মারুফ ইসলাম

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ প্রসঙ্গে সত্যজিৎ রায় অস্বাভাবিক নীরব ছিলেন। তাঁর কোনো কথায় কিংবা কাজে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ বিশেষ স্থান পায়নি। এই নীরবতা কৌতূহলোদ্দীপক বিধায় তা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা আছে। যেমন একবার দেশের একটি দৈনিকে কবি দাউদ হায়দার লেখেন:
‘সত্যজিৎ রায় বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে-স্বাধীনতায় অবদান রেখেছেন? কবে? কখন? কোথায়? বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে কলকাতায় মিছিল, সভা কম হয়নি। বুদ্ধিজীবী-শিল্পী-সাহিত্যিক-সাংবাদিক-সাংস্কৃতিক কলাকুশলীর উদ্যোগে অন্তত কুড়িটি অনুষ্ঠান হয়েছে। অন্নদাশঙ্কর রায়, প্রেমেন্দ্র মিত্র, সুচিত্রা মিত্র প্রমুখ অনুরোধ জানিয়েছেন ফোনে, অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার জন্য। মৃণাল সেন, চিন্মোহন সেহানবীশ, সুভাষ মুখোপাধ্যায়, দীপেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, পরিতোষ সেন, দেবেশ রায় জোট বেঁধে সত্যজিতের কাছে গেছেন, মিছিলে সভায় যোগ দেওয়ার জন্য। আইভরি টাওয়ার থেকে কবে নেমেছেন?’
বিভিন্ন গণমাধ্যমে লেখালেখি থেকে জানা যাচ্ছে, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে কবি অন্নদাশঙ্কর রায়, লেখক প্রেমেন্দ্র মিত্র প্রমুখ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে কলকাতায় অনুষ্ঠিত অনুষ্ঠানে অংশ নিতে সত্যজিৎ রায়কে ফোনে অনুরোধ জানান। তাঁকে আনতে মৃণাল সেন ও সুভাষ মুখোপাধ্যায় তাঁর বাসা অব্দি গিয়েছিলেন, কিন্তু সত্যজিৎ রায়কে মিছিলে বা সভায় নিতে পারেননি।
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালে ঢাকায় এসেছিলেন সত্যজিৎ রায়। তিনি ২১ ফেব্রুয়ারি ঢাকার পল্টন ময়দানে এক জনসভায় ভাষণ দেন। সেই ভাষণে তিনি বাংলা ভাষা নিয়ে নানা কথা বললেও মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কিছুই বলেননি। শুধু বলেছেন, ‘হঠাৎ কিছুদিন আগে ইতিহাসের চাকা ঘুরে গেল...।’ বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনকে তিনি শুধু ‘ইতিহাসের চাকা ঘুরে যাওয়া’ বলে অভিহিত করেছেন।
পঁচাত্তর সালের আগে সত্যজিতের স্ত্রী বিজয়া রায়ের দিনলিপি থেকে মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে কথা পাওয়া গেলেও তা নিয়ে সত্যজিতের কোনো অনুভূতি বা মন্তব্য মেলে না। এক স্থানে বিজয়া লিখছেন, ‘পূর্ব পাকিস্তান একটি ছোট দেশ, যুদ্ধ বেধে গেছে, তারা সামলে উঠতে পারবে তো? এই যুদ্ধের সঙ্গে ভারত জড়িয়ে পড়েছে, এখন পশ্চিমবঙ্গের কী হবে?’ বিজয়া রায় এখানে চিন্তিত নিজেদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে নিয়ে, তারা কোনো বিপদের মুখে পড়বে কি না! একজন মা হিসেবে বিজয়া রায়ের এই অনুভূতি স্বাভাবিক। আরেক জায়গায় তিনি চিত্রগ্রাহক রঘুবীর সিংয়ের কথা বলেছেন। রঘু বাংলাদেশের শরণার্থীদের ছবি দেখাতে আসতেন সত্যজিৎকে। কিন্তু এসব ছবি দেখে সত্যজিৎ কী বলতেন বা তাঁর অনুভূতি কী হতো, তা আর জানা যায় না বিজয়ার লেখা থেকে। বিজয়া রায়ের স্মৃতিকথা ‘আমাদের কথা’ বইয়ে এসব কথার উল্লেখ রয়েছে।
এই বই মারফত জানা যাচ্ছে, ১৯৭১ সালে যুদ্ধ চলাকালে সত্যজিৎ ‘সীমাবদ্ধ’ ছবির কাজ করছিলেন। সত্যজিৎ ও বিজয়ার জেমস বন্ড চলচ্চিত্র ‘ডক্টর নো’ কিংবা হিচককের ‘সাইকো’ দেখতে যাওয়ার খবরও পাওয়া যায়। কিন্তু বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে সত্যজিতের কোনো প্রতিক্রিয়া চোখে পড়ে না।
সত্যজিতের এই বিস্ময়কর নীরবতার পেছনে কী কারণ থাকতে পারে? অনেকের ধারণা, সত্যজিৎ রায় ১৯৪৭-এর দেশভাগের বিরুদ্ধে ছিলেন। পূর্ব বাংলার মানুষ যখন এই ধর্মকেন্দ্রিক বিভাজনে উন্মাদনাসহযোগে যোগ দেন, তখন স্বাভাবিকভাবেই সত্যজিৎ আহত বোধ করেন। তাই পরে পূর্ব বাংলার তথা বাংলাদেশের মানুষ যখন পাঞ্জাবদের হাতে নির্যাতিত হন, তখন তিনি নীরবতা অবলম্বন করেন।
এ ছাড়া আরেকটি জোরালো যুক্তি হচ্ছে, সত্যজিৎ ইন্ডিয়ান ইউনিয়নে বিশ্বাসী ছিলেন বলে জানা যায়। ফলে বাংলাদেশ যখন ১৯৪৭ সালে পাকিস্তানের সঙ্গে যুক্ত হয়, তখন তিনি বাংলাদেশ সম্পর্কে সকল আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন। সংগত কারণে সত্যজিতের অমর সৃষ্টি ফেলুদা নেপাল ও অন্যান্য দেশ ঘুরে বেড়ালেও কখনো বাংলাদেশে পা রাখে না।
বাংলাদেশের নানা ঐতিহ্য, স্বর্ণমুদ্রা ইত্যাদি লুটপাট হয়ে গেলেও সেদিকে একদম নজর ছিল না ফেলুদার। এমনকি বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরও সত্যজিতের ফেলুদা বাংলাদেশে আসেনি।
এসব উদাসীনতা সত্যজিতের ইচ্ছাকৃত বলে মনে করেন সমালোচকেরা। তাঁরা আরও মনে করেন, কলকাতাকেন্দ্রিক বাংলায় বিশ্বাসী ছিলেন সত্যজিৎ। তাঁর কলকাতাপ্রেম ছিল প্রবাদতুল্য। বিশ্বের বিভিন্ন জায়গা থেকে চলচ্চিত্র নির্মাণের আমন্ত্রণ পেলেও তিনি কলকাতা ছেড়ে যাননি। তিনি মনে করতেন, কলকাতা ছেড়ে গেলে তিনি তাঁর সৃজনশীলতার শক্তি খোয়াবেন।
১৯৭২ সালে পল্টনে দেওয়া ভাষণে তিনি বলেছেন, ‘বহুবার বহু জায়গা থেকে অনুরোধ এসেছে যে আমি বাংলাদেশ, বাংলা ভাষা পরিত্যাগ করে অন্য দেশে, অন্য ভাষায় চিত্র রচনা করি। কিন্তু আমি সেই অনুরোধ বারবার প্রত্যাখ্যান করেছি। কারণ, আমি জানি, আমার রক্তে যে ভাষা বইছে, সে ভাষা হলো বাংলা ভাষা, আমি জানি যে সেই ভাষাকে বাদ দিয়ে অন্য ভাষায় কিছু করতে গেলে আমার পায়ের তলা থেকে মাটি সরে যাবে, আমি কূলকিনারা পাব না, শিল্পী হিসেবে আমি মনের জোর হারাব।’
বাংলাদেশ যেহেতু ভাষাভিত্তিক আন্দোলনের জের ধরে স্বাধীনতা লাভ করেছে, সুতরাং বাংলা ভাষার কেন্দ্র স্বাধীন বাংলাদেশে চলে আসবে—এই নিরেট সত্য সত্যজিৎ আগেই উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন। তাই তাঁর গোয়েন্দা উপন্যাসগুলোতে দেখা যায়, নায়ক ফেলুদা মগনলাল মেঘরাজদের হাত থেকে কলকাতার ঐতিহ্য রক্ষার শেষ চেষ্টা চালাচ্ছেন। শুধু তা-ই নয়, ঐতিহ্য রক্ষার ভবিষ্যৎ যোদ্ধা তোপসেকেও নির্মাণ করেছেন তিনি। বলার অপেক্ষা রাখে না, ঐতিহ্যসচেতন সত্যজিতের কাছে স্বাধীন বাংলাদেশ একধরনের আশঙ্কাই তৈরি করেছিল হয়তো। হয়তো তিনি ভেবেছিলেন, কলকাতার ঐতিহ্য রক্ষা করার জন্য কি ইন্ডিয়ান ইউনিয়ন থেকে বের হতে হবে, যে রকম বের হয়েছে পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ? এই সমস্ত ভয়-ভাবনা সত্যজিৎকে বাংলাদেশ প্রসঙ্গে নীরব রেখেছিল বলে ধারণা করা যায়।
তবে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কাজ করার ইচ্ছা দু-একবার সত্যজিতের মনে উঁকি দিয়েছিল মর্মে কিছু প্রমাণ পাওয়া যায়। যেমন কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেনকে লেখা তাঁর চিঠি একটি প্রমাণ। সেলিনা হোসেনের উপন্যাস ‘হাঙর নদী গ্রেনেড’ নিয়ে চলচ্চিত্র করার আগ্রহের কথা জানিয়েছিলেন সত্যজিৎ রায়, ১৯৭৫ সালে। উপন্যাসটি খসড়া আকারে, গল্প হিসেবে আগে ছাপা হয়েছিল কলকাতার তরুণ সাহিত্যিকদের পত্রিকা টেরোড্যাকটিলে। সেখানেই প্রথম সত্যজিৎ গল্পটি পড়েন। এই গল্পের ওপর চলচ্চিত্র নির্মাণের কথাও ভাবেন তিনি। চিঠিতে সত্যজিৎ লিখেছেন:
“প্রিয় সেলিনা হোসেন
মাননীয়াসু,
আপনার চিঠি কিছুদিন হলো পেয়েছি। আমার নতুন ছবির কাজ এবং পুজোর লেখা নিয়ে একান্ত ব্যস্ত থাকায় উত্তর দিতে দেরি হয়ে গেল।
‘ট্যারোড্যাকটিল’ পত্রিকায় প্রকাশিত আপনার ছোটগল্পটি পড়ে আমার যে খুব ভালো লেগেছিল, তা আমি অনেককেই বলেছিলাম। গল্পটি থেকে ভালো চলচ্চিত্র হয় এ বিশ্বাসও আমার ছিল। কিন্তু তখন আমার হাতে অন্য ছবি থাকায় ওটার কথা চিন্তা করতে পারিনি। পরে বাংলাদেশে গিয়ে ছবি করার প্রশ্নে ওঠে আরেকবার; তখন শুনেছিলাম ওখানকার অবস্থা ভালো নয়, কাজে নানারকম অন্তরায়ের সম্ভাবনা আছে। সুতরাং, পরিকল্পনাটি স্থগিত থাকে।
এখন আমি আমার অন্য ছবির কাজে জড়িয়ে পড়েছি। কবে মুক্ত হব জানি না। এ অবস্থায় আপনাকেই বা কীভাবে গল্পটা ধরে রাখতে বলি তাও বুঝতে পারছি না। সংশয় হয় অন্য কারও হাতে পড়লে এমন চমৎকার গল্পটি হয়তো যথাযথভাবে চিত্রায়িত হবে না। সে বিষয় যদি (অপর পৃষ্ঠায় এরপর) আপনি নিজে পছন্দ করে কাউকে গল্পটা দিতে পারেন তাহলে আমার কিছু বলার থাকে না। এ ব্যাপারে আপনি যা ভালো বোঝেন তাই করুন- এ আমার অনুরোধ।
আপনার সম্পাদিত পত্রিকার জন্য এর পর কোনো লেখা দিতে পারব বলে মনে হয় না। সন্দেশের লেখা এখনো লিখে উঠতে পারিনি।
আপনার গল্পটি উপন্যাসাকারে প্রকাশিত হলে পড়ার ইচ্ছে রইল।
নমস্কারান্তে ভবদীয়
সত্যজিৎ রায়
১৩ / ০৮ / ৭৫
(চিঠিটি নেওয়া হয়েছে ‘আলোকিত বাংলাদেশ’ পত্রিকার ৩০ মে ২০১৪ তারিখের সংখ্যা থেকে।)
এই চিঠিতে জানানোর পরও আশির দশকে এক সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ওপর চলচ্চিত্র করার কথা জানিয়েছিলেন সত্যজিৎ। রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় তিনি আর সেই ছবির কাজে হাত দেননি।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও সত্যজিতের অবস্থান প্রসঙ্গে কিঞ্চিৎ ধারণা পাওয়া যায় অস্ট্রেলিয়ার চলচ্চিত্র সমালোচক ও লেখক জন ডব্লিউ হুডের লেখা ‘বিয়ন্ড দ্য ওয়ার্ল্ড অব অপু’ বইয়ে। তিনি পশ্চিমবঙ্গে দীর্ঘদিন থেকেছেন, সেখানকার অনেক চলচ্চিত্রনির্মাতাকে নিয়ে লেখালেখিও করেছেন। এই অস্ট্রেলীয় চলচ্চিত্র সমালোচক ও লেখক বাংলাদেশি সাংবাদিক বিধান রিবেরুকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সত্যজিৎকে নিয়ে বলেন, ‘বাংলাদেশ থেকে যে পরিমাণ শরণার্থী পশ্চিমবঙ্গে গেছে এবং এতে যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে, তাতে প্রামাণ্যচিত্র করা যায়, কাহিনিচিত্র নয়। আর এত বড় ঘটনাকে চলচ্চিত্রের মাধ্যমে ধরার জন্য প্রস্তুত ছিলেন না বলেই কাজ করা হয়ে ওঠেনি সত্যজিতের।’
এটাই সত্যজিতের শৈল্পিক সততা। তিনি শিল্পের প্রতি যেমন সৎ ছিলেন, তেমনি সৎ ছিলেন তাঁর চিন্তা ও আবেগের প্রতি। তাই বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের ব্যাপারে তিনি নীরব ছিলেন।
তথ্যঋণ: প্রবন্ধ সংগ্রহ, সত্যজিৎ রায়; আমাদের কথা, বিজয়া রায়

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ প্রসঙ্গে সত্যজিৎ রায় অস্বাভাবিক নীরব ছিলেন। তাঁর কোনো কথায় কিংবা কাজে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ বিশেষ স্থান পায়নি। এই নীরবতা কৌতূহলোদ্দীপক বিধায় তা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা আছে। যেমন একবার দেশের একটি দৈনিকে কবি দাউদ হায়দার লেখেন:
‘সত্যজিৎ রায় বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে-স্বাধীনতায় অবদান রেখেছেন? কবে? কখন? কোথায়? বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে কলকাতায় মিছিল, সভা কম হয়নি। বুদ্ধিজীবী-শিল্পী-সাহিত্যিক-সাংবাদিক-সাংস্কৃতিক কলাকুশলীর উদ্যোগে অন্তত কুড়িটি অনুষ্ঠান হয়েছে। অন্নদাশঙ্কর রায়, প্রেমেন্দ্র মিত্র, সুচিত্রা মিত্র প্রমুখ অনুরোধ জানিয়েছেন ফোনে, অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার জন্য। মৃণাল সেন, চিন্মোহন সেহানবীশ, সুভাষ মুখোপাধ্যায়, দীপেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, পরিতোষ সেন, দেবেশ রায় জোট বেঁধে সত্যজিতের কাছে গেছেন, মিছিলে সভায় যোগ দেওয়ার জন্য। আইভরি টাওয়ার থেকে কবে নেমেছেন?’
বিভিন্ন গণমাধ্যমে লেখালেখি থেকে জানা যাচ্ছে, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে কবি অন্নদাশঙ্কর রায়, লেখক প্রেমেন্দ্র মিত্র প্রমুখ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে কলকাতায় অনুষ্ঠিত অনুষ্ঠানে অংশ নিতে সত্যজিৎ রায়কে ফোনে অনুরোধ জানান। তাঁকে আনতে মৃণাল সেন ও সুভাষ মুখোপাধ্যায় তাঁর বাসা অব্দি গিয়েছিলেন, কিন্তু সত্যজিৎ রায়কে মিছিলে বা সভায় নিতে পারেননি।
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালে ঢাকায় এসেছিলেন সত্যজিৎ রায়। তিনি ২১ ফেব্রুয়ারি ঢাকার পল্টন ময়দানে এক জনসভায় ভাষণ দেন। সেই ভাষণে তিনি বাংলা ভাষা নিয়ে নানা কথা বললেও মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কিছুই বলেননি। শুধু বলেছেন, ‘হঠাৎ কিছুদিন আগে ইতিহাসের চাকা ঘুরে গেল...।’ বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনকে তিনি শুধু ‘ইতিহাসের চাকা ঘুরে যাওয়া’ বলে অভিহিত করেছেন।
পঁচাত্তর সালের আগে সত্যজিতের স্ত্রী বিজয়া রায়ের দিনলিপি থেকে মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে কথা পাওয়া গেলেও তা নিয়ে সত্যজিতের কোনো অনুভূতি বা মন্তব্য মেলে না। এক স্থানে বিজয়া লিখছেন, ‘পূর্ব পাকিস্তান একটি ছোট দেশ, যুদ্ধ বেধে গেছে, তারা সামলে উঠতে পারবে তো? এই যুদ্ধের সঙ্গে ভারত জড়িয়ে পড়েছে, এখন পশ্চিমবঙ্গের কী হবে?’ বিজয়া রায় এখানে চিন্তিত নিজেদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে নিয়ে, তারা কোনো বিপদের মুখে পড়বে কি না! একজন মা হিসেবে বিজয়া রায়ের এই অনুভূতি স্বাভাবিক। আরেক জায়গায় তিনি চিত্রগ্রাহক রঘুবীর সিংয়ের কথা বলেছেন। রঘু বাংলাদেশের শরণার্থীদের ছবি দেখাতে আসতেন সত্যজিৎকে। কিন্তু এসব ছবি দেখে সত্যজিৎ কী বলতেন বা তাঁর অনুভূতি কী হতো, তা আর জানা যায় না বিজয়ার লেখা থেকে। বিজয়া রায়ের স্মৃতিকথা ‘আমাদের কথা’ বইয়ে এসব কথার উল্লেখ রয়েছে।
এই বই মারফত জানা যাচ্ছে, ১৯৭১ সালে যুদ্ধ চলাকালে সত্যজিৎ ‘সীমাবদ্ধ’ ছবির কাজ করছিলেন। সত্যজিৎ ও বিজয়ার জেমস বন্ড চলচ্চিত্র ‘ডক্টর নো’ কিংবা হিচককের ‘সাইকো’ দেখতে যাওয়ার খবরও পাওয়া যায়। কিন্তু বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে সত্যজিতের কোনো প্রতিক্রিয়া চোখে পড়ে না।
সত্যজিতের এই বিস্ময়কর নীরবতার পেছনে কী কারণ থাকতে পারে? অনেকের ধারণা, সত্যজিৎ রায় ১৯৪৭-এর দেশভাগের বিরুদ্ধে ছিলেন। পূর্ব বাংলার মানুষ যখন এই ধর্মকেন্দ্রিক বিভাজনে উন্মাদনাসহযোগে যোগ দেন, তখন স্বাভাবিকভাবেই সত্যজিৎ আহত বোধ করেন। তাই পরে পূর্ব বাংলার তথা বাংলাদেশের মানুষ যখন পাঞ্জাবদের হাতে নির্যাতিত হন, তখন তিনি নীরবতা অবলম্বন করেন।
এ ছাড়া আরেকটি জোরালো যুক্তি হচ্ছে, সত্যজিৎ ইন্ডিয়ান ইউনিয়নে বিশ্বাসী ছিলেন বলে জানা যায়। ফলে বাংলাদেশ যখন ১৯৪৭ সালে পাকিস্তানের সঙ্গে যুক্ত হয়, তখন তিনি বাংলাদেশ সম্পর্কে সকল আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন। সংগত কারণে সত্যজিতের অমর সৃষ্টি ফেলুদা নেপাল ও অন্যান্য দেশ ঘুরে বেড়ালেও কখনো বাংলাদেশে পা রাখে না।
বাংলাদেশের নানা ঐতিহ্য, স্বর্ণমুদ্রা ইত্যাদি লুটপাট হয়ে গেলেও সেদিকে একদম নজর ছিল না ফেলুদার। এমনকি বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরও সত্যজিতের ফেলুদা বাংলাদেশে আসেনি।
এসব উদাসীনতা সত্যজিতের ইচ্ছাকৃত বলে মনে করেন সমালোচকেরা। তাঁরা আরও মনে করেন, কলকাতাকেন্দ্রিক বাংলায় বিশ্বাসী ছিলেন সত্যজিৎ। তাঁর কলকাতাপ্রেম ছিল প্রবাদতুল্য। বিশ্বের বিভিন্ন জায়গা থেকে চলচ্চিত্র নির্মাণের আমন্ত্রণ পেলেও তিনি কলকাতা ছেড়ে যাননি। তিনি মনে করতেন, কলকাতা ছেড়ে গেলে তিনি তাঁর সৃজনশীলতার শক্তি খোয়াবেন।
১৯৭২ সালে পল্টনে দেওয়া ভাষণে তিনি বলেছেন, ‘বহুবার বহু জায়গা থেকে অনুরোধ এসেছে যে আমি বাংলাদেশ, বাংলা ভাষা পরিত্যাগ করে অন্য দেশে, অন্য ভাষায় চিত্র রচনা করি। কিন্তু আমি সেই অনুরোধ বারবার প্রত্যাখ্যান করেছি। কারণ, আমি জানি, আমার রক্তে যে ভাষা বইছে, সে ভাষা হলো বাংলা ভাষা, আমি জানি যে সেই ভাষাকে বাদ দিয়ে অন্য ভাষায় কিছু করতে গেলে আমার পায়ের তলা থেকে মাটি সরে যাবে, আমি কূলকিনারা পাব না, শিল্পী হিসেবে আমি মনের জোর হারাব।’
বাংলাদেশ যেহেতু ভাষাভিত্তিক আন্দোলনের জের ধরে স্বাধীনতা লাভ করেছে, সুতরাং বাংলা ভাষার কেন্দ্র স্বাধীন বাংলাদেশে চলে আসবে—এই নিরেট সত্য সত্যজিৎ আগেই উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন। তাই তাঁর গোয়েন্দা উপন্যাসগুলোতে দেখা যায়, নায়ক ফেলুদা মগনলাল মেঘরাজদের হাত থেকে কলকাতার ঐতিহ্য রক্ষার শেষ চেষ্টা চালাচ্ছেন। শুধু তা-ই নয়, ঐতিহ্য রক্ষার ভবিষ্যৎ যোদ্ধা তোপসেকেও নির্মাণ করেছেন তিনি। বলার অপেক্ষা রাখে না, ঐতিহ্যসচেতন সত্যজিতের কাছে স্বাধীন বাংলাদেশ একধরনের আশঙ্কাই তৈরি করেছিল হয়তো। হয়তো তিনি ভেবেছিলেন, কলকাতার ঐতিহ্য রক্ষা করার জন্য কি ইন্ডিয়ান ইউনিয়ন থেকে বের হতে হবে, যে রকম বের হয়েছে পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ? এই সমস্ত ভয়-ভাবনা সত্যজিৎকে বাংলাদেশ প্রসঙ্গে নীরব রেখেছিল বলে ধারণা করা যায়।
তবে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কাজ করার ইচ্ছা দু-একবার সত্যজিতের মনে উঁকি দিয়েছিল মর্মে কিছু প্রমাণ পাওয়া যায়। যেমন কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেনকে লেখা তাঁর চিঠি একটি প্রমাণ। সেলিনা হোসেনের উপন্যাস ‘হাঙর নদী গ্রেনেড’ নিয়ে চলচ্চিত্র করার আগ্রহের কথা জানিয়েছিলেন সত্যজিৎ রায়, ১৯৭৫ সালে। উপন্যাসটি খসড়া আকারে, গল্প হিসেবে আগে ছাপা হয়েছিল কলকাতার তরুণ সাহিত্যিকদের পত্রিকা টেরোড্যাকটিলে। সেখানেই প্রথম সত্যজিৎ গল্পটি পড়েন। এই গল্পের ওপর চলচ্চিত্র নির্মাণের কথাও ভাবেন তিনি। চিঠিতে সত্যজিৎ লিখেছেন:
“প্রিয় সেলিনা হোসেন
মাননীয়াসু,
আপনার চিঠি কিছুদিন হলো পেয়েছি। আমার নতুন ছবির কাজ এবং পুজোর লেখা নিয়ে একান্ত ব্যস্ত থাকায় উত্তর দিতে দেরি হয়ে গেল।
‘ট্যারোড্যাকটিল’ পত্রিকায় প্রকাশিত আপনার ছোটগল্পটি পড়ে আমার যে খুব ভালো লেগেছিল, তা আমি অনেককেই বলেছিলাম। গল্পটি থেকে ভালো চলচ্চিত্র হয় এ বিশ্বাসও আমার ছিল। কিন্তু তখন আমার হাতে অন্য ছবি থাকায় ওটার কথা চিন্তা করতে পারিনি। পরে বাংলাদেশে গিয়ে ছবি করার প্রশ্নে ওঠে আরেকবার; তখন শুনেছিলাম ওখানকার অবস্থা ভালো নয়, কাজে নানারকম অন্তরায়ের সম্ভাবনা আছে। সুতরাং, পরিকল্পনাটি স্থগিত থাকে।
এখন আমি আমার অন্য ছবির কাজে জড়িয়ে পড়েছি। কবে মুক্ত হব জানি না। এ অবস্থায় আপনাকেই বা কীভাবে গল্পটা ধরে রাখতে বলি তাও বুঝতে পারছি না। সংশয় হয় অন্য কারও হাতে পড়লে এমন চমৎকার গল্পটি হয়তো যথাযথভাবে চিত্রায়িত হবে না। সে বিষয় যদি (অপর পৃষ্ঠায় এরপর) আপনি নিজে পছন্দ করে কাউকে গল্পটা দিতে পারেন তাহলে আমার কিছু বলার থাকে না। এ ব্যাপারে আপনি যা ভালো বোঝেন তাই করুন- এ আমার অনুরোধ।
আপনার সম্পাদিত পত্রিকার জন্য এর পর কোনো লেখা দিতে পারব বলে মনে হয় না। সন্দেশের লেখা এখনো লিখে উঠতে পারিনি।
আপনার গল্পটি উপন্যাসাকারে প্রকাশিত হলে পড়ার ইচ্ছে রইল।
নমস্কারান্তে ভবদীয়
সত্যজিৎ রায়
১৩ / ০৮ / ৭৫
(চিঠিটি নেওয়া হয়েছে ‘আলোকিত বাংলাদেশ’ পত্রিকার ৩০ মে ২০১৪ তারিখের সংখ্যা থেকে।)
এই চিঠিতে জানানোর পরও আশির দশকে এক সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ওপর চলচ্চিত্র করার কথা জানিয়েছিলেন সত্যজিৎ। রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় তিনি আর সেই ছবির কাজে হাত দেননি।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও সত্যজিতের অবস্থান প্রসঙ্গে কিঞ্চিৎ ধারণা পাওয়া যায় অস্ট্রেলিয়ার চলচ্চিত্র সমালোচক ও লেখক জন ডব্লিউ হুডের লেখা ‘বিয়ন্ড দ্য ওয়ার্ল্ড অব অপু’ বইয়ে। তিনি পশ্চিমবঙ্গে দীর্ঘদিন থেকেছেন, সেখানকার অনেক চলচ্চিত্রনির্মাতাকে নিয়ে লেখালেখিও করেছেন। এই অস্ট্রেলীয় চলচ্চিত্র সমালোচক ও লেখক বাংলাদেশি সাংবাদিক বিধান রিবেরুকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সত্যজিৎকে নিয়ে বলেন, ‘বাংলাদেশ থেকে যে পরিমাণ শরণার্থী পশ্চিমবঙ্গে গেছে এবং এতে যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে, তাতে প্রামাণ্যচিত্র করা যায়, কাহিনিচিত্র নয়। আর এত বড় ঘটনাকে চলচ্চিত্রের মাধ্যমে ধরার জন্য প্রস্তুত ছিলেন না বলেই কাজ করা হয়ে ওঠেনি সত্যজিতের।’
এটাই সত্যজিতের শৈল্পিক সততা। তিনি শিল্পের প্রতি যেমন সৎ ছিলেন, তেমনি সৎ ছিলেন তাঁর চিন্তা ও আবেগের প্রতি। তাই বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের ব্যাপারে তিনি নীরব ছিলেন।
তথ্যঋণ: প্রবন্ধ সংগ্রহ, সত্যজিৎ রায়; আমাদের কথা, বিজয়া রায়

আরব সাগরের রানি নামে পরিচিত কোচি একসময় ছিল বন্দর আর মসলার আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। কয়েক শতাব্দী আগে এখানেই গড়ে উঠেছিল ইহুদিদের একটি নিবিড় জনগোষ্ঠী। সেই জনগোষ্ঠীর একজন ছিলেন সারা কোহেন। ২০০০ সাল থেকে এই দোকান চালাচ্ছেন থাহা। সারা জীবিত থাকাকালে তাঁর পক্ষ থেকে, আর ২০১৯ সালে সারা ৯৬
৮ ঘণ্টা আগে
মুক্তিযুদ্ধের সময় সমগ্র মিরপুর পরিণত হয়েছিল এক বধ্যভূমিতে। আর বৃহত্তর মিরপুরে অবস্থিত গাবতলী এলাকা। তুরাগ নদের ওপরই গাবতলী সেতু অবস্থিত। সেই গাবতলীতে কয়েক বছর আগেও নদের ওপর ছিল পুরোনো একটি লোহার সেতু। সেই পুরোনো সেতুতে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের স্থানীয় সহযোগীরা চালিয়েছিল...
২ দিন আগে
সৃজনশীল সাহিত্য কিন্তু দেয়াললিখন বা স্লোগান দেওয়া নয়। জীবন এতই জটিল যে তাকে কোনো ফর্মুলায় বেঁধে ফেলা যায় না। মানুষের মূল্যবোধ নানা রকমের। আর সেগুলো দিয়ে যে সিস্টেমগুলো পাওয়া যেতে পারে, তা-ও নানা রকমের। একেক লেখকের কমিটমেন্ট একেক রকম মূল্যবোধের কাছে।
৩ দিন আগে
বর্তমান ঢাকার সোহরাওয়ার্দি উদ্যানের দক্ষিণ দিকে অবস্থিত রমনা কালী মন্দির ও আনন্দময়ীর আশ্রম। এটি রমনা কালীবাড়ি নামেও পরিচিত। ইংরেজ আমলে এই মন্দিরটি নতুন করে নির্মাণ করা হয়েছিল। কথিত আছে, শংকরাচার্যের অনুগামী দর্শনার্থী সম্প্রদায় এ কালী মন্দির প্রতিষ্ঠা করে।
৯ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

দক্ষিণ ভারতের কোচি শহরের সরু, নুড়ি-পাথর বিছানো রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ চোখে পড়ে ছোট্ট একটি ফলক। তাতে লেখা, ‘সারা কোহেনের বাড়ি।’ জনাকীর্ণ এই রাস্তাটির নাম জু টাউন। কয়েক দশক আগেও এখানকার প্রায় প্রতিটি বাড়িতে বসবাস করত ইহুদি পরিবার। প্রাচীন সামগ্রী, পারস্যের কার্পেট আর মসলার দোকানে ঠাসা এই এলাকাই একসময় পরিচিত ছিল কোচির ইহুদি পাড়া হিসেবে।
এই রাস্তাতেই রয়েছে থাহা ইব্রাহিমের দোকান। কোচির শেষ ইহুদি নকশার দোকান। এক তপ্ত দুপুরে কয়েকজন মার্কিন পর্যটক দোকানে ঢুকতেই দেখা গেল, ৫৫ বছর বয়সী থাহা মনোযোগ দিয়ে একটি কিপ্পা (ইহুদি পুরুষদের ঐতিহ্যবাহী ছোট, বৃত্তাকার টুপি যা তারা ঈশ্বরকে সম্মান জানাতে এবং নিজেদের ধর্মীয় পরিচয় প্রকাশ করতে পরে থাকে) সেলাই করছেন। দোকানের দেয়ালে ঝোলানো একটি ছবির সামনে পর্যটকেরা ভিড় জমালেন। ছবিটি ২০১৩ সালের। তৎকালীন ব্রিটিশ যুবরাজ (বর্তমানে রাজা) চার্লস জু টাউনের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলছেন।
ছবির দিকে আঙুল তুলে থাহা বললেন, ‘ওই ইনিই সারা আন্টি।’ এরপর যোগ করলেন, ‘এটা ছিল সারা কোহেনের বাড়ি ও তাঁর সেলাইয়ের দোকান।’
আরব সাগরের রানি নামে পরিচিত কোচি একসময় ছিল বন্দর আর মসলার আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। কয়েক শতাব্দী আগে এখানেই গড়ে উঠেছিল ইহুদিদের একটি নিবিড় জনগোষ্ঠী। সেই জনগোষ্ঠীর একজন ছিলেন সারা কোহেন। ২০০০ সাল থেকে এই দোকান চালাচ্ছেন থাহা। সারা জীবিত থাকাকালে তাঁর পক্ষ থেকে, আর ২০১৯ সালে সারা ৯৬ বছর বয়সে মারা যাওয়ার পর পুরোপুরি দায়িত্ব নেন তিনি।
থাহা বলেন, ‘আমি ছিলাম তাঁর ছেলের মতো। নিজের মায়ের চেয়েও বেশি সময় তাঁর দেখাশোনা করেছি। আমি তাঁর জন্য কোশার (ইহুদিদের এক ধরনের খাবার) আর মাছ কিনে আনতাম। সময় কাটাতাম আর দোকান বন্ধ করার পরই কেবল ফিরতাম।’
এক ইহুদি নারী আর ভিন্ন সামাজিক ও অর্থনৈতিক পটভূমির এক মুসলমান পুরুষের এই বন্ধুত্ব প্রায় চার দশক ধরে টিকে ছিল। মৃত্যুর আগে সারা তাঁর দোকানটি থাহার নামে উইল করে যান। থাহা প্রতিজ্ঞা করেন, জু টাউনে তিনি সারার স্মৃতি আর ঐতিহ্য বাঁচিয়ে রাখবেন। যেখানে আঠারো শতকে প্রায় আড়াই হাজার ইহুদি বাস করতেন, সেখানে এখন কেবল একজন অবশিষ্ট। থাহা বলেন, ‘এক দিক থেকে, এখানকার ইহুদি সম্প্রদায় যাতে বিস্মৃত না হয়, আমিও সেই চেষ্টাই করছি।’
কেরালায় ইহুদিদের আগমনের সবচেয়ে প্রচলিত কাহিনি বাইবেলের ওল্ড টেস্টামেন্টে উল্লিখিত রাজা সোলোমনের সময়ের, প্রায় দুই হাজার বছর আগেকার। প্রথমে তাঁরা মালাবার উপকূলে ক্রাঙ্গানোরে, বর্তমান কোডুঙ্গাল্লুরের কাছে প্রাচীন বন্দরের আশপাশে বণিক হিসেবে বসতি গড়েন। পরে তাঁরা কোচিতে চলে আসেন। এই প্রাচীন বসতির কারণে তাঁরা পরিচিত হন মালাবারি ইহুদি নামে।
এর বহু পরে, ১৫৯২ সালে, স্প্যানিশ নিপীড়ন থেকে পালিয়ে আসা সেফার্ডিক ইহুদিরা কেরালায় পৌঁছান। পর্তুগাল, তুরস্ক আর বাগদাদ হয়ে তাঁরা কোচিতে বসতি গড়ে তোলেন এবং পরিচিত হন পারাদেসি বা বিদেশি ইহুদি নামে। মালাবারি ও পারাদেসি—এই দুই ধারার মানুষ মিলেই পরিচিত হন কোচিন ইহুদি নামে।

পর্তুগিজ, আরব, ব্রিটিশ আর ওলন্দাজদের দীর্ঘদিনের বাণিজ্যকেন্দ্র কোচিতে তাঁরা রাজাদের সুরক্ষায় নিরাপদে বসবাস করতেন। বিশ শতকের গোড়ায় সারা কোহেনের জন্ম। তখন জু টাউন ছিল প্রাণবন্ত। সারা আর তাঁর স্বামী জ্যাকব—যাঁর জন্মও এখানেই—১৯৪৪ সালে বিয়ে করেন।
আশির দশকের গোড়ায় আচমকাই থাহার সঙ্গে কোহেন দম্পতির পরিচয় হয়। তেরো বছর বয়সে স্কুল ছেড়ে দেওয়া থাহা তখন পর্যটকদের কাছে পোস্টকার্ড বিক্রি করে জীবিকা চালাতেন। জু টাউনে আসা পর্যটকেরা নিয়মিতই যেতেন পারাদেসি সিনাগগে, যা ১৫৬৮ সালে কোচিনের রাজার দেওয়া জমিতে নির্মিত।
থাহা বলেন, ‘তখন প্রচুর পর্যটক আসত আর আমি সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পোস্টকার্ড বেচতাম।’ এক রোববার, যে গুদামঘরে থাহা পোস্টকার্ড রাখতেন, তার মালিক না আসায় জ্যাকব তাঁকে তাঁদের বাড়িতে জায়গা দেন। সারা এতে খুশি ছিলেন না। থাহার মনে আছে, প্রায় তিন বছর তিনি তাঁর সঙ্গে তেমন কথা বলেননি।
ইব্রাহিম থাহা বলেন, ‘মাঝে মাঝে আমি তাঁর স্বামীর ছোটখাটো কাজ করে দিতাম। অথবা যখন তাঁদের জানালার বাইরে থেকে টিভিতে ক্রিকেট দেখতাম, তিনি আমাকে ভেতরে আসতে বলতেন।’ একদিন সারা তাঁকে সিনাগগের জন্য একটি কুশন কভার সেলাই করতে সাহায্য করতে বলেন। তখনই বোঝা যায়, থাহার মধ্যে সেলাই ও নকশার সহজাত দক্ষতা আছে। সম্ভবত দরজি বাবাকে ছোটবেলা থেকে সাহায্য করার ফলেই। তিনি বলেন, ‘আমি যে নকশা আঁকতে আর সেলাই করতে পারি, তা জানতামই না।’
উনিশ বছর বয়সে থাহা সারাকে সাহায্য করেন তাঁদের বৈঠকখানা থেকে ‘সারার হস্ত-সেলাই’ নামে একটি দোকান খুলতে। দোকানটি আজও সেই নামেই পরিচিত। সেখানে বিক্রি হতো কিপ্পাহ, চাল্লাহ কভার আর মেনোরাহ। তিনি বলেন, ‘তিনিই আমাকে সব শিখিয়েছেন।’
এই বন্ধুত্ব নিয়ে থাহা বেশ দার্শনিক। তিনি বলেন, ‘জু টাউনে ইহুদি আর মুসলমানেরা একে অপরের সঙ্গে তেমন মিশতেন না। তাঁরা একে অপরের প্রতি সন্দিহান ছিলেন। কিন্তু সারা আন্টি আর জ্যাকব আংকেল কখনোই আমাকে বহিরাগত মনে করতে দেননি, যদিও আমাদের পটভূমি আলাদা ছিল।’

থাহার বাবা-মা এই সম্পর্কে আপত্তি করেননি। তাঁরা দেখেছিলেন, কোহেন পরিবার তাঁদের ছেলেকে জীবনের একটি উদ্দেশ্য খুঁজে পেতে সাহায্য করছে। কিন্তু এই ঘনিষ্ঠতার সময়েই কোচির ইহুদি জনসংখ্যা দ্রুত কমতে থাকে। চল্লিশের দশকে যেখানে ছিল প্রায় ২৫০ জন, নব্বইয়ের দশকে তা নেমে আসে ২০ জনে। এখন মাত্র একজন আছেন—৬৭ বছর বয়সী কিথ হ্যালেগুয়া।
১৯৪৮ সালে ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর অনেক পরিবার সেখানে চলে যায়। কেরালার ইহুদিদের ওপর ডক্টরেট থিসিস করা আনা জাখারিয়াস বলেন, ‘কোচিন ইহুদিরা হয়তো স্বদেশে ফিরে যাওয়ার ধারণায় ইসরায়েলে গিয়েছিলেন। তবে উন্নত জীবনের আকর্ষণের মতো অর্থনৈতিক কারণও ছিল। তাঁরা এটাও অনুভব করেছিলেন যে কেরালায় উপযুক্ত জীবনসঙ্গীর অভাব ছিল।’
ধর্মীয় নিপীড়ন কখনোই তাঁদের কোচি ছাড়ার কারণ ছিল না। শহরটি শত শত বছর ধরে তাঁদের স্বাগত জানিয়েছে। কিছু বয়স্ক ইহুদি থেকে গিয়েছিলেন, যাঁদের মধ্যে নিঃসন্তান কোহেন দম্পতিও ছিলেন। ১৯৯৯ সালে জ্যাকব মারা যাওয়ার আগে থাহাকে সারার দেখাশোনার দায়িত্ব দিয়ে যান। তখন থাহা বিবাহিত, তিন সন্তানের জনক।
থাহা বলেন, ‘আমি জ্যাকব আংকেলকে বলেছিলাম, সারা আন্টি যদি আমাকে সুযোগ দেন, তবে আমি তাঁর দেখাশোনা করব। আমি তাঁকে সুযোগ দিতে বলেছিলাম, কারণ ইসলামে মৃতপ্রায় ব্যক্তির শেষ ইচ্ছা পূরণ করা গুরুত্বপূর্ণ। না করলে পাপ হয়।’
সারার স্বাস্থ্যের অবনতি হলে থাহা তাঁর পরিবারকে জু টাউনের কাছাকাছি নিয়ে আসেন। সারা মারা গেলে তিনি তাঁর কফিনের জন্য স্টার অব ডেভিড (ইসরায়েলি পতাকায় অঙ্কিত তারকা) আঁকা একটি কফিন কভার তৈরি করান। আজও তিনি নিয়মিত ইহুদি কবরস্থানে তাঁর সমাধিতে যান। প্রতি বছর হাজার হাজার পর্যটক কোচি ঘুরতে আসেন। তাঁদের মধ্যে অনেক ইহুদিও থাকেন। আনা জাখারিয়াস বলেন, ‘বিশ্বজুড়ে ইহুদিরা জু টাউনে আসেন এক ধরনের আপন অনুভব করার জন্য।’
তিনি বলেন, এখানকার ইহুদিরা শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু সমাজের মধ্যেও নিজেদের পরিচয় বজায় রেখেছিলেন। একই সঙ্গে সমাজের সঙ্গে মিশে গিয়েছিলেন। স্থানীয় ভাষা মালয়ালমই ছিল তাঁদের দৈনন্দিন ভাষা। থাহা যেভাবে সারা কোহেনের ঐতিহ্য আগলে রেখেছেন, তা তাঁকে মুগ্ধ করে। তিনি বলেন, ‘একজন মুসলমান কীভাবে এক ইহুদি নারীর যত্ন নিয়েছেন, তা দৃষ্টান্তস্বরূপ। তিনি এখনো সারা-র ধর্মীয় ঐতিহ্যগুলো বজায় রেখেছেন।’
থাহা দোকানটিকে ঠিক সেভাবেই রেখেছেন, যেমনটি সারা চালাতেন। ইহুদিদের সাব্বাথ উপলক্ষে তিনি শনিবার দোকান বন্ধ রাখেন। ইব্রাহিম থাহা আরও বলেন, ‘আমি ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলা মুসলমান, কিন্তু সারা আন্টির জন্য এটা খুব জরুরি ছিল বলে আমি শুক্রবার সন্ধ্যায় একটি প্রদীপ জ্বালাই। কারণ, এই ক্ষণ সাব্বাথের শুরু হওয়াকে চিহ্নিত করে। এই বিষয়টি আমার কাছে এটা ধর্ম সংক্রান্ত নয়, পুরোটাই মানবিক।’
বিবিসি থেকে অনূদিত

দক্ষিণ ভারতের কোচি শহরের সরু, নুড়ি-পাথর বিছানো রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ চোখে পড়ে ছোট্ট একটি ফলক। তাতে লেখা, ‘সারা কোহেনের বাড়ি।’ জনাকীর্ণ এই রাস্তাটির নাম জু টাউন। কয়েক দশক আগেও এখানকার প্রায় প্রতিটি বাড়িতে বসবাস করত ইহুদি পরিবার। প্রাচীন সামগ্রী, পারস্যের কার্পেট আর মসলার দোকানে ঠাসা এই এলাকাই একসময় পরিচিত ছিল কোচির ইহুদি পাড়া হিসেবে।
এই রাস্তাতেই রয়েছে থাহা ইব্রাহিমের দোকান। কোচির শেষ ইহুদি নকশার দোকান। এক তপ্ত দুপুরে কয়েকজন মার্কিন পর্যটক দোকানে ঢুকতেই দেখা গেল, ৫৫ বছর বয়সী থাহা মনোযোগ দিয়ে একটি কিপ্পা (ইহুদি পুরুষদের ঐতিহ্যবাহী ছোট, বৃত্তাকার টুপি যা তারা ঈশ্বরকে সম্মান জানাতে এবং নিজেদের ধর্মীয় পরিচয় প্রকাশ করতে পরে থাকে) সেলাই করছেন। দোকানের দেয়ালে ঝোলানো একটি ছবির সামনে পর্যটকেরা ভিড় জমালেন। ছবিটি ২০১৩ সালের। তৎকালীন ব্রিটিশ যুবরাজ (বর্তমানে রাজা) চার্লস জু টাউনের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলছেন।
ছবির দিকে আঙুল তুলে থাহা বললেন, ‘ওই ইনিই সারা আন্টি।’ এরপর যোগ করলেন, ‘এটা ছিল সারা কোহেনের বাড়ি ও তাঁর সেলাইয়ের দোকান।’
আরব সাগরের রানি নামে পরিচিত কোচি একসময় ছিল বন্দর আর মসলার আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। কয়েক শতাব্দী আগে এখানেই গড়ে উঠেছিল ইহুদিদের একটি নিবিড় জনগোষ্ঠী। সেই জনগোষ্ঠীর একজন ছিলেন সারা কোহেন। ২০০০ সাল থেকে এই দোকান চালাচ্ছেন থাহা। সারা জীবিত থাকাকালে তাঁর পক্ষ থেকে, আর ২০১৯ সালে সারা ৯৬ বছর বয়সে মারা যাওয়ার পর পুরোপুরি দায়িত্ব নেন তিনি।
থাহা বলেন, ‘আমি ছিলাম তাঁর ছেলের মতো। নিজের মায়ের চেয়েও বেশি সময় তাঁর দেখাশোনা করেছি। আমি তাঁর জন্য কোশার (ইহুদিদের এক ধরনের খাবার) আর মাছ কিনে আনতাম। সময় কাটাতাম আর দোকান বন্ধ করার পরই কেবল ফিরতাম।’
এক ইহুদি নারী আর ভিন্ন সামাজিক ও অর্থনৈতিক পটভূমির এক মুসলমান পুরুষের এই বন্ধুত্ব প্রায় চার দশক ধরে টিকে ছিল। মৃত্যুর আগে সারা তাঁর দোকানটি থাহার নামে উইল করে যান। থাহা প্রতিজ্ঞা করেন, জু টাউনে তিনি সারার স্মৃতি আর ঐতিহ্য বাঁচিয়ে রাখবেন। যেখানে আঠারো শতকে প্রায় আড়াই হাজার ইহুদি বাস করতেন, সেখানে এখন কেবল একজন অবশিষ্ট। থাহা বলেন, ‘এক দিক থেকে, এখানকার ইহুদি সম্প্রদায় যাতে বিস্মৃত না হয়, আমিও সেই চেষ্টাই করছি।’
কেরালায় ইহুদিদের আগমনের সবচেয়ে প্রচলিত কাহিনি বাইবেলের ওল্ড টেস্টামেন্টে উল্লিখিত রাজা সোলোমনের সময়ের, প্রায় দুই হাজার বছর আগেকার। প্রথমে তাঁরা মালাবার উপকূলে ক্রাঙ্গানোরে, বর্তমান কোডুঙ্গাল্লুরের কাছে প্রাচীন বন্দরের আশপাশে বণিক হিসেবে বসতি গড়েন। পরে তাঁরা কোচিতে চলে আসেন। এই প্রাচীন বসতির কারণে তাঁরা পরিচিত হন মালাবারি ইহুদি নামে।
এর বহু পরে, ১৫৯২ সালে, স্প্যানিশ নিপীড়ন থেকে পালিয়ে আসা সেফার্ডিক ইহুদিরা কেরালায় পৌঁছান। পর্তুগাল, তুরস্ক আর বাগদাদ হয়ে তাঁরা কোচিতে বসতি গড়ে তোলেন এবং পরিচিত হন পারাদেসি বা বিদেশি ইহুদি নামে। মালাবারি ও পারাদেসি—এই দুই ধারার মানুষ মিলেই পরিচিত হন কোচিন ইহুদি নামে।

পর্তুগিজ, আরব, ব্রিটিশ আর ওলন্দাজদের দীর্ঘদিনের বাণিজ্যকেন্দ্র কোচিতে তাঁরা রাজাদের সুরক্ষায় নিরাপদে বসবাস করতেন। বিশ শতকের গোড়ায় সারা কোহেনের জন্ম। তখন জু টাউন ছিল প্রাণবন্ত। সারা আর তাঁর স্বামী জ্যাকব—যাঁর জন্মও এখানেই—১৯৪৪ সালে বিয়ে করেন।
আশির দশকের গোড়ায় আচমকাই থাহার সঙ্গে কোহেন দম্পতির পরিচয় হয়। তেরো বছর বয়সে স্কুল ছেড়ে দেওয়া থাহা তখন পর্যটকদের কাছে পোস্টকার্ড বিক্রি করে জীবিকা চালাতেন। জু টাউনে আসা পর্যটকেরা নিয়মিতই যেতেন পারাদেসি সিনাগগে, যা ১৫৬৮ সালে কোচিনের রাজার দেওয়া জমিতে নির্মিত।
থাহা বলেন, ‘তখন প্রচুর পর্যটক আসত আর আমি সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পোস্টকার্ড বেচতাম।’ এক রোববার, যে গুদামঘরে থাহা পোস্টকার্ড রাখতেন, তার মালিক না আসায় জ্যাকব তাঁকে তাঁদের বাড়িতে জায়গা দেন। সারা এতে খুশি ছিলেন না। থাহার মনে আছে, প্রায় তিন বছর তিনি তাঁর সঙ্গে তেমন কথা বলেননি।
ইব্রাহিম থাহা বলেন, ‘মাঝে মাঝে আমি তাঁর স্বামীর ছোটখাটো কাজ করে দিতাম। অথবা যখন তাঁদের জানালার বাইরে থেকে টিভিতে ক্রিকেট দেখতাম, তিনি আমাকে ভেতরে আসতে বলতেন।’ একদিন সারা তাঁকে সিনাগগের জন্য একটি কুশন কভার সেলাই করতে সাহায্য করতে বলেন। তখনই বোঝা যায়, থাহার মধ্যে সেলাই ও নকশার সহজাত দক্ষতা আছে। সম্ভবত দরজি বাবাকে ছোটবেলা থেকে সাহায্য করার ফলেই। তিনি বলেন, ‘আমি যে নকশা আঁকতে আর সেলাই করতে পারি, তা জানতামই না।’
উনিশ বছর বয়সে থাহা সারাকে সাহায্য করেন তাঁদের বৈঠকখানা থেকে ‘সারার হস্ত-সেলাই’ নামে একটি দোকান খুলতে। দোকানটি আজও সেই নামেই পরিচিত। সেখানে বিক্রি হতো কিপ্পাহ, চাল্লাহ কভার আর মেনোরাহ। তিনি বলেন, ‘তিনিই আমাকে সব শিখিয়েছেন।’
এই বন্ধুত্ব নিয়ে থাহা বেশ দার্শনিক। তিনি বলেন, ‘জু টাউনে ইহুদি আর মুসলমানেরা একে অপরের সঙ্গে তেমন মিশতেন না। তাঁরা একে অপরের প্রতি সন্দিহান ছিলেন। কিন্তু সারা আন্টি আর জ্যাকব আংকেল কখনোই আমাকে বহিরাগত মনে করতে দেননি, যদিও আমাদের পটভূমি আলাদা ছিল।’

থাহার বাবা-মা এই সম্পর্কে আপত্তি করেননি। তাঁরা দেখেছিলেন, কোহেন পরিবার তাঁদের ছেলেকে জীবনের একটি উদ্দেশ্য খুঁজে পেতে সাহায্য করছে। কিন্তু এই ঘনিষ্ঠতার সময়েই কোচির ইহুদি জনসংখ্যা দ্রুত কমতে থাকে। চল্লিশের দশকে যেখানে ছিল প্রায় ২৫০ জন, নব্বইয়ের দশকে তা নেমে আসে ২০ জনে। এখন মাত্র একজন আছেন—৬৭ বছর বয়সী কিথ হ্যালেগুয়া।
১৯৪৮ সালে ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর অনেক পরিবার সেখানে চলে যায়। কেরালার ইহুদিদের ওপর ডক্টরেট থিসিস করা আনা জাখারিয়াস বলেন, ‘কোচিন ইহুদিরা হয়তো স্বদেশে ফিরে যাওয়ার ধারণায় ইসরায়েলে গিয়েছিলেন। তবে উন্নত জীবনের আকর্ষণের মতো অর্থনৈতিক কারণও ছিল। তাঁরা এটাও অনুভব করেছিলেন যে কেরালায় উপযুক্ত জীবনসঙ্গীর অভাব ছিল।’
ধর্মীয় নিপীড়ন কখনোই তাঁদের কোচি ছাড়ার কারণ ছিল না। শহরটি শত শত বছর ধরে তাঁদের স্বাগত জানিয়েছে। কিছু বয়স্ক ইহুদি থেকে গিয়েছিলেন, যাঁদের মধ্যে নিঃসন্তান কোহেন দম্পতিও ছিলেন। ১৯৯৯ সালে জ্যাকব মারা যাওয়ার আগে থাহাকে সারার দেখাশোনার দায়িত্ব দিয়ে যান। তখন থাহা বিবাহিত, তিন সন্তানের জনক।
থাহা বলেন, ‘আমি জ্যাকব আংকেলকে বলেছিলাম, সারা আন্টি যদি আমাকে সুযোগ দেন, তবে আমি তাঁর দেখাশোনা করব। আমি তাঁকে সুযোগ দিতে বলেছিলাম, কারণ ইসলামে মৃতপ্রায় ব্যক্তির শেষ ইচ্ছা পূরণ করা গুরুত্বপূর্ণ। না করলে পাপ হয়।’
সারার স্বাস্থ্যের অবনতি হলে থাহা তাঁর পরিবারকে জু টাউনের কাছাকাছি নিয়ে আসেন। সারা মারা গেলে তিনি তাঁর কফিনের জন্য স্টার অব ডেভিড (ইসরায়েলি পতাকায় অঙ্কিত তারকা) আঁকা একটি কফিন কভার তৈরি করান। আজও তিনি নিয়মিত ইহুদি কবরস্থানে তাঁর সমাধিতে যান। প্রতি বছর হাজার হাজার পর্যটক কোচি ঘুরতে আসেন। তাঁদের মধ্যে অনেক ইহুদিও থাকেন। আনা জাখারিয়াস বলেন, ‘বিশ্বজুড়ে ইহুদিরা জু টাউনে আসেন এক ধরনের আপন অনুভব করার জন্য।’
তিনি বলেন, এখানকার ইহুদিরা শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু সমাজের মধ্যেও নিজেদের পরিচয় বজায় রেখেছিলেন। একই সঙ্গে সমাজের সঙ্গে মিশে গিয়েছিলেন। স্থানীয় ভাষা মালয়ালমই ছিল তাঁদের দৈনন্দিন ভাষা। থাহা যেভাবে সারা কোহেনের ঐতিহ্য আগলে রেখেছেন, তা তাঁকে মুগ্ধ করে। তিনি বলেন, ‘একজন মুসলমান কীভাবে এক ইহুদি নারীর যত্ন নিয়েছেন, তা দৃষ্টান্তস্বরূপ। তিনি এখনো সারা-র ধর্মীয় ঐতিহ্যগুলো বজায় রেখেছেন।’
থাহা দোকানটিকে ঠিক সেভাবেই রেখেছেন, যেমনটি সারা চালাতেন। ইহুদিদের সাব্বাথ উপলক্ষে তিনি শনিবার দোকান বন্ধ রাখেন। ইব্রাহিম থাহা আরও বলেন, ‘আমি ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলা মুসলমান, কিন্তু সারা আন্টির জন্য এটা খুব জরুরি ছিল বলে আমি শুক্রবার সন্ধ্যায় একটি প্রদীপ জ্বালাই। কারণ, এই ক্ষণ সাব্বাথের শুরু হওয়াকে চিহ্নিত করে। এই বিষয়টি আমার কাছে এটা ধর্ম সংক্রান্ত নয়, পুরোটাই মানবিক।’
বিবিসি থেকে অনূদিত

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ প্রসঙ্গে সত্যজিৎ রায় অস্বাভাবিক নীরব ছিলেন। তাঁর কোনো কথায় কিংবা কাজে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ বিশেষ স্থান পায়নি। এই নীরবতা কৌতূহলোদ্দীপক বিধায় তা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা আছে।
০২ মে ২০২৩
মুক্তিযুদ্ধের সময় সমগ্র মিরপুর পরিণত হয়েছিল এক বধ্যভূমিতে। আর বৃহত্তর মিরপুরে অবস্থিত গাবতলী এলাকা। তুরাগ নদের ওপরই গাবতলী সেতু অবস্থিত। সেই গাবতলীতে কয়েক বছর আগেও নদের ওপর ছিল পুরোনো একটি লোহার সেতু। সেই পুরোনো সেতুতে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের স্থানীয় সহযোগীরা চালিয়েছিল...
২ দিন আগে
সৃজনশীল সাহিত্য কিন্তু দেয়াললিখন বা স্লোগান দেওয়া নয়। জীবন এতই জটিল যে তাকে কোনো ফর্মুলায় বেঁধে ফেলা যায় না। মানুষের মূল্যবোধ নানা রকমের। আর সেগুলো দিয়ে যে সিস্টেমগুলো পাওয়া যেতে পারে, তা-ও নানা রকমের। একেক লেখকের কমিটমেন্ট একেক রকম মূল্যবোধের কাছে।
৩ দিন আগে
বর্তমান ঢাকার সোহরাওয়ার্দি উদ্যানের দক্ষিণ দিকে অবস্থিত রমনা কালী মন্দির ও আনন্দময়ীর আশ্রম। এটি রমনা কালীবাড়ি নামেও পরিচিত। ইংরেজ আমলে এই মন্দিরটি নতুন করে নির্মাণ করা হয়েছিল। কথিত আছে, শংকরাচার্যের অনুগামী দর্শনার্থী সম্প্রদায় এ কালী মন্দির প্রতিষ্ঠা করে।
৯ দিন আগেসম্পাদকীয়

মুক্তিযুদ্ধের সময় সমগ্র মিরপুর পরিণত হয়েছিল এক বধ্যভূমিতে। আর বৃহত্তর মিরপুরে অবস্থিত গাবতলী এলাকা। তুরাগ নদের ওপরই গাবতলী সেতু অবস্থিত। সেই গাবতলীতে কয়েক বছর আগেও নদের ওপর ছিল পুরোনো একটি লোহার সেতু। সেই পুরোনো সেতুতে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের স্থানীয় সহযোগীরা চালিয়েছিল পাশবিক হত্যাযজ্ঞ। ঢাকার গাবতলীর পাশের তুরাগ নদের উত্তর পারেই সাভারের কাউন্দিয়া ইউনিয়নের ইসাকাবাদ গ্রাম অবস্থিত। গ্রামটি থেকে স্পষ্ট দেখা যেত গাবতলী সেতু। সেই গ্রামেরই বয়স্ক এক ব্যক্তি মুক্তিযুদ্ধের সময়ের হত্যাযজ্ঞের বর্ণনা করেছেন এভাবে, প্রতিদিন রাতের বেলা মিলিটারি আর বিহারিরা শহরের বিভিন্ন জায়গা থেকে ট্রাকে করে এই সেতুতে মানুষদের নিয়ে আসত। রাত গভীর হলে সেতুর দুই পাশের বাতি নিভিয়ে গুলি চালানো হতো। পুরো যুদ্ধের সময় এখানে এমন রাত ছিল না, যে রাতের বেলা সেখানে লাশ ফেলানো হয়নি। দেশ স্বাধীন হওয়ার পাঁচ দশকের বেশি সময় পার হলেও এখনো এ জায়গাকে বধ্যভূমি হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। ছবি: সংগৃহীত

মুক্তিযুদ্ধের সময় সমগ্র মিরপুর পরিণত হয়েছিল এক বধ্যভূমিতে। আর বৃহত্তর মিরপুরে অবস্থিত গাবতলী এলাকা। তুরাগ নদের ওপরই গাবতলী সেতু অবস্থিত। সেই গাবতলীতে কয়েক বছর আগেও নদের ওপর ছিল পুরোনো একটি লোহার সেতু। সেই পুরোনো সেতুতে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের স্থানীয় সহযোগীরা চালিয়েছিল পাশবিক হত্যাযজ্ঞ। ঢাকার গাবতলীর পাশের তুরাগ নদের উত্তর পারেই সাভারের কাউন্দিয়া ইউনিয়নের ইসাকাবাদ গ্রাম অবস্থিত। গ্রামটি থেকে স্পষ্ট দেখা যেত গাবতলী সেতু। সেই গ্রামেরই বয়স্ক এক ব্যক্তি মুক্তিযুদ্ধের সময়ের হত্যাযজ্ঞের বর্ণনা করেছেন এভাবে, প্রতিদিন রাতের বেলা মিলিটারি আর বিহারিরা শহরের বিভিন্ন জায়গা থেকে ট্রাকে করে এই সেতুতে মানুষদের নিয়ে আসত। রাত গভীর হলে সেতুর দুই পাশের বাতি নিভিয়ে গুলি চালানো হতো। পুরো যুদ্ধের সময় এখানে এমন রাত ছিল না, যে রাতের বেলা সেখানে লাশ ফেলানো হয়নি। দেশ স্বাধীন হওয়ার পাঁচ দশকের বেশি সময় পার হলেও এখনো এ জায়গাকে বধ্যভূমি হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ প্রসঙ্গে সত্যজিৎ রায় অস্বাভাবিক নীরব ছিলেন। তাঁর কোনো কথায় কিংবা কাজে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ বিশেষ স্থান পায়নি। এই নীরবতা কৌতূহলোদ্দীপক বিধায় তা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা আছে।
০২ মে ২০২৩
আরব সাগরের রানি নামে পরিচিত কোচি একসময় ছিল বন্দর আর মসলার আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। কয়েক শতাব্দী আগে এখানেই গড়ে উঠেছিল ইহুদিদের একটি নিবিড় জনগোষ্ঠী। সেই জনগোষ্ঠীর একজন ছিলেন সারা কোহেন। ২০০০ সাল থেকে এই দোকান চালাচ্ছেন থাহা। সারা জীবিত থাকাকালে তাঁর পক্ষ থেকে, আর ২০১৯ সালে সারা ৯৬
৮ ঘণ্টা আগে
সৃজনশীল সাহিত্য কিন্তু দেয়াললিখন বা স্লোগান দেওয়া নয়। জীবন এতই জটিল যে তাকে কোনো ফর্মুলায় বেঁধে ফেলা যায় না। মানুষের মূল্যবোধ নানা রকমের। আর সেগুলো দিয়ে যে সিস্টেমগুলো পাওয়া যেতে পারে, তা-ও নানা রকমের। একেক লেখকের কমিটমেন্ট একেক রকম মূল্যবোধের কাছে।
৩ দিন আগে
বর্তমান ঢাকার সোহরাওয়ার্দি উদ্যানের দক্ষিণ দিকে অবস্থিত রমনা কালী মন্দির ও আনন্দময়ীর আশ্রম। এটি রমনা কালীবাড়ি নামেও পরিচিত। ইংরেজ আমলে এই মন্দিরটি নতুন করে নির্মাণ করা হয়েছিল। কথিত আছে, শংকরাচার্যের অনুগামী দর্শনার্থী সম্প্রদায় এ কালী মন্দির প্রতিষ্ঠা করে।
৯ দিন আগেসম্পাদকীয়

সৃজনশীল সাহিত্য কিন্তু দেয়াললিখন বা স্লোগান দেওয়া নয়। জীবন এতই জটিল যে তাকে কোনো ফর্মুলায় বেঁধে ফেলা যায় না। মানুষের মূল্যবোধ নানা রকমের। আর সেগুলো দিয়ে যে সিস্টেমগুলো পাওয়া যেতে পারে, তা-ও নানা রকমের। একেক লেখকের কমিটমেন্ট একেক রকম মূল্যবোধের কাছে।
অনেক লেখকই আছেন যাঁরা খুব ধর্মপ্রাণ, কেউবা আবার কমিউনিস্ট ৷ হিউম্যানিস্ট লেখক যেমন আছেন, তেমনই আছেন অথোরিটারিয়ান লেখক।
তবে সে যা-ই হোক, ভালো সাহিত্যিকের মধ্যে দুটো কমিটমেন্ট থাকতেই হবে—সততা আর স্টাইলের দক্ষতা। নিজের কাছেই যে-লেখক অসৎ, যা লেখেন তা যদি তিনি নিজেই না বিশ্বাস করেন, তাহলে সেই লেখকের পতন অনিবার্য।
কোনো লেখক আবার যদি নিজের ভাষার ঐশ্বর্যকে ছেঁকে তুলতে ব্যর্থ হন, একজন সংগীতশিল্পীকে ঠিক যেভাবে তাঁর যন্ত্রটিকে নিজের বশে আনতে হয়, ভাষার ক্ষেত্রেও তেমনটা যদি কোনো লেখক করতে না পারেন, তাহলে একজন সাংবাদিক ছাড়া আর কিছুই হতে পারবেন না তিনি। সত্য এবং স্টাইল—একজন সাহিত্যিকের বেসিক কমিটমেন্ট হলো শুধু এই দুটো।
সূত্র: সাক্ষাৎকারটি প্রকাশিত হয়েছিল ‘বাংলাদেশ টুডে’ পত্রিকার মার্চ, ১৯৮৪ সংখ্যায়, সাক্ষাৎকার গ্রহীতা সেরাজুল ইসলাম কাদির, অনুবাদক নীলাজ্জ দাস, শিবনারায়ণ রায়ের সাক্ষাৎকার সংগ্রহ, পৃষ্ঠা-২৭।

সৃজনশীল সাহিত্য কিন্তু দেয়াললিখন বা স্লোগান দেওয়া নয়। জীবন এতই জটিল যে তাকে কোনো ফর্মুলায় বেঁধে ফেলা যায় না। মানুষের মূল্যবোধ নানা রকমের। আর সেগুলো দিয়ে যে সিস্টেমগুলো পাওয়া যেতে পারে, তা-ও নানা রকমের। একেক লেখকের কমিটমেন্ট একেক রকম মূল্যবোধের কাছে।
অনেক লেখকই আছেন যাঁরা খুব ধর্মপ্রাণ, কেউবা আবার কমিউনিস্ট ৷ হিউম্যানিস্ট লেখক যেমন আছেন, তেমনই আছেন অথোরিটারিয়ান লেখক।
তবে সে যা-ই হোক, ভালো সাহিত্যিকের মধ্যে দুটো কমিটমেন্ট থাকতেই হবে—সততা আর স্টাইলের দক্ষতা। নিজের কাছেই যে-লেখক অসৎ, যা লেখেন তা যদি তিনি নিজেই না বিশ্বাস করেন, তাহলে সেই লেখকের পতন অনিবার্য।
কোনো লেখক আবার যদি নিজের ভাষার ঐশ্বর্যকে ছেঁকে তুলতে ব্যর্থ হন, একজন সংগীতশিল্পীকে ঠিক যেভাবে তাঁর যন্ত্রটিকে নিজের বশে আনতে হয়, ভাষার ক্ষেত্রেও তেমনটা যদি কোনো লেখক করতে না পারেন, তাহলে একজন সাংবাদিক ছাড়া আর কিছুই হতে পারবেন না তিনি। সত্য এবং স্টাইল—একজন সাহিত্যিকের বেসিক কমিটমেন্ট হলো শুধু এই দুটো।
সূত্র: সাক্ষাৎকারটি প্রকাশিত হয়েছিল ‘বাংলাদেশ টুডে’ পত্রিকার মার্চ, ১৯৮৪ সংখ্যায়, সাক্ষাৎকার গ্রহীতা সেরাজুল ইসলাম কাদির, অনুবাদক নীলাজ্জ দাস, শিবনারায়ণ রায়ের সাক্ষাৎকার সংগ্রহ, পৃষ্ঠা-২৭।

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ প্রসঙ্গে সত্যজিৎ রায় অস্বাভাবিক নীরব ছিলেন। তাঁর কোনো কথায় কিংবা কাজে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ বিশেষ স্থান পায়নি। এই নীরবতা কৌতূহলোদ্দীপক বিধায় তা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা আছে।
০২ মে ২০২৩
আরব সাগরের রানি নামে পরিচিত কোচি একসময় ছিল বন্দর আর মসলার আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। কয়েক শতাব্দী আগে এখানেই গড়ে উঠেছিল ইহুদিদের একটি নিবিড় জনগোষ্ঠী। সেই জনগোষ্ঠীর একজন ছিলেন সারা কোহেন। ২০০০ সাল থেকে এই দোকান চালাচ্ছেন থাহা। সারা জীবিত থাকাকালে তাঁর পক্ষ থেকে, আর ২০১৯ সালে সারা ৯৬
৮ ঘণ্টা আগে
মুক্তিযুদ্ধের সময় সমগ্র মিরপুর পরিণত হয়েছিল এক বধ্যভূমিতে। আর বৃহত্তর মিরপুরে অবস্থিত গাবতলী এলাকা। তুরাগ নদের ওপরই গাবতলী সেতু অবস্থিত। সেই গাবতলীতে কয়েক বছর আগেও নদের ওপর ছিল পুরোনো একটি লোহার সেতু। সেই পুরোনো সেতুতে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের স্থানীয় সহযোগীরা চালিয়েছিল...
২ দিন আগে
বর্তমান ঢাকার সোহরাওয়ার্দি উদ্যানের দক্ষিণ দিকে অবস্থিত রমনা কালী মন্দির ও আনন্দময়ীর আশ্রম। এটি রমনা কালীবাড়ি নামেও পরিচিত। ইংরেজ আমলে এই মন্দিরটি নতুন করে নির্মাণ করা হয়েছিল। কথিত আছে, শংকরাচার্যের অনুগামী দর্শনার্থী সম্প্রদায় এ কালী মন্দির প্রতিষ্ঠা করে।
৯ দিন আগেসম্পাদকীয়

বর্তমান ঢাকার সোহরাওয়ার্দি উদ্যানের দক্ষিণ দিকে অবস্থিত রমনা কালী মন্দির ও আনন্দময়ীর আশ্রম। এটি রমনা কালীবাড়ি নামেও পরিচিত। ইংরেজ আমলে এই মন্দিরটি নতুন করে নির্মাণ করা হয়েছিল। কথিত আছে, শংকরাচার্যের অনুগামী দর্শনার্থী সম্প্রদায় এ কালী মন্দির প্রতিষ্ঠা করে। প্রায় ৫০০ বছর আগে বদ্রী নারায়ণের যোশী মঠের সন্ন্যাসী গোপাল গিরি ঢাকায় এসে রমনায় প্রথমে একটি আখড়া স্থাপন করেন। তখন এ আখড়াটি কাঠঘর নামে পরিচিত ছিল।
পরে সম্ভবত ১৭ শতকের প্রথম দিকে এ স্থানেই হরিচরণ গিরি মূল মন্দিরটি নির্মাণ করেন। কালীবাড়ি মন্দিরটি ১৯৭১ সালের ২৭ মার্চ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আক্রমণে বিধ্বস্ত হয়। তারা মন্দির ও আশ্রমটিতে আগুন ধরিয়ে দেয়। মন্দিরের সেবায়েতসহ প্রায় ১০০ সন্ন্যাসী, ভক্ত এবং সেখানে বসবাসরত সাধারণ মানুষ নিহত হন। যদিও এখন বধ্যভূমির কোনো চিহ্ন নেই। তবে সেটাকে বধ্যভূমি হিসেবে অস্বীকার করার সুযোগ নেই। ছবি: সংগৃহীত

বর্তমান ঢাকার সোহরাওয়ার্দি উদ্যানের দক্ষিণ দিকে অবস্থিত রমনা কালী মন্দির ও আনন্দময়ীর আশ্রম। এটি রমনা কালীবাড়ি নামেও পরিচিত। ইংরেজ আমলে এই মন্দিরটি নতুন করে নির্মাণ করা হয়েছিল। কথিত আছে, শংকরাচার্যের অনুগামী দর্শনার্থী সম্প্রদায় এ কালী মন্দির প্রতিষ্ঠা করে। প্রায় ৫০০ বছর আগে বদ্রী নারায়ণের যোশী মঠের সন্ন্যাসী গোপাল গিরি ঢাকায় এসে রমনায় প্রথমে একটি আখড়া স্থাপন করেন। তখন এ আখড়াটি কাঠঘর নামে পরিচিত ছিল।
পরে সম্ভবত ১৭ শতকের প্রথম দিকে এ স্থানেই হরিচরণ গিরি মূল মন্দিরটি নির্মাণ করেন। কালীবাড়ি মন্দিরটি ১৯৭১ সালের ২৭ মার্চ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আক্রমণে বিধ্বস্ত হয়। তারা মন্দির ও আশ্রমটিতে আগুন ধরিয়ে দেয়। মন্দিরের সেবায়েতসহ প্রায় ১০০ সন্ন্যাসী, ভক্ত এবং সেখানে বসবাসরত সাধারণ মানুষ নিহত হন। যদিও এখন বধ্যভূমির কোনো চিহ্ন নেই। তবে সেটাকে বধ্যভূমি হিসেবে অস্বীকার করার সুযোগ নেই। ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ প্রসঙ্গে সত্যজিৎ রায় অস্বাভাবিক নীরব ছিলেন। তাঁর কোনো কথায় কিংবা কাজে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ বিশেষ স্থান পায়নি। এই নীরবতা কৌতূহলোদ্দীপক বিধায় তা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা আছে।
০২ মে ২০২৩
আরব সাগরের রানি নামে পরিচিত কোচি একসময় ছিল বন্দর আর মসলার আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। কয়েক শতাব্দী আগে এখানেই গড়ে উঠেছিল ইহুদিদের একটি নিবিড় জনগোষ্ঠী। সেই জনগোষ্ঠীর একজন ছিলেন সারা কোহেন। ২০০০ সাল থেকে এই দোকান চালাচ্ছেন থাহা। সারা জীবিত থাকাকালে তাঁর পক্ষ থেকে, আর ২০১৯ সালে সারা ৯৬
৮ ঘণ্টা আগে
মুক্তিযুদ্ধের সময় সমগ্র মিরপুর পরিণত হয়েছিল এক বধ্যভূমিতে। আর বৃহত্তর মিরপুরে অবস্থিত গাবতলী এলাকা। তুরাগ নদের ওপরই গাবতলী সেতু অবস্থিত। সেই গাবতলীতে কয়েক বছর আগেও নদের ওপর ছিল পুরোনো একটি লোহার সেতু। সেই পুরোনো সেতুতে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের স্থানীয় সহযোগীরা চালিয়েছিল...
২ দিন আগে
সৃজনশীল সাহিত্য কিন্তু দেয়াললিখন বা স্লোগান দেওয়া নয়। জীবন এতই জটিল যে তাকে কোনো ফর্মুলায় বেঁধে ফেলা যায় না। মানুষের মূল্যবোধ নানা রকমের। আর সেগুলো দিয়ে যে সিস্টেমগুলো পাওয়া যেতে পারে, তা-ও নানা রকমের। একেক লেখকের কমিটমেন্ট একেক রকম মূল্যবোধের কাছে।
৩ দিন আগে