খাড়া পর্বতের ৪০০ ফুট উঁচুতে এই দোকানটির ক্রেতা কারা 

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ০৯ অক্টোবর ২০২৩, ১৩: ৫৪
Thumbnail image

খাড়া একটি পর্বতের প্রায় ৪০০ ফুট উচ্চতায় একটি ঝুলন্ত দোকান। সেখানে কর্মচারী আছেন, এমনকি দোকানটি থেকে মানুষ কেনাকাটাও করেন। কেমন অবিশ্বাস্য শোনালেও এমন দোকান সত্যি আছে। আর এর দেখা পেতে হলে আপনাকে যেতে হবে চীনে। 

একটি সুবিধাজনক জায়গায় অবস্থিত একটি ছোট খুচরা বিক্রয়কেন্দ্র বা দোকান যেখানে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র পাওয়া যায়, সেটাই কনভেনিয়েন্স স্টোর। কিন্তু চীনের এ ধরনের একটি দোকানে পৌঁছাতে আপনাকে খাড়া পাহাড় বেয়ে ১২০ মিটার (৩৯৩ ফুট) উঠতে হবে।  অনেকেই তাই একে পরিচয় করিয়ে দেন ‘মোস্ট ইনকনভেনিয়েন্ট’ বা ‘সবচেয়ে অসুবিধাজনক’ কনভেনিয়েন্স স্টোর হিসেবে। অবশ্য যত দুর্গমেই হোক, এই দোকানটিও কিন্তু স্থাপন করা হয়েছে কিছু মানুষের সুবিধার কথা চিন্তা করেই। 

প্রাকৃতিক নানা বিস্ময়ের জন্য চীন বিখ্যাত। আবার মানুষের নির্মিত নানা ভবন এবং কাঠামোর জন্যও গর্ব করে তারা, যা সেখানকার স্থাপত্যবিদ্যার বিস্ময়কর অগ্রগতিকে তুলে ধরে। আর পর্বতের গায়ে ঝুলতে থাকা আশ্চর্য এই দোকান যেন অসাধারণ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মাঝখানে মানুষের এক খেয়ালি কীর্তি। 

পানি, চিপস, জুসসহ নানা কিছুই বেচাকেনা হয় ঝুলন্ত দোকানটিতে। ছবি: ওয়েইবোচীনের হুনান প্রদেশের শিনিওঝাই ন্যাশনাল জিওলজিক্যাল পার্কের এই কাঠের বাক্স বা দোকানটি বানানো হয়েছে পর্বতারোহীদের সুবিধার কথা চিন্তা করে। পর্বতের গায়ে ঝুলতে থাকা দোকানটিতে বিক্রি করা হয় পানির বোতল, পটেটো চিপসসহ হালকা খাবার। চীনা সংবাদমাধ্যম চায়না সেন্ট্রাল টেলিভিশনের (সিসিটিভি) সূত্রে জানা যায়, একবারে কেবল একজন কর্মচারীই বসেন আজব এ দোকানটিতে। 

‘দোকানটি থেকে খুব একটা আয় হয় না। তবে পর্যটকেরা এটা এখানে থাকায় খুব খুশি। কাজেই আমরা সবাই মনে করি গুরুত্বপূর্ণ একটি কাজ করছি’—সিসিটিভিকে বলেছিলেন দোকানটির একজন কর্মচারী। 

শুধু একজন কর্মচারী একবারে বাক্সটির মধ্যে অবস্থান করেন। কর্মচারীদের গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো প্রতিদিন ভোর হওয়ার আগে দোকানটিতে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র তুলে ফেলা। অবশ্য পানি বা স্ন্যাকস প্রয়োজন হলে নিচ থেকে দড়ি দিয়ে টেনে খুব একটা ঝামেলা ছাড়াই দোকানে তোলা সম্ভব হয়। 

শিনিওঝাই ন্যাশনাল জিওলজিক্যাল পার্কের এই কাঠের বাক্স বা দোকানটি বানানো হয়েছে পর্বতারোহীদের কথা চিন্তা করে। ছবি: এক্স (টুইটার) ‘প্রত্যেক নতুন কর্মচারী প্রথমে এখানে কাজ করতে বেশ ভয় পান। তবে আপনি খুব দ্রুত এতে অভ্যস্ত হয়ে যাবেন’ একজন কর্মচারী বলেন, ‘একটা বড় সমস্যা হলো টয়লেট ব্যবহার করা। এর জন্য আবার নিচে নামা ও ওপরে ওঠা কষ্টকর। তাই আমরা খুব বেশি পানি পান না করার চেষ্টা করি।’ 

অবশ্য এ দোকানে যেসব কর্মচারী কাজ করেন তাঁরা সবাই পর্বতারোহণে দক্ষ। এমন একটি জায়গায় ওঠার সাহস তো আর সবাই দেখাবে না, কী বলেন? 

শিনিওঝাই ন্যাশনাল জিওলজিক্যাল পার্ক পর্যটকদের বিশেষ করে পর্বতারোহীদের কাছে খুব জনপ্রিয়। এটি খাড়া পাহাড়, জলপ্রপাত এবং পর্বতারোহণের পথের জন্য পরিচিতি পেয়েছে। সিসিটিভি বলছে, দোকানটি ২০১৮ সালে খোলা হয়েছিল। অবশ্য করোনা মহামারির কারণে দীর্ঘদিন বন্ধ ছিল। 

একটি খাড়া পার্বত্য পথের ঠিক পাশেই এর অবস্থান। লোহার রড, খাড়া মই এবং কেব্‌ল ব্যবহার করে পর্বতারোহীরা দুরারোহ পথটি অতিক্রম করেন। একটা সময় এখানে একটি কুঁড়ের মতো ছিল। যেখানে পর্বতারোহীরা ওপরে ওঠার পথে বিশ্রাম নিতে পারতেন। বছর পাঁচেক আগে একে এমন একটি দোকানে রূপান্তর করা হয়। পর্যটকেরা বিশুদ্ধ পানির পাশাপাশি কেক, জুস, চিপসের মতো ছোটখাটো জিনিস কিনতে পারেন এখান থেকে। অবশ্য ঝুলন্ত এই দোকানটির কথা মানুষ একটা সময় পর্যন্ত খুব একটা জানত না। মূলত বছর খানেকের কিছু বেশি হলো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এর ছবি ছড়িয়ে পড়েছে। 

পর্বতের প্রায় ৪০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থান দোকানটির। ছবি: এক্স (টুইটার) যেমন সম্প্রতি একজন এক্স (আগের টুইটার) ব্যবহারকারী এই দোকানের কয়েকটি ছবি দিলে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের মধ্যে বেশ আলোড়ন দেখা যায়। বিশেষ করে দোকানটি কীভাবে কাজ করে এবং কারা এটি পরিচালনা করে সে সম্পর্কে জানার জন্য কৌতূহল দেখা যায় তাদের কারও কারও মধ্যে। এটা সম্পর্কে নানা ধরনের মন্তব্যই করে মানুষ।

একজন মন্তব্য করেছেন, ‘এটি একই সঙ্গে খ্যাপাটে এবং অবিশ্বাস্য একটি ব্যাপার।’ অপর একজন লিখেন, ‘এখানে কেনাকাটা করতে বললে আতঙ্কিত হব।’ আরেকজন রসিকতা করেন, ‘আর আমি কিনা ভেবেছিলাম আমার কাজের জায়গায় যাওয়ার পথটা খারাপ।’ 

কাজেই পাঠক, আপনি যদি রোমাঞ্চপ্রেমী হোন আর পর্বতারোহণ আপনার প্রিয় শখ হয়, তবে শিনিওঝাই ন্যাশনাল জিওলজিক্যাল পার্কে একটি বার আপনার যাওয়াই উচিত। এমন বিস্ময়কর দোকান থেকে কেনাকাটার সৌভাগ্য কয়জনের হয় বলুন?

সূত্র: বিজনেস ইনসাইডার, এনডিটিভি, অডিটি সেন্ট্রোল

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত