শরণার্থী জীবন

সম্পাদকীয়
প্রকাশ : ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০৮: ০০

সন্জীদা খাতুনের তখন শরণার্থী দশা। মুক্তিযুদ্ধের সময় শান্তিনিকেতনে পেয়েছিলেন রিসার্চ ফেলোশিপ। তিন ছেলেমেয়ে নিয়ে তখন সেখানে বাস করছেন।

মাসে পেতেন পাঁচ শ টাকা। সেই টাকায় টিকে থাকা ছিল কষ্টের। আশি টাকা দিতে হতো বাড়ি ভাড়া, বিদ্যুৎ বিল কুড়ি টাকা। চারজনের খাবার খরচের কথা ভাবলে আর কিছু করার উপায় ছিল না। ছাত্রদের কিচেন থেকে দুটি ‘মিল’ এনে খাওয়া হতো। বাড়ির উত্তর-পূর্ব সীমানা ঘেঁষে ময়লা ফেলার যে গর্তটা ছিল,তাতে বেশ কিছু ভাত ফেলে দেওয়া হতো।

কারণ, তরকারির অভাবে শুধু সাদা ভাত খাওয়া যেত না। যে বাড়িতে ভাড়া থাকতেন, ওই বাড়ির মালিক একদিন এসে অবস্থা দেখে বুঝে গেলেন ব্যাপারটা।

তখন থেকে তিনি কখনো বাড়ির বাগানের করলা, কিংবা বাজার থেকে একটা ফুলকপি বা দুটো শিম কাপড়ের আড়ালে লুকিয়ে দিয়ে যেতেন। সেটাই কেরোসিন স্টোভে আবার রান্না করতে হতো।  এ কাজ করতে গেলে জীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠত।

পুজোর ছুটিতে কিচেনের রান্না বন্ধ থাকায় পুরো রান্নাই বাড়িতে করা শুরু হলো। তাতে সন্তানদের তৃপ্ত মুখ দেখে এরপর থেকে বাড়ির রান্নাই বহাল রইল। 
১৯৭১ সালের অক্টোবর মাসে শোনা গেল যুদ্ধের সমাপ্তি অত্যাসন্ন, পৃথিবীর নতুন এক দেশের জন্ম আসন্ন, এক প্রতিবেশী-কন্যা আবদার জানাল, ‘স্বাধীনতা আসছে, মিষ্টি খাওয়াতে হবে কিন্তু!’

শুনে মুখ শুকিয়ে গেল সন্জীদা খাতুনের। হাতের যে অবস্থা, তাতে মিষ্টি খাওয়াবেন কী করে! আতপ চাল আধভাঙা করে, তাই দিয়ে ঝরঝরে ভাত রেঁধে জর্দার রং দিয়ে জ্বাল দেওয়া চিনির রসে ফেলে শুকিয়ে নিয়ে তৈরি করেছিলেন গোবিন্দভোগ। ছোট আকারের গুলি বানিয়েছিলেন। বিজয়ের দিন যারা এসেছিল, তাদের হাতে তা তুলে দিয়েছিলেন।

সূত্র: সন্জীদা খাতুন, স্বাধীনতার অভিযাত্রা, পৃষ্ঠা ১৫৭-১৫৯

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত