Ajker Patrika

পৃথিবীর মধ্যেই যেন ভিনগ্রহের এক দ্বীপ

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ৩০ মে ২০২৩, ১২: ০৭
পৃথিবীর মধ্যেই যেন ভিনগ্রহের এক দ্বীপ

দ্বীপটি সম্পর্কে আগে থেকে না জেনেই যদি এতে হাজির হয়ে যান, তাহলে চমকে উঠবেন সন্দেহ নেই। হয়তো গায়ে একটা চিমটিও কেটে দেখবেন। কারণ এমন অদ্ভুত সব চেহারার গাছগাছালি পৃথিবীতে থাকতে পারে তা হয়তো আপনার কল্পনায়ও ছিল না। কাজেই স্বপ্ন দেখছেন কি না—এই ধন্দে পড়ে যাওয়া অস্বাভাবিক নয়।

সকোত্রা যেন পৃথিবীর মধ্যেই ভিনগ্রহের একটি দ্বীপ। গালফ অব এডেনের কাছে ভারত মহাসাগরের মধ্যে চারটি দ্বীপ নিয়ে ছোট্ট এক দ্বীপপুঞ্জ সকোত্রা। ইয়েমেনের উপকূল থেকে প্রায় ২৫০ মাইল দূরে অবস্থিত দ্বীপপুঞ্জটির প্রধান দ্বীপের নামও সকোত্রা। এখানে এমন সব অদ্ভুত চেহারার উদ্ভিদের দেখা মেলে, যা পৃথিবীর অন্য অংশের গাছগাছালি থেকে একেবারেই আলাদা। দ্বীপের ৮২৫ জাতের উদ্ভিদের মধ্যে তিন ভাগের এক ভাগের বেশির দেখা পাবেন না আর কোথাও। 

বেশ কয়েক জাতের গাছই বটল ট্রি বা বোতল গাছ নামে পরিচিত। ছবি: ফেসবুকশুধু কী উদ্ভিদ প্রাণীর বেলায় একই কথা খাটে! সকোত্রার সরীসৃপ প্রজাতিগুলোর মধ্যে ৯০ শতাংশ ও ভূভাগের শামুকদের মধ্যে ৯৫ শতাংশের দেখা পাবেন না আর কোথাও। এখানকার সাগরেও দেখা মেলে নানা জাতের প্রাণীর। এদের মধ্যে আছে ২৫৩ প্রজাতির প্রবাল, ৭৩০ প্রজাতির সামুদ্রিক মাছসহ আরও অনেক কিছু।

প্রায় ২৫ কোটি বছর আগে, যখন বড় বড় ভূখণ্ডগুলো যুক্ত হচ্ছিল, তখনো সকোত্রা একটি দ্বীপ হিসেবে অবস্থান করছিল। অন্য জায়গাগুলো থেকে বিচ্ছিন্ন অবস্থানের কারণে এখানকার উদ্ভিদ ও প্রাণী অন্যান্য জায়গায় ছড়াতে পারেনি।

সকোত্রার বিখ্যাত ড্রাগন গাছ। ছবি: ফেসবুকদ্বীপটিতে সব সময় উচ্চ তাপমাত্রা থাকে। দ্বীপটি আধা মরুময়। চোখে পড়বে প্রশস্ত বালুময় সৈকত, চুনাপাথরের গুহা আর উঁচু সব পাহাড়। বৃষ্টি হয় কখনো কখনো। জায়গাটি কিন্তু ইউনেসকো ঘোষিত ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট।

আপনি হয়তো ভাবতে পারেন আজব এই দ্বীপে বা দ্বীপপুঞ্জে নিশ্চয় মানুষের বসতি নেই। কিন্তু না, প্রায় দুই হাজার বছর ধরেই এখানে মানুষের বসতি। দ্বীপপুঞ্জের মূল দ্বীপ সকোত্রায় হাজাক পঞ্চাশেক মানুষের বাস। মাছ ধরা, পশুপালন, গাছগাছালির বাগান—এ সবই তাঁদের জীবন ধারণে সাহায্য করে। 

বোতল গাছ। ছবি: ফেসবুকসকোত্রার আশ্চর্য গাছগাছালির মধ্যে প্রথমেই বলতে হয় ড্রাগন’স ব্লাড ট্রির কথা। এর ওপরের অংশটি অনেকটা ছাতার মতো ছড়িয়ে আছে। গাছের লাল রসকে আগে ভাবা হতো ড্রাগনের রক্ত। পরে অবশ্য ঔষধি গাছ ও রঞ্জক হিসেবে জনপ্রিয়তা পায়। এখনো এটি রং ও বার্নিশ হিসেবে ব্যবহার করা হয়।

সকোত্রার অনেক জায়গায় এমন বালুর বিস্তার। ছবি: ফেসবুকসকোত্রার বিখ্যাত আরেক গাছ বোতলগাছ। বেশ কয়েক জাতের গাছই বটল ট্রি বা বোতলগাছ নামে পরিচিত। এদের একটি এখানকার কিউকাম্বার বা শসা গাছ। এর ফোলা গুড়িটি দেখে আপনার বোতলের মতো মনে হবে। মজার ঘটনা, এটি উদ্ভিদের যে পরিবারের মধ্যে পড়েছে এর মধ্যে কেবল এতেই আপনি চড়তে পারবেন। এ ধরনের গাছ একসময় আরবের মূলভূমিতে দেখা গেলেও এখন পাবেন কেবল সকোত্রাতেই। আরেক ধরনের বোতলগাছ সুন্দর গোলাপি রঙের জন্য পরিচিত ডেজার্ট রোজ বা মরু গোলাপ নামে।

দ্বীপের ৮২৫ জাতের উদ্ভিদের মধ্যে তিন ভাগের এক ভাগের বেশির দেখা পাবেন না আর কোথাও। ছবি: ফেসবুকদ্বীপে বাস করা প্রাণীদের মধ্যে আছে সকোত্রা ওয়ার্বলার বা গায়ক পাখি, সকোত্রা বান্টিং পাখি, ঘোস্ট ক্র্যাব, সকোত্রা লাইমস্টোন বা চুনাপাথর কাঁকড়া, ইজিপশিয়ার শকুন, লগারহেট কচ্ছপ ইত্যাদি। 

কাজেই পাঠক ভিনগ্রহে যাওয়ার যাদের শখ, তারা চাইলে পৃথিবীর মধ্যেই অবস্থিত এই ‘ভিনগ্রহের দ্বীপে’ কয়েকটি দিন কাটিয়ে আসতে পারেন। ইয়েমেনের এই দ্বীপটির অবস্থান দুর্গম হলেও ভিনগ্রহে যাওয়ার চেয়ে যে সহজ, তাতে নিশ্চয় সন্দেহ নেই। 

সূত্র: অ্যামিউজিং প্ল্যানেট, এনডিটিভি,

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত