Ajker Patrika

দ্বীপটি যিনিই কিনেছেন মন্দ ভাগ্যের শিকার হয়েছেন

ইশতিয়াক হাসান
আপডেট : ৩১ মে ২০২৩, ১১: ৩৯
দ্বীপটি যিনিই কিনেছেন মন্দ ভাগ্যের শিকার হয়েছেন

নেপলসের পসিলিপো উপকূলে ছোট্ট এক দ্বীপের দেখা পাবেন। দ্বীপ বলতে, সাগরের মধ্যে বড় দুটি পাথরকে ধনুকাকার খুব সরু একটি পাথর জোড়া লাগিয়েছে। দেখতে সুন্দর হলেও সাগর কিংবা ওপর থেকে দেখলে মোটের ওপর একটু অস্বাভাবিকই লাগবে একে। তবে গাইওলা নামের ইতালির এই দ্বীপের এটাই একমাত্র অস্বাভাবিক ব্যাপার নয়।

দ্বীপটিকে ঘিরে আছে নানা রহস্যময় ঘটনার গুজব। বিশেষ করে দ্বীপটি যিনিই কিনেছেন কিংবা বাস করেছেন, মন্দ ভাগ্যের শিকার হতে হয়েছে তাঁকেই। স্থানীয়দের দাবি, গাইওলা অভিশপ্ত এক দ্বীপ।

বর্তমানে পরিত্যক্ত দ্বীপটিকে ঘিরে নানা ধরনের অস্বাভাবিক ঘটনার শুরু উনিশ শতকের গোড়ার দিকে। ‘দ্য উইজার্ড’ বা জাদুকর নামে পরিচিতি পাওয়া এক লোক সাধু তখন বাস করতেন এখানে। ১৮৭১ সালে একটি ফিশিং কোম্পানির মালিক লুইজি নেগরি দ্বীপটি কিনে নেন। এ সময় একটি ভিলা বা বাড়ি তৈরি হয় এখানে। তবে তাঁর কোম্পানি দেউলিয়া হয়ে গেলে নেগরি বিক্রি করে দিতে বাধ্য হোন দ্বীপটিকে।

দ্বীপটির এক অংশে একটি ভিলা আছেবিভিন্ন ব্যক্তি ভিলা এবং গোটা দ্বীপটির মালিক ছিলেন বিশ শতকে। এদের প্রত্যেকেই কোনো না কোনোভাবে মন্দ ভাগ্যের শিকার হোন। এতে দ্বীপটির কুখ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে আশপাশের এলাকায়। ১৯২০-এর দশকে দ্বীপের সুইস মালিক হ্যানস ব্রন খুন হোন। গালিচায় মোড়ানো অবস্থায় মেলে তাঁর মৃতদেহ। এদিকে সাঁতার কাটতে গিয়ে সাগরের পানিতে ডুবে মারা যান তাঁর স্ত্রী। 

অভিশপ্ত হিসেবে দুর্নাম কামালেও দেখতে ভারি সুন্দর দ্বীপটিপরের মালিক অটো গ্রানবেক ভিলাটিতে এসে হার্ট অ্যাটাকে মারা যান। এবার দ্বীপটি কিনে নেন লেখক ও শিল্পপতি মরিস-ইভজ সানুজ। মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়লে সুইজারল্যান্ডের এক পাগলা গারদে জায়গা হয় তাঁর। ১৯৫৮ সালে আত্মহত্যা করেন তিনি। 

দ্বীপটি ও আশপাশের এলাকা ডাইভার ও সাঁতারুদের প্রিয় জায়গাতারপর গাইওলা দ্বীপের মালিক হোন ব্যারন কার্ল পল ল্যাংহেইম। জার্মান এই শিল্পপতির কোম্পানিও দেওলিয়া হয়ে যায়। দ্বীপটি তিনি বিক্রি করে দেন ফিয়াট এসপিএর চেয়ারম্যান জান্নি আনইয়াল্লির কাছে। তাঁর পরিবারেও নানা অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। দ্বীপটির আরেক মালিক ছিলেন আমেরিকান শিল্পপতি জিন পল গেটি। তাঁকেও দুর্ভাগ্যের কবলে পড়তে হয়। তাঁর বড় ছেলে আত্মহত্যা করে, ছোট ছেলেও মারা যায় অল্প বয়সে। এমনকি এক নাতি অপহরণের শিকার হয়। 

উপকূল থেকে খুব দূরে নয় গাইওলা দ্বীপদ্বীপটির শেষ মালিক জানপাসকুয়ালে গ্রেপপোন। তাঁর স্থান হয় কারাগারে, আর স্ত্রীর মৃত্যু হয় গাড়ি দুর্ঘটনায়। ১৯৭৮ সালে গাইওলা দ্বীপটি সরকারি সম্পত্তিতে রূপান্তরিত হয়। দ্বীপে মানুষের বসতি নেই প্রায় ৪৫ বছর। তবে স্থানীয়রা মনে করে, এখনো কাটেনি এর অভিশাপ। ২০০৯ সালে দ্বীপের উল্টো পাশের এক ভিলার মালিক খুন হোন। যদিও দ্বীপটি এমন অভিশপ্ত হয়ে ওঠার কারণ রহস্যই রয়ে গেছে।

বড় দুটি পাথরকে ধনুকাকার খুব সরু একটি পাথর জোড়া লাগিয়েছেগাড়িতে চেপে নেপলসের পসিলিপো চলে যেতে পারবেন। উপকূল থেকে সহজেই দেখতে পারবেন একে। একটি নৌকায় চেপে দ্বীপের কাছাকাছি পৌঁছে যেতে পারবেন। আবার কাছের গাইওলা আন্ডারওয়াটার পার্কে স্কুবা ডাইভিং বা সাঁতারও কাটতে পারবেন। সংরক্ষিত এলাকা হিসেবে ঘোষিত এই পার্কের মোটামুটি মাঝখানে বলতে পারেন একে। দুঃসাহসী হলে দ্বীপেও কিছুটা সময় কাটাতে পারবেন। যদ্দুর জানা যায়, দ্বীপের মালিকেরাই ঝুট-ঝামেলায় পড়েছেন বা দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন। কাজেই এতে পা রাখলে আপনার বিপদ হবে এমন কথা নেই। পর্যটকেরা সাগরে সাঁতরে বেড়াবার পাশাপাশি ওই সব অভিশাপের থোড়াই কেয়ার করে দ্বীপে উঠছেনও। 

সূত্র: এটলাস অবসকিউরা, উইকিপিডিয়া

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত