Ajker Patrika

‘সবচেয়ে খাড়া’ রেলপথ ভ্রমণে রোমাঞ্চে কাঁটা দেবে শরীর 

ইশতিয়াক হাসান
আপডেট : ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১৬: ১৫
‘সবচেয়ে খাড়া’ রেলপথ ভ্রমণে রোমাঞ্চে কাঁটা দেবে শরীর 

অস্ট্রেলিয়ার ব্লু মাউন্টেন ইউনেসকো ঘোষিত বিশ্ব ঐতিহ্যগুলোর একটি। দুরারোহ পর্বত, গভীর বনানী, জলপ্রপাত এবং দৃষ্টিনন্দন সব গ্রামের জন্য জায়গাটি বিখ্যাত। তবে এর আরেকটি বড় আকর্ষণ আছে, সেটি পর্বতের বুক চিরে চলে যাওয়া অবিশ্বাস্যরকম খাড়া এক রেলপথ। গিনেস বুকের হিসাবেও এটি সবচেয়ে খাড়া ঢালের রেলপথ। বুঝতেই পারছেন, প্রকৃতি দেখতে দেখতে কেমন গা কাঁটা দেওয়া রোমাঞ্চকর এক অভিজ্ঞতা হয় এই রেলপথে ভ্রমণ করা পর্যটকদের। 

দ্য কাটুম্বা সিনিক রেলওয়ে সিনিক ওয়ার্ল্ড নামের একটি ব্যক্তিমালিকানাধীন পর্যটন কেন্দ্রের অংশ। নিউ সাউথ উয়েলস রাজ্যের সীমানায় পড়েছে পর্যটনকেন্দ্রটি। মূল রেলপথটি স্থাপন করা হয় উনিশ শতকের শেষ দিকে। তবে তখন এর উদ্দেশ্য মোটেই যাত্রী পরিবহন ছিল না। কয়লা খনির মালামাল টানাই ছিল এই রেলপথে চলাচল করা ট্রেন বা বগিগুলোর কাজ। 

ব্লু মাউন্টেনের অসাধারণ প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখতে দেখতে অসাধারণ একটি ভ্রমণ হয়১৯৪৫ সালে খনি বন্ধ হয়ে গেলে হ্যামিল্টন পরিবারের হাতে আসে রেলওয়েটি। তারপর এর চরিত্র বদলে যায়। মালামালের বদলে পর্যটকদের ব্লু মাউন্টেনের গহিনে রোমাঞ্চকর ভ্রমণে নিয়ে যেতে থাকে। তারপর থেকে কয়েক কোটি পর্যটক উঠেছেন এতে। 

মজার ঘটনা, ‘সিনিক রেলওয়ে’ নামে পরিচিত এই রেলওয়ে জনপ্রিয়তা পায় উনিশ শতকের শেষের দিকে। ইংল্যান্ডের সাগরতীরের মেলা বা কার্নিভালের বিভিন্ন রোমাঞ্চকর রাইডকে এই নামে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হতো। এই ট্রেনের বগিগুলো রেলের সাধারণ বগির মতোই। তবে পার্থক্য হলো, রোমাঞ্চকর ঢাল অতিক্রম করতে হয় ট্রেনটিকে। ২০১৩ সালে বেশ উন্নয়ন করা হয় রেলওয়েটির। 

আগেই বলেছি, রেলপথটি অবিশ্বাস্যরকম খাড়া। এটি খোলা ভূখণ্ডের মধ্য দিয়ে ৫২° (১২৮ %) কোণে ওপরের দিকে ওঠে এবং নিচে নামে। প্রায় ৩১০ মিটারের (১ হাজার ০১৭ ফুট) এই রেলপথে গভীর একটি সুড়ঙ্গের মধ্য দিয়েও ভ্রমণের সুযোগ হয় পর্যটকদের। সুড়ঙ্গপথ থেকে বের হয়ে যাত্রা শেষ হয় জেমিসন উপত্যকায়। 

১৯৫২ সালে সিনিক রেলওয়েতে ভ্রমণ করছেন পর্যটকেরাবিশ্বের সবচেয়ে খাড়া পথে ট্রেনযাত্রার খেতাবটির জয়ের জন্য সিনিক রেলওয়ের প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল সুইজারল্যান্ডের স্টুসবান রেলওয়ে। স্টুসবান রেলপথ সর্বোচ্চ ৪৭.৭° (১১০ %) কোণে উঠেছে। অর্থাৎ, সে হিসাবে এর সিনিক রেলওয়ের পেছনে পড়ার কথা। কিন্তু তার পরও একে বিশ্বের সবচেয়ে খাড়া ট্রেন হিসেবেও চিহ্নিত করা হয়। সমস্যা হলো, একটি কপিকল বা উইঞ্চ সিস্টেম ব্যবহার করা হয় সিনিক রেলওয়ের ক্ষেত্রে। তাই এটি প্রযুক্তিগতভাবে খাড়া পথে ওঠা কোনো ট্রেন নয়, বরং লিফট। 

খাড়া ঢাল বেয়ে নামার সময় ভয়ে, রোমাঞ্চে গায়ে কাঁটা দেবেতবে সবচেয়ে খাড়া পথে ট্রেনযাত্রার রেকর্ডটি নিজের ঝুলিতে পুরতে না পারলে কি হবে, গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস একে ‘সবচেয়ে খাড়া রেলওয়ে ঢাল’ বা ‘সবচেয়ে খাড়া রেলপথে’র মর্যাদা দিয়েছে। 

১৯৭০-র দশকে রেলভ্রমণআজব এই ট্রেন বা লিফট যাই বলুন না কেন, এর যাত্রাটা খুব বড় নয়। আসা-যাওয়ায় সময় লাগবে পাঁচ মিনিট করে মোটে দশ মিনিট। তবে এই অল্প সময়ে যে রোমাঞ্চ অনুভব করবেন, তা ভুলবেন না বহু দিন। আর একবার অস্ট্রেলিয়া পৌঁছে গেলে সেখানে যাওয়া খুব কঠিন কিছু নয়। নিউ সাউথ ওয়েলস রাজ্যের রাজধানী সিডনির প্রাণকেন্দ্র থেকে ১০০ কিলোমিটারের কিছু বেশি দূরত্ব সিনিক ওয়ার্ল্ডের। ঢালু রেলপথ ছাড়াও এখানকার অন্য আকর্ষণগুলোর মধ্যে আছ কেবলওয়ে, স্কাইওয়ে, ওয়াকওয়ে। তবে শুধু এমন একটি অবিশ্বাস্য রেলপথে ভ্রমণের জন্যই মনে হয় যাওয়া যায় জায়গাটিতে। 

সূত্র: দ্য ট্রাভেল ডট কম, সিনিক ওয়ার্ল্ড ডট কম, গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত