আব্দুর রহমান, ঢাকা
প্রতিবছর বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে ভয়াবহ দাবানলে পুড়ে যাচ্ছে লাখো হেক্টর বনভূমি। এমনই এক দাবানলপ্রবণ এলাকা ইন্দোনেশিয়ার বোর্নিও দ্বীপের পশ্চিম কালিমানতাংয়ের একটি জেলা কেটাপাং। বনাঞ্চলে পরিপূর্ণ এই জেলার বিশাল এলাকাজুড়ে ‘পিট ল্যান্ডের’ উপস্থিতি। সাধারণত এই পিট ল্যান্ডে বিপুল পরিমাণ কার্বন জমা থাকে, যা ধীরে ধীরে মাটিতে মিশে যায়। কার্বনের ব্যাপক উপস্থিতির কারণে শুষ্ক মৌসুমে এই অঞ্চলে অগ্নিকাণ্ড বা দাবানলের শঙ্কা বেড়ে যায়।
কয়েক শ বছর ধরে এই অঞ্চলে দাবানলের ঘটনা ঘটছে। সেই জায়গা থেকে জেলাটিতে নারীদের নিয়ে স্বেচ্ছাসেবী ফায়ার ফাইটার ইউনিট গড়ে তোলার চিন্তা করে ইন্দোনেশিয়ান নেচার রিহ্যাবিলিটেশন ইনিসিয়েশন ফাউন্ডেশন নামে একটি দাতব্যপ্রতিষ্ঠান। সেই চিন্তা থেকে তারা গড়ে তোলে ‘পাওয়ার অব মামা’ বা ‘মায়ের শক্তি’ নামে একটি সংস্থা।
মায়ের শক্তিতে বর্তমানে ৯২ জন স্বেচ্ছাসেবক থাকলেও এর যাত্রা শুরু হয়েছিল মাত্র ৪৪ জন নারীকে নিয়ে, যাঁদের অধিকাংশই ছিলেন গৃহিণী। তবে বর্তমানে ১৯ বছরের তরুণী থেকে শুরু করে ৬০ বছরের নারীও এই দলে আছেন।
এই দলের প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্যদের একজন সিতি নুরানি। মুসলিম-অধ্যুষিত অঞ্চলটির এই দলের প্রত্যেক নারীই মুসলমান। তাঁরা নিজেদের প্রয়োজনেই নেমেছেন এ কাজে। কিন্তু নিজেদের ঐতিহ্য ভোলেননি। দলের সদস্যরা সবাই কমবেশি হিজাব ব্যবহার করেন। দীর্ঘ হাতার জামা পরার পাশাপাশি পরেন হাঁটু পর্যন্ত দীর্ঘ রাবারের তৈরি একধরনের বিশেষ জুতা।
বোর্নিওর এই অংশে বছরের একটি বড় সময়ই বৃষ্টিপাত হয়। কিন্তু শুষ্ক মৌসুমে অগ্নিকাণ্ডের পরিমাণ বেড়ে যায়। নুরানি ও তাঁর দলের সদস্যরা দল বেঁধে বিভিন্ন অংশে টহল দিয়ে বেড়ান, কোথাও আগুন জ্বলার আশঙ্কা থাকলে তা শনাক্ত করে তাঁরা বিভিন্ন পূর্ব সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেন। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তাঁরা কৃষকদের প্রশিক্ষিত করেন আগুন যেন না জ্বলতে পারে সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে। এ জন্য নুরানির দল কৃষকদের আগেভাগেই পরিকল্পিত উপায়ে জমির আবর্জনা পুড়িয়ে ফেলতে সাহায্য করে। এরপরও যদি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে, সে ক্ষেত্রে কৃষক বা অন্য কারও কাছ থেকে খবর পেয়ে তাঁরা কাঠের তৈরি বিশেষ ধরনের নৌকা বা ক্যানুতে করে ঘটনাস্থলে পৌঁছান। এসব নৌকায় থাকা বিশেষ ধরনের মেশিনের সহায়তায় প্রচলিত হোসপাইপ দিয়ে তাঁরা পানি ছিটিয়ে আগুন নেভান। একই সঙ্গে তাঁরা ড্রোনও ব্যবহার করেন। আগুন শনাক্ত করাসহ অন্যান্য কাজে ড্রোনের ব্যবহারেও পারঙ্গম এই নারীরা।
নুরানিদের কাজ কেবল আগুন নেভানোই নয়। তাঁরা কৃষকদের কৃষিজ উৎপাদন বাড়াতেও বিভিন্ন পরামর্শ দেন; বিশেষ করে মাটিতে নাইট্রোজেন, কার্বন ইত্যাদির পরিমাণ কীভাবে কমাতে হবে, জমি ক্ষারীয় বা অম্লীয় হয়ে গেলে তা কীভাবে কমাতে হবে, কোন ফসল চাষ করলে কোন মৌসুমে ভালো উৎপাদন হবে—এসব বিষয়েও পরামর্শ দেন তাঁরা। তবে এই নারী অগ্নিযোদ্ধারা যে খুব সহজেই তাঁদের দায়িত্ব পালন করতে পারছেন, তা কিন্তু নয়। বর্ষার জলাবদ্ধতা, শুকনো মৌসুমে পানি কমে যাওয়া–দুটোই তাঁদের কাজে বাধার সৃষ্টি করে।
এ ছাড়া অনেক সময় দীর্ঘক্ষণ প্রচণ্ড ধোঁয়ার মধ্যে কাজ করতে হয় বলে তাঁদের বিভিন্ন স্বাস্থ্যঝুঁকিও তৈরি হয়। তবে এসব প্রতিকূলতা কাটিয়ে ওঠার বিভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করছে ইন্দোনেশিয়ান নেচার রিহ্যাবিলিটেশন ইনিসিয়েশন ফাউন্ডেশন। উন্নতমানের মাস্ক সরবরাহ করা হচ্ছে নুরানিদের। এ ছাড়া অনেক দূর থেকে কীভাবে আগুন নেভাতে হয়, সে বিষয়ে প্রশিক্ষণও দেওয়া হচ্ছে তাঁদের।
দুই বছরের বেশি সময় পেরিয়ে গেছে। নুরানিদের গ্রামসহ আশপাশের অনেক গ্রামের মানুষই এখন নুরানির কাজকে প্রশংসার চোখে দেখছেন। কিন্তু যাত্রার ইতিহাস ছিল ঠিক উল্টো। গ্রামের পুরুষেরা, এমনকি নারীরাই তাঁদের দেখে তামাশা করেছেন। সেই দিনগুলোর কথা স্মরণ করে সিতি নুরানি বলেন, ‘আমরা ইউনিফর্ম পরে ফায়ার ফাইটারের টহলে যোগ দিয়েছিলাম বলে অনেকেই আমাদের দেখে নাক সিটকিয়েছেন।’ পুরুষদের ভাষ্য ছিল, নারীরা আগুন নেভানোর কাজ করবে? সত্যিই?
কিন্তু নারীরা করে দেখিয়েছেন। নাক সিটকানোদের দুয়ারে ঘা পড়েছে। টনকও নড়ছে। মায়ের শক্তির কর্মকাণ্ড প্রসঙ্গে পশ্চিম কালিমানতাংয়ের নারী অধিকারকর্মী লিলি খাইরানুর বলেন, ‘এই নারীরা তাঁদের এলাকায় পরিবেশ সংরক্ষণ বিষয়ে সচেতনতা তৈরিতে সত্যিকার অর্থেই দারুণ অবদান রাখছেন।’
তথ্যসূত্র: বিবিসি
প্রতিবছর বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে ভয়াবহ দাবানলে পুড়ে যাচ্ছে লাখো হেক্টর বনভূমি। এমনই এক দাবানলপ্রবণ এলাকা ইন্দোনেশিয়ার বোর্নিও দ্বীপের পশ্চিম কালিমানতাংয়ের একটি জেলা কেটাপাং। বনাঞ্চলে পরিপূর্ণ এই জেলার বিশাল এলাকাজুড়ে ‘পিট ল্যান্ডের’ উপস্থিতি। সাধারণত এই পিট ল্যান্ডে বিপুল পরিমাণ কার্বন জমা থাকে, যা ধীরে ধীরে মাটিতে মিশে যায়। কার্বনের ব্যাপক উপস্থিতির কারণে শুষ্ক মৌসুমে এই অঞ্চলে অগ্নিকাণ্ড বা দাবানলের শঙ্কা বেড়ে যায়।
কয়েক শ বছর ধরে এই অঞ্চলে দাবানলের ঘটনা ঘটছে। সেই জায়গা থেকে জেলাটিতে নারীদের নিয়ে স্বেচ্ছাসেবী ফায়ার ফাইটার ইউনিট গড়ে তোলার চিন্তা করে ইন্দোনেশিয়ান নেচার রিহ্যাবিলিটেশন ইনিসিয়েশন ফাউন্ডেশন নামে একটি দাতব্যপ্রতিষ্ঠান। সেই চিন্তা থেকে তারা গড়ে তোলে ‘পাওয়ার অব মামা’ বা ‘মায়ের শক্তি’ নামে একটি সংস্থা।
মায়ের শক্তিতে বর্তমানে ৯২ জন স্বেচ্ছাসেবক থাকলেও এর যাত্রা শুরু হয়েছিল মাত্র ৪৪ জন নারীকে নিয়ে, যাঁদের অধিকাংশই ছিলেন গৃহিণী। তবে বর্তমানে ১৯ বছরের তরুণী থেকে শুরু করে ৬০ বছরের নারীও এই দলে আছেন।
এই দলের প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্যদের একজন সিতি নুরানি। মুসলিম-অধ্যুষিত অঞ্চলটির এই দলের প্রত্যেক নারীই মুসলমান। তাঁরা নিজেদের প্রয়োজনেই নেমেছেন এ কাজে। কিন্তু নিজেদের ঐতিহ্য ভোলেননি। দলের সদস্যরা সবাই কমবেশি হিজাব ব্যবহার করেন। দীর্ঘ হাতার জামা পরার পাশাপাশি পরেন হাঁটু পর্যন্ত দীর্ঘ রাবারের তৈরি একধরনের বিশেষ জুতা।
বোর্নিওর এই অংশে বছরের একটি বড় সময়ই বৃষ্টিপাত হয়। কিন্তু শুষ্ক মৌসুমে অগ্নিকাণ্ডের পরিমাণ বেড়ে যায়। নুরানি ও তাঁর দলের সদস্যরা দল বেঁধে বিভিন্ন অংশে টহল দিয়ে বেড়ান, কোথাও আগুন জ্বলার আশঙ্কা থাকলে তা শনাক্ত করে তাঁরা বিভিন্ন পূর্ব সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেন। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তাঁরা কৃষকদের প্রশিক্ষিত করেন আগুন যেন না জ্বলতে পারে সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে। এ জন্য নুরানির দল কৃষকদের আগেভাগেই পরিকল্পিত উপায়ে জমির আবর্জনা পুড়িয়ে ফেলতে সাহায্য করে। এরপরও যদি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে, সে ক্ষেত্রে কৃষক বা অন্য কারও কাছ থেকে খবর পেয়ে তাঁরা কাঠের তৈরি বিশেষ ধরনের নৌকা বা ক্যানুতে করে ঘটনাস্থলে পৌঁছান। এসব নৌকায় থাকা বিশেষ ধরনের মেশিনের সহায়তায় প্রচলিত হোসপাইপ দিয়ে তাঁরা পানি ছিটিয়ে আগুন নেভান। একই সঙ্গে তাঁরা ড্রোনও ব্যবহার করেন। আগুন শনাক্ত করাসহ অন্যান্য কাজে ড্রোনের ব্যবহারেও পারঙ্গম এই নারীরা।
নুরানিদের কাজ কেবল আগুন নেভানোই নয়। তাঁরা কৃষকদের কৃষিজ উৎপাদন বাড়াতেও বিভিন্ন পরামর্শ দেন; বিশেষ করে মাটিতে নাইট্রোজেন, কার্বন ইত্যাদির পরিমাণ কীভাবে কমাতে হবে, জমি ক্ষারীয় বা অম্লীয় হয়ে গেলে তা কীভাবে কমাতে হবে, কোন ফসল চাষ করলে কোন মৌসুমে ভালো উৎপাদন হবে—এসব বিষয়েও পরামর্শ দেন তাঁরা। তবে এই নারী অগ্নিযোদ্ধারা যে খুব সহজেই তাঁদের দায়িত্ব পালন করতে পারছেন, তা কিন্তু নয়। বর্ষার জলাবদ্ধতা, শুকনো মৌসুমে পানি কমে যাওয়া–দুটোই তাঁদের কাজে বাধার সৃষ্টি করে।
এ ছাড়া অনেক সময় দীর্ঘক্ষণ প্রচণ্ড ধোঁয়ার মধ্যে কাজ করতে হয় বলে তাঁদের বিভিন্ন স্বাস্থ্যঝুঁকিও তৈরি হয়। তবে এসব প্রতিকূলতা কাটিয়ে ওঠার বিভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করছে ইন্দোনেশিয়ান নেচার রিহ্যাবিলিটেশন ইনিসিয়েশন ফাউন্ডেশন। উন্নতমানের মাস্ক সরবরাহ করা হচ্ছে নুরানিদের। এ ছাড়া অনেক দূর থেকে কীভাবে আগুন নেভাতে হয়, সে বিষয়ে প্রশিক্ষণও দেওয়া হচ্ছে তাঁদের।
দুই বছরের বেশি সময় পেরিয়ে গেছে। নুরানিদের গ্রামসহ আশপাশের অনেক গ্রামের মানুষই এখন নুরানির কাজকে প্রশংসার চোখে দেখছেন। কিন্তু যাত্রার ইতিহাস ছিল ঠিক উল্টো। গ্রামের পুরুষেরা, এমনকি নারীরাই তাঁদের দেখে তামাশা করেছেন। সেই দিনগুলোর কথা স্মরণ করে সিতি নুরানি বলেন, ‘আমরা ইউনিফর্ম পরে ফায়ার ফাইটারের টহলে যোগ দিয়েছিলাম বলে অনেকেই আমাদের দেখে নাক সিটকিয়েছেন।’ পুরুষদের ভাষ্য ছিল, নারীরা আগুন নেভানোর কাজ করবে? সত্যিই?
কিন্তু নারীরা করে দেখিয়েছেন। নাক সিটকানোদের দুয়ারে ঘা পড়েছে। টনকও নড়ছে। মায়ের শক্তির কর্মকাণ্ড প্রসঙ্গে পশ্চিম কালিমানতাংয়ের নারী অধিকারকর্মী লিলি খাইরানুর বলেন, ‘এই নারীরা তাঁদের এলাকায় পরিবেশ সংরক্ষণ বিষয়ে সচেতনতা তৈরিতে সত্যিকার অর্থেই দারুণ অবদান রাখছেন।’
তথ্যসূত্র: বিবিসি
ডেস্কে বসে কপের খবর নেওয়া আর আকাশের চাঁদ ছোঁয়ার মধ্যে যেন তেমন কোনো পার্থক্য নেই। কিন্তু হঠাৎ মনে পড়ল আনিকা তাবাসসুমের কথা। এই মুহূর্তে তিনি আছেন আজারবাইজানের বাকুতে। এত এত অ্যাপের দুনিয়ায় তাঁকে ধরা কি খুব কঠিন? চেষ্টা করতেই তাঁর কাছ থেকে পাওয়া গেল উত্তর। আমরাও চটপট কথা বলে ফেললাম আনিকার সঙ্গে।
২ দিন আগেবাংলাদেশে তৈরি পোশাক খাতে ৩৩ লাখ ১৭ হাজার ৩৯৭ জন শ্রমিক কাজ করছেন এখন। বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) বায়োমেট্রিক ডেটাবেইস থেকে পাওয়া গেছে এ তথ্য। এই বিশালসংখ্যক শ্রমিকের মধ্যে ১৭ লাখ ৩৪ হাজার ৪৫৯ জন বা ৫২ দশমিক ২৮ শতাংশ নারী...
২ দিন আগেআরব অঞ্চলের দেশগুলোর ঐতিহ্যবাহী খেলা উটের দৌড়। একসময় আমাদের দেশে যেমন ঘোড়দৌড় হতো, বিষয়টি তেমনই। সেখানে শুধু ঘোড়ার বদলে থাকে উট। সে উট যাঁরা চালনা করেন, তাঁরা হলেন জকি। এত দিন জকি হিসেবে সৌদি আরবে ছিল পুরুষদের দাপট। দেশটিতে সেই প্রচলিত প্রথা অবশ্য ভেঙেছে ২০২২ সালে...
২ দিন আগেঅ্যান্টিবায়োটিক হিসেবে পেনিসিলিনের আবিষ্কার মানবজাতিকে স্বস্তি দিয়েছিল। তারপর আবিষ্কৃত হয় ছত্রাকজনিত রোগের বিরুদ্ধে কর্মক্ষম অ্যান্টিবায়োটিক নাইস্ট্যাটিন। এটির সঙ্গে যুক্ত আছে রাচেল ফুলার ব্রাউন এবং তাঁর সহযোগী এলিজাবেথ হ্যাজেনের নাম। এই দুজনের আবিষ্কারটি ছিল ছত্রাকজনিত রোগের বিরুদ্ধে প্রথম কার্যকর
২ দিন আগে