ইজাজুল হক

ফারুক নাজকি স্বর্গীয় উপত্যকা কাশ্মীরের সন্তান। ভূ-উত্তরাধিকার সূত্রে তিনি এমন এক সাংস্কৃতিক ও সাহিত্যধারার মালিকানা লাভ করেন, যা কাশ্মীরের বাইরের কবি-শিল্পীদের ঝুলিতে অনুপস্থিত। এই সাহিত্য পরম্পরা নিজের ভেতরে ধারণের পাশাপাশি নাজকি আধুনিক দর্শন ও কাব্যরীতির গভীর অধ্যয়ন করেছেন। আর নিজেকে আরও শাণিত করেছেন আধুনিক দর্শনের প্রাণকেন্দ্র ইউরোপে পড়াশোনা করে।
জার্মান চিন্তক মার্টিন হাইডেগার লিখেছেন, ‘দার্শনিক বইপুস্তক এ কালের চিন্তা ও বুদ্ধিবৃত্তির খোরাক নয়। বরং একপলকে স্থান-কালের ঊর্ধ্বে উঠে অসীমে হারিয়ে যেতে চাওয়া কবির কথাই এখানকার তারুণ্যের প্রিয় শিকার।’ ফারুক নাজকির কবিতা আপনাকে সেই অসীমের সঙ্গে জুড়ে দেবে। আপনি বিস্ময়ে অপলক উপভোগ করবেন তাঁর প্রতিটি পঙ্ক্তি।
ভূস্বর্গ কাশ্মীরের প্রকৃতি ও আবহাওয়া এক কথায় অনুপম, সতেজ ও জাদুকরী। পৃথিবীর বুকে সর্বশেষ আবিষ্কৃত শব্দটি দিয়েও কিংবা কালজয়ী সব রূপকের প্রয়োগ করেও এই উপত্যকার প্রাকৃতিক দৃশ্যের সৌন্দর্য যথাযথভাবে ফুটিয়ে তোলা অসম্ভব। জীবনঘনিষ্ঠ অভিজ্ঞতা ও কাশ্মীর উপত্যকার প্রকৃতি ফারুক নাজকির শিল্পকে দারুণ উষ্ণতা দিয়েছে। তাঁর কবিতার ভাষ্যে আয়নার মতো স্বচ্ছ বরফগলা জলাধার যেমন আছে, পাথুরে ভূমির মতো পাথর-শক্ত মর্মও আছে।
ফারুক নাজকি ধরাবাঁধা ছন্দ ও সুরের ‘গজল’ যেমন রচনা করেন, মুক্তছন্দের আধুনিক কবিতাও রচনা করেন—উর্দুতে যা ‘নজম’ নামে পরিচিত। দুই ধরনের কবিতাতেই তাঁর শৈলী সম্পূর্ণ ভিন্ন, পরীক্ষিত এবং সতেজ। গজলে তো একেবারেই নতুন শৈলী তৈরি করেন তিনি। গজলের আধুনিক ধারাকে আরও বেশি বিন্যস্ত ও মার্জিত রূপে পরিবেশনে প্রয়াসী হন। ফলে সমসাময়িক গজল লেখকদের ছাড়িয়ে পৌঁছান অনন্য উচ্চতায়। অন্যদিকে মুক্তছন্দের কবিতা ‘নজম’-এও এমন নতুনত্ব সৃজন করেন, যা সাহিত্যবোদ্ধাদের বিস্মিত করে এবং নাজকির কাব্যধাঁচকে আধুনিক উর্দু কবিতার ধারায় যুক্ত করতে বাধ্য করে। ভারতে বিখ্যাত উর্দু সাহিত্য সমালোচক সদ্যপ্রয়াত অধ্যাপক গোপী চাঁদ নারায়ণ নাজকির কবিতার নতুনত্বের স্বীকৃতি দেন।
দুই.
গজল উর্দু সাহিত্যের জনপ্রিয় ধারা। দিল্লির মুসলিম সালতানাতের সময় রহস্যবাদী সুফি কবিদের প্রভাবে এশিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে গজল। তবে মুঘল আমলে এই ধারা ব্যাপকভাবে জনপ্রিয় হয়। মির তকি মির, মির্জা গালিব ও ওয়ালি মুহাম্মদ ওয়ালি উর্দু গজল রচনার স্বর্ণযুগের কবি। মুঘল আমলের শেষ সম্রাট বাহাদুর শাহ জাফরও গজল রচনা করেছেন। ইংরেজ আমলে গজলে আধুনিকতার ছোঁয়া লাগান মুহাম্মদ ইকবাল, ফিরক গুরকপুরী, আলতাফ হুসাইন হালি, ফয়েজ আহমদ ফয়েজ প্রমুখ। ফারসিতে রুমি, হাফিজ, শেখ সাদি থেকে শুরু করে বাংলায় আমাদের নজরুলও গজল রচনায় ব্রতী হন। বর্তমান বিশ্বসাহিত্যের উল্লেখযোগ্য ও জনপ্রিয় সাহিত্য-উপাদানে পরিণত হয়েছে গজল।
এই ধারার কাশ্মীরি কবি হিসেবে ফারুক নাজকিও বেশ কিছু কালোত্তীর্ণ উর্দু গজল রচনা করেছেন। ফারুক নাজকির গজল আধুনিকতার উপাদানে ঠাসা। তাঁর গজলের শরীর ও মানস বিশ্লেষণের আগে চলুন পড়ে নেওয়া যাক কয়েকটি গজলের খণ্ডাংশ—
‘গভীর নীল সন্ধ্যার আকাশ লিখতে হবে
তোমার অলক-পাণ্ডুলিপি লিখতে হবে
কত দিনেও হয় না কথা প্রিয়জনে
আজ বাড়িতে ত্বরিত পত্র লিখতে হবে
গভীর সবুজ পাতায় জাগে খুব পিপাসা
মাঠে-মাঠে রক্তসাগর লিখতে হবে।’
অন্যত্র বলেন—
‘কাচের শব্দ রেখো না কাগজে
মর্মপাথর হয়ে ভাঙব তা আমি।’
আবার বলছেন—
‘আমি আছি অস্থির দেহনগরে
আমার ভাগে ছিন্নমূলই রেখো।’
অথবা—
‘স্বপ্নদেয়াল ও হৃদয়ঝরনা অক্ষম
ঘুমদ্বীপ কেন হলো বাধার দেয়াল।’
অন্যত্র বলছেন—
‘ভয়-উৎকণ্ঠার দুর্গে অনুমানের ঘর-বসতি
আমি এখন উত্তরে না দক্ষিণে—জানা নেই।’
ফারুক নাজকির গজলে এমন অসংখ্য পদ আছে, যা পড়ার পর প্রথম অনুভূতি হয় যে, নাজকি আধুনিক গজলকে বিখ্যাত উর্দু গজল রচয়িতা নাসির কাজেমির পর থেকেই শুরু করেন। এ ছাড়া নাজকির গজল কাঠামোয় নতুনত্ব দেখা যায়—দুটি বিপরীত ও না-বলা দৃশ্য, উপাদান ও ভাবের মধ্যে একটি নতুন মর্মের চিত্রায়ণ করতে প্রয়াসী হওয়ার মধ্য দিয়ে। তবে গজলকে সেই রূপে আনতে ধ্রুপদি গজল কিংবা আধুনিক গজলের কাছে হাত পাতেন না। বরং প্রতিটি গজলকে নানা ধাঁচ ও ঢঙে ধ্রুপদি শব্দমালার মশালে পরিণত করেন। যেখানে প্রথম পঙ্ক্তিতে ভিন্ন ভিন্ন ধাঁচ-রং প্রতিভাত হয়; প্রতিটি শব্দ নিজস্ব আবেদনে আলোকিত। এর পর ভাব ও মর্মের প্যাঁচানো সেই রংগুলোকে একটি সম্মিলিত কাঠামো, স্বতন্ত্র গজলধাঁচ ও অনন্য কাব্যশরীরে রূপ দেন। ফলে দূর থেকে সেই প্যাঁচালো ভাবের মর্মপ্রপাত আবিষ্কার করেন পাঠক। এ ক্ষেত্রে নাজকি অনন্য ও সর্বপ্লাবী কবি হিসেবে আবির্ভূত হন। গজল-কাব্যধারা আধুনিক সাহিত্যে তুলনামূলকভাবে অবহেলিত এবং অনেক ক্ষেত্রে পরিত্যক্ত হলেও ফারুক সেটিকে নিজস্ব ধাঁচ ও চিন্তার মাধ্যমে নতুন জীবন দেন।
ফারুক নাজকি গজলে প্যারাডক্সের নতুন অভিজ্ঞতার নিরীক্ষা করেন। এই অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে নাজকির সৃষ্টিশীলতা থেকে উৎসারিত ভাবের একটি নতুন, অথচ সরল ভুবনও আমাদের সামনে আসে। এই ধাঁচের গজলগুলোতে কখনো-কখনো ‘গজল-বিরোধী গজল রচয়িতা’ উর্দু কবি মুহাম্মদ আলভির গজলের ধাঁচ আমরা লক্ষ্য করি। তবে নাজকির ধাঁচে গজল-বিরোধী অবয়ব দেখা গেলেও ভাবের প্রশস্ততর অবস্থান সেটিকে এককেন্দ্রিক হতে দেয় না এবং গজলকে পাঠবিমুখতা থেকে রক্ষা করে। বরং রূপক ও ইঙ্গিতবাহী ভাবের প্রশস্ততর পরিধি পাঠকের মনে স্বাধীন উপভোগ্য এক আবহ তৈরি করে। যেমন তিনি লিখেন—
‘যখন চাল-দ্বার জাগে
বসতির বাড়ি জাগে
আপনারই পক্ষ হয়ে
কত কত রাত জাগে
এমন ভূকম্পন এল
ঘুম থেকে গাছ জাগে।’
কিংবা—
‘পত্রিকায় আপনার ছবি ছিল
কী কারণ—ঘরে যান না কেন?’
এসব গজলে নাজকি গদ্যের কথ্য-ভাবের বিপরীতে গিয়ে সংক্ষিপ্ততম ধাঁচে এবং সরলতম উপায়ে বাইরের দুনিয়ার বিশাল বৈপরীত্যের বয়ান দেন। যেমন—প্রথম গজলে ঘরের চাল ও দরজার চৈতন্যের কথা কয়েকটি বিপরীত ভাবের জন্ম দেয়। এর মর্ম হতে পারে—সূর্যের আলো সবার আগে ছাদ ও দরজায় টোকা দিলে বসতিগুলোতে সামাজিক চৈতন্য তৈরি হয়। আবার এও বলা যায়—জাগরণের পদ্ধতিকে কবি শুধু একটি টোকা পর্যন্ত সীমাবদ্ধ রেখেছেন। একই গজলের দ্বিতীয় অংশে শাস্ত্রীয় ভাব পরিহার করে নৈকট্যের বার্তাকে তৃপ্তির পরিবর্তে অস্থিরতায় পর্যবসিত করেন। তৃতীয় অংশে আরও একটি পরাবাস্তব দৃশ্যের মাধ্যমে গজলের ছাঁচে ফেলেন। বৃক্ষ নীরব-নিরেট হলেও প্রাণ-মেশানো রূপকের মাধ্যমে সেটিকে প্রকাশ করেন তিনি। একই সঙ্গে ভূমিকম্প প্রাকৃতিক ও অতিপ্রাকৃতিক দ্রোহের মিনার হিসেবে প্রতিভাত হয়। বৈপরীত্যের মাঝে এক নতুন বাস্তবতা আবিষ্কৃত হয় পরের গজলে—যেখানে খবরে প্রকাশিত ছবি এবং ঘরমুখো কবির কর্মকাণ্ডের মধ্যে প্রশ্নবোধক চিহ্ন এঁকে দেন তিনি নিজেই।
নাজকির গজলের এমন সব কাল্পনিক সিদ্ধান্ত নতুন মর্ম ও নতুন দৃশ্যকল্পের অবতারণা করে। ফলে গজলের চিরায়ত কাঠামোবদ্ধ রীতিনীতির পরিধি মাড়িয়ে এবং সহস্রাব্দের সীমানা পেরিয়ে তা চলে যায় দূরে, বহুদূরে। এ কয়টি পঙ্ক্তি তা আরও স্পষ্ট করে—
‘আমাকে সাফল্য লিখে দাও
আমাকে ক্ষমতা ও টাকা দাও
অনটনের দাম নেই আজকাল
নাম, যশ, শক্তি, দাপট দাও।’
কিংবা—
‘খোদা, তুমি খামোখা আমাকে ডরাও কেন
যাও রহমের ছায়া মাড়াও, হও কল্যাণকর।’
তিন.
নাজকির গজল জীবন ও জগতের দ্বন্দ্ব অনিবার্য হয়ে ওঠা সময়ে পৌঁছে যায়। এই দ্বন্দ্ব আধুনিক যুগের সবচেয়ে বড় সংকট। এ যুগের আকাশে শুধু তারাই জ্বলজ্বল করে না, বরং গ্রহ-নক্ষত্র, গ্যালাক্সি-ছায়াপথও ঘোরে। মানুষের অনুভূতিশক্তি বিজ্ঞানের আবিষ্কারের কারণে আজ বিপন্ন। আকাশচুম্বী দালানের সামনে মানুষের অস্তিত্ব সংকটের মুখোমুখি। বিজ্ঞান-উৎকর্ষের দৌড় এতই দ্রুতগামী যে, মন-মানসের সুস্থতা ও বলিষ্ঠতা অগুনতি হুমকির সামনে দাঁড়িয়ে। এই ধ্রুপদি উন্নয়নে মানুষের আত্মমর্যাদার সলিলসমাধি হচ্ছে, ভেঙে টুকরো-টুকরো হচ্ছে সংসার, বিশ্ব। শূন্যে সাঁতরানো ধ্বংসাত্মক উপাদান মানুষ ও পৃথিবীর কাছাকাছি আসছে। বিজ্ঞান ভবিষ্যতের যে চিত্র দেখাচ্ছে, তাতে মানুষের অস্তিত্ব একেবারেই অর্থহীন; মর্যাদাহীন। দ্বন্দ্ব-সংঘাতের এই পৃথিবী অতীতের ছায়াঘেরা বৃক্ষ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বিশ শতকের এই অস্থিরতাকে আধুনিক ইংরেজি কবি ডব্লিউ বি ইয়েটস তাঁর কবিতা ‘সেকেন্ড কামিং’-এ তুলে ধরেন। ইয়েটস-এর কবিতায় প্রতিশ্রুত ইসা মাসিহের আগমনের সুখবরও আছে। নাজকি একই বিষয় অনুভব করলেও কারও আগমনের সুখবরের আশ্রয় নেননি। বরং নিজের অনুভবের দ্বন্দ্বগুলোকে নিরীক্ষার কষ্টিপাথরে ঘষেই পাঠকের সামনে তা পরিবেশন করেন। নিচের গজলগুলো পড়ুন—
‘ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ছি—হে কল্পলোক
নিজের চিন্তাকে ভয় পাচ্ছি আমি
সইতে পারব না এই ভয়াল রাতে
ক্রমেই ভেঙে পড়ছি—হে অপেক্ষাসন্ধ্যা।’
অন্যত্র বলেন—
‘জীবনের তেপান্তরে না হারাতাম যদি
আমার পদচিহ্ন আমার রাহবার হতো।’
আবার লিখছেন—
‘মর্যাদার সংজ্ঞা ভেঙে নতুন সংজ্ঞা দাও
সাহস তোমার থাকেই যদি—বিদ্রোহী হও।
সান্ত্বনার বাণী শোনাও প্রতারিত আত্মাদের
গুম হওয়া মানুষগুলোর বেহেশত হও।’
অন্যত্র বলেন—
‘পাথর-পূজারির বসতিতে সিসা-শিল্পীর ভবিষ্যৎ নেই
যার চোখে আলো নেই, হৃদয়ে তার আগুন-আগুন।’
এসব গজল ফারুক নাজকির মনস্তত্ত্ব ও সৃষ্টিশীলতার আয়নাঘর। সেই আয়নাঘরে ভয়ের ছায়াও আছে, হিংস্র রাতও আছে, আছে অপেক্ষার সন্ধ্যাও। নাজকি তাঁর কবিসত্তার নির্জন প্রান্তরে সেই আয়নাঘরটি নির্মাণ করেন। বিজন বনের সেই আয়নাঘরে বসে ডেকে যান একটানা, ক্ষণে-ক্ষণে যার প্রতিধ্বনি দূরের পাহাড় থেকে মৌসুমের পূর্বাভাস হয়ে ফিরে আসে কাশ্মীরের পথে-প্রান্তরে। তাই নাজকির গজলকে আধুনিকতম উর্দু গজলের সর্বোত্তম নমুনা বললে অত্যুক্তি হবে না মোটেও। ‘যখনই ভেবেছি তোমাকে’ শীর্ষক গজলের একটি ছন্দোবদ্ধ অনুবাদ-চেষ্টার মধ্য দিয়ে নাজকির গজল-পর্বের ইতি টানছি—
‘তোমার কথা ভেবেছি যেই
সকল দৃশ্য পাল্টে গেছে
যেতে-যেতে কে-ই-বা আবার
হাওয়ার ডানায় নাম লিখেছে
অগ্নিগোলার এই ঋতুতে
বসবে মেলা হাজার লাশের
এসেই আমার বসতঘরে
মাতাল নদী থমকে গেছে
খুশি আমার দূরের পথিক
দুঃখ আমার নিত্য ছায়া
জানবে কী-বা হে কাশ্মীরি
দিল্লিতে আজ হচ্ছে কী ফের।
(লফ্জ লফজ নোহা/ফারুক নাজকি)
আরও পড়ুন:

ফারুক নাজকি স্বর্গীয় উপত্যকা কাশ্মীরের সন্তান। ভূ-উত্তরাধিকার সূত্রে তিনি এমন এক সাংস্কৃতিক ও সাহিত্যধারার মালিকানা লাভ করেন, যা কাশ্মীরের বাইরের কবি-শিল্পীদের ঝুলিতে অনুপস্থিত। এই সাহিত্য পরম্পরা নিজের ভেতরে ধারণের পাশাপাশি নাজকি আধুনিক দর্শন ও কাব্যরীতির গভীর অধ্যয়ন করেছেন। আর নিজেকে আরও শাণিত করেছেন আধুনিক দর্শনের প্রাণকেন্দ্র ইউরোপে পড়াশোনা করে।
জার্মান চিন্তক মার্টিন হাইডেগার লিখেছেন, ‘দার্শনিক বইপুস্তক এ কালের চিন্তা ও বুদ্ধিবৃত্তির খোরাক নয়। বরং একপলকে স্থান-কালের ঊর্ধ্বে উঠে অসীমে হারিয়ে যেতে চাওয়া কবির কথাই এখানকার তারুণ্যের প্রিয় শিকার।’ ফারুক নাজকির কবিতা আপনাকে সেই অসীমের সঙ্গে জুড়ে দেবে। আপনি বিস্ময়ে অপলক উপভোগ করবেন তাঁর প্রতিটি পঙ্ক্তি।
ভূস্বর্গ কাশ্মীরের প্রকৃতি ও আবহাওয়া এক কথায় অনুপম, সতেজ ও জাদুকরী। পৃথিবীর বুকে সর্বশেষ আবিষ্কৃত শব্দটি দিয়েও কিংবা কালজয়ী সব রূপকের প্রয়োগ করেও এই উপত্যকার প্রাকৃতিক দৃশ্যের সৌন্দর্য যথাযথভাবে ফুটিয়ে তোলা অসম্ভব। জীবনঘনিষ্ঠ অভিজ্ঞতা ও কাশ্মীর উপত্যকার প্রকৃতি ফারুক নাজকির শিল্পকে দারুণ উষ্ণতা দিয়েছে। তাঁর কবিতার ভাষ্যে আয়নার মতো স্বচ্ছ বরফগলা জলাধার যেমন আছে, পাথুরে ভূমির মতো পাথর-শক্ত মর্মও আছে।
ফারুক নাজকি ধরাবাঁধা ছন্দ ও সুরের ‘গজল’ যেমন রচনা করেন, মুক্তছন্দের আধুনিক কবিতাও রচনা করেন—উর্দুতে যা ‘নজম’ নামে পরিচিত। দুই ধরনের কবিতাতেই তাঁর শৈলী সম্পূর্ণ ভিন্ন, পরীক্ষিত এবং সতেজ। গজলে তো একেবারেই নতুন শৈলী তৈরি করেন তিনি। গজলের আধুনিক ধারাকে আরও বেশি বিন্যস্ত ও মার্জিত রূপে পরিবেশনে প্রয়াসী হন। ফলে সমসাময়িক গজল লেখকদের ছাড়িয়ে পৌঁছান অনন্য উচ্চতায়। অন্যদিকে মুক্তছন্দের কবিতা ‘নজম’-এও এমন নতুনত্ব সৃজন করেন, যা সাহিত্যবোদ্ধাদের বিস্মিত করে এবং নাজকির কাব্যধাঁচকে আধুনিক উর্দু কবিতার ধারায় যুক্ত করতে বাধ্য করে। ভারতে বিখ্যাত উর্দু সাহিত্য সমালোচক সদ্যপ্রয়াত অধ্যাপক গোপী চাঁদ নারায়ণ নাজকির কবিতার নতুনত্বের স্বীকৃতি দেন।
দুই.
গজল উর্দু সাহিত্যের জনপ্রিয় ধারা। দিল্লির মুসলিম সালতানাতের সময় রহস্যবাদী সুফি কবিদের প্রভাবে এশিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে গজল। তবে মুঘল আমলে এই ধারা ব্যাপকভাবে জনপ্রিয় হয়। মির তকি মির, মির্জা গালিব ও ওয়ালি মুহাম্মদ ওয়ালি উর্দু গজল রচনার স্বর্ণযুগের কবি। মুঘল আমলের শেষ সম্রাট বাহাদুর শাহ জাফরও গজল রচনা করেছেন। ইংরেজ আমলে গজলে আধুনিকতার ছোঁয়া লাগান মুহাম্মদ ইকবাল, ফিরক গুরকপুরী, আলতাফ হুসাইন হালি, ফয়েজ আহমদ ফয়েজ প্রমুখ। ফারসিতে রুমি, হাফিজ, শেখ সাদি থেকে শুরু করে বাংলায় আমাদের নজরুলও গজল রচনায় ব্রতী হন। বর্তমান বিশ্বসাহিত্যের উল্লেখযোগ্য ও জনপ্রিয় সাহিত্য-উপাদানে পরিণত হয়েছে গজল।
এই ধারার কাশ্মীরি কবি হিসেবে ফারুক নাজকিও বেশ কিছু কালোত্তীর্ণ উর্দু গজল রচনা করেছেন। ফারুক নাজকির গজল আধুনিকতার উপাদানে ঠাসা। তাঁর গজলের শরীর ও মানস বিশ্লেষণের আগে চলুন পড়ে নেওয়া যাক কয়েকটি গজলের খণ্ডাংশ—
‘গভীর নীল সন্ধ্যার আকাশ লিখতে হবে
তোমার অলক-পাণ্ডুলিপি লিখতে হবে
কত দিনেও হয় না কথা প্রিয়জনে
আজ বাড়িতে ত্বরিত পত্র লিখতে হবে
গভীর সবুজ পাতায় জাগে খুব পিপাসা
মাঠে-মাঠে রক্তসাগর লিখতে হবে।’
অন্যত্র বলেন—
‘কাচের শব্দ রেখো না কাগজে
মর্মপাথর হয়ে ভাঙব তা আমি।’
আবার বলছেন—
‘আমি আছি অস্থির দেহনগরে
আমার ভাগে ছিন্নমূলই রেখো।’
অথবা—
‘স্বপ্নদেয়াল ও হৃদয়ঝরনা অক্ষম
ঘুমদ্বীপ কেন হলো বাধার দেয়াল।’
অন্যত্র বলছেন—
‘ভয়-উৎকণ্ঠার দুর্গে অনুমানের ঘর-বসতি
আমি এখন উত্তরে না দক্ষিণে—জানা নেই।’
ফারুক নাজকির গজলে এমন অসংখ্য পদ আছে, যা পড়ার পর প্রথম অনুভূতি হয় যে, নাজকি আধুনিক গজলকে বিখ্যাত উর্দু গজল রচয়িতা নাসির কাজেমির পর থেকেই শুরু করেন। এ ছাড়া নাজকির গজল কাঠামোয় নতুনত্ব দেখা যায়—দুটি বিপরীত ও না-বলা দৃশ্য, উপাদান ও ভাবের মধ্যে একটি নতুন মর্মের চিত্রায়ণ করতে প্রয়াসী হওয়ার মধ্য দিয়ে। তবে গজলকে সেই রূপে আনতে ধ্রুপদি গজল কিংবা আধুনিক গজলের কাছে হাত পাতেন না। বরং প্রতিটি গজলকে নানা ধাঁচ ও ঢঙে ধ্রুপদি শব্দমালার মশালে পরিণত করেন। যেখানে প্রথম পঙ্ক্তিতে ভিন্ন ভিন্ন ধাঁচ-রং প্রতিভাত হয়; প্রতিটি শব্দ নিজস্ব আবেদনে আলোকিত। এর পর ভাব ও মর্মের প্যাঁচানো সেই রংগুলোকে একটি সম্মিলিত কাঠামো, স্বতন্ত্র গজলধাঁচ ও অনন্য কাব্যশরীরে রূপ দেন। ফলে দূর থেকে সেই প্যাঁচালো ভাবের মর্মপ্রপাত আবিষ্কার করেন পাঠক। এ ক্ষেত্রে নাজকি অনন্য ও সর্বপ্লাবী কবি হিসেবে আবির্ভূত হন। গজল-কাব্যধারা আধুনিক সাহিত্যে তুলনামূলকভাবে অবহেলিত এবং অনেক ক্ষেত্রে পরিত্যক্ত হলেও ফারুক সেটিকে নিজস্ব ধাঁচ ও চিন্তার মাধ্যমে নতুন জীবন দেন।
ফারুক নাজকি গজলে প্যারাডক্সের নতুন অভিজ্ঞতার নিরীক্ষা করেন। এই অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে নাজকির সৃষ্টিশীলতা থেকে উৎসারিত ভাবের একটি নতুন, অথচ সরল ভুবনও আমাদের সামনে আসে। এই ধাঁচের গজলগুলোতে কখনো-কখনো ‘গজল-বিরোধী গজল রচয়িতা’ উর্দু কবি মুহাম্মদ আলভির গজলের ধাঁচ আমরা লক্ষ্য করি। তবে নাজকির ধাঁচে গজল-বিরোধী অবয়ব দেখা গেলেও ভাবের প্রশস্ততর অবস্থান সেটিকে এককেন্দ্রিক হতে দেয় না এবং গজলকে পাঠবিমুখতা থেকে রক্ষা করে। বরং রূপক ও ইঙ্গিতবাহী ভাবের প্রশস্ততর পরিধি পাঠকের মনে স্বাধীন উপভোগ্য এক আবহ তৈরি করে। যেমন তিনি লিখেন—
‘যখন চাল-দ্বার জাগে
বসতির বাড়ি জাগে
আপনারই পক্ষ হয়ে
কত কত রাত জাগে
এমন ভূকম্পন এল
ঘুম থেকে গাছ জাগে।’
কিংবা—
‘পত্রিকায় আপনার ছবি ছিল
কী কারণ—ঘরে যান না কেন?’
এসব গজলে নাজকি গদ্যের কথ্য-ভাবের বিপরীতে গিয়ে সংক্ষিপ্ততম ধাঁচে এবং সরলতম উপায়ে বাইরের দুনিয়ার বিশাল বৈপরীত্যের বয়ান দেন। যেমন—প্রথম গজলে ঘরের চাল ও দরজার চৈতন্যের কথা কয়েকটি বিপরীত ভাবের জন্ম দেয়। এর মর্ম হতে পারে—সূর্যের আলো সবার আগে ছাদ ও দরজায় টোকা দিলে বসতিগুলোতে সামাজিক চৈতন্য তৈরি হয়। আবার এও বলা যায়—জাগরণের পদ্ধতিকে কবি শুধু একটি টোকা পর্যন্ত সীমাবদ্ধ রেখেছেন। একই গজলের দ্বিতীয় অংশে শাস্ত্রীয় ভাব পরিহার করে নৈকট্যের বার্তাকে তৃপ্তির পরিবর্তে অস্থিরতায় পর্যবসিত করেন। তৃতীয় অংশে আরও একটি পরাবাস্তব দৃশ্যের মাধ্যমে গজলের ছাঁচে ফেলেন। বৃক্ষ নীরব-নিরেট হলেও প্রাণ-মেশানো রূপকের মাধ্যমে সেটিকে প্রকাশ করেন তিনি। একই সঙ্গে ভূমিকম্প প্রাকৃতিক ও অতিপ্রাকৃতিক দ্রোহের মিনার হিসেবে প্রতিভাত হয়। বৈপরীত্যের মাঝে এক নতুন বাস্তবতা আবিষ্কৃত হয় পরের গজলে—যেখানে খবরে প্রকাশিত ছবি এবং ঘরমুখো কবির কর্মকাণ্ডের মধ্যে প্রশ্নবোধক চিহ্ন এঁকে দেন তিনি নিজেই।
নাজকির গজলের এমন সব কাল্পনিক সিদ্ধান্ত নতুন মর্ম ও নতুন দৃশ্যকল্পের অবতারণা করে। ফলে গজলের চিরায়ত কাঠামোবদ্ধ রীতিনীতির পরিধি মাড়িয়ে এবং সহস্রাব্দের সীমানা পেরিয়ে তা চলে যায় দূরে, বহুদূরে। এ কয়টি পঙ্ক্তি তা আরও স্পষ্ট করে—
‘আমাকে সাফল্য লিখে দাও
আমাকে ক্ষমতা ও টাকা দাও
অনটনের দাম নেই আজকাল
নাম, যশ, শক্তি, দাপট দাও।’
কিংবা—
‘খোদা, তুমি খামোখা আমাকে ডরাও কেন
যাও রহমের ছায়া মাড়াও, হও কল্যাণকর।’
তিন.
নাজকির গজল জীবন ও জগতের দ্বন্দ্ব অনিবার্য হয়ে ওঠা সময়ে পৌঁছে যায়। এই দ্বন্দ্ব আধুনিক যুগের সবচেয়ে বড় সংকট। এ যুগের আকাশে শুধু তারাই জ্বলজ্বল করে না, বরং গ্রহ-নক্ষত্র, গ্যালাক্সি-ছায়াপথও ঘোরে। মানুষের অনুভূতিশক্তি বিজ্ঞানের আবিষ্কারের কারণে আজ বিপন্ন। আকাশচুম্বী দালানের সামনে মানুষের অস্তিত্ব সংকটের মুখোমুখি। বিজ্ঞান-উৎকর্ষের দৌড় এতই দ্রুতগামী যে, মন-মানসের সুস্থতা ও বলিষ্ঠতা অগুনতি হুমকির সামনে দাঁড়িয়ে। এই ধ্রুপদি উন্নয়নে মানুষের আত্মমর্যাদার সলিলসমাধি হচ্ছে, ভেঙে টুকরো-টুকরো হচ্ছে সংসার, বিশ্ব। শূন্যে সাঁতরানো ধ্বংসাত্মক উপাদান মানুষ ও পৃথিবীর কাছাকাছি আসছে। বিজ্ঞান ভবিষ্যতের যে চিত্র দেখাচ্ছে, তাতে মানুষের অস্তিত্ব একেবারেই অর্থহীন; মর্যাদাহীন। দ্বন্দ্ব-সংঘাতের এই পৃথিবী অতীতের ছায়াঘেরা বৃক্ষ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বিশ শতকের এই অস্থিরতাকে আধুনিক ইংরেজি কবি ডব্লিউ বি ইয়েটস তাঁর কবিতা ‘সেকেন্ড কামিং’-এ তুলে ধরেন। ইয়েটস-এর কবিতায় প্রতিশ্রুত ইসা মাসিহের আগমনের সুখবরও আছে। নাজকি একই বিষয় অনুভব করলেও কারও আগমনের সুখবরের আশ্রয় নেননি। বরং নিজের অনুভবের দ্বন্দ্বগুলোকে নিরীক্ষার কষ্টিপাথরে ঘষেই পাঠকের সামনে তা পরিবেশন করেন। নিচের গজলগুলো পড়ুন—
‘ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ছি—হে কল্পলোক
নিজের চিন্তাকে ভয় পাচ্ছি আমি
সইতে পারব না এই ভয়াল রাতে
ক্রমেই ভেঙে পড়ছি—হে অপেক্ষাসন্ধ্যা।’
অন্যত্র বলেন—
‘জীবনের তেপান্তরে না হারাতাম যদি
আমার পদচিহ্ন আমার রাহবার হতো।’
আবার লিখছেন—
‘মর্যাদার সংজ্ঞা ভেঙে নতুন সংজ্ঞা দাও
সাহস তোমার থাকেই যদি—বিদ্রোহী হও।
সান্ত্বনার বাণী শোনাও প্রতারিত আত্মাদের
গুম হওয়া মানুষগুলোর বেহেশত হও।’
অন্যত্র বলেন—
‘পাথর-পূজারির বসতিতে সিসা-শিল্পীর ভবিষ্যৎ নেই
যার চোখে আলো নেই, হৃদয়ে তার আগুন-আগুন।’
এসব গজল ফারুক নাজকির মনস্তত্ত্ব ও সৃষ্টিশীলতার আয়নাঘর। সেই আয়নাঘরে ভয়ের ছায়াও আছে, হিংস্র রাতও আছে, আছে অপেক্ষার সন্ধ্যাও। নাজকি তাঁর কবিসত্তার নির্জন প্রান্তরে সেই আয়নাঘরটি নির্মাণ করেন। বিজন বনের সেই আয়নাঘরে বসে ডেকে যান একটানা, ক্ষণে-ক্ষণে যার প্রতিধ্বনি দূরের পাহাড় থেকে মৌসুমের পূর্বাভাস হয়ে ফিরে আসে কাশ্মীরের পথে-প্রান্তরে। তাই নাজকির গজলকে আধুনিকতম উর্দু গজলের সর্বোত্তম নমুনা বললে অত্যুক্তি হবে না মোটেও। ‘যখনই ভেবেছি তোমাকে’ শীর্ষক গজলের একটি ছন্দোবদ্ধ অনুবাদ-চেষ্টার মধ্য দিয়ে নাজকির গজল-পর্বের ইতি টানছি—
‘তোমার কথা ভেবেছি যেই
সকল দৃশ্য পাল্টে গেছে
যেতে-যেতে কে-ই-বা আবার
হাওয়ার ডানায় নাম লিখেছে
অগ্নিগোলার এই ঋতুতে
বসবে মেলা হাজার লাশের
এসেই আমার বসতঘরে
মাতাল নদী থমকে গেছে
খুশি আমার দূরের পথিক
দুঃখ আমার নিত্য ছায়া
জানবে কী-বা হে কাশ্মীরি
দিল্লিতে আজ হচ্ছে কী ফের।
(লফ্জ লফজ নোহা/ফারুক নাজকি)
আরও পড়ুন:

মুক্তিযুদ্ধের সময় সমগ্র মিরপুর পরিণত হয়েছিল এক বধ্যভূমিতে। আর বৃহত্তর মিরপুরে অবস্থিত গাবতলী এলাকা। তুরাগ নদের ওপরই গাবতলী সেতু অবস্থিত। সেই গাবতলীতে কয়েক বছর আগেও নদের ওপর ছিল পুরোনো একটি লোহার সেতু। সেই পুরোনো সেতুতে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের স্থানীয় সহযোগীরা চালিয়েছিল...
১৯ ঘণ্টা আগে
সৃজনশীল সাহিত্য কিন্তু দেয়াললিখন বা স্লোগান দেওয়া নয়। জীবন এতই জটিল যে তাকে কোনো ফর্মুলায় বেঁধে ফেলা যায় না। মানুষের মূল্যবোধ নানা রকমের। আর সেগুলো দিয়ে যে সিস্টেমগুলো পাওয়া যেতে পারে, তা-ও নানা রকমের। একেক লেখকের কমিটমেন্ট একেক রকম মূল্যবোধের কাছে।
২ দিন আগে
বর্তমান ঢাকার সোহরাওয়ার্দি উদ্যানের দক্ষিণ দিকে অবস্থিত রমনা কালী মন্দির ও আনন্দময়ীর আশ্রম। এটি রমনা কালীবাড়ি নামেও পরিচিত। ইংরেজ আমলে এই মন্দিরটি নতুন করে নির্মাণ করা হয়েছিল। কথিত আছে, শংকরাচার্যের অনুগামী দর্শনার্থী সম্প্রদায় এ কালী মন্দির প্রতিষ্ঠা করে।
৮ দিন আগে
...এটা অনস্বীকার্য যে আমরা বিজয়ী। আমরা জয়ী আর শোষকেরা পরাজিত হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্বপ্ন সামনে রেখেই, তাঁদের ত্যাগকে স্বীকার করেই আমরা সংবিধানের সপ্তম অনুচ্ছেদে বলেছিলাম, ‘জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস’। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে তারা তাদের সরকার নির্ধারণ করবে।
৯ দিন আগেসম্পাদকীয়

মুক্তিযুদ্ধের সময় সমগ্র মিরপুর পরিণত হয়েছিল এক বধ্যভূমিতে। আর বৃহত্তর মিরপুরে অবস্থিত গাবতলী এলাকা। তুরাগ নদের ওপরই গাবতলী সেতু অবস্থিত। সেই গাবতলীতে কয়েক বছর আগেও নদের ওপর ছিল পুরোনো একটি লোহার সেতু। সেই পুরোনো সেতুতে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের স্থানীয় সহযোগীরা চালিয়েছিল পাশবিক হত্যাযজ্ঞ। ঢাকার গাবতলীর পাশের তুরাগ নদের উত্তর পারেই সাভারের কাউন্দিয়া ইউনিয়নের ইসাকাবাদ গ্রাম অবস্থিত। গ্রামটি থেকে স্পষ্ট দেখা যেত গাবতলী সেতু। সেই গ্রামেরই বয়স্ক এক ব্যক্তি মুক্তিযুদ্ধের সময়ের হত্যাযজ্ঞের বর্ণনা করেছেন এভাবে, প্রতিদিন রাতের বেলা মিলিটারি আর বিহারিরা শহরের বিভিন্ন জায়গা থেকে ট্রাকে করে এই সেতুতে মানুষদের নিয়ে আসত। রাত গভীর হলে সেতুর দুই পাশের বাতি নিভিয়ে গুলি চালানো হতো। পুরো যুদ্ধের সময় এখানে এমন রাত ছিল না, যে রাতের বেলা সেখানে লাশ ফেলানো হয়নি। দেশ স্বাধীন হওয়ার পাঁচ দশকের বেশি সময় পার হলেও এখনো এ জায়গাকে বধ্যভূমি হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। ছবি: সংগৃহীত

মুক্তিযুদ্ধের সময় সমগ্র মিরপুর পরিণত হয়েছিল এক বধ্যভূমিতে। আর বৃহত্তর মিরপুরে অবস্থিত গাবতলী এলাকা। তুরাগ নদের ওপরই গাবতলী সেতু অবস্থিত। সেই গাবতলীতে কয়েক বছর আগেও নদের ওপর ছিল পুরোনো একটি লোহার সেতু। সেই পুরোনো সেতুতে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের স্থানীয় সহযোগীরা চালিয়েছিল পাশবিক হত্যাযজ্ঞ। ঢাকার গাবতলীর পাশের তুরাগ নদের উত্তর পারেই সাভারের কাউন্দিয়া ইউনিয়নের ইসাকাবাদ গ্রাম অবস্থিত। গ্রামটি থেকে স্পষ্ট দেখা যেত গাবতলী সেতু। সেই গ্রামেরই বয়স্ক এক ব্যক্তি মুক্তিযুদ্ধের সময়ের হত্যাযজ্ঞের বর্ণনা করেছেন এভাবে, প্রতিদিন রাতের বেলা মিলিটারি আর বিহারিরা শহরের বিভিন্ন জায়গা থেকে ট্রাকে করে এই সেতুতে মানুষদের নিয়ে আসত। রাত গভীর হলে সেতুর দুই পাশের বাতি নিভিয়ে গুলি চালানো হতো। পুরো যুদ্ধের সময় এখানে এমন রাত ছিল না, যে রাতের বেলা সেখানে লাশ ফেলানো হয়নি। দেশ স্বাধীন হওয়ার পাঁচ দশকের বেশি সময় পার হলেও এখনো এ জায়গাকে বধ্যভূমি হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। ছবি: সংগৃহীত

গজল উর্দু সাহিত্যের জনপ্রিয় ধারা। দিল্লির মুসলিম সালতানাতের সময় রহস্যবাদী সুফি কবিদের প্রভাবে এশিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে গজল। তবে মুঘল আমলে এই ধারা ব্যাপকভাবে জনপ্রিয় হয়। মির তকি মির, মির্জা গালিব ও ওয়ালি মুহাম্মদ ওয়ালি উর্দু গজল রচনার স্বর্ণযুগের কবি। মুঘল আমলের শেষ সম্রাট বাহাদুর শাহ জাফরও গজল রচনা করেছেন..
৩০ জুন ২০২২
সৃজনশীল সাহিত্য কিন্তু দেয়াললিখন বা স্লোগান দেওয়া নয়। জীবন এতই জটিল যে তাকে কোনো ফর্মুলায় বেঁধে ফেলা যায় না। মানুষের মূল্যবোধ নানা রকমের। আর সেগুলো দিয়ে যে সিস্টেমগুলো পাওয়া যেতে পারে, তা-ও নানা রকমের। একেক লেখকের কমিটমেন্ট একেক রকম মূল্যবোধের কাছে।
২ দিন আগে
বর্তমান ঢাকার সোহরাওয়ার্দি উদ্যানের দক্ষিণ দিকে অবস্থিত রমনা কালী মন্দির ও আনন্দময়ীর আশ্রম। এটি রমনা কালীবাড়ি নামেও পরিচিত। ইংরেজ আমলে এই মন্দিরটি নতুন করে নির্মাণ করা হয়েছিল। কথিত আছে, শংকরাচার্যের অনুগামী দর্শনার্থী সম্প্রদায় এ কালী মন্দির প্রতিষ্ঠা করে।
৮ দিন আগে
...এটা অনস্বীকার্য যে আমরা বিজয়ী। আমরা জয়ী আর শোষকেরা পরাজিত হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্বপ্ন সামনে রেখেই, তাঁদের ত্যাগকে স্বীকার করেই আমরা সংবিধানের সপ্তম অনুচ্ছেদে বলেছিলাম, ‘জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস’। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে তারা তাদের সরকার নির্ধারণ করবে।
৯ দিন আগেসম্পাদকীয়

সৃজনশীল সাহিত্য কিন্তু দেয়াললিখন বা স্লোগান দেওয়া নয়। জীবন এতই জটিল যে তাকে কোনো ফর্মুলায় বেঁধে ফেলা যায় না। মানুষের মূল্যবোধ নানা রকমের। আর সেগুলো দিয়ে যে সিস্টেমগুলো পাওয়া যেতে পারে, তা-ও নানা রকমের। একেক লেখকের কমিটমেন্ট একেক রকম মূল্যবোধের কাছে।
অনেক লেখকই আছেন যাঁরা খুব ধর্মপ্রাণ, কেউবা আবার কমিউনিস্ট ৷ হিউম্যানিস্ট লেখক যেমন আছেন, তেমনই আছেন অথোরিটারিয়ান লেখক।
তবে সে যা-ই হোক, ভালো সাহিত্যিকের মধ্যে দুটো কমিটমেন্ট থাকতেই হবে—সততা আর স্টাইলের দক্ষতা। নিজের কাছেই যে-লেখক অসৎ, যা লেখেন তা যদি তিনি নিজেই না বিশ্বাস করেন, তাহলে সেই লেখকের পতন অনিবার্য।
কোনো লেখক আবার যদি নিজের ভাষার ঐশ্বর্যকে ছেঁকে তুলতে ব্যর্থ হন, একজন সংগীতশিল্পীকে ঠিক যেভাবে তাঁর যন্ত্রটিকে নিজের বশে আনতে হয়, ভাষার ক্ষেত্রেও তেমনটা যদি কোনো লেখক করতে না পারেন, তাহলে একজন সাংবাদিক ছাড়া আর কিছুই হতে পারবেন না তিনি। সত্য এবং স্টাইল—একজন সাহিত্যিকের বেসিক কমিটমেন্ট হলো শুধু এই দুটো।
সূত্র: সাক্ষাৎকারটি প্রকাশিত হয়েছিল ‘বাংলাদেশ টুডে’ পত্রিকার মার্চ, ১৯৮৪ সংখ্যায়, সাক্ষাৎকার গ্রহীতা সেরাজুল ইসলাম কাদির, অনুবাদক নীলাজ্জ দাস, শিবনারায়ণ রায়ের সাক্ষাৎকার সংগ্রহ, পৃষ্ঠা-২৭।

সৃজনশীল সাহিত্য কিন্তু দেয়াললিখন বা স্লোগান দেওয়া নয়। জীবন এতই জটিল যে তাকে কোনো ফর্মুলায় বেঁধে ফেলা যায় না। মানুষের মূল্যবোধ নানা রকমের। আর সেগুলো দিয়ে যে সিস্টেমগুলো পাওয়া যেতে পারে, তা-ও নানা রকমের। একেক লেখকের কমিটমেন্ট একেক রকম মূল্যবোধের কাছে।
অনেক লেখকই আছেন যাঁরা খুব ধর্মপ্রাণ, কেউবা আবার কমিউনিস্ট ৷ হিউম্যানিস্ট লেখক যেমন আছেন, তেমনই আছেন অথোরিটারিয়ান লেখক।
তবে সে যা-ই হোক, ভালো সাহিত্যিকের মধ্যে দুটো কমিটমেন্ট থাকতেই হবে—সততা আর স্টাইলের দক্ষতা। নিজের কাছেই যে-লেখক অসৎ, যা লেখেন তা যদি তিনি নিজেই না বিশ্বাস করেন, তাহলে সেই লেখকের পতন অনিবার্য।
কোনো লেখক আবার যদি নিজের ভাষার ঐশ্বর্যকে ছেঁকে তুলতে ব্যর্থ হন, একজন সংগীতশিল্পীকে ঠিক যেভাবে তাঁর যন্ত্রটিকে নিজের বশে আনতে হয়, ভাষার ক্ষেত্রেও তেমনটা যদি কোনো লেখক করতে না পারেন, তাহলে একজন সাংবাদিক ছাড়া আর কিছুই হতে পারবেন না তিনি। সত্য এবং স্টাইল—একজন সাহিত্যিকের বেসিক কমিটমেন্ট হলো শুধু এই দুটো।
সূত্র: সাক্ষাৎকারটি প্রকাশিত হয়েছিল ‘বাংলাদেশ টুডে’ পত্রিকার মার্চ, ১৯৮৪ সংখ্যায়, সাক্ষাৎকার গ্রহীতা সেরাজুল ইসলাম কাদির, অনুবাদক নীলাজ্জ দাস, শিবনারায়ণ রায়ের সাক্ষাৎকার সংগ্রহ, পৃষ্ঠা-২৭।

গজল উর্দু সাহিত্যের জনপ্রিয় ধারা। দিল্লির মুসলিম সালতানাতের সময় রহস্যবাদী সুফি কবিদের প্রভাবে এশিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে গজল। তবে মুঘল আমলে এই ধারা ব্যাপকভাবে জনপ্রিয় হয়। মির তকি মির, মির্জা গালিব ও ওয়ালি মুহাম্মদ ওয়ালি উর্দু গজল রচনার স্বর্ণযুগের কবি। মুঘল আমলের শেষ সম্রাট বাহাদুর শাহ জাফরও গজল রচনা করেছেন..
৩০ জুন ২০২২
মুক্তিযুদ্ধের সময় সমগ্র মিরপুর পরিণত হয়েছিল এক বধ্যভূমিতে। আর বৃহত্তর মিরপুরে অবস্থিত গাবতলী এলাকা। তুরাগ নদের ওপরই গাবতলী সেতু অবস্থিত। সেই গাবতলীতে কয়েক বছর আগেও নদের ওপর ছিল পুরোনো একটি লোহার সেতু। সেই পুরোনো সেতুতে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের স্থানীয় সহযোগীরা চালিয়েছিল...
১৯ ঘণ্টা আগে
বর্তমান ঢাকার সোহরাওয়ার্দি উদ্যানের দক্ষিণ দিকে অবস্থিত রমনা কালী মন্দির ও আনন্দময়ীর আশ্রম। এটি রমনা কালীবাড়ি নামেও পরিচিত। ইংরেজ আমলে এই মন্দিরটি নতুন করে নির্মাণ করা হয়েছিল। কথিত আছে, শংকরাচার্যের অনুগামী দর্শনার্থী সম্প্রদায় এ কালী মন্দির প্রতিষ্ঠা করে।
৮ দিন আগে
...এটা অনস্বীকার্য যে আমরা বিজয়ী। আমরা জয়ী আর শোষকেরা পরাজিত হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্বপ্ন সামনে রেখেই, তাঁদের ত্যাগকে স্বীকার করেই আমরা সংবিধানের সপ্তম অনুচ্ছেদে বলেছিলাম, ‘জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস’। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে তারা তাদের সরকার নির্ধারণ করবে।
৯ দিন আগেসম্পাদকীয়

বর্তমান ঢাকার সোহরাওয়ার্দি উদ্যানের দক্ষিণ দিকে অবস্থিত রমনা কালী মন্দির ও আনন্দময়ীর আশ্রম। এটি রমনা কালীবাড়ি নামেও পরিচিত। ইংরেজ আমলে এই মন্দিরটি নতুন করে নির্মাণ করা হয়েছিল। কথিত আছে, শংকরাচার্যের অনুগামী দর্শনার্থী সম্প্রদায় এ কালী মন্দির প্রতিষ্ঠা করে। প্রায় ৫০০ বছর আগে বদ্রী নারায়ণের যোশী মঠের সন্ন্যাসী গোপাল গিরি ঢাকায় এসে রমনায় প্রথমে একটি আখড়া স্থাপন করেন। তখন এ আখড়াটি কাঠঘর নামে পরিচিত ছিল।
পরে সম্ভবত ১৭ শতকের প্রথম দিকে এ স্থানেই হরিচরণ গিরি মূল মন্দিরটি নির্মাণ করেন। কালীবাড়ি মন্দিরটি ১৯৭১ সালের ২৭ মার্চ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আক্রমণে বিধ্বস্ত হয়। তারা মন্দির ও আশ্রমটিতে আগুন ধরিয়ে দেয়। মন্দিরের সেবায়েতসহ প্রায় ১০০ সন্ন্যাসী, ভক্ত এবং সেখানে বসবাসরত সাধারণ মানুষ নিহত হন। যদিও এখন বধ্যভূমির কোনো চিহ্ন নেই। তবে সেটাকে বধ্যভূমি হিসেবে অস্বীকার করার সুযোগ নেই। ছবি: সংগৃহীত

বর্তমান ঢাকার সোহরাওয়ার্দি উদ্যানের দক্ষিণ দিকে অবস্থিত রমনা কালী মন্দির ও আনন্দময়ীর আশ্রম। এটি রমনা কালীবাড়ি নামেও পরিচিত। ইংরেজ আমলে এই মন্দিরটি নতুন করে নির্মাণ করা হয়েছিল। কথিত আছে, শংকরাচার্যের অনুগামী দর্শনার্থী সম্প্রদায় এ কালী মন্দির প্রতিষ্ঠা করে। প্রায় ৫০০ বছর আগে বদ্রী নারায়ণের যোশী মঠের সন্ন্যাসী গোপাল গিরি ঢাকায় এসে রমনায় প্রথমে একটি আখড়া স্থাপন করেন। তখন এ আখড়াটি কাঠঘর নামে পরিচিত ছিল।
পরে সম্ভবত ১৭ শতকের প্রথম দিকে এ স্থানেই হরিচরণ গিরি মূল মন্দিরটি নির্মাণ করেন। কালীবাড়ি মন্দিরটি ১৯৭১ সালের ২৭ মার্চ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আক্রমণে বিধ্বস্ত হয়। তারা মন্দির ও আশ্রমটিতে আগুন ধরিয়ে দেয়। মন্দিরের সেবায়েতসহ প্রায় ১০০ সন্ন্যাসী, ভক্ত এবং সেখানে বসবাসরত সাধারণ মানুষ নিহত হন। যদিও এখন বধ্যভূমির কোনো চিহ্ন নেই। তবে সেটাকে বধ্যভূমি হিসেবে অস্বীকার করার সুযোগ নেই। ছবি: সংগৃহীত

গজল উর্দু সাহিত্যের জনপ্রিয় ধারা। দিল্লির মুসলিম সালতানাতের সময় রহস্যবাদী সুফি কবিদের প্রভাবে এশিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে গজল। তবে মুঘল আমলে এই ধারা ব্যাপকভাবে জনপ্রিয় হয়। মির তকি মির, মির্জা গালিব ও ওয়ালি মুহাম্মদ ওয়ালি উর্দু গজল রচনার স্বর্ণযুগের কবি। মুঘল আমলের শেষ সম্রাট বাহাদুর শাহ জাফরও গজল রচনা করেছেন..
৩০ জুন ২০২২
মুক্তিযুদ্ধের সময় সমগ্র মিরপুর পরিণত হয়েছিল এক বধ্যভূমিতে। আর বৃহত্তর মিরপুরে অবস্থিত গাবতলী এলাকা। তুরাগ নদের ওপরই গাবতলী সেতু অবস্থিত। সেই গাবতলীতে কয়েক বছর আগেও নদের ওপর ছিল পুরোনো একটি লোহার সেতু। সেই পুরোনো সেতুতে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের স্থানীয় সহযোগীরা চালিয়েছিল...
১৯ ঘণ্টা আগে
সৃজনশীল সাহিত্য কিন্তু দেয়াললিখন বা স্লোগান দেওয়া নয়। জীবন এতই জটিল যে তাকে কোনো ফর্মুলায় বেঁধে ফেলা যায় না। মানুষের মূল্যবোধ নানা রকমের। আর সেগুলো দিয়ে যে সিস্টেমগুলো পাওয়া যেতে পারে, তা-ও নানা রকমের। একেক লেখকের কমিটমেন্ট একেক রকম মূল্যবোধের কাছে।
২ দিন আগে
...এটা অনস্বীকার্য যে আমরা বিজয়ী। আমরা জয়ী আর শোষকেরা পরাজিত হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্বপ্ন সামনে রেখেই, তাঁদের ত্যাগকে স্বীকার করেই আমরা সংবিধানের সপ্তম অনুচ্ছেদে বলেছিলাম, ‘জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস’। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে তারা তাদের সরকার নির্ধারণ করবে।
৯ দিন আগেসম্পাদকীয়

...এটা অনস্বীকার্য যে আমরা বিজয়ী। আমরা জয়ী আর শোষকেরা পরাজিত হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্বপ্ন সামনে রেখেই, তাঁদের ত্যাগকে স্বীকার করেই আমরা সংবিধানের সপ্তম অনুচ্ছেদে বলেছিলাম, ‘জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস’। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে তারা তাদের সরকার নির্ধারণ করবে।
এগুলো নিয়ে কোনো বিতর্ক আছে বলে মনে করি না। কিন্তু বর্তমানে এটা কী হচ্ছে? যদি বলি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সঠিক পথে এগোচ্ছে না, তাহলে সেই না এগোনোর কারণটা কী, তা নিয়ে কেন অর্থপূর্ণ আলোচনা হচ্ছে না? আমি আপনাদের কাছে প্রশ্ন আকারেই উত্থাপন করছি। আমাদের অর্জন অনেক। আজ আমাদের গার্মেন্টসশিল্প বিশ্বে তৃতীয়। আমরা খুব দ্রুত দ্বিতীয় বা প্রথমের কাতারে চলে যাব। আমাদের লাখ লাখ ছেলে-মেয়ে বিদেশে হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে দেশে টাকা পাঠাচ্ছে। প্রতিবছর কৃষির উৎপাদন বাড়ছে। কিন্তু এসবের পরেও কী হচ্ছে? বিলিয়ন বিলিয়ন টাকা বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে।
... পাকিস্তানিদের কথা আর কী বলব! আক্ষরিক অর্থেই তারা তখন আমাদের পা ধরেছিল। ‘তোমরা এদের ছেড়ে দাও, আমরা নিজের দেশে নিয়ে গিয়ে এদের বিচার করব।’ ১৯৫ জনকে আমরা চিহ্নিত করি তখন। বঙ্গবন্ধু তখন রাশিয়াতে ছিলেন, তারা সেখানে বঙ্গবন্ধুর কাছে লোক পাঠিয়েছে। বঙ্গবন্ধুকে বলেছে, ‘আপনারা যদি এ বিচার করেন তাহলে ভুট্টোর কল্লা থাকবে না। আমাদের কাছে ফেরত দিন, আমরা এদের বিচার করব।’ এটা সে সময় ‘লন্ডন টাইমস’-এ প্রকাশিত হয়েছে। একেবারে তারা আন্ডারটেকিং দিয়েছে, ‘ছেড়ে দিন, আমরা বিচার করব। আর কোনো সাক্ষী লাগলে তোমাদের ডেকে পাঠানো হবে।’ শিল্পকলা একাডেমির যে বিল্ডিং ভেঙে এখন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট হয়েছে, ওই বিল্ডিংয়ে ভর্তি ছিল স্টেটমেন্টগুলো। এগুলো কী হয়েছে, কে গুম করেছে, আমি জানি না। এর মধ্যে অনেক সরকার এসেছে, গেছে। তবে আমরা খুব পরিশ্রম করেই এগুলো সংগ্রহ করেছিলাম।
সূত্র: শারমিনুর নাহার কর্তৃক ড. কামাল হোসেনের সাক্ষাৎকার গ্রহণ; ‘সময় সমাজ ও রাজনীতির ভাষ্য’, পৃষ্ঠা: ৩১-৩২।

...এটা অনস্বীকার্য যে আমরা বিজয়ী। আমরা জয়ী আর শোষকেরা পরাজিত হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্বপ্ন সামনে রেখেই, তাঁদের ত্যাগকে স্বীকার করেই আমরা সংবিধানের সপ্তম অনুচ্ছেদে বলেছিলাম, ‘জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস’। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে তারা তাদের সরকার নির্ধারণ করবে।
এগুলো নিয়ে কোনো বিতর্ক আছে বলে মনে করি না। কিন্তু বর্তমানে এটা কী হচ্ছে? যদি বলি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সঠিক পথে এগোচ্ছে না, তাহলে সেই না এগোনোর কারণটা কী, তা নিয়ে কেন অর্থপূর্ণ আলোচনা হচ্ছে না? আমি আপনাদের কাছে প্রশ্ন আকারেই উত্থাপন করছি। আমাদের অর্জন অনেক। আজ আমাদের গার্মেন্টসশিল্প বিশ্বে তৃতীয়। আমরা খুব দ্রুত দ্বিতীয় বা প্রথমের কাতারে চলে যাব। আমাদের লাখ লাখ ছেলে-মেয়ে বিদেশে হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে দেশে টাকা পাঠাচ্ছে। প্রতিবছর কৃষির উৎপাদন বাড়ছে। কিন্তু এসবের পরেও কী হচ্ছে? বিলিয়ন বিলিয়ন টাকা বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে।
... পাকিস্তানিদের কথা আর কী বলব! আক্ষরিক অর্থেই তারা তখন আমাদের পা ধরেছিল। ‘তোমরা এদের ছেড়ে দাও, আমরা নিজের দেশে নিয়ে গিয়ে এদের বিচার করব।’ ১৯৫ জনকে আমরা চিহ্নিত করি তখন। বঙ্গবন্ধু তখন রাশিয়াতে ছিলেন, তারা সেখানে বঙ্গবন্ধুর কাছে লোক পাঠিয়েছে। বঙ্গবন্ধুকে বলেছে, ‘আপনারা যদি এ বিচার করেন তাহলে ভুট্টোর কল্লা থাকবে না। আমাদের কাছে ফেরত দিন, আমরা এদের বিচার করব।’ এটা সে সময় ‘লন্ডন টাইমস’-এ প্রকাশিত হয়েছে। একেবারে তারা আন্ডারটেকিং দিয়েছে, ‘ছেড়ে দিন, আমরা বিচার করব। আর কোনো সাক্ষী লাগলে তোমাদের ডেকে পাঠানো হবে।’ শিল্পকলা একাডেমির যে বিল্ডিং ভেঙে এখন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট হয়েছে, ওই বিল্ডিংয়ে ভর্তি ছিল স্টেটমেন্টগুলো। এগুলো কী হয়েছে, কে গুম করেছে, আমি জানি না। এর মধ্যে অনেক সরকার এসেছে, গেছে। তবে আমরা খুব পরিশ্রম করেই এগুলো সংগ্রহ করেছিলাম।
সূত্র: শারমিনুর নাহার কর্তৃক ড. কামাল হোসেনের সাক্ষাৎকার গ্রহণ; ‘সময় সমাজ ও রাজনীতির ভাষ্য’, পৃষ্ঠা: ৩১-৩২।

গজল উর্দু সাহিত্যের জনপ্রিয় ধারা। দিল্লির মুসলিম সালতানাতের সময় রহস্যবাদী সুফি কবিদের প্রভাবে এশিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে গজল। তবে মুঘল আমলে এই ধারা ব্যাপকভাবে জনপ্রিয় হয়। মির তকি মির, মির্জা গালিব ও ওয়ালি মুহাম্মদ ওয়ালি উর্দু গজল রচনার স্বর্ণযুগের কবি। মুঘল আমলের শেষ সম্রাট বাহাদুর শাহ জাফরও গজল রচনা করেছেন..
৩০ জুন ২০২২
মুক্তিযুদ্ধের সময় সমগ্র মিরপুর পরিণত হয়েছিল এক বধ্যভূমিতে। আর বৃহত্তর মিরপুরে অবস্থিত গাবতলী এলাকা। তুরাগ নদের ওপরই গাবতলী সেতু অবস্থিত। সেই গাবতলীতে কয়েক বছর আগেও নদের ওপর ছিল পুরোনো একটি লোহার সেতু। সেই পুরোনো সেতুতে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের স্থানীয় সহযোগীরা চালিয়েছিল...
১৯ ঘণ্টা আগে
সৃজনশীল সাহিত্য কিন্তু দেয়াললিখন বা স্লোগান দেওয়া নয়। জীবন এতই জটিল যে তাকে কোনো ফর্মুলায় বেঁধে ফেলা যায় না। মানুষের মূল্যবোধ নানা রকমের। আর সেগুলো দিয়ে যে সিস্টেমগুলো পাওয়া যেতে পারে, তা-ও নানা রকমের। একেক লেখকের কমিটমেন্ট একেক রকম মূল্যবোধের কাছে।
২ দিন আগে
বর্তমান ঢাকার সোহরাওয়ার্দি উদ্যানের দক্ষিণ দিকে অবস্থিত রমনা কালী মন্দির ও আনন্দময়ীর আশ্রম। এটি রমনা কালীবাড়ি নামেও পরিচিত। ইংরেজ আমলে এই মন্দিরটি নতুন করে নির্মাণ করা হয়েছিল। কথিত আছে, শংকরাচার্যের অনুগামী দর্শনার্থী সম্প্রদায় এ কালী মন্দির প্রতিষ্ঠা করে।
৮ দিন আগে