ইরানের গুহাবাসী মানুষেরা

ইশতিয়াক হাসান
আপডেট : ০৪ মার্চ ২০২৩, ১১: ৩২
Thumbnail image

এখনো মানুষ গুহায় থাকতে পারে, এটা বিশ্বাস হয়? ইরানের উত্তর-পশ্চিমের দুর্গম এলাকায় গেলে আপনি সত্যি দেখা পেয়ে যাবেন আধুনিক যুগের গুহাবাসী মানুষের। দেশটির পূর্ব আজারবাইজান প্রদেশের এই গ্রামের নাম কান্দোভান। ধারণা করা হয়, আজ থেকে ৭০০ বছর আগে গোড়াপত্তন হয় গ্রামটির। এখন পর্যটকদের ভারি প্রিয় এক গন্তব্য এটি।

স্থানীয় বাসিন্দাদের সূত্রে ও ইতিহাস ঘেঁটে জানা যায়, মঙ্গোল সেনাদের থেকে বাঁচতে পালিয়ে এসে এখানকার গুহায় আশ্রয় নেন এখন কান্দোভানে যারা বাস করছে তাদের পূর্ব-পুরুষেরা। পরে ধীরে ধীরে এটি স্থায়ী আবাস হয়ে যায় তাদের। স্থানীয় ভাষায় এখানকার এই গুহাবাড়িগুলো পরিচিত ‘কারান’ নামে, যার অর্থ মৌমাছির বাসা। 
 
কান্দোভান গ্রামটির চেহারাটা আসলেই অস্বাভাবিক। সাধারণ গুহাবাড়িও বলা মুশকিল একে। দেখে হঠাৎ বিশাল এক উইপোকার কলোনি বলেও মনে হতে পারে একে। আজ থেকে ১১ হাজার বছর আগে মাউন্ট সাহান্দে অগ্ন্যুৎপাত শুরু হলে সেখানকার ছাইসহ উৎক্ষিপ্ত নানান বস্তু ছড়িয়ে পড়ে এই এলাকায়। পরের বছরগুলোতে ছাই কঠিন হয়ে পাহাড়ের গায়ে এ রকম মোচাকৃতির গুহার মতো কাঠামোর জন্ম হয়। 
  

ধীরে ধীরে নিজেদের প্রয়োজনে এখানকার অধিবাসীরা তাদের এই গুহা-আস্তানার পরিধি বাড়িয়েছে। বেশির ভাগ গুহাবাড়ি দোতলা থেকে চারতলা; যেখানে থাকে শোওয়ার ঘর, গুদাম, পশু-পাখির খোয়াড়। পাথর কুঁদে তৈরি করা হয়েছে জানালা, দরজা, বারান্দা, সিঁড়িসহ এমন অনেক কিছু। 

গুহাবাড়িগুলো সব দিক থেকেই বেশ সুবিধাজনক। লম্বা শীতল মাসগুলোতে এই গুহাবাড়ির অভ্যন্তর থাকে অনেক আরামদায়ক। তেমনি গ্রীষ্মেও বাড়িগুলোর ভেতরের আবহাওয়া থাকে বেশ শীতল। 

দুই তলা থেকে চার তলা পর্যন্ত হয় এক একটি গুহা-বাড়ি। ছবি: ফেসবুককান্দোভান থেকে কিছু কিছু মানুষ শহরের দিকে চলে গেলেও এখনো প্রায় ৬০০ মানুষের বাস গ্রামটিতে। সর্বশেষ তথ্যে ১২০টির কাছাকাছি পরিবারের বাস সেখানে। 

চৌদ্দ শতকের দিকে গ্রামটির গোড়াপত্তন হয় বলে সাধারণভাবে ধারণা করা হয়। তবে কারও কারও ধারণা, সপ্তম শতকের দিকে এখানে মানুষ বসবাসের সূচনা হয়। দু-একটি সূত্রের অবশ্য দাবি, ৭ হাজার বছর আগেও এই গুহাগুলোয় মানুষের বাস ছিল।  

কান্দোভানে বাড়ির সামনে এক নারী। ছবি: ফেসবুকএখানকার অধিবাসীদের পানিরও কোনো সমস্যা হয় না। পাশর সাহান্দ পার্বত্য এলাকায় পানির অনেক উৎস আছে। তাই গ্রামটির বাসিন্দারা আশপাশে কৃষিকাজ ও পশু পালন করে ভালোই আয় করে। এখানে আসা পর্যটকদের খাবারের ব্যবস্থা করে এবং তাঁদের কাছে স্থানীয় সব সুন্দর হস্তশিল্পসামগ্রী বিক্রি করেও রোজগার হয়। 

জায়গাটি এখন পর্যটকদের কাছে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে তাবরিজে যাঁরা জান তাঁরা এই গুহাগ্রামে একবার ঢুঁ মারতে ভুল করেন না। গুহার মধ্যে কয়েকটি হোটেল-রেস্তোরাঁও তৈরি হয়েছে এখন। সামান্য কিছু অর্থ দিয়ে গুহাবাড়িগুলো দেখে স্বাদ নিতে পারবেন এখানকার আশ্চর্য জীবনের।

ওই দেখা যায় কান্দোভান গ্রাম। ছবি: উইকিপিডিয়াতাবরিজ পূর্ব আজারবাইাজান প্রদেশের রাজধানী । তাবরিজ থেকে কান্দোভানের দূরত্ব বেশি নয়, মোটে ৩৪ মাইল। গাড়িতে চেপে এক ঘণ্টার পথ। চাইলে দিনে গিয়ে দিনেও ঘুরে আসতে পারেন সেখান থেকে পর্যটকেরা। কাজেই ইরানে গেলে আশ্চর্য এই গুহারাজ্য দর্শনের সুযোগ হাতছাড়া করা উচিত হবে বলে মনে হয় না।  

শীতে তুষার পড়ে গ্রামটিতে। ছবি: উইকিপিডিয়াতবে একটি কথা, কোন সময় এখানে যাওয়া উচিত তা জানা না থাকলে আশাহত হতে পারেন। শীতে ইরানের এই অঞ্চলের আবহাওয়া বড় শীতল। এমনকি তুষারও পড়ে। কাজেই ওই সময়টা সেখানে যাওয়ার জন্য মোটেই ভালো নয়। বসন্তের মাঝামাঝি থেকে সেখানে পর্যটকদের আনাগোনা শুরু হয়। অক্টোবর পর্যন্ত যেতে পারেন, তখন আবহাওয়া ধীরে ধীরে শীতল হতে শুরু করে।  

সূত্র: এটলাস অবসকিউরা, হিস্টরি হিট ডট কম, পেক টু ইরান ডট কম

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

কারা পরিদর্শক হলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক

ট্রাম্পের অভিষেক: সি আমন্ত্রণ পেলেও পাননি মোদি, থাকছেন আরও যাঁরা

ট্রাম্পের শপথের আগেই বার্নিকাটসহ তিন কূটনীতিককে পদত্যাগের নির্দেশ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতিকে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে: সলিমুল্লাহ খান

সংস্কারের কিছু প্রস্তাবে মনঃক্ষুণ্ন বিএনপি

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত