জাহীদ রেজা নূর
শংকরদা এসেছেন মস্কো থেকে, উঠেছেন ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটে। সেটা আমাদের ক্রাসনাদার শহর থেকে ২৫/৩০ কিলোমিটার দূরে। হলুদ রঙের বাসে করে যেতে হয় সেখানে।
আমরা তখন প্রিপারেটরি ফ্যাকাল্টিতে রুশ ভাষা রপ্ত করছি। অর্থাৎ, সেটা ১৯৮৬ সালের শেষভাগ অথবা ১৯৮৭ সালের শুরু। মস্কোর তিমিরইয়াজিভ কৃষি ইনস্টিটিউটে যারা পড়াশোনা করেন, তাঁরা তাঁদের ব্যবহারিক কাজের একটা অংশ আমাদের শহরে এসে করেন। শংকরদাও একই কাজে সেখান থেকে এসেছেন। আগেও এসেছেন। সে সুবাদে আমাদের কুবান কৃষি ইনস্টিটিউটের বড় ভাইদের সঙ্গে পিএইচডির ছাত্র শংকরদার জানাশোনা। তিনিই ছুটির দিনে আমাদের নিয়ে যেতে বলেছেন তাঁর হোস্টেলে। দুপুরে রান্না করে খাওয়াবেন। সম্ভবত পঞ্চম বর্ষের মাসুদ ভাই, চতুর্থ বর্ষের শ্যামলদা আর তৃতীয় বর্ষের জয়নাল ভাই আর প্রথম বর্ষের দেবাশীষদার সঙ্গে প্রিপারেটরির আমি আর রিপন গিয়েছিলাম শংকরদার ওখানে।
ক্রাসনাদার শহরে ধান হয় প্রচুর। অনেকটা ট্রপিক্যাল ও সাব ট্রপিক্যাল আবহাওয়া। মাছও পাওয়া যায় নদীতে। মিষ্টি পানির তাজা মাছ সোভিয়েত ইউনিয়নের সবখানে পাওয়া যেত না। আমরা তাই ‘মাছে-ভাতে বাঙালি’র মতো টিকে থাকতে পারছিলাম বিদেশ-বিভুঁইয়ে।
ক্রাসনাদার কৃষি ইনস্টিটিউটের (এখন তা বিশ্ববিদ্যালয় হয়ে গেছে) সামনের বাসস্ট্যান্ড থেকে সকাল এগারোটার দিকে বাসে উঠেছিলাম আমরা। সকালে নাশতা করেছি। শংকরদার ওখানে গিয়ে দুপুরে ভাত খাব। এখানে বলে রাখি, আমরা যখন পড়াশোনা করতাম, তখন দাওয়াত মানে বিশাল খাদ্যভান্ডার নয়। মাছ অথবা মাংস, সঙ্গে একটা সবজি কিংবা ডাল—তাতেই অভ্যস্ত ছিলাম আমরা। যে স্টাইপেন্ড পেতাম, সেটা দিয়ে চলতে হতো, বাড়তি আয়ের উপায় ছিল না। তাই বুঝেশুনে চলতাম।
বাসটা যখন চলা শুরু করল, তখন পঞ্চম প্রসূতি হাসপাতাল পার হওয়ার পর থেকেই দুধারে দেখতে পেলাম বিস্তৃত ফসলের খেত। ট্রাক্টর দিয়ে চাষ করা হয়েছে সে মাঠগুলো। একটু দূরেই কুবান নদী। এই নদীটি আমাদের কত যে আপন ছিল, তা বলে বোঝানো যাবে না; সেটা এখন শুধুই স্মৃতি। বাস যখন ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের কাছাকাছি আমাদের নামিয়ে দিল, তখন সামনের দিকে তর্জনী উঁচিয়ে মাসুদ ভাই অথবা জয়নাল ভাই বললেন, ‘স্মাৎরি, এতা দিন।’
মানে, ‘দ্যাখো, এগুলো বাঙ্গি!’
ছোট ছোট রসালো বাঙ্গি ছড়িয়ে আছে বিস্তৃত খেতে। মাসুদ ভাই বললেন, ‘যদি কেউ খেতে চাও, খেতে পারো।’
তখনই বাঙালির দল নেমে পড়ল খেতে। বাঙ্গিগুলো আকারে ছোট। ফাটিয়ে খাওয়া শুরু হলো। আর তখনই বোঝা গেল, এ এক অবিশ্বাস্য রসালো বাঙ্গি! বাংলাদেশে এ ধরনের মিষ্টি আর রসালো বাঙ্গি কখনো দেখিনি। ফলে যা হলো, সেই রসালো বাঙ্গিতে তৃষ্ণা নিবারণ হতে লাগল। যে চাষিরা এই জমি চাষ করেছেন, ফসল ফলিয়েছেন, তাঁরাও বাঙালিদের এই কাণ্ড-কারখানা দেখে হাসছিলেন মিটিমিটি। বলছিলেন, ‘কুশাইতে, রিবইয়াতা! (খাও, খাও, ছেলেরা)।’
তখনো বিদেশিদের খুব ভালোবাসত গ্রামের মানুষেরা। শহুরে সোভিয়েত নাগরিকদের সঙ্গে শহরের বাইরের নাগরিকদের মধ্যে পার্থক্য ছিল। যারা বিদেশিদের প্রতিদিন দেখত, তারা একভাবে জানত বিদেশিদের। তাদের চোখে এই বিদেশিদের ভালো-মন্দ ছিল বইয়ের খোলা পাতার মতো। অন্যদিকে যারা কালেভদ্রে বিদেশিদের সংস্পর্শে আসত, তাদের কাছে বিদেশিরা ছিল বিস্ময়! সে ব্যাপারে পরে একসময় লেখা যাবে।
সরাসরি ফসলের মাঠ থেকে এভাবে বাঙ্গি তুলে খাওয়ার অভিজ্ঞতা এর আগে ছিল না। এটাই ছিল প্রথমবারের মতো। তাই সে আনন্দ ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়।
সে যুগে মোবাইল ফোন আসেনি। যোগাযোগ হতো ল্যান্ডফোনে। চিঠিপত্রেরও কদর ছিল। আমরা যে এসে পৌঁছেছি, সেটা তখনো শংকরদা জানেন না। জানবেন কী করে? পাগল হয়ে বাঙ্গি-ভক্ষণরত শিক্ষার্থীরা তো পিকনিকের আনন্দ পেয়ে গেছে ততক্ষণে!
রোদটা প্রখর ছিল, নাকি মেঘ এসে ছায়া দিচ্ছিল মাথার ওপরে, সে কথা এখন আর মনে নেই। তবে মনে আছে, মাসুদ ভাই, শ্যামল দাসহ অন্যদের সঙ্গে আমরা কৃষিক্ষেত্রগুলো দেখছিলাম। কোন জমিতে কোন ধরনের ধান নিয়ে গবেষণা হচ্ছে, সেটা তাঁরা জেনে নিচ্ছিলেন। এভাবেই কেটে গেল আরও ঘণ্টা-দুই। আর তখনই কেবল মনে পড়ল পেটে দানাপানি পড়েনি অনেকক্ষণ। তখনই কেবল মনে পড়ল, আমরা তো শংকরদার ঘরে আজ খাব।
এবার হোস্টেলে শংকরদার রুম খোঁজা শুরু হলো। খুব বেশি বেগ পেতে হলো না। আমরা পৌঁছে গেলাম তাঁর ঘরে। তিনি খুব খুশি হলেন। বললেন, ‘চা খাও, আমি সেই ফাঁকে ভাতটা চড়িয়ে আসি।’
এখন ভাত চড়াবেন! তার মানে তিনি কোনো প্রস্তুতি নেননি! আমাদের পেটে যে ছুঁচোর ডনবৈঠক শুরু হয়ে গেছে, সেটা কি তিনি বুঝতে পারছেন না! একটু হতাশ হলাম। মনে হলো, ডিম ভাজি আর ডাল দিয়েই আজ আমাদের দুপুরের খাবার খেতে হবে।
কিন্তু কিছুক্ষণ পরই বোঝা গেল, শংকরদার প্রস্তুতি ছিল। তিনি আগেই রান্না করে রেখেছেন। কজন আসবে, তা জেনে ভাত চড়াতে গেছেন।
খাবারের তালিকায় ছিল বেগুন দিয়ে চিংড়ি, ডাল আর মাংস।
‘কিসের মাংস এটা শংকর দা? মুরগি?’
‘না, খরগোশ। খুব টেস্টি। খেয়েছ আগে?’
‘না। আমি তো খাইনি আগে!’ আমতা-আমতা করি।
‘খাবে তো? নাকি ডিম ভেজে দেব?’
ডিম ভাজা! খেয়ে দেয়ে কাজ নেই, ডিম ভাজা খাব! মাংসের হাঁড়ির দিকে তাকাই। বড় বড় মাংসের টুকরো, কষানো। তবে তার সঙ্গে গোল গোল আলু ভেজে ছড়িয়ে রাখা হয়েছে। লোভনীয় খাবার।
কোনো রকম দ্বিধা না করে খরগোশের মাংস তুলে নিলাম প্লেটে। এবং তারপর মাংস ছিঁড়ে মুখে দিতেই মনে হলো—অমৃত! এত স্বাদের তরকারি বহুদিন খাইনি। সেদিন খরগোশের মাংসটা খুবই সুস্বাদু হয়েছিল, আজও মনে হয়, সেই তৃপ্তির অনুভূতিটা পাই।
সেদিন জেনেছিলাম, খরগোশ দু রকম হয়। একরকম খরগোশের পা থাকে বাইরের দিকে, সেগুলো খাওয়া যায়। আরেক ধরনের খরগোশের পা থাকে ভেতরের দিকে গুটানো, সেগুলো খাওয়া যায় না। সেগুলো বাড়িতে পোষ মানায় অনেকে। উল্টো বললাম নাকি, সে সন্দেহ অবশ্য আছে আমার। হতে পারে গুটানো পায়ের খরগোশই খেতে হয়।
শংকরদার রান্নার হাত ভালো নাকি খরগোশের মাংসটাই সুস্বাদু—এই প্রশ্ন আমাদের মনে ঘুরতে থাকে। আবার এ-ও মনে হয়, আমাদের পেটে এত খিদে ছিল বলে মাংসটাকে অমৃত বলে মনে হয়েছে!
সে যাই হোক, সেই খরগোশের মাংস যে শুধু উদরপূর্তির জন্য খাইনি, বরং তা খাওয়ার সময় মনও হয়েছিল অংশীদার—সেটা মেনে নিলেই কেবল বোঝা যাবে, কেন এত দিন পরও সেই সুখস্মৃতিটা মনের কোনে লুকিয়ে আছে।
শংকরদা এসেছেন মস্কো থেকে, উঠেছেন ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটে। সেটা আমাদের ক্রাসনাদার শহর থেকে ২৫/৩০ কিলোমিটার দূরে। হলুদ রঙের বাসে করে যেতে হয় সেখানে।
আমরা তখন প্রিপারেটরি ফ্যাকাল্টিতে রুশ ভাষা রপ্ত করছি। অর্থাৎ, সেটা ১৯৮৬ সালের শেষভাগ অথবা ১৯৮৭ সালের শুরু। মস্কোর তিমিরইয়াজিভ কৃষি ইনস্টিটিউটে যারা পড়াশোনা করেন, তাঁরা তাঁদের ব্যবহারিক কাজের একটা অংশ আমাদের শহরে এসে করেন। শংকরদাও একই কাজে সেখান থেকে এসেছেন। আগেও এসেছেন। সে সুবাদে আমাদের কুবান কৃষি ইনস্টিটিউটের বড় ভাইদের সঙ্গে পিএইচডির ছাত্র শংকরদার জানাশোনা। তিনিই ছুটির দিনে আমাদের নিয়ে যেতে বলেছেন তাঁর হোস্টেলে। দুপুরে রান্না করে খাওয়াবেন। সম্ভবত পঞ্চম বর্ষের মাসুদ ভাই, চতুর্থ বর্ষের শ্যামলদা আর তৃতীয় বর্ষের জয়নাল ভাই আর প্রথম বর্ষের দেবাশীষদার সঙ্গে প্রিপারেটরির আমি আর রিপন গিয়েছিলাম শংকরদার ওখানে।
ক্রাসনাদার শহরে ধান হয় প্রচুর। অনেকটা ট্রপিক্যাল ও সাব ট্রপিক্যাল আবহাওয়া। মাছও পাওয়া যায় নদীতে। মিষ্টি পানির তাজা মাছ সোভিয়েত ইউনিয়নের সবখানে পাওয়া যেত না। আমরা তাই ‘মাছে-ভাতে বাঙালি’র মতো টিকে থাকতে পারছিলাম বিদেশ-বিভুঁইয়ে।
ক্রাসনাদার কৃষি ইনস্টিটিউটের (এখন তা বিশ্ববিদ্যালয় হয়ে গেছে) সামনের বাসস্ট্যান্ড থেকে সকাল এগারোটার দিকে বাসে উঠেছিলাম আমরা। সকালে নাশতা করেছি। শংকরদার ওখানে গিয়ে দুপুরে ভাত খাব। এখানে বলে রাখি, আমরা যখন পড়াশোনা করতাম, তখন দাওয়াত মানে বিশাল খাদ্যভান্ডার নয়। মাছ অথবা মাংস, সঙ্গে একটা সবজি কিংবা ডাল—তাতেই অভ্যস্ত ছিলাম আমরা। যে স্টাইপেন্ড পেতাম, সেটা দিয়ে চলতে হতো, বাড়তি আয়ের উপায় ছিল না। তাই বুঝেশুনে চলতাম।
বাসটা যখন চলা শুরু করল, তখন পঞ্চম প্রসূতি হাসপাতাল পার হওয়ার পর থেকেই দুধারে দেখতে পেলাম বিস্তৃত ফসলের খেত। ট্রাক্টর দিয়ে চাষ করা হয়েছে সে মাঠগুলো। একটু দূরেই কুবান নদী। এই নদীটি আমাদের কত যে আপন ছিল, তা বলে বোঝানো যাবে না; সেটা এখন শুধুই স্মৃতি। বাস যখন ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের কাছাকাছি আমাদের নামিয়ে দিল, তখন সামনের দিকে তর্জনী উঁচিয়ে মাসুদ ভাই অথবা জয়নাল ভাই বললেন, ‘স্মাৎরি, এতা দিন।’
মানে, ‘দ্যাখো, এগুলো বাঙ্গি!’
ছোট ছোট রসালো বাঙ্গি ছড়িয়ে আছে বিস্তৃত খেতে। মাসুদ ভাই বললেন, ‘যদি কেউ খেতে চাও, খেতে পারো।’
তখনই বাঙালির দল নেমে পড়ল খেতে। বাঙ্গিগুলো আকারে ছোট। ফাটিয়ে খাওয়া শুরু হলো। আর তখনই বোঝা গেল, এ এক অবিশ্বাস্য রসালো বাঙ্গি! বাংলাদেশে এ ধরনের মিষ্টি আর রসালো বাঙ্গি কখনো দেখিনি। ফলে যা হলো, সেই রসালো বাঙ্গিতে তৃষ্ণা নিবারণ হতে লাগল। যে চাষিরা এই জমি চাষ করেছেন, ফসল ফলিয়েছেন, তাঁরাও বাঙালিদের এই কাণ্ড-কারখানা দেখে হাসছিলেন মিটিমিটি। বলছিলেন, ‘কুশাইতে, রিবইয়াতা! (খাও, খাও, ছেলেরা)।’
তখনো বিদেশিদের খুব ভালোবাসত গ্রামের মানুষেরা। শহুরে সোভিয়েত নাগরিকদের সঙ্গে শহরের বাইরের নাগরিকদের মধ্যে পার্থক্য ছিল। যারা বিদেশিদের প্রতিদিন দেখত, তারা একভাবে জানত বিদেশিদের। তাদের চোখে এই বিদেশিদের ভালো-মন্দ ছিল বইয়ের খোলা পাতার মতো। অন্যদিকে যারা কালেভদ্রে বিদেশিদের সংস্পর্শে আসত, তাদের কাছে বিদেশিরা ছিল বিস্ময়! সে ব্যাপারে পরে একসময় লেখা যাবে।
সরাসরি ফসলের মাঠ থেকে এভাবে বাঙ্গি তুলে খাওয়ার অভিজ্ঞতা এর আগে ছিল না। এটাই ছিল প্রথমবারের মতো। তাই সে আনন্দ ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়।
সে যুগে মোবাইল ফোন আসেনি। যোগাযোগ হতো ল্যান্ডফোনে। চিঠিপত্রেরও কদর ছিল। আমরা যে এসে পৌঁছেছি, সেটা তখনো শংকরদা জানেন না। জানবেন কী করে? পাগল হয়ে বাঙ্গি-ভক্ষণরত শিক্ষার্থীরা তো পিকনিকের আনন্দ পেয়ে গেছে ততক্ষণে!
রোদটা প্রখর ছিল, নাকি মেঘ এসে ছায়া দিচ্ছিল মাথার ওপরে, সে কথা এখন আর মনে নেই। তবে মনে আছে, মাসুদ ভাই, শ্যামল দাসহ অন্যদের সঙ্গে আমরা কৃষিক্ষেত্রগুলো দেখছিলাম। কোন জমিতে কোন ধরনের ধান নিয়ে গবেষণা হচ্ছে, সেটা তাঁরা জেনে নিচ্ছিলেন। এভাবেই কেটে গেল আরও ঘণ্টা-দুই। আর তখনই কেবল মনে পড়ল পেটে দানাপানি পড়েনি অনেকক্ষণ। তখনই কেবল মনে পড়ল, আমরা তো শংকরদার ঘরে আজ খাব।
এবার হোস্টেলে শংকরদার রুম খোঁজা শুরু হলো। খুব বেশি বেগ পেতে হলো না। আমরা পৌঁছে গেলাম তাঁর ঘরে। তিনি খুব খুশি হলেন। বললেন, ‘চা খাও, আমি সেই ফাঁকে ভাতটা চড়িয়ে আসি।’
এখন ভাত চড়াবেন! তার মানে তিনি কোনো প্রস্তুতি নেননি! আমাদের পেটে যে ছুঁচোর ডনবৈঠক শুরু হয়ে গেছে, সেটা কি তিনি বুঝতে পারছেন না! একটু হতাশ হলাম। মনে হলো, ডিম ভাজি আর ডাল দিয়েই আজ আমাদের দুপুরের খাবার খেতে হবে।
কিন্তু কিছুক্ষণ পরই বোঝা গেল, শংকরদার প্রস্তুতি ছিল। তিনি আগেই রান্না করে রেখেছেন। কজন আসবে, তা জেনে ভাত চড়াতে গেছেন।
খাবারের তালিকায় ছিল বেগুন দিয়ে চিংড়ি, ডাল আর মাংস।
‘কিসের মাংস এটা শংকর দা? মুরগি?’
‘না, খরগোশ। খুব টেস্টি। খেয়েছ আগে?’
‘না। আমি তো খাইনি আগে!’ আমতা-আমতা করি।
‘খাবে তো? নাকি ডিম ভেজে দেব?’
ডিম ভাজা! খেয়ে দেয়ে কাজ নেই, ডিম ভাজা খাব! মাংসের হাঁড়ির দিকে তাকাই। বড় বড় মাংসের টুকরো, কষানো। তবে তার সঙ্গে গোল গোল আলু ভেজে ছড়িয়ে রাখা হয়েছে। লোভনীয় খাবার।
কোনো রকম দ্বিধা না করে খরগোশের মাংস তুলে নিলাম প্লেটে। এবং তারপর মাংস ছিঁড়ে মুখে দিতেই মনে হলো—অমৃত! এত স্বাদের তরকারি বহুদিন খাইনি। সেদিন খরগোশের মাংসটা খুবই সুস্বাদু হয়েছিল, আজও মনে হয়, সেই তৃপ্তির অনুভূতিটা পাই।
সেদিন জেনেছিলাম, খরগোশ দু রকম হয়। একরকম খরগোশের পা থাকে বাইরের দিকে, সেগুলো খাওয়া যায়। আরেক ধরনের খরগোশের পা থাকে ভেতরের দিকে গুটানো, সেগুলো খাওয়া যায় না। সেগুলো বাড়িতে পোষ মানায় অনেকে। উল্টো বললাম নাকি, সে সন্দেহ অবশ্য আছে আমার। হতে পারে গুটানো পায়ের খরগোশই খেতে হয়।
শংকরদার রান্নার হাত ভালো নাকি খরগোশের মাংসটাই সুস্বাদু—এই প্রশ্ন আমাদের মনে ঘুরতে থাকে। আবার এ-ও মনে হয়, আমাদের পেটে এত খিদে ছিল বলে মাংসটাকে অমৃত বলে মনে হয়েছে!
সে যাই হোক, সেই খরগোশের মাংস যে শুধু উদরপূর্তির জন্য খাইনি, বরং তা খাওয়ার সময় মনও হয়েছিল অংশীদার—সেটা মেনে নিলেই কেবল বোঝা যাবে, কেন এত দিন পরও সেই সুখস্মৃতিটা মনের কোনে লুকিয়ে আছে।
প্রকৃত নাম জন গ্রিফিথ চেইনে হলেও জ্যাক লন্ডন নামে খ্যাতি পেয়েছেন এই বিখ্যাত মার্কিন লেখক। তাঁর জন্ম ১৮৭৬ সালের ১২ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায়।
২১ ঘণ্টা আগেআবদুস সালাম ছিলেন বিজ্ঞানে নোবেল পাওয়া প্রথম মুসলিম এবং প্রথম পাকিস্তানি বিজ্ঞানী। পাকিস্তানি এই তাত্ত্বিক পদার্থবিদ ইলেক্ট্রোউইক ইউনিফিকেশন থিওরির জন্য নোবেল পুরস্কার পান।
২ দিন আগেঢাকা কলেজ, এ দেশের শিক্ষা ইতিহাসেই শুধু নয়, জাতির ইতিহাসেরও এক অনন্য অধ্যায়ের সঙ্গে জড়িত এক নাম। ’৫২-এর ভাষা আন্দোলন, ’৬২-এর শিক্ষা আন্দোলন, ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান, ’৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধ, ’৯০-এর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনসহ সব গণতান্ত্রিক আন্দোলন-সংগ্রামে এ কলেজের ছাত্রদের অবদান অনস্বীকার্য। এ কলেজের কৃ
২ দিন আগে‘ভাষাকন্যা’ হিসেবে খ্যাত সুফিয়া আহমেদের জন্ম ১৯৩২ সালের ২০ নভেম্বর ফরিদপুরে। ভাষা আন্দোলনের সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষের এই ছাত্রী একুশে ফেব্রুয়ারি ১৪৪ ধারা ভঙ্গকারীদের মধ্যে অন্যতম। সেদিন তিনি পুলিশি নির্যাতনে আহত হন। পরবর্তী সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সান্ধ্য...
৩ দিন আগে