Ajker Patrika

ডিপফেক ছবি তৈরি ও প্রচার এবং ভুয়া তথ্য ছড়িয়ে কাউকে হয়রানি করা আইনত অপরাধ

ব্যারিস্টার ইফফাত গিয়াস আরেফিন
আপডেট : ১৯ মার্চ ২০২৫, ১১: ২৩
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

আমি লেখাপড়ার সূত্রে পাঁচ বছর বিদেশে ছিলাম। সেখান থেকে এসে বিয়ে করি এবং মা হই। এটা আমার দ্বিতীয় বিয়ে। প্রথম স্বামীর সঙ্গে আমার চার বছর আগে ছাড়াছাড়ি হয়ে গেছে। মাঝখানে আমার অন্য কারও সঙ্গে সম্পর্কও হয়নি। বিয়ের পর সন্তান হওয়া পর্যন্ত সবই ভালো ছিল। সম্প্রতি কোনো একটি ফেক ফেসবুক আইডি দিয়ে আমার আপত্তিকর কিছু ডিপফেক ছবি আমার স্বামীর কলিগদের কাছে পাঠানো হয়েছে। এরপর স্বামী বিষয়টি আমাকে জানালে আমিও বুঝে উঠতে পারছি না, এটা আসলে কে করছে। আইডিটা লন্ডনের লোকেশনে খোলা হয়েছে। এরপর সেই আইডি থেকে আমার ভাই ও বাবার নামে আপত্তিকর কথা লিখে বিভিন্ন পোস্ট করা হয়। সাইবার ক্রাইমে কীভাবে মামলা করলে আমি সর্বোচ্চ সাহায্য পাব? এ ছাড়া আমি আর কী করতে পারি?

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক

ডিপফেক ছবি তৈরি ও প্রচার এবং ভুয়া তথ্য ছড়িয়ে কাউকে হয়রানি করা আইনত অপরাধ। বাংলাদেশে সাইবার ট্রাইব্যুনাল এবং ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট, ২০১৮-এর আওতায় আপনি মামলা করতে পারেন।

এ জন্য যা করতে হবে—

সাইবার ক্রাইম ইউনিটে অভিযোগ করা

বাংলাদেশ পুলিশের সাইবার ক্রাইম ইউনিট বা ডিজিটাল সিকিউরিটি এজেন্সিতে দ্রুত অভিযোগ করুন। আপনি সরাসরি থানায় গিয়ে জিডি করতে পারেন অথবা সিআইডি, র‍্যাবের সাইবার ইউনিট কিংবা সিটিটিসির সাইবার বিভাগে যোগাযোগ করতে পারেন।

প্রয়োজনীয় তথ্য ও ডকুমেন্টস

» ভুয়া আইডির স্ক্রিনশট ও লিংক

» প্রাপ্ত মেসেজ ও আপত্তিকর ছবি/পোস্টের প্রমাণ

» আপনার ও আপনার পরিবারের সদস্যদের ওপর আক্রমণের তথ্য

» আপনার স্বামীর কলিগদের কাছে যাওয়া মেসেজের স্ক্রিনশট

সাইবার ক্রাইম ইউনিটে যোগাযোগ

» সাইবার পুলিশ সেন্টার, সিআইডি: ০১৭৩০৩৩৬২৫৫

» সিটিটিসি: ০১৭৬৯৯৯৮৮৮৮

» র‍্যাব সাইবার ইউনিট: ০১৭৭৭৭৭৩০০০

» পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স কমপ্লেইন সেল: ৯৯৯ বা ০১৩২০০১৩৬০০

ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের আওতায় মামলা

আপনার ক্ষেত্রে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট, ২০১৮-এর ২৫, ২৬, ২৯ এবং ৩০ নম্বর ধারা প্রয়োগ করে মামলা করা যেতে পারে। এই ধারাগুলো গুজব, মিথ্যা তথ্য প্রচার, সাইবার বুলিং ও চরিত্র হনন প্রতিরোধে কার্যকর।

মামলা করতে যা প্রয়োজন

» কাছের থানায় গিয়ে লিখিত অভিযোগ দিন

» থানার ওসিকে বলুন এটি সাইবার ক্রাইমের মামলা হিসেবে রেকর্ড করতে।

থানায় সহযোগিতা যদি না পান, তাহলে ঢাকা সাইবার ট্রাইব্যুনালে সরাসরি অভিযোগ জমা দিন

লন্ডনে আইডি খোলার বিষয়টি গুরুত্ব দিন

যেহেতু আইডি লন্ডন থেকে খোলা হয়েছে, তাই সম্ভবত ভিপিএন ব্যবহার করা হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশি সাইবার ইউনিট কিংবা ইন্টারপোলের মাধ্যমে এটি ট্র্যাক করা সম্ভব হতে পারে। তাই আপনার সাইবার পুলিশে অভিযোগে এই তথ্য উল্লেখ করুন।

ব্যক্তিগত ও সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন

ফেসবুক/সোশ্যাল মিডিয়ার কারিগরি নিরাপত্তা বৃদ্ধি করুন এবং সন্দেহজনক আইডি থেকে পাওয়া যেকোনো মেসেজ আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে জানান।

» পরিবারকে সাপোর্ট দিন

» আপনার স্বামী, ভাই, বাবা—সবাইকে জানিয়ে দিন যে এটি প্রোপাগান্ডা

» পরিবারের মানসিক চাপ কমাতে কাউন্সেলিং নিতে পারেন

» মানহানির মামলা করার কথা ভাবুন

» যদি ব্যক্তিগত সম্মানহানি বা মিথ্যা তথ্য প্রচার বেশি ক্ষতি করে, তাহলে মানহানির মামলা করতে পারেন।

» মানসিকভাবে শক্ত থেকে আইনগত লড়াই চালিয়ে যান

আপনার প্রথম কাজ হবে সাইবার ক্রাইম ইউনিটে অভিযোগ জানানো এবং থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করা। সেই সঙ্গে সামাজিক ও মানসিক সহায়তা নিশ্চিত করা। প্রয়োজন হলে আইনজীবীর সহায়তা নিন। এই অপরাধের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিলে ভবিষ্যতে অপরাধীরা সাবধান হবে।

পরামর্শ দিয়েছেন: ব্যারিস্টার ইফফাত গিয়াস আরেফিন অ্যাডভোকেট, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হাসিনার আমলে গভর্নর হওয়ার প্রস্তাব পেয়েছিলাম: আহসান এইচ মনসুর

আলোচনায় ড. ইউনূসকে প্রধানমন্ত্রী দেখার আকাঙ্ক্ষা, আইনি পথ কী

এক দশক পর প্রকাশ্যে গায়িকা ডাফি, শোনালেন অপহরণ ও ধর্ষণের ভয়াবহ বর্ণনা

জাতীয় ঈদগাহে যাবেন না রাষ্ট্রপতি, ঈদুল ফিতরের নামাজ পড়বেন বঙ্গভবনে

শেখ হাসিনাকে ভারতে রেখে নির্বাচন পেছালে দেশের সংকট বাড়বে: ফখরুল

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত