ লাখ ৭৬ হাজার টাকার সমান। প্রতিদিন গড়ে ১৪ ঘণ্টা কাজ আর কঠোর মিতব্যয়িতাই তাঁকে লাখপতি বানিয়েছে। সামাজিক মাধ্যমে তাঁকে নিয়ে চলছে ব্যাপক আলোচনা।

ব্যর্থ ব্যবসা, তারপর নতুন শুরু

ঝাংয়ের বাড়ি ফুজিয়ান প্রদেশের ঝাংঝো শহরে। ২০১৯ সালে মাত্র ২০ বছর বয়সে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর স্বপ্ন নিয়ে তিনি একটি নাশতার দোকান চালু করেন। শুরুতে কিছুটা আশাব্যঞ্জক হলেও কয়েক মাসের মধ্যেই ব্যবসার অবস্থা হয়ে যায় টালমাটাল। লোকসান দিন দিন বাড়তে থাকে, ক্রেতা কমে যায় এবং প্রতিদিনের খরচ টানতে গিয়ে তিনি চাপের মুখে পড়েন। শেষ পর্যন্ত দোকানটি বন্ধ করতে বাধ্য হন এবং তাঁর কাঁধে চাপে প্রায় ৫০ হাজার ইউয়ানের ঋণ।

চীনের সাংহাই শহরের ঝাং শুয়েচিয়াং। ফুড ডেলিভারি করতে মাত্র পাঁচ বছরে বাংলাদেশের মুদ্রায় প্রায় ১ কোটি ৯৩ লাখ ৭৬ হাজার টাকার সমান আয় করেন। ছবি: এসইটিএন
চীনের সাংহাই শহরের ঝাং শুয়েচিয়াং। ফুড ডেলিভারি করতে মাত্র পাঁচ বছরে বাংলাদেশের মুদ্রায় প্রায় ১ কোটি ৯৩ লাখ ৭৬ হাজার টাকার সমান আয় করেন। ছবি: এসইটিএন

এ ব্যর্থতা তরুণ ঝাংকে মানসিকভাবে দমিয়ে দেয়। কিন্তু তিনি পরিবারকে বিষয়টি বুঝতে দিতে চাননি। তাই সবকিছু গুছিয়ে নিয়ে একাই রওনা দেন সাংহাইয়ের পথে। বড় শহরে গিয়ে নতুন করে শুরু করার সিদ্ধান্ত তাঁর জন্য সহজ ছিল না। তবুও লক্ষ্য ছিল যত দ্রুত সম্ভব ঋণ শোধ করা, আবার উঠে দাঁড়ানোর মতো মূলধন জোগাড় করা এবং নিজের জন্য একটি নতুন পথ তৈরি করা।

১৪ ঘণ্টার কর্মদিবস এবং অবিশ্বাস্য পরিশ্রম

সাংহাইয়ের মিনহাং জেলায় উঝং রোডের একটি ডেলিভারি স্টেশনে তিনি কাজ শুরু করেন। সকাল ১০টা ৪০ থেকে রাত ১টা পর্যন্ত বৃষ্টি, ঠান্ডা কিংবা গরম—সব পরিস্থিতিতেই তিনি মাঠে থাকেন ডেলিভারির কাজে। সবার আগে অর্ডার ধরতে এবং দ্রুত ডেলিভারি দিতে তিনি সব সময় ছুটে চলেন। ডেলিভারি স্টেশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইয়ান বলেন, ‘ছেলেটা খুব কম কথা বলে, কিন্তু কাজ করে অবিশ্বাস্য পরিশ্রম দিয়ে। প্রতিদিনই দেখি সে সময় বাঁচাতে দৌড়াচ্ছে।’

কাজের দক্ষতার কারণে সহকর্মীরা তাঁকে ডাকেন ‘অর্ডারের রাজা’ নামে। টানা দীর্ঘ শিফটের পরও তিনি প্রতিদিন ৮ ঘণ্টার বেশি ঘুম নিশ্চিত করেন, যাতে পরদিন আবার পুরো শক্তিতে কাজ করতে পারেন।

কঠোর মিতব্যয়িতা

ঝাংয়ের সঞ্চয়ের সবচেয়ে বড় রহস্য তাঁর মিতব্যয়ী জীবনযাপন। প্রয়োজন ছাড়া তিনি কোনো খরচ করেন না। বাইরে খাওয়া, বিনোদন, ভ্রমণ—কোনো কিছুতেই ব্যয় করেন না তিনি। এমনকি চন্দ্র নববর্ষেও তিনি বাড়ি যান না। তখন শহরে থেকে উচ্চমূল্যের অর্ডার ডেলিভারি করেন। এই কঠোর জীবনযাপন ও পরিশ্রম মিলিয়ে পাঁচ বছরে তাঁর মোট আয় দাঁড়ায় প্রায় ১৪ লাখ ইউয়ান। প্রয়োজনীয় খরচ বাদ দিয়ে সঞ্চয় হয় ১১ লাখ ২০ হাজার ইউয়ান।

ঝাং জানান, তাঁর পরিবার এখনো জানে না যে তিনি ঋণ শোধ করে বড় অঙ্কের সঞ্চয় করেছেন। তিনি বলেন, ‘একবার ব্যর্থ হয়েছি বলে থেমে থাকব না। ভবিষ্যতে আবার ব্যবসা শুরু করার পুঁজি হিসেবেই এ টাকা জমাচ্ছি।’

চীনের তরুণদের নতুন পেশা হিসেবে ডেলিভারি

অর্থনৈতিক ধাক্কা ও চাকরির বাজারের পরিবর্তনের মধ্যে চীনে ডেলিভারি পেশা দ্রুত জনপ্রিয় হচ্ছে। নিয়োগ প্ল্যাটফর্ম ঝাওপিনের এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, দেশটিতে ডেলিভারি কর্মীদের মধ্যে কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় ডিগ্রিধারীর হার দুই বছরে ১২ শতাংশ থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৮ শতাংশে। আয়ও অনেক অফিসকর্মীর চেয়ে বেশি। বেইজিং বা সাংহাইয়ের মতো বড় শহরে যেখানে সাধারণ একজন অফিসকর্মী মাসে গড়ে আয় করেন ৬ হাজার ইউয়ান, সেখানে ডেলিভারি ড্রাইভারদের গড় আয় মাসে ৭ হাজার ৩৫০ ইউয়ান পর্যন্ত। ব্যস্ত দিনে ঝাংয়ের মতো পরিশ্রমী ডেলিভারি কর্মীরা দিনে হাজার ইউয়ানের বেশি আয় করতে পারেন।

সূত্র: ভিএন এক্সপ্রেস

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বিমানের ডানায় আটকে গেল প্যারাস্যুট, অলৌকিকভাবে বাঁচলেন স্কাইডাইভার

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১২ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯: ৩৯
বিমানটির ডানায় এভাবেই আটকে গিয়েছিলেন স্কাইডাইভার। ছবি: সংগৃহীত
বিমানটির ডানায় এভাবেই আটকে গিয়েছিলেন স্কাইডাইভার। ছবি: সংগৃহীত

অস্ট্রেলিয়ার ফার নর্থ কুইন্সল্যান্ডে গত ২০ সেপ্টেম্বর ঘটে বিস্ময়কর সেই দুর্ঘটনাটি। সেদিন প্রায় ৪ হাজার ৬০০ মিটার উচ্চতায় মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে আসেন এক স্কাইডাইভার। বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) প্রকাশিত অস্ট্রেলিয়ান ট্রান্সপোর্ট সেফটি ব্যুরোর চূড়ান্ত প্রতিবেদনে ঘটনাটির বিস্তারিত উঠে এসেছে।

এই বিষয়ে যুক্তরাজ্য-ভিত্তিক ইনডিপেনডেন্ট জানিয়েছে, ফার নর্থ কুইন্সল্যান্ডের টুলি এয়ারপোর্টের আকাশে ১৭ জন প্যারাস্যুটার একটি ‘সিক্সটিন-ওয়ে ফরমেশন জাম্পে’ অংশ নিচ্ছিলেন। তাঁদের মধ্যে প্রথমজন যখন বিমান থেকে বের হচ্ছিলেন, ঠিক তখনই তাঁর রিজার্ভ প্যারাস্যুটের হ্যান্ডেলটি বিমানের উইং ফ্ল্যাপে আটকে যায়। এর ফলে মুহূর্তের মধ্যেই রিজার্ভ প্যারাস্যুট খুলে যায় এবং বাতাসের হঠাৎ টানে পেছনের দিকে ছিটকে গিয়ে বিমানের ডানায় ধাক্কা খান এবং আটকে যান ওই স্কাইডাইভার। এতে বিমানের ডানায় ও স্ট্যাবিলাইজারে গুরুতর ক্ষতি হয়।

প্যারাস্যুটের দড়ি স্ট্যাবিলাইজারের চারপাশে পেঁচিয়ে যাওয়ায় স্কাইডাইভার ঝুলন্ত অবস্থায় অচল হয়ে পড়েন। অন্য প্যারাস্যুটারেরা জাম্প সম্পন্ন করলেও দুজন দরজায় দাঁড়িয়ে পরিস্থিতি দেখছিলেন। ঝুলে থাকা প্যারাস্যুটার জীবন বাঁচাতে তাঁর হুক নাইফ বের করে রিজার্ভ প্যারাস্যুটের ১১টি লাইন কেটে নিজেকে মুক্ত করেন। এরপর তিনি মূল প্যারাস্যুট খুলতে সক্ষম হন, যদিও রিজার্ভ প্যারাস্যুটের কিছু লাইন তখনো তাঁকে জড়িয়ে ছিল।

এদিকে পাইলট হঠাৎ বিমানটিকে ওপরের দিকে ঢলে যেতে এবং গতি কমে যেতে দেখে প্রথমে ভেবেছিলেন বিমানটিতে ত্রুটি হয়েছে। পরে তাঁকে জানানো হয়, একজন স্কাইডাইভার বিমানের পেছনে ডানায় ঝুলে আছেন। এ অবস্থায় পাইলট জরুরি ‘মে ডে’ বার্তা পাঠান এবং প্রয়োজনে নিজেও বেরিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন।

অবশেষে ২,৫০০ ফুট উচ্চতায় এসে পাইলট বুঝতে পারেন, বিমানটি তাঁর নিয়ন্ত্রণেই আছে। ছোট-খাটো আঘাত নিয়ে নিরাপদেই অবতরণ করেন ওই স্কাইডাইভার এবং পাইলটও ক্ষতিগ্রস্ত বিমানটিকে নিরাপদে অবতরণ করাতে সক্ষম হন।

এই ঘটনার পর স্কাইডাইভারদের প্রতি এক সতর্কবার্তায় ‘অস্ট্রেলিয়ান ট্রান্সপোর্ট সেফটি ব্যুরো’ বলেছে—বিমানের দরজার কাছে প্যারাস্যুটের হ্যান্ডেল সম্পর্কে অতিরিক্ত সতর্ক হতে হবে এবং জরুরি অবস্থার জন্য হুক নাইফ অবশ্যই সঙ্গে রাখতে হবে। ব্যুরো আরও জানিয়েছে, বিমানের ওজন ও ভারসাম্য নির্ণয় স্কাইডাইভিং অভিযানের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ অতীতে এসব কারণে প্রাণঘাতী দুর্ঘটনা ঘটেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

সময়ের আগে অফিসে যাওয়ায় চাকরিচ্যুত নারী

ফিচার ডেস্ক, ঢাকা 
আপডেট : ১১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৪: ৪৯
কর্মক্ষেত্রে আস্থা ও প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ নীতিমালা মেনে চলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রতীকী ছবি: ফ্রিপিক
কর্মক্ষেত্রে আস্থা ও প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ নীতিমালা মেনে চলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রতীকী ছবি: ফ্রিপিক

নিয়ম শৃঙ্খলা বড়ই আজব জিনিস। যেমন, সময় মতো অফিসে উপস্থিত হওয়া নিয়মের মধ্যে পড়ে। কিন্তু সময়ের আগে যদি নিয়মিত নিয়ম নেমে অফিস করতে শুরু করেন, আর তাতে যদি অফিস আপত্তি জানায়, সেটা আবার শৃঙ্খলা ভঙ্গের মধ্যে পড়তে পারবে! অন্তত স্পেনের একটি আদালত তাই বলছেন। নির্দিষ্ট সময়ে বা আগে অফিসে উপস্থিত হয়ে চাকরি হারিয়েছেন সে দেশের এক নারী কর্মী! চাকরি ফিরে পেতে তিনি গিয়েছিলেন আদালতে। আদালত জানিয়েছেন, তিনিই আসলে দোষ করেছেন!

স্পেনের আলিকান্তে অঞ্চলের একটি লজিস্টিক প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ২২ বছর বয়সী এক নারী কর্মীর চাকরিচ্যুতি দেশটিতে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। কারণ, তিনি নিয়মিত নির্ধারিত সময়ের আগেই অফিসে পৌঁছাতেন। প্রতিষ্ঠানটি মনে করে, এই আচরণ বরং কাজের প্রবাহে বিঘ্ন ঘটাচ্ছিল।

চাকরিচ্যুত হওয়ার পর সেই নারী আদালতে মামলা করেছেন। তথ্য অনুযায়ী, তাঁর বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠান বিনা অনুমতিতে সময়ের আগে অফিসে হাজিরা দেওয়ার এবং প্রতিষ্ঠানের ব্যবহৃত গাড়ি বিক্রি করার অভিযোগে তাঁকে বরখাস্ত করে। তিনি এই বরখাস্তের বিরুদ্ধে ভ্যালেন্সিয়ার সুপ্রিম কোর্টে আপিল করেন।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, আদালতে তাঁর যুক্তি, অতিরিক্ত কাজের চাপের কারণে আগে আসা প্রমাণসাপেক্ষ না হওয়ায় গ্রহণযোগ্য মনে হয়নি। ফলে প্রাথমিকভাবে বরখাস্তের রায় শ্রম আইন অনুযায়ী বৈধ ধরা হয়েছে।

নিয়মিত ৩০ থেকে ৪৫ মিনিট আগে অফিসে পৌঁছানো

নারী কর্মীর চাকরির চুক্তিতে স্পষ্টভাবে উল্লেখ ছিল, তাঁর কর্মঘণ্টা শুরু হবে সকাল ৭টা ৩০ মিনিটে। কিন্তু তিনি প্রায় প্রতিদিনই নির্ধারিত সময়ের ৪৫ মিনিট আগে, অর্থাৎ সকাল ৬টা ৪৫ মিনিটে অফিসে পৌঁছাতেন। এই অভ্যাস দীর্ঘ সময় ধরে চলতে থাকে। এতে তাঁর সুপারভাইজারদের মধ্যে ধীরে ধীরে বিরক্তি ও উদ্বেগ সৃষ্টি হতে থাকে। ২০২৩ সালে প্রতিষ্ঠানটি তাঁকে সতর্ক করার জন্য একাধিকবার মৌখিকভাবে এবং লিখিত নোটিশ জারি করে। নোটিশে পরিষ্কারভাবে উল্লেখ করা হয়েছিল, কর্মীকে অবশ্যই চুক্তিভিত্তিক সময় মেনে অফিসে উপস্থিত হতে হবে। তবে এসব সতর্কতা উপেক্ষা করে তিনি আগেভাগে অফিসে আসা চালিয়ে যান, যা কর্মক্ষেত্রে নিয়ম মেনে চলার ক্ষেত্রে বড় ধরনের সমস্যা হিসেবে বিবেচিত হয়।

সতর্কতার পরও অভ্যাস না বদলানো

প্রতিষ্ঠানের একাধিক সতর্কতা অগ্রাহ্য করে তিনি আরও ১৯ বার সময়ের আগে অফিসে এসে হাজিরা দেওয়ার চেষ্টা করেন। এমনকি তিনি ডিউটি শুরুর আগেই প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা অ্যাপ্লিকেশনে লগইন করতেও উদ্যোগ নেন, যা প্রতিষ্ঠানটির নিয়ম বিরোধী।

প্রতিষ্ঠানটির অভিযোগ

আদালতে প্রতিষ্ঠানটি যুক্তি দিয়েছে, আগেভাগে আসাকে ইতিবাচক মনে হলেও বাস্তবে তা দলগত কাজে কোনো সুফল আনছিল না। প্রতিষ্ঠানটি জানায়—

  • ওই সময় সহকর্মীদের প্রস্তুতি ছাড়া তাঁকে কোনো কাজ দেওয়া যেত না।
  • কাজের প্রবাহ নির্দিষ্ট সমন্বয়ের ওপর নির্ভরশীল।
  • তাঁর আগাম উপস্থিতি কর্মপ্রবাহের ভারসাম্য নষ্ট করছিল।

প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, ব্যক্তিগত সিদ্ধান্তে আগাম কাজ শুরুর চেষ্টা দলগত সহযোগিতা ব্যাহত করছিল।

কর্মীর যুক্তি আদালতে গ্রহণযোগ্যতা পায়নি

কর্মী দাবি করেন, অতিরিক্ত কাজের চাপ সামলাতে তাঁর বেশি সময় প্রয়োজন ছিল। তবে আদালতে এই দাবি প্রমাণ করার মতো কোনো নথি তিনি দিতে পারেননি। সময়ের আগে অফিসে আসার বাইরে তাঁর বিরুদ্ধে অফিসের অনুমতি ছাড়া প্রতিষ্ঠানের ব্যবহৃত একটি গাড়ি বিক্রি করার গুরুতর অভিযোগ ওঠে।

বিচারকের সিদ্ধান্ত

বিচারক রায়ে বলেন, কর্মকর্তার নির্দেশ অমান্য, নিয়মভঙ্গ এবং একই আচরণ বারবার পুনরাবৃত্তি স্প্যানিশ শ্রম আইনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ। তাই কোনো ক্ষতিপূরণ ছাড়াই তাঁকে বরখাস্ত করা আইনসম্মত।

শ্রম আইন বিশেষজ্ঞ আলবের্তো পায়া মন্তব্য করেন, এই রায় প্রমাণ করে, কর্মক্ষেত্রে আস্থা ও প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ নীতিমালা মেনে চলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিতর্ক

ঘটনার খবর প্রকাশ্যে আসার পর স্প্যানিশ সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়। অনেকে বিস্ময় প্রকাশ করে লিখেছেন, ‘দেরি করলে শাস্তি, আগে এলে বরখাস্ত। তাহলে কর্মীর মূল্যায়ন কোথায়!’ অন্যদিকে কেউ কেউ প্রতিষ্ঠানের সিদ্ধান্তকে সমর্থন করে বলছেন, নির্ধারিত নিয়ম ভাঙা কোনোভাবেই প্রশংসনীয় নয়।

সূত্র: ভিএন এক্সপ্রেস

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত