Ajker Patrika

সেনার পাশাপাশি সহায়তাও পাঠাচ্ছে রাশিয়া

বিজন সাহা
আপডেট : ২৮ এপ্রিল ২০২২, ১০: ৫৯
সেনার পাশাপাশি সহায়তাও পাঠাচ্ছে রাশিয়া

যুদ্ধের পাশাপাশি সব সময়ই কাজ করে হিউম্যানিটারিয়ান এইডস। রাশিয়া ইতিমধ্যে কয়েক হাজার টন সাহায্য পাঠিয়েছে। যখনই কোনো জনপদ রুশ সেনাদের অধীনে আসে, তারা প্রথমেই যারা দীর্ঘদিন খাদ্যাভাবে ভুগছে, সেখানকার সেই সব সাধারণ মানুষদের মধ্যে খাদ্য ও অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি বণ্টন করে। আর মানবতার কথা বলে মুখে ফেনা তোলা পশ্চিমা বিশ্ব অস্ত্র ছাড়া কী দিচ্ছে? এমনকি রাশিয়া যখন মানবিক করিডর খুলছে, তখন বিভিন্নভাবে সেখানে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে। 

আসলে একটু গভীরভাবে ভাবলে দেখা যাবে, এই যুদ্ধ শুধু যুক্তরাষ্ট্রের ইউরোপীয় বাজার দখলের যুদ্ধ নয়, ব্রিটেনের ইইউ-বিরোধী যুদ্ধও। আসুন একটু পেছনে ফিরে তাকাই। নেপোলিয়নের ফ্রান্স প্রায় বিনা যুদ্ধে সমগ্র কন্টিনেন্টাল ইউরোপ দখল করে। ব্রিটেনের প্রধান শত্রু কে? নেপোলিয়ন। ১৮১২ সালে তাঁকে উসকে দেওয়া হয় রাশিয়ার বিরুদ্ধে। ফলাফল সবার জানা। 

এভাবেই ব্রিটেন প্রথম ইইউ ধ্বংস করেছিল। হ্যাঁ, সেটা ছিল প্রথম ইউরোপীয় ইউনিয়ন–নেপোলিয়ন সেটাই করতে চেয়েছিলেন। এরপর ১৯৩৯-৪১ সালে হিটলার সমগ্র কন্টিনেন্টাল ইউরোপ প্রায় বিনা যুদ্ধে দখল করে দ্বিতীয় ইইউর জন্ম দেন। ১৯৪১ সালে জার্মানির রাশিয়া আক্রমণের পেছনে ছিল চার্চিলের প্ররোচনা। সেই যুদ্ধ যে শুধু রাশিয়ার সঙ্গে জার্মানির ছিল না, তার প্রমাণ আমরা পাব স্তালিনগ্রাদের যুদ্ধের ইতিহাস থেকে। সেখানে রাশিয়ার বিরুদ্ধে জার্মানির পাশে যুদ্ধ করেছিল ইতালি, রোমানিয়া ও ক্রোয়েশিয়ার কয়েক ব্যাটালিয়ন সৈন্য। ১৮১২ সালে ব্রিটেন ইউরোপের দুই প্রধান শক্তি ফ্রান্স ও রাশিয়াকে পরস্পর বিধ্বংসী যুদ্ধে নামিয়েছিল, ১৯৪১ সালে আবার ছিল ইউরোপের দুই প্রধান শক্তি জার্মানি ও রাশিয়া। এভাবেই ডিভাইড অ্যান্ড রুল মেথডে ব্রিটেন সারা বিশ্বকে পদানত করার চেষ্টা করেছে। এবারও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। ব্রিটেন ইইউ থেকে বেরিয়ে গেছে। তখন থেকেই সুযোগ খুঁজছে ইইউকে জব্দ করতে। এখন সে ইউক্রেনের হাত দিয়ে রাশিয়া ও ইইউকে নতুন যুদ্ধে নামিয়েছে। সঙ্গে পেয়েছে যুক্তরাষ্ট্রকে। লাভ? একই সঙ্গে বহু যুগের শত্রু রাশিয়া ও কন্টিনেন্টাল ইউরোপকে দুর্বল করা। সে ক্ষেত্রে সে আবারও সফল। আবারও ডিভাইড অ্যান্ড রুল। 

ইদানীং অনেক কথা হচ্ছে বুচা নিয়ে, যেখানে নাকি রুশ সৈন্যরা নিরপরাধ মানুষদের হত্যা করেছে। সেখানে আমরা কী দেখি? ইস্তাম্বুলে একধরনের ঐকমত্যে আসার পরই ব্রিটেন ঘোষণা করে, তারা রাশিয়ার ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলবে না। একই সঙ্গে ইউক্রেনকে আদেশ দেয় তড়িঘড়ি করে কোনো চুক্তিতে স্বাক্ষর না করতে। এখন ভ্লাদিমির জেলেনস্কির নিরাপত্তার পুরোটাই ব্রিটিশ কমান্ডোর অধীনে। যদিও ৩০ মার্চ রুশ সৈন্য বুচা ত্যাগ করে এবং এরপর স্থানীয় মেয়র সব ঠিকঠাক আছে বলে ঘোষণা করেন এবং পরবর্তী কয়েক দিন কোনো হত্যাকাণ্ডের খবর পাওয়া যায় না। কয়েক দিন বাদে কোত্থেকে যেন সেখানে লাশ পড়ে থাকতে দেখা যায় রাস্তার পাশে। রাশিয়া সেই লাশ কার, কবে, কীভাবে মারা গেল—এসব পরীক্ষার দাবি জানালেও পশ্চিমা বিশ্ব সেই দাবি উপেক্ষা করে। তাই সেটা যে প্রভোকেশন, রাশিয়াকে মিথ্যা অভিযোগে অভিযুক্ত করার পাঁয়তারা, সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। সিরিয়ায় আমরা দেখেছি হোয়াইট হেলমেট কীভাবে ফেইক ভিডিও করে। ইউক্রেনও তার ব্যতিক্রম নয়। সবাই তো এক গুরুরই শিষ্য। এ ছাড়া ইউক্রেনে জেনেভা কনভেনশন ভঙ্গ করে যুদ্ধবন্দীদের হত্যার যে ভিডিও দেখানো হয়েছে, সেখানেও এমআই-৬-এর প্রিন্ট চোখে পড়ে। যখনই রাশিয়া এ সমস্ত খবর যে সত্য নয়, সেটা প্রমাণ করতে চাইছে; বিভিন্নভাবে তাকে সেটা করতে বাধা দেওয়া হচ্ছে। এমনকি জাতিসংঘে পর্যন্ত এ নিয়ে শুনানি স্থগিত রাখা হয়েছে। কারণ, ঘটনার সত্য-মিথ্যা নিয়ে তাদের মাথাব্যথা নেই। উদ্দেশ্য একটাই—রাশিয়াকে বিশ্বের মানুষের কাছে হেয় করা। গোয়েবলস বলেছিল, কোনো মিথ্যা যদি বারবার বলা হয়, সেটা সত্যে পরিণত হয়। এরা তো সেই গোয়েবলসেরই উত্তরসূরি। 

আজ পাকিস্তানে ইমরান খান সরকারের পতন হলো। কেন? তিনি আমেরিকার কথামতো রাশিয়ার বিরুদ্ধে সোচ্চার হননি। তাও ভালো। এর চেয়ে খারাপ অবস্থাও হতে পারত। সালভাদর আলিয়েন্দে, শেখ মুজিবুর রহমান—কত নেতাই তো মার্কিন ‘গণতান্ত্রিক’ ও ‘মানবিক’ রাজনীতির শিকার হয়ে পৃথিবী ত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন। ডমিনিক স্ট্রাউস-কান জনপ্রিয় ও সম্ভাবনাময় হওয়ার পরও নির্বাচনে দাঁড়াতে পর্যন্ত পারেননি। আবার প্রায় অজ্ঞাত এমানুয়েল মাখো ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট হয়েছেন। এ এক প্যারাডক্স। গণতন্ত্রের মক্কা এই যুক্তরাষ্ট্র বিশ্ব রাজনীতিতে যেকোনো স্বৈরাচারকেও হার মানায়। হ্যাঁ, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে যুক্তরাষ্ট্র স্বৈরাচার। কোনো দেশে স্বৈরাচারী শাসক যেমন জনগণের মুখ বন্ধ করে নিজের খেয়াল-খুশিমতো দেশ চালায়, যুক্তরাষ্ট্রও পৃথিবীর সব দেশের মুখ বন্ধ করে তাদের জাতীয় স্বার্থকে পদদলিত করে নিজের ইচ্ছাকে তাদের ওপর চাপিয়ে দেয়। আর যদি কেউ তা না মানে, তাহলে হয় সে দেশে সরকারের পতন ঘটে, সরকারপ্রধান প্রাণ হারান অথবা দেশটার অস্তিত্বই বিপন্ন হয়ে পড়ে। 

এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের অনেক সাবেক জেনারেল ব্ল্যাক সি, কালিনিনগ্রাদ, ভ্লাদিভোস্তক—এসব জায়গায় ন্যাটোর সামরিক তৎপরতা বাড়াতে বলছেন। এটা যে পারমাণবিক যুদ্ধ ডেকে আনতে পারে, সে কথা কি এরা ভাবেন? যদিও এখনো যুদ্ধ হচ্ছে রাশিয়া ও ন্যাটোর মধ্যে, তবে সেটা হচ্ছে ইউক্রেনকে মধ্যে রেখে। এখানে ন্যাটোর প্রশিক্ষক, ছুটিতে থাকা সৈনিক—এ সবই আছে, আছে ন্যাটোর অস্ত্র, তবু সরাসরি ন্যাটো ও রাশিয়ার যুদ্ধ নয় এটি। অনেকের ধারণা, মারিউপোলের আজোভ স্টিলে ফ্রান্সের এক জেনারেল আটকা পড়েছেন। তাঁকে মুক্ত করে আনার জন্যই ইমানুয়েল মাখোঁ বারবার পুতিনকে ফোন করছেন। কী হবে যদি সত্যিই সেই যুদ্ধ লাগে? যুক্তরাষ্ট্র কি ভাবছে বরাবরের মতো সে এবারও রেহাই পাবে সাগরের ওপারে বসে? আর যদি হঠাৎ এটা পারমাণবিক যুদ্ধে পরিণত হয়, যদি সাগর থেকে কয়েকটি বোমা যুক্তরাষ্ট্রে পড়ে, বড় বড় শহরে বা ইয়েলো স্টোন বা ওসব স্পর্শকাতর জায়গায় গিয়ে কোনো বোমা পড়ে, তাহলে প্রাণ-প্রকৃতির কী হবে? 

উল্লেখ্য, ১৯১৭ সালের বিপ্লব, গৃহযুদ্ধ ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে কোটি কোটি মানুষ হারিয়ে সোভিয়েত জনগণ সত্যিকার অর্থেই ছিল শান্তিপ্রিয়। তাই যখন আশির দশকে অস্ত্র প্রতিযোগিতা থেকে বেরিয়ে আসার সুযোগ সৃষ্টি হয়, তারা সেটা লুফে নিয়েছিল। তাদের আশা ছিল—যুক্তরাষ্ট্র তাদের বন্ধু হবে। কিন্তু কী পেল তারা? নব্বইয়ের দশকের অরাজকতা। কারচুপিতে ভরা রাজনীতি, হতাশা, দারিদ্র্য; আর সবচেয়ে বড় কথা জাতীয় লাঞ্ছনা, অবমাননা। আর তাইতো তারা ঘুরে দাঁড়াল। আজ এখানে আগের মতো আর আমেরিকা-প্রেম নেই। ফলে মানুষ এখন জাতীয় মর্যাদা রক্ষা করতে চরম যুদ্ধে নামতেও প্রস্তুত। অন্তত লোকজনের সঙ্গে কথা বললে সেটাই মনে হয়। তারাও বলে, রাশিয়াই যদি না থাকে, সেই বিশ্ব দিয়ে আমাদের কী হবে। সত্যিকার অর্থেই পৃথিবী এক বিশাল পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। সব যুদ্ধই শেষ হয় সাধারণত শান্তি চুক্তির মধ্য দিয়ে। তবে এবার সেটা হতে পারে পারস্পরিক ধ্বংসের মধ্য দিয়ে। তবে শান্তি চুক্তির মধ্য দিয়ে হলেও বিশ্ব আর আগের মতো থাকবে না। ডলার আর একমাত্র কারেন্সি থাকবে না। সেটা আমেরিকার অর্থনীতিতে ব্যাপক প্রভাব ফেলবে। আমেরিকা লাগামহীনভাবে ডলার ছাপিয়ে সেই বাবলে (bubble) নিজেই ডুবে যেতে পারে। ইউরোপ হবে আরও অস্থির। একে তো জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধিতে সেখানকার পণ্য আগের মতো কমপিটেটিভ থাকবে না। তার ওপর সামাজিক অস্থিরতার কারণে সেখানকার পুঁজি যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশ্যে পাড়ি জমাতে পারে। এই অঙ্ক অনেকের মতে ট্রিলিয়ন হতে পারে। 

ইউরোপের কী হবে
সে ক্ষেত্রে ইউরোপের সুখের দিন শেষ। হতে পারে রাশিয়া, চীন, ভারতসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো নিজেদের মতো করে চলবে। এতে যোগ দেবে আফ্রিকা, আরব দেশগুলো ও লাতিন আমেরিকা। আরব বসন্তের কথা সৌদি আরব, আরব আমিরাত ভোলেনি। এর ওপর আছেন জামাল খাশোগি। তাই তো দেখি বাইডেনের ডাকে সাড়া না দিয়ে চীনের সঙ্গে ইউয়ানের মাধ্যমে বাণিজ্য করতে চাইছে সৌদি আরব। ইউরোপে ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি পূর্বের অবস্থান হারাবে। সেই স্থান দখল করার চেষ্টা করবে পোল্যান্ড। এর কারণ হলো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ের বিভিন্ন সীমাবদ্ধতার কারণে জার্মানির পক্ষে সামরিক শক্তি হয়ে ওঠাটা অনেক কঠিন। সেখানে অনেক বাধা। সেদিক থেকে পোল্যান্ড মুক্ত। 

জার্মানি ও সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে এত বড় রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পরও দুই দেশের মানুষ পরস্পরের বন্ধু হতে পেরেছিল। পোল্যান্ড সব সময়ই ছিল রুশবিরোধী। আর এটি ভৌগোলিকভাবে রাশিয়ার আরও কাছে। আর এ কারণেই যুক্তরাষ্ট্র জার্মানি থেকে তাদের সামরিক ঘাঁটির এক বিরাট অংশ পোল্যান্ডে স্থানান্তরিত করতে আগ্রহী। এমনকি পারমাণবিক অস্ত্রও। জাপানও সামরিকভাবে শক্তিশালী হবে বলে অনেকের ধারণা। জাপানের ঐতিহাসিক পটভূমি, সামুরাই, হারিকিরি—এসব সে কথাই বলে। তবে ইউরোপের দেশগুলো যতটা এক্সপোজড, জাপান ততটা নয়। এ দেশ ইকোনোমিক্যালি ও টেকনোলজিক্যালি অনেক উন্নত। তাই ইসরায়েলের মতো সেও পারমাণবিক অস্ত্র তৈরিতে সক্ষম। সেখানে একটাই বাধা—হিরোশিমা ও নাগাসাকির স্মৃতি। 

এক কথায় আমরা আবার এক নতুন যুগের দোরগোড়ায়। এটা সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের চেয়েও ব্যাপকভাবে নাড়া দেবে বিশ্বকে। সেই ভূমিকম্পে কে টিকে থাকবে, আর কে হারিয়ে যাবে, সেটা শুধু ভবিষ্যৎই বলতে পারে। বাইবেলে সডোম ও গোমেরা নামে প্রাচুর্যপূর্ণ দুই শহরের গল্প আছে, যারা নাকি বিলাস ও ব্যভিচারে লিপ্ত হওয়ায় ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। বর্তমানে ভোগবাদী বিশ্বে আমরা কি সেই চিত্রই দেখছি না। মানব সমাজ কি প্রকৃতি বিরুদ্ধ কাজে লিপ্ত হয়ে নিজেদের ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে না? অনেক দিন থেকেই ন্যাটোভুক্ত দেশগুলো (ইউরোপ, আমেরিকা, কানাডা) ও জাপান, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড নিজেদের এক্সক্লুসিভ ক্লাবের সদস্য ভাবে। এবার হয়তো সেটাই হবে—অফিশিয়ালি। বিশ্ব দুই ভিন্ন ক্যাম্পে বাস করবে। পশ্চিমা বিশ্বে যুক্তরাষ্ট্র তার মোড়লগিরি আগের মতোই করে যাবে, বাকি অংশে থাকবে একাধিক কেন্দ্র, যার পুরোধা হবে চীন, রাশিয়া ও ভারত। 

পশ্চিমা বিশ্ব নেমেছে অল আউট যুদ্ধে আর তাই তো খেলোয়াড়, শিল্পী, সাহিত্যিক, অভিনেতা অভিনেত্রী, সাংবাদিক—কেউ বাদ যাচ্ছে না। এরা রাশিয়াকে একঘরে করে ধ্বংস করতে বদ্ধপরিকর। ইতিহাস বলে জিন্নাহর ব্রাহ্মণ পিতামহকে মাছের ব্যবসা করার দায়ে একঘরে করে গ্রাম্য সমাজ। তারা আশ্রয় পায় ইসলামে। পরবর্তী ইতিহাস ভারত বিভাগ। যদিও পাকিস্তান সৃষ্টি ইসলাম বা মানবজাতির জন্য কতটা সুফল বয়ে এনেছে, সেটা প্রশ্নসাপেক্ষ, তবুও কথা হলো কাউকে অন্যায়ভাবে কোণঠাসা করার পরিণাম ভয়াবহ হতে পারে। 

ন্যাটো কার জন্য
অনেক সময় মনে হয় ন্যাটো আসলে কার দরকার। ওয়ারশ জোট পতনের পর এর যৌক্তিকতা নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন করেছেন, করছেন। মৌখিক প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পরেও ন্যাটোর প্রসারণ রাশিয়াকে ক্ষুব্ধ করেছে। তাকে বাধ্য করেছে নিজের নিরাপত্তার কথা ভাবতে। ফলে ইউরোপের নিরাপত্তা বাড়েনি, কমেছে। কারণ অস্ত্রের বিরুদ্ধে অস্ত্র উত্তেজনা কমায় না, বাড়ায়। তা ছাড়া সৃষ্টিকালে ন্যাটো আত্মরক্ষাকারী জোট হলেও সে আর এখন তা নেই। সার্বিয়া, আফগানিস্তান, ইরাক, লিবিয়ার ঘটনা একে আক্রমণকারী জোট হিসেবেই প্রমাণ করে। তাহলে কেন এই জোট? উত্তর—যুক্তরাষ্ট্রের মিলিটারি ইন্ডাস্ট্রির জন্য। ফলে ইউরোপের দেশগুলো বাধ্য হচ্ছে নিজেদের নিরাপত্তা বাজেট বাড়াতে; আর শর্ত অনুযায়ী মূলত মার্কিন অস্ত্র কিনতে। রাশিয়ায় ভয় দেখিয়ে ইউরোপে মোতায়েন করা হচ্ছে মার্কিন সেনা। এতে করে ইউরোপ আমেরিকার ওপর আরও বেশি করে নির্ভরশীল হয়ে উঠছে। রাশিয়াকেও বন্দুকের মুখে রেখে বশ মানানোর চেষ্টা করা যাচ্ছে। আর এখানেই বেজেছে গোল। রাশিয়া ঘুরে দাঁড়িয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র চাইছে এখন ইউক্রেনের মাধ্যমে এবং পরে ইউরোপের হাত দিয়ে রাশিয়াকে শায়েস্তা করতে। সেটি আর হবে বলে মনে হয় না। বর্তমান টেকনোলজির যুগে এমনকি ইউরোপ থেকে রাশিয়া আক্রমণ করার পরও শত শত নিউক্লিয়ার ওয়ারহেড আমেরিকায় গিয়ে পড়বে। এই আশঙ্কাই এখন পৃথিবীকে বাঁচিয়ে রেখেছে মার্কিন আগ্রাসী নীতি থেকে। 

রাশিয়া ও পশ্চিমা নেতাদের কথাবার্তা খেয়াল করলে দেখবেন, রাশিয়া যতটা শান্তিপূর্ণভাবে সমস্যা সমাধানে প্রস্তুত, পশ্চিম ততটা নয়। কথায় কথায় তারা রাশিয়া, রাশিয়ার অর্থনীতি ধ্বংসের কথা বলে। কিন্তু পশ্চিমের অর্থনীতি ধ্বংসের বাস্তব চাবিকাঠি রাশিয়ার হাতে থাকার পরও সে সেটা করছে না, এ নিয়ে হুমকি দিচ্ছে না। কেউ কি ভেবেছিল বিশ্ব রাশিয়ার ওপর এতটা নির্ভরশীল? যত নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হচ্ছে ইউরোপের মানুষ তত বেশি বিপদে পড়ছে। এরই মধ্যে ইউরোপের কোথাও কোথাও কলকারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। সেখানে দেখি সেই সোভিয়েত ইউনিয়নের শেষ ও নতুন রাশিয়ার প্রথম দিনগুলোর অবস্থা। দুই বোতলের বেশি সূর্যমুখী তেল দিচ্ছে না। আমলারা বলছেন, শরীরে তাপমাত্রা ৩৪ ডিগ্রিতে নামিয়া আনতে। সোভিয়েত ইউনিয়নে এটা সম্ভব ছিল, ইউরোপের মানুষ কি মানবে সেই নির্দেশ? তবে এভাবে চলতে থাকলে তাকে অন্যভাবে ভাবতে হতে পারে। মিনস্ক থেকে শিক্ষা নিয়ে রাশিয়া ইতিমধ্যেই বলেছে, তারা আর ইঁদুর-বিড়াল খেলতে রাজি নয়। এখন কোনো ইউক্রেন শহর দখল করার পর তারা আর সরে আসবে না, যাতে বুচার মতো কোনো প্রভোকেশন কেউ না করতে পারে। 

ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে রুশ সেনা উপস্থিতিযেসব এলাকা মুক্ত হচ্ছে, সেখানে স্থানীয় লোকদের নিয়ে প্রশাসন গড়ে তোলা হচ্ছে। আসলে পুরোনো প্রশাসনে বান্দেরার অনুসারীরা এমনভাবে ঢুকে পড়েছে যে, তাদের আর বিশ্বাস করা ঠিক হবে না বলে মনে করছে রাশিয়া। নতুন বাস্তবতায় নতুন করে ভাবতে হবে। তবে সেটাও কি তেমন ফলপ্রসূ হবে? আজ ক্রিমাতোরস্ক রেল স্টেশনে অপেক্ষারত সাধারণ মানুষের ওপর মিসাইল পড়ল ক্যাসেট বোম নিয়ে। সেটা করেছে ‘তোচকা’ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে, যা ইউক্রেন ছাড়া কেউ ব্যবহার করে না। অথচ ইউক্রেন ও পশ্চিমা বিশ্ব দোষ চাপাচ্ছে রাশিয়ার ঘাড়ে। কারণ তারা চায়, এভাবে রাশিয়ার সব প্রয়াসকে হেয় করতে, মানুষের চোখে এদের ছোট করতে। 

মজার ব্যাপার হলো বোমা আর টুইটারে কিয়েভের নেতাদের পোস্ট আসে প্রায় একই সঙ্গে। তাতেই বোঝা যায়, টেক্সট আগে থেকেই প্রস্তুত ছিল। কিন্তু পশ্চিমা বিশ্ব এটা দেখবে না। তাদের দরকার এই অছিলায় ইউক্রেনে আরও আরও অস্ত্র সরবরাহ করা। যদি ইউক্রেনের মানুষের জীবন রক্ষাই তাদের এজেন্ডায় থাকত, তারা অস্ত্র নয়, খাদ্য পাঠাত। 

রুশ হাইকমান্ড জানাচ্ছে যে, ইউক্রেন খারকভের কেমিক্যাল ফ্যাক্টরিতে প্রায় ১২০ টন ব্লিচিং পাউডারসহ গোডাউন বিস্ফোরক দিয়ে ভরে রেখেছে। এর অর্থ যদি ওরা সেখানে বিস্ফোরণ ঘটায়, দোষ যাবে রাশিয়ার ঘাড়ে। ফলে পরিবেশের যে ক্ষতি হবে, সেটা অকল্পনীয়। শুধু কি তাই? এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ইউরোপ আরও অস্ত্র পাঠাবে ইউক্রেনে। কিন্তু সমস্যা হলো, তারা কি কখনো থামতে পারবে? নাকি ন্যাটো ও রাশিয়ার মধ্যে একমাত্র সরাসরি যুদ্ধ দিয়েই এই সমস্যার সমাধান হবে? কেউ কি ভেবে দেখেছে এর ফলাফল? এটা অনেকটা যেকোনো মূল্যে যুদ্ধটাকে চালিয়ে যাওয়ার পণ বলে মনে হয়। আসলে ইতিহাসের দিকে তাকালে আমরা দেখব এখন আর কেউ অপরাধী খোঁজে না, প্রয়োজনমতো কারও ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে দেয়। 

আবার স্মরণ করা যেতে পারে কলিন পাওয়েলের কথা। সিরিয়ায় বিভিন্ন নাটক করা হয়েছে। মৃত শিশু বেঁচে উঠেছে নতুন কোনো রোলে অভিনয় করার জন্য। ইউক্রেনে একই মহিলা কখনো বোমা হামলায় আহত বৃদ্ধা, অসীম সাহসী ইউক্রেন সেনা, আবার মারিউপোলের হাসপাতালে গর্ভবতী মহিলা। কী মালয়েশিয়ার বিমান এম এইচ ১৭, কী জাপারোঝিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, কী ক্রামাতোরস্ক—পশ্চিমা বিশ্ব কোনো রকম সাক্ষ্যপ্রমাণের ধার না ধরে রাশিয়াকে অভিযুক্ত করে। ফলে আইন বা বিচার ব্যবস্থাকেই হেয় করা হচ্ছে। 

শুধু কি তাই। সাংবাদিকতা আজ আসলে রাজনৈতিক প্রোপাগান্ডার মেশিন হয়ে গেছে। ফলে সাংবাদিকতা ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এই সাংবাদিকতা একদিন ইরাক, লিবিয়া, সিরিয়া আক্রমণকে জায়েজ করেছে। এদের কারণেই ইউরোপের মানুষ বান্দেরার অনুসারীদের পেছনে এসে দাঁড়িয়েছে। অথচ এদের অনেকেই মনেপ্রাণে ফ্যাসিবাদকে ঘৃণা করে। সত্যকে বিকৃতভাবে প্রকাশ করে এরা শুধু সত্যের অবমাননা করছে না, মানুষকেও মিথ্যেবাদী হতে শেখাচ্ছে, মানুষের মানবতাবোধ ভূলুণ্ঠিত করছে। কারণ মানবিক আদর্শ আর যাই হোক, ফ্যাসিবাদকে সমর্থন করতে পারে না। সেদিন এক বন্ধুকে দেখলাম ফেসবুকে লিখেছে দেশে এখন যে কেউ তার প্রতিপক্ষকে শেষ করতে পারবে ধর্ম অবমাননার অভিযোগে। একটু খেয়াল করলে দেখবেন পাকিস্তান, ভারত, বাংলাদেশ—এসব দেশে যে ঘটনা ঘটে, সেটা ইউরোপ আমেরিকার কোনো দেশের বিরুদ্ধে সাক্ষ্যপ্রমাণ ছাড়া অভিযোগ আনারই স্থানীয় রূপ। এসব দেশে যেমন কেউ ঘটনার সত্যতা প্রমাণের জন্য অপেক্ষা না করে কাউকে দোষী বানিয়ে ঘরদোর পোড়ায়, হত্যা করে বা ভাগ্য সুপ্রসন্ন হলে পুলিশের হাজতে ঢোকায়, একইভাবে পশ্চিমা বিশ্ব তাদের অপছন্দের যেকোনো দেশ বা সরকারকে দোষী সাব্যস্ত করে সেই দেশ ধ্বংস করার সব রকম প্রচেষ্টা চালায়। বাংলাদেশ যদি আধুনিক মৌলবাদী দেশ হয়, পশ্চিমা বিশ্ব আজ অত্যাধুনিক নিওলিবারেল মৌলবাদী দেশপুঞ্জ। এসব দেশে মধ্যযুগীয় ডাইনি পোড়ানো এখন শুধু সময়ের ব্যাপার।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

দিল্লিতে বাংলাদেশের হাইকমিশনারকে তলব করে যা বলল ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

দুই মামলা থেকে মির্জা আব্বাস-আমান-গয়েশ্বরসহ ৪৫ জনকে অব্যাহতি

হাদিকে হত্যাচেষ্টায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেল, হেলমেট ও ভুয়া নম্বরপ্লেট উদ্ধার

বাংলাদেশের হাইকমিশনারকে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব

মেসিকে ১৫ কোটি টাকার ঘড়ি উপহার দিলেন আম্বানি

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

সংকটেও ভালো থাকুক বাংলাদেশ

এই কঠিন সময়েও বিজয় দিবস আমাদের আশার কথা শোনায়। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, বাংলাদেশ সংকট থেকে ঘুরে দাঁড়াতে জানে। কিন্তু সেই সক্ষমতা কাজে লাগাতে হলে আমাদের সচেতন সিদ্ধান্ত নিতে হবে— আমরা কি সহিংসতার পুরোনো বৃত্তেই ঘুরপাক খাব, নাকি দায়িত্বশীল রাজনীতি ও সহনশীলতার পথে এগিয়ে যাব। এ সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় এখনই।

কামরুল হাসান
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

বাংলাদেশ আবারও একটি সংবেদনশীল সময় অতিক্রম করছে। সামনে জাতীয় নির্বাচন—যা শুধু ক্ষমতা পরিবর্তনের আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া নয়; বরং রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক যাত্রার একটি গুরুত্বপূর্ণ বাঁক। এই নির্বাচন ঘিরে জনগণের প্রত্যাশা যেমন আছে, তেমনি রয়েছে গভীর উদ্বেগও। রাজনৈতিক অঙ্গন উত্তপ্ত, সামাজিক পরিসরে উৎকণ্ঠা, আর সাধারণ মানুষের মনে ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তার দোলাচল স্পষ্টভাবে দৃশ্যমান।

এই শঙ্কা ও উদ্বেগজনক পরিস্থিতির মধ্যেই নির্বাচনের সম্ভাব্য এক প্রার্থীর ওপর নৃশংস হামলার ঘটনা দেশকে নতুন করে নাড়া দিয়েছে। এমন ঘটনা শুধু একজন ব্যক্তির ওপর আঘাত নয়; এটি দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি, নির্বাচনকালীন নিরাপত্তাব্যবস্থা এবং রাষ্ট্রের সামগ্রিক সক্ষমতার ওপর একটি গুরুতর প্রশ্নচিহ্ন এঁকে দেয়। একটি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় নির্বাচনে অংশ নেওয়া প্রার্থীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা না গেলে সাধারণ ভোটারের নিরাপত্তা এবং আস্থার জায়গাটি কতটা সুদৃঢ় অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে, সেই প্রশ্ন এড়ানোর সুযোগ নেই।

এমনিতেই বেশ কিছুদিন ধরে যানবাহনে অগ্নিসংযোগ ও ককটেল হামলার মতো ঘটনা ঘটছে। এসব ঘটনা স্পষ্ট ইঙ্গিত দিচ্ছে, একটি পরিকল্পিত আতঙ্ক সৃষ্টির চেষ্টা চলছে। সেই ধারাবাহিকতায় সম্ভাব্য প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদির ওপর হামলার ঘটনা নির্বাচন ঘিরে সামগ্রিক নিরাপত্তাব্যবস্থার দুর্বলতাকে নতুন করে সামনে এনেছে। এটি কোনো বিচ্ছিন্ন অপরাধ নয়; বরং নির্বাচনপ্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার একটি সুপরিকল্পিত অপচেষ্টা বলেই প্রতীয়মান হচ্ছে।

রাজনৈতিক অঙ্গনের অনেকে মনে করছেন, ওসমান হাদির ওপর হামলার লক্ষ্য ছিল শুধু একজন ব্যক্তিকে ভয় দেখানো নয়; বরং নির্বাচনকেই অনিশ্চয়তায় ফেলা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও স্বীকার করছেন, দীর্ঘদিন ধরে একটি চক্র নির্বাচন বানচালের হুমকি দিয়ে আসছে। সহিংসতার এই ধারাবাহিকতা সেই হুমকিকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার ইঙ্গিত বহন করে।

তবে অন্তর্বর্তী সরকার ঘটনাটিকে নির্বাচনবিরোধী ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখছে। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বক্তব্যে বিষয়টি স্পষ্ট করা হয়েছে যে নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করার উদ্দেশ্যে কোনো ধরনের সহিংসতা বরদাশত করা হবে না। জনগণের নিরাপত্তা দেওয়া এবং প্রার্থীদের অবাধ চলাচল নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের মৌলিক দায়িত্ব—এই অবস্থান জোরালোভাবে পুনর্ব্যক্ত করা হয়েছে।

কিন্তু বক্তব্যের দৃঢ়তা বাস্তব পদক্ষেপে প্রতিফলিত না হলে জনমনে আস্থা ফিরবে না। নির্বাচন কমিশন ও অন্তর্বর্তী সরকারের এখন প্রধান কর্তব্য হলো, কঠোর নিরাপত্তাব্যবস্থা গ্রহণ, দলমত-নির্বিশেষে দোষীদের দ্রুত শনাক্ত ও বিচারের আওতায় আনা এবং নির্বাচনী পরিবেশের ওপর আস্থা নিশ্চিত করা। গণতন্ত্রের পথ কখনোই ভয় আর সহিংসতার ওপর দাঁড়াতে পারে না।

এ মুহূর্তে সরকারের কঠোর ও নিরপেক্ষ অবস্থানই পারে নির্বাচনকে সুরক্ষিত রাখতে এবং জনগণের আস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে।

আজকের এই সময়ে দাঁড়িয়ে সবাই স্বীকার করবেন, বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ইতিহাসে সংকট নতুন কিছু নয়। রাজনৈতিক প্রতিহিংসা, সহিংস আন্দোলন, অবিশ্বাসের চর্চা—এসব উপাদান বহুবার নির্বাচনপ্রক্রিয়াকে বিতর্কিত করেছে। কোনো কোনো সময় নির্বাচন হয়ে উঠেছে জনগণের উৎসব, আবার কোনো কোনো সময় তা রূপ নিয়েছে আতঙ্ক ও শঙ্কার আভাসে। ফলে প্রতিবার ভোটের আগে মানুষের মনে একটি স্বাভাবিক সংশয় সৃষ্টি হয়, সেটি হলো—এই নির্বাচন শান্তিপূর্ণ হবে তো? নাকি আবারও সহিংসতার ছায়া পড়বে?

গণতন্ত্রের মৌলিক বৈশিষ্ট্যই হলো মতভিন্নতা। প্রতিযোগিতা থাকবে, মতের সংঘাত হবে—এটিই স্বাভাবিক। কিন্তু সেই প্রতিযোগিতা যখন অস্ত্র, হামলা কিংবা ভয়ভীতির হয়, তখন তা গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করে না; বরং তাকে দুর্বল করে দেয়। রাজনীতির শক্তি হওয়া উচিত যুক্তি, কর্মসূচি ও জনসমর্থন। সহিংসতা কখনোই রাজনৈতিক সমাধান নয়। ইতিহাস বারবার প্রমাণ করেছে, সহিংসতার পথ বেছে নিলে শেষ পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত হয় রাষ্ট্র, সমাজ এবং সাধারণ মানুষ।

এই বাস্তবতায় নির্বাচন কমিশন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নির্বাচন কমিশনের ওপর জনগণের আস্থা অনেকাংশে নির্ভর করে তাদের নিরপেক্ষতা এবং দৃঢ়তার ওপর। একইভাবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পেশাদার ও পক্ষপাতহীন ভূমিকা ছাড়া নির্বাচনকালীন সহিংসতা প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়। কোনো ধরনের শিথিলতা কিংবা পক্ষপাত পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলতে পারে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এখনো যে ধরনের নাজুক অবস্থায় রয়েছে, তাতে তাদের পুরো মনোবল ফিরিয়ে আনতে না পারলে রাষ্ট্র হয়তো বিপদে পড়ে যাবে।

দায়িত্ব অবশ্য শুধু রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপরই বর্তায় না; সরকার ও বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর ভূমিকাও সমান গুরুত্বপূর্ণ। ক্ষমতায় থাকা কিংবা ক্ষমতার বাইরে থাকা—উভয় অবস্থানেই দায়িত্বশীল আচরণ গণতন্ত্রের পূর্বশর্ত। উসকানিমূলক বক্তব্য, গুজব ছড়ানো কিংবা সহিংস কর্মসূচির মাধ্যমে রাজনৈতিক ফায়দার চেষ্টা শেষ পর্যন্ত জাতির জন্য ক্ষতিকর হয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যা খুশি তা লেখা যায় বলে গুজব ছড়ানো সহজ। অনেকে কোনো প্রমাণ ছাড়াই এমন সব ভুয়া তথ্য ছড়িয়ে থাকেন, যা আদতে পরস্পরের প্রতি সন্দেহ-অবিশ্বাস এমনকি সংঘাতের জন্ম দেয়।

এমনই অস্থির এক সময়ে জাতীয় জীবনে ফিরে এল মহান বিজয় দিবস—১৬ ডিসেম্বর। স্বাধীনতার এদিনটি আমাদের মনে করিয়ে দিল, বাংলাদেশ জন্ম নিয়েছিল রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম এবং অপরিসীম আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে। ১৯৭১ সালে একটি জাতি প্রমাণ করেছিল, তারা অন্যায়ের কাছে মাথানত করতে জানে না। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ থেকে আজকের বাংলাদেশ—এই দীর্ঘ পথচলায় রয়েছে রক্ত, বেদনা ও গৌরবের ইতিহাস।

বিজয় দিবস তাই শুধু উৎসবের দিন নয়; এটি আত্মজিজ্ঞাসার সময়ও। স্বাধীনতার এত বছর পর এসে আমাদের নিজেদের প্রশ্ন করা জরুরি—আমরা কি সেই মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রতি যথাযথ সম্মান দেখাতে পেরেছি? একটি সহনশীল, নিরাপদ ও ন্যায়ভিত্তিক রাষ্ট্র কি গড়ে তুলতে পেরেছি? রাজনৈতিক মতভিন্নতা কি আমরা শান্তিপূর্ণভাবে মেনে নিতে শিখেছি?

দুঃখজনক হলেও সত্য, এসব প্রশ্নের উত্তর এখনো পুরোপুরি ইতিবাচক নয়। রাজনৈতিক অসহিষ্ণুতা, ক্ষমতার অপব্যবহার এবং দায়িত্বহীন আচরণ আমাদের গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রা বারবার বাধাগ্রস্ত করেছে। নির্বাচনের সময় এসব প্রবণতা আরও তীব্র হয়ে ওঠে। অথচ নির্বাচন হওয়া উচিত জনগণের ক্ষমতা প্রয়োগের সবচেয়ে বড় উৎসব; ভয়ের উপলক্ষ নয়।

এই প্রেক্ষাপটে সবচেয়ে জরুরি বিষয় হলো সংযম। রাজনৈতিক দলগুলোর সংযম, প্রশাসনের সংযম এবং রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর দায়িত্বশীলতা। একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন কোনো একক পক্ষে নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। সরকার, বিরোধী দল, নির্বাচন কমিশন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, গণমাধ্যম ও নাগরিক সমাজ—সবার সম্মিলিত উদ্যোগ ছাড়া এই লক্ষ্য অর্জন করা যাবে না। পাশাপাশি এটিও আমাদের ভাবতে হবে, অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন বলতে আমরা কী বুঝব। কোনো রাজনৈতিক দল কিংবা তার সমর্থকদের নির্বাচনের বাইরে রাখা হলে তা কি অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন হতে পারে?

সবার জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করতে পারলে জনগণের পক্ষে তাদের রায় দেওয়া সহজ হয়। যদি কারও আচরণে জনগণ অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে, তাহলে ব্যালটের মাধ্যমে তা সহজে জানিয়ে দিতে পারবে। ওপর থেকে চাপিয়ে না দিয়ে জনগণকেই এ বিষয়ে বোঝাপড়ার দায়িত্ব দেওয়া উচিত।

গণমাধ্যমের ভূমিকাও এখানে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দায়িত্বশীল সাংবাদিকতা জনগণের সঠিক তথ্য জানার অধিকার নিশ্চিত করে এবং গুজব ও অপপ্রচার রোধে ভূমিকা রাখে। একইভাবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দায়িত্বশীল আচরণ এখন সময়ের দাবি। যাচাইহীন তথ্য, উসকানিমূলক বক্তব্য বা বিভ্রান্তিকর প্রচার পরিস্থিতিকে আরও অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে। এবারের নির্বাচন নানা কারণেই গুরুত্বপূর্ণ। এ সময় গণমাধ্যমের উচিত নৈর্ব্যক্তিকভাবে পর্যালোচনা করে সংবাদ পরিবেশন করা। কোনো কারণেই পক্ষপাতমূলক সংবাদ পরিবেশন করা উচিত নয়। সেই অঙ্গীকার পালন করা হচ্ছে কি না, সেদিকে জনগণও নজর রাখবে।

এই কঠিন সময়েও বিজয় দিবস আমাদের আশার কথা শোনায়। বাংলাদেশ সংকট থেকে ঘুরে দাঁড়াতে জানে।

কিন্তু সেই সক্ষমতা কাজে লাগাতে হলে আমাদের সচেতন সিদ্ধান্ত নিতে হবে—আমরা কি সহিংসতার পুরোনো বৃত্তে ঘুরপাক খাব, নাকি দায়িত্বশীল রাজনীতি ও সহনশীলতার পথে এগিয়ে যাব, এ সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় এখনই।

জাতির আকাঙ্ক্ষা খুব সহজ, কিন্তু গভীর—ভালো থাকুক বাংলাদেশ। রক্তপাত নয়, ব্যালটের মাধ্যমে হোক ক্ষমতার পরিবর্তন। আতঙ্ক নয়, আস্থার মধ্য দিয়ে গড়ে উঠুক আগামী দিনের পথচলা। স্বাধীনতার চেতনার প্রতি প্রকৃত শ্রদ্ধা দেখাতে হলে আমাদের এ পথই কিন্তু বেছে নিতে হবে।

লেখক: ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক আজকের পত্রিকা

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

দিল্লিতে বাংলাদেশের হাইকমিশনারকে তলব করে যা বলল ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

দুই মামলা থেকে মির্জা আব্বাস-আমান-গয়েশ্বরসহ ৪৫ জনকে অব্যাহতি

হাদিকে হত্যাচেষ্টায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেল, হেলমেট ও ভুয়া নম্বরপ্লেট উদ্ধার

বাংলাদেশের হাইকমিশনারকে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব

মেসিকে ১৫ কোটি টাকার ঘড়ি উপহার দিলেন আম্বানি

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

মন্ত্রীদের বেতন-ভাতা নিয়ে কথা

মুক্তিযুদ্ধকালে গঠিত মুজিবনগর বা প্রবাসী সরকারের প্রধানমন্ত্রীসহ অন্যান্য মন্ত্রী এবং নির্বাচিত সংসদ সদস্যগণ প্রত্যেককে কিছু সম্মানী দেওয়া হতো। প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রীদের জন্য কিছু বেশি; তবে সংসদ সদস্যদের জন্য ৪০০ টাকা করে বেতন-ভাতা নির্ধারিত ছিল।

বিমল সরকার
বিমল সরকার। ফাইল ছবি
বিমল সরকার। ফাইল ছবি

শুরুটা ছিল বেশ আশাজাগানিয়া। বিধি অনুযায়ী আমাদের দেশে মন্ত্রিসভার সদস্যদের কী বেতন বা সম্মানী এবং ভাতা ও সুবিধাদি এক্ষণে জানা নেই। যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়েই নিশ্চয় তা নির্ধারণ করা হয়েছে। মন্ত্রী ছাড়া যাঁরা সংসদ সদস্য, তাঁদের বেলায়ও একই কথা; মোটা অঙ্কের বেতন-ভাতা এবং বলতে গেলে অবাধ সুযোগ-সুবিধা আছে বলেই মন্ত্রী ও সংসদ সদস্য হওয়ার জন্য একেকজনের কী আগ্রহ, তোড়জোড় ও প্রাণান্ত চেষ্টা-তদবির; তা নির্বাচনের আগমুহূর্তে বেশি টের পাওয়া যায়!

পাকিস্তান আমলে আমাদের দেশে প্রথমে ছিল গভর্নর জেনারেল ও পরে রাষ্ট্রপতিশাসিত (প্রেসিডেনশিয়াল) পদ্ধতির সরকার। পঞ্চাশ ও ষাটের দশকে আইয়ুব খান, ইয়াহিয়া খান ছিলেন পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট (১৯৭১ সাল পর্যন্ত)। প্রদেশে ছিলেন গভর্নর। স্বাধীনতার পর ব্যবস্থা পরিবর্তন করে দেশে সংসদীয় পদ্ধতির সরকার প্রবর্তন করা হয়।

পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে দেশে ফিরে সদ্য স্বাধীন দেশের শাসনদণ্ডভার কাঁধে তুলে নেন শেখ মুজিবুর রহমান। সংসদীয় পদ্ধতিতে ১৯৭২ সালের ১২ জানুয়ারি শেখ মুজিবের প্রথম মন্ত্রিসভা গঠিত হয়। যুদ্ধবিধ্বস্ত ও কপর্দকশূন্য একটি দেশের কান্ডারি হলেন তিনি। স্বাধীন-সার্বভৌম নবীন রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের যাত্রা হলো শুরু। সরকারের দায়িত্বভার গ্রহণ করে তিনি প্রথমেই নাগরিক জীবনে কৃচ্ছ্রসাধনের ওপর গুরুত্ব দেন। তিনি নবগঠিত মন্ত্রিসভার সদস্যদের বেতন নির্ধারণ করেন পাকিস্তান আমলের তুলনায় অন্তত এক-তৃতীয়াংশ কম। ১৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৭২-এ তাঁর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে একজন মন্ত্রীর মাসিক বেতন নির্ধারণ করা হয় ১ হাজার ৫০০ টাকা। এ ছাড়া আপ্যায়ন ভাতা হিসেবে রাখা হয় আরও ৫০০ টাকা। উল্লেখ্য, পাকিস্তান আমলে আইয়ুব খান বা ইয়াহিয়া খানের মন্ত্রিসভার সদস্যরা ২ হাজার ২০০ টাকা করে বেতন এবং প্রত্যেকে মাসিক আপ্যায়ন ভাতা হিসেবে পেতেন আরও ১ হাজার টাকা। অর্থাৎ পাকিস্তান আমলে একজন মন্ত্রী যেখানে ৩ হাজার ২০০ টাকা (বেতন ২২০০ + আপ্যায়ন ভাতা ১০০০) বেতন-ভাতা পেয়েছেন, সেখানে স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের একজন মন্ত্রীর জন্য বেতন-ভাতা নির্ধারণ করা হয় সাকল্যে ২ হাজার (বেতন ১৫০০ + ভাতা ৫০০) টাকা।

কিন্তু মন্ত্রীদের জন্য এই বেতন-ভাতা নির্ধারণের পর মাস তো দূরের কথা, সপ্তাহটি কোনোরকমে কেটেছে। পাকিস্তানিদের ৯ মাসব্যাপী তাণ্ডব চালানোর পর একদম শূন্য থেকে বাংলাদেশের পথচলা শুরু। সাহায্য হিসেবে অর্থ, খাদ্যসামগ্রীসহ নানা কিছু আসছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে। এমতাবস্থায় মন্ত্রীদের এত

বেশি বেতন নেওয়া ঠিক হবে না। এ ব্যাপারে ঘনিষ্ঠ দু-চারজন সহকর্মী-মন্ত্রীর সঙ্গে কথাও বলেন শেখ মুজিবুর রহমান। ফলে

২৪ ফেব্রুয়ারি ১৯৭২ সালে নতুন করে আবারও সরকারি নির্দেশনা জারি করা হলো। নতুন নির্দেশনা অনুযায়ী মন্ত্রীদের বেতনের পরিমাণ আরও কমিয়ে ১ হাজার ৫০০ টাকার স্থলে ঠিক ১ হাজার টাকা পুনর্নির্ধারণ করা হয়। আপ্যায়ন ভাতা আগের ৫০০ টাকাতেই স্থির থাকে।

১৯৫৪ সালে পূর্ববঙ্গে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের আগে মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক প্রমুখের নেতৃত্বে যুক্তফ্রন্ট গঠিত হয়। ক্ষমতাসীন মুসলিম লীগ সরকারের দুঃশাসনের বিপরীতে যুক্তফ্রন্ট তাদের ২১ দফা নির্বাচনী অঙ্গীকারনামা (মেনিফেস্টো) ঘোষণা করে। ওই অঙ্গীকারনামাকে শাসন-শোষণ আর বৈষম্যের শিকার হতভাগ্য পূর্ববঙ্গবাসী তাদের ‘মুক্তির সনদ’ হিসেবে গ্রহণ এবং নৌকা প্রতীকে ভোট দিয়ে যুক্তফ্রন্টকে বিজয়ী করে। যুক্তফ্রন্টের ২১ দফার অন্তর্ভুক্ত প্রশাসনিক এবং রাজনৈতিক অনেক অঙ্গীকারের মধ্যে ছিল:

১. শাসনব্যয় হ্রাস এবং যুক্তফ্রন্ট সরকারের কোনো মন্ত্রীর ১ হাজার টাকার বেশি বেতন গ্রহণ না করা (১২ নম্বর দফা)।

২. দুর্নীতি-স্বজনপ্রীতি ও ঘুষ-রিসওয়াত বন্ধ করার কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ (১৩ নম্বর দফা)।

৩. বর্ধমান হাউসের পরিবর্তে কম বিলাসের বাড়িতে যুক্তফ্রন্ট সরকারের মুখ্যমন্ত্রীর অবস্থান করা এবং বর্ধমান হাউসকে প্রথমে ছাত্রাবাস ও পরে বাংলা ভাষার গবেষণাগারে পরিণত করা (১৪ নম্বর দফা)। বাঙালির দুর্ভাগ্য যে শেরেবাংলার নেতৃত্বে সরকার গঠন করে মন্ত্রিসভার কার্যক্রম শুরু করতে না করতেই কেন্দ্রীয় সরকার নানা ছুতায় মাত্র ৫৬ দিনের মাথায় প্রাদেশিক যুক্তফ্রন্ট সরকারকে বরখাস্ত করে।

উল্লেখ্য, মুক্তিযুদ্ধকালে গঠিত মুজিবনগর বা প্রবাসী সরকারের প্রধানমন্ত্রীসহ অন্যান্য মন্ত্রী এবং নির্বাচিত সংসদ সদস্যগণকে কিছু সম্মানী দেওয়া হতো। প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রীদের জন্য কিছু বেশি; তবে সংসদ সদস্যদের জন্য ৪০০ টাকা করে বেতন-ভাতা নির্ধারিত ছিল (যা ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত একই হারে বহাল থাকে)। অর্থাৎ বলতে গেলে সত্তরের দশকজুড়ে টিএ-ডিএসহ সামান্য সুবিধা ও সম্মানী হিসেবে ৪০০ টাকা ভাতা পান একজন সংসদ সদস্য।

মন্ত্রী এবং সংসদ সদস্যদের সম্মানী এবং বেতন-ভাতাদি নিয়ে মানুষের বেশ কৌতূহল। বিভিন্ন মহলে এ নিয়ে রয়েছে আলোচনা-সমালোচনা। আবারও নিজের সীমাবদ্ধতাকে স্বীকার করি; আমার জানা নেই ৫০ বছরের বেশি সময়ের ব্যবধানে বর্তমান ব্যবস্থা অনুযায়ী সরকারের একজন মন্ত্রী এবং সংসদ সদস্যের সম্মানী কিংবা বেতন-ভাতার পরিমাণ কী। ১৯৫৪ সালে নির্বাচনের আগেই রাজনীতিকেরা বেতন-ভাতার ব্যাপারে সুস্পষ্টভাবে অঙ্গীকার করেছিলেন। ১৯৭২ সালে সরকার গঠনের অব্যবহিত পর ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করে দফায় দফায় তাঁদের বেতন-ভাতা কমানো হয়। ত্রয়োদশ নির্বাচনের প্রাক্কালে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে প্রত্যাশা, নিজ নিজ ঘোষিতব্য মেনিফেস্টোতে বেতন-ভাতার বিষয়টিও স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হোক।

লেখক: অবসরপ্রাপ্ত কলেজশিক্ষক

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

দিল্লিতে বাংলাদেশের হাইকমিশনারকে তলব করে যা বলল ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

দুই মামলা থেকে মির্জা আব্বাস-আমান-গয়েশ্বরসহ ৪৫ জনকে অব্যাহতি

হাদিকে হত্যাচেষ্টায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেল, হেলমেট ও ভুয়া নম্বরপ্লেট উদ্ধার

বাংলাদেশের হাইকমিশনারকে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব

মেসিকে ১৫ কোটি টাকার ঘড়ি উপহার দিলেন আম্বানি

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

পাঠকের লেখা: বিজয় অর্জনের গৌরব

ডা. মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ 
আপডেট : ১৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮: ২১
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

বিজয়ের মাস চলছে। বাঙালি জাতির হাজার বছরের শৌর্যবীর্য ও বীরত্বের এক অবিস্মরণীয় গৌরবময় দিনটি ছিল গতকাল। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সঙ্গে দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ শেষে বাঙালি জাতির শ্রেষ্ঠতম অর্জন ‘বিজয়’। এদিন বাঙালির আত্মপরিচয় লাভের দিন।

ডিসেম্বর এলেই বাংলাদেশের জাতীয় জীবনে এক ভিন্ন আবহ তৈরি হয়। শীতের সকালের কুয়াশার ভেতর দিয়ে উড়তে থাকা লাল-সবুজ পতাকা আমাদের মনে করিয়ে দেয় এক রক্তাক্ত কিন্তু গৌরবময় ইতিহাসের কথা। আজ বিজয় দিবসে দাঁড়িয়ে আমরা গর্বের সঙ্গে সেই ইতিহাস স্মরণ করি, একই সঙ্গে নিজেদের দায়িত্বের দিকে ফিরে তাকাই।

এই বিজয় কোনো আকস্মিক ঘটনা ছিল না। পাকিস্তানি শাসনামলের দীর্ঘ বৈষম্য, রাজনৈতিক বঞ্চনা এবং সাংস্কৃতিক দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে বাঙালির প্রতিবাদ ধীরে ধীরে এক অনিবার্য সংগ্রামে রূপ নেয়। ভাষা আন্দোলন থেকে ছয় দফা, গণ-অভ্যুত্থান থেকে অসহযোগ—এই ধারাবাহিক লড়াইই মুক্তিযুদ্ধের ভিত্তি তৈরি করেছিল। ২৫ মার্চের কালরাতে নির্বিচার গণহত্যা সেই সংগ্রামকে চূড়ান্ত রূপ দেয়। অস্তিত্ব রক্ষার তাগিদেই বাঙালি জাতি অস্ত্র হাতে নিতে বাধ্য হয়।

মুক্তিযুদ্ধের সবচেয়ে বড় শক্তি ছিল সাধারণ মানুষ। এটি কোনো পেশাদার বাহিনীর একক যুদ্ধ ছিল না; বরং গ্রাম ও শহরের মানুষ মিলেই গড়ে তুলেছিল প্রতিরোধ। কৃষক যেমন লড়েছেন, তেমনি লড়েছেন শ্রমিক, ছাত্র, শিক্ষক, শিল্পী ও বুদ্ধিজীবীরা। নারীরা শুধু সহযোদ্ধাই নন, অনেক ক্ষেত্রে সম্মুখযোদ্ধার ভূমিকাও পালন করেছেন। এই সর্বস্তরের মানুষের অংশগ্রহণই মুক্তিযুদ্ধকে একটি সর্বজনীন জাতীয় সংগ্রামে পরিণত করে।

এই বিজয়ের মূল্য ছিল ভয়াবহ। ৩০ লাখ শহীদের আত্মত্যাগ, অসংখ্য মা-বোনের সম্ভ্রমহানি, লাখো মানুষের বাস্তুচ্যুতি—সব মিলিয়ে স্বাধীনতার মূল্য পরিশোধ করতে হয়েছে। এই ইতিহাস আমাদের গৌরবের, কিন্তু একই সঙ্গে বেদনারও। বিজয় দিবস তাই শুধু উৎসবের নয়, নীরব শ্রদ্ধা ও আত্মসমালোচনারও দিন।

৫৪ বছর পর বাংলাদেশের দিকে তাকালে অগ্রগতির চিত্র অস্বীকার করা যায় না। যুদ্ধবিধ্বস্ত একটি দেশ আজ উন্নয়নশীল রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা, বিদ্যুৎ উৎপাদনে অগ্রগতি, সড়ক-সেতু ও যোগাযোগ অবকাঠামোর বিস্তার দেশের অর্থনৈতিক সক্ষমতা বাড়িয়েছে। শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সূচকে উন্নতি, নারীশিক্ষা ও নারী অংশগ্রহণ বৃদ্ধি সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন এনেছে।

আন্তর্জাতিক পরিসরেও বাংলাদেশের অবস্থান এখন দৃশ্যমান। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশের ভূমিকা, জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলায় সোচ্চার অবস্থান এবং মানবিক সহায়তায় অংশগ্রহণ দেশটির ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছে। একসময় যে দেশটিকে অবহেলার চোখে দেখা হতো, আজ সেই দেশ সম্ভাবনার নাম।

তবু বিজয়ের এই সাফল্যের আড়ালে কিছু বাস্তবতা আমাদের বিব্রত করে। সমাজে বৈষম্য এখনো বড় সমস্যা। ধনী ও দরিদ্রের ব্যবধান কমার বদলে অনেক ক্ষেত্রে বেড়েছে। শহরের সুযোগ-সুবিধা গ্রাম পর্যন্ত সমানভাবে পৌঁছায়নি। শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা ও কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে সমতার প্রশ্ন আজও জোরালোভাবে উপস্থিত।

একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের মূল ভিত্তি আইনের শাসন ও ন্যায়বিচার। এই জায়গায় ঘাটতি থাকলে মানুষের রাষ্ট্রের ওপর আস্থা দুর্বল হয়ে পড়ে। বিচারহীনতার সংস্কৃতি যেকোনো সমাজকে ভেতর থেকে ক্ষয় করে দেয়। বিজয়ের চেতনা তখনই অর্থবহ হয়, যখন সাধারণ মানুষ নিরাপদ বোধ করে এবং ন্যায়বিচার পাওয়ার আশা রাখতে পারে।

গণতন্ত্র ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতাও মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের সঙ্গে ওতপ্রোত জড়িত। ভিন্নমতকে শত্রুতা হিসেবে দেখার প্রবণতা সমাজে বিভাজন সৃষ্টি করে। একটি পরিণত রাষ্ট্রে মতভিন্নতা থাকবে, কিন্তু সেটিকে সহনশীলতার মধ্য দিয়ে মোকাবিলা করতে হবে। যুক্তি ও আলোচনার সংস্কৃতি শক্তিশালী না হলে বিজয়ের চেতনা দুর্বল হয়ে পড়ে।

দুর্নীতি আজ আমাদের জাতীয় জীবনের অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ। এটি কেবল অর্থনৈতিক ক্ষতির বিষয় নয়; বরং নৈতিক অবক্ষয়ের প্রতীক। দুর্নীতির সঙ্গে আপস করা মানেই মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের সঙ্গে আপস করা। সুশাসন ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা ছাড়া উন্নয়ন কখনোই টেকসই হতে পারে না।

মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসচর্চার ক্ষেত্রেও দায়িত্বশীলতা জরুরি। ইতিহাস বিকৃতি বা রাজনৈতিক সুবিধার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার বিজয়ের চেতনাকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। এই ইতিহাস কোনো ব্যক্তি বা দলের সম্পত্তি নয়; এটি পুরো জাতির। সত্য ও বস্তুনিষ্ঠ ইতিহাসচর্চাই ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সঠিক পথ দেখাতে পারে।

আজকের তরুণ প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধ অনেক সময় বইয়ের পাতায় সীমাবদ্ধ একটি অধ্যায় হয়ে দাঁড়ায়। অথচ মুক্তিযুদ্ধ ছিল একটি মূল্যবোধের সংগ্রাম—ন্যায়, সমতা ও মানবিকতার জন্য লড়াই। এই মূল্যবোধ তরুণদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে না পারলে উন্নয়নের অর্জনও একসময় অর্থহীন হয়ে পড়বে।

উন্নয়ন মানে শুধু বড় প্রকল্প নয়। মানুষের জীবনমানের উন্নয়নই রাষ্ট্রের সাফল্যের আসল মাপকাঠি। গ্রামবাংলা ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠী উন্নয়নের সুফল থেকে বঞ্চিত থাকলে স্বাধীনতার স্বপ্ন অপূর্ণ থেকে যায়। কৃষক ন্যায্য দাম না পেলে, শ্রমিক নিরাপত্তাহীন থাকলে বিজয়ের অর্থ প্রশ্নের মুখে পড়ে।

নারী ও শিশুর নিরাপত্তা ও মর্যাদা নিশ্চিত করা স্বাধীন রাষ্ট্রের নৈতিক দায়িত্ব। মুক্তিযুদ্ধের সময় নারীরা যে ভয়াবহ নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, তার ঐতিহাসিক বাস্তবতা আমাদের এই দায়িত্ব আরও গভীরভাবে স্মরণ করিয়ে দেয়।

বিজয় দিবস আমাদের শেখায়, স্বাধীনতা কোনো স্থির অর্জন নয়। এটি প্রতিদিন রক্ষা করার বিষয়। দেশপ্রেম মানে কেবল স্লোগান দেওয়া নয়; আইন মেনে চলা, অন্যায়ের প্রতিবাদ করা আর মানবিক আচরণ করাই দেশপ্রেমের প্রকৃত রূপ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

দিল্লিতে বাংলাদেশের হাইকমিশনারকে তলব করে যা বলল ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

দুই মামলা থেকে মির্জা আব্বাস-আমান-গয়েশ্বরসহ ৪৫ জনকে অব্যাহতি

হাদিকে হত্যাচেষ্টায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেল, হেলমেট ও ভুয়া নম্বরপ্লেট উদ্ধার

বাংলাদেশের হাইকমিশনারকে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব

মেসিকে ১৫ কোটি টাকার ঘড়ি উপহার দিলেন আম্বানি

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

নিরাপত্তাহীনতা

সম্পাদকীয়
নিরাপত্তাহীনতা

দেশের মানুষ যখন উৎসবমুখর পরিবেশে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট দিতে উন্মুখ হয়ে আছে, তখন কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় নির্বাচনে বিশৃঙ্খল পরিবেশ তৈরি হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এ নিয়ে আজকের পত্রিকায় ১৫ ডিসেম্বর একটা উদ্বেগজনক ‘ভোটের আগে আতঙ্ক জনমনে’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে।

মূলত তফসিল ঘোষণার পরের দিন ইনকিলাব মঞ্চের নেতা শরিফ ওসমান হাদিকে হত্যার উদ্দেশ্যে গুলি করার ঘটনা সেই আশঙ্কাকে জোরালো করেছে। ফলে ওই ঘটনা সম্ভাব্য প্রার্থীসহ সাধারণ মানুষের মধ্যে নির্বাচন নিয়ে উৎসাহের বদলে আতঙ্ক তৈরি করেছে। নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন রাজনৈতিক নেতারাসহ জুলাই যোদ্ধারা। সরকার নিরাপত্তা দেওয়ার আশ্বাস দিলেও এই পরিস্থিতিতে নির্বাচনী প্রচার নিয়ে আশঙ্কা করছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা।

প্রকাশ্যে এই হামলা প্রমাণ করেছে, দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির হাল অত্যন্ত নাজুক। নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের অভিমত অনুযায়ী, সময়মতো কার্যকর উদ্যোগের অভাবই এই অবস্থার জন্য দায়ী। নির্বাচনপ্রক্রিয়া শুরু হওয়ার পরও যদি সম্ভাব্য প্রার্থীরা জীবন নিয়ে শঙ্কায় থাকেন, তবে তা একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকি হতে পারে।

এই ঘটনা শুধু যে একটি বিচ্ছিন্ন হামলা নয়; এটি পুরো নির্বাচনের প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার সুপরিকল্পিত ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা। প্রশ্ন হলো, ২০২৪ সালের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কখনো স্বাভাবিক ছিল না। একের পর এক মবের ঘটনা ঘটার পরেও এসব নিয়ন্ত্রণে সরকার এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। এরপর জুলাই আন্দোলনের পর দেশের অনেক থানার অস্ত্র লুট হয়েছিল। সে সময় অধিকাংশ অস্ত্র উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। সবচেয়ে ভয়াবহ ব্যাপার হলো, ৫ আগস্টের পর একে একে অনেক চিহ্নিত সন্ত্রাসী এবং জঙ্গিদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল। যে পরিস্থিতি আজ দাঁড়িয়েছে, তার সবটাই আগের ঘটনার ধারাবাহিকতা।

কিন্তু সরকার প্রথম থেকে বিশেষ করে পুলিশ বাহিনীকে সক্রিয় করতে ব্যর্থ হয়েছে। সংস্কার নিয়ে বিভিন্ন ধরনের কথাবার্তার আড়ালে জনগণের নিরাপত্তার বিষয়টি সব সময় এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে।

এখন নির্বাচনের আগে প্রায় দেড় বছরের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির সংকট কীভাবে কাটানো সম্ভব? একটি ঘটনা ঘটার পর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়োজিত ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা নানা কথার ফুলঝুরি শোনান, কিন্তু কিছুদিন পর পরিস্থিতি পরিবর্তনের কোনো লক্ষণ দেখা যায় না।

নির্বাচন যেন কোনোভাবেই বাধাগ্রস্ত না হয়, সেটি নিশ্চিত করতে অন্তর্বর্তী সরকার এবং নির্বাচন কমিশনকে শুধু আশ্বাস নয়, বরং কঠোর ও দৃশ্যমান পদক্ষেপ দেখাতে হবে। এখন দরকার দ্রুত বিচার এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি। এই হামলার তদন্ত এবং অপরাধীদের দ্রুত গ্রেপ্তার নিশ্চিত করে জনগণের মধ্যে আস্থা ফিরিয়ে আনাটাই এখন সরকারের জন্য প্রধান চ্যালেঞ্জ। নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব হলো, একটি শঙ্কামুক্ত পরিবেশ তৈরি করে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নেওয়া। এই পরিস্থিতিতে নিরাপত্তাই এখন নির্বাচনের প্রধান পূর্বশর্ত।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

দিল্লিতে বাংলাদেশের হাইকমিশনারকে তলব করে যা বলল ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

দুই মামলা থেকে মির্জা আব্বাস-আমান-গয়েশ্বরসহ ৪৫ জনকে অব্যাহতি

হাদিকে হত্যাচেষ্টায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেল, হেলমেট ও ভুয়া নম্বরপ্লেট উদ্ধার

বাংলাদেশের হাইকমিশনারকে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব

মেসিকে ১৫ কোটি টাকার ঘড়ি উপহার দিলেন আম্বানি

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত