ইশতিয়াক হাসান
হানিগাইড বার্ড নামে যে একধরনের পাখি আছে, এটা প্রথম জানতে পারি বিখ্যাত আইরিশ লেখক ও শিকারি জন টেইলরের বই পড়ে। এই মানুষটি ১৯২৩ থেকে ১৯৫৮ সাল পর্যন্ত পর্তুগিজ পূর্ব আফ্রিকায় (বর্তমান মোজাম্বিক) শিকার করেন। সেই সূত্রেই পাখিটি নিয়ে খোঁজখবর শুরু করি। তাতেই পরিষ্কার হয় আফ্রিকার জঙ্গলে বাস করা সবচেয়ে বিচিত্র পাখিদের একটি এই হানিগাইড। বেশ কয়েক জাতের পাখি এই নামে পরিচিত হলেও মধুর খোঁজ দেয় মূলত আফ্রিকান প্রজাতি গ্রেটার হানিগাইডরা।
এবার এই পাখিদের, মানে হানিগাইড বার্ডের এমন নামকরণের কারণটা বরং জেনে নিই। নাম দেখে যা বুজেছেন তা-ই, এরা মানুষকে মধুর খোঁজ দেয়। দুর্গমের কোনো ছোটখাটো বসতি বা জঙ্গলের মধ্যে কারও পাতা ক্যাম্পের ধারে এসে ডাকতে শুরু করে এসব পাখি। তারপর এক গাছ থেকে আরেক গাছে উড়ে যায়, উদ্দেশ্য মানুষের মনোযোগ আকর্ষণ। আফ্রিকানরা এই পাখিদের সঙ্গে বেশ পরিচিত, অনেক সময়ই এদের পাত্তা না দিয়ে নিজের কাজ চালিয়ে যান তাঁরা। তবে হানিগাইডরা দমবার পাত্র নয়, একটু অপেক্ষা করে আবার শুরু করে উত্তেজিত ডাকাডাকি, ওড়াউড়ি।
এখন কেউ যদি মধুর খোঁজে পাখিটিকে অনুসরণ করতে ইচ্ছুক হন, সমস্ত জোগাড়যন্ত্র শেষ করে শিস দিয়ে সংকেত দেন একে। ব্যাস, হানিগাইড কাজ শুরু করে। অর্থাৎ, অনুসরণকারীদের পথ দেখিয়ে নিয়ে চলে মৌচাকের কাছে। গন্তব্যে পৌঁছার পরও ডাল থেকে ডালে উড়ে উত্তেজিত স্বরে ডাকতেই থাকে। তবে মানবসঙ্গী কাজ শুরু করলে ডাকাডাকি থামিয়ে কাছের একটা গাছে গিয়ে চুপচাপ বসে পড়ে। পাছে আবার মৌ সংগ্রহকারী বিরক্ত হন! চাকে কোনো ঝামেলা থাকলে লোকটা শিস দেবেন। তখন পাখিটা আবার উড়তে উড়তে নতুন এক মৌচাকের কাছে নিয়ে যাবে। ছোট্ট এই পাখিরা কিন্তু মধুর জন্য এত কিছু করে না। বরং তাদের চাওয়া কেবল মধু সংগ্রহের পর মৌমাছির বাসার মোম আর কিছু শূককীট।
মৌচাক খুঁজে বের করতে এই পাখিরা যে সিদ্ধহস্ত, এটা নিশ্চয় আর বলে দিতে হবে না। আশ্চর্য ব্যাপার, এমনই এক মধুপাখিকে অনুসরণ করে দুই কিশোর বন্ধুসহ কাকতালীয়ভাবে ভয়ানক সুন্দর এক কালো কেশরের মানুষখেকো সিংহের মুখোমুখি হয়ে গিয়েছিলেন জন টেইলর। অনেক দিন খুঁজেও যেটার হদিস পাচ্ছিলেন না। তবে টেইলর পাখিটির মনও খারাপ করেননি, সিংহটিকে মারার পর মধু গাইডকে ডেকে আনার ব্যবস্থা করেন। তারপর মধুও সংগ্রহ করেন দুই সঙ্গীর মাধ্যমে।
তো টেইলরের বইয়ে এই পাখিদের কথা জানতে পেরে একটু পড়াশোনার চেষ্টা করলাম এদের নিয়ে। এতে চমকটা আরও বাড়ল। মোটামুটি ১৭ ধরনের পাখি এই নামে পরিচিত হলেও এই নামটি ওরা পেয়েছে আফ্রিকান প্রজাতি গ্রেটার বা ব্ল্যাক থ্রোটেড হানিগাইডদের মধুর খোঁজ দেওয়ার আশ্চর্য বৈশিষ্ট্যের কারণেই। অবশ্য আফ্রিকার কয়েকটি দেশে পাওয়া যাওয়া আরেকটি প্রজাতি স্কেলি থ্রোটেড হানি গাইডেরও গুণটা আছে বলে দাবি করেন অনেকেই।
হানিগাইড নাম পাওয়া বাকি প্রজাতিগুলো কিন্তু পথ দেখিয়ে মোটেই মধুর কাছে নিয়ে যায় না। এদের বেশির ভাগেরও বসতি আফ্রিকায়। এশিয়ায় যে দুই প্রজাতি আছে, তার একটির বিচরণ মালয়েশিয়াসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার কয়েকটি দেশে, অপরটির হিমালয় অঞ্চলে।
গ্রেটার হানিগাইডদের দেখা পাবেন মোজাম্বিক, বতসোয়ানা, দক্ষিণ আফ্রিকা, জিম্বাবুয়ের মতো দেশগুলোতে। আকারে একেবারেই ছোটখাটো, দৈর্ঘ্য ২০ সেন্টিমিটারের মতো, ওজন ৫০ গ্রাম। পুরুষদের রং গাঢ় ধূসর-বাদামি, গলা কালো, কাঁধে হলদে দাগ, ঠোঁট গোলাপি। মেয়ে পাখিদের ঠোঁট কালচে।
হানিগাইড বার্ডদের এক হিসেবে অন্য বন্যপ্রাণীদের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের বিপরীত উদাহরণ বলা চলে। এমনিতে মানুষ বিভিন্ন পশু-পাখিকে পোষ মানায় শিকারের জন্য বা অন্য কোনো কাজে, এখানে উল্টো এরাই মানুষকে প্রশিক্ষণ দেয় তাদের অনুসরণ করতে।
শ্বেতাঙ্গদের মধ্যে পাখিগুলোর এই আশ্চর্য বৈশিষ্ট্য প্রথম লিপিবদ্ধ করেন মোজাম্বিকে ধর্ম প্রচার করা পর্তুগিজ মিশনারি জোয়াও সান্তোস। সেটা ১৫৮৮ সালের ঘটনা। সান্তোস প্রায়ই লক্ষ করতেন সোফালায় তাঁর গির্জার দেয়ালের ফাটলের মধ্য দিয়ে ছোট্ট এক পাখি ওড়াউড়ি করে, আর সুযোগ পেলেই গির্জায় রাখা মোমে ঠোকর দেয়। পরে জোয়াও সান্তোস আবিষ্কার করেন, এই পাখি গাছে গছে ওড়াউড়ি করে মানুষকে মধুর খোঁজ দেয়।
পরের শতকগুলোতেও এই আশ্চর্য পাখিটা সম্পর্কে বিক্ষিপ্তভাবে নানান তথ্য পাওয়া যাচ্ছিল। তবে শুরুতে বিজ্ঞানীরা একে একটা গুজব বলেই ধরে নেন। একটি পাখি মানুষকে মধুর কাছে নিয়ে যাবে কে ভাবতে পেরেছিল? বহু পরে কেনিয়ার ইকোলজিস্ট ড. হোসেইন আইজাক এবং জার্মান প্রাণিবিদ হেইঞ্জ উলরিখ রেয়ার পাখিটির ব্যাপারে তাদের গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করেন, সেটা ১৯৮৯ সালে। এভাবেই হানিগাইডদের কিংবদন্তি সত্যি বলে প্রমাণিত হলো।
তবে হানিগাইড পাখিদের এই বিরল গুণ দুই-একবার যে মানুষকে ঝামেলায় ফেলেনি তা-ও নয়। তবে একজন বন্যপ্রাণিপ্রেমী হিসেবে একে শাপে বর বলেই মনে হয়েছে আমার। বিখ্যাত স্কটিশ শিকারি ডব্লিউ. ডি এম বেল বা করামজো বেলের বইয়ে এমন একটি ঘটনার বিবরণ আছে। বিংশ শতকের গোড়ার দিকের ঘটনা, আফ্রিকার কোনো একটি জায়গায় হাতি শিকারে বেরিয়েছেন। ওই সময় মৌমাছিদের বাসাগুলো ছিল মধু ও শূককীটে পরিপূর্ণ। এদিকে অরণ্যটায় হাতি ছিল প্রচুর। চাষবাসের জন্য স্থানীয় অধিবাসীরা আগুন দিয়ে কেবলই জঙ্গল পুড়িয়েছিল, তাই কালো মাটিতে হাতির পায়ের ছাপ পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছিল। কিন্তু সমস্যা বাধল অন্য জায়গায়, হানিগাইডরাও খাবার জোগাড়ে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছিল তখন। লেখক কিংবা তাঁর শিকারসঙ্গীদের দেখলেই মধুর কাছে পথ দেখিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য ডাকাডাকি শুরু করত। ব্যাস, এই চেঁচামেচিতে হাতিরাও শিকারিদের উপস্থিতি টের পেয়ে যেত। অবশ্য পরে স্থানীয় এক ওঝা আর এলাকাবাসীর সহায়তায় হানিবার্ডদের ফাঁকি দেন বেল।
আফ্রিকান মধু সংগ্রাহকারীরা এই পাখিদের সঙ্গে যোগাযোগের চমৎকার এক পদ্ধতি বের করে নিয়েছেন। ক্যাম্ব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ ক্ল্যায়ার স্পটিসউড আবিষ্কার করেন, মোজাম্বিকের ইয়াও গোত্রের মধু সংগ্রহকারীরা মধু-গাইড পাখিদের ডেকে আনতে প্রথমে চড়া, কাঁপা একটা আওয়াজ করে। তারপর করে অদ্ভুত একধরনের ঘোঁতঘোঁত শব্দ। এই ডাক শুনে পাখিরা বুঝে যায় ওরা অনুসরণের জন্য প্রস্তুত। তবে আফ্রিকার অন্যান্য গোত্রের লোকেরা নিশ্চয় এই সংকেত ব্যবহার করে না, তাঁদের অন্য তরিকা থাকার কথা।
হানিগাইডদের প্রিয় খাবার মৌচাকের মোম হলেও কখনো মাকড়সা, গাছে থাকা কীটপতঙ্গ কিংবা ফলমূলও খায়। তা ছাড়া খাবারের ব্যাপারে অনেকটাই মানুষের সাহায্যনির্ভর এরা। ড. আইজাকের গবেষণায় উঠে এসেছে, মৌচাক থেকে এরা যে খাবার পায়, এর শতকরা ৯৬ ভাগই মানুষের সাহায্য ছাড়া জোগাড় করা অসম্ভব। এদিকে আফ্রিকার লোকেরা এখন জঙ্গল থেকে মধু সংগ্রহের চেয়ে গাঁয়ে মৌমাছি পালনে বেশি উৎসাহী। বাধ্য হয়েই বেচারা হানিগাইডদের পূর্বপুরুষদের দেখিয়ে যাওয়া গাইডের কাজ ছেড়ে নিজের খাবার নিজে সংগ্রহের দিকে ঝুঁকতে হচ্ছে।
সূত্র: অ্যামিউজিং প্ল্যানেট, ম্যান ইটারস অ্যান্ড মরোডারস–জন টেইলর, দ্য ওয়ান্ডারিংস অফ এন অ্যালিফেন্ট হান্টার
হানিগাইড বার্ড নামে যে একধরনের পাখি আছে, এটা প্রথম জানতে পারি বিখ্যাত আইরিশ লেখক ও শিকারি জন টেইলরের বই পড়ে। এই মানুষটি ১৯২৩ থেকে ১৯৫৮ সাল পর্যন্ত পর্তুগিজ পূর্ব আফ্রিকায় (বর্তমান মোজাম্বিক) শিকার করেন। সেই সূত্রেই পাখিটি নিয়ে খোঁজখবর শুরু করি। তাতেই পরিষ্কার হয় আফ্রিকার জঙ্গলে বাস করা সবচেয়ে বিচিত্র পাখিদের একটি এই হানিগাইড। বেশ কয়েক জাতের পাখি এই নামে পরিচিত হলেও মধুর খোঁজ দেয় মূলত আফ্রিকান প্রজাতি গ্রেটার হানিগাইডরা।
এবার এই পাখিদের, মানে হানিগাইড বার্ডের এমন নামকরণের কারণটা বরং জেনে নিই। নাম দেখে যা বুজেছেন তা-ই, এরা মানুষকে মধুর খোঁজ দেয়। দুর্গমের কোনো ছোটখাটো বসতি বা জঙ্গলের মধ্যে কারও পাতা ক্যাম্পের ধারে এসে ডাকতে শুরু করে এসব পাখি। তারপর এক গাছ থেকে আরেক গাছে উড়ে যায়, উদ্দেশ্য মানুষের মনোযোগ আকর্ষণ। আফ্রিকানরা এই পাখিদের সঙ্গে বেশ পরিচিত, অনেক সময়ই এদের পাত্তা না দিয়ে নিজের কাজ চালিয়ে যান তাঁরা। তবে হানিগাইডরা দমবার পাত্র নয়, একটু অপেক্ষা করে আবার শুরু করে উত্তেজিত ডাকাডাকি, ওড়াউড়ি।
এখন কেউ যদি মধুর খোঁজে পাখিটিকে অনুসরণ করতে ইচ্ছুক হন, সমস্ত জোগাড়যন্ত্র শেষ করে শিস দিয়ে সংকেত দেন একে। ব্যাস, হানিগাইড কাজ শুরু করে। অর্থাৎ, অনুসরণকারীদের পথ দেখিয়ে নিয়ে চলে মৌচাকের কাছে। গন্তব্যে পৌঁছার পরও ডাল থেকে ডালে উড়ে উত্তেজিত স্বরে ডাকতেই থাকে। তবে মানবসঙ্গী কাজ শুরু করলে ডাকাডাকি থামিয়ে কাছের একটা গাছে গিয়ে চুপচাপ বসে পড়ে। পাছে আবার মৌ সংগ্রহকারী বিরক্ত হন! চাকে কোনো ঝামেলা থাকলে লোকটা শিস দেবেন। তখন পাখিটা আবার উড়তে উড়তে নতুন এক মৌচাকের কাছে নিয়ে যাবে। ছোট্ট এই পাখিরা কিন্তু মধুর জন্য এত কিছু করে না। বরং তাদের চাওয়া কেবল মধু সংগ্রহের পর মৌমাছির বাসার মোম আর কিছু শূককীট।
মৌচাক খুঁজে বের করতে এই পাখিরা যে সিদ্ধহস্ত, এটা নিশ্চয় আর বলে দিতে হবে না। আশ্চর্য ব্যাপার, এমনই এক মধুপাখিকে অনুসরণ করে দুই কিশোর বন্ধুসহ কাকতালীয়ভাবে ভয়ানক সুন্দর এক কালো কেশরের মানুষখেকো সিংহের মুখোমুখি হয়ে গিয়েছিলেন জন টেইলর। অনেক দিন খুঁজেও যেটার হদিস পাচ্ছিলেন না। তবে টেইলর পাখিটির মনও খারাপ করেননি, সিংহটিকে মারার পর মধু গাইডকে ডেকে আনার ব্যবস্থা করেন। তারপর মধুও সংগ্রহ করেন দুই সঙ্গীর মাধ্যমে।
তো টেইলরের বইয়ে এই পাখিদের কথা জানতে পেরে একটু পড়াশোনার চেষ্টা করলাম এদের নিয়ে। এতে চমকটা আরও বাড়ল। মোটামুটি ১৭ ধরনের পাখি এই নামে পরিচিত হলেও এই নামটি ওরা পেয়েছে আফ্রিকান প্রজাতি গ্রেটার বা ব্ল্যাক থ্রোটেড হানিগাইডদের মধুর খোঁজ দেওয়ার আশ্চর্য বৈশিষ্ট্যের কারণেই। অবশ্য আফ্রিকার কয়েকটি দেশে পাওয়া যাওয়া আরেকটি প্রজাতি স্কেলি থ্রোটেড হানি গাইডেরও গুণটা আছে বলে দাবি করেন অনেকেই।
হানিগাইড নাম পাওয়া বাকি প্রজাতিগুলো কিন্তু পথ দেখিয়ে মোটেই মধুর কাছে নিয়ে যায় না। এদের বেশির ভাগেরও বসতি আফ্রিকায়। এশিয়ায় যে দুই প্রজাতি আছে, তার একটির বিচরণ মালয়েশিয়াসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার কয়েকটি দেশে, অপরটির হিমালয় অঞ্চলে।
গ্রেটার হানিগাইডদের দেখা পাবেন মোজাম্বিক, বতসোয়ানা, দক্ষিণ আফ্রিকা, জিম্বাবুয়ের মতো দেশগুলোতে। আকারে একেবারেই ছোটখাটো, দৈর্ঘ্য ২০ সেন্টিমিটারের মতো, ওজন ৫০ গ্রাম। পুরুষদের রং গাঢ় ধূসর-বাদামি, গলা কালো, কাঁধে হলদে দাগ, ঠোঁট গোলাপি। মেয়ে পাখিদের ঠোঁট কালচে।
হানিগাইড বার্ডদের এক হিসেবে অন্য বন্যপ্রাণীদের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের বিপরীত উদাহরণ বলা চলে। এমনিতে মানুষ বিভিন্ন পশু-পাখিকে পোষ মানায় শিকারের জন্য বা অন্য কোনো কাজে, এখানে উল্টো এরাই মানুষকে প্রশিক্ষণ দেয় তাদের অনুসরণ করতে।
শ্বেতাঙ্গদের মধ্যে পাখিগুলোর এই আশ্চর্য বৈশিষ্ট্য প্রথম লিপিবদ্ধ করেন মোজাম্বিকে ধর্ম প্রচার করা পর্তুগিজ মিশনারি জোয়াও সান্তোস। সেটা ১৫৮৮ সালের ঘটনা। সান্তোস প্রায়ই লক্ষ করতেন সোফালায় তাঁর গির্জার দেয়ালের ফাটলের মধ্য দিয়ে ছোট্ট এক পাখি ওড়াউড়ি করে, আর সুযোগ পেলেই গির্জায় রাখা মোমে ঠোকর দেয়। পরে জোয়াও সান্তোস আবিষ্কার করেন, এই পাখি গাছে গছে ওড়াউড়ি করে মানুষকে মধুর খোঁজ দেয়।
পরের শতকগুলোতেও এই আশ্চর্য পাখিটা সম্পর্কে বিক্ষিপ্তভাবে নানান তথ্য পাওয়া যাচ্ছিল। তবে শুরুতে বিজ্ঞানীরা একে একটা গুজব বলেই ধরে নেন। একটি পাখি মানুষকে মধুর কাছে নিয়ে যাবে কে ভাবতে পেরেছিল? বহু পরে কেনিয়ার ইকোলজিস্ট ড. হোসেইন আইজাক এবং জার্মান প্রাণিবিদ হেইঞ্জ উলরিখ রেয়ার পাখিটির ব্যাপারে তাদের গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করেন, সেটা ১৯৮৯ সালে। এভাবেই হানিগাইডদের কিংবদন্তি সত্যি বলে প্রমাণিত হলো।
তবে হানিগাইড পাখিদের এই বিরল গুণ দুই-একবার যে মানুষকে ঝামেলায় ফেলেনি তা-ও নয়। তবে একজন বন্যপ্রাণিপ্রেমী হিসেবে একে শাপে বর বলেই মনে হয়েছে আমার। বিখ্যাত স্কটিশ শিকারি ডব্লিউ. ডি এম বেল বা করামজো বেলের বইয়ে এমন একটি ঘটনার বিবরণ আছে। বিংশ শতকের গোড়ার দিকের ঘটনা, আফ্রিকার কোনো একটি জায়গায় হাতি শিকারে বেরিয়েছেন। ওই সময় মৌমাছিদের বাসাগুলো ছিল মধু ও শূককীটে পরিপূর্ণ। এদিকে অরণ্যটায় হাতি ছিল প্রচুর। চাষবাসের জন্য স্থানীয় অধিবাসীরা আগুন দিয়ে কেবলই জঙ্গল পুড়িয়েছিল, তাই কালো মাটিতে হাতির পায়ের ছাপ পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছিল। কিন্তু সমস্যা বাধল অন্য জায়গায়, হানিগাইডরাও খাবার জোগাড়ে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছিল তখন। লেখক কিংবা তাঁর শিকারসঙ্গীদের দেখলেই মধুর কাছে পথ দেখিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য ডাকাডাকি শুরু করত। ব্যাস, এই চেঁচামেচিতে হাতিরাও শিকারিদের উপস্থিতি টের পেয়ে যেত। অবশ্য পরে স্থানীয় এক ওঝা আর এলাকাবাসীর সহায়তায় হানিবার্ডদের ফাঁকি দেন বেল।
আফ্রিকান মধু সংগ্রাহকারীরা এই পাখিদের সঙ্গে যোগাযোগের চমৎকার এক পদ্ধতি বের করে নিয়েছেন। ক্যাম্ব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ ক্ল্যায়ার স্পটিসউড আবিষ্কার করেন, মোজাম্বিকের ইয়াও গোত্রের মধু সংগ্রহকারীরা মধু-গাইড পাখিদের ডেকে আনতে প্রথমে চড়া, কাঁপা একটা আওয়াজ করে। তারপর করে অদ্ভুত একধরনের ঘোঁতঘোঁত শব্দ। এই ডাক শুনে পাখিরা বুঝে যায় ওরা অনুসরণের জন্য প্রস্তুত। তবে আফ্রিকার অন্যান্য গোত্রের লোকেরা নিশ্চয় এই সংকেত ব্যবহার করে না, তাঁদের অন্য তরিকা থাকার কথা।
হানিগাইডদের প্রিয় খাবার মৌচাকের মোম হলেও কখনো মাকড়সা, গাছে থাকা কীটপতঙ্গ কিংবা ফলমূলও খায়। তা ছাড়া খাবারের ব্যাপারে অনেকটাই মানুষের সাহায্যনির্ভর এরা। ড. আইজাকের গবেষণায় উঠে এসেছে, মৌচাক থেকে এরা যে খাবার পায়, এর শতকরা ৯৬ ভাগই মানুষের সাহায্য ছাড়া জোগাড় করা অসম্ভব। এদিকে আফ্রিকার লোকেরা এখন জঙ্গল থেকে মধু সংগ্রহের চেয়ে গাঁয়ে মৌমাছি পালনে বেশি উৎসাহী। বাধ্য হয়েই বেচারা হানিগাইডদের পূর্বপুরুষদের দেখিয়ে যাওয়া গাইডের কাজ ছেড়ে নিজের খাবার নিজে সংগ্রহের দিকে ঝুঁকতে হচ্ছে।
সূত্র: অ্যামিউজিং প্ল্যানেট, ম্যান ইটারস অ্যান্ড মরোডারস–জন টেইলর, দ্য ওয়ান্ডারিংস অফ এন অ্যালিফেন্ট হান্টার
বিষধর মাকড়সা হিসেবে আলাদা পরিচিতি আছে ট্যারানটুলার। কাজেই একে এড়িয়ে চলাটাই স্বাভাবিক। ট্যারানটুলা একই সঙ্গে বেশ দুষ্প্রাপ্য এক প্রাণীও। তবে সম্প্রতি পেরুতে এক ব্যক্তিকে পুলিশ আটক করেছে ৩২০টি ট্যারানটুলা মাকড়সাসহ আরও কিছু দুষ্প্রাপ্য প্রাণী শরীরের সঙ্গে বেঁধে দেশ থেকে পালানোর চেষ্টা...
২ দিন আগেপাঠকেরা পড়ার পর নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে লাইব্রেরিতে বই ফেরত দিয়ে দেবেন এটাই নিয়ম। কারও কারও সময়মতো বই ফেরত না দেওয়ার অভ্যাসও আছে। তবে তাই বলে আপনি নিশ্চয় আশা করবেন না অর্ধ শতাব্দী পর কেউ বই ফেরত দেবেন। কিন্তু সত্যি মার্কিন মুলুকে এমন একটি কাণ্ড হয়েছে।
২ দিন আগেডোনাল্ড ট্রাম্প মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর চলছে নানা জল্পনা-কল্পনা। শুধু আমেরিকায় নয়, বিশ্বজুড়েই আলোচনায় এখন ট্রাম্প। তবে তাঁর পুনরায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়া ইতালির সার্দানিয়া দ্বীপের একটি গ্রামে একেবারেই ভিন্ন এক সম্ভাবনার দুয়ার উন্মোচন হিসেবে।
৩ দিন আগেটাইটানিকের ৭০০-র বেশি যাত্রী এবং ক্রুকে উদ্ধার করেছিল একটি জাহাজ। ওই জাহাজের ক্যাপ্টেনকে উপহার দেওয়া একটি সোনার ঘড়ি নিলামে বিক্রি হয়েছে ১৫ কোটি ৬০ লাখ পাউন্ড অর্থাৎ ১৯ কোটি ৭০ লাখ ডলারে।
৪ দিন আগে