Ajker Patrika

সেনার পাশাপাশি সহায়তাও পাঠাচ্ছে রাশিয়া

বিজন সাহা
আপডেট : ২৮ এপ্রিল ২০২২, ১০: ৫৯
সেনার পাশাপাশি সহায়তাও পাঠাচ্ছে রাশিয়া

যুদ্ধের পাশাপাশি সব সময়ই কাজ করে হিউম্যানিটারিয়ান এইডস। রাশিয়া ইতিমধ্যে কয়েক হাজার টন সাহায্য পাঠিয়েছে। যখনই কোনো জনপদ রুশ সেনাদের অধীনে আসে, তারা প্রথমেই যারা দীর্ঘদিন খাদ্যাভাবে ভুগছে, সেখানকার সেই সব সাধারণ মানুষদের মধ্যে খাদ্য ও অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি বণ্টন করে। আর মানবতার কথা বলে মুখে ফেনা তোলা পশ্চিমা বিশ্ব অস্ত্র ছাড়া কী দিচ্ছে? এমনকি রাশিয়া যখন মানবিক করিডর খুলছে, তখন বিভিন্নভাবে সেখানে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে। 

আসলে একটু গভীরভাবে ভাবলে দেখা যাবে, এই যুদ্ধ শুধু যুক্তরাষ্ট্রের ইউরোপীয় বাজার দখলের যুদ্ধ নয়, ব্রিটেনের ইইউ-বিরোধী যুদ্ধও। আসুন একটু পেছনে ফিরে তাকাই। নেপোলিয়নের ফ্রান্স প্রায় বিনা যুদ্ধে সমগ্র কন্টিনেন্টাল ইউরোপ দখল করে। ব্রিটেনের প্রধান শত্রু কে? নেপোলিয়ন। ১৮১২ সালে তাঁকে উসকে দেওয়া হয় রাশিয়ার বিরুদ্ধে। ফলাফল সবার জানা। 

এভাবেই ব্রিটেন প্রথম ইইউ ধ্বংস করেছিল। হ্যাঁ, সেটা ছিল প্রথম ইউরোপীয় ইউনিয়ন–নেপোলিয়ন সেটাই করতে চেয়েছিলেন। এরপর ১৯৩৯-৪১ সালে হিটলার সমগ্র কন্টিনেন্টাল ইউরোপ প্রায় বিনা যুদ্ধে দখল করে দ্বিতীয় ইইউর জন্ম দেন। ১৯৪১ সালে জার্মানির রাশিয়া আক্রমণের পেছনে ছিল চার্চিলের প্ররোচনা। সেই যুদ্ধ যে শুধু রাশিয়ার সঙ্গে জার্মানির ছিল না, তার প্রমাণ আমরা পাব স্তালিনগ্রাদের যুদ্ধের ইতিহাস থেকে। সেখানে রাশিয়ার বিরুদ্ধে জার্মানির পাশে যুদ্ধ করেছিল ইতালি, রোমানিয়া ও ক্রোয়েশিয়ার কয়েক ব্যাটালিয়ন সৈন্য। ১৮১২ সালে ব্রিটেন ইউরোপের দুই প্রধান শক্তি ফ্রান্স ও রাশিয়াকে পরস্পর বিধ্বংসী যুদ্ধে নামিয়েছিল, ১৯৪১ সালে আবার ছিল ইউরোপের দুই প্রধান শক্তি জার্মানি ও রাশিয়া। এভাবেই ডিভাইড অ্যান্ড রুল মেথডে ব্রিটেন সারা বিশ্বকে পদানত করার চেষ্টা করেছে। এবারও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। ব্রিটেন ইইউ থেকে বেরিয়ে গেছে। তখন থেকেই সুযোগ খুঁজছে ইইউকে জব্দ করতে। এখন সে ইউক্রেনের হাত দিয়ে রাশিয়া ও ইইউকে নতুন যুদ্ধে নামিয়েছে। সঙ্গে পেয়েছে যুক্তরাষ্ট্রকে। লাভ? একই সঙ্গে বহু যুগের শত্রু রাশিয়া ও কন্টিনেন্টাল ইউরোপকে দুর্বল করা। সে ক্ষেত্রে সে আবারও সফল। আবারও ডিভাইড অ্যান্ড রুল। 

ইদানীং অনেক কথা হচ্ছে বুচা নিয়ে, যেখানে নাকি রুশ সৈন্যরা নিরপরাধ মানুষদের হত্যা করেছে। সেখানে আমরা কী দেখি? ইস্তাম্বুলে একধরনের ঐকমত্যে আসার পরই ব্রিটেন ঘোষণা করে, তারা রাশিয়ার ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলবে না। একই সঙ্গে ইউক্রেনকে আদেশ দেয় তড়িঘড়ি করে কোনো চুক্তিতে স্বাক্ষর না করতে। এখন ভ্লাদিমির জেলেনস্কির নিরাপত্তার পুরোটাই ব্রিটিশ কমান্ডোর অধীনে। যদিও ৩০ মার্চ রুশ সৈন্য বুচা ত্যাগ করে এবং এরপর স্থানীয় মেয়র সব ঠিকঠাক আছে বলে ঘোষণা করেন এবং পরবর্তী কয়েক দিন কোনো হত্যাকাণ্ডের খবর পাওয়া যায় না। কয়েক দিন বাদে কোত্থেকে যেন সেখানে লাশ পড়ে থাকতে দেখা যায় রাস্তার পাশে। রাশিয়া সেই লাশ কার, কবে, কীভাবে মারা গেল—এসব পরীক্ষার দাবি জানালেও পশ্চিমা বিশ্ব সেই দাবি উপেক্ষা করে। তাই সেটা যে প্রভোকেশন, রাশিয়াকে মিথ্যা অভিযোগে অভিযুক্ত করার পাঁয়তারা, সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। সিরিয়ায় আমরা দেখেছি হোয়াইট হেলমেট কীভাবে ফেইক ভিডিও করে। ইউক্রেনও তার ব্যতিক্রম নয়। সবাই তো এক গুরুরই শিষ্য। এ ছাড়া ইউক্রেনে জেনেভা কনভেনশন ভঙ্গ করে যুদ্ধবন্দীদের হত্যার যে ভিডিও দেখানো হয়েছে, সেখানেও এমআই-৬-এর প্রিন্ট চোখে পড়ে। যখনই রাশিয়া এ সমস্ত খবর যে সত্য নয়, সেটা প্রমাণ করতে চাইছে; বিভিন্নভাবে তাকে সেটা করতে বাধা দেওয়া হচ্ছে। এমনকি জাতিসংঘে পর্যন্ত এ নিয়ে শুনানি স্থগিত রাখা হয়েছে। কারণ, ঘটনার সত্য-মিথ্যা নিয়ে তাদের মাথাব্যথা নেই। উদ্দেশ্য একটাই—রাশিয়াকে বিশ্বের মানুষের কাছে হেয় করা। গোয়েবলস বলেছিল, কোনো মিথ্যা যদি বারবার বলা হয়, সেটা সত্যে পরিণত হয়। এরা তো সেই গোয়েবলসেরই উত্তরসূরি। 

আজ পাকিস্তানে ইমরান খান সরকারের পতন হলো। কেন? তিনি আমেরিকার কথামতো রাশিয়ার বিরুদ্ধে সোচ্চার হননি। তাও ভালো। এর চেয়ে খারাপ অবস্থাও হতে পারত। সালভাদর আলিয়েন্দে, শেখ মুজিবুর রহমান—কত নেতাই তো মার্কিন ‘গণতান্ত্রিক’ ও ‘মানবিক’ রাজনীতির শিকার হয়ে পৃথিবী ত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন। ডমিনিক স্ট্রাউস-কান জনপ্রিয় ও সম্ভাবনাময় হওয়ার পরও নির্বাচনে দাঁড়াতে পর্যন্ত পারেননি। আবার প্রায় অজ্ঞাত এমানুয়েল মাখো ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট হয়েছেন। এ এক প্যারাডক্স। গণতন্ত্রের মক্কা এই যুক্তরাষ্ট্র বিশ্ব রাজনীতিতে যেকোনো স্বৈরাচারকেও হার মানায়। হ্যাঁ, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে যুক্তরাষ্ট্র স্বৈরাচার। কোনো দেশে স্বৈরাচারী শাসক যেমন জনগণের মুখ বন্ধ করে নিজের খেয়াল-খুশিমতো দেশ চালায়, যুক্তরাষ্ট্রও পৃথিবীর সব দেশের মুখ বন্ধ করে তাদের জাতীয় স্বার্থকে পদদলিত করে নিজের ইচ্ছাকে তাদের ওপর চাপিয়ে দেয়। আর যদি কেউ তা না মানে, তাহলে হয় সে দেশে সরকারের পতন ঘটে, সরকারপ্রধান প্রাণ হারান অথবা দেশটার অস্তিত্বই বিপন্ন হয়ে পড়ে। 

এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের অনেক সাবেক জেনারেল ব্ল্যাক সি, কালিনিনগ্রাদ, ভ্লাদিভোস্তক—এসব জায়গায় ন্যাটোর সামরিক তৎপরতা বাড়াতে বলছেন। এটা যে পারমাণবিক যুদ্ধ ডেকে আনতে পারে, সে কথা কি এরা ভাবেন? যদিও এখনো যুদ্ধ হচ্ছে রাশিয়া ও ন্যাটোর মধ্যে, তবে সেটা হচ্ছে ইউক্রেনকে মধ্যে রেখে। এখানে ন্যাটোর প্রশিক্ষক, ছুটিতে থাকা সৈনিক—এ সবই আছে, আছে ন্যাটোর অস্ত্র, তবু সরাসরি ন্যাটো ও রাশিয়ার যুদ্ধ নয় এটি। অনেকের ধারণা, মারিউপোলের আজোভ স্টিলে ফ্রান্সের এক জেনারেল আটকা পড়েছেন। তাঁকে মুক্ত করে আনার জন্যই ইমানুয়েল মাখোঁ বারবার পুতিনকে ফোন করছেন। কী হবে যদি সত্যিই সেই যুদ্ধ লাগে? যুক্তরাষ্ট্র কি ভাবছে বরাবরের মতো সে এবারও রেহাই পাবে সাগরের ওপারে বসে? আর যদি হঠাৎ এটা পারমাণবিক যুদ্ধে পরিণত হয়, যদি সাগর থেকে কয়েকটি বোমা যুক্তরাষ্ট্রে পড়ে, বড় বড় শহরে বা ইয়েলো স্টোন বা ওসব স্পর্শকাতর জায়গায় গিয়ে কোনো বোমা পড়ে, তাহলে প্রাণ-প্রকৃতির কী হবে? 

উল্লেখ্য, ১৯১৭ সালের বিপ্লব, গৃহযুদ্ধ ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে কোটি কোটি মানুষ হারিয়ে সোভিয়েত জনগণ সত্যিকার অর্থেই ছিল শান্তিপ্রিয়। তাই যখন আশির দশকে অস্ত্র প্রতিযোগিতা থেকে বেরিয়ে আসার সুযোগ সৃষ্টি হয়, তারা সেটা লুফে নিয়েছিল। তাদের আশা ছিল—যুক্তরাষ্ট্র তাদের বন্ধু হবে। কিন্তু কী পেল তারা? নব্বইয়ের দশকের অরাজকতা। কারচুপিতে ভরা রাজনীতি, হতাশা, দারিদ্র্য; আর সবচেয়ে বড় কথা জাতীয় লাঞ্ছনা, অবমাননা। আর তাইতো তারা ঘুরে দাঁড়াল। আজ এখানে আগের মতো আর আমেরিকা-প্রেম নেই। ফলে মানুষ এখন জাতীয় মর্যাদা রক্ষা করতে চরম যুদ্ধে নামতেও প্রস্তুত। অন্তত লোকজনের সঙ্গে কথা বললে সেটাই মনে হয়। তারাও বলে, রাশিয়াই যদি না থাকে, সেই বিশ্ব দিয়ে আমাদের কী হবে। সত্যিকার অর্থেই পৃথিবী এক বিশাল পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। সব যুদ্ধই শেষ হয় সাধারণত শান্তি চুক্তির মধ্য দিয়ে। তবে এবার সেটা হতে পারে পারস্পরিক ধ্বংসের মধ্য দিয়ে। তবে শান্তি চুক্তির মধ্য দিয়ে হলেও বিশ্ব আর আগের মতো থাকবে না। ডলার আর একমাত্র কারেন্সি থাকবে না। সেটা আমেরিকার অর্থনীতিতে ব্যাপক প্রভাব ফেলবে। আমেরিকা লাগামহীনভাবে ডলার ছাপিয়ে সেই বাবলে (bubble) নিজেই ডুবে যেতে পারে। ইউরোপ হবে আরও অস্থির। একে তো জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধিতে সেখানকার পণ্য আগের মতো কমপিটেটিভ থাকবে না। তার ওপর সামাজিক অস্থিরতার কারণে সেখানকার পুঁজি যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশ্যে পাড়ি জমাতে পারে। এই অঙ্ক অনেকের মতে ট্রিলিয়ন হতে পারে। 

ইউরোপের কী হবে
সে ক্ষেত্রে ইউরোপের সুখের দিন শেষ। হতে পারে রাশিয়া, চীন, ভারতসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো নিজেদের মতো করে চলবে। এতে যোগ দেবে আফ্রিকা, আরব দেশগুলো ও লাতিন আমেরিকা। আরব বসন্তের কথা সৌদি আরব, আরব আমিরাত ভোলেনি। এর ওপর আছেন জামাল খাশোগি। তাই তো দেখি বাইডেনের ডাকে সাড়া না দিয়ে চীনের সঙ্গে ইউয়ানের মাধ্যমে বাণিজ্য করতে চাইছে সৌদি আরব। ইউরোপে ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি পূর্বের অবস্থান হারাবে। সেই স্থান দখল করার চেষ্টা করবে পোল্যান্ড। এর কারণ হলো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ের বিভিন্ন সীমাবদ্ধতার কারণে জার্মানির পক্ষে সামরিক শক্তি হয়ে ওঠাটা অনেক কঠিন। সেখানে অনেক বাধা। সেদিক থেকে পোল্যান্ড মুক্ত। 

জার্মানি ও সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে এত বড় রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পরও দুই দেশের মানুষ পরস্পরের বন্ধু হতে পেরেছিল। পোল্যান্ড সব সময়ই ছিল রুশবিরোধী। আর এটি ভৌগোলিকভাবে রাশিয়ার আরও কাছে। আর এ কারণেই যুক্তরাষ্ট্র জার্মানি থেকে তাদের সামরিক ঘাঁটির এক বিরাট অংশ পোল্যান্ডে স্থানান্তরিত করতে আগ্রহী। এমনকি পারমাণবিক অস্ত্রও। জাপানও সামরিকভাবে শক্তিশালী হবে বলে অনেকের ধারণা। জাপানের ঐতিহাসিক পটভূমি, সামুরাই, হারিকিরি—এসব সে কথাই বলে। তবে ইউরোপের দেশগুলো যতটা এক্সপোজড, জাপান ততটা নয়। এ দেশ ইকোনোমিক্যালি ও টেকনোলজিক্যালি অনেক উন্নত। তাই ইসরায়েলের মতো সেও পারমাণবিক অস্ত্র তৈরিতে সক্ষম। সেখানে একটাই বাধা—হিরোশিমা ও নাগাসাকির স্মৃতি। 

এক কথায় আমরা আবার এক নতুন যুগের দোরগোড়ায়। এটা সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের চেয়েও ব্যাপকভাবে নাড়া দেবে বিশ্বকে। সেই ভূমিকম্পে কে টিকে থাকবে, আর কে হারিয়ে যাবে, সেটা শুধু ভবিষ্যৎই বলতে পারে। বাইবেলে সডোম ও গোমেরা নামে প্রাচুর্যপূর্ণ দুই শহরের গল্প আছে, যারা নাকি বিলাস ও ব্যভিচারে লিপ্ত হওয়ায় ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। বর্তমানে ভোগবাদী বিশ্বে আমরা কি সেই চিত্রই দেখছি না। মানব সমাজ কি প্রকৃতি বিরুদ্ধ কাজে লিপ্ত হয়ে নিজেদের ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে না? অনেক দিন থেকেই ন্যাটোভুক্ত দেশগুলো (ইউরোপ, আমেরিকা, কানাডা) ও জাপান, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড নিজেদের এক্সক্লুসিভ ক্লাবের সদস্য ভাবে। এবার হয়তো সেটাই হবে—অফিশিয়ালি। বিশ্ব দুই ভিন্ন ক্যাম্পে বাস করবে। পশ্চিমা বিশ্বে যুক্তরাষ্ট্র তার মোড়লগিরি আগের মতোই করে যাবে, বাকি অংশে থাকবে একাধিক কেন্দ্র, যার পুরোধা হবে চীন, রাশিয়া ও ভারত। 

পশ্চিমা বিশ্ব নেমেছে অল আউট যুদ্ধে আর তাই তো খেলোয়াড়, শিল্পী, সাহিত্যিক, অভিনেতা অভিনেত্রী, সাংবাদিক—কেউ বাদ যাচ্ছে না। এরা রাশিয়াকে একঘরে করে ধ্বংস করতে বদ্ধপরিকর। ইতিহাস বলে জিন্নাহর ব্রাহ্মণ পিতামহকে মাছের ব্যবসা করার দায়ে একঘরে করে গ্রাম্য সমাজ। তারা আশ্রয় পায় ইসলামে। পরবর্তী ইতিহাস ভারত বিভাগ। যদিও পাকিস্তান সৃষ্টি ইসলাম বা মানবজাতির জন্য কতটা সুফল বয়ে এনেছে, সেটা প্রশ্নসাপেক্ষ, তবুও কথা হলো কাউকে অন্যায়ভাবে কোণঠাসা করার পরিণাম ভয়াবহ হতে পারে। 

ন্যাটো কার জন্য
অনেক সময় মনে হয় ন্যাটো আসলে কার দরকার। ওয়ারশ জোট পতনের পর এর যৌক্তিকতা নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন করেছেন, করছেন। মৌখিক প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পরেও ন্যাটোর প্রসারণ রাশিয়াকে ক্ষুব্ধ করেছে। তাকে বাধ্য করেছে নিজের নিরাপত্তার কথা ভাবতে। ফলে ইউরোপের নিরাপত্তা বাড়েনি, কমেছে। কারণ অস্ত্রের বিরুদ্ধে অস্ত্র উত্তেজনা কমায় না, বাড়ায়। তা ছাড়া সৃষ্টিকালে ন্যাটো আত্মরক্ষাকারী জোট হলেও সে আর এখন তা নেই। সার্বিয়া, আফগানিস্তান, ইরাক, লিবিয়ার ঘটনা একে আক্রমণকারী জোট হিসেবেই প্রমাণ করে। তাহলে কেন এই জোট? উত্তর—যুক্তরাষ্ট্রের মিলিটারি ইন্ডাস্ট্রির জন্য। ফলে ইউরোপের দেশগুলো বাধ্য হচ্ছে নিজেদের নিরাপত্তা বাজেট বাড়াতে; আর শর্ত অনুযায়ী মূলত মার্কিন অস্ত্র কিনতে। রাশিয়ায় ভয় দেখিয়ে ইউরোপে মোতায়েন করা হচ্ছে মার্কিন সেনা। এতে করে ইউরোপ আমেরিকার ওপর আরও বেশি করে নির্ভরশীল হয়ে উঠছে। রাশিয়াকেও বন্দুকের মুখে রেখে বশ মানানোর চেষ্টা করা যাচ্ছে। আর এখানেই বেজেছে গোল। রাশিয়া ঘুরে দাঁড়িয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র চাইছে এখন ইউক্রেনের মাধ্যমে এবং পরে ইউরোপের হাত দিয়ে রাশিয়াকে শায়েস্তা করতে। সেটি আর হবে বলে মনে হয় না। বর্তমান টেকনোলজির যুগে এমনকি ইউরোপ থেকে রাশিয়া আক্রমণ করার পরও শত শত নিউক্লিয়ার ওয়ারহেড আমেরিকায় গিয়ে পড়বে। এই আশঙ্কাই এখন পৃথিবীকে বাঁচিয়ে রেখেছে মার্কিন আগ্রাসী নীতি থেকে। 

রাশিয়া ও পশ্চিমা নেতাদের কথাবার্তা খেয়াল করলে দেখবেন, রাশিয়া যতটা শান্তিপূর্ণভাবে সমস্যা সমাধানে প্রস্তুত, পশ্চিম ততটা নয়। কথায় কথায় তারা রাশিয়া, রাশিয়ার অর্থনীতি ধ্বংসের কথা বলে। কিন্তু পশ্চিমের অর্থনীতি ধ্বংসের বাস্তব চাবিকাঠি রাশিয়ার হাতে থাকার পরও সে সেটা করছে না, এ নিয়ে হুমকি দিচ্ছে না। কেউ কি ভেবেছিল বিশ্ব রাশিয়ার ওপর এতটা নির্ভরশীল? যত নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হচ্ছে ইউরোপের মানুষ তত বেশি বিপদে পড়ছে। এরই মধ্যে ইউরোপের কোথাও কোথাও কলকারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। সেখানে দেখি সেই সোভিয়েত ইউনিয়নের শেষ ও নতুন রাশিয়ার প্রথম দিনগুলোর অবস্থা। দুই বোতলের বেশি সূর্যমুখী তেল দিচ্ছে না। আমলারা বলছেন, শরীরে তাপমাত্রা ৩৪ ডিগ্রিতে নামিয়া আনতে। সোভিয়েত ইউনিয়নে এটা সম্ভব ছিল, ইউরোপের মানুষ কি মানবে সেই নির্দেশ? তবে এভাবে চলতে থাকলে তাকে অন্যভাবে ভাবতে হতে পারে। মিনস্ক থেকে শিক্ষা নিয়ে রাশিয়া ইতিমধ্যেই বলেছে, তারা আর ইঁদুর-বিড়াল খেলতে রাজি নয়। এখন কোনো ইউক্রেন শহর দখল করার পর তারা আর সরে আসবে না, যাতে বুচার মতো কোনো প্রভোকেশন কেউ না করতে পারে। 

ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে রুশ সেনা উপস্থিতিযেসব এলাকা মুক্ত হচ্ছে, সেখানে স্থানীয় লোকদের নিয়ে প্রশাসন গড়ে তোলা হচ্ছে। আসলে পুরোনো প্রশাসনে বান্দেরার অনুসারীরা এমনভাবে ঢুকে পড়েছে যে, তাদের আর বিশ্বাস করা ঠিক হবে না বলে মনে করছে রাশিয়া। নতুন বাস্তবতায় নতুন করে ভাবতে হবে। তবে সেটাও কি তেমন ফলপ্রসূ হবে? আজ ক্রিমাতোরস্ক রেল স্টেশনে অপেক্ষারত সাধারণ মানুষের ওপর মিসাইল পড়ল ক্যাসেট বোম নিয়ে। সেটা করেছে ‘তোচকা’ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে, যা ইউক্রেন ছাড়া কেউ ব্যবহার করে না। অথচ ইউক্রেন ও পশ্চিমা বিশ্ব দোষ চাপাচ্ছে রাশিয়ার ঘাড়ে। কারণ তারা চায়, এভাবে রাশিয়ার সব প্রয়াসকে হেয় করতে, মানুষের চোখে এদের ছোট করতে। 

মজার ব্যাপার হলো বোমা আর টুইটারে কিয়েভের নেতাদের পোস্ট আসে প্রায় একই সঙ্গে। তাতেই বোঝা যায়, টেক্সট আগে থেকেই প্রস্তুত ছিল। কিন্তু পশ্চিমা বিশ্ব এটা দেখবে না। তাদের দরকার এই অছিলায় ইউক্রেনে আরও আরও অস্ত্র সরবরাহ করা। যদি ইউক্রেনের মানুষের জীবন রক্ষাই তাদের এজেন্ডায় থাকত, তারা অস্ত্র নয়, খাদ্য পাঠাত। 

রুশ হাইকমান্ড জানাচ্ছে যে, ইউক্রেন খারকভের কেমিক্যাল ফ্যাক্টরিতে প্রায় ১২০ টন ব্লিচিং পাউডারসহ গোডাউন বিস্ফোরক দিয়ে ভরে রেখেছে। এর অর্থ যদি ওরা সেখানে বিস্ফোরণ ঘটায়, দোষ যাবে রাশিয়ার ঘাড়ে। ফলে পরিবেশের যে ক্ষতি হবে, সেটা অকল্পনীয়। শুধু কি তাই? এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ইউরোপ আরও অস্ত্র পাঠাবে ইউক্রেনে। কিন্তু সমস্যা হলো, তারা কি কখনো থামতে পারবে? নাকি ন্যাটো ও রাশিয়ার মধ্যে একমাত্র সরাসরি যুদ্ধ দিয়েই এই সমস্যার সমাধান হবে? কেউ কি ভেবে দেখেছে এর ফলাফল? এটা অনেকটা যেকোনো মূল্যে যুদ্ধটাকে চালিয়ে যাওয়ার পণ বলে মনে হয়। আসলে ইতিহাসের দিকে তাকালে আমরা দেখব এখন আর কেউ অপরাধী খোঁজে না, প্রয়োজনমতো কারও ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে দেয়। 

আবার স্মরণ করা যেতে পারে কলিন পাওয়েলের কথা। সিরিয়ায় বিভিন্ন নাটক করা হয়েছে। মৃত শিশু বেঁচে উঠেছে নতুন কোনো রোলে অভিনয় করার জন্য। ইউক্রেনে একই মহিলা কখনো বোমা হামলায় আহত বৃদ্ধা, অসীম সাহসী ইউক্রেন সেনা, আবার মারিউপোলের হাসপাতালে গর্ভবতী মহিলা। কী মালয়েশিয়ার বিমান এম এইচ ১৭, কী জাপারোঝিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, কী ক্রামাতোরস্ক—পশ্চিমা বিশ্ব কোনো রকম সাক্ষ্যপ্রমাণের ধার না ধরে রাশিয়াকে অভিযুক্ত করে। ফলে আইন বা বিচার ব্যবস্থাকেই হেয় করা হচ্ছে। 

শুধু কি তাই। সাংবাদিকতা আজ আসলে রাজনৈতিক প্রোপাগান্ডার মেশিন হয়ে গেছে। ফলে সাংবাদিকতা ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এই সাংবাদিকতা একদিন ইরাক, লিবিয়া, সিরিয়া আক্রমণকে জায়েজ করেছে। এদের কারণেই ইউরোপের মানুষ বান্দেরার অনুসারীদের পেছনে এসে দাঁড়িয়েছে। অথচ এদের অনেকেই মনেপ্রাণে ফ্যাসিবাদকে ঘৃণা করে। সত্যকে বিকৃতভাবে প্রকাশ করে এরা শুধু সত্যের অবমাননা করছে না, মানুষকেও মিথ্যেবাদী হতে শেখাচ্ছে, মানুষের মানবতাবোধ ভূলুণ্ঠিত করছে। কারণ মানবিক আদর্শ আর যাই হোক, ফ্যাসিবাদকে সমর্থন করতে পারে না। সেদিন এক বন্ধুকে দেখলাম ফেসবুকে লিখেছে দেশে এখন যে কেউ তার প্রতিপক্ষকে শেষ করতে পারবে ধর্ম অবমাননার অভিযোগে। একটু খেয়াল করলে দেখবেন পাকিস্তান, ভারত, বাংলাদেশ—এসব দেশে যে ঘটনা ঘটে, সেটা ইউরোপ আমেরিকার কোনো দেশের বিরুদ্ধে সাক্ষ্যপ্রমাণ ছাড়া অভিযোগ আনারই স্থানীয় রূপ। এসব দেশে যেমন কেউ ঘটনার সত্যতা প্রমাণের জন্য অপেক্ষা না করে কাউকে দোষী বানিয়ে ঘরদোর পোড়ায়, হত্যা করে বা ভাগ্য সুপ্রসন্ন হলে পুলিশের হাজতে ঢোকায়, একইভাবে পশ্চিমা বিশ্ব তাদের অপছন্দের যেকোনো দেশ বা সরকারকে দোষী সাব্যস্ত করে সেই দেশ ধ্বংস করার সব রকম প্রচেষ্টা চালায়। বাংলাদেশ যদি আধুনিক মৌলবাদী দেশ হয়, পশ্চিমা বিশ্ব আজ অত্যাধুনিক নিওলিবারেল মৌলবাদী দেশপুঞ্জ। এসব দেশে মধ্যযুগীয় ডাইনি পোড়ানো এখন শুধু সময়ের ব্যাপার।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপি

জামায়াতে যোগ দিলেন বিএনপি থেকে পাঁচবার বহিষ্কৃত আখতারুজ্জামান

ব্রিটেনে নাগরিকত্ব হারানোর ঝুঁকিতে কোটি মুসলিম, বেশির ভাগই বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তানের

আজকের রাশিফল: চায়ের বিল না দেওয়া বন্ধুদের সাহায্য করুন, সন্ধ্যার দিকে ভালো খবর

মা-বাবাকে নির্যাতন, ছেলেকে কোমর পর্যন্ত মাটিতে পুঁতে রাখল প্রতিবেশীরা

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

নির্বাচনের পথে দেশ

সম্পাদকীয়
নির্বাচনের পথে দেশ

অবশেষে ১১ ডিসেম্বর ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হলো। ইতিমধ্যে সবাই জেনে গেছেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিন একই দিনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের পথরেখা বেঁধে দিলেন। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল তফসিল নিয়ে তাদের মতামত জানিয়েছে। প্রতিটি দলই এখন নির্বাচনী প্রস্তুতির জন্য উঠেপড়ে লাগবে। দীর্ঘ প্রতীক্ষিত নির্বাচন একটি সুস্থির সমাজব্যবস্থার দিকে দেশকে পরিচালিত করবে কি না, সেটাই এখন দেখার বিষয়।

এরই মধ্যে বেশ কিছু ঘটনা ঘটে গেছে। তফসিল ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে সদ্য পদত্যাগকারী দুই ছাত্র উপদেষ্টার পদত্যাগ কার্যকর হয়েছে। এই দুই উপদেষ্টার নির্বাচনে অংশ নেওয়া না-নেওয়া নিয়ে তুমুল আলোচনা-সমালোচনা চলছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। বিদেশি রাষ্ট্রদূতদেরও সক্রিয় দেখা গেছে নানাভাবে। বিভিন্ন দলের নেতাদের কাছে তাঁরা যাচ্ছেন, কথা বলছেন। এরই মধ্যে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা নিয়ে বেশ কিছু সংকট তৈরি হয়েছে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান কেন দেশে ফিরতে পারছেন না, তা নিয়ে জেগেছে প্রশ্ন। যে চাপের কথা তারেক রহমান নিজেই বলেছেন, সেই চাপ দেশের অভ্যন্তরের নাকি বিদেশি কোনো শক্তির তরফ থেকে—সে কথাও আলোচিত হয়েছে।

২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপির নেতৃত্বে গড়ে ওঠা জোট সরকারের বিরুদ্ধে অর্থ লোপাট, দুর্নীতি, হাওয়া ভবনের মাধ্যমে প্যারালাল সরকার চালানোর অভিযোগসহ নানা বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে। এদিকে ডাকসু নেতাদের কিছু কথা, কিছু কর্মকাণ্ড নিয়েও প্রশ্ন জেগেছে মানুষের মনে। তফসিল ঘোষণার দিনই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নীল দলের এক নেতাকে একজন ডাকসু নেতার নেতৃত্বে হেনস্তা করার ঘটনা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সম্পর্কের ভিত কাঁপিয়ে দিয়েছে এই ন্যক্কারজনক ঘটনা। সবচেয়ে শঙ্কার বিষয় হলো, দেশে-বিদেশে মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযুদ্ধের মূল নায়কদের নিয়ে কটাক্ষ করে কথা বলার প্রবণতা বেড়েছে। যাঁরা বলছেন, তাঁরা দেশের মূলধারার সংবাদমাধ্যমকেও ব্যবহার করছেন। অজস্র মিথ্যার বেসাতি গড়ে তোলা হচ্ছে, অথচ তাঁদের বিরুদ্ধে সরকারকে কোনো দৃষ্টান্তমূলক অবস্থান নিতে দেখা যায়নি।

আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে নির্বাচনব্যবস্থা কলুষিত করা, দুর্নীতি, ব্যাংক লুট, প্রতিষ্ঠান ভেঙে ফেলাসহ বহু অভিযোগ ছিল। যে রাজনৈতিক দলগুলো নির্যাতিত হয়েছিল আওয়ামী লীগ আমলে, তারাই ৫ আগস্টের পটপরিবর্তনের পর যে রূপে আবির্ভূত হয়েছে, তা মোটেই জনগণের প্রত্যাশিত রূপ নয়। সংবাদমাধ্যমে নিয়মিত বিভিন্ন দলের দুর্নীতি, চাঁদাবাজি, পদ-বাণিজ্য, খুনোখুনির খবর ভেসে আসছে। যে ছাত্র নেতৃত্বের ওপর ভরসা রাখার কথা ভেবেছে তরুণ প্রজন্ম, সেই তরুণেরাও আজ দ্বিধান্বিত। এ রকম এক অস্থির সময়ে আসছে নির্বাচন। আশা থাকবে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি, ব্যবসায়ীদের অবাধে কাজের সুযোগ, শিক্ষাঙ্গনে শৃঙ্খলা, রাজনৈতিক দলের চাঁদাবাজি বন্ধ, সাধারণ মানুষের জীবন ও কাজের নিরাপত্তাসহ কল্যাণকর কাজগুলো করবে নির্বাচিত সরকার। তবেই অস্থিরতা থেকে বের হওয়ার একটা উপায় খুঁজে পাওয়া যাবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপি

জামায়াতে যোগ দিলেন বিএনপি থেকে পাঁচবার বহিষ্কৃত আখতারুজ্জামান

ব্রিটেনে নাগরিকত্ব হারানোর ঝুঁকিতে কোটি মুসলিম, বেশির ভাগই বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তানের

আজকের রাশিফল: চায়ের বিল না দেওয়া বন্ধুদের সাহায্য করুন, সন্ধ্যার দিকে ভালো খবর

মা-বাবাকে নির্যাতন, ছেলেকে কোমর পর্যন্ত মাটিতে পুঁতে রাখল প্রতিবেশীরা

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

যে প্রশ্নগুলোর জবাব পেতে হবে

জাহীদ রেজা নূর
আমাদের দেশের কিছু আইন ব্যবসায়ী আমাদের বিজয় নিয়ে, বিজয়ের নায়কদের নিয়ে যেসব কথা বলে চলেছেন, তার তীব্র প্রতিবাদ হওয়া দরকার। ছবি: সংগৃহীত
আমাদের দেশের কিছু আইন ব্যবসায়ী আমাদের বিজয় নিয়ে, বিজয়ের নায়কদের নিয়ে যেসব কথা বলে চলেছেন, তার তীব্র প্রতিবাদ হওয়া দরকার। ছবি: সংগৃহীত

হঠাৎ করেই বিজয়ের মাসে দেখা গেল মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কটূক্তি করছে একদল মানুষ। এই প্রবণতাকে পাত্তা না দিলেও চলত, কিন্তু সেগুলো যদি জাতীয় প্রচারমাধ্যম থেকে প্রচারিত হয়, তখন সত্যিই একটু ভাবতে হয়। এর যে প্রতিবাদ হওয়া দরকার, সেটা অনুভব করতে হয়। আইন বিষয়ে পড়াশোনা করলে আইন ভালোভাবে শেখা হয় বটে, কিন্তু ব্যারিস্টার বা উকিল হলেই দেশের ইতিহাস ভালো জানবে—এমন কোনো নিশ্চয়তা নেই। আমাদের দেশের কিছু আইন ব্যবসায়ী আমাদের বিজয় নিয়ে, বিজয়ের নায়কদের নিয়ে যেসব কথা বলে চলেছেন, তার তীব্র প্রতিবাদ হওয়া দরকার। তাঁদের ব্যাপারে সরকারের অবস্থানও পরিষ্কার করা উচিত। অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্বশীল কারও কাছ থেকে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে করা কটাক্ষের ব্যাপারে তেমন কোনো কড়া কথা আমি অন্তত বলতে শুনিনি।

যতদূর স্মরণ করতে পারি, ২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থানটি স্বাধীনতা বা বিজয় দিবসকে ছোট করার জন্য সংঘটিত হয়নি। একটি ন্যায়ভিত্তিক সমাজ গঠনের অঙ্গীকারে শামিল হয়েছিল দেশের আপামর মানুষ। এদের সবাই একই ভাবনা নিয়ে সামনের পথে এগোয়নি। সরকার পতন হলে কী হতে পারে কৌশল—এ রকম ভাবনাও কারও মাথায় ছিল বলে মনে হয় না। দেশের ছাত্র-জনতা এই আন্দোলনে যোগ দিয়েছিল প্রাণের তাগিদে। যখন লাশ পড়ছিল একের পর এক, তখন রাজপথকেই বেছে নিয়েছিল তারা। কিন্তু এই প্রচণ্ড আলোড়নে সরকার পড়ে যাবে—এ রকম ভাবনা হয়তো তাদের ছিল না। ছিল না সে রকম কোনো প্রস্তুতি। তাই গণ-অভ্যুত্থানের বিজয় কিছু প্রগাঢ় নীতিকথার জন্ম দিলেও রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক কোনো দিশা দেয়নি। শুধু কি নীতিকথা? অশ্রাব্য উচ্চারণ করে লাইক-কমেন্টে ছেয়ে যাওয়া একদল নেতার সন্ধান আজকাল পাওয়া যাচ্ছে, যাঁরা টিনের চালে কাউয়ার পাশাপাশি আরও কত কিছু দেখছেন! বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন করতে করতে চাঁদাবাজি করার পথে শামিল হচ্ছেন। আর এই ধরনের অরাজকতা চালানোর পাশাপাশি মুক্তিযোদ্ধাদের গলায় জুতার মালা পরিয়ে প্রচার করছেন গণমাধ্যমে। তাঁরা ভাবছেন, স্বাধীনতার সব অর্জনকে কটাক্ষ করতে পারলে এ দেশের মানুষ একদিন ‘লড়কে লেঙ্গে পাকিস্তান’-এর সহযাত্রী হয়ে উঠবে আবারও।

কী হতে কী হয়ে গেল, এখন স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস নিয়ে কথা বলতে ভয় পায় মানুষ। একটি স্বাধীন দেশে স্বাধীনতা বা বিজয় শব্দগুলো কি নিষিদ্ধ হয়ে গেল নাকি? গত বছর শিল্পকলা একাডেমি যখন বিজয় উৎসব পালন করছিল, তখন ভয়ে ভয়ে তারা ‘বিজয় উৎসব’কে ‘ডিসেম্বর উৎসব’ লিখেছিল, সে কথা কি মনে আছে কারও? পরে প্রবল আপত্তির মুখে আবার তারা ‘বিজয় উৎসব’-এ ফিরে এসেছিল। স্বাধীনতা আর বিজয় শব্দ দুটি উচ্চারণ করার মতো বুকের পাটা নেই একটি সরকারি প্রতিষ্ঠানের—এটা যে কত বড় দুর্ভাবনার ব্যাপার, তা কি বলে বোঝানো যাবে?

১৯৭১ সালে যে ঘটনা ঘটেছিল এই ভূখণ্ডে, তার ছাপ পাওয়া যায় সারা বিশ্বে। সে সময়কার বিশ্বের দিকে তাকালে বোঝা যায়, কোন কোন ব্যাপার নিয়ে অস্থিরতা চলছিল। মনে করিয়ে দিই, রাশিয়া-চীনের দ্বন্দ্বের কারণে কমিউনিস্ট দুনিয়ার ভাঙন, পরাশক্তি হিসেবে মার্কিনদের বিজয়যাত্রা, সাম্রাজ্যবাদের বিকাশ, উপনিবেশগুলো ভেঙে নতুন নতুন স্বাধীন দেশ গঠন এবং তার কোনো কোনো দেশের বাম দিকে ঘেঁষা রাজনীতি, কিছু কিছু দেশে নব্য স্বৈরাচারের আবির্ভাব ইত্যাদি নানা প্যাঁচে পড়ে অস্থির হয়ে পড়েছিল বৈশ্বিক রাজনীতি। ভিয়েতনাম যুদ্ধ তখন আলোচনায় রয়েছে। এ রকমই একটা অবস্থায় ষাটের দশকের মধ্যভাগে ১৯৬৬ সালে শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষণা করলেন ৬ দফা। সেই ৬ দফা নতুন কিছু ছিল না। ১৯৪০ সালের লাহোর প্রস্তাবে কিংবা ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্টের ইশতেহারেও এই আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসনের বিষয়টির দেখা মেলে। ১৯৬৬ সালের দিকে পশ্চিম পাকিস্তানিদের চালানো শোষণ-বঞ্চনার বিষয়টি আমূল প্রকাশিত হয়ে পড়লে তা বাঙালির আবেগকে তাড়িত করেছিল। ফলে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা, উনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে এই ভূখণ্ডের মানুষ জানান দিয়েছিল, মাথায় হাত বোলানোর রাজনীতি আর চলবে না এখানে।

এত বড় বড় দল থাকতে ১৯৭০ সালের নির্বাচনে কী করে আওয়ামী লীগ এত বড় বিজয় পেল, সে ইতিহাস নানাভাবে লেখা হয়েছে। এটাই ছিল বাংলার রায়। দেশের জনগণ সেই রায়ে ক্ষমতা দিয়েছিল ক্যারিশম্যাটিক নেতা শেখ মুজিবুর রহমানকে। সলিমুল্লাহ খানদের গুরু আহমদ ছফার বিখ্যাত উক্তিটি এখানে প্রযোজ্য। ছফা লিখেছেন, ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতা এবং শেখ মুজিবুর রহমান একটি যমজ শব্দ। একটাকে বাদ দিয়ে অন্যটার অস্তিত্ব কল্পনাও করা যায় না। শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি। যারা এই সত্য অস্বীকার করবে, তাদের সঙ্গে কোনো রকমের বিতর্ক, বাদ-প্রতিবাদ করতেও আমরা রাজি হব না।’ ভুল শোনেননি, ছফা এ কথাই বলেছেন। এবং এখানেই তা শেষ করেননি। তিনি যোগ করেছেন, ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতার সঙ্গে শেখ মুজিবের নাম এমন অচ্ছেদ্যভাবে যুক্ত হয়ে পড়েছে, যত পণ্ডিত হোন না কেন ব্যাখ্যা বিশ্লেষণের নিপুণতা এবং যুক্তির মারপ্যাঁচ দেখিয়ে কোনো ব্যক্তি একটা থেকে আর একটাকে পৃথক করতে পারবেন না।’

ছফাকে এসব কথা বলতে হলো কেন? তিনি তো তাঁর শিষ্যদের মতোই শেখ মুজিবকে অগ্রাহ্য করে অথবা জাতির ভিলেন বানিয়ে উপস্থাপন করতে পারতেন। কেন ছফা সেটা করেননি? আমার মনে হয়, ছফা ভেবে দেখেছেন, ইতিহাস নিয়ে মিথ্যে তথ্য দিলে ইতিহাসের কোনো না কোনো পর্যায়ে এসে তা ধরা পড়বেই। তখন আত্মপরিচয়েই টান পড়বে। শেখ মুজিব সম্পর্কে নানা ধরনের নেতিবাচক মন্তব্য করলেও ছফা স্বাধীনতা ও শেখ মুজিবের পারস্পরিক সম্পর্ক নিয়ে নির্মোহ মতামত দিয়েছেন।

ইতিহাসবিমুখ পাকিস্তানপ্রেমী অর্বাচীনেরা এই স্বাধীন বাংলাদেশে বসে ইতিহাস বিকৃতি করে চলেছেন। এতে আমাদের তরুণসমাজ কতটা বিভ্রান্ত হবে, সে প্রশ্নের উত্তর এত দ্রুত পাওয়া যাবে না।

বিষয়টি বুঝতে চাইলে কয়েকটি বিষয়ে আলোচনা করা দরকার। আমাদের সমাজে এই প্রতীকগুলো কীভাবে আছে, তা বুঝতে পারলেই স্বাধীনতা বা বিজয় আমাদের দেশে এখন কোন মর্যাদায় আছে, তা বোঝা যাবে। স্বাধীনতা বা দেশপ্রেমকে হুমকির মুখে ফেলতে হলে এমন কিছু কাজ করতে হয়, যাতে শুরুতেই ভয় আর আতঙ্ককে ছড়িয়ে দেওয়া যায়। তারপর প্রতিষ্ঠিত সত্যগুলো নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়। পতাকা, জাতীয় সংগীত নিয়ে বাজে কথা বলা—এভাবেই আস্তে আস্তে প্রতিক্রিয়াশীল চক্র তাদের পায়ের নিচে মাটি খোঁজে।

পাঠক, আপনি মনে করুন একটি পরীক্ষা দিতে বসেছেন। আমি কিছু প্রশ্ন রেখে যাব, পাঠক এই প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজে নিজেই এই পরীক্ষার প্রশ্নগুলোয় নম্বর দেবেন। তাঁরাই নির্ধারণ করবেন, কেমন আছে আজকের বাংলাদেশ।

প্রশ্নগুলো এমন: কেমন আছে দেশের বিচারব্যবস্থা? কেমন আছে নির্বাচন কমিশন? তারা কি স্বাধীনভাবে নিজেদের কাজ করে যাচ্ছে?

গণমাধ্যমের স্বাধীনতা কোন অবস্থায় আছে? সাংবাদিক-লেখক-গবেষকেরা কি নির্দ্বিধায় নির্বিঘ্নে কাজ করার মতো পরিবেশ পাচ্ছেন?

সমাজে কোনো বড় সংঘাত নেই তো? ঐক্যের কথা বলা হচ্ছে সব জায়গা থেকে। দেশের ডাকসাইটে স্টেকহোল্ডারদের মধ্যে সেই ঐক্য কি দেখা যাচ্ছে? বিভাজনের রাজনীতিকে কি সরিয়ে দেওয়া গেছে? সন্দেহ-অবিশ্বাসের রাজনীতি কি আছে, নাকি বিদায় নিয়েছে?

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে সাধারণ জনগণ কি সন্তুষ্ট? মব বলুন আর চাপ প্রয়োগের রাজনীতি বলুন, সেগুলো কি জনমনে ভীতি ছড়াচ্ছে?

আপনি কি এমন কিছু লক্ষ করছেন, যেখানে সত্য ও মিথ্যাকে কাছাকাছি রেখে নাগরিকদের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতাকে প্রশ্নের মুখে ফেলে দেওয়া হয়?

আপনি কি সামাজিক বন্ধন ভেঙে ফেলার প্রবণতা লক্ষ করেছেন? আউল-বাউলের দেশে গানবাজনা কি হুমকির মুখে পড়েছে? ‘তৌহিদি জনতা’ আদতে কাদের কোন লক্ষ্য বাস্তবায়ন করছে? সরকার কি এদের বিরুদ্ধে কোনো কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে? উত্তেজনা ছড়ায় যারা, তাদের পুলিশ ছেড়ে দিচ্ছে, আর যারা অত্যাচারিত হয়েছে, তাদের ধরে নিয়ে যাচ্ছে—এ রকম কিছু কি আপনার নজরে পড়েছে?

সমষ্টিগত শক্তি ভেঙে দেওয়ার জন্য কোনো বাঁশিওয়ালা কি বাঁশি বাজাচ্ছে? আপনি কি লক্ষ করেছেন শুধু ধর্মীয় সংখ্যালঘুই নয়, নানাভাবে যাঁরা সংখ্যালঘু, তাঁদের মারধর করে সংখ্যাগুরু অংশ আখের গুছিয়ে নিচ্ছে?

আপনি কি বর্তমান রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এমন কোনো অঙ্গীকার দেখতে পাচ্ছেন, যাতে তাদের ইশতেহার অনুযায়ী জনগণ একটি ‘সোনার বাংলা’য় বসবাস করবে?

প্রশ্নগুলোর উত্তর নিজে লিখুন। প্রতিটি প্রশ্নের জন্য ১০ নম্বর বরাদ্দ করুন। যোগফল মেলান, তারপর একটা সিদ্ধান্তে আসুন।

আপনি তখন বুঝতে পারবেন, গণ-অভ্যুত্থানকে কেউ কেউ স্বাধীনতাবিরোধিতার জায়গায় সুকৌশলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। যে তরুণেরা সেই অপচেষ্টা রুখে দিতে পারে, সে তরুণদের প্রতীক্ষায় আছি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপি

জামায়াতে যোগ দিলেন বিএনপি থেকে পাঁচবার বহিষ্কৃত আখতারুজ্জামান

ব্রিটেনে নাগরিকত্ব হারানোর ঝুঁকিতে কোটি মুসলিম, বেশির ভাগই বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তানের

আজকের রাশিফল: চায়ের বিল না দেওয়া বন্ধুদের সাহায্য করুন, সন্ধ্যার দিকে ভালো খবর

মা-বাবাকে নির্যাতন, ছেলেকে কোমর পর্যন্ত মাটিতে পুঁতে রাখল প্রতিবেশীরা

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

পুতিনের ভারত সফর: আঞ্চলিক ও বিশ্বরাজনীতিতে কী বার্তা দেয়

ড. মঞ্জুরে খোদা
রাশিয়া ঐতিহাসিকভাবে ভারতের প্রতিরক্ষা অংশীদার—পাকিস্তান যত আমেরিকার দিকে ঝুঁকেছে, ভারত তত কাছে পেয়েছে রাশিয়াকে।
রাশিয়া ঐতিহাসিকভাবে ভারতের প্রতিরক্ষা অংশীদার—পাকিস্তান যত আমেরিকার দিকে ঝুঁকেছে, ভারত তত কাছে পেয়েছে রাশিয়াকে।

গত সপ্তাহে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ভারত সফর ও উভয় নেতার শীর্ষ বৈঠক অনেক কিছুরই ইঙ্গিত করে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী পুতিনকে যেভাবে আলিঙ্গন করেছেন, স্বাগত জানিয়েছেন, একই গাড়িতে যাত্রা করেছেন, তা আলাস্কায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে পুতিনের সাক্ষাতের কথাই মনে করিয়ে দেয়। মোদি প্রেসিডেন্ট পুতিনকে সময়ের পরীক্ষিত বন্ধু, পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও আস্থার প্রতীক হিসেবে বর্ণনা করেন। এই আস্থা ও হৃদ্যতা ভারত-রাশিয়া সম্পর্কের গভীর মাত্রাকেই নির্দেশ করে। পুতিন তাঁর ক্ষমতা গ্রহণের ২৫ বছরে ১০ বার ভারত সফর করেছেন। তবে ২০২২ সালে ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর এটিই ছিল তাঁর প্রথম ভারত সফর।

পুতিনের এই ভারত সফর নিছক কোনো রুটিন বিষয় ছিল না। ভারত-রাশিয়া সম্পর্কের ধারাবাহিকতা আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ বার্তা প্রদান করে। তাঁদের সাক্ষাৎ ছিল বিশ্বরাজনীতির আগ্রহের বিষয়, কেননা ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর শুল্ক নিয়ে মোদির সঙ্গে যে সম্পর্কের টানাপোড়েন চলছিল ও বরফ গলছিল, তখনই পুতিন ভারত সফর করলেন। প্রশ্ন হচ্ছে, ভারত-রাশিয়া এই বৈঠকে কে কী অর্জন করল, তার কয়েকটি দিক আলোচনা করা যাক।

প্রতিরক্ষা সহযোগিতা

পুতিনের এই সফরের মাধ্যমে ভারত তাদের প্রতিরক্ষা সহযোগিতার বিষয়টি পুনরায় নিশ্চিত করল। রাশিয়া এখনো ভারতের প্রধান সমরাস্ত্রের সরবরাহকারী। যদিও ১৯৭০-৮০-এর দশকে ভারতের অস্ত্রের প্রায় ৮০ ভাগই রাশিয়া সরবরাহ করত। পুতিন এবারের সফরে ভারতকে এস ৫০০ আন্তমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা সিস্টেম হস্তান্তর, অতিরিক্ত সামরিক প্ল্যাটফর্ম, হেলিকপ্টার ও ইঞ্জিন কো-প্রোডাকশনসহ দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্পগুলো নিয়ে আবারও তাদের প্রতিশ্রুতি নিশ্চিত করেছে। ‘প্রিভিলেজ কম্প্রিহেনসিভ স্ট্র্যাটেজিকস পার্টনারশিপ’ চুক্তির আওতায় রাশিয়ার সেনাবাহিনী ভারতের যেকোনো স্থল, বিমান ও নৌবন্দরকে তাদের প্রয়োজনে ব্যবহার করতে পারবে। সামরিক প্রয়োজনে একে অন্যের ভূমিও ব্যবহার করতে পারবে। মার্কিন নিষেধাজ্ঞার ঝুঁকি সত্ত্বেও রাশিয়ার সঙ্গে এই প্রতিরক্ষা বোঝাপড়ার মাধ্যমে ভারত তাদের কৌশলগত নিজস্বতা নিশ্চিত করল।

জ্বালানি ও অর্থনৈতিক সুবিধা

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ-পরবর্তী পরিস্থিতিতে ভারত রাশিয়া থেকে অনেক কম মূল্যে বিপুল তেল আমদানি করছে। এই সফরের মাধ্যমে ভারত তাদের জ্বালানিনিরাপত্তা, পরিশোধন সক্ষমতা, দীর্ঘমেয়াদি তেল-গ্যাস চুক্তিকে আরও শক্তিশালী করল। রাশিয়ার সস্তা অপরিশোধিত তেল ভারতের মুদ্রাস্ফীতি কমাতে, বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় ও সঞ্চয় করতে এবং পরিশোধন মুনাফা বাড়াতে সাহায্য করছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে বিশ্বে জ্বালানির বাজার অস্থিতিশীল হলে রাশিয়ার জ্বালানি শক্তি এই অঞ্চলে স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে ভবিষ্যতেও ভূমিকা রাখবে।

বাণিজ্য বৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ

২০২৪-২৫ অর্থবছরে ভারত-রাশিয়ার দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য প্রায় ৬৮ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। যদিও এই বাণিজ্য ভারসাম্যমূলক নয়। রাশিয়ায় ভারতীয় আমদানি প্রায় ৫ বিলিয়ন ডলার। তবে পুতিন-মোদি শীর্ষ সম্মেলনে উভয় দেশ ২০৩০ সালের মধ্যে এই বাণিজ্য ১০০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এ ক্ষেত্রে বাণিজ্যপণ্যের তালিকা সম্প্রসারণ ঘটবে।

রাশিয়া ভারতীয় সরঞ্জাম, কাঁচামাল এবং খাদ্যপণ্যের রপ্তানি বৃদ্ধিসহ দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য প্রসারিত ও বৈচিত্র্যময় করার উপায়গুলো অনুসন্ধান করবে। অর্থনীতি, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি এবং সাংস্কৃতিক সহযোগিতার ওপর ভারত-রাশিয়া আন্তসরকারি কমিশনও গঠিত হবে। মহাকাশ গবেষণা ও ভারত-রাশিয়ার যৌথ সামরিক যন্ত্রাংশ নির্মাণ এবং ভারত তা তৃতীয় কোনো দেশে নিজের উৎপাদিত পণ্য বলে বিক্রিও করার সুবিধা পাবে। ভারতে রুশ নকশায় দ্বিতীয় বৃহত্তম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের পরিকল্পনার কথা জানানো হয়।

ভূরাজনীতি ও কূটনৈতিক প্রভাব বৃদ্ধি

রাশিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা ভারতের জন্য চীন-রাশিয়া ব্লকের মধ্যে কিছুটা ভারসাম্য তৈরি করবে। ভবিষ্যতে চীন সীমান্ত সমস্যায় রাশিয়ার নিরপেক্ষতা বজায় রাখা ভারতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মধ্য এশিয়া, আর্কটিক, নর্থ-সাউথ ট্রান্সপোর্ট করিডর—এইসব কৌশলগত এলাকায় সহযোগিতা বাড়ানো ভারতের দীর্ঘমেয়াদি স্বার্থ রক্ষায় সহজ হবে।

বর্তমান বিশ্ববাস্তবতায় রাশিয়া চীনের ওপর ক্রমেই নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে এবং একে অন্যের বন্ধুত্ব ও আস্থার সম্পর্ক তারা নিজেরাই ঘোষণা করেছে। এই পরিস্থিতিতে রাশিয়া-ভারতের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ বজায় রাখার মাধ্যমে চীনকেও জানিয়ে দেওয়া যে, রাশিয়া এখনো ভারতের গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত অংশীদার।

রুশ প্রেসিডেন্টের ভারত সফরের আগে ভারতের সাংবাদিকেরা পুতিনের মুখপাত্র দমিত্রি পেসকভকে প্রশ্ন করেছিলেন, ভারত ও চীনের মধ্যে যদি কোনো সংঘাত ও যুদ্ধ হয়, সে ক্ষেত্রে ভারত কি আশা করতে পারে যে রাশিয়া তাদের পাশে দাঁড়াবে? তিনি বলেছিলেন, ‘আমরা আশা করি, ভারতের সঙ্গে চীনের যে বিরোধগুলো আছে, সেগুলো তারা মিটিয়ে ফেলবে। এ ক্ষেত্রে রাশিয়া একটি প্রস্তাবও দিয়েছিল হিমালয়ের ওপর দিয়ে সীমান্ত রেখা নিয়ে যে সমস্যা, সেটাকে তারা জিপিএস পদ্ধতি ব্যবহার করে সমাধান করতে পারে। সে ক্ষেত্রে রাশিয়া সহায়তা করতে পারে।’

পাকিস্তান রাশিয়া থেকে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কিছু সামরিক ও জ্বালানি সুবিধা নিতে চেয়েছিল, কিন্তু সেটা হয়ে ওঠেনি। পুতিনের ভারত সফর পরিষ্কার করে দিয়েছে যে দক্ষিণ এশিয়ায় রাশিয়ার মূল অংশীদার এখনো ভারতই। এটি ভারতের আঞ্চলিক নেতৃত্বের অবস্থানকে আরও সুদৃঢ় করবে।

ব্রিকস সম্প্রসারণের সময় ভারত-রাশিয়া সমন্বয় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। ব্রিকসের নেতৃত্বে জাতিসংঘের স্থায়ী সদস্যপদের ভারতের আকাঙ্ক্ষাকে রাশিয়ার সমর্থন ও সহযোগিতার প্রতিশ্রুতির কথাও জানা গেছে। গ্লোবাল সাউথে নেতৃত্বের প্রতিযোগিতায় ভারত দেখাতে চায় যে তার পশ্চিমা ও অ-পশ্চিমা উভয় ব্লকের ওপর প্রভাব আছে।

ভারতের যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য দেশের সঙ্গে সম্পর্কের সমীকরণ

যুক্তরাষ্ট্র ভারতের প্রধান নিরাপত্তা অংশীদার হলেও ভারত রাশিয়ার সঙ্গে এই সংযোগ ও সম্পর্কের মাধ্যমে জানিয়ে দিয়েছে যে মিত্রতা মানেই নির্ভরতা নয়, নিজেদের স্বকীয়তাকে বিসর্জন দেওয়া নয়। ভারতের এই অবস্থান ওয়াশিংটনের কাছে স্পষ্ট

বার্তা দেয় যে ‘India will cooperate, but not at the cost of its autonomy.’ ভারত-রাশিয়ার এই কৌশলগত সম্পর্ক দক্ষিণ এশিয়া ও ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলের সমীকরণে নতুন ভারসাম্য তৈরি করবে।

যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ, জাপানসহ পশ্চিমা দেশগুলোর চাপ থাকা সত্ত্বেও ভারত রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখার মাধ্যমে দেখিয়েছে যে ভারত কারও বা কোনো বলয়ে আবদ্ধ বা দায়বদ্ধ নয়। ভারতের এই স্বতন্ত্র অবস্থান বলে দেয়, জাতীয় স্বার্থ অনুযায়ী তারা স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম এবং এটি তাদের একটি মূলনীতির দৃঢ় প্রকাশ।

সামগ্রিক মূল্যায়ন

পুতিনের ভারত সফর একটি ভূকৌশলগত বার্তা—ভারত তার বহুমুখী বৈদেশিক নীতি ও কৌশলগত স্বাতন্ত্র্য বজায় রেখে চীন, যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে এক প্রভাবশালী মধ্যম শক্তি হিসেবে অবস্থান করছে। পুতিনের এই সফরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বার্তা হচ্ছে, ভারত রাশিয়ার সঙ্গে জ্বালানি, প্রতিরক্ষা ও ভূরাজনীতিতে ঘনিষ্ঠ থাকবে, একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে অংশীদারত্বও বজায় রাখবে। অর্থাৎ ভারত কারও পরনির্ভর নয়; বরং নিজস্ব স্বার্থের ভিত্তিতে ‘ভারসাম্যপূর্ণ ক্ষমতার রাজনীতি করবে। রাশিয়া এই সম্পর্ককে ব্যবহার করে পশ্চিমা, বিশেষ করে ইউরোপ ও আমেরিকার একচেটিয়া কূটনীতির বিকল্প হিসেবে ভারতকে দেখছে।

কয়েক মাস ধরে আমেরিকার পক্ষ থেকে ভারতকে রাশিয়ার তেল আমদানি ও রাশিয়া-ভারত সম্পর্কের চাপ তৈরি করেছে শুল্ক বৃদ্ধির অস্ত্রকে ব্যবহার করে। তা সত্ত্বেও ভারত তাকে গুরুত্ব না দিয়ে তাদের নিজস্ব নীতিতে অগ্রসর হয়েছে। রাশিয়া ঐতিহাসিকভাবে ভারতের প্রতিরক্ষা অংশীদার—পাকিস্তান যত আমেরিকার দিকে ঝুঁকেছে, ভারত তত কাছে পেয়েছে রাশিয়াকে। এ জন্যই দেশ দুটি সামরিক ও সামরিক প্রযুক্তিগত অংশীদারত্বের অন্যতম প্রধান বিষয় হিসেবে উল্লেখ করেছে। পুতিনের সফরের আগে এক ব্রিফিংয়ে ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেছেন, ভারতের সঙ্গে যা ভাগ করে নেওয়া যেতে পারে, তার সবই ভাগ করে নেওয়া হবে। পুতিনও এই সফরের মাধ্যমে রাশিয়াকে একঘরে করার যে পশ্চিমা প্রচার ছিল, তার অনেকটা ভুল প্রমাণ করেছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপি

জামায়াতে যোগ দিলেন বিএনপি থেকে পাঁচবার বহিষ্কৃত আখতারুজ্জামান

ব্রিটেনে নাগরিকত্ব হারানোর ঝুঁকিতে কোটি মুসলিম, বেশির ভাগই বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তানের

আজকের রাশিফল: চায়ের বিল না দেওয়া বন্ধুদের সাহায্য করুন, সন্ধ্যার দিকে ভালো খবর

মা-বাবাকে নির্যাতন, ছেলেকে কোমর পর্যন্ত মাটিতে পুঁতে রাখল প্রতিবেশীরা

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

কেন থমকে যাচ্ছে মেট্রোরেল

সম্পাদকীয়
কেন থমকে যাচ্ছে মেট্রোরেল

ঢাকা শহরের যানজটের সমস্যা থেকে কিছুটা হলেও মুক্তি দিয়েছে মেট্রোরেল। তবে এটা চালুর প্রায় দেড় বছরে এই আধুনিক গণপরিবহনব্যবস্থা মাঝে মাঝে বন্ধ হয়েছে। সেটা একটা ভাবনার বিষয়। মূলত এই সময়ের মধ্যে অন্তত ১০ বার মেট্রোরেল চলাচলে বাধার সৃষ্টি হয়েছে, যার বেশির ভাগই জনগণের গাফিলতির কারণে হয়েছে।

এই দেড় বছরে মেট্রোরেল লাইনে কাপড়, ব্যাগ, ড্রোন, তার নিক্ষেপের কারণে ট্রেন চলাচল ব্যাহত হয়েছে। এখনই যদি এসব সমস্যা সমাধানে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ না করা যায়, তাহলে ভবিষ্যতে আরও বড় দুর্ঘটনার ঝুঁকি তৈরি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। একটা ভালো ব্যাপার যে, মেট্রোরেলের নিরাপত্তাব্যবস্থা এমন যে রেললাইনে সামান্যতম বাধা সৃষ্টি হলেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে ট্রেন থেমে যায়। এটি দুর্ঘটনা এড়ানোর জন্য ভালো দিক হলেও, মানবসৃষ্ট কারণে ঘন ঘন এই থমকে যাওয়া আধুনিক এই ব্যবস্থার কার্যকারিতা নিয়ে আশঙ্কা তৈরি হওয়া স্বাভাবিক ব্যাপার। তবে কর্তৃপক্ষকে সেসব সমস্যা সমাধানের দিকে দৃষ্টি দেওয়া জরুরি।

জনগণ দ্বারা সৃষ্ট সমস্যা সমাধানে করণীয় নিয়ে এখনই ভাবতে হবে কর্তৃপক্ষকে। তবে প্রযুক্তিগত সমস্যাও যে আছে, তা অস্বীকার করার সুযোগ নেই। কিছুদিন আগে ফার্মগেট এলাকায় বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ে একজনের নিহত হওয়ার ঘটনাটি এই আধুনিক পরিবহনব্যবস্থার প্রতি অনাস্থা তৈরি করেছে। বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ার ঘটনায় ১১ ঘণ্টা পর্যন্ত ট্রেন চলাচল বন্ধ ছিল। যান্ত্রিক ত্রুটি হতেই পারে, তবে গুরুত্বপূর্ণ নিরাপত্তা সরঞ্জাম বারবার বিকল হওয়া বা খুলে পড়ার ঘটনাটি মেট্রোরেলের কারিগরি তদারকি ও রক্ষণাবেক্ষণ পদ্ধতি নিয়ে উদ্বেগ তৈরি করেছে। এ ক্ষেত্রে প্রযুক্তিগত নজরদারি ও রক্ষণাবেক্ষণে আরও গুরুত্ব দেওয়া আবশ্যক। এক সূত্র থেকে জানা যায়, এই নিহতের ঘটনা এবং অন্যান্য ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে মেট্রোরেলে আগের তুলনায় ১০ শতাংশ যাত্রী কমে গেছে।

যোগাযোগ বিশেষজ্ঞরা মেট্রোরেল চলাচল স্বাভাবিক রাখতে কিছু কার্যকর পদক্ষেপের পরামর্শ দিয়েছেন। যেমন মেট্রোরেলের লাইনে বস্তু শনাক্ত করতে ‘অবজেক্ট ডিটেকশন সেন্সর’ ও ‘এআই-চালিত সিসিটিভি’ স্থাপন করা, ড্রোন পড়া প্রতিরোধে ‘ড্রোন ডিটেকশন রাডার’ ও ‘জিওফেন্সিং সিস্টেম’ ব্যবহার করার প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া। এ ছাড়া বৈদ্যুতিক লাইনে সুরক্ষা নেট বসালে বাইরে থেকে তার বা বস্তু নিক্ষেপ ঠেকানো সম্ভব।

মেট্রোরেল দেশের সম্পদ। জনগণের মধ্যে সে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এর সুরক্ষা নিশ্চিত করা সম্ভব। ডিএমটিসিএলকে প্রযুক্তিগত ত্রুটিগুলো দ্রুত সমাধান এবং রক্ষণাবেক্ষণে সর্বোচ্চ মান বজায় রাখতে হবে। একই সঙ্গে জনসচেতনতা সৃষ্টিতে ব্যাপক প্রচারণা চালাতে হবে, যাতে মানুষ বুঝতে পারে তাদের সামান্য ভুল বা অসচেতনতা হাজার হাজার যাত্রীর ভোগান্তি এবং মারাত্মক দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে। সচেতনতা ও প্রযুক্তিগত সুরক্ষা—এই দুইয়ের সমন্বয়েই কেবল মেট্রোরেলের মসৃণ ও নিরাপদ চলাচল নিশ্চিত করা সম্ভব। এই আধুনিক পরিষেবা যেন মাঝে মাঝে থমকে যাওয়ার দুর্নাম থেকে মুক্তি পায়, সেই প্রত্যাশা আমাদের।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপি

জামায়াতে যোগ দিলেন বিএনপি থেকে পাঁচবার বহিষ্কৃত আখতারুজ্জামান

ব্রিটেনে নাগরিকত্ব হারানোর ঝুঁকিতে কোটি মুসলিম, বেশির ভাগই বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তানের

আজকের রাশিফল: চায়ের বিল না দেওয়া বন্ধুদের সাহায্য করুন, সন্ধ্যার দিকে ভালো খবর

মা-বাবাকে নির্যাতন, ছেলেকে কোমর পর্যন্ত মাটিতে পুঁতে রাখল প্রতিবেশীরা

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত