Ajker Patrika

বিয়ের প্রলোভনে শারীরিক সম্পর্ক কি ধর্ষণ? আইন কী বলে

সুলতান মাহমুদ, ঢাকা
আপডেট : ১২ নভেম্বর ২০২৩, ১২: ৪০
বিয়ের প্রলোভনে শারীরিক সম্পর্ক কি ধর্ষণ? আইন কী বলে

পারভেজ (ছদ্মনাম) ও রুনা (ছদ্মনাম) দুজনে একই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এবং উভয়ের বয়স ১৮ বছরের বেশি। একই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার সুবাদে তাঁদের মধ্যে প্রথমে বন্ধুত্ব এবং পরে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। সম্পর্কের একপর্যায়ে উভয়ে বিয়ের প্রতিশ্রুতিতে শারীরিক সম্পর্ক গড়ে তোলেন। কিন্তু পরে রুনা যখন বিয়ের চাপ দিতে থাকেন তখন নানা অজুহাতে এড়িয়ে যেতে থাকেন পারভেজ। এর মধ্যে শারীরিক সম্পর্কও অব্যাহত থাকে। একপর্যায়ে সম্পর্কে অবনতি হয়। পারভেজ রুনাকে বিয়ে করবে না বলে জানিয়ে দেন, যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করেন। পরে রুনা থানায় গিয়ে পারভেজের বিরুদ্ধে ‘বিয়ের প্রলোভনে ধর্ষণ’–এর অভিযোগে মামলা করেন। এখন পারভেজকে কি ধর্ষক বলা যাবে? বাংলাদেশের আইন কী বলে? 

বিয়ের প্রলোভনে ধর্ষণের বিষয়টি ব্যাখ্যায় যাওয়ার আগে আমাদের শুরুতেই দেখতে হবে বাংলাদেশের আইনে ধর্ষণের সংজ্ঞায় কী আছে। কেননা এখানে ‘ধর্ষণ’কে প্রধান অপরাধ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। 

ধর্ষণের সংজ্ঞা
দণ্ডবিধি ১৮৬০–এর ৩৭৫ ধারায় ‘ধর্ষণ’কে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। এই ধারা অনুযায়ী, পাঁচটি অবস্থায় শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করলে তা ধর্ষণ বলে গণ্য করা হয়েছে—

এক. নারীর ইচ্ছার বিরুদ্ধে

দুই. নারীর সম্মতি ছাড়া

তিন. নারীর সম্মতি আদায়, তবে তা মৃত্যু কিংবা জখমের ভয় দেখিয়ে

চার. নারীর সম্মতি নিয়েই, কিন্তু পুরুষটি জানেন যে, তিনি ওই নারীর স্বামী নন এবং ওই নারী তাঁকে এমন একজন পুরুষ বলে ভুল করছেন যে পুরুষটির সঙ্গে তাঁর আইনসংগতভাবে বিয়ে হয়েছে বা বিবাহিত বলে তিনি বিশ্বাস করেন। 

পাঁচ. নারীর সম্মতিসহ বা সম্মতি ছাড়া—তবে সেই নারীর বয়স যদি হয় ১৪ বছরের কম। 

এখন, বিয়ের প্রলোভনে ধর্ষণের বিষয়টি বিশ্লেষণে দেখা যায়, সেখানে অভিযুক্ত ব্যক্তি বিয়ের প্রলোভনে নারীর সম্মতি আদায় করেন, যা ৩৭৫ ধারায় ধর্ষণের সংজ্ঞার অন্তর্ভুক্ত নয়। 

মূলত, ৩৭৫ ধারায় প্রদত্ত সংজ্ঞার বিশ্লেষণে স্পষ্ট যে, বিয়ের প্রলোভনে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন ‘ধর্ষণ’ হিসেবে সংজ্ঞায়িত হবে না। 

অন্যদিকে, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন (সংশোধন) আইন, ২০২০ এর ২ (ঙ) ধারায় বলা হয়েছে, ‘ধর্ষণ’ অর্থ ধারা ৯–এর বিধান সাপেক্ষে, Penal Code, ১৮৬০ (Act XLV of ১৮৬০) এর Section ৩৭৫ এ সংজ্ঞায়িত ‘rape’। 

অর্থাৎ দণ্ডবিধি, ১৮৬০–এর ৩৭৫ ধারায় প্রদত্ত ধর্ষণের সংজ্ঞা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। 

বিয়ের প্রলোভনে ধর্ষণ
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০২০ এর ৯ (১) ধারায় বলা হয়েছে, যদি কোনো পুরুষ কোনো নারী বা শিশুকে ধর্ষণ করেন, তাহলে তিনি মৃত্যুদণ্ডে বা যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবেন এবং এর অতিরিক্ত অর্থদণ্ডেও দণ্ডনীয় হবেন। 

এই আইনের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, যদি কোনো পুরুষ বিবাহবন্ধন ছাড়া ১৬ বছরের অধিক বয়সের কোনো নারীর সঙ্গে তাঁর সম্মতি ছাড়া বা ভীতি প্রদর্শন বা প্রতারণামূলকভাবে তাঁর সম্মতি আদায় করে, অথবা ১৬ বছরের কম বয়সের কোনো নারীর সঙ্গে তার সম্মতিসহ বা সম্মতি ছাড়া শারীরিক সম্পর্ক করেন, তা হলে তিনি ওই নারীকে ধর্ষণ করেছেন বলে গণ্য হবে। 

এই ধারায়ও সম্মতি নিয়ে দৈহিক সম্পর্ক হলে তা অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে না। তবে বয়স হতে হবে ১৬ বছরের বেশি। 

বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ইশরাত হাসান মনে করেন, ‘নারীর সম্মতি ছাড়া হলে সেটি রেপ (ধর্ষণ)। বয়স যাই হোক। প্রশ্ন হচ্ছে, নারীর বয়স ১৬ বা ১৮ বছরের বেশি হলে তখন সেটি ধর্ষণ হবে কি না। এখানে প্রশ্ন থাকে সম্মতি কীভাবে আদায় করা হয়েছে।’ 

বিয়ের প্রলোভনে শারীরিক সম্পর্ক ধর্ষণ হবে কি না জানতে চাইলে এই আইনজীবী বলেন, ‘বিয়ের প্রলোভনে এটি (শারীরিক সম্পর্ক) কোনো রেপ (ধর্ষণ) হয় না। যদি এমন হয়, প্রাপ্তবয়স্ক (বয়স ১৬ বা ১৮ বছরের বেশি হলে) একজন নারী ও প্রাপ্তবয়স্ক একজন পুরুষ উভয়ে সম্মতিতে সম্পর্কে জড়িয়েছেন। তাঁদের বিয়ের প্রতিশ্রুতি থাকতেও পারে, আবার নাও থাকতে পারে। তখন সেটি কখনোই ধর্ষণ না।’ 

তিনি বলেন, ‘আমরা এখনো অনেক মামলায় দেখি, একজন নারী বিবাহিত এবং তাঁর বাচ্চা আছে, তিনি আবার বিয়ের প্রলোভনে ধর্ষণের মামলা করেন।’ আইনজীবী ইশরাত প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘যে নারী এরই মধ্যে বিবাহিত তাঁকে আবার বিয়ের প্রতিশ্রুতি দেয় কীভাবে? তাঁকে তো বিয়ের প্রতিশ্রুতি দেওয়া সম্ভব না। কেননা তিনি অলরেডি ম্যারিড।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘এই ধরনের মামলাগুলো নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের অপব্যবহার। এ নিয়ে কিছু মানুষ সুবিধা নেয়। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় তারা যারা আসলেই প্রকৃত ভিকটিম (ক্ষতিগ্রস্ত)। কারণ, এই ধরনের মামলা হলে আদালতে মামলার জট বাড়ে, তখন প্রকৃত ভুক্তভোগীরা বিচার পান না।’ 

অধিকতর ব্যাখ্যায় আইনজীবী ইশরাত বলেন, ‘বিয়ের প্রলোভন বললেই তো হবে না। এমনও তো হতে পারে, একটি ছেলেকে একটি মেয়ে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দেয়, পরে মেয়েটি যদি তার কমিটমেন্ট (ওয়াদা) না রাখতে পারে, তাহলে ছেলেটি কি মেয়েটির বিরুদ্ধে রেপ কেস (ধর্ষণ মামলা) করতে পারবে যে, আমাকে বিয়ে করল না কেন? সম্পর্কে জড়িয়েছিল কেন? সেটা তো সম্ভব না। তাহলে এটাও রেপ হবে না।’ 

অন্যদিকে, দণ্ডবিধি ১৮৬০–এর ৪৯৩ ধারা অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি যদি কোনো নারীকে প্রতারণামূলকভাবে আইনসম্মত বিয়ের বিশ্বাসে প্ররোচিত করে, কিন্তু আদৌ ওই বিয়ে আইনসম্মতভাবে না হয় এবং ওই নারীর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করে, তবে অপরাধী সর্বোচ্চ ১০ বছর পর্যন্ত সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদণ্ডে ও অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবে। 

এই ধারাটি মূলত বিয়ে বলবৎ আছে বিশ্বাস করিয়ে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। অতএব, এই ধারায় বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে বা ভবিষ্যতে বিয়ে করার আশ্বাস দিয়ে দৈহিক সম্পর্ক করলে তা অপরাধ হবে না। 

ধর্ষণ মামলা কোথায় হবে
ধর্ষণের অভিযোগ থানায় করতে হবে। পুলিশ ধর্ষণের অভিযোগ এফআইআর হিসেবে গ্রহণ করে তদন্ত শেষে আদালতে প্রতিবেদন দেবে। যদি থানা–পুলিশ অভিযোগ না নেয়, তাহলে ভুক্তভোগী নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মামলা করতে পারেন। ট্রাইব্যুনাল পুলিশকে মামলা এফআইআর হিসেবে গ্রহণের নির্দেশ দিতে পারেন বা তদন্ত করে প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশ দিতে পারেন। 

তবে এই মামলা তদন্ত করতে গিয়ে পুলিশকে বেশ কিছু সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। যদি এমন হয়, ধর্ষণের ঘটনার ১৫ দিন বা ১ মাস বা তারও পরে ভুক্তভোগী থানায় বা আদালতে ধর্ষণের মামলা করেন। তখন প্রমাণের জন্য অনেক সময়ই প্রয়োজনীয় আলামত বা সাক্ষ্য প্রমাণ পাওয়া যায় না। তখন মামলায় বেশির ভাগ ক্ষেত্রে বাদী পক্ষ হেরে যান। আসামি খালাস পান। 

বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের একাধিক রায়ে বলা আছে, ১৬ বছরের ঊর্ধ্বে কোনো নারীর সম্মতিতে তাঁর সঙ্গে কারও শারীরিক সম্পর্ক হলে সেটিকে ধর্ষণ হিসেবে বিবেচনা করা যাবে না। এসব রায়ে আদালত বিয়ের প্রলোভন ধর্ষণের অভিযোগও খারিজ করেছেন। 

ভারতের উচ্চ আদালতও বলেছেন, কোনো নারী স্বেচ্ছায় দীর্ঘদিন ধরে কারও সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক বজায় রাখার পর ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে বিয়ের প্রলোভনে ধর্ষণের অভিযোগ আনতে পারবেন না। 

 ২০১৭ সালে বোম্বে হাইকোর্ট একটি মামলায় পর্যবেক্ষণ দেন, প্রাপ্তবয়স্ক নারীদের ক্ষেত্রে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে শারীরিক সম্পর্ককে ধর্ষণ হিসেবে গণ্য করা যাবে না। মামলার রায়ে বোম্বে হাইকোর্টের বিচারপতি মৃদুলা ভাটকার বলেন, ‘দুজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির মধ্যে শারীরিক সম্পর্ক যদি সেই মুহূর্তে উভয়ের সম্মতিতেই হয়ে থাকে, তা হলে তা কীভাবে ধর্ষণ হবে?’ তিনি বলেন, ‘নিজেদের ইচ্ছাতেই প্রেমিক–প্রেমিকা অনেক বেশি ঘনিষ্ঠ হয়ে থাকেন। পরে আবার অনেকেই এটাকে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ধর্ষণের অভিযোগ তোলেন। এটা হওয়া উচিত নয়।’ 

বিচারপতি বলেন, ‘সমাজ এখন আগের চেয়ে অনেক পরিবর্তিত হয়েছে। অতীতে বিয়ের আগে কোনো মেয়ে বা ছেলে শারীরিক সম্পর্ক রাখতেন না। সেটা সমাজের চোখে অপরাধ ছিল। কিন্তু এখনকার যুবসমাজ অনেক বেশি খোলা মনের। নিজেদের ইচ্ছাতেই তাঁরা প্রেমিক বা প্রেমিকার সঙ্গে অনেক বেশি ঘনিষ্ঠ হয়ে থাকেন।’ 

আবার অনেকেই বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে শারীরিক সম্পর্ক করেন। এটা হওয়া উচিত নয়। কারণ, বিয়ের আগে শারীরিক সম্পর্কের পরিণাম কী হতে পারে, তা একজন শিক্ষিত ও প্রাপ্তবয়স্ক মেয়ে অবশ্যই জানবেন। তাই সব ক্ষেত্রেই এমন ঘটনাকে ধর্ষণের পর্যায়ে ফেলা উচিত হবে না। যোগ করেন বিচারপতি। 

বিচারপতি আরও বলেন, ‘এর মানে যদিও এই নয় যে, প্রাপ্তবয়স্ক এবং শিক্ষিত মেয়েদের আনা সব অভিযোগকে আগে থেকেই খারিজ করা হবে। কোনটা ধর্ষণ আর কোনটা ধর্ষণ নয়, তা অবশ্যই পরিস্থিতির বিচারে স্থির করা হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

জামায়াতে যোগ দিলেন বিএনপি থেকে পাঁচবার বহিষ্কৃত আখতারুজ্জামান

হাদির অবস্থা আশঙ্কাজনক, মস্তিষ্ক মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত, ফুসফুসেও আঘাত: মেডিকেল বোর্ড

মা-বাবাকে নির্যাতন, ছেলেকে কোমর পর্যন্ত মাটিতে পুঁতে রাখল প্রতিবেশীরা

অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেইজ-২ অবিলম্বে চালু হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

মেসিকে কলকাতায় আনার মূল উদ্যোক্তা আটক

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

হাদিকে গুলির ঘটনায় সন্দেহভাজন ফয়সাল ওরফে দাউদ কে, মাস্ক পরা ব্যক্তিটিই কি তিনি

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৩: ০৫
হাদিকে গুলি করা সন্দেহভাজন। ছবি: সংগৃহীত
হাদিকে গুলি করা সন্দেহভাজন। ছবি: সংগৃহীত

জুলাই–আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আলোচিত মুখ ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ওসমান হাদিকে গুলি করার ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগে মাধ্যমে বহুল আলোচিত নাম ফয়সাল করিম মাসুদ কিংবা দাউদ খান। গতকাল শুক্রবার হাদি গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর থেকেই এই দুই নামে এক ব্যক্তির ছবি ফেসবুকে ভেসে বেড়াচ্ছে।

হাদিকে গুলির ঘটনায় মাস্ক পরা দুই তরুণ জড়িত বলে তাঁর সহযোদ্ধাদের সন্দেহ। তাঁদের দাবি, কয়েকদিন ধরে দুই তরুণ মাস্ক পরে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী হাদির সঙ্গে গণসংযোগে অংশ নিচ্ছেন। বার বার তাঁদের মাস্ক খুলতে বলা হলেও তাঁরা রাজি হননি। হাদিঘনিষ্ঠদের সন্দেহ, এই তরুণরা হাদিকে হত্যার উদ্দেশ্যে তাঁর গতিবিধি বোঝার জন্য তাঁর সঙ্গে যুক্ত হন।

দুজনের মধ্যে মাস্ক পরা একজন হাদির পাশে বসে আছে— এমন একটি ছবি ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেকেই তাকে ‘ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খান’ হিসেবে দেখিয়েছেন। তবে মাস্ক করা এই তরুণই যে হাদিকে গুলি করেছেন, কিংবা এই তরুণই যে ফয়সাল, তা নিশ্চিত করে বলছে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) পক্ষ থেকে ‘সন্দেহভাজন’ হিসেবে শনাক্ত একজনের ছবি প্রকাশ করে ধরিয়ে দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।

ডিএমপির বিবৃতিতে বলা হয়, ‘শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) রাজধানীর বিজয়নগর বক্স কালভার্ট এলাকায় মোটরসাইকেল আরোহী দুর্বৃত্তদের হামলায় ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ওসমান হাদি গুরুতর আহত হন। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ হামলাকারীদের গ্রেফতারে রাজধানীতে জোর অভিযান পরিচালনা করছে। ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে ছবির ব্যক্তিকে প্রাথমিকভাবে সনাক্ত করা গেছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ তাকে হন্য হয়ে খুঁজছে। উক্ত ব্যক্তি সম্পর্কে কোন তথ্য থাকলে বা তার সন্ধান পেলে দ্রুত নিম্নলিখিত মোবাইল নম্বর অথবা ৯৯৯ এর মাধ্যমে পুলিশকে জানানোর জন্য বিনীত অনুরোধ করা হলো।’

পুলিশের বিবৃতিতে এই তরুণের নাম উল্লেখ করা না হলেও ছবি দেখে ‘ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খান’ বলে আন্দাজ করা যায়। এই তরুণকেও আগে হাদীর সঙ্গে দেখা গেছে। তবে গত কয়েকদিন ধরে হাদির সঙ্গে গণসংযোগে থাকা মাস্ক পরা তরুণটিই ‘ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খান’ এমন কোনো তথ্য পুলিশের কাছ থেকে পাওয়া যায়নি।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, গত ৯ ডিসেম্বর বাংলামোটর এলাকায় হাদির ইনকিলাব কালচারাল সেন্টারে গিয়ে হাদির পাশে বসে আলোচনা শুনেছিলেন ফয়সাল করিম। সেই আলোচনার ছবিও ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে।

ফয়সাল করিম নামের তরুণ কার্যক্রমনিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের নিষিদ্ধঘোষিত সহযোগী সংগঠন ছাত্রলীগের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ২০১৯ সালের ১১ মে ঘোষিত কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে তিনি সদস্য হন। তাঁর পুরো নাম ফয়সাল করিম দাউদ খান।

নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরদিন গতকাল শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর পুরানা পল্টনের বক্স কালভার্ট রোডে গুলিবিদ্ধ হন ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ও ঢাকা–৮ সংসদীয় আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী ওসমান হাদি। হাদিকে বহনকারী রিকশাকে অনুসরণ করে পেছন দিকে থেকে মোটরসাইকেলে এসে তাঁকে গুলি করে চলে যায় আততায়ীরা। হাদি রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাঁর অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।

ইনকিলাব কালচারাল সেন্টার নামে ওসমান হাদির প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন জায়গায় তাঁর সঙ্গে ফয়সাল করিমের কিছু ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক ও বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। সেই ছবিগুলোতে থাকা ফয়সাল করিমের সঙ্গে মাস্ক পরা ব্যক্তির চেহারার কিছুটা সাদৃশ্য আছে। সেকারণে গুলি ছোড়ার ঘটনায় তাঁকে সন্দেহ করা হচ্ছে।

এর মধ্যেই দুপুরে ডিএমপি সন্দেহভাজনকে শনাক্তের কথা জানায় এবং ওসমান হাদিকে গুলি করা ব্যক্তিকে ধরিয়ে দিতে পারলে ৫০ লাখ টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।

গত ৯ ডিসেম্বর বাংলামোটর এলাকায় হাদির ইনকিলাব কালচারাল সেন্টারে গিয়ে হাদির পাশে বসে আলোচনা শুনেছিলেন ফয়সাল করিম।
গত ৯ ডিসেম্বর বাংলামোটর এলাকায় হাদির ইনকিলাব কালচারাল সেন্টারে গিয়ে হাদির পাশে বসে আলোচনা শুনেছিলেন ফয়সাল করিম।

আলোচিত ফয়সাল করিম কে?

পেশাদারদের যোগাযোগমাধ্যম লিংকডইনে ফয়সাল করিমের নামে প্রোফাইল আছে। সেখানে তিনি নিজেকে অ্যাপল সফট আইটি, ওয়াইসিইউ টেকনোলজি ও এনলিস্ট ওয়ার্ক নামে তিন প্রতিষ্ঠানের মালিক হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

লিংকডইন প্রোফাইলের তথ্য অনুযায়ী, ফয়সাল করিম ২০১৩ সালে ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কম্পিউটারবিজ্ঞানে স্নাতক সম্পন্ন করেছেন। পরে আরেকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি এমবিএ করেছেন বলে সেখানে উল্লেখ রয়েছে।

২০২৪ সালে জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের সময় আন্দোলনকারীদের দমনে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতা–কর্মীদের সঙ্গে মাঠে ছিলেন বলে ছাত্রলীগের সূত্র জানিয়েছে।

ওসমান হাদিকে গুলির ঘটনায় নাম আসার পর ফয়সাল করিমের সঙ্গে আওয়ামী লীগ আমলে বাংলাদেশের দুইবারের রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের কিছু নেতার ছবি ফেসবুকে প্রকাশিত হয়েছে। এ ছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে হাদির সঙ্গে ঢাকা–৮ আসনে গণসংযোগ এবং বাংলামোটরে হাদির প্রতিষ্ঠিত ইনকিলাব কালচারাল সেন্টারের আড্ডায় ফয়সালের অংশ নেওয়ার ছবিও ভাইরাল হয়েছে। অনেকে ধারণা করছেন, ফয়সাল করিম ওসমান হাদিকে বেশ কিছুদিন ধরে অনুসরণ করছিলেন।

২০১৬ সালে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) সহযোগিতা ও সরকারের তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগের পৃষ্ঠপোষকতায় বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে ‘ব্যাটল অব ৭১’ নামে একটি কম্পিউটার গেম তৈরি করেছিল ফয়সাল করিমের মালিকানাধীন ওয়াইসিইউ টেকনোলজি লিমিটেড। সে বছরের নভেম্বরে ওই গেমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বেসিসের তৎকালীন সভাপতি এবং পরে ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বারও উপস্থিত ছিলেন।

২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ‘আসনভিত্তিক নির্বাচন পরিচালনা ও সমন্বয়ক কমিটি’ করেছিল কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। ঢাকা–১২ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিলেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। এই আসনের সমন্বয়ক কমিটির সদস্য ছিলেন ফয়সাল করিম।

অভ্যুত্থানের অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার ফয়সালের দ্রুত জামিন নিয়ে প্রশ্ন সবার

জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের পর গত বছরের ২৮ অক্টোবর ঢাকার আদাবরের বাইতুল আমান হাউজিং সোসাইটি এলাকায় ব্রিটিশ কলাম্বিয়া স্কুলের চতুর্থ তলায় অফিসে অস্ত্রের মুখে ১৭ লাখ টাকা লুটের ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় আদাবর থানার মামলার প্রধান আসামি ছিলেন ফয়সাল করিম।

মামলা হওয়ার কিছুদিন পর ৭ নভেম্বর আদাবর এলাকা থেকে ফয়সাল করিমকে গ্রেপ্তার করে র‍্যাব। তাঁর কাছ থেকে দুটি বিদেশি পিস্তল, দুটি ম্যাগাজিন ও পাঁচটি গুলিও উদ্ধার করা হয়। ওই মামলায় গত ১৬ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট থেকে জামিন পান ফয়সাল করিম। জামিনের সময়সীমা বাড়াতে গত ১২ আগস্ট আবারও আবেদন করলে হাইকোর্ট নতুন করে তাঁর এক বছরের জামিন মঞ্জুর করেন।

জামিনে থাকা অবস্থায় এবার তাঁর বিরুদ্ধে ওসমান হাদিকে গুলি করার অভিযোগ এল। এত অল্প সময়ের মধ্যে তিনি কীভাবে জামিন পেলেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। কারণ, কোনো অপরাধমূলক কাজের প্রমাণ না থাকলেও অভ্যুত্থানের পর শুধু মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা নিয়ে আলোচনা সভা করায় গ্রেপ্তার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও সাংবাদিকের জামিন বারবার নাকচ করা হয়েছিল। আর এ রকম লুটের ঘটনায় দুটি অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিকে এতো দ্রুত জামিন দেওয়া হলো কীভাবে, সেই প্রশ্ন নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এখন আলোচনা–সমালোচনায় সরব।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

জামায়াতে যোগ দিলেন বিএনপি থেকে পাঁচবার বহিষ্কৃত আখতারুজ্জামান

হাদির অবস্থা আশঙ্কাজনক, মস্তিষ্ক মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত, ফুসফুসেও আঘাত: মেডিকেল বোর্ড

মা-বাবাকে নির্যাতন, ছেলেকে কোমর পর্যন্ত মাটিতে পুঁতে রাখল প্রতিবেশীরা

অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেইজ-২ অবিলম্বে চালু হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

মেসিকে কলকাতায় আনার মূল উদ্যোক্তা আটক

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

খুনের পর মোবাইল, ল্যাপটপ, স্বর্ণালংকার ও নগদ টাকা লুট, ‘গৃহকর্মী আয়েশা’র পরিচয় মেলেনি

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১০ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯: ৫৭
ছবি: সিসিটিভির ফুটেজ থেকে নেওয়া
ছবি: সিসিটিভির ফুটেজ থেকে নেওয়া

রাজধানীর মোহাম্মদপুরে মা-মেয়েকে খুন করার পর কথিক গৃহকর্মী আয়েশা ওই বাসা থেকে একটি মোবাইল ফোন, একটি ল্যাপটপ, বেশ কিছু স্বর্ণালংকার ও নগদ টাকা লুট করেন। এ ঘটনায় গতকাল সোমবার রাতে মোহাম্মদপুর থানায় করা হত্যা মামলার এজাহারে এই দাবি করা হয়েছে। তবে আয়েশা নামে পরিচয় দেওয়া ওই তরুণীর প্রকৃত পরিচয় মেলেনি এখনো।

স্ত্রী লায়লা আফরোজ (৪৮) ও মেয়ে নাফিসা লাওয়াল বিনতে আজিজ (১৫) হত্যার ঘটনায় গতকাল মামলাটি করেন নাটোরের স্থায়ী বাসিন্দা আ জ ম আজিজুল ইসলাম। মামলায় কথিত গৃহকর্মী মোছা. আয়েশাকে (২০) একমাত্র আসামি করা হয়েছে। তবে এজাহারে তাঁর বাবার নাম ও ঠিকানায় ‘অজ্ঞাত’ লেখা হয়েছে।

আজ মঙ্গলবার দুপুরে আজকের পত্রিকাকে মামলার এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন মোহাম্মদপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) রকিবুজ্জামান তালুকদার। গতকাল সকাল ৭টা ৫১ মিনিট থেকে ৯টা ৩৫ মিনিটের মধ্যে যেকোনো সময় এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে।

এজাহারে বাদী আজিজুল লিখেছেন, তিনি পেশায় একজন শিক্ষক। মোহাম্মদপুরে পরিবার নিয়ে থাকেন। চার দিন আগে উল্লিখিত আসামি তাঁর বাসায় খণ্ডকালীন গৃহকর্মী হিসেবে কাজ শুরু করেন। গতকাল সকাল ৭টার দিকে তিনি (আজিজুল) তাঁর কর্মস্থল উত্তরায় চলে যান। কর্মস্থলে থাকাকালে তিনি তাঁর স্ত্রীর মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করে ব্যর্থ হন।

পরে তিনি বেলা ১১টার দিকে বাসায় আসেন। এসে দেখতে পান, তাঁর স্ত্রীর গলাসহ শরীরের বিভিন্ন জায়গায় কাটা। স্ত্রী রক্তাক্ত জখম হয়ে মৃত অবস্থায় পড়ে আছেন আর মেয়ের গলার নিচে ডান পাশে কাটা। মেয়ে গুরুতর অবস্থায় বাসার প্রধান ফটকে পড়ে আছে। মেয়ের এই অবস্থা দেখে তিনি দ্রুত তাকে উদ্ধার করেন। পরিচ্ছন্নতাকর্মী আশিকের মাধ্যমে মেয়েকে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান। হাসপাতালে নেওয়ার পর তাকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক।

মামলায় আজিজুল আরও লিখেছেন, তিনি বাসার সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে পর্যালোচনা করেন। এতে তিনি দেখতে পান, আসামি সকাল ৭টা ৫১ মিনিটের সময় কাজ করার জন্য বাসায় আসেন। সকাল ৯টা ৩৫ মিনিটের সময় আসামি তাঁর (বাদী) মেয়ের স্কুলড্রেস পরে বাসা থেকে পালিয়ে যান। যাওয়ার সময় একটি মোবাইল ফোন, একটি ল্যাপটপ, স্বর্ণালংকার, নগদ অর্থসহ অন্যান্য মূলবান সামগ্রী নিয়ে যান আসামি।

মামলায় বাদী লিখেছেন, সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করে তিনি নিশ্চিত হন যে, অজ্ঞাত কারণে আসামি তাঁর (বাদী) স্ত্রী ও মেয়েকে ছুরি বা অন্য কোনো ধারালো অস্ত্র দিয়ে গুরুতর জখম করে হত্যা করেন।

মা-মেয়ে হত্যার আসামিকে শনাক্ত করা যায়নি। মোহাম্মদপুর থানা-পুলিশ জানায়, গৃহকর্মীর পরিচয় এখনো শনাক্ত করা যায়নি। পুলিশ চেষ্টা চালাচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

জামায়াতে যোগ দিলেন বিএনপি থেকে পাঁচবার বহিষ্কৃত আখতারুজ্জামান

হাদির অবস্থা আশঙ্কাজনক, মস্তিষ্ক মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত, ফুসফুসেও আঘাত: মেডিকেল বোর্ড

মা-বাবাকে নির্যাতন, ছেলেকে কোমর পর্যন্ত মাটিতে পুঁতে রাখল প্রতিবেশীরা

অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেইজ-২ অবিলম্বে চালু হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

মেসিকে কলকাতায় আনার মূল উদ্যোক্তা আটক

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

সৌদি আরবে অপহরণ, ৫০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি দেশে

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

সৌদি আরবে এক প্রবাসী ব্যবসায়ীকে অপহরণ করে বাংলাদেশে তাঁর পরিবারের কাছ থেকে ৫০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে একটি চক্র। না দিলে হত্যার হুমকিও দেওয়া হয়। পরিবারের সদস্যরা বিভিন্ন ব্যাংক হিসাব ও মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসে (এমএফএস) ধাপে ধাপে মোট ৩৫ লাখ টাকা পাঠালে সৌদি আরবের রিয়াদে অচেতন অবস্থায় তাঁকে ফেলে যায় অপহরণকারীরা।

গত মঙ্গলবার অপহরণকারী এই চক্রের বাংলাদেশি সদস্য মো. জিয়াউর রহমানকে (৪২) মাগুরার শালিখা থানার হরিপুর বাজার এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করেছে সিআইডি।

গ্রেপ্তারের পর সংস্থার বিশেষ পুলিশ সুপার জসীম উদ্দিন খান জানান, অপহরণকারীদের দেওয়া এমএফএস ও ব্যাংক হিসাব নম্বর বিশ্লেষণ করে জিয়াউর রহমানকে শনাক্ত করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি মুক্তিপণ থেকে ৫ লাখ টাকা কমিশন নেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন।

চলতি বছরের ১২ জানুয়ারি মো. রাসেল নামের ওই প্রবাসীকে অপহরণের পর সে মাসের ২১ তারিখে তাঁর শ্বশুর রাজধানীর খিলগাঁও থানায় মামলা করেন। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। মামলাটি সিআইডির ঢাকা মেট্রো (পূর্ব) ইউনিট তদন্ত করছে।

মামলার এজাহারে বলা হয়, মো. রাসেল ২০ বছর ধরে রিয়াদে ব্যবসা করছেন। ১২ জানুয়ারি অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিরা তাঁকে অপহরণ করে তাঁর বড় ভাই সাইফুল ইসলামের কাছে ইমু ও ভিওআইপিতে ফোন করে মুক্তিপণ দাবি করে। টাকা না দিলে হত্যার হুমকিও দেওয়া হয়। কয়েক ধাপে টাকা পাঠানোর পর তাঁকে রাস্তার পাশে ফেলে রেখে যায় অপহরণকারীরা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

জামায়াতে যোগ দিলেন বিএনপি থেকে পাঁচবার বহিষ্কৃত আখতারুজ্জামান

হাদির অবস্থা আশঙ্কাজনক, মস্তিষ্ক মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত, ফুসফুসেও আঘাত: মেডিকেল বোর্ড

মা-বাবাকে নির্যাতন, ছেলেকে কোমর পর্যন্ত মাটিতে পুঁতে রাখল প্রতিবেশীরা

অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেইজ-২ অবিলম্বে চালু হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

মেসিকে কলকাতায় আনার মূল উদ্যোক্তা আটক

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

পুলিশের সঙ্গে খারাপ আচরণ করা হচ্ছে: ডিএমপি কমিশনার

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ২০ নভেম্বর ২০২৫, ২০: ২৫
ডিবির সাইবার সাপোর্ট সেন্টার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন ডিএমপি কমিশনার শেখ সাজ্জাত আলী। ছবি: আজকের পত্রিকা
ডিবির সাইবার সাপোর্ট সেন্টার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন ডিএমপি কমিশনার শেখ সাজ্জাত আলী। ছবি: আজকের পত্রিকা

অরাজকতা প্রতিহত করতে গেলে পুলিশের সঙ্গে অসদাচরণ করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার শেখ সাজ্জাত আলী। তিনি বলেছেন, পুলিশ যখন অরাজকতা ঠেকানোর চেষ্টা করছে, তখন তাদের সঙ্গে যে আচরণ করা হয়েছে, তা অত্যন্ত দুঃখজনক।

ডিএমপি কমিশনার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, ‘আমার অফিসারদের সঙ্গে এ ধরনের আচরণ করবেন না।’

আজ বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সাইবার সাপোর্ট সেন্টার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

সাম্প্রতিক অরাজকতা প্রতিরোধের সময় পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণের বিষয়ে ডিএমপি কমিশনার আরও বলেন, ‘পুলিশ যখন অরাজকতা প্রতিহত করার চেষ্টা করছিল, তখন আমার অফিসারদের সঙ্গে যে ধরনের ব্যবহার করা হয়েছে, তা অত্যন্ত হতাশাজনক। আমার অফিসারদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করবেন না। আমরা সংঘাতে জড়াতে চাই না; আমরা সেবা দিতে চাই। আপনারা যেটি করতে চাচ্ছিলেন, সেটি করলে সমাজে, ঢাকায় এবং পুরো দেশে অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো।’

কমিশনার জানান, একটি গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তন হয়েছে। এখন যদি একই ধরনের কার্যকলাপ দেখা যায়, তাহলে সমাজে অস্থিরতা বাড়বে। এ জন্যই পুলিশের সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছিলেন। কিন্তু তাঁদের প্রতি এমন আচরণ কোনো শিক্ষিত ও সচেতন মানুষের কাছ থেকে প্রত্যাশিত নয়।

পল্লবী থানার সামনে ককটেল বিস্ফোরণে এক পুলিশ সদস্য আহত হওয়ার ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘আমার নিরপরাধ অফিসারকে যেভাবে ককটেল মেরে আহত করা হয়েছে, তা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। এতে সদস্যদের মনোবল নষ্ট হয় এবং এর ক্ষতি সমাজকেই ভোগ করতে হয়। যদি পুলিশের মনোবল ভেঙে যায়, তবে ৫ আগস্টের পর যেভাবে ৮০ বছরের বৃদ্ধও লাঠি হাতে নিয়ে মহল্লা পাহারা দিয়েছেন, সেই পরিস্থিতি আবার তৈরি হতে পারে।’

যারা ককটেল ছোড়া বা এ ধরনের দুর্বৃত্তায়নের মাধ্যমে পুলিশ সদস্যদের মনোবল ভাঙার চেষ্টা করছে, তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন—‘এই কাজটি করবেন না।’

গুলির নির্দেশনার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটি পুলিশ কমিশনারের নির্দেশনা নয়, এটি দেশের আইন। আইন পুলিশ বানায় না, পার্লামেন্ট বানায়। আইন যা বলেছে, আমরা শুধু সেটাই অনুসরণের নির্দেশ দিয়েছি।’

ডিএমপি কমিশনার জানান, দ্রুত পরিবর্তনশীল প্রযুক্তিনির্ভর অপরাধ মোকাবিলায় আধুনিক সক্ষমতা গড়ে তুলতেই ডিবির সাইবার সাপোর্ট সেন্টার উদ্বোধন করা হয়েছে। এখানে থাকবে অত্যাধুনিক প্রযুক্তিযুক্ত ল্যাব, দক্ষ তদন্তকারী দল, ডিজিটাল ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ এবং ২৪ ঘণ্টার রেসপন্স টিম। ফেসবুক পেজ, ই-মেইল এবং ডিবির অনলাইন চ্যানেলের মাধ্যমে নাগরিকেরা সরাসরি অভিযোগ জানাতে পারবেন। প্রযুক্তিনির্ভর, সময়োপযোগী ও প্রমাণভিত্তিক পুলিশ সেবা নিশ্চিত করাই তাদের লক্ষ্য।

ডিএমপি কমিশনার বলেন, বর্তমান সময়ে অনলাইন জালিয়াতি, প্রতারণা, ডিজিটাল হয়রানি, মানহানি, অনলাইন গ্যাম্বলিংসহ নানা অপরাধ মানুষের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা ও আর্থিক সুরক্ষাকে হুমকির মুখে ফেলছে। তাই জনগণের নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে ডিএমপি তার সক্ষমতা বাড়িয়ে চলেছে।

নারী ও কিশোরদের সুরক্ষাকে গুরুত্ব দিয়ে সাইবার সাপোর্ট সেন্টার কাজ করবে উল্লেখ করে ডিএমপি কমিশনার বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নারী ও কিশোরদের ওপর হয়রানির অভিযোগ দ্রুত সমাধানের জন্য বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হবে। হয়রানির শিকার হলে দ্রুত সহায়তা নিশ্চিত করাই তাদের অন্যতম অঙ্গীকার।

সাইবার নিরাপত্তা শুধু পুলিশের দায়িত্ব নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, পরিবার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সমাজের সচেতনতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিরাপদ অনলাইন পরিবেশ গড়ে তুলতে তিনি সম্মিলিত উদ্যোগের ওপর গুরুত্ব দেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

জামায়াতে যোগ দিলেন বিএনপি থেকে পাঁচবার বহিষ্কৃত আখতারুজ্জামান

হাদির অবস্থা আশঙ্কাজনক, মস্তিষ্ক মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত, ফুসফুসেও আঘাত: মেডিকেল বোর্ড

মা-বাবাকে নির্যাতন, ছেলেকে কোমর পর্যন্ত মাটিতে পুঁতে রাখল প্রতিবেশীরা

অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেইজ-২ অবিলম্বে চালু হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

মেসিকে কলকাতায় আনার মূল উদ্যোক্তা আটক

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত