কারাদণ্ড যেখানে বিয়ের চেয়ে নিরাপদ

ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ : ২৯ মে ২০২৪, ০৭: ২৯
আপডেট : ২৯ মে ২০২৪, ১২: ৪৮

হয় স্বামীর সঙ্গে থাকো, নয়তো কারাভোগ করো—আফগানিস্তানে নারীদের এ এক করুণ নিয়তি।সে দেশের কিশোরীরা স্কুলে যায় না,গান কিংবা নাচ শেখে না, খেলাধুলা করতে পারে না। এমনকি হাতখরচের টাকাও আয় করতে পারে না। এসবের অনুমতি নেই তাদের। সেখানে কিশোরীদের অনুমতি আছে শুধু বিয়ে করার। বিয়ের পর তাদের সঙ্গে হওয়া অন্যায়-অবিচার থেকে মুক্তি মিলবে না। তালাক চাইলে আদালতের পক্ষ থেকে তাদের বলে দেওয়া হবে—স্বামীর সঙ্গে থাকো, নয়তো কারাভোগ করো। 

আফগানিস্তানের উত্তর বালখ প্রদেশে বেনাফাশা নামে এক ১৬ বছরের কিশোরী মুখ ফুটে চেয়েছিল তার অধিকার। প্রতিনিয়ত সমাজ, রাষ্ট্র আর পরিবারের সঙ্গে লড়াই করে বেঁচে থাকা সেই কিশোরী স্বামীর সঙ্গে লড়াই করে সংসার করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল। চেয়েছিল অপমানজনক বৈবাহিক সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে যেতে। বেনাফাশার বোন কুদিসা অনলাইনভিত্তিক গণমাধ্যম ‘রুখশানা মিডিয়া’কে জানিয়েছেন, বেনাফাশা স্বামীর প্রতি খারাপ ব্যবহার ও মাদক সেবনের অভিযোগ এনে আনুষ্ঠানিকভাবে আলাদা হতে চেয়েছিল। কিন্তু তার ২৮ বছর বয়সী স্বামী আলাদা হতে অস্বীকৃতি জানালে বেনাফাশা তালেবান আদালতে বিচার চায়। বিচারক তাকে দুটি উপায় বলে দেন—জেলে যাও অথবা স্বামীর সঙ্গে থাকো। 

বেনাফাশা বেছে নেয় কারাগার। শুধু কুদিসা নন, বালখের একটি সূত্রও রুখশানা মিডিয়াকে নিশ্চিত করেছে, বেনাফাশা স্বামীর সঙ্গে থাকতে অস্বীকৃতি জানানোয় কারারুদ্ধ হয়েছে। এই কিশোরীকে বিয়ে দেওয়া হয়েছিল এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে। কিন্তু বিয়ের আগে কেউ জানত না তার স্বামী মাদকাসক্ত।

কুদিসা জানান, বদমেজাজি স্বামীর অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে একদিন তার বোন বাপের বাড়ি চলে আসে। সেদিন রাতে সে তার মা ও খালাকে সব কথা খোলাখুলি জানিয়ে দেয়। পরদিন সকালে যখন বাড়ির পুরুষেরা কাজে চলে যান, তখন বেনাফাশার স্বামী তাদের বাড়িতে এসে তাকে শারীরিকভাবে আঘাত করেন। এতে বেনাফাশার ডান গালে দাগ পড়ে যায়।

বেনাফাশা তার ওপর হওয়া অত্যাচারের প্রমাণসহ আদালতে তালাকের আবেদন করে। আদালত তাকে যা বলেছিল, তা আগেই উল্লেখ করা হয়েছে। কুদিসা জানান, আদালত থেকে বলা হয়েছে, অন্য কাউকে পছন্দের কারণে বেনাফাশা এখন তার স্বামীকে পছন্দ করছে না। কুদিসা জানান, বিচারক বেনাফাশার কোনো অভিযোগই আমলে নেননি। উল্টো জানিয়ে দেন, যদি স্বামী তাকে ছাড়তে না চায়, তাহলে বেনাফাশার অধিকার নেই আলাদা থাকার। এমনকি কারাবরণের সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরও আদালত তাকে জানিয়ে দেয়, সে যত দিন স্বামীর সঙ্গে থাকতে রাজি হবে না, তত দিন তাকে কারাগারে থাকতে হবে।

শুধু বেনাফাশা নয়, আফগানিস্তানে এমন আরও ঘটনা আছে। সেই সব ঘটনায় দেখা যায়, বছরের পর বছর নিজের সঙ্গে হওয়া অন্যায় সহ্য করতে না পেরে যখনই নারীরা মামলা করেছেন, তালাক চেয়েছেন, সেই মামলার রায় একই হয়েছে। তাঁদের জেলে পাঠানো হয়েছে অথবা স্বামীর সঙ্গে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

বালখ প্রদেশের ডিফেন্স লইয়াররা জানিয়েছেন, তালেবান বিচারিক প্রতিষ্ঠানগুলো পারিবারিক বিচারে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে পুরুষদের পক্ষে রায় দেয়। বালখের রাজধানী মাজার-ই-শরিফের একজন আইনজীবী নাম প্রকাশ না করার শর্তে রুখশানা মিডিয়াকে জানান, কয়েক সপ্তাহ আগে তালেবান নেতৃত্বের পক্ষ থেকে একটি মৌখিক নির্দেশনা জারি করা হয়েছিল। তাতে পারিবারিক মামলায় নারীদের কাছ থেকে ‘প্রকৃত’ অনুরোধ গ্রহণ না করতে আদালতকে স্পষ্টত নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। ধারণা করা হচ্ছে, নির্দেশটি ইচ্ছাকৃতভাবে মৌখিক আকারে দেওয়া হয়েছিল, যাতে তা আন্তর্জাতিক দৃষ্টি আকর্ষণ করতে না পারে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত