গুরু-শিষ্য

সম্পাদকীয়
প্রকাশ : ১১ জানুয়ারি ২০২৩, ০৯: ২০

চমকপ্রদ জীবনের একটি অংশে ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ চার বছর সংগীত সাধনা করেছিলেন ওস্তাদ আহমেদ আলী খাঁর কাছে। শুরুর সাধনা ছিল গুরুর মন জয় করা। মন জয় করতে না পারলে গুরুর কাছ থেকে প্রকৃত সংগীত শিক্ষা লাভ করা যায় না।কিন্তু গুরুর মন জয় করা কি সোজা কথা?

কী করতে হতো গুরুর মন জয় করার জন্য? প্রতিদিন গুরুর জন্য রান্নার আয়োজন করতে হতো। ফাই-ফরমাশ খাটতে হতো। করতে হতো পদসেবা। এরপর নিজের রান্নাবান্না, খাওয়া। সে এক কঠিন পথ। মুক্তাগাছার মহারাজা বলে দিলেন আলাউদ্দিন খাঁকে যেন শিষ্য হিসেবে গ্রহণ করেন আহমেদ আলী খাঁ। কিন্তু শিষ্য হলেই কি আর সংগীত শিক্ষায় ভাগ বসানো যায়?

দীর্ঘ চার বছর ওস্তাদ আহমেদ আলী খাঁর কাছে সরোদ শিখলেন আলাউদ্দিন খাঁ। কিন্তু আলাউদ্দিন খাঁ টের পেতেন, সব শিখিয়েও কী যেন একটা কিছু ওস্তাদ তাঁকে শেখাচ্ছেন না। কোথায় যেন একটা ফাঁক রয়ে যাচ্ছে। আলাউদ্দিন খাঁর স্মৃতিশক্তি ছিল প্রখর। কিছু কানে এলে তাকে সুরের রাজ্যে নিয়ে যেতে পারতেন তিনি। গুরুর রেওয়াজ খুব মন দিয়ে শুনতেন। গুরু ঘুমিয়ে গেলে তার অনুশীলন করতেন। এক রাতে আলাউদ্দিন খাঁ রেওয়াজ করছেন, সে সময় ঘুম ভেঙে গেল গুরুর। গুরু অবাক হয়ে দেখলেন তাঁর ঘরানার সুর বাইরের কেউ বাজাচ্ছে! তিনি তো ঘরানার রহস্য বাইরের কাউকে শেখাননি। তাহলে! তিনি নিজের কানে শুনছেন আলাউদ্দিন খাঁর বাদন। সেটা শুনে ক্রোধে অন্ধ হয়ে গেলেন আহমেদ আলী খাঁ। তিনি ডাকলেন আলাউদ্দিন খাঁকে। আলাউদ্দিন বুঝলেন ব্যাপারটা। তিনি গুরুর কাছে গিয়েই গুরুর দুই পা জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলেন। গুরু হতভম্ব। আলাউদ্দিন প্রতিজ্ঞা করলেন, গুরুর অনুমতি ছাড়া গুরুর ঘরানার সরগম বাজাবেন না। গুরুর মন গলল। তিনি বুঝলেন, যে এত ভালো বাজাতে পারে, তাকে অনুমতি দেওয়া যেতেই পারে। নিজের সব বিদ্যা শিষ্যকে উজাড় করে ঢেলে দিলেন। 

সূত্র: মোবারক হোসেন খাঁ, ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ ও তাঁর পত্রাবলি, পৃষ্ঠা ৭২-৭৩

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত