হাবিবা সারাবি ছিলেন আফগানিস্তানের ইতিহাসে প্রথম নারী গভর্নর। দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাই প্রশাসনে মহিলাবিষয়ক মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। হাবিবা সে সময় আফগান সরকারে তালেবানদের সঙ্গে শান্তি আলোচনার জন্য আলোচনাকারী দলের সদস্য ছিলেন। আফগানিস্তানে নারীদের নিয়ে কাজ করা যুক্তরাজ্যভিত্তিক অনলাইন সংবাদ সংস্থা রুখশানা মিডিয়া সম্প্রতি বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেছিল হাবিবার সঙ্গে। ১৮ মে প্রকাশিত হয়েছিল সাক্ষাৎকারটি। অনুবাদ করেছেন কাশফিয়া আলম ঝিলিক।
প্রশ্ন: তালেবান কেন নারীর অধিকারকে সম্মান করার অঙ্গীকার বজায় রাখতে ব্যর্থ হয়েছে?
উত্তর: তালেবানের কখনোই আফগানিস্তানের নারী, জনগণ, গণতন্ত্র, মানবাধিকার এবং এ বিষয়গুলোর প্রতি কোনো অঙ্গীকার ছিল না, এখনো নেই। শান্তি আলোচনাকে দুই ভাগে ভাগ করা যাক। আমেরিকানদের সঙ্গে তালেবানের যে আলোচনা হয়েছিল, তাতে তাদের মাত্র চারটি প্রতিশ্রুতি ছিল। প্রতিশ্রুতিগুলো হলো—বিদেশি বাহিনী প্রত্যাহার, আন্তআফগান সংলাপ শুরু করা এবং আফগানিস্তান যাতে আবার সন্ত্রাসবাদের জায়গা না হয়ে যায়, তা নিশ্চিত করার বিষয়গুলো। এর বাইরেও যদি কিছু থেকে থাকে, তাহলে তা আফগান জনগণের কথা বিবেচনায় রেখে গোপন রাখা হয়েছে। তারা এ বিষয়ে একটি চুক্তিতে পৌঁছেছে এবং মার্কিন দূত মি খলিলজাদ ও তালেবানের মোল্লা বারাদারের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। এরপর চুক্তির বিষয়ে আলোচনা শুরু করার চেষ্টা করা হয়েছিল। আলোচনা শুরুও হয়েছিল। তারপর এক বছর চলে গেল, কিন্তু আমরা কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাইনি। পদ্ধতিগত বিষয়ে অনেক সময় ব্যয় করেছি। আমরা যখন শুরু করেছি, তখন নারীর অধিকার ছিল অ্যাজেন্ডার একটি অংশ। যা-ই হোক, আমরা এটি নিয়ে আলোচনা শুরু করিনি।
প্রশ্ন: এসব বিষয়ে আলোচনা হয়নি কেন? কারণটা কি সময়ের অভাব নাকি আগ্রহের কমতি?
উত্তর: যেকোনো আলোচনায় অনেক সময় লাগে। আমরা এজেন্ডায় বিভিন্ন বিষয় তৈরি করেছি। উভয় পক্ষের অনেক এজেন্ডা ছিল। অন্যান্য আলোচনার মধ্যে এ বিষয়ক এজেন্ডা নিয়ে কথা হয়নি। অন্যদিকে, তালেবানরা আলোচনায় আগ্রহী ছিল না। তারা বেশির ভাগই কৌশলগত আলোচনা নিয়ে ব্যস্ত ছিল। রিপাবলিক দলের জন্য আলোচনাটি ছিল দায়িত্বের অংশ ও একটি মিশন। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত, তালেবানদের জন্য আলোচনাটি মিশন বা দায়িত্ব কোনোটিই ছিল না। তাদের পরিবার দোহায় ছিল, সেখানে তাদের চাকরি ও ব্যবসা ছিল। কোনো কাজ না থাকলে তারা আলোচনার জন্য আসত এবং বিভিন্ন অজুহাত ও কৌশল অবলম্বন করত। তারপর আফগানিস্তানে ঘটতে থাকা ঘটনাগুলোর সঙ্গে এজেন্ডা আইটেমগুলোতে আলোচনার কোনো সুযোগ ছিল না।
প্রশ্ন: আপনি আফগানিস্তানের ইতিহাসে প্রথম নারী গভর্নর ছিলেন। কিছুদিনের জন্য মহিলা বিষয়ক মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তালেবানের সঙ্গে ইসলামিক রিপাবলিক অব আফগানিস্তানের আলোচনাকারী দলের সদস্য ছিলেন। আপনি নারী অধিকার রক্ষা করতে গিয়েছিলেন, কিন্তু তা হয়নি। কেন তালেবানদের কাছ থেকে নারী অধিকারের বিষয়গুলো নিশ্চিত করা হয়নি?
উত্তর: এটি এমন একটি বিষয়, যা আমি মনে করি, শুধু আমার জন্যই নয়। আফগানিস্তানের জনগণের জন্যও বেদনাদায়ক। নিশ্চয়তা পাওয়া যায়নি। কারণ, কখনোই আলোচনা হয়নি। আমি বলতে চাইছি, যে প্রক্রিয়াটি শুরু হয়েছিল, তা ফলপ্রসূ হয়নি। কোনো নিশ্চয়তা ছিল না। তবে তালেবানের সঙ্গে আমেরিকার যে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে, সেখানে কিছু থাকতে পারে।
প্রশ্ন: আফগানিস্তান প্রজাতন্ত্রের পতনের পর দুই বছরেরও বেশি সময় পার হয়েছে। তালেবানরা জনসাধারণের সব জায়গা থেকে সম্পূর্ণভাবে নারীদের সরিয়ে দিয়েছে। এখন, নারীর দৃষ্টিকোণ থেকে, আলোচনার সময় নারীর অধিকার রক্ষার জন্য সঠিক কৌশল কী হতে পারে বলে আপনি মনে করেন?
উত্তর: আফগান সংবিধান বিবেচনা করা উচিত। বিশেষ করে সংবিধানের দ্বিতীয় অংশ যেখানে নাগরিকত্বের অধিকার নির্ধারণ করা হয়েছে। নাগরিক অধিকার একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। নারীসহ আফগানিস্তানের সব জাতিগোষ্ঠীকে আফগানিস্তানের নাগরিক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এটি অত্যন্ত গুরুতর বিষয় কিন্তু স্বাক্ষরিত হয়নি। এটি চুক্তিতে অন্তর্ভুক্ত করা উচিত ছিল। দুর্ভাগ্যবশত, না চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে আর না এই বিষয়ে কোনো আশ্বাস পাওয়া গেছে।
প্রশ্ন: নারী অধিকার কর্মী, মানবাধিকার কর্মী এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কেন তালেবানের অধীনে থাকা নারীদের দুর্দশার অচলাবস্থা ভাঙতে পারছে না?
উত্তর: বিশেষ করে আফগানিস্তানের ভেতরে যে নারীরা থাকে তারা তাদের সাহস দেখিয়েছে এবং নিজেদের মর্যাদা রক্ষা করেছে। তাদের পক্ষ থেকে তারা নিজেদের সংগ্রাম অব্যাহত রেখেছে। সিদ্ধান্ত গ্রহণকারীদের মধ্যে হোক বা জাতিসংঘ এবং নিরাপত্তা পরিষদের মধ্যে হোক, আফগানিস্তানের বাইরের লোকেরাও তাদের প্রচেষ্টা চালিয়েছে এবং এখনো বিভিন্ন স্তরে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। পাঁচ সদস্যের একটি দল আমরা সব সময় নিরাপত্তা পরিষদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি এবং গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করছি। তবে আফগান নারীদের এমন অচলাবস্থার কারণ হলো, তালেবানদের অনমনীয় মানসিকতা। এই মানসিকতা নিয়ে তারা কোনোভাবেই অন্যদের সঙ্গে আলোচনায় জড়াতে ইচ্ছুক নয়, তা সে আফগান নারী হোক, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় হোক বা তালেবান চক্রের বাইরের কেউ হোক। আরেকটি বড় সমস্যা হলো, অন্যান্য অনেক ইস্যুর কারণে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মনোযোগ আফগানিস্তান থেকে সরে গেছে। যেমন, ইউক্রেন যুদ্ধ। পাশাপাশি আমরা গাজার ইস্যুও দেখছি। তাই আফগানিস্তান এখন আর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে সেই অগ্রাধিকার পাচ্ছে না। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকার, নিরাপত্তা পরিষদ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের সিদ্ধান্ত গ্রহণকারীদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে আমরা বুঝতে পেরেছি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আর আফগানিস্তানে সামরিক পদক্ষেপ নিতে চায় না। অন্যদিকে, তালেবানও সংলাপ ও আলোচনায় আগ্রহী নয়। বিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগ না রেখে তারা মধ্যযুগীয় চিন্তাভাবনা ও মানসিকতা নিয়ে এগিয়ে যেতে চায়।
প্রশ্ন: আফগানিস্তানে নারীদের অবস্থাকে আপনি কীভাবে বর্ণনা করবেন?
উত্তর: আফগানিস্তানে নারীরা বর্তমানে স্পষ্টতই লৈঙ্গিক ও বর্ণবৈষম্যের শিকার। শহুরে ও গ্রামীণ অর্থনৈতিক, সামাজিক কিংবা সাংস্কৃতিক জীবনের সব ক্ষেত্রে নারীদের বাদ দেওয়া হয়েছে। নারীদের সমাজ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে এবং নিয়মতান্ত্রিক বৈষম্য প্রবল। এটা তালেবানদের মানসিকতার ফল।
প্রশ্ন: একজন নারী হিসেবে আপনি অনেক আলোচনায় তালেবান নেতাদের মুখোমুখি হয়েছেন। সে সময় আপনার প্রতি তাদের আচরণ বিবেচনা করে, আপনি কি কখনো ভেবেছিলেন যে তারা এমন মিসজিনিস্ট রাজনৈতিক অবস্থান গ্রহণ করবে? অথবা আপনি কি ভেবেছেন যে সম্ভবত তালেবান কিছুটা পরিবর্তন হয়েছে?
উত্তর: ’৯০ এর দশকে তালেবানেরা দেখিয়েছিল যে তারা মিসজিনিস্টিক মতাদর্শ মেনে চলে। ২০১৯ সালে আন্তঃআফগান সংলাপে অংশ নিয়েছিলাম আমিসহ কিছু নারী। সেটা প্রথমবারের মতো কাতারের দোহায় মি. খলিলজাদ এবং অন্যান্য দেশের কিছু রাজনীতিবিদদের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। তাদের পরিকল্পনা ছিল, জনগণকে দেখানো যে তালেবানেরা বদলে গেছে। যখন আমি তালেবানদের দেখেছি এবং তাদের সম্পর্ক, মানসিকতা ও কর্মকাণ্ড পর্যবেক্ষণ করেছি, আমি বুঝতে পেরেছিলাম তালেবানেরা বদলায়নি। আলোচনার সময় তাদের আচরণে আমি এর প্রমাণও পেয়েছি। তাদের মতাদর্শ, দৃষ্টিভঙ্গি এবং মানসিকতা প্রমাণ করে তারা কতটা মিসজিনিস্টিক। তারা দেখানোর চেষ্টা করছিল যে তাদের মানসিকতা পরিবর্তিত হয়েছে। বোঝাতে চেয়েছিল যে তারা স্পষ্টতই নারী শিক্ষায় বিশ্বাস করে। কিন্তু শেষমেশ আমি প্রমাণ পেয়েছি তালেবানেরা বদলায়নি।
প্রশ্ন: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় দাবি করে যে, তালেবানের সঙ্গে আলোচনার অন্যতম প্রধান বিষয় নারীর অধিকার। এই কথার কোনো বাস্তবায়ন দেখছেন?
উত্তর: সরকারের অন্তর্ভুক্তি সংক্রান্ত কূটনৈতিক বৈঠকে আলোচনায় আমরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সামনে নারীর অধিকার ও মানবাধিকারের বিষয়গুলো তুলে ধরি। তারা বলে, আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তবে তারা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ কি না সেটা সময়ই বলে দেবে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নিজস্ব এজেন্ডা আছে। তারা সে অনুযায়ী কাজ করার চেষ্টা করে। তারা যে তালেবানকে এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেয়নি এটা একটা ইতিবাচক লক্ষণ। কিছু দেশ দূতাবাস, কনস্যুলেট বা বাণিজ্য সম্পর্কের নামে এক ধরনের কূটনৈতিক সম্পর্কের সূচনা করেছে। এটি ইঙ্গিত দেয় যে তাদের নারী অধিকারের প্রতি কোনো অঙ্গীকার নেই। তাদের ক্ষেত্রে শুধু নিজেদের এজেন্ডা প্রতিষ্ঠা করাই মুখ্য।
প্রশ্ন: তালেবান শাসন শুরুর পর থেকে দেশের ভেতরে অনেক নারী এই গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু তাদের কঠোরভাবে দমন করা হয়েছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, শান্তিপূর্ণভাবে তাদের অধিকার হরণের প্রতিবাদ করার জন্য নারীরা তালেবান কারাগারে রয়েছে। আফগানিস্তানের বাইরে, নারী অধিকার কর্মীদের কাছ থেকে তেমন প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা যায়নি। এর কারণ কী হতে পারে বলে আপনি মনে করেন?
উত্তর: আফগানিস্তানের ভেতরে যুদ্ধরত সব নারীরা সত্যিই কঠিন পরিস্থিতিতে বসবাস করছে এবং তাদের সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে। যেসব নারী আফগানিস্তানের বাইরে রয়েছে এবং বিশ্বের কাছে নারীদের কণ্ঠস্বর পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করছে, আমি তাদের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাই। কারণ এটা সহজ কাজ নয়। যারা দেশ ছেড়েছে তারাও পশ্চিমে কোনোভাবেই সুখী নয়। আমাদের জন্য পশ্চিমে বাস করা জাহান্নামের মতো। অভিবাসীরা অস্থিতিস্থাপক জীবন যাপন করে। জাতিসংঘ এখনো তালেবানকে বৈধতা দেয়নি এবং তালেবান এখনো সরকারিভাবে স্বীকৃত নয়। একে আমরা নারীদের আন্দোলনের ফলাফল বলতে পারি। তবে এখনো পরিপূর্ণভাবে আমরা সফল হতে পারিনি। কারণ আফগানিস্তানের ভেতরের ও বাইরের লোকদের মধ্যে এখনো অবিশ্বাস রয়েছে। এটি স্বাভাবিক। কারণ দেশের ভেতরে নারীরা যে পরিস্থিতির সম্মুখীন হচ্ছে তা আফগানিস্তানের বাইরের নারীদের অবস্থার থেকে একেবারেই আলাদা। অভ্যন্তরীণ নারীরা মনে করে, আমরা যারা দেশের বাইরে আছি তারা তাদের পরিত্যাগ করেছি। তাদের সত্যিকার অর্থে সেরকম ভাবার অধিকার আছে। অন্যদিকে, প্রত্যেকেরই ব্যক্তিগত জীবন আছে। প্রত্যেকেই একটি কারণে আফগানিস্তান ছেড়েছে। এটা আফগানিস্তানের ভেতরে থাকা নারীদের কাছে গ্রহণযোগ্য নাও হতে পারে। কিন্তু আস্থা থাকলে ভালো হয়। কারণ দেশের নারীদের কণ্ঠস্বর রুদ্ধ হলে অভিবাসী নারীরা তাদের কণ্ঠস্বর প্রসারিত করবে, যতক্ষণ না তাদের দাবি রাজনীতিবিদ, নিরাপত্তা পরিষদ এবং জাতিসংঘের কানে পৌঁছায়। আমরা সম্পূর্ণ সাফল্য অর্জন করতে পারিনি, এটি এই অবিশ্বাসের একটি কারণ হতে পারে। কিন্তু এই পরিস্থিতির পরিবর্তন হচ্ছে। যত বেশি সংলাপ হবে, আফগানিস্তানের অভ্যন্তরে থাকা লোকদের সঙ্গে আমাদের তত বেশি যোগাযোগ হবে এবং বৃহত্তর আস্থার পরিবেশ তৈরি হবে।
প্রশ্ন: আপনি কি মনে করেন, আফগান নারীদের জন্য উল্লেখযোগ্য কোনো প্রচেষ্টা নেওয়া হয়নি? তালেবান নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে আফগানিস্তানের বাইরে কী করা যেতে পারে?
উত্তর: ধারাবাহিকভাবে বারবার চেষ্টা করা হয়েছে। এমন কিছু প্রতিষ্ঠান আছে যারা আফগান নারীদের একত্রিত করার চেষ্টা করেছে। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, আফগানিস্তানের বাইরে যারা আছেন তাঁদের একে অপরের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করা। আসুন, আমরা নারীদের ইস্যুকে প্রতিযোগিতায় পরিণত না করি। আসুন, আমরা প্রত্যেকে একটি ব্যানার ধরি যা আফগান নারীদের প্রতিনিধিত্ব করে। আসুন, আমরা প্রত্যেকে নিজ নিজ জায়গায় আমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী লড়াই করি। প্রতিটি ব্যক্তির ক্ষমতার প্রশংসা করা উচিত। আসুন একে অপরকে সমর্থন করি। এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যে, এক গোষ্ঠীর মধ্যে যে শূন্যতা রয়েছে তা অন্যদের পূরণ করা উচিত। যাতে আমরা এক শক্তি হয়ে তালেবানের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে পারি।
প্রশ্ন: আপনি যখন নারীদের ওপর তালেবানের নতুন বিধিনিষেধ সম্পর্কে খবরের আপডেট শুনতে পান, রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ বাদে ব্যক্তিগতভাবে তখন আপনার অনুভূতি কেমন হয়?
উত্তর: নারী সমস্যা রাজনীতি থেকে দূরে নয়। দুর্ভাগ্যক্রমে, এটি একটি রাজনৈতিক বিষয় যাকে তালেবানরা আরও রাজনৈতিক করে তুলেছে। তালেবানরা নারী ইস্যু থেকে সবচেয়ে বেশি রাজনৈতিক সুবিধা লাভ করে। আফগানিস্তানের ভেতর থেকে আমরা যে খবর শুনি, তা শুধু নারীদেরই নয়, যুবক, সামরিক কর্মী, সংখ্যালঘু, শিয়া মসজিদে বোমা হামলা, শিক্ষাকেন্দ্র ধ্বংসের খবর আমাদের হৃদয়ে ছুরি মারার মতো। এর বেশি খবর সামনে আসছে না যা খুবই দুঃখজনক।
প্রশ্ন: আপনি কি এখনো আফগানিস্তানের নারীদের সঙ্গে, বিশেষ করে তরুণীদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন? তারা আপনাকে কী বলে?
উত্তর: হ্যাঁ, আমি যোগাযোগ করছি। মাঝে মাঝে আমাদের কথা হয়। তারা কী বলে, তা বলা কঠিন। তারা সব সময় কষ্ট, বঞ্চনা, বৈষম্য নিয়ে কথা বলে। সমাজ থেকে বহিষ্কৃত হওয়ার কথা, সেই কষ্টের কথা তারা উল্লেখ করে। কারাগারে যারা ছিল, তারা কী সহ্য করেছিল, সে কথাও হয়। এটা খুব দুঃখজনক। কিন্তু আমাদের এটা সহ্য করতে হচ্ছে।
প্রশ্ন: আপনি বামিয়ানকে কতটা মিস করেন? তাদের সঙ্গে কথা বলে আপনি কি বুঝতে পারছেন যে তারা আরও বঞ্চনা ও দারিদ্র্যের শিকার?
উত্তর: আজকাল আমি বামিয়ান সম্পর্কে রিচার্ড হাল নামে এক মার্কিন সেনা কর্মকর্তার লেখা একটি বই পড়ছি। তিনি সেখানে কাটানো ছয় মাসের প্রায় প্রতিটি ঘটনা তাঁর বইয়ে উল্লেখ রয়েছে। যখন আমি এই বইটি পড়ি, এটি আমাকে বামিয়ানে নিয়ে যায়। বইটির এক অংশে বর্ণনায় বামিয়ানের একটি প্রত্যন্ত অঞ্চলে একটি অনুষ্ঠান সম্পর্কে বলা হয়েছে। যেখানে একজন নারী এগিয়ে এসে তাঁকে ইংরেজিতে স্বাগত জানিয়ে নিজের পরিচয় দেন। যখন আমার পরিবার বামিয়ানে ছিল না, আমার ছুটির দিনগুলিতে আমি বামিয়ানের বিভিন্ন এলাকায় ভ্রমণ করে সেখানকার মানুষদের সম্পর্কে জানার চেষ্টা করেছি। বিভিন্ন গ্রাম ঘুরেছি। একবার আমি ব্যান্ড-ই আমিরের কাছে গিয়েছিলাম।সেখানে একদল যুবতী আমার চারপাশে জড়ো হয়েছিল। তারা বেশ উচ্ছল ছিল। আমি লক্ষ্য করেছি, তাঁদের এই দৃশ্যটি দূর থেকে কিছু দাড়ি ওয়ালা পুরুষ পর্যবেক্ষণ করেছিল। নারীরা বলেছিলেন, ‘আমাদের গভর্নরের সঙ্গে দাঁড়ানোর এবং ছবি তোলার অধিকার আছে, যা আগে ছিল না।’ বামিয়ানের ওয়ারাস জেলায় ভ্রমণকালে একজন নারী আমাদের স্বাগত জানাতে এসেছিলেন। খুশিতে কেঁদে ফেলে তিনি বলেছিলেন, ‘আপনি আমাদের জীবন দিয়েছেন।’ একজন নারীকে নেতৃত্ব দিতে দেখে তিনি খুশি হন। তখন তাঁরা মনে করতেন, নারীরাও নেতৃত্ব দিতে পারে।
হাবিবা সারাবি ছিলেন আফগানিস্তানের ইতিহাসে প্রথম নারী গভর্নর। দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাই প্রশাসনে মহিলাবিষয়ক মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। হাবিবা সে সময় আফগান সরকারে তালেবানদের সঙ্গে শান্তি আলোচনার জন্য আলোচনাকারী দলের সদস্য ছিলেন। আফগানিস্তানে নারীদের নিয়ে কাজ করা যুক্তরাজ্যভিত্তিক অনলাইন সংবাদ সংস্থা রুখশানা মিডিয়া সম্প্রতি বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেছিল হাবিবার সঙ্গে। ১৮ মে প্রকাশিত হয়েছিল সাক্ষাৎকারটি। অনুবাদ করেছেন কাশফিয়া আলম ঝিলিক।
প্রশ্ন: তালেবান কেন নারীর অধিকারকে সম্মান করার অঙ্গীকার বজায় রাখতে ব্যর্থ হয়েছে?
উত্তর: তালেবানের কখনোই আফগানিস্তানের নারী, জনগণ, গণতন্ত্র, মানবাধিকার এবং এ বিষয়গুলোর প্রতি কোনো অঙ্গীকার ছিল না, এখনো নেই। শান্তি আলোচনাকে দুই ভাগে ভাগ করা যাক। আমেরিকানদের সঙ্গে তালেবানের যে আলোচনা হয়েছিল, তাতে তাদের মাত্র চারটি প্রতিশ্রুতি ছিল। প্রতিশ্রুতিগুলো হলো—বিদেশি বাহিনী প্রত্যাহার, আন্তআফগান সংলাপ শুরু করা এবং আফগানিস্তান যাতে আবার সন্ত্রাসবাদের জায়গা না হয়ে যায়, তা নিশ্চিত করার বিষয়গুলো। এর বাইরেও যদি কিছু থেকে থাকে, তাহলে তা আফগান জনগণের কথা বিবেচনায় রেখে গোপন রাখা হয়েছে। তারা এ বিষয়ে একটি চুক্তিতে পৌঁছেছে এবং মার্কিন দূত মি খলিলজাদ ও তালেবানের মোল্লা বারাদারের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। এরপর চুক্তির বিষয়ে আলোচনা শুরু করার চেষ্টা করা হয়েছিল। আলোচনা শুরুও হয়েছিল। তারপর এক বছর চলে গেল, কিন্তু আমরা কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাইনি। পদ্ধতিগত বিষয়ে অনেক সময় ব্যয় করেছি। আমরা যখন শুরু করেছি, তখন নারীর অধিকার ছিল অ্যাজেন্ডার একটি অংশ। যা-ই হোক, আমরা এটি নিয়ে আলোচনা শুরু করিনি।
প্রশ্ন: এসব বিষয়ে আলোচনা হয়নি কেন? কারণটা কি সময়ের অভাব নাকি আগ্রহের কমতি?
উত্তর: যেকোনো আলোচনায় অনেক সময় লাগে। আমরা এজেন্ডায় বিভিন্ন বিষয় তৈরি করেছি। উভয় পক্ষের অনেক এজেন্ডা ছিল। অন্যান্য আলোচনার মধ্যে এ বিষয়ক এজেন্ডা নিয়ে কথা হয়নি। অন্যদিকে, তালেবানরা আলোচনায় আগ্রহী ছিল না। তারা বেশির ভাগই কৌশলগত আলোচনা নিয়ে ব্যস্ত ছিল। রিপাবলিক দলের জন্য আলোচনাটি ছিল দায়িত্বের অংশ ও একটি মিশন। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত, তালেবানদের জন্য আলোচনাটি মিশন বা দায়িত্ব কোনোটিই ছিল না। তাদের পরিবার দোহায় ছিল, সেখানে তাদের চাকরি ও ব্যবসা ছিল। কোনো কাজ না থাকলে তারা আলোচনার জন্য আসত এবং বিভিন্ন অজুহাত ও কৌশল অবলম্বন করত। তারপর আফগানিস্তানে ঘটতে থাকা ঘটনাগুলোর সঙ্গে এজেন্ডা আইটেমগুলোতে আলোচনার কোনো সুযোগ ছিল না।
প্রশ্ন: আপনি আফগানিস্তানের ইতিহাসে প্রথম নারী গভর্নর ছিলেন। কিছুদিনের জন্য মহিলা বিষয়ক মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তালেবানের সঙ্গে ইসলামিক রিপাবলিক অব আফগানিস্তানের আলোচনাকারী দলের সদস্য ছিলেন। আপনি নারী অধিকার রক্ষা করতে গিয়েছিলেন, কিন্তু তা হয়নি। কেন তালেবানদের কাছ থেকে নারী অধিকারের বিষয়গুলো নিশ্চিত করা হয়নি?
উত্তর: এটি এমন একটি বিষয়, যা আমি মনে করি, শুধু আমার জন্যই নয়। আফগানিস্তানের জনগণের জন্যও বেদনাদায়ক। নিশ্চয়তা পাওয়া যায়নি। কারণ, কখনোই আলোচনা হয়নি। আমি বলতে চাইছি, যে প্রক্রিয়াটি শুরু হয়েছিল, তা ফলপ্রসূ হয়নি। কোনো নিশ্চয়তা ছিল না। তবে তালেবানের সঙ্গে আমেরিকার যে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে, সেখানে কিছু থাকতে পারে।
প্রশ্ন: আফগানিস্তান প্রজাতন্ত্রের পতনের পর দুই বছরেরও বেশি সময় পার হয়েছে। তালেবানরা জনসাধারণের সব জায়গা থেকে সম্পূর্ণভাবে নারীদের সরিয়ে দিয়েছে। এখন, নারীর দৃষ্টিকোণ থেকে, আলোচনার সময় নারীর অধিকার রক্ষার জন্য সঠিক কৌশল কী হতে পারে বলে আপনি মনে করেন?
উত্তর: আফগান সংবিধান বিবেচনা করা উচিত। বিশেষ করে সংবিধানের দ্বিতীয় অংশ যেখানে নাগরিকত্বের অধিকার নির্ধারণ করা হয়েছে। নাগরিক অধিকার একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। নারীসহ আফগানিস্তানের সব জাতিগোষ্ঠীকে আফগানিস্তানের নাগরিক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এটি অত্যন্ত গুরুতর বিষয় কিন্তু স্বাক্ষরিত হয়নি। এটি চুক্তিতে অন্তর্ভুক্ত করা উচিত ছিল। দুর্ভাগ্যবশত, না চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে আর না এই বিষয়ে কোনো আশ্বাস পাওয়া গেছে।
প্রশ্ন: নারী অধিকার কর্মী, মানবাধিকার কর্মী এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কেন তালেবানের অধীনে থাকা নারীদের দুর্দশার অচলাবস্থা ভাঙতে পারছে না?
উত্তর: বিশেষ করে আফগানিস্তানের ভেতরে যে নারীরা থাকে তারা তাদের সাহস দেখিয়েছে এবং নিজেদের মর্যাদা রক্ষা করেছে। তাদের পক্ষ থেকে তারা নিজেদের সংগ্রাম অব্যাহত রেখেছে। সিদ্ধান্ত গ্রহণকারীদের মধ্যে হোক বা জাতিসংঘ এবং নিরাপত্তা পরিষদের মধ্যে হোক, আফগানিস্তানের বাইরের লোকেরাও তাদের প্রচেষ্টা চালিয়েছে এবং এখনো বিভিন্ন স্তরে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। পাঁচ সদস্যের একটি দল আমরা সব সময় নিরাপত্তা পরিষদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি এবং গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করছি। তবে আফগান নারীদের এমন অচলাবস্থার কারণ হলো, তালেবানদের অনমনীয় মানসিকতা। এই মানসিকতা নিয়ে তারা কোনোভাবেই অন্যদের সঙ্গে আলোচনায় জড়াতে ইচ্ছুক নয়, তা সে আফগান নারী হোক, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় হোক বা তালেবান চক্রের বাইরের কেউ হোক। আরেকটি বড় সমস্যা হলো, অন্যান্য অনেক ইস্যুর কারণে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মনোযোগ আফগানিস্তান থেকে সরে গেছে। যেমন, ইউক্রেন যুদ্ধ। পাশাপাশি আমরা গাজার ইস্যুও দেখছি। তাই আফগানিস্তান এখন আর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে সেই অগ্রাধিকার পাচ্ছে না। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকার, নিরাপত্তা পরিষদ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের সিদ্ধান্ত গ্রহণকারীদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে আমরা বুঝতে পেরেছি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আর আফগানিস্তানে সামরিক পদক্ষেপ নিতে চায় না। অন্যদিকে, তালেবানও সংলাপ ও আলোচনায় আগ্রহী নয়। বিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগ না রেখে তারা মধ্যযুগীয় চিন্তাভাবনা ও মানসিকতা নিয়ে এগিয়ে যেতে চায়।
প্রশ্ন: আফগানিস্তানে নারীদের অবস্থাকে আপনি কীভাবে বর্ণনা করবেন?
উত্তর: আফগানিস্তানে নারীরা বর্তমানে স্পষ্টতই লৈঙ্গিক ও বর্ণবৈষম্যের শিকার। শহুরে ও গ্রামীণ অর্থনৈতিক, সামাজিক কিংবা সাংস্কৃতিক জীবনের সব ক্ষেত্রে নারীদের বাদ দেওয়া হয়েছে। নারীদের সমাজ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে এবং নিয়মতান্ত্রিক বৈষম্য প্রবল। এটা তালেবানদের মানসিকতার ফল।
প্রশ্ন: একজন নারী হিসেবে আপনি অনেক আলোচনায় তালেবান নেতাদের মুখোমুখি হয়েছেন। সে সময় আপনার প্রতি তাদের আচরণ বিবেচনা করে, আপনি কি কখনো ভেবেছিলেন যে তারা এমন মিসজিনিস্ট রাজনৈতিক অবস্থান গ্রহণ করবে? অথবা আপনি কি ভেবেছেন যে সম্ভবত তালেবান কিছুটা পরিবর্তন হয়েছে?
উত্তর: ’৯০ এর দশকে তালেবানেরা দেখিয়েছিল যে তারা মিসজিনিস্টিক মতাদর্শ মেনে চলে। ২০১৯ সালে আন্তঃআফগান সংলাপে অংশ নিয়েছিলাম আমিসহ কিছু নারী। সেটা প্রথমবারের মতো কাতারের দোহায় মি. খলিলজাদ এবং অন্যান্য দেশের কিছু রাজনীতিবিদদের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। তাদের পরিকল্পনা ছিল, জনগণকে দেখানো যে তালেবানেরা বদলে গেছে। যখন আমি তালেবানদের দেখেছি এবং তাদের সম্পর্ক, মানসিকতা ও কর্মকাণ্ড পর্যবেক্ষণ করেছি, আমি বুঝতে পেরেছিলাম তালেবানেরা বদলায়নি। আলোচনার সময় তাদের আচরণে আমি এর প্রমাণও পেয়েছি। তাদের মতাদর্শ, দৃষ্টিভঙ্গি এবং মানসিকতা প্রমাণ করে তারা কতটা মিসজিনিস্টিক। তারা দেখানোর চেষ্টা করছিল যে তাদের মানসিকতা পরিবর্তিত হয়েছে। বোঝাতে চেয়েছিল যে তারা স্পষ্টতই নারী শিক্ষায় বিশ্বাস করে। কিন্তু শেষমেশ আমি প্রমাণ পেয়েছি তালেবানেরা বদলায়নি।
প্রশ্ন: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় দাবি করে যে, তালেবানের সঙ্গে আলোচনার অন্যতম প্রধান বিষয় নারীর অধিকার। এই কথার কোনো বাস্তবায়ন দেখছেন?
উত্তর: সরকারের অন্তর্ভুক্তি সংক্রান্ত কূটনৈতিক বৈঠকে আলোচনায় আমরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সামনে নারীর অধিকার ও মানবাধিকারের বিষয়গুলো তুলে ধরি। তারা বলে, আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তবে তারা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ কি না সেটা সময়ই বলে দেবে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নিজস্ব এজেন্ডা আছে। তারা সে অনুযায়ী কাজ করার চেষ্টা করে। তারা যে তালেবানকে এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেয়নি এটা একটা ইতিবাচক লক্ষণ। কিছু দেশ দূতাবাস, কনস্যুলেট বা বাণিজ্য সম্পর্কের নামে এক ধরনের কূটনৈতিক সম্পর্কের সূচনা করেছে। এটি ইঙ্গিত দেয় যে তাদের নারী অধিকারের প্রতি কোনো অঙ্গীকার নেই। তাদের ক্ষেত্রে শুধু নিজেদের এজেন্ডা প্রতিষ্ঠা করাই মুখ্য।
প্রশ্ন: তালেবান শাসন শুরুর পর থেকে দেশের ভেতরে অনেক নারী এই গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু তাদের কঠোরভাবে দমন করা হয়েছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, শান্তিপূর্ণভাবে তাদের অধিকার হরণের প্রতিবাদ করার জন্য নারীরা তালেবান কারাগারে রয়েছে। আফগানিস্তানের বাইরে, নারী অধিকার কর্মীদের কাছ থেকে তেমন প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা যায়নি। এর কারণ কী হতে পারে বলে আপনি মনে করেন?
উত্তর: আফগানিস্তানের ভেতরে যুদ্ধরত সব নারীরা সত্যিই কঠিন পরিস্থিতিতে বসবাস করছে এবং তাদের সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে। যেসব নারী আফগানিস্তানের বাইরে রয়েছে এবং বিশ্বের কাছে নারীদের কণ্ঠস্বর পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করছে, আমি তাদের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাই। কারণ এটা সহজ কাজ নয়। যারা দেশ ছেড়েছে তারাও পশ্চিমে কোনোভাবেই সুখী নয়। আমাদের জন্য পশ্চিমে বাস করা জাহান্নামের মতো। অভিবাসীরা অস্থিতিস্থাপক জীবন যাপন করে। জাতিসংঘ এখনো তালেবানকে বৈধতা দেয়নি এবং তালেবান এখনো সরকারিভাবে স্বীকৃত নয়। একে আমরা নারীদের আন্দোলনের ফলাফল বলতে পারি। তবে এখনো পরিপূর্ণভাবে আমরা সফল হতে পারিনি। কারণ আফগানিস্তানের ভেতরের ও বাইরের লোকদের মধ্যে এখনো অবিশ্বাস রয়েছে। এটি স্বাভাবিক। কারণ দেশের ভেতরে নারীরা যে পরিস্থিতির সম্মুখীন হচ্ছে তা আফগানিস্তানের বাইরের নারীদের অবস্থার থেকে একেবারেই আলাদা। অভ্যন্তরীণ নারীরা মনে করে, আমরা যারা দেশের বাইরে আছি তারা তাদের পরিত্যাগ করেছি। তাদের সত্যিকার অর্থে সেরকম ভাবার অধিকার আছে। অন্যদিকে, প্রত্যেকেরই ব্যক্তিগত জীবন আছে। প্রত্যেকেই একটি কারণে আফগানিস্তান ছেড়েছে। এটা আফগানিস্তানের ভেতরে থাকা নারীদের কাছে গ্রহণযোগ্য নাও হতে পারে। কিন্তু আস্থা থাকলে ভালো হয়। কারণ দেশের নারীদের কণ্ঠস্বর রুদ্ধ হলে অভিবাসী নারীরা তাদের কণ্ঠস্বর প্রসারিত করবে, যতক্ষণ না তাদের দাবি রাজনীতিবিদ, নিরাপত্তা পরিষদ এবং জাতিসংঘের কানে পৌঁছায়। আমরা সম্পূর্ণ সাফল্য অর্জন করতে পারিনি, এটি এই অবিশ্বাসের একটি কারণ হতে পারে। কিন্তু এই পরিস্থিতির পরিবর্তন হচ্ছে। যত বেশি সংলাপ হবে, আফগানিস্তানের অভ্যন্তরে থাকা লোকদের সঙ্গে আমাদের তত বেশি যোগাযোগ হবে এবং বৃহত্তর আস্থার পরিবেশ তৈরি হবে।
প্রশ্ন: আপনি কি মনে করেন, আফগান নারীদের জন্য উল্লেখযোগ্য কোনো প্রচেষ্টা নেওয়া হয়নি? তালেবান নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে আফগানিস্তানের বাইরে কী করা যেতে পারে?
উত্তর: ধারাবাহিকভাবে বারবার চেষ্টা করা হয়েছে। এমন কিছু প্রতিষ্ঠান আছে যারা আফগান নারীদের একত্রিত করার চেষ্টা করেছে। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, আফগানিস্তানের বাইরে যারা আছেন তাঁদের একে অপরের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করা। আসুন, আমরা নারীদের ইস্যুকে প্রতিযোগিতায় পরিণত না করি। আসুন, আমরা প্রত্যেকে একটি ব্যানার ধরি যা আফগান নারীদের প্রতিনিধিত্ব করে। আসুন, আমরা প্রত্যেকে নিজ নিজ জায়গায় আমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী লড়াই করি। প্রতিটি ব্যক্তির ক্ষমতার প্রশংসা করা উচিত। আসুন একে অপরকে সমর্থন করি। এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যে, এক গোষ্ঠীর মধ্যে যে শূন্যতা রয়েছে তা অন্যদের পূরণ করা উচিত। যাতে আমরা এক শক্তি হয়ে তালেবানের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে পারি।
প্রশ্ন: আপনি যখন নারীদের ওপর তালেবানের নতুন বিধিনিষেধ সম্পর্কে খবরের আপডেট শুনতে পান, রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ বাদে ব্যক্তিগতভাবে তখন আপনার অনুভূতি কেমন হয়?
উত্তর: নারী সমস্যা রাজনীতি থেকে দূরে নয়। দুর্ভাগ্যক্রমে, এটি একটি রাজনৈতিক বিষয় যাকে তালেবানরা আরও রাজনৈতিক করে তুলেছে। তালেবানরা নারী ইস্যু থেকে সবচেয়ে বেশি রাজনৈতিক সুবিধা লাভ করে। আফগানিস্তানের ভেতর থেকে আমরা যে খবর শুনি, তা শুধু নারীদেরই নয়, যুবক, সামরিক কর্মী, সংখ্যালঘু, শিয়া মসজিদে বোমা হামলা, শিক্ষাকেন্দ্র ধ্বংসের খবর আমাদের হৃদয়ে ছুরি মারার মতো। এর বেশি খবর সামনে আসছে না যা খুবই দুঃখজনক।
প্রশ্ন: আপনি কি এখনো আফগানিস্তানের নারীদের সঙ্গে, বিশেষ করে তরুণীদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন? তারা আপনাকে কী বলে?
উত্তর: হ্যাঁ, আমি যোগাযোগ করছি। মাঝে মাঝে আমাদের কথা হয়। তারা কী বলে, তা বলা কঠিন। তারা সব সময় কষ্ট, বঞ্চনা, বৈষম্য নিয়ে কথা বলে। সমাজ থেকে বহিষ্কৃত হওয়ার কথা, সেই কষ্টের কথা তারা উল্লেখ করে। কারাগারে যারা ছিল, তারা কী সহ্য করেছিল, সে কথাও হয়। এটা খুব দুঃখজনক। কিন্তু আমাদের এটা সহ্য করতে হচ্ছে।
প্রশ্ন: আপনি বামিয়ানকে কতটা মিস করেন? তাদের সঙ্গে কথা বলে আপনি কি বুঝতে পারছেন যে তারা আরও বঞ্চনা ও দারিদ্র্যের শিকার?
উত্তর: আজকাল আমি বামিয়ান সম্পর্কে রিচার্ড হাল নামে এক মার্কিন সেনা কর্মকর্তার লেখা একটি বই পড়ছি। তিনি সেখানে কাটানো ছয় মাসের প্রায় প্রতিটি ঘটনা তাঁর বইয়ে উল্লেখ রয়েছে। যখন আমি এই বইটি পড়ি, এটি আমাকে বামিয়ানে নিয়ে যায়। বইটির এক অংশে বর্ণনায় বামিয়ানের একটি প্রত্যন্ত অঞ্চলে একটি অনুষ্ঠান সম্পর্কে বলা হয়েছে। যেখানে একজন নারী এগিয়ে এসে তাঁকে ইংরেজিতে স্বাগত জানিয়ে নিজের পরিচয় দেন। যখন আমার পরিবার বামিয়ানে ছিল না, আমার ছুটির দিনগুলিতে আমি বামিয়ানের বিভিন্ন এলাকায় ভ্রমণ করে সেখানকার মানুষদের সম্পর্কে জানার চেষ্টা করেছি। বিভিন্ন গ্রাম ঘুরেছি। একবার আমি ব্যান্ড-ই আমিরের কাছে গিয়েছিলাম।সেখানে একদল যুবতী আমার চারপাশে জড়ো হয়েছিল। তারা বেশ উচ্ছল ছিল। আমি লক্ষ্য করেছি, তাঁদের এই দৃশ্যটি দূর থেকে কিছু দাড়ি ওয়ালা পুরুষ পর্যবেক্ষণ করেছিল। নারীরা বলেছিলেন, ‘আমাদের গভর্নরের সঙ্গে দাঁড়ানোর এবং ছবি তোলার অধিকার আছে, যা আগে ছিল না।’ বামিয়ানের ওয়ারাস জেলায় ভ্রমণকালে একজন নারী আমাদের স্বাগত জানাতে এসেছিলেন। খুশিতে কেঁদে ফেলে তিনি বলেছিলেন, ‘আপনি আমাদের জীবন দিয়েছেন।’ একজন নারীকে নেতৃত্ব দিতে দেখে তিনি খুশি হন। তখন তাঁরা মনে করতেন, নারীরাও নেতৃত্ব দিতে পারে।
ডেস্কে বসে কপের খবর নেওয়া আর আকাশের চাঁদ ছোঁয়ার মধ্যে যেন তেমন কোনো পার্থক্য নেই। কিন্তু হঠাৎ মনে পড়ল আনিকা তাবাসসুমের কথা। এই মুহূর্তে তিনি আছেন আজারবাইজানের বাকুতে। এত এত অ্যাপের দুনিয়ায় তাঁকে ধরা কি খুব কঠিন? চেষ্টা করতেই তাঁর কাছ থেকে পাওয়া গেল উত্তর। আমরাও চটপট কথা বলে ফেললাম আনিকার সঙ্গে।
৪ দিন আগেবাংলাদেশে তৈরি পোশাক খাতে ৩৩ লাখ ১৭ হাজার ৩৯৭ জন শ্রমিক কাজ করছেন এখন। বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) বায়োমেট্রিক ডেটাবেইস থেকে পাওয়া গেছে এ তথ্য। এই বিশালসংখ্যক শ্রমিকের মধ্যে ১৭ লাখ ৩৪ হাজার ৪৫৯ জন বা ৫২ দশমিক ২৮ শতাংশ নারী...
৪ দিন আগেআরব অঞ্চলের দেশগুলোর ঐতিহ্যবাহী খেলা উটের দৌড়। একসময় আমাদের দেশে যেমন ঘোড়দৌড় হতো, বিষয়টি তেমনই। সেখানে শুধু ঘোড়ার বদলে থাকে উট। সে উট যাঁরা চালনা করেন, তাঁরা হলেন জকি। এত দিন জকি হিসেবে সৌদি আরবে ছিল পুরুষদের দাপট। দেশটিতে সেই প্রচলিত প্রথা অবশ্য ভেঙেছে ২০২২ সালে...
৪ দিন আগেঅ্যান্টিবায়োটিক হিসেবে পেনিসিলিনের আবিষ্কার মানবজাতিকে স্বস্তি দিয়েছিল। তারপর আবিষ্কৃত হয় ছত্রাকজনিত রোগের বিরুদ্ধে কর্মক্ষম অ্যান্টিবায়োটিক নাইস্ট্যাটিন। এটির সঙ্গে যুক্ত আছে রাচেল ফুলার ব্রাউন এবং তাঁর সহযোগী এলিজাবেথ হ্যাজেনের নাম। এই দুজনের আবিষ্কারটি ছিল ছত্রাকজনিত রোগের বিরুদ্ধে প্রথম কার্যকর
৪ দিন আগে