সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের দৌড়!

সম্পাদকীয়
প্রকাশ : ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০৯: ২৩

রবীন্দ্র জন্মশতবার্ষিকীতে ভারতের পশ্চিম বাংলার প্রতিটি জেলা শহরে রবীন্দ্রভবন তৈরি হয়েছিল। ভারত সরকারও প্রতিটি রাজ্যের রাজধানীতে একটি রবীন্দ্রভবন স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছিল। বহু বিদেশি অতিথি এসেছিলেন উৎসবে যোগ দিতে। সকালবেলা শাঁখ বাজিয়ে, প্রভাতফেরি দিয়ে শুরু হয়েছিল অনুষ্ঠান। রাসবিহারী অ্যাভিনিউ দিয়ে শুভ্রবসনে যে প্রভাতফেরির দলটি গান গাইতে গাইতে যাচ্ছিল, তার সামনের দিকে ছিলেন দীর্ঘকায় তরুণ সত্যজিৎ রায়। সত্যজিৎ রায়কে সম্ভবত আর কোনো মিছিলে দেখা যায়নি।

সে সময় পশ্চিমবঙ্গের বাঙালিদের সংকটকাল। ভারতের চতুর্দিকে মার খাচ্ছে বাঙালিরা। রয়েছে উদ্বাস্তুদের স্রোত। প্রাদেশিকতা বাড়ছে। ঠিক সে সময়ই সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের হয়েছিল এক বিচিত্র অভিজ্ঞতা। গান গাওয়া ছেড়ে ঊর্ধ্বশ্বাসে পালাতে হয়েছিল তাঁকে। ঘটনাটা ছিল এ রকম: জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে মহাজাতি সদনের বিশাল উৎসবে গান গাইবার আমন্ত্রণ পেয়েছিলেন কয়েকজন কবি। এই ‘গায়ক’দের মধ্যে ছিলেন সুনীল, শক্তি চট্টোপাধ্যায়, প্রণব মুখোপাধ্যায়সহ কয়েকজন।

সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে তাঁরা গান শুরু করলেন। সামনে দর্শক–শ্রোতার সংখ্যা অনেক। গান গাইতে গাইতেই তাঁরা লক্ষ করলেন, দর্শক-শ্রোতাদের মধ্যে গুঞ্জন শুরু হয়েছে। কেউ কেউ চিৎকার করে কিছু বলার চেষ্টা করছে। কারণটা বুঝতে পারছেন না গায়কেরা। সুর তো ভুল হচ্ছে না। কয়েক দিন রিহার্সেলও দেওয়া হয়েছে। চ্যাঁচামেচি হচ্ছে কেন? লোকেরা কি থামতে বলছে? গাইছেন ভালো, তাহলে থামতে বলবে কেন?

এ রকম সময় চেয়ার তুলে মারতে এল কয়েকজন। আয়োজকেরা পর্দা ফেলে পেছনের দরজা দিয়ে গায়কদের বের করে দিলেন। প্রাণ বাঁচাবার জন্য কবিরা দিলেন দৌড়।

কেন তাদের প্রতি দর্শক-শ্রোতারা খেপে উঠেছিলেন, সে কথা জানা গেল পরে। তাঁরা প্যান্ট-শার্ট পরে গাইতে উঠেছিলেন রবীন্দ্রনাথের গান। এটা কারও কারও পছন্দ হয়নি। তাদের ধারণা, রবীন্দ্রসংগীত শুধু ধূতি-পাঞ্জাবি পরেই গাইতে হয়। প্যান্ট–শার্ট পরে রবীন্দ্রসংগীত গাইলে তার অপমান হয়, এ কথা সুনীলেরা জানবেন কী করে?

রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে একসময় এই বিড়ম্বনা পোহাতে হয়েছে অনেককেই। 

সূত্র: সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, অর্ধেক জীবন, পৃষ্ঠা ২০৩-২০৪

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত