বিভুরঞ্জন সরকার
একেবারে ছোটবেলায় আমি নাকি খুব জেদি ছিলাম। কারও কাছে ভালো কিছু দেখলে সেটাই আমি চাইতাম। যেমন কারও মাথায় বড় চুল দেখলে আমি ওই রকম চুল চাইতাম। আবার বড় চুল থাকত কেবল মেয়েদের মাথায়। আমাকে নাকি শাসিয়ে বলা হতো, তুই কি মেয়ে নাকি যে, তোর মাথায় বড় চুল হবে!
বড় চুলের জন্য ছোটবেলার আদিখ্যেতার জন্যই বুঝি আজ বড়বেলায় আমার মাথায় চুলের এমন বাড়বাড়ন্ত অবস্থা!
যার যা আছে, তাই নিয়ে খুশি থাকতে হয়, আনন্দে থাকতে হয়। আমার স্বভাব নাকি ছিল তার বিপরীত। যা নেই, তার জন্যই আমরা বায়না হতো প্রবল। একেবারে যখন ছোট ছিলাম, তখন নাকি আমাদের সংসারে খুব একটা টানাটানি ছিল না। অভাবের হা-মুখ দৈত্য দাপিয়ে বেড়াত না। ফলে যা চাইতাম, তা দেওয়ার চেষ্টা করা হতো বড়দের পক্ষ থেকে। প্রশ্রয়টা পেয়েছি প্রধানত মেয়েদের কাছ থেকে। মেয়ে মানে আমার ঠাকুরমা (বাবার মা), দিদিমা (মায়ের মা) এবং আমার মার কাছ থেকে। পুরুষদের তুলনায় আমাদের পরিবারে নারীর সংখ্যা বেশি ছিল। পুরুষ বলতে শুধু আমার বাবা। নিজের বাবাকে খুব কম বয়সে হারিয়ে আমার বাবাকে সংসারের হাল ধরতে হয়েছিল, যখন আসলে তাঁর স্কুলে যাওয়ার বয়স।
আমাকে নিয়ে বড়রা সব সময় ভয়ে ভয়ে থাকতেন। কখন কার কাছে কী দেখে সেটা পাওয়ার জন্য আমি বায়না ধরে বসি, সেটাই ছিল ভয়ের কারণ। ভয় কি সংক্রামক? আমার ছোটবেলায় বড়রা আমাকে নিয়ে যে ভয় পেতেন, তাই কি আমার মধ্যে সংক্রমিত হয়েছে? না হলে আমার এত ভয় কেন? কত মানুষকে দেখি নির্ভয়ে চলতে; কিন্তু আমাকে সারাক্ষণ তাড়া করে ভয়! আচ্ছা, আমার যা নেই বা ছিল না, তা-ই নিয়ে যদি আমি বায়না ধরে থাকি, তাহলে আমার যে সাহসের অভাব, তা আমাকে দেওয়ার জন্য কি আমি কখনো জেদ করিনি, বায়না ধরিনি। আহা, সাহসের জন্য যদি একটু জেদ ধরতাম, তাহলে কি আমাকে আজ এভাবে ভয়ে ভয়ে জীবন কাটাতে হয়?
ছোটবেলায় কারও হাতের আঙুলে আংটি দেখে আমারও আংটির শখ হয়েছিল। না, তখন অবশ্যই আংটি বদলের বিষয়টি মাথায় আসার বয়স নয়। আমার আংটি ছিল না বলেই সেটা পাওয়ার সাধ জেগেছিল। আঙুলে একটি আংটি জুটেওছিল। আবার আংটিটি কীভাবে যেন একদিন হারিয়েও গেল। আংটি হারিয়ে আমি তো ভয়ে কাঠ। আমার পিঠে যে চেলাকাঠের দৌড় প্রতিযোগিতা হবে, সেটা বেশ বুঝতে পারছিলাম। তবে আমি আংটি হারানোর কথা কাউকে নিজে থেকে বললাম না। ফলে কেউ বুঝতেও পারল না। যখন জানাজানি হলো, তত দিনে পরিস্থিতি বদলে গেছে। এর মধ্যেই এক রাতে সিঁধেল চোর আমাদের ঘরে ঢুকে অনেক কিছুই নিয়ে গেছে। আমি হাপুস নয়নে কেঁদে আমার আংটি চুরির গল্প বিশ্বাসযোগ্য করে তুললাম এবং আংটি হারানোর পিটুনি থেকে কেমন বেকসুর খালাস পেয়ে গেলাম। ভয় তাড়ানোর এই বুদ্ধি কীভাবে মাথায় এসেছিল, এখন আর তা মনে নেই।
ছোটবেলায় মেয়েদের কাছে বেশি বায়না ধরলেও মেয়েদের আমার সব সময় কেমন যেন ভয় ভয় লাগত। কারণ বড়দের মুখে আলোচনা শুনতাম, নারীদের সম্মান না করলে নাকি সম্মান পাওয়া যায় না। সম্মান জিনিসটা আসলে কী, তা তো আর ওই বয়সে বুঝতাম না। তখন আমি মনে করতাম, কাউকে সম্মান করা মানে তাকে ভয় করা বা ভয় পাওয়া। তাই পারতপক্ষে ছোটবেলায় আমি নারী-সঙ্গ এড়িয়ে চলতাম। অবশ্য মা, ঠাকুমা, দিদিমা এবং পরে কাকিমাকে আমি ভয় করিনি। তাঁরা আমার কাছে নারী ছিলেন না, আমার কাছে তখন নারী মানে পরনারী এবং সর্বদা যাদের ভয় পেতে হবে!
আমি যখন দ্বিতীয় বা তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ি তখন আমার এক পিসতুত দাদার বিয়ে হলো। এল আমার অতি সুন্দরী গীতা বৌদি। গীতা বৌদিকে আমি কেন যেন ভয় পেতাম না। তিনিও আমাকে খুব আদর করতেন। কোলে নিয়ে গালটাল টিপে দিতেন। শরীর এমন চিপাচিপি করতেন যে, আমি কেমন যেন তাঁর এই আদরের জন্য অপেক্ষা করতাম। গীতা বৌদি আমাকে দলেমলে একাকার করতেন আর বলতেন, ‘মেয়েরা তোকে খুব ভালোবাসবে। দেখবি মেয়েরা তোর জন্য পাগল হয়ে যাবে।’
শুনে লজ্জা পেতাম আবার ভালোও লাগত। ওই বয়সেই কেমন যেন একটি সুখানুভূতি হতো বলে এখনো মনে পড়ে।
বয়স বাড়ে। কোনো মেয়ে আমাকে ভালোবাসে না। কেউ কেউ বরং আমাকে দেখে হাসাহাসি করত আর বলত, তুই কি মেয়ে নাকি রে! আমাকে দেখতে নাকি তখন মেয়ে মেয়ে লাগত! এতে আমার মেয়ে-ভীতি আরও বেড়ে গেল। ছোট ক্লাসে থাকতেই একদিন এক মেয়ে বর-বউ খেলার প্রস্তাব দেওয়ায় আমি নাকি দৌড়ে পালিয়েছিলাম। তবে আমি যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে এলাম, তখন একদিন গীতা বৌদি আমাকে বললেন, ‘এবার একটি মেয়েকে পছন্দ করে ভালোবাসার কথা বল।’
-যদি রাজি না হয়?
-আর একজনকে বলবি!
-সে রাজি না হলে?
-আরেকজন খুঁজে বের করবি। আর এর মধ্যে তোকে যদি কেউ নিজে থেকে ভালোবাসার কথা বলে, তবে তো হয়েই গেল!
আমি দেখেশুনে একটি মেয়েকে মোটামুটি পছন্দ করলাম। শ্যামলা বরণ। চোখ দুটি মায়াভরা। ওমর আলীর কবিতার মতো, ‘এ দেশের শ্যামলিমা শ্যামল রং রমণীর অনেক সুনাম শুনেছি!’ হাঁটু পর্যন্ত চুল। ওকে দেখেই আমার মনে গুনগুনিয়ে উঠত, ‘তোমার কাজলকেশ ছড়ানো বলে এই রাত মধুর এমন।’ মনে মনে ভাবি, একদিন বলে ফেলব, ‘আই লাভ ইউ।’
মেয়েটির পিছু নেই। কিন্তু সে যখন আমার দিকে তাকায়, তখনই আমার পা কাঁপা শুরু হয়। উল্টো পথ ধরি আমি। একদিন ওর পিছু নিলাম। ভাবছি, একটু একা পেলেই বলব, ‘কুন্তল বন্যা, কে দিল, তোমায় বলো কন্যা!’
আমাকে অনুসরণ করতে দেখে মেয়েটা হাঁটার গতি শ্লথ করল। তারপর আমার দিকে গ্রীবা ঘুরিয়ে বলল, ‘কিছু বলবেন?’
-আমি চটপট জবাব দিই, ‘আমি? আপনাকে? না-তো।’
মেয়েটি আমার দিকে কেমন একটা ঘৃণার চোখে তাকাল। তারপর যেন আপন মনেই বলল, ‘কাওয়ার্ড কোথাকার!’
আমার মনে হলো কেউ যেন আমার কানে গরম সিসা ঢেলে দিল। কয়েক দিন খুব মনমরা থাকলাম। মনে হলো, একবার বাড়ি গিয়ে গীতা বৌদিকে দেখে আসি। তাঁকে জানিয়ে আসি, তাঁর ভবিষ্যদ্বাণী ঠিক হলো না। আমি কাউকে ‘আই লাভ ইউ’ বলতে পারলাম না। আমাকেও কেউ বলল না।
এক ছুটিতে বাড়ি গিয়ে শুনলাম সেই ভয়াবহ দুঃসংবাদ: গীতা বৌদি আত্মহত্যা করেছেন। আচ্ছা, গীতা বৌদি আত্মহত্যা করেছিলেন কেন? তাঁর কি বিশেষ কোনো দুঃখবোধ ছিল? দুঃখী মানুষেরা কি আত্মহত্যা করে? নাকি ভীরুতা আত্মহত্যার নিয়ামক? তার পর থেকে আমার আত্মহত্যায়ও দারুণ ভয়। ভয়কে জয় করার কোনো ওষুধ আবিষ্কারের কথা কি কেউ কখনো ভেবেছেন?
তার পর কত বছর চলে গেছে। আমার সংসার জীবনেরও তিন দশকের বেশি হয়েছে। এই তো কিছুদিন আগে কী মনে করে যেন গিন্নিকে কাছে ডেকে বললাম, ‘আই লাভ ইউ।’ মুখ ঝামটা দিয়ে গিন্নি বললেন, ‘ভীমরতি ধরেছে! ছেলেমেয়েরা শুনলে কী ভাববে?’
ভয় তাড়াতে গিয়ে নতুন ভয়ের শিকার হলাম। ছোটবেলার ছোট ভয়, বড় বেলায় বড় ভয় হয়ে উঠেছে।
লেখক: সহকারী সম্পাদক, আজকের পত্রিকা
একেবারে ছোটবেলায় আমি নাকি খুব জেদি ছিলাম। কারও কাছে ভালো কিছু দেখলে সেটাই আমি চাইতাম। যেমন কারও মাথায় বড় চুল দেখলে আমি ওই রকম চুল চাইতাম। আবার বড় চুল থাকত কেবল মেয়েদের মাথায়। আমাকে নাকি শাসিয়ে বলা হতো, তুই কি মেয়ে নাকি যে, তোর মাথায় বড় চুল হবে!
বড় চুলের জন্য ছোটবেলার আদিখ্যেতার জন্যই বুঝি আজ বড়বেলায় আমার মাথায় চুলের এমন বাড়বাড়ন্ত অবস্থা!
যার যা আছে, তাই নিয়ে খুশি থাকতে হয়, আনন্দে থাকতে হয়। আমার স্বভাব নাকি ছিল তার বিপরীত। যা নেই, তার জন্যই আমরা বায়না হতো প্রবল। একেবারে যখন ছোট ছিলাম, তখন নাকি আমাদের সংসারে খুব একটা টানাটানি ছিল না। অভাবের হা-মুখ দৈত্য দাপিয়ে বেড়াত না। ফলে যা চাইতাম, তা দেওয়ার চেষ্টা করা হতো বড়দের পক্ষ থেকে। প্রশ্রয়টা পেয়েছি প্রধানত মেয়েদের কাছ থেকে। মেয়ে মানে আমার ঠাকুরমা (বাবার মা), দিদিমা (মায়ের মা) এবং আমার মার কাছ থেকে। পুরুষদের তুলনায় আমাদের পরিবারে নারীর সংখ্যা বেশি ছিল। পুরুষ বলতে শুধু আমার বাবা। নিজের বাবাকে খুব কম বয়সে হারিয়ে আমার বাবাকে সংসারের হাল ধরতে হয়েছিল, যখন আসলে তাঁর স্কুলে যাওয়ার বয়স।
আমাকে নিয়ে বড়রা সব সময় ভয়ে ভয়ে থাকতেন। কখন কার কাছে কী দেখে সেটা পাওয়ার জন্য আমি বায়না ধরে বসি, সেটাই ছিল ভয়ের কারণ। ভয় কি সংক্রামক? আমার ছোটবেলায় বড়রা আমাকে নিয়ে যে ভয় পেতেন, তাই কি আমার মধ্যে সংক্রমিত হয়েছে? না হলে আমার এত ভয় কেন? কত মানুষকে দেখি নির্ভয়ে চলতে; কিন্তু আমাকে সারাক্ষণ তাড়া করে ভয়! আচ্ছা, আমার যা নেই বা ছিল না, তা-ই নিয়ে যদি আমি বায়না ধরে থাকি, তাহলে আমার যে সাহসের অভাব, তা আমাকে দেওয়ার জন্য কি আমি কখনো জেদ করিনি, বায়না ধরিনি। আহা, সাহসের জন্য যদি একটু জেদ ধরতাম, তাহলে কি আমাকে আজ এভাবে ভয়ে ভয়ে জীবন কাটাতে হয়?
ছোটবেলায় কারও হাতের আঙুলে আংটি দেখে আমারও আংটির শখ হয়েছিল। না, তখন অবশ্যই আংটি বদলের বিষয়টি মাথায় আসার বয়স নয়। আমার আংটি ছিল না বলেই সেটা পাওয়ার সাধ জেগেছিল। আঙুলে একটি আংটি জুটেওছিল। আবার আংটিটি কীভাবে যেন একদিন হারিয়েও গেল। আংটি হারিয়ে আমি তো ভয়ে কাঠ। আমার পিঠে যে চেলাকাঠের দৌড় প্রতিযোগিতা হবে, সেটা বেশ বুঝতে পারছিলাম। তবে আমি আংটি হারানোর কথা কাউকে নিজে থেকে বললাম না। ফলে কেউ বুঝতেও পারল না। যখন জানাজানি হলো, তত দিনে পরিস্থিতি বদলে গেছে। এর মধ্যেই এক রাতে সিঁধেল চোর আমাদের ঘরে ঢুকে অনেক কিছুই নিয়ে গেছে। আমি হাপুস নয়নে কেঁদে আমার আংটি চুরির গল্প বিশ্বাসযোগ্য করে তুললাম এবং আংটি হারানোর পিটুনি থেকে কেমন বেকসুর খালাস পেয়ে গেলাম। ভয় তাড়ানোর এই বুদ্ধি কীভাবে মাথায় এসেছিল, এখন আর তা মনে নেই।
ছোটবেলায় মেয়েদের কাছে বেশি বায়না ধরলেও মেয়েদের আমার সব সময় কেমন যেন ভয় ভয় লাগত। কারণ বড়দের মুখে আলোচনা শুনতাম, নারীদের সম্মান না করলে নাকি সম্মান পাওয়া যায় না। সম্মান জিনিসটা আসলে কী, তা তো আর ওই বয়সে বুঝতাম না। তখন আমি মনে করতাম, কাউকে সম্মান করা মানে তাকে ভয় করা বা ভয় পাওয়া। তাই পারতপক্ষে ছোটবেলায় আমি নারী-সঙ্গ এড়িয়ে চলতাম। অবশ্য মা, ঠাকুমা, দিদিমা এবং পরে কাকিমাকে আমি ভয় করিনি। তাঁরা আমার কাছে নারী ছিলেন না, আমার কাছে তখন নারী মানে পরনারী এবং সর্বদা যাদের ভয় পেতে হবে!
আমি যখন দ্বিতীয় বা তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ি তখন আমার এক পিসতুত দাদার বিয়ে হলো। এল আমার অতি সুন্দরী গীতা বৌদি। গীতা বৌদিকে আমি কেন যেন ভয় পেতাম না। তিনিও আমাকে খুব আদর করতেন। কোলে নিয়ে গালটাল টিপে দিতেন। শরীর এমন চিপাচিপি করতেন যে, আমি কেমন যেন তাঁর এই আদরের জন্য অপেক্ষা করতাম। গীতা বৌদি আমাকে দলেমলে একাকার করতেন আর বলতেন, ‘মেয়েরা তোকে খুব ভালোবাসবে। দেখবি মেয়েরা তোর জন্য পাগল হয়ে যাবে।’
শুনে লজ্জা পেতাম আবার ভালোও লাগত। ওই বয়সেই কেমন যেন একটি সুখানুভূতি হতো বলে এখনো মনে পড়ে।
বয়স বাড়ে। কোনো মেয়ে আমাকে ভালোবাসে না। কেউ কেউ বরং আমাকে দেখে হাসাহাসি করত আর বলত, তুই কি মেয়ে নাকি রে! আমাকে দেখতে নাকি তখন মেয়ে মেয়ে লাগত! এতে আমার মেয়ে-ভীতি আরও বেড়ে গেল। ছোট ক্লাসে থাকতেই একদিন এক মেয়ে বর-বউ খেলার প্রস্তাব দেওয়ায় আমি নাকি দৌড়ে পালিয়েছিলাম। তবে আমি যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে এলাম, তখন একদিন গীতা বৌদি আমাকে বললেন, ‘এবার একটি মেয়েকে পছন্দ করে ভালোবাসার কথা বল।’
-যদি রাজি না হয়?
-আর একজনকে বলবি!
-সে রাজি না হলে?
-আরেকজন খুঁজে বের করবি। আর এর মধ্যে তোকে যদি কেউ নিজে থেকে ভালোবাসার কথা বলে, তবে তো হয়েই গেল!
আমি দেখেশুনে একটি মেয়েকে মোটামুটি পছন্দ করলাম। শ্যামলা বরণ। চোখ দুটি মায়াভরা। ওমর আলীর কবিতার মতো, ‘এ দেশের শ্যামলিমা শ্যামল রং রমণীর অনেক সুনাম শুনেছি!’ হাঁটু পর্যন্ত চুল। ওকে দেখেই আমার মনে গুনগুনিয়ে উঠত, ‘তোমার কাজলকেশ ছড়ানো বলে এই রাত মধুর এমন।’ মনে মনে ভাবি, একদিন বলে ফেলব, ‘আই লাভ ইউ।’
মেয়েটির পিছু নেই। কিন্তু সে যখন আমার দিকে তাকায়, তখনই আমার পা কাঁপা শুরু হয়। উল্টো পথ ধরি আমি। একদিন ওর পিছু নিলাম। ভাবছি, একটু একা পেলেই বলব, ‘কুন্তল বন্যা, কে দিল, তোমায় বলো কন্যা!’
আমাকে অনুসরণ করতে দেখে মেয়েটা হাঁটার গতি শ্লথ করল। তারপর আমার দিকে গ্রীবা ঘুরিয়ে বলল, ‘কিছু বলবেন?’
-আমি চটপট জবাব দিই, ‘আমি? আপনাকে? না-তো।’
মেয়েটি আমার দিকে কেমন একটা ঘৃণার চোখে তাকাল। তারপর যেন আপন মনেই বলল, ‘কাওয়ার্ড কোথাকার!’
আমার মনে হলো কেউ যেন আমার কানে গরম সিসা ঢেলে দিল। কয়েক দিন খুব মনমরা থাকলাম। মনে হলো, একবার বাড়ি গিয়ে গীতা বৌদিকে দেখে আসি। তাঁকে জানিয়ে আসি, তাঁর ভবিষ্যদ্বাণী ঠিক হলো না। আমি কাউকে ‘আই লাভ ইউ’ বলতে পারলাম না। আমাকেও কেউ বলল না।
এক ছুটিতে বাড়ি গিয়ে শুনলাম সেই ভয়াবহ দুঃসংবাদ: গীতা বৌদি আত্মহত্যা করেছেন। আচ্ছা, গীতা বৌদি আত্মহত্যা করেছিলেন কেন? তাঁর কি বিশেষ কোনো দুঃখবোধ ছিল? দুঃখী মানুষেরা কি আত্মহত্যা করে? নাকি ভীরুতা আত্মহত্যার নিয়ামক? তার পর থেকে আমার আত্মহত্যায়ও দারুণ ভয়। ভয়কে জয় করার কোনো ওষুধ আবিষ্কারের কথা কি কেউ কখনো ভেবেছেন?
তার পর কত বছর চলে গেছে। আমার সংসার জীবনেরও তিন দশকের বেশি হয়েছে। এই তো কিছুদিন আগে কী মনে করে যেন গিন্নিকে কাছে ডেকে বললাম, ‘আই লাভ ইউ।’ মুখ ঝামটা দিয়ে গিন্নি বললেন, ‘ভীমরতি ধরেছে! ছেলেমেয়েরা শুনলে কী ভাববে?’
ভয় তাড়াতে গিয়ে নতুন ভয়ের শিকার হলাম। ছোটবেলার ছোট ভয়, বড় বেলায় বড় ভয় হয়ে উঠেছে।
লেখক: সহকারী সম্পাদক, আজকের পত্রিকা
ইংরেজি সাহিত্যের অন্যতম রোমান্টিক কবি ছিলেন জন কিটস। কবিতা ছাড়া কিটস কোনো গদ্য লেখার চেষ্টা করেননি। তাঁর কাব্যজীবন ছিল মাত্র ছয় বছরের। অর্থাৎ উনিশ থেকে চব্বিশ বছর বয়স পর্যন্ত। মৃত্যুর মাত্র চার বছর আগে তাঁর কবিতাগুলো প্রকাশিত হয়। তৎকালীন সমালোচকদের দ্বারা কিটসের কবিতা খুব একটা আলোচিত হয়নি। তবে মৃত্য
৪ ঘণ্টা আগেত্রিশের দশকের রবীন্দ্রকাব্যধারাবিরোধী পঞ্চপাণ্ডবের মধ্যে অন্যতম একজন কবি ছিলেন সুধীন্দ্রনাথ দত্ত। তাঁর জন্ম ১৯০১ সালের ৩০ অক্টোবর কলকাতার হাতীবাগানে। তাঁর পিতা হীরেন্দ্রনাথ দত্ত ছিলেন একজন দার্শনিক। আর স্ত্রী ছিলেন প্রসিদ্ধ গায়িকা রাজেশ্বরী বাসুদেব।
১ দিন আগেসিলভিয়া প্লাথ ছিলেন একজন মার্কিন কবি, ঔপন্যাসিক ও ছোটগল্পকার। তিনি নারীবাদী কবি হিসেবেও পরিচিত। পিতৃতান্ত্রিক ক্ষমতার অপব্যবহারের বিরুদ্ধে এবং নারীর পরিচয়-সংকট নিয়ে তিনি তাঁর কবিতায় সাজিয়েছেন স্পষ্টভাবে।
৪ দিন আগেবিভূতিভূষণ মুখোপাধ্যায় ছিলেন বাংলা সাহিত্যের জনপ্রিয় ঔপন্যাসিক ও ছোটগল্পকার। তিনি কৌতুকমিশ্রিত গল্পের জন্য জনপ্রিয় ছিলেন। নামের মিল থাকলেও বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় আর তিনি কিন্তু আলাদা ব্যক্তি।
৭ দিন আগে