বিশাল পাথরটি কি রং বদলায়

ইশতিয়াক হাসান
প্রকাশ : ১১ জুন ২০২৩, ১১: ৪৫
আপডেট : ১১ জুন ২০২৩, ১২: ২১

ধরুন গোটা একটি পাহাড় যদি একটি পাথরে তৈরি হয়, কেমন হবে বলুন তো? ভাবছেন এটা আবার সম্ভব নাকি? কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার উলুরু বা আয়ারস পাথরের বেলায় এটাই সত্যি। অনেকেই একে বিবেচনা করে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় মনোলিথ বা একশিলা স্তম্ভ হিসেবে। আবার দিন গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে আশ্চর্য এই পাথরের রঙেও আসে পরিবর্তন!

এবার উলুরু সম্পর্কে কিছু তথ্য জেনে নেওয়া যাক। পাথরটির অবস্থান নর্দার্ন টেরিটরির দক্ষিণ প্রান্তে। এর উচ্চতা কত অনুমান করতে পারেন? আশপাশের মরু এলাকার কথা যদি বিবেচনা করেন, সেখান থেকে এর উচ্চতা ৩৪৮ মিটার বা ১ হাজার ১৪২ ফুট। আর সাগর সমতল থেকে এটা আরও অনেক বেশি, ৮৬৩ মিটার বা ২ হাজার ৮৩১ ফুট।

গোটা পাথরটিকে একটা চক্কর দিতে চাইলে আপনাকে হাঁটতে হবে ৯.৪ কিলোমিটার। কারণ ডিম্বাকার বিশাল এই পাথর ৩.৬ কিলোমিটার লম্বা এবং ২.৪ কিলোমিটার চওড়া। অবশ্য এখন আপনি এটা দেখতে পারলেও এতে চড়া নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

ওপর থেকে এমনই দেখা যায় পাহাড়টিকেআশ্চর্য এই পাথর দেখে যত বড় মনে হয়, আসলে এর চেয়ে বড়। শুনে চমকাবেন, মাটির ওপরে যেমন উঠেছে, মাটির নিচেও তেমনি অনেকটা গিয়েছে উলুরু। পাতালে প্রায় আড়াই কিলোমিটার পর্যন্ত গভীরে ছড়িয়েছে উলুরু। 

কিন্তু আশ্চর্য এই পাথরের জন্ম হলো কীভাবে? আনুমানিক ৯০ কোটি বছর আগে প্রক্রিয়াটির শুরু। সে সময় এখন যেখানে অস্ট্রেলিয়া, সেই জায়গা ছিল অগভীর এক সাগর। সাগরের মেঝের নিচে ছিল খনিজ সমৃদ্ধ বেলে পাথরের একের পর এক পরত। মোটামুটি ৫৫ কোটি বছর আগে, ইতিমধ্যে শক্ত হয়ে যাওয়া বেলে পাথরের স্তরগুলো প্রাকৃতিক কারণে ওপরে উঠে এসে জন্ম দেয় পর্বতের। 

এই পর্বতগুলোর ধীরে ধীরে ক্ষয় হয়। এগুলো থেকে তৈরি হয় পলিসমৃদ্ধ কিছু ফ্যান বা খোলা পাখার মতো কাঠামো। এ ধরনের একটি ফ্যান উলুরুর ভিত হিসেবে কাজ করে।

সূর্যের আলোর কারণে দিনের একেক সময় এর রং একেক রকমমোটামুটি ৫০ কোটি বছর আগে এলাকাটি আবার একটি অগভীর সাগরের পানিতে প্লাবিত হয়। এতে উলুরুর বেলে পাথর আরও আটসাটভাবে চেপে বসে। ৩০ থেকে ৪০ কোটি বছর আগে এখান থেকে সরে যায় সাগর, তখন এখানকার পাথরগুলো ভাঁজ হয়ে যায়। পরের কয়েক কোটি বছরের ক্ষয়ের প্রক্রিয়ায় নরম পাথরের মাঝখান থেকে এখনকার উলুরুর উদ্ভব হয়।

স্থানীয় আদিবাসীরা এই পাথরের খোঁজ জানতেন বহু আগ থেকেই। ১০ হাজার বছর কিংবা এরও আগে থেকে এটি তাঁদের কাছে একটি পবিত্র জায়গা। অন্তত ৫ হাজার বছরের পুরোনো চিত্রকর্মের সন্ধান পাওয়া গেছে এখানে।

পাতালে প্রায় আড়াই কিলোমিটার পর্যন্ত গভীরে ছড়িয়েছে উলুরুতবে ইউরোপীয় অভিযাত্রীদের প্রথম নজর কাড়ে ১৮৭২ সালে, তখন আর্নেস্ট গিলেস নামের এক ব্যক্তি এটা দেখতে পান। এর পরপরই জরিপকারী উইলিয়াম গস সেখানে যান এবং এর নাম রাখেন দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ার একসময়কার প্রিমিয়ার বা সরকারপ্রধান স্যার হেনরি আয়ারসের নামে। তবে স্থানীয় আদিবাসীদের দেওয়া নাম উলুরুতেই এটি বেশি পরিচিত। এখন এর অফিশিয়াল নামও এটি।

মনোলিথটির অবস্থান উলুরু–কাতা তজুতা জাতীয় উদ্যানে। এই ইউনেসকো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটটি কিন্তু এনানগু আদিবাসীদের সম্পত্তি। তাঁরা এটি লিজ দিয়েছে অস্ট্রেলীয় সরকারকে।

আগেই বলেছি, উলুরু স্থানীয়দের কাছে পবিত্র এক জায়গা। অনেক পর্যটকই একসময় এখানকার পাথর চুরি করে নিয়ে যেত। তাদের অনেকে আবার এখানকার পাথর নেওয়ার পর নানা ধরনের মন্দ ভাগ্যের শিকার হয়েছে বলে দাবি করে। এর থেকে রেহাই পেতে তারা পার্ক অস্ট্রেলিয়ার রেঞ্জারদের কাছে ডাকযোগে পাঠিয়ে দিত এসব পাথর। আবার অনেক পর্যটক কোনো সমস্যায় না পড়েও নিছক অপরাধবোধের কারণেও পাথর ফিরিয়ে দিতেন। এ ধরনের ফেরত পাওয়া পাথরের নাম রেঞ্জাররা দেন ‘সরি রক’। অবশ্য এখন পাথরটিতে চড়া বারণ হওয়ায় এ ধরনের পাথর চুরি কিংবা ‘সরি রক’ ফেরত দেওয়ার ঘটনাও ঘটে কালেভদ্রে। 

উলুরু পাথর দেখতে যেতে পারবেন, কিন্তু এতে চড়া নিষিদ্ধউলুরুর সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো এর রঙে। অনেকেই বলেন উলুরু রং বদলায়। আসলেই কি তাই? পাথরটি খনিজ লোহাসমৃদ্ধ। বছরের পর বছর মরিচা ধরতে ধরতে এটি উজ্জ্বল লাল রং পেয়েছে। এর লাল চেহারা ও অস্ট্রেলিয়ার মাঝখানে অবস্থান হওয়ায় একে অস্ট্রেলিয়ার রেড সেন্টার বা ‘লাল কেন্দ্র’ বলেও ডাকা হয়। 

তবে পাথরটির আসল রং হচ্ছে ধূসর। এর বিভিন্ন গুহায় মূল রংটার দেখা পাবেন। আবার দিনের বিভিন্ন সময়ে একে আলাদা রঙেও দেখতে পাবেন।

কিন্তু এটা কীভাবে সম্ভব? আসলে এটা আর কিছু নয়, সূর্যরশ্মির খেলা। সূর্য অবস্থান বদলানোর সঙ্গে সঙ্গে পাথরটিও লাল থেকে বেগুনি, কমলা কিংবা কালো আকারে রূপ নেয়। তারপর আবার আগের রঙে ফিরে আসে। তবে সূর্যাস্তের সময় একে সবচেয়ে সুন্দর দেখায়, তখন সূর্যরশ্মিতে এর রং হয় কমলা–লাল।

কিন্তু এটা কি পৃথিবীর সবচেয়ে বড় পাথর? না, ওই রেকর্ডটি পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ার মাউন্ট অগাস্টাসের ঝুলিতে। তবে বিভিন্ন ধরনের পাথরের মিশ্রণে তৈরি হওয়ায় সেটাকে মনোলিথ হিসেবে বিবেচনা করা হয় না।

সূত্র: হিন্দুস্তান টাইমস, পার্কস অস্ট্রেলিয়া, ট্রি হাগার ডট কম, রিপ্লিস ডট কম

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

আবু সাঈদকে ৪–৫ ঘণ্টা পরে হাসপাতালে নেওয়া হয়—শেখ হাসিনার দাবির সত্যতা কতটুকু

মেট্রোরেল থেকে আমলাদের বিদায়, অগ্রাধিকার প্রকৌশলীদের

হইহুল্লোড় থেমে গেল আর্তচিৎকারে

বিমানবন্দরে সাংবাদিক নূরুল কবীরকে হয়রানির তদন্তের নির্দেশ প্রধান উপদেষ্টার

কবি নজরুল ও সোহরাওয়ার্দী কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ৩৫ কলেজের শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত