মানুষের কাছে আসা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক
প্রকাশ : ১২ আগস্ট ২০২১, ০৮: ৫০
আপডেট : ১২ আগস্ট ২০২১, ১১: ০৪

কোনো শিল্পীর জীবন নয়টা-পাঁচটা অফিস নয়—এ কথাই বললেন শাবানা আজমি। জীবন ও জগৎ সম্পর্কে জীবনের শুরুতে ধারণা ছিল কম। কিন্তু ধীরে ধীরে জীবনের পথে হাঁটতে হাঁটতেই চিনে নিলেন খোদ জীবনকেই। শিল্পী যদি খেটে খাওয়া মানুষের চরিত্রে অভিনয় করে ঘরে ফিরে এসির বাতাস খেতে খেতে আরাম করতে থাকে, তাহলে বোঝা যাবে, যে চরিত্রটিতে অভিনয় করা হলো, তার সঙ্গে জীবনের কোনো লেনদেন নেই। সংবেদনশীলতা না থাকলে সে শিল্পী হবে কীভাবে?

গৌতম ঘোষের পার চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছিলেন শাবানা আজমি। শুটিং হয়েছিল কলকাতার কাছে নৈহাটিতে। উঠেছিলেন সেখানকার গেস্টহাউসে। অভিনয়টা যেন জেনে-বুঝে করেন, সে জন্য ধাঙর একটি মেয়েকে রাখা হয়েছিল শাবানা আজমির কাছে। সে-ই ছিল শাবানার মডেল। ওর জীবনযাপন পদ্ধতি দেখতে দেখতেই চরিত্রের সঙ্গে মিশে যাওয়া। শুটিংয়ের সময় ধাঙর মেয়েটি একদিন বলল, ‘আমার বাড়িতে বেড়াতে আসবেন?’

‘না’ বলবেন, এমনটা ভাবেননি শাবানা আজমি। তিনি গেলেন সেই মেয়েটির বাড়িতে। দারিদ্র্য কেমন, তা জানা ছিল না শাবানার। দারিদ্র্য যে এতটা করুণ হতে পারে, তা দেখে বিস্মিত হলেন তিনি। একরত্তি একটা ঘর। সেই ঘরে বাস করে আটজন মানুষ। সেখানে বিদ্যুৎ নেই, পানি নেই। গুমোট। শাবানা ভাবতে থাকেন। এ রকম পরিবেশে থেকেও একটা মেয়ে কী করে এতটা প্রাণোচ্ছল হয়ে উঠতে পারে! সে হাসে, আনন্দ করে! সুখ যেন তাকে ঘিরে থাকে সব সময়। সে সময়ই শাবানার মনে ঢোকে একটা ভাবনা—এই মানুষগুলোর জন্য যদি কিছু না করে মুম্বাই ফিরে যান তিনি, তাহলে বোঝা যাবে, মেয়েটাকে শুধু অভিনয়ের স্বার্থে ব্যবহারই করেছেন। এটা একধরনের প্রতারণা ও বিশ্বাসঘাতকতা!

নিভারা হক নামের একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত হয়ে মুম্বাইয়ের বস্তিবাসীদের অধিকার আদায়ের কাজ করতে শুরু করলেন শাবানা। এই সংগঠনের হয়ে ৫০ হাজার বস্তিবাসীর জন্য গড়ে তুললেন ঘর। খেটে খাওয়া মানুষের সঙ্গে এ থেকেই গাঢ় হলো তাঁর বন্ধুত্ব।

সূত্র: সাজ্জাদ শরিফ, আলাপে ঝালাতে: শিল্পের সাহিত্যের আলাপন 
পৃষ্ঠা ১০৮-১০৯

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত