ঝুলন দত্ত, কাপ্তাই (রাঙামাটি)
রাঙামাটির কাপ্তাইয়ের সফল জননী হিসেবে জয়িতা নারীর সম্মাননা পেয়েছেন কাপ্তাই উপজেলার ১ নম্বর চন্দ্রঘোনা ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের মিশন এলাকার বাসিন্দা মাসাংফ্রু খিয়াং।
আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ এবং বেগম রোকেয়া দিবস উপলক্ষে কাপ্তাই উপজেলা প্রশাসন ও উপজেলা মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরের উদ্যোগে তাঁর হাতে এ সম্মাননা তুলে দেন কাপ্তাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জিসান বিন মাজেদ।
১৯৫৭ সালের ১১ সেপ্টেম্বর রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলার রাইখালী ইউনিয়নের বড়খোলা পাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন মাসাংফ্রু খিয়াং। জন্মের কয়েক বছরের মধ্যে তাঁর বাবা-মায়ের বিচ্ছেদ ঘটে। এরপর ছোট্ট মাসাংফ্রুর আশ্রয় হয় দাদির বাড়িতে। সেখানেই বেড়ে ওঠেন তিনি। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তাঁর দাদি তাঁকে নিয়ে গভীর উদ্বেগের মধ্যে পড়েন। এ সময় পরিবার ও প্রতিবেশীদের পরামর্শ ছিল—নাতনিকে হয় দূরে কোথাও পাঠিয়ে দাও, না হয় বিয়ে দিয়ে দাও।
এই সময় মাত্র ১৪ বছর বয়সে ২২ বছরের যুবক বাদল খিয়াংয়ের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। বাদল তখন রাঙ্গুনিয়া উপজেলার কোদালা চা-বাগানে চা-শ্রমিকদের হিসাব সহকারী হিসেবে স্বল্প বেতনে চাকরি করতেন। আর তাঁর মা চা-বাগানে ধাত্রী হিসেবে কাজ করতেন। অভাবের সংসারে তিনি এই বিয়ে সহজভাবে মেনে নিতে পারেননি। এই অবস্থায় সংসার চালানোর দায়িত্ব পড়ে মাসাংফ্রুর কাঁধে। পরে বাদল খিয়াং কাপ্তাই উপজেলার চন্দ্রঘোনা খ্রীস্টিয়ান হাসপাতালে হিসাবরক্ষক হিসেবে চাকরি নেন মাত্র ৩৫৬ টাকা বেতনে। এই নতুন চ্যালেঞ্জ শক্ত হাতে সামলাতে শুরু করেন মাসাং। শুরু করেন গরু, ছাগল, হাঁস-মুরগি পালন। গরুর দুধ ও হাঁস-মুরগির ডিম বিক্রি করে সংসার চালাতে থাকেন তিনি। এই সামান্য আয়ের মাধ্যমেই মাসাং চন্দ্রঘোনা মিশন এলাকায় জমি কেনেন। দুই ছেলের মেডিকেলে পড়াশোনার খরচ এবং মেয়ের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার ব্যয় নির্বাহ করেন। পরে তাঁর ছোট ছেলে ডা. প্রবীর খিয়াং চন্দ্রঘোনা খ্রীস্টিয়ান হাসপাতালের পরিচালক পদে নিযুক্ত হন।
মাসাংফ্রুর বড় ছেলে সুবীর খিয়াং চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন ১৯৯২ সালে। পাস করার পর প্রথমে তিনি উন্নয়নকর্মী হিসেবে বিভিন্ন দেশি-বিদেশি সংস্থায় কর্মরত ছিলেন। সর্বশেষ তিনি হিড বাংলাদেশ নামের একটি প্রতিষ্ঠানে অপারেশন ডিরেক্টর হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তারপর চাকরি ছেড়ে দিয়ে হেলদি লাইফ ইন্টারন্যাশনাল নামের একটি প্রতিষ্ঠানে অ্যাডভাইজর হিসেবে যোগদান করেন। তাঁর আরেক ছেলে প্রবীর খিয়াং ১৯৯৩ সালে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন। এমবিবিএস পাস করার পর তিনি ২০০৭ সালে ডিপ্লোমা ইন কমিউনিটি অপথালমোলজি সিইআইটিসি, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করেন। এরপর তিনি ২০০২ সালে চন্দ্রঘোনা খ্রীস্টিয়ান হাসপাতালে মেডিকেল অফিসার হিসেবে যোগদান করেন, পরে ডেপুটি ডিরেক্টর, ভারপ্রাপ্ত ডিরেক্টর এবং ২০১৯ সাল থেকে একই হাসপাতালের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন।
মাসাংফ্রুর মেয়ে ফ্লোরেন্স তিসা খিয়াং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজিতে অনার্স ও প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স সম্পন্ন করে বর্তমানে স্বামীর সঙ্গে ইংল্যান্ডে বসবাস করছেন।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি মাসাংফ্রুর ছেলে ডা. প্রবীর খিয়াং বলেন, ‘আমার মা পারিপার্শ্বিক কারণে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করলেও তিনি ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার দায়িত্ব নিজের হাতে তুলে নেন। আমার বড় ভাই ডা. সুবীর খিয়াং চট্টগ্রাম মেডিকেলে ভর্তি হলে তিনি তাঁর পাশে ছিলেন। আমি যখন সিলেট মেডিকেলে ভর্তি হই, তখনো মা আমার পাশে ছিলেন। আমার বোন ফ্লোরেন্স তিসা খিয়াংয়ের চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির দায়িত্বও তিনিই পালন করেন। দীর্ঘ সংগ্রামের পর, যখন তিনি নাতি-নাতনিদের সঙ্গে থাকার জন্য চট্টগ্রামে চলে আসেন, সেদিন তাঁর শেষ গরুটি বিক্রি করতে হয়। চোখের জলে তিনি বিদায় দেন সেই গরু, যা আমাদের আর্থিক উপার্জনের শেষ ভরসা ছিল।’
রাঙামাটির কাপ্তাইয়ের সফল জননী হিসেবে জয়িতা নারীর সম্মাননা পেয়েছেন কাপ্তাই উপজেলার ১ নম্বর চন্দ্রঘোনা ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের মিশন এলাকার বাসিন্দা মাসাংফ্রু খিয়াং।
আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ এবং বেগম রোকেয়া দিবস উপলক্ষে কাপ্তাই উপজেলা প্রশাসন ও উপজেলা মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরের উদ্যোগে তাঁর হাতে এ সম্মাননা তুলে দেন কাপ্তাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জিসান বিন মাজেদ।
১৯৫৭ সালের ১১ সেপ্টেম্বর রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলার রাইখালী ইউনিয়নের বড়খোলা পাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন মাসাংফ্রু খিয়াং। জন্মের কয়েক বছরের মধ্যে তাঁর বাবা-মায়ের বিচ্ছেদ ঘটে। এরপর ছোট্ট মাসাংফ্রুর আশ্রয় হয় দাদির বাড়িতে। সেখানেই বেড়ে ওঠেন তিনি। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তাঁর দাদি তাঁকে নিয়ে গভীর উদ্বেগের মধ্যে পড়েন। এ সময় পরিবার ও প্রতিবেশীদের পরামর্শ ছিল—নাতনিকে হয় দূরে কোথাও পাঠিয়ে দাও, না হয় বিয়ে দিয়ে দাও।
এই সময় মাত্র ১৪ বছর বয়সে ২২ বছরের যুবক বাদল খিয়াংয়ের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। বাদল তখন রাঙ্গুনিয়া উপজেলার কোদালা চা-বাগানে চা-শ্রমিকদের হিসাব সহকারী হিসেবে স্বল্প বেতনে চাকরি করতেন। আর তাঁর মা চা-বাগানে ধাত্রী হিসেবে কাজ করতেন। অভাবের সংসারে তিনি এই বিয়ে সহজভাবে মেনে নিতে পারেননি। এই অবস্থায় সংসার চালানোর দায়িত্ব পড়ে মাসাংফ্রুর কাঁধে। পরে বাদল খিয়াং কাপ্তাই উপজেলার চন্দ্রঘোনা খ্রীস্টিয়ান হাসপাতালে হিসাবরক্ষক হিসেবে চাকরি নেন মাত্র ৩৫৬ টাকা বেতনে। এই নতুন চ্যালেঞ্জ শক্ত হাতে সামলাতে শুরু করেন মাসাং। শুরু করেন গরু, ছাগল, হাঁস-মুরগি পালন। গরুর দুধ ও হাঁস-মুরগির ডিম বিক্রি করে সংসার চালাতে থাকেন তিনি। এই সামান্য আয়ের মাধ্যমেই মাসাং চন্দ্রঘোনা মিশন এলাকায় জমি কেনেন। দুই ছেলের মেডিকেলে পড়াশোনার খরচ এবং মেয়ের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার ব্যয় নির্বাহ করেন। পরে তাঁর ছোট ছেলে ডা. প্রবীর খিয়াং চন্দ্রঘোনা খ্রীস্টিয়ান হাসপাতালের পরিচালক পদে নিযুক্ত হন।
মাসাংফ্রুর বড় ছেলে সুবীর খিয়াং চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন ১৯৯২ সালে। পাস করার পর প্রথমে তিনি উন্নয়নকর্মী হিসেবে বিভিন্ন দেশি-বিদেশি সংস্থায় কর্মরত ছিলেন। সর্বশেষ তিনি হিড বাংলাদেশ নামের একটি প্রতিষ্ঠানে অপারেশন ডিরেক্টর হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তারপর চাকরি ছেড়ে দিয়ে হেলদি লাইফ ইন্টারন্যাশনাল নামের একটি প্রতিষ্ঠানে অ্যাডভাইজর হিসেবে যোগদান করেন। তাঁর আরেক ছেলে প্রবীর খিয়াং ১৯৯৩ সালে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন। এমবিবিএস পাস করার পর তিনি ২০০৭ সালে ডিপ্লোমা ইন কমিউনিটি অপথালমোলজি সিইআইটিসি, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করেন। এরপর তিনি ২০০২ সালে চন্দ্রঘোনা খ্রীস্টিয়ান হাসপাতালে মেডিকেল অফিসার হিসেবে যোগদান করেন, পরে ডেপুটি ডিরেক্টর, ভারপ্রাপ্ত ডিরেক্টর এবং ২০১৯ সাল থেকে একই হাসপাতালের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন।
মাসাংফ্রুর মেয়ে ফ্লোরেন্স তিসা খিয়াং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজিতে অনার্স ও প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স সম্পন্ন করে বর্তমানে স্বামীর সঙ্গে ইংল্যান্ডে বসবাস করছেন।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি মাসাংফ্রুর ছেলে ডা. প্রবীর খিয়াং বলেন, ‘আমার মা পারিপার্শ্বিক কারণে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করলেও তিনি ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার দায়িত্ব নিজের হাতে তুলে নেন। আমার বড় ভাই ডা. সুবীর খিয়াং চট্টগ্রাম মেডিকেলে ভর্তি হলে তিনি তাঁর পাশে ছিলেন। আমি যখন সিলেট মেডিকেলে ভর্তি হই, তখনো মা আমার পাশে ছিলেন। আমার বোন ফ্লোরেন্স তিসা খিয়াংয়ের চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির দায়িত্বও তিনিই পালন করেন। দীর্ঘ সংগ্রামের পর, যখন তিনি নাতি-নাতনিদের সঙ্গে থাকার জন্য চট্টগ্রামে চলে আসেন, সেদিন তাঁর শেষ গরুটি বিক্রি করতে হয়। চোখের জলে তিনি বিদায় দেন সেই গরু, যা আমাদের আর্থিক উপার্জনের শেষ ভরসা ছিল।’
গণ-অভ্যুত্থানের কাছে কোনো না কোনো দিন স্বৈরশাসককে মাথা নোয়াতে হয়। ৮ ডিসেম্বর পৃথিবীর ইতিহাসে আরও এক স্বৈরশাসক পরাজিত হয় জনতার কাছে। এ জন্য প্রাণ দিতে হয়েছে নাম না জানা হাজারো মানুষকে। আর নিখোঁজ মানুষেরা বেঁচে আছে, নাকি মারা গেছে, সে খবর জানে না কেউ। বাশার আল-আসাদের...
১৭ ঘণ্টা আগেসাভারের গণবিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি ও প্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী সাবিনা খাতুন। পড়াশোনার পাশাপাশি পেশাদার ফুটবলার হয়েও নিজের দক্ষতার গুণে বিশ্ববিদ্যালয়ের হয়ে বিজয়ী হয়েছেন ক্রিকেটসহ অন্যান্য খেলায়।
১৭ ঘণ্টা আগেদেশের নারীদের এগিয়ে নিতে বেশ কিছু আইন হয়েছে আমাদের। তবে কিছু গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে নারীর অধিকার ও সুরক্ষার জন্য এখনো নির্দিষ্ট আইন অনুপস্থিত। এই ফাঁকগুলো নারীর জীবনমান উন্নয়ন ও সমানাধিকারের পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। নারীর সুরক্ষা ও মর্যাদা নিশ্চিত করতে এই ফাঁকগুলো পূরণ করা অত্যন্ত জরুরি।
১৭ ঘণ্টা আগেআদিবাসী ঐতিহ্য এবং সামাজিক ন্যায়বিচার ঘিরে কাজ করতেন মার্শা অ্যান গোমেজ। তিনি অনেক সংস্কৃতির আদিবাসী নারীদের শিক্ষা দিতে এবং অধিকার আদায়ের জন্য তাঁর চোক্টো বংশের মৃৎশিল্প এবং ভাস্কর্য ব্যবহার করতেন। তিনি ১৯৮৩ সালে আদিবাসী নারীদের নেটওয়ার্কের সহপ্রতিষ্ঠা হন।
১৭ ঘণ্টা আগে